Biography of Bankim Chandra Chattopadhyay in Bangla | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় Bangla Biography

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় Bangla biography
 

Biography of Bankim Chandra Chattopadhyay

❍ আরো পড়ুনঃ

✥ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সমৃদ্ধিসাধনের ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদানের কথা ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। উপন্যাস, প্রবন্ধ, রসরচনা—যেখানেই তিনি হাত দিয়েছেন, সেখানেই তাঁর অসাধারণ প্রতিভার দীপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় পত্রিকা সম্পাদনার ক্ষেত্রেও তিনি এমন একটি উচ্চ-আদর্শ স্থাপন করেছিলেন, যা আজও অনুকরণযোগ্য। শুধু বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্যের দিকপাল নয়, উনিশ শতকের অন্যতম চিন্তাবিদ হিসেবেও তিনি স্বীকৃত। বঙ্কিমচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন (১৩ আষাঢ় ১২৪৫), উত্তর চব্বিশ পরগনার কাঁটালপাড়া গ্রামে। পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ডেপুটি কালেক্টরের পদে নিযুক্ত ছিলেন।

গ্রামের পাঠশালার গুরুমহাশয় রামপ্রাণ সরকারের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের বিদ্যাচর্চার সূচনা হলেও প্রকৃত পক্ষে তাঁর শিক্ষা আরম্ভ হয় মেদিনীপুরে। পিতা যাদবচন্দ্র তখন সেখানে কর্মরত ছিলেন। মেদিনীপুরের ইংরেজি স্কুলের ছাত্র হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র মেদিনীপুর থেকে কাঁটালপাড়ায় ফিরে আসেন। কিছুকাল বাড়িতে অধ্যয়নের পর ভরতি হন হুগলি কলেজে। সেখানে তিনি সাত বছর অধ্যয়ন করেন। তাঁর পাঠ তৃষ্ণা ছিল প্রবল এইজন্য ক্লাসের পড়ার বাইরেও তিনি বহু বিষয়ের বই পড়তেন। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে হুগলি কলেজ ছেড়ে বঙ্কিমচন্দ্র আইন পড়ার জন্য ভরতি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। কিন্তু তিনি আইন পরীক্ষা দিয়েছিলেন অনেক পরে। তার আগেই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বি. এ. পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করলে ১৩ জন ছাত্রের সঙ্গে বঙ্কিম চন্দ্রও পরীক্ষা দেন। পরীক্ষা অত্যন্ত কঠিন হওয়ার জন্য প্রথমে কেউই উত্তীর্ণ হতে পারেননি। বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু, এই দুজনকে ৭ নম্বর করে গ্রেস দিলে তাঁরা দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এতে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম এবং যদুনাথ বসু দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।

বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে নিযুক্ত হন। চাকুরি উপলক্ষ্যে তাঁকে বহু জায়গায় ঘুরতে হয়েছিল বলে তাঁর অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রটিও যথেষ্ট বিস্তত হয়েছিল। দীর্ঘ তেত্রিশ বছর যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করার পর ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে বঙ্কিম চন্দ্রের বয়স যখন এগারো, তখন পাঁচ বছরের একটি মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথমা পত্নীর মৃত্যু হলে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি হালিশহরের বিখ্যাত চৌধুরী পরিবারের কন্যা রাজলক্ষ্মী দেবীকে বিবাহ করেন। ছাত্রাবস্থাতেই বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত। প্রথম জীবনে তিনি কবিতাও লিখতেন। তাঁর অনেক গদ্য-পদ্য রচনা ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’-এ প্রকাশিত হত। 'ললিতা ও মানস’ নামে তাঁর একটি ক্ষুদ্র কবিতাগ্রন্থও প্রকাশিত হয়। বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম উপন্যাস রচনা করেন ইংরেজিতে। ‘Rajmohan's Wife' নামে তাঁর এই উপন্যাসটি ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে 'ইন্ডিয়ান ফিল্ড’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ইংরেজিতে লিখে তেমন পরিতৃপ্তি না পাওয়ায় তিনি বাংলা উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেন।

১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম ইংরেজি উপন্যাসটির কথা বাদ দিয়ে উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী'। এই উপন্যাসখানি প্রকাশের পর বঙ্কিমচন্দ্র লেখক হিসেবে বিশেষ পরিচিত হয়ে ওঠেন। তারপর একে একে রচিত হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলি। বলা যায়, বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেই বাংলা উপন্যাসের যথার্থ শিল্পরূপটি গড়ে ওঠে। কালানুক্রমিকভাবে তাঁর উপন্যাসগুলি হল : ‘দুর্গেশনন্দিনী’ (১৮৬৫), ‘কপালকুণ্ডলা’ (১৮৬৬), ‘মৃণালিনী’ (১৮৬৯), ‘বিষবৃক্ষ' (১৮৭৩), ইন্দিরা’ (১৮৭৩), ‘যুগলাঙ্গুরীয়’ (১৮৭৪), ‘চন্দ্রশেখর’ (১৮৭৫), ‘রাধারাণী’ (১৮৭৭), ‘রজনী’ (১৮৭৭), ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ (১৮৭৮), ‘রাজসিংহ’ (১৮৮২), ‘আনন্দমঠ’ (১৮৮২), ‘দেবী চৌধুরাণী’ (১৮৮৪), ‘সীতারাম’ (১৮৮৭)।

প্রবন্ধসাহিত্যের ক্ষেত্রেও বঙ্কিমচন্দ্রের অসামান্য অবদান বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাত্ত্বিক আলোচনা, রসরচনা, সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা প্রভৃতি সমস্ত বিষয়ে তিনি অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর এরকম উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হল : ‘লোকরহস্য' (১৮৭৪), 'বিজ্ঞানরহস্য' (১৮৭৫), কমলাকান্তের আলোচনা, রসরচনা, সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা প্রভৃতি সমস্ত বিষয়ে তিনি অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সম্পাদক হিসেবেও বঙ্কিমচন্দ্রের সাফল্য প্রায় প্রবাদে পরিণত হয়েছে। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘বঙ্গদর্শন'। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে বলেছেন—“বঙ্কিমের বঙ্গদর্শন আসিয়া বাঙালির হৃদয় একেবারে লুঠ করিয়া লইল।” রবীন্দ্রনাথের এ-মন্তব্য যথার্থ। বহু বিচিত্র রচনার সমাবেশ, রচনার গুণমান এবং সম্পাদনার নৈপুণ্যে ‘বঙ্গদর্শন’ হয়ে উঠেছিল একটি আদর্শ সাময়িক পত্র। বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ সেবক এবং উনিশ শতকের বিশিষ্ট চিন্তানায়ক বঙ্কিমচন্দ্র দীর্ঘজীবনের অধিকারী হতে পারেননি। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ এপ্রিল তাঁর দেহাবসান হয়।

Biography of Bankim Chandra Chattopadhyay in Bangla Quiz Question Answer 
    বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

🔴 ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের জন্ম হয় কোন সালে?
▻ ১৮৩৮ সালের ২৬ জুন।
🔴 তাঁর জন্মস্থান কোথায়?
▻ কাঁঠালপাড়া, নৈহাটি জেলা উত্তর ২৪ পরগনা।
🔴 তাঁর পিতার নাম কী?
▻ যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন।
🔴 ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের মাতার নাম কী?
▻ দুর্গাসুন্দরী।
🔴 ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের অন্য তিন ভাইয়ের নাম কী কী ?
▻ বড় দুই ভাই হলেন শ্যামাচরণ ও সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ছোট ভাই পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
🔴 কত বছর বয়সে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র স্কুলে ভর্তি হন?
▻ ১৮৪৪ সালে মাত্র ছ'বছর বয়সে। ঐ সময় তিনি মেদিনীপুরে ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন।
🔴 ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের যখন প্রায় বার বছর বয়স, সে সময় তিনি পাঁচ বছরের এক বালিকাকে বিয়ে করেন, ঐ বালিকাটির নাম কী?
▻ মোহিনী দেবী।
🔴 ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কোন সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টার পদে নিযুক্ত হন?
▻ ১৮৫৮ সালের ৭ আগষ্ট।
🔴 কোন সালে তিনি বি. এল. পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং কোন স্থান দখল করেছিলেন?
▻ ১৮৬৯ সালে প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান দখল করেছিলেন।
🔴 কোন সালে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যু হয়।
▻ ১৮৫৯ সালে।
🔴 দ্বিতীয়বার তিনি কবে বিয়ে করেন এবং কাকে?
▻ ১৮৬০ সালের জুন মাসে। তিনি হালিশহরের সীতারাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা রাজলক্ষ্মী দেবীকে বিয়ে করেন। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র বলতেন এই স্ত্রীই আমার জীবনে কল্যাণ স্বরূপা।
🔴 ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম ইংরেজি উপন্যাস ‘Rajmohan's Wife' কোন সালে এবং কোন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়?
▻ ১৮৬৪ সালে ‘Indian Field' সাপ্তাহিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
🔴 কোন সালে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দুর্গেশনন্দিনী' উপন্যাসের প্রকাশ ঘটে?
▻ ১৮৬৫ সালে।
🔴 ২৪ পরগনার বারুইপুরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর থাকার সময় ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কোন কোন উপন্যাস রচনা করেছিলেন?
▻ কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬ সাল) এবং মৃণালিনী (১৮৬৯ সাল)।
🔴 ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের অবিস্মরণীয় চরিত্র সৃষ্টি কোনটি?
▻ কমলাকান্ত চক্রবর্তী। ‘কমলাকান্ত' নামেও পরিচিত লোকে যাকে ভবঘুরে পাগল মনে করত অথচ অহিফেন সেবনের ফলে দিব্যদৃষ্টি ও দিব্যকর্ম লাভ করে যিনি বাঙালী সমাজ এবং মানবজাতি সম্বন্ধে পরম সত্য দর্শন ও শ্রবণ করেন।
🔴 অনেকের মতে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস কোনটি?
▻ কৃষ্ণকান্তের উইল।
🔴 কোন সালে বঙ্কিমচন্দ্র “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়”-এর সেনেটের সদস্য নির্বাচিত হন?
▻ ১৮৮৫ সালে।
🔴 ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের “কৃষ্ণকান্তের উইল” কবে প্রকাশিত হয়?
▻ ১৮৭৮ সালে।
🔴 ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের লিখিত শেষ উপন্যাস কোনটি?
▻ সীতারাম।
🔴 উত্তরবঙ্গের সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে কাল্পনিক গৌরবময় ভূমিকায় স্থাপন করে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র দেশাত্মবোধের মহাকাব্য রচনা করেন কোন উপন্যাসে?
▻ আনন্দমঠ।
🔴 ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কোন সালে ‘বঙ্গদর্শন’-এর সম্পাদক হন?
▻ ১৮৭২ সালে।
🔴 ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের কোন উপন্যাসে মুঘল শাসনে জাহাঙ্গীরের আমলের ঘটনা পাওয়া যায়?
▻ কপালকুণ্ডলা।
🔴 বাংলায় তাতার তুর্কীর আক্রমণ ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের কোন উপন্যাসের পটভূমিকায় স্থাপিত হয়েছে?
▻ মৃণালিনী ৷
🔴 কত সালে বঙ্কিমচন্দ্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন?
▻ ১৮৯৪ সালে ৮ এপ্রিল।



bankim chandra chattopadhyay biography,bankim chandra chatterjee,bankim chandra,bangla biography,bankim,chandra,bankim chandra biography,biography of bankim chandra,bankim chandra short biography, ,বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ গ্রন্থের নাম,বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা সমগ্র pdf,বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস মনে রাখার কৌশল,বাংলা উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন