চতুর্থ শ্রেণি বাংলা আদর্শ ছেলে কবিতার প্রশ্ন উত্তর

বাঘাযতীন চতুর্থ শ্রেণি

চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা পাতাবাহার প্রশ্ন উত্তর সমাধান

Class 4 Bangla Patabhar All Answer 2022



বাঘাযতীন গল্পের লেখক পরিচিতি : লেখক পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাঘাযতীনের কন্যার পুত্র পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় পন্ডিচেরীর অরবিন্দ আশ্রম থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘকাল সমাজ ও ইতিহাসের গবেষক হিসেবে কাজ করেছেনবইয়ের লেখকও তিনি। তাঁর অন্যান্য কয়েকটি বই হল সমসাময়িকের চোখে শ্রীঅরবিন্দ, আলোর চকোর প্রভৃতি।

বাঘাযতীন গল্পের  বিষয়বস্তু  :
জ্যোতি একজন দস্যি ও সাহসী ছেলে। জ্যোতির মা-ই তাকে এত সাহসী করে তুলেছে। আঁচলের খুটে বেঁধে গঙ্গার জোয়ারের জলে ছুঁড়ে ফেলে দিতেন। আপ্রাণ লড়তে লড়তে যখন অবসন্ন তখন তার মা তাকে তুলে নিয়ে যেতেন। এভাবেই সে বেশ সাহসী হয়ে ওঠে। রাতেরবেলায় দিদি বিনোদবালার সঙ্গে মায়ের কাছে শুয়ে শান্ত জ্যোতি রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণের গল্প, রাজরাজাদের গল্প শুনতো।ইংরেজরা খুব অত্যাচার করত শুনে রাগে আর দুঃখে জ্যোতির মন ভরে উঠত। সে বলত বড়ো হয়ে সবার দুঃখ ঘোচাবে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সে যায় মামার সঙ্গে কুস্তির আখড়ায়। গট্টিয়া গ্রাম থেকে যাদুমাল ওস্তাদ এসে তালিম দেয়। জ্যোতি তার ন-মামা অনাথের কসরতের সঙ্গী ছিল। ঘোড়ায় চড়া, শিকার, দৌড়ঝাপ ছিল তার মামার দখলে। জ্যোতি ঘোড়ায় চড়তে খুব ভালোবাসত। তাই দেখে তার মামা তাকে একটা টাট্টু ঘোড়া কিনে দিলেন।

বড়ো মামার সঙ্গে একদিন এলেন ফেরাজ খাঁ। চাটুজ্যে বাড়ির পাহারাদার হয়ে লাঠি, ছোরা, বন্দুক, তলোয়ার চালাতে অতি দক্ষ সে। গ্রামের পড়া শেষ হতেই বড়োমামা তাকে ভরতি করলেন কৃষ্ণনগরের অ্যাংলো ভার্নাকুলার হাইস্কুলে। পড়াশুনা, বুদ্ধিতে সে ছিল ভীষণ ভালো। একবার বন্ধুরা মিলে ইস্কুলের গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে খেয়েছিল। হেডমাস্টারমশাইয়ের কাছে নালিশ গেলে জ্যোতি সে কথা অকপটে স্বীকার করে নেয়। তাতে হেডমাস্টারমশাই খুশি হলেন। জ্যোতি কৃষ্ণনগর স্কুলে পড়াশুনা চলাকালীন একদিন গেল কাগজ-পেনসিল কিনতে। হঠাৎ তার কানে এলো একটা হৈ-হল্লা। 
সে তাড়াতাড়ি রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখে একটা পাগলা ঘোড়া ছুটে আসছে। আর রাস্তার মাঝখানে একটা শিশু দাঁড়িয়ে কাঁদছে। সে দৌড়ে রাস্তায় নেমে ঘোড়াটার কেশর ধরে ঘোড়াটাকে আটকালো। এমনকি ঘোড়ার পিঠের ওপর উঠে বসল।

ঘোড়ার আসল সহিস এলো এবং জ্যোতির কাছ থেকে ঘোড়াটাকে নিয়ে গেলো। স্থানীয় উকিল বারাণসী রায়ের আস্তাবল থেকে ঘোড়াটা পালিয়ে এসেছিল। প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় জ্যোতি মামার বাড়ি আসে। কারণ জ্যোতির মামার বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। দুর্গাপুজোর চারদিন জ্যোতির মামার বাড়িতে নানারকম জলসা হয়। তার সঙ্গে হয় খাওয়াদাওয়া। প্রচুর লোক প্রসাদ গ্রহণ করে। জ্যোতি ফুটবল খেলতে, অভিনয় করতে, , নানারকম খেলা দেখাতে পারতো। কিন্তু একটা জিনিস জ্যোতির খুব খারাপ লাগলো। সে দেখলো ভদ্রলোকেরা খায় সাদা ভাত। আর অন্যান্য লোকেদের জন্য রান্না হত ঘরের লাল চালের ভাত।১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে জ্যোতি ও তার ছোটো মামার ব্যবস্থায় জাতি-বর্ণ ভুলে গ্রামের সবাই বসলেন একসঙ্গে পক্তি ভোজনে। হিন্দু, মুসলমান, বামুন, চাঁড়াল সবাই খেলে মহাতৃপ্তিতে মায়ের প্রসাদ।

   🖉 হাতে কলমে :
১. পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় কার পৌত্র?
উত্তর : বাঘাযতীনের পৌত্র পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।
২. তাঁর লেখা একটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : তাঁর লেখা একটি বই হল ‘আলোর চকোর'।
৩. শিলাইদা শব্দটি এসেছে ‘শিলাইদহ’ থেকে। অর্থাৎ ‘দহ’ পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘দা’। নীচের নামগুলি পরিবর্তিত হয়ে কী হবে লেখো :
উত্তর :  শিয়ালদহ = শিয়ালদা। বেলদহ =  বেলদা। খড়দহ = খড়দা।
এরকম কয়েকটি শব্দ তুমি জানো লেখো।
উত্তর : ডুমুরদহ—ডুমুরদা। খেজুরদহ—খেজুরদা।
৪. জ্যোতিকে মা যে যেগল্প শোনান—
উত্তরঃ২.১.রামায়ণ, ২.২.মহাভারত, ২.৩.পুরাণের গল্প, ২.৪.প্রতাপাদিত্যের কাহিনি।

৫. নীচের দুটি স্তম্ভের শব্দগুলিকে বিপরীত শব্দ অনুযায়ী মেলাও :


৬. জ্যোতি যে যে চরিত্রে অভিনয় করতে ভালোবাসে সেগুলির নাম লেখো।
উত্তর : জ্যোতি যে চরিত্রে অভিনয় করতে ভালোবাসে সেগুলির নাম হল ভক্ত হনুমান, লক্ষ্মণ, রাজা হরিশচন্দ্র, বীর প্রতাপাদিত্য। বহুবার তাকে দেখা গিয়েছে বড়োমামার পাগড়ি চুরি হনুমানের লেজ বানাতে।
৭. গল্পটি পড়ে জ্যোতির যে কাজগুলিকে দুঃসাহসিক বলে মনে হয়েছে সেগুলি বর্ণনা করো।
  • ১. জ্যোতি স্কুলের বাগান থেকে কাঁঠাল চুরি করে বন্ধুদের ভোজ বসিয়েছিল। 
  • ২. জ্যোতি হেডমাস্টারমশাই-এর কাছে সত্যকথা কবুল করতে ভয় পায়নি। 
  • ৩. এক শিশুকে রাস্তার মাঝখানে পাগলা ঘোড়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল।
  • ৪. জ্যোতি নারকেল বুকে নিয়ে মাটিতে উপুড় শুয়ে মাটি আকড়ে এক সাহসিকতার খেলা দেখিয়েছিল।
৮. স্কুলের বাগানে বড়ো কাঁঠাল পেকেছে। এখানে ‘পাকা’ ক্রিয়াপদটি যে-অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে সেই অর্থ ছাড়া তোমরা আর কী কী অর্থে ব্যবহার করতে পারো লেখো।
উত্তরঃ যেমন—ক) গ্রামে অনেক পাকা বাড়ি আছে। খ) মেয়েটা অল্প বয়সে খুব পেকে গেছে। গ) ফোঁড়া পাকতে দেরি করেছে। ঘ) ছেলেটির বিয়ের পাকা কথা হয়ে গেল। ঙ) সবসময় পাকা কাজ করতে হয়, কাঁচা কাজ করলে পস্তাতে হয়। চ) কেন পাকা ধানে মই দিতে এসেছো, সে তো তোমার কোনো ক্ষতি করেনি। ছ) জয়ন্তবাবুর পাকা মাথা, সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করেন। জ) এইটুকু এক শিশু, কী পাকা-পাকা কথা রে বাবা! ঝ) পাকা হাতের খেলোয়াড় কালীবাবু, জয়লাভ তো হবে।


৯. কর্তা, কর্ম, ক্রিয়াগুলিকে তাদের ঘরে বসাও :
৯.১. একটি টাট্টু ঘোড়া কিনে দিলেন মামা।
 উত্তরঃএখানে কর্তা মামা। কর্ম—টাট্টু ঘোড়া। ক্রিয়া—কিনে দিলেন।
৯.২. যাদুমাল ওস্তাদ কুস্তি শেখায়।
উত্তর : এখানে কর্তা— যাদুমাল ওস্তাদ। কর্ম— কুস্তি। ক্রিয়া—শেখায়।
৯.৩. মা সাঁতার শেখাতেন।
উত্তর : এখানে কর্তা—মা। কর্ম—সাঁতার। ক্রিয়া-শেখাতেন।
৯.৪: জ্যোতি বাউল গান শোনে। 
উত্তর : এখানে কর্তা—জ্যোতি। কর্ম—বাউল গান। ক্রিয়া-শোনে।

১০. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
১০.১. জ্যোতির মায়ের নাম কী?
উত্তর : জ্যোতির মায়ের নাম শরৎশশী।
১০.২. মা জ্যোতিকে কোন নদীতে স্নান করাতে নিয়ে যেতেন?

উত্তর : মা জ্যোতিকে গড়ুই নদীতে স্নান করতে নিয়ে যেতেন।
১০.৩. রবি ঠাকুরের ভাইপো কে?
উত্তর : রবি ঠাকুরের ভাইপো সুরেন।
১০.৪. জ্যোতির ন-মামার নাম কী?
উত্তর : জ্যোতির ন-মামার নাম অনাথ।
১০.৫. ফেরাজ খাঁ-এর বাড়ি কোথায় ছিল?
উত্তরঃ উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ফেরাজ-এর বাড়ি ছিল।
১০.৬. জ্যোতির বড়োমামার পেশা কী ছিল?

উত্তর : জ্যোতির বড়োমামার পেশা ছিল ওকালতি করা।
১০.৭. জ্যোতি কোন স্কুলে ভরতি হয়েছিল?
উত্তর : জ্যোতি কৃষ্ণনগরের অ্যাংলো ভার্নাকুলার হাইস্কুলে ভরতি হয়েছিল।
১০.৮. ১৮৯৩ সালে জ্যোতির বয়স ছিল ১৪। কত সালে জ্যোতির ৭ বছর বয়স ছিল?
উত্তর : ১৮৮৬ সালে জ্যোতির বয়স ছিল ৭ বছর।

১১. নীচের শব্দগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
১১.১. জ্যোতি কীভাবে সাঁতার শিখেছিল?
উত্তর :  জ্যোতির মা জ্যোতিকে নিয়ে গড়ুই নদীতে স্নান করতে যেতেন কী বর্ষা, কী শীত। শাড়ির একমুড়ো জ্যোতির কোমড়ে বেঁধে অন্য মুড়োটা বজ্রমুষ্টিতে ধরে তিনি একমাত্র ছেলেকে তিনি ছুঁড়ে ফেলে দিতেন জোয়ারের জলে। ঢেউ-এর সঙ্গে আপ্রাণ লড়তে লড়তে জ্যোতি সাঁতার শেখে।
১১.২. কৃষ্ণনগর স্কুলে জ্যোতির কাঁঠাল পাড়ার কাহিনিটি বর্ননা করো।
উত্তর : স্কুলের গাছে বড়ো কাঁঠাল পেকেছে। গন্ধে সবার মন মেতে উঠেছে। যথেষ্ট ইচ্ছে থাকলেও কারো সাহস হচ্ছে না যে কেউ কাঁঠালটি পেড়ে আনবে। জ্যোতি একটা মতলব বের করল। স্কুল ছুটির শেষে সবাইকে বাড়ি যেতে মানা করল। স্কুল ছুটির শেষে বন্ধুদের কয়েকজনকে নিয়ে সে কাঁঠালটা পাড়ল। তারপর মহানন্দে সহপাঠীদের সঙ্গে ভোজ বসিয়েছিল জ্যোতি।
১১.৩. কৃষ্ণনগরে জ্যোতি কীভাবে একটি শিশুকে বাঁচিয়েছিল সেই কাহিনিটি লেখো।
উত্তর : জ্যোতি একদিন কুয়নগরের বাজারে নদিয়া ট্রেডিং কোম্পানির দোকানে গিয়েছে কাগজ-পেনসিল কিনতে। এমন সময় তার কানে এলো এক হই-হল্লার আওয়াজ। সে দেখল পথচারীরা সবাই ছুটে পালাচ্ছে। একটা পাগলা ঘোড়া বেরিয়েছে রাস্তায়। সে আরও দেখল যে, রাস্তার মাঝখানে একটি শিশু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আর ওই পথেই পাগলা ঘোড়া তীব্রগতিতে ছুটে আসছে। জ্যোতি কোনো দিগ্‌বিদিক চিন্তা না করেই শিশুটিকে বাঁচাতে উদ্যত হল। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘোড়াটা শিশুটির সামনে
চলে এসেছে। জ্যোতি তিরবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে চেপে ধরল ঘোড়ার কেশর। আচমকা বাধা পেয়ে শিষ-পা হয়ে ঘোড়াটা জ্যোতিকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করল কয়েকটা ঝটকা দিয়ে। জ্যোতি ততক্ষণে উঠে বসে শান্ত ভঙ্গিতে ঘোড়ার পিঠে গলায় দাবনাতে ছোটো ছোটো চাপড় মেরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। ঘোড়া শান্ত হয়ে গেল। শিশুটিও বাঁচতে পারল। চারদিকে জ্যোতির ধন্য ধন্য রব পড়ে গেল।

১১.৪. জ্যোতির জীবনে তাঁর মা ও দিদির ভূমিকার কথা লেখো।
উত্তর : জ্যোতির মা ছিলেন শরৎশশী। তিনি যেমন সাহসী ছিলেন তেমনি তার ছেলেকে সাহসী ও বিপদকে তুচ্ছ করতে শিখিয়েছিলেন। তা না হলে ওই একরত্তি ছেলেকে কেউ গঙ্গার জোয়ারের জলে ছুঁড়ে ফেলে দিতে সাহস পেত না। তাঁর মা-ও ছিলেন সুপটু সাঁতারু। জ্যোতির দিদির নাম ছিল বিনোদবালা। সেও ছিল শান্ত, ধীর, স্থীর। রাতেরবেলায় মায়ের কোলে শুয়ে জ্যোতি, দিদি বিনোদবালার সঙ্গে মায়ের কাছে নানান গল্প শুনতো। ভাইকে যে বড়োই ভালোবাসত সে।
১১.৫. পাঠ্যাংশে জ্যোতির জীবনে তাঁর মামাদের প্রভাব কেমন ছিল?
উত্তর : জ্যোতি খুব দস্যি ছেলে হলেও সে মামার বাড়িতেই মানুষ। মামারা জ্যোতিকে খুব ভালোবাসত। জ্যোতি সব কিছুতেই ছিল পারদর্শি। মামারা যেমন ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, ভালো বনেদি পরিবার, শিকার করা, অভিনয়, নাটক-থিয়েটার করা, গরিব-দুঃখীদের দেখা সবকিছুতেই তাঁরা ছিলেন সিদ্ধহস্ত। জ্যোতিও হয়েছিল মামাদের মতো। মামারাও জ্যোতির সবকিছুতেই প্রেরণা যুগিয়েছিল। পড়াশুনাতেও জ্যোতি ছিল তুখর। মানুষের দুঃখে দুঃখ পেত সে, জাতপাত বিচার করতো না, মানুষের বিপদে এগিয়ে যেত। মামাদের সবরকম প্রভাব তার ওপর পড়েছিল বলেই সে আমাদের কাছে একজন স্মরণীয় ব্যক্তি।
১১.৬. জ্যোতির মামাবাড়ির সঙ্গে রবিঠাকুরের সম্পর্ক কী ছিল?
উত্তর : জ্যোতির মামার বাড়ি হল রবিঠাকুরের বন্ধুর বাড়ি। ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে কয়ার চাটুজ্যে বাড়ির তিন-চার পুরুষের সম্পর্ক। বড়োমামা বসন্তকুমারের মক্কেল ও বন্ধু ছিলেন রবিঠাকুর।
১১.৭. ‘ফেরাজের কাছে জ্যোতি খবর পেল,'— কে এই ফেরাজ? তাঁর কাছ থেকে জ্যোতি কী খবর পেল?
উত্তর : ফেরাজ খাঁ চাটুজ্যে বাড়ির পাহারাদার। তাঁর বাড়ি উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে (বর্তমান আফগানিস্তানে)। লাঠি, ছোরা, তরোয়াল, বন্দুক চালাতে অতি দক্ষ সে।
১১.৮. পাঠ্যাংশ থেকে খুঁজে নিয়ে জ্যোতির শিশুসুলভ/কিশোরসুলভ চাপল্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর : কিশোর বয়সে জ্যোতি মায়ের সঙ্গে গঙ্গায় সাঁতার শিখল। সে মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতো। সে গল্প শুনতো আর বলত বড়ো হয়ে সে সবার দুঃখ ঘুচিয়ে দেবে। একবার সে স্কুলের বাগান থেকে পাকা কাঁঠাল পেড়ে এনে বন্ধুদের নিয়ে ভোজ বসিয়েছিল। এমনকি পাগলা ঘোড়ার হাত থেকে রাস্তায় থাকা এক শিশুকে বাঁচিয়েছিল সে।
১১.৯. ‘কিছুই হয়নি এমনভাবে জ্যোতি চলে গেল তার নিজের পথে— কোন ঘটনার পর জ্যোতি এমনভাবে চলে গিয়েছিল?
উত্তর : পাগলা ঘোড়ার হাত থেকে যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা শিশুটিকে বাঁচালো তখন সকল পথচারীরা ধন্য ধন্য করে উঠল। এমনকি ঘোড়াটাকেও শান্ত করে দিয়েছিল। পথচারীরা তো অবাক। সেই সময় কিছুই হয়নি এমনভাবে জ্যোতি চলে গেল তার নিজের পথে।
১১.১০. জাতপাতের ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা ছোটোবয়েসেই কীভাবে জ্যোতি অতিক্রম করতে পেরেছিল?
উত্তর : জ্যোতি জাতপাত মানতো না। এসব বিশ্বাসও করত না। জ্যোতির মামার বাড়িতে দুর্গাপুজো হত। সেই সময় চারদিন তার মামার বাড়িতে নিত্য প্রায় ৪০০ কেজি চালের ভাত রান্না করা হত। বহুলোকের সমাগম হত। তারা মায়ের প্রসাদ খেতো। কিন্তু ভদ্রলোকেদের জন্য রান্না হত সাদা ভাত আর সকলের জন্য ঘরের লাল চালের ভাত পরিবেশিত হত। জ্যোতি দেখল যে, এক জেলে কিন্তু কিন্তু করে একটু সাদা ভাত চেখে দেখতে চাইল। তাতে জ্যোতির খুব দুঃখ ও মায়া হল। ছোটোমামার সঙ্গে গিয়ে সে বসন্ত কুমারকে ধরল। পরদিন থেকেই সবার জন্য এলো সাদা ভাত। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে জ্যোতি ও তার ছোটোমামার ব্যবস্থায় জাতি-বর্ণ ভুলে গ্রামের সবাই বসলেন একসঙ্গে একই পঙ্ক্তি-ভোজনে। হিন্দু, মুসলমান, বামুন, চাঁড়াল সবাই মায়ের প্রসাদ খেলেন মহাতৃপ্তিতে।


১১.১১. পাঠ্যাংশে জ্যোতির নানা ধরনের কাজের যে পরিচয় ছড়িয়ে রয়েছে, তা নিয়ে তুমি নিজের ভাষায় একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো।
উত্তর : জ্যোতি ছোটোবেলা থেকেই আপ্রাণ লড়াই করে নদীবক্ষে সাঁতার শেখে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে জ্যোতি যায় তার মামার সঙ্গে কুস্তির আখড়ায়। তা ছাড়া সে মামাদের সঙ্গে সঙ্গে থেকে ঘোড়ায় চড়া, শিকার করা, দৌড়-ঝাঁপ সবকিছুই শেখে। সে ঘোড়ায় সওয়ার করতে খুব ভালোবাসে। যখন-তখন ঘোড়া নিয়ে বেড়িয়ে যেত। লাগাম ছাড়াই কাদামাঠ পার হয়ে সে সাতারার দুর্গে স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায়। গ্রামের পড়া শেষ করে সে যখন কৃষ্ণনগরের অ্যাংলো ভার্নাকুলার হাইস্কুলে ভরতি হল তখন ঘটল এক ঘটনা। সে ওই স্কুলের কাঁঠাল গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেল। আর একদিন সে কাগজ-পেনসিল কিনতে বেরিয়েছে সেই সময় তার কানে এলো এক দারুণ হই-হল্লা। তাকিয়ে দেখে পথচারী সবাই ছুটে পালাচ্ছে। একটা পাগলা ঘোড়া বেরিয়েছে রাস্তায়। মাঝপথে দাঁড়িয়ে কাঁদছে একটি
শিশু। 

জ্যোতি মনস্থির করে ফেলল। একলাফে রাস্তায় নেমে ঘোড়াটির কেশর চেপে ধরল। আচমকা বাধা পেয়ে শিষ-পা হয়ে ঘোড়াটা জ্যোতিকে ফেলে দিতে গেল। জ্যোতি ততক্ষণে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসেছে। ঘোড়াটাকে বশ করে সহিসের হাতে তুলে দিল। সবাই ধন্য ধন্য করল তাকে। জ্যোতি ফুটবল খেলত। অভিনয় করত। মামাবাড়িতে দুর্গাপুজোয় সকলের জন্য সাদাভাতের আয়োজন করান মামাকে দিয়ে। নবমীর দিন নানারকম বল-পরীক্ষার খেলা - হয়। এটাও একটা আনন্দ। জ্যোতিও একটা নারকেল বুকে নিয়ে উপুড় হয়ে মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকে, আট-দশটা সাজোয়ান প্রজা মিলেও তার কাছ থেকে এটা কেড়ে নিতে পারে না। এ ছাড়াও জাত-পাত ভুলে গ্রামের হিন্দু-মুসলমান, বামুন, চাঁড়াল সবাইকে এক পঙ্ক্তি-ভোজনে বসিয়ে মায়ের প্রসাদ খাওয়ালো। মহাতৃপ্তিতে তারা তা খেলেন।


আদর্শ ছেলে কবিতার প্রশ্ন উত্তর


আদর্শ ছেলে কবিতার লেখিকা পরিচিতি :
১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে কবি কুসুমকুমারী দাশ বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশের মা। তিনি নিজেও ছিলেন সেই সময়ের বিশিষ্ট মহিলা কবি ও সুলেখিকা। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থের নাম ‘কবিতা মুকুল’। এছাড়া ‘পৌরাণিক আখ্যায়িকা’ নামক একটি গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেন। প্রবাসী’, ‘ব্রশ্নবাদী’, ‘মুকুল’ প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর রচিত অসংখ্য কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা কবিতার ভাষা সরল এবং ভাব সহজ। তাই সাধারণ পাঠক তা অনায়াসে গ্রহণ করতে পারে।

আদর্শ ছেলে কবিতার বিষয়বস্তু : একটি সুস্থ, সবল, সাহসী, সত্যবাদী শিশু সব পরিবারের স্বপ্ন, সব দেশের সম্পদ। যার মুখের হাসি, বুকের বল, মানুষ হওয়ার অটল প্রতিজ্ঞা দেশের গরিমা বাড়িয়ে তোলে। এ কবিতাটি পরাধীন ভারতের এক গৃহবধূর। তাঁর চোখে স্বাধীন সুন্দর ভারতবর্ষের স্বপ্ন। স্বপ্নের দেশ গড়তে চাই অথবা রাজার কুমার—যদি সে মিছে ভয় ত্যাগ নতুন শক্তি, নতুন বল, নতুন কারিগর। শিশু, সে কৃষক পুত্ৰই করে, বিপদ বাধা তুচ্ছ করে তার নিষ্পাপ শক্তিকে দান করতে পারে তবেই দেশের কল্যাণ। তবেই তো তাদের মানুষ হওয়া সার্থক হয়ে উঠবে। আদর্শ ছেলেই আদর্শ মানুষ হবে। বড়ো কথা নয়, বড়ো বড়ো কাজ করে আদর্শ দেশ গড়বে।

  🖉 হাতে কলমে :
১. কুসুমকুমারী দাশের কবিতা কোন কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হত?
উত্তর : ‘প্রবাসী’, ‘ব্রষ্মবাদী’, ‘মুকুল’ প্রভৃতি পত্রিকায় কুসুমকুমারী দাশের কবিতা প্রকাশিত হত।
২. তাঁর রচিত একটি গদ্যগ্রন্থের নাম লেখো। 
উত্তর : তাঁর রচিত একটি গদ্যগ্রন্থের নাম ‘পৌরাণিক আখ্যায়িকা'।
৩. নীচের শব্দগুলির বর্ণ-বিশ্লেষণ করো। একটি ছক করে তার ঠিক ঠিক ঘরে হ্রস্বস্বর, দীর্ঘস্বর এবং বর্গীয় বর্ণগুলিকে বসাও : আমাদের, আগুয়ান, প্রাণ, কৃষক, বিশ্বমাঝার, কল্যাণ
 
বর্ণ হ্রস্বস্বর দীর্ঘস্বর
আমাদের আ, মা, দে
আগুয়ান গু ন আ, য়া
প্রাণ প্রা
কৃষক কৃ ষ ক
বিশ্বমাঝার বি র শ্ব মা ঝা
কল্যাণ ক ণ ল্যা


৪. এই কবিতায় মানুষের যে যে অঙ্গের নাম পেয়েছ সেগুলি বের করে প্রতিটির তিনটে করে সমার্থক শব্দ লেখো।
উত্তর : মুখ— আনন, বদন, মুখমণ্ডল। বুক— বক্ষস্থল, অন্তর, বক্ষের ছাতি। মন— চিত্ত, হৃদয়, অন্তঃকরণ। রক্ত—শোণিত, রুধির। মাংস— আমিষ, পলল। প্রাণ—জীবন, জীবনীশক্তি, হৃদয়। হাত—হস্ত, পাণি, কর। পা—চরণ, পদ,পায়ের পাতা। চোখ— চক্ষু, দৃষ্টি, নজর। মাথা— মস্তক, শির, মস্তিষ্ক।
৫. শূন্যস্থান পূরণ করো :
৫.১ নাই কি শরীরে তব রক্ত, মাংস, প্রাণ?
৫.২ চেতনা রয়েছে যার, সে কি পড়ে রয়?
৫.৩ আসে যার চোখে জল, মাথা ঘুরে যায়।
৫.৪ কৃষকের শিশু কিংবা রাজার কুমার। 
৫.৫ মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন।
৬. কবিতার পঙক্তিগুলিকে গদ্যরূপে লেখো :
৬..১ বিপদ আসিলে কাছে, হও আগুয়ান।
উত্তর : বিপদ কাছে এলে, আগুয়ান হও।
৬.২ আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
উত্তর : আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে?
৬.৩ সবারই রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার।
উত্তর : এ বিশ্বমাঝারে সবারই কাজ রয়েছে।
৬.৪ মানুষ হইতে হবে, মানুষ যখন।
উত্তর : মানুষ যখন, তখন মানুষ হতে হবে।
৬.৫ নাই কী শরীরে তব রক্ত, মাংস, প্রাণ?

উত্তর : তার শরীরে কী রক্ত, মাংস, প্রাণ নেই?


৭. নীচের শব্দগুলিতে কোন কোন অল্পপ্রাণ, মহাপ্রাণ, ঘোষ ও অঘোষ বর্ণ আছে লেখো : 
কথা, মুখ, প্রাণ, মানুষ, দান, চোখ।
উত্তর : এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে জেনে নাও অল্পপ্রাণ, মহাপ্রাণ, ঘোষ ও অঘোষ বর্ণ কাকে বলে।
  1. অল্পপ্রাণ বর্ণ : ব্যাঞ্জনবর্ণের প্রত্যেক বর্গের প্রথম ও তৃতীয় বর্ণের ধ=নি লক্ষ করলে দেখা যায় তাতে তেমন প্রাণ নেই। এ ছাড়া বর্ণগুলি উচ্চারণ করতে গেলে শ্বাসবায়ুরও দরকার লাগে কম। তাই একে অল্পপ্রাণ বর্ণ বলে। যেমন— ক, গ, চ, জ, ট, ড, ত, দ, প, ব ইত্যাদি।
  2. মহাপ্রাণ বর্ণ : বর্গের যে বর্ণগুলির উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ুর দরকার হয় বেশি, তাদের বলা হয় মহাপ্রাণ বর্ণ। যেমন— খ, ঘ, ছ, ভ ইত্যাদি।
  3. ঘোষ বর্ণ : গ, ঘ, ন, জ, ভ, ঞ ইত্যাদি—বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম—এই বর্ণগুলির উচ্চারণ গাম্ভীর্যপূর্ণ। এজন্য এদের বলা হয় ঘোষ বর্ণ।
  4. অঘোষ বর্ণ : বর্গের প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ণ’ও ‘স’—অঘোষ হিসেবে পরিচিত। এদের উচ্চারণ মৃদু এবং গাম্ভীর্যহীন বলে এদের এই নাম।
বর্ণ অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ ঘোষ অঘোষ
কথা থা
মুখ মু
প্রাণ প্রা
মানুষ মা, নু
দান দা
চোখ চো


৮. নীচের বাক্যগুলির কর্তা / ক্রিয়া / কর্ম চিহ্নিত করে লেখো :

কর্তা ক্রিয়া কর্ম
৮.১ আমাদের দেশ, ছেলে হবে যবে
৮.২ ‘মানুষ’ হবে হইতে
৮.৩ সে ছেলে চায় বলো
৮.৪ সবারই রয়েছে কাজ
৮.৫ তোমরা হলে কল্যাণ

৯. নীচের বাক্য / বাক্যাংশগুলির থেকে সর্বনাম খুঁজে নিয়ে তা দিয়ে আলাদা বাক্য রচনা করোঃ
৯.১ তব তব শুভ নামে জাগে।
৯.২ সে যেই সে এলো সেই সে লুকিয়ে পড়ল।
৯.৩ যার ➙ যার-তার সঙ্গে কোথাও যাওয়া উচিত নয়।
৯.৪ সে পরীক্ষায় এবার সে ভালো ফল করেছে।
৯.৫ তোমরা ➙ তোমরা কি কাল খেলতে যাবে?

১০. পাশের শব্দগুলির আগে বিশেষণ জুড়ে তা দিয়ে বাক্যরচনা করো :
ছেলে, বিপদ, প্রাণ, কৃষক, শক্তি, দেশ।
  1. ছেলে ➙ সাহসী ছেলেই ভালো কাজে প্রাণ দিতে পারে। 
  2. বিপদ ➙ মহা বিপদেও শান্ত থাকো। 
  3. প্রাণ ➙  সুভাষচন্দ্ৰ বসু মহা প্রাণ ব্যক্তি।
  4. কৃষক ➙ এক দরিদ্র কৃষকের চার ছেলে ছিল। 
  5. শক্তি ➙  সত্যই পরম শক্তি। 
  6. দেশ ➙ ভারত মহান দেশ।
১১. নীচের পঙ্ক্তিগুলিতে ‘কি’-এর ব্যবহার লক্ষ করো-
‘নাই কি শরীরে তব রক্ত, মাংস, প্রাণ’?
‘চেতনা রয়েছে যার, সে কি পড়ে রয়’?
(এখানে ‘কি’ বলতে হ্যাঁ বা না জানতে চাওয়া হয়েছে।
)
১১.১ এবার তুমি 'কি' ব্যবহার করে আরও দুটি বাক্য লেখো :
উত্তর : (ক) তুমি কি আমাদের বাড়িতে আসবে? (খ) না পড়লে কি পাশ করা যায়?
১১.২ বাক্যে ‘কী’-এর ব্যবহার কখন হয় তা-ও জেনে নিয়ে আরও দুটি বাক্য লেখোঃ
উত্তর : (ক) আজ কী খাবে বলো? (খ) কী পড়েছ আজ সারাদিন?
১২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
১২.১ ‘কথায় না বড়ো হয়ে কাজে বড়ো হবে'—বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর : কবি কুসুমকুমারী দাশ বলতে চেয়েছেন যে বড়ো বড়ো কথা না বলে ছেলেরা বড়ো বড়ো কাজের মধ্য দিয়ে দেশের কল্যাণ করবে।.
১২.২ ‘চেতনা রয়েছে যার সে কি পড়ে রয়?’ – চেতনাসম্পন্ন মানুষ কী ধরনের কাজে এগিয়ে যায়?
উত্তর : নিজের, পরিবারের, সমাজের তথা দেশের মঙ্গল হবে এমন কাজে চেতনাসম্পন্ন মানুষ এগিয়ে যায়।
১২.৩ ‘সবারই রয়েছে কাজ এ বিশ্বমাঝার।' —তুমি বড়ো হয়ে কোন কাজ করতে চাও?  কেনই বা তুমি সেই কাজ করতে চাও লেখো।
উত্তর : আমি বড়ো হয়ে শিক্ষক হতে চাই। আমি শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকায় শুধু ছাত্রছাত্রীদেরই নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরের ছেলেমেয়েদের যথাসাধ্য শিক্ষাদান করার চেষ্টা করব। এর ফলে ওইসব ছেলেমেয়েরা শিক্ষালাভ করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া চেষ্টা করব, বিশেষত মহিলাদের শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করব। শুধু পুথিগত বিদ্যাই নয়, ব্যাবহারিক জীবনে প্রকৃত শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করব। এভাবে আমি সমাজের নানা কাজে যুক্ত হয়ে সমাজকে বাস্তবমুখী, ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করব।
১২.৪ ‘আদর্শ ছেলে' কবিতায় কবি আমাদের দেশের ছেলেদের কাছে কী প্রত্যাশা করেন?
উত্তর : কবি কুসুমকুমারী দাশ এদেশের ছেলেদের কাছে অনেক আশা রাখেন। যেমন- তারা কথায় বড়ো না কাজে বড়ো হবে। মুখে হাসি, বুকে বল আর তেজে ভরা মন নিয়ে তারা মানুষ হওয়ার প্রতিজ্ঞায় অটল হবে। বিপদে এগিয়ে যাবে নির্ভয়ে। চাষির ছেলে থেকে রাজার ছেলে সবাই নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দেশের উন্নতি করবে।
১২.৫ প্রত্যেক দেশবাসীর কী প্রতিজ্ঞা করা উচিত?
উত্তর :মানুষ হতেই হবে এই প্রতিজ্ঞায় অটল হতে হবে সব মানুষকে। আর তা হতে গেলে মুখে হাসি, বুকে বল আর তেজে ভরা মন চাই। চাই বড়ো কথা নয়—বড়ো কাজ।
১২.৬ দেশের জন্য অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে দেশকে স্বাধীন করেছেন, এমন কয়েকজনের নাম লেখো।
উত্তর : নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ, ক্ষুদিরাম বসু, মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ইত্যাদি।
১২.৭ 'আদর্শ ছেলে'-কে প্রধানত কোন কোন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হবে?
উত্তর : ‘আদর্শ ছেলে" হতে গেলে তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। তাকে কথায় না বড়ো হয়ে কাজে বড়ো হতে হবে। তার থাকবে মুখে হাসি, বুকে বল ও তেজে ভরা মন। বিপদ কাছে এলে শক্তপোক্ত দেহের অধিকারী ছেলেকে এগিয়ে যেতে হবে। ভয়কে দূরে সরিয়ে রেখে চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে। এ বিশ্বমাঝারে তাকে যে-কোনো কাজে এগোতে হবে। সর্বোপরি, তাকে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে।
১২.৮ ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় কবি যেমন ছেলেকে আমাদের দেশের জন্য চেয়েছেন, তেমন কোনো প্রিয় ‘ছেলে’-র সম্পর্কে কয়েকটি বাক্য লেখো।
উত্তর : ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় কবি যেমন ছেলেকে আমাদের দেশের জন্য চেয়েছেন, তেমন একটি ছেলে আমাদের পাড়াতেই থাকে। ছেলেটি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভরতি হয়েছে। ছেলেটির নাম প্রদীপ। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও সচ্ছল নয়। কিন্তু সে যে-কোনো কাজে এগিয়ে যায়—তা পরিবারের হোক বা বিদ্যালয়ের হোক বা সমাজের হোক। সবসময়ই তার মুখে থাকে হাসি, বুকে থাকে বল আর মন থাকে তেজে ভরা। বাড়িতে সে বিনা পারিশ্রমিকে গরিব বা দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের পড়ায়। তার প্রতিজ্ঞা সে বড়ো হয়ে মানুষের মতো মানুষ হবে। শিক্ষা আনে চেতনা, আর চেতনার বিকাশ ঘটিয়েই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় সে। তার পণ—তাকে মানুষ হতে হবে। আর প্রদীপের মতো শিখা জ্বালিয়েই সমাজের সব অন্ধকার দূর করবে—এই তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।

উঠো গো ভারতলক্ষ্মী প্রশ্ন উত্তর

উঠো গো ভারতলক্ষ্মী কবিতার কবি পরিচিতি :
১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা শহরে কবি অতুলপ্রসাদ সেন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। ওকালতি তাঁর পেশা। তিনি ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর কর্মজীবন অতিবাহিত হয় লখনউ শহরে। ‘উত্তরা’ নামক সংবাদপত্রের সম্পাদক ছিলেন তিনি। ‘কয়েকটি গান’ নামক পুস্তকটিও তাঁর রচনা। জীবনের বেশির ভাগ সময় তাঁর লখনউ শহরে অতিবাহিত হলেও প্রবাসে বসে তিনি বাংলাভাষার সেবা করেন। বেশির ভাগ বাঙালির কাছে তিনি সংগীতকার ও সুরকার হিসেবে বেশি পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের মতোই তাঁর রচিত সংগীত ও সাহিত্যও জনসাধারণের কাছে অতি জনপ্রিয় ছিল।

তাঁর সংগীত গুলিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন -(১) স্বদেশি সংগীত। (২) ভক্তিগীতি ও (৩) প্রেমগান। তিনি বাংলাভাষাকে এতটাই পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখেন যে, ‘আ-মরিবাংলাভাষা’কবিতায় তাঁর মহিমা বর্ণনা করেছেন। বাংলাভাষার মধ্যে তিনি পরম শান্তি ও সুখ খুঁজে পান। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট লখনউ শহরে তিনি পরলোকগমন করেন।

উঠো গো ভারতলক্ষ্মী কবিতার বিষয়বস্তু :
কবি অতুলপ্রসাদ সেন এই কবিতায় ভারতলক্ষ্মীকে জাগ্রত হওয়ার কথা বলেছেন। দেশে যত দুঃখ ও দৈন্যদশা আছে তা যেন ভারতলক্ষ্মী দূর করেন। এই দৈন্যদশা তো ভারতের লজ্জা। শোকের শয্যা ছেড়ে পদ্মফুলে, সোনার ধানে দেশকে ভরিয়ে দাও। মায়ের মতো করে দেশকে বুকে জড়িয়ে ধরো সন্তান স্নেহে। তিরিশ কোটিরও বেশি নরনারী তোমার পায়ের নীচে বসে কাঁদছে। অপমানিত, লাঞ্ছিত ভারতবর্ষে আমরা সবাই শঙ্কিত, কম্পিত। তোমার অভয়দানের স্পর্শে তরণী শুভ কর্মের লক্ষ্যে পৌঁছাবে। শ্মশানে পূর্ণ হওয়া ভারতে মা কলকাকলীতে ভরিয়ে দাও। হিংসা, দ্বেষ চূর্ণ করে দাও। পাপ মোচন করো। ভারতকে পূণ্যের কাজে ভরিয়ে দাও।

Ads

 উঠো গো ভারতলক্ষ্মী কবিতার প্রশ্নও উত্তর প্র্যাকটিস :
১.  শূন্যস্থান পূরণ করো :
(১) ভারত______কারো পূণ্যে।
উত্তর : শ্মশান।
(২) ____হিংসা করি_____।
উত্তর : দ্বেষ, চূর্ণ।
(৩)____ করি পাপপুঞ্জে,_______ভুঞ্জে।
উত্তর : দূরিত, তপঃ।
(৪) পুনঃ____কারো ভারত_____।
উত্তর : বিমল, পূণ্যে।

২. বর্ণ বিশ্লেষণ করো :
  1. রণী➙ ত্ + র্ + ন্ + ই
  2. চরণতলে➙ চ্ + র্ + ণ +ত্ + ল্ + এ
  3. জননী➙ জ্ + ন্ + ন্ + ই
  4. কোকিল➙ ক্ + ও + ক্ + ই + ল্

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন