What is History- ইতিহাস কাকে বলে?

ইতিহাস কাকে বলে? what is history in Bengali

ইতিহাস কাকে বলে?

ロ ইতিহাস কথাটির বুৎপত্তিগত অর্থ অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে "অনুসন্ধান" কিম্বা "অনুসন্ধানে মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ" অর্থেই গ্রিক ভাষায় ইতিহাস কথাটির প্রথম সূচনা। এই অর্থেই খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের গ্রিক পণ্ডিত হেরােডােটাসকে ইতিহাসের জনক বলা হয়। সারা জীবনব্যাপী ব্যাপক ভ্রমণের মধ্য দিয়ে পরিচিত অপরিচিত গ্রাম, জনপদ ও দেশে কখনও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও প্রমাণের সাহায্যে, কখনও পরােক্ষে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তিনি গদ্য ভঙ্গিতে গল্পাকারে নানা আকর্ষণীয় এবং হৃদয় গ্রাহী বিবরণ রেখে গেছেন। অনুসন্ধানের ফলশ্রুতি এইসব বিবরণই আদি লিখিত ইতিহাস।

'ইতিহাস’ শব্দটি এসেছে 'ইতিহ’ সংস্কৃত শব্দ থেকে। এই 'ইতিহ’ শব্দ বা কথার দুটি অর্থ একটি হল মৌলিক এবং অপরটি হল বুৎপত্তিগত। মৌলিক অর্থ হল অতীতে যা কিছু ঘটেছে তার 'ঐতিহ্য’ হতে এবং বুৎপত্তিগত অর্থ হল যা বরাবর চলে আসছে এইরকম কোনাে প্রচলিত কাহিনি বা অবিস্মরণীয় বিষয়। ‘আস’ শব্দটির অর্থ - 'যার মধ্যে পাওয়া যায়।' তাই 'ইতিহাস’ কথার সাধারণ অর্থ হল অতীতের গুরুত্বপূর্ণ বা ঐতিহ্যপূর্ণ কাহিনি যার মধ্যে লিপিবদ্ধ আছে আবার ইংরেজি 'History' শব্দ বা কথাটি এসেছে ল্যাটিন 'Histor' এর গ্রিক 'Historia শব্দ থেকে। 'Histor' শব্দ বা কথার অর্থ জ্ঞান এবং 'Histori' শব্দ বা কথার অর্থ হল সত্যকে অনুসন্ধান করা সুতরাং ইতিহাস' শব্দ বা কথাটির অর্থ হল অতীত ঘটনা বা কাহিনির থেকে সত্যকে অনুসন্ধান করা

তবে ইতিহাসের ব্যাখ্যাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ঐতিহাসিক, পন্ডিত দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক প্রভৃতি নানাদিক থেকে ইতিহাসের সরূপ ও সংজ্ঞা ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন। কয়েকজন বিখ্যাত ঐতিহাসিক, দার্শনিক পন্ডিত, রাজনীতিবিদ, কবি ও সাহিত্যিকেরা নানা অভিমত পােষণ করেন যেমন - (1) জোনস্ বলেছেন, ইতিহাস হল জীবনবেদের অভিজ্ঞতার খনিস্বরূপ। এই অভিজ্ঞতার ফলশ্রুতি লাভ করবার জন্য আজকের যুবকরা ইতিহাস পড়ে। (2) দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী শ্রেষ্ঠ দার্শনিক কার্ল মার্কস বলেন, সামাজিক ক্রমবিবর্তনের বিশেষণই ইতিহাস। মার্কসীয় দর্শনানুসারে আজ পর্যন্ত মানুষের ইতিহাস শ্রেণি সংগ্রামেরই ইতিহাস।(3) রবীন্দ্রনাথের উক্তি এ বিষয়ে প্রণিধানযােগ্য। তার মতে ইতিহাস হল একটি —তা হল মানুষের ইতিহাস। (4)  ঐতিহাসিক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, ইতিহাস হল মানব সমাজের অতীতের কার্যাবলীর বিবরণী। (5) মি. হিল তার আন্তর্জাতিক পুস্তকে লিখেছেন, অতীত দলিল পত্রাদি পরীক্ষা করে মানব সমাজের যে অতীত বিবরণ পাওয়া যায় তাই হল ইতিহাস। (6) ড.সর্বপল্লী কৃষ্ণান বলেছেন, ইতিহাস হল জাতির স্মৃতি।

ই. এইচ, কার সম্পাদিত কাকে বলে ইতিহাস? প্রসঙ্গে তিনি ৩টি দিকের উল্লেখ করেছেন। প্রথমদিক:
ইতিহাসের তথ্য কখনােই আমাদের কাছে বিশুদ্ধরূপে আসে না। কারণ তারা বিশুদ্ধ অবস্থায় থাকে না ও
থাকতে পারে না। তারা সব সময়েই নথিকারের মনের মধ্যে দিয়ে প্রতিসারি হয়। তার মানে, আমরা যখন
কোনাে ইতিহাসের বই বেছে নিই তখন তার ভেতরকার তথ্যই আমাদের প্রথম বিবেচ্য হওয়া উচিত নয়, যে ঐতিহাসিক সেটি লিখেছিলেন তিনিই আমাদের বিবেচ্য। দ্বিতীয় দিক হল, যেসব মানুষ নিয়ে ঐতি- হাসিক কাজ করছেন তাদের মন আর তাদের কার্যকলাপের পেছনে যে চিন্তা রয়েছে তার জন্য ঐতিহাসিকের প্রয়ােজন এক কল্পনা সমৃদ্ধ বােধ’ (সহানুভূতি নয়)। তৃতীয় দিক হল, একমাত্র বর্তমানের চোখ দিয়েই আমরা অতীতকে দেখতে ও তার সম্বন্ধে বােধ অর্জন করতে পারি। কারণ, ঐতিহাসিক হচ্ছেন বর্তমানের অংশ আর তথ্যগুলাে অতীতের। ঐতিহাসিক ও ইতিহাসের তথ্য দু-এরই দরকার দুটিকেই। তথ্য ছাড়া ঐতিহাসিক অমূল ও ব্যর্থ ; ঐতিহাসিক ছাড়া তথ্যেরা মৃত ও অর্থহীন।

অতএব, কাকে বলে ইতিহাস?' What is History Explain Answer? এই প্রশ্নে আমার (ই এইচ কার) প্রথম উত্তর :  ঐতিহাসিক ও তাঁর তথ্যের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার এটি এক অব্যাহত প্রক্রিয়া, বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এক অন্তহীন সংলাপ। তাহলেও ইতিহাস সম্পর্কে আমরা একটি গ্রহণযােগ্য সংজ্ঞা পেতে পারি তা হল যে ❝ স্থান ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজবদ্ধ মানব প্রগতির বৈজ্ঞানিক প্রণালি সন্মত বিশ্লেষণই ইতিহাস। ❞

সংক্ষেপে আলোচনা ❏ 

প্রশ্নঃ ইতিহাস কাকে বলে?
অথবা, ইতিহাস কী?
▸ গ্রিক শব্দ হিস্টোরিয়া (Historia) থেকে ইতিহাস’ শব্দটি এসেছে, যার অর্থ অনুসন্ধান করা। বস্তুনিষ্ঠ ও গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে মানবসভ্যতার ধারাবাহিক বিবর্তনের কাহিনী বা বিবরণ যে শাস্ত্রে আলোচনা করা হয় তাই হল ইতিহাস। মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রতিফলিত হয় ইতিহাসে।

প্রশ্নঃ  ইতিহাসতত্ত্ব বা Historiography বলতে কী বোঝো?
▸ ইতিহাসতত্ত্ব হল ইতিহাসের ইতিহাস, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Historiography'। আধুনিক ইতিহাসতত্ত্বের মাধ্যমে মানুষের উন্নতির ধারা, যুক্তিবাদ, জাতীয়তাবোধ, বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা ইত্যাদি বিষয় উঠে এসেছে। সুপ্রাচীনকাল থেকে ইতিহাস নানা ধারায় চর্চিত হয়েছে। তেমনি আধুনিককালেও নানা ধারার মধ্য দিয়ে ‘নয়া ইতিহাস' Neo-History চর্চা রূপ লাভ করেছে। এমনকি ইতিহাসচর্চার ধারায় উত্তর আধুনিকতার Post - Modernism স্পর্শ লেগেছে। ইতিহাসের পথ চলার শুরু থেকে তার বর্তমান অবস্থায় পৌঁছোনোর ধারাবাহিক কাহিনিই হল ইতিহাসতত্ত্ব।

আরো পড়ুন :

Q. ভারতের বিভিন্ন জনগােষ্ঠী সম্পর্কে আলোচনা করো?
 ロ সুদুর অতীতকাল থেকেই ভারতবর্ষে বিভিন্ন জাতির আগমন, মিলন ও সমন্বয় ঘটেছে। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের মতাে ভারতের জাতি-বৈচিত্র্যও কম উল্লেখযােগ্য নয়। প্রাচীনকালে দ্রাবিড় জাতি ভারতে সর্বপ্রথম এক উন্নত ধরনের সভ্যতা। গড়ে তুলেছিল। ক্রমে, আর্য, পারসিক, গ্রিক, শক, হুন, কুষাণ,তুর্কি, আফগান, মােগল প্রভৃতি জাতিগুলি বিভিন্ন সময়ে ভারতে এসেছে। এদের পরে এসেছে ইউরােপের বিভিন্ন জাতি যেমন—পাের্তুগিজ, ওলন্দাজ, দিনেমার, ফরাসি ও ইংরেজরা। দীর্ঘকাল বসবাসের ফলে এই সব জাতিগােষ্ঠী নিজেদের স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে ফেলে এবং পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে মিশে এক মিশ্র জাতিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহুজাতির মিলনভূমি ভারতবর্ষকে মহামানবের সাগরতীর’ বলে বর্ণনা করেছেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ বহু গোষ্ঠীর বাসভূমি ভারতকে নৃতত্ত্বের যাদুঘর বলেছেন। প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ ড. বিরজাশঙ্কর গুহ অধিবাসীদের দৈহিক উচ্চতা, মাথার গড়ন ইত্যাদি পরীক্ষা করে ভারতবাসীকে নিম্নলিখিত মােট ৬টি প্রধান গােষ্ঠীতে বিভক্ত করেন।
  1. নিগ্রোটো :  এই গােষ্ঠীর লােকেদের গায়ের রং কালাে, নাক চ্যাপটা, ঠোট পুরু এবং এদের গড়ন বেঁটে বা খর্বাকৃতি। বর্তমানে এরা প্রায় বিলুপ্ত হলেও দক্ষিণ ভারত, রাজমহল পাহাড়, আসামের পার্বত্য অঞ্চল এবং আন্দামান-নিকোবর অঞ্চলে নিগ্রোটো গােষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বল্প মাত্রায় লক্ষ করা যায়।
  2. প্রােটো-অস্ট্রালয়েড :  অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসীদের মতাে দেখতে প্রােটো-অস্ট্রালয়েড গােষ্ঠীর লােকেদের গায়ের রং কালাে, চুল ঝাকড়া ও তামাটে এবং নাকের গঠন মাঝারি। মধ্য ভারতের কোল, ভিল, মুণ্ড প্রভৃতি উপজাতি এই গােষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
  3. মােঙ্গলয়েড : মােঙ্গালয়েড গােষ্ঠীর মানুষেরা খর্বাকৃতির হয়। তাদের মুখ চ্যাপটা এবং চোয়াল উঁচু হয়। মধ্য এশিয়ার প্রাচীন মােঙ্গল জাতিগােষ্ঠীর সঙ্গে এদের মিল আছে।সিকিম, ভুটান, পার্বত্য ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে মােঙ্গলয়েড গােষ্ঠীর লােক দেখতে পাওয়া যায়।
  4. মেডিটেরানিয়ান  :  ভূমধ্যসাগরীয় অঞলে এদের আদি বাসভূমি ছিল। এদের গড়ন লম্বা, গায়ের রং কালাে থেকে ফর্সা। ভারতের উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, সিন্ধু, রাজস্থান, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ত্রপ্রদেশ প্রভৃতি অঞলে এদের দেখতে পাওয়া যায়।
  5. ওয়েস্টার্ন-ব্রাকিফেলাস : বাংলা, বিহার, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটকে এদের দেখতে পাওয়া যায়। অনুমান করা হয় যে, এই গােষ্ঠীর লােক পূর্ব ইউরােপ, পামির মালভূমি, আল্পস পর্বত প্রভৃতি অঞ্চল থেকে এসেছিল।
  6. নর্ডিক : এই গােষ্ঠীর লােকেরা ছিল দীর্ঘাকৃতি, গৌরবর্ণ এবং উন্নত নাসিকাযুক্ত নীলাভ চোখের তারা এই গােষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য। ভারতে আর্য সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনকারী এই নর্ডিক গােষ্ঠীর লােক পাঞ্জাব, রাজপুতানা, মহারাষ্ট্র এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে বসবাস করে।
  ইতিহাসের উদ্দেশ্য কী?
ロ ইতিহাসের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এক-একজনের কাছে এক-একরকম উত্তর পাওয়া যাবে। ভিন্ন ভিন্ন সমাজের ও আলাদা আলাদা চিন্তাধারার লােকের কাছে।ইতিহাসের উদ্দেশ্য আলাদা রকম বলে মনে হবে। কারাে কাছে ইতিহাস শুধুমাত্র অনুসন্ধিৎসার বিষয় নয়, তা বেঁচে থাকার লড়াইয়ের হাতিয়ার। সেজন্য এদের কাছে ইতিহাসের উদ্দেশ্য হল শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবী চেতনাকে তীক্ষ্ণ ও সমৃদ্ধ করা। কারাে কারাে কাছে ইতিহাসের উদ্দেশ্য হল বর্তমানের স্বপ্ন, আশা-আকাঙক্ষা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে প্রভাবিত করা। আবার অনেকের মতে ইতিহাসের উদ্দেশ্য একটাই মানুষ কীভাবে মানুষ হল, এবং কীভাবে মানুষ ভবিষ্যতে আরাে বড়াে হয়ে উঠবে তার সমাজের সঙ্গে সারা পৃথিবীর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে।

ঐতিহাসিক ও প্রাগৈতিহাসিক যুগ সম্পর্কে লেখাে?
ロ  মানুষ যেদিন থেকে লিখতে শিখেছিল সেদিন থেকে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হয়। এই লিপি আবিষ্কারের পর থেকে সভ্যতার ধারাও বেশ বদলে যায়। শিলালিপি, তাম্রলিপি ইত্যাদি ইতিহাসের উপাদান হয়ে মানুষ ও তার পরিবেশের ইতিহাসকে বুঝতে সাহায্য করল। এই যুগটাই ঐতিহাসিক যুগ।  ইতিহাসের উপর লিখিত হিসেব পাওয়া গেল বলে তা ঐতিহাসিক যুগ নামে পরিচিত। 

ভারতীয় সভ্যতা অতি প্রাচীন সভ্যতা। ভূতত্ত্ববিদদের মতে খ্রিস্টের জন্মের অন্তত পাঁচ লক্ষ বছর আগে ভারতে মানুষ বসবাস করত এবং সেই সময় থেকেই ভারতীয় সভ্যতার উন্মেষ ঘটতে শুরু করে। এই যুগের মানুষের ব্যবহার করা যন্ত্রপাতির উপর ভিত্তি করে এ সময়ের ইতিহাস লেখা হয়। লিখিত ইতিহাস আরম্ভ হওয়ার আগে মানুষের সভ্যতাকে প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতা বলা হয়। প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির উপর নির্ভর করে এই যুগকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন—প্রাচীন প্রস্তরযুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তরযুগ।

◕ ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানুষ / আদিম যুগ কাকে বলে?
ロ আদিম কথার অর্থ - 'পুরােনাে বা গােড়ার দিকে'। খুব পুরােনাে সময়ের মানুষ বােঝাতে আদিম মানুষ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে পুরনো আদিম মানুষের খোঁজ কোথায় পাওয়া গেছে পূর্ব আফ্রিকাতে। মস্তিষ্কের আকার থেকে আদিম মানুষকে নানাভাবে ভাগ করা হয়েছে। আদিম যুগের মানুষ কেমন ছিল? অট্রোলােপিথেকাস আনুমানিক ৪০ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ বছর আগেকার। এরা দুপায়ে ভর দিয়ে কোনােক্রমে দাঁড়াতে পারত। শক্ত বাদাম ও শুকনাে ফল চিবিয়ে খেত। চোয়াল শক্ত ও সুগঠিত ছিল। এরা গছের ডাল দিয়ে চাক্কা মারত ও পাথর ছুড়তে চেষ্টা করত। হােমাে হাবিলিস্ আনুমানিক ২৬ লক্ষ থেকে ১৭ লক্ষ বছর আগেকার। এরা দলবেঁধে থাকত হাঁটতে পারত। ফলমূলের পাশাপাশি সম্ভবত কাঁচা মাংসও খেত। এরাই প্রথম পাথরকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে। একটা পাথর দিয়ে আরেকটা পাথরে জোরে আঘাত করে অস্ত্র বানাত। হােমাে ইরেকটাস আনুমানিক ২০ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার বছর আগেকার। দুপায়ে ভর দিয়ে এরা সােজা হয়ে দাঁড়াতে শেখে। দলবদ্ধভাবে গুহায় থাকত। শিকার করতে পারত। এরাই প্রথম আগুনের ব্যবহার শিখেছিল। স্তর কাটা নুড়ি পাথরের হাতিয়ার বানিয়েছিল এরাই। হােমাে স্যাপিয়েন্স আনুমানিক ২ লক্ষ ৩০ হাজার বছর আগে এসেছিল। এরা দলবেধে বড়ো পশু শিকার করত। নানা কাজে আগুন ব্যবহার করত। পশুর মাংস পুড়িয়ে খেত। পশুর চামড়া পরত। ছােটো, তীক্ষ ও ধারালাে পাথরের অস্ত্র তৈরি করতে শিখেছিল। বর্শা জাতীয় পাথরের অস্ত্র বানাতে পারত।

আদিম মানুষের উৎপত্তি : আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব অংশে ঘন জঙ্গলে লক্ষ লক্ষ বছর আগে ভয়ানক হিংস্র প্রাণী ঘুরে বেড়াত। সেখানে বড়াে এক ধরনের বানর ছিল। তাদের লেজ ছিল না এদের এপ বলা হয়। আবহাওয়ার বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে যখন গাছপালা কমে গেল তখন আগের মতাে সহজে ফলমূল পাওয়া মুশকিল হল। এই এপদের একদল গভীর জঙ্গল খুঁজতে বেরিয়ে পড়ল আর অন্য দলটি খাবারের খোঁজে মাটিতে নেমে এল। দুপায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করল। লক্ষ লক্ষ বছরের পরির্তনের ফলে এপ থেকে আলাদা হয়ে গেল মানুষ পরিবার হােমিনিড। শুরু হল মানুষের এগিয়ে চলা এবং নিজেকে উন্নত
করা। প্রথমে তারা পাথর দিয়ে হাতিয়ার বানাতে শেখে। ধীরে ধীরে তারা আগুনের ব্যবহার শেখে।

অন্যসব প্রাণী আগুনকে দেখে ভয় পেলেও মানুষ আগুনকে কাজে লাগায় নিজের প্রয়ােজনে। দাবানলের সময় জ্বলন্ত কাঠ এনে রেখে দিত নিভতে দিত না। কোনাে সময় হয়তাে পাথরের হাতিয়ার তৈরি করতে গিয়ে চকমকি জাতীয় পাথরের ঠোকাঠুকিতে হঠাৎ জ্বলে ওঠে আগুন। অথবা কাঠে কাঠ ঘষে আগুন জ্বালিয়ে ছিল। আগুনের ব্যবহারে শীতের থেকে তারা নিজেদের বাঁচাতে পারল। জীবজন্তুদের আক্রমণ মােকাবিলা করতে পারল এবং কাঁচা মাংসের পরিবর্তে ঝলসানো নরম মাংস খেতে পারল ফলে তাদের চোয়াল ও দাঁতের জোর কম লাগত। তাই ধীরে ধীরে তদের চোয়াল সরু হয়ে এল। ধারালাে উঁচু দাঁত ছােটো হয়ে গেলাে চেহারায় বদল এল।

 কাশ্মীরের সােয়ান উপত্যকায়, পাকিস্তানের পাটোয়ার মালভূমিতে, ও হিমাচল প্রদেশের শিবালিক পর্বত অঞ্চলে পুরােনাে পাথরের হাতিয়ার পাওয়া যায় ওই হাতিয়ারগুলি বেশিরভাগ ছিল কুপার ও চপার জাতীয় কর্ণাটকের  হুন্সগি উপত্যকা, রাজস্থানের দিওয়ানা ও মহারাষ্ট্রের নেভাসাতে হােমাে ইরেকটাস প্রজাতির আদিম মানুষ পাওয় গেছে। মধ্যপ্রদেশের নর্মদা উপত্যকায় এক লক্ষ তিরিশ হাজার বছরেরও বেশি আগের মানুষের মাথার খুলি পাওয়া গেছে। ভারী নিরেট পাথরের হাত-কুঠার ব্যবহার করে তারা খাবারের জোগাড় করত কিন্তু খাবার বানাতে তারা পারত না। পশুপালন ও করতে পারত না। শিকার করে ফলমূল জোগাড় করে পেট ভরাত। যাযাবর জীবন অতিবাহিত করত। পুরােনাে পাথরের যুগে আদিম মানুষের জীবন বেশ কঠিন ও কষ্টকর ছিল। তারা দলবেঁধে থাকত শিকার করত। ঠান্ডায় পশুর চামড়া, গাছের ছাল পরত।

আদিম মানুষের ছবি আঁকা ও বর্তমান ভীমবেটকার গুহার দেওয়ালে শিকারের দৃশ্য, বন্যপশুর ছবি পাওয়া গেছে। এছাড়াও দেখা গেছে মানুষ একা অথবা দলবেঁধে শিকার করছে, কারও কারও মুখে মুখােশ, হাতে পায়ে গয়না, অনেক সময়ই মানুষের সঙ্গে কুকুরকে দেখা যায়। ছবিগুলিতে সবুজ ও হলুদ রং-এর ব্যবহার হলেও বেশি দেখা যায়। সাদা এবং লাল রং। হাতিয়ারগুলি আস্তে আস্তে হালকা, ছােটো ও ধারালাে হয়ে উঠেছিল। বড়াে পাথরের গায়ে আঘাত করে কোনাচে অংশ বার করে হালকা হাতিয়ার তৈরি করতে শুরু করে। পাথরের হাতিয়ার বানানাে কৌশলের এই তফাত দিয়েই পুরােনাে পাথরের যুগের বিভিন্ন পর্বকে আলাদা করা হয়।

মাঝের পাথরের যুগে উন্নত হাতিয়ার বানাতে শুরু করে। অস্ত্রগুলি আরও ছােটো ও ধারালাে হয়। গাছের ডালের সঙ্গে জুড়ে ও গেঁথে হাতিয়ার ব্যবহার করতে থাকে ফলে তাদের আরও সুবিধা হয়।উত্তর-প্রদেশের মহাদহা, মধ্যপ্রদেশের আদমগড় প্রভৃতি অঞ্চলে ওই যুগের মানুষের হাতিয়ার পাওয়া গেছে উত্তর-প্রদেশের সরাই নহর রাইতে দুদিকে ধারওলা ছুরি পাওয়া গেছে। তাছাড়া হাড়ের তৈরি ফলাও দেখা গেছে। বিভিন্ন রকম বন্য পশুর হাড় পাওয়া গেছে। পশুর মাংস ঝলসানাের জন্য আগুন ব্যবহার করা হত। তার মতাে একপ্রকার যন্ত্র পাওয়া যায়, যা শস্যদানা গুঁড়াে করতে ব্যবহার করত। কিন্তু তারা খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে পারত না। নর্মদা উপত্যকার আদমগড়ে আট হাজর বছর পুরােনাে বন্য পশুর অর্থাৎ গবাদি পশুর হাড় পাওয়া গেছে, এ দেখে বােঝা যায় আদমগড়ের মানুষ পশুপালন করতে শিখেছিল তবে তারা শিকারও করত। পশুপালনের ফলে খাবার ও দুধ পাওয়া যেত। ঝুড়ির মতাে কিছুকে মাটি ঢেলে লেপে মাটির পাত্র তৈরি করত। কুমােরের চাকার ব্যবহার তখনও হয়নি।

আদিম মানুষের হাতিয়ার উন্নত ও ছােটো পাথরের দ্বারা তৈরি করতে শুরু করে। এই সময় আদিম মানুষ প্রথম কৃষিকাজ করতে শেখে। ফলে তারা নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করতে শুরু করে। নতুন পাথরের যুগে শিকার করতে বা পশু চরাতে ছেলেরা দল বেঁধে যেত। মেয়েরা বাচ্চাদের দেখাশােনা করত, ফলমূল জোগাড় করত। ধীরে ধীরে খাবার না খুঁজে তৈরি করতে শুরু করল। চাষের জমির পাশে বসবাস গড়ে উঠল তা থেকেই চাষবাস কথাটি এসেছে। ফলে যাযাবর মানুষ ধীরে ধীরে কৃষি ও স্থায়ী বসতি গড়ে তুলল।

চাষ করার ফলে পশুপালন সহজ হতে গবাদি পশুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেল। সমাজে ভেদাভেদ ছিল না। প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ফসল উৎপন্ন হত তাই কিছু মানুষ চাষবাস না করে অন্যান্য কাজ করতে থাকে। চাষের কাজে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির প্রয়ােজন হত। পাথর ও কাঠ দিয়ে কারিগরেরা সেগুলাে বানাত। অনেক শক্তিশালী প্রাণী আজ পৃথিবী থেকে বিলীন হলেও মানুষ তার বুদ্ধি ও পরিশ্রমের জোরে বদল ঘটিয়েছে এবং পৃথিবীতে স্থায়ী স্থান করে নিয়েছে। আদিম মানুষ হয়ে উঠেছে সভ্য।

ধীরে ধীরে জঙ্গল কেটে নিজেদের প্রয়ােজন মতাে চাষের জমি ও বসত বাড়ি বার করতে থাকে। যার যত
জমি তার তত ফসল। ফলে ধীরে জমির জন্য লড়াই শুরু হয়। মতের অমিল, বিবাদ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে তারা নিয়ম তৈরি করে যা সবাই মেনে চলত। সভ্য মানুষের চাহিদা বাড়তে থাকে। প্রয়ােজনমতাে জিনিস তৈরি শুরু হয়। প্রথমে শুরু হল জিনিস দিয়ে জিনিস নেওয়া, পরে এল সেকালের মুদ্রা। কেনাবেচা আরও সুবিধা হল। ধীরে সমাজ তৈরি হল, কাজ অনুযায়ী মানুষের মধ্যে ভাগ দেখা দিল। একসময় মানুষ লিখতে শিখল। আর তার প্রয়ােজনে এল বর্ণ বা লিপি। সে সময় মানুষ কেবল গ্রামেই নয়, নগরেও বাস করত। এভাবে গ্রাম ও নগরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠল সভ্যতা। আদিম মানুষের যুগ থেকে ইতিহাস এসে পড়ল সভ্যতার যুগে।

Related Tags : what is history,history,what is history in hindi,what is history?,what is history? (book),what is history answer,what is history explain,what is history in english,#what is history,what is history ?,what is the history,what is history song,what is history about,term 1 what is history,unit 1 what is history,what is history class 6,what is history class 5,what is history of india,what is history for kids,what is history in tamil,

6 মন্তব্যসমূহ

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন