বি.এ সমাজবিদ্যা জেনারেল 3rd Semester নোটস
প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা তোমাদের সোসিওলজি মানে সমাজবিদ্যা থার্ড সেমিস্টার লিখিত পরীক্ষা হবে মোট - ৩২ নম্বরের। সময় থাকবে - ২ঘন্টা। আর তোমাদের ৪টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে প্রতিটি প্রশ্নের মান - ৮ করে । এ ছাড়াও তোমাদের আরো নম্বর থাকছে যে যে বিষয়ের উপর সেগুলি হলো -
● (Attendance) নাম প্রেজেন্ট - ৪
● (Tutorial) ক্লাসে - ৮
● (Internal Assessment) প্রজেক্ট - ৬ তাহলে সমাজবিদ্যা পেপার মোট ৫০ নম্বরের ।
❐ নোটস প্রশ্ন
Q1. শ্রীনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গ্রামীণ পুনর্গঠনের কর্মসূচীগুলি বিশ্লেষণ করো।
অথবা, শ্রীনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুনর্গঠনের কর্মসূচীগুলি বিশ্লেষণকরো।
Q2. গ্রামীণ সমাজ ও নগর সমাজের পার্থক্য নিরূপণ করো।
Q3. ভারতের গ্রামীণ সমাজের অর্থনীতির ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব বিশ্লেষণ করো।
Q4. নগরায়ণ বলতে কী বোঝো? নগরায়ণের প্রভাবগুলি আলোচনা করো।
Q5. গ্রামীণ দারিদ্র্য সম্পর্কে লেখো। দারিদ্র্য দূরীকরণে শহরভিত্তিক কর্মসূচি কী?
Q6.গান্ধিজির সর্বোদয় ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, গান্ধিজির সর্বোদয় ধারণার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
অথবা, গান্ধিজির সর্বোদয় ধারণার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
Q7.যজমানি ব্যবস্থার ধারণাটি ব্যাখ্যা কর। তুমি কি মনে কর এটি একটি শোষণমূলক ব্যবস্থা?
অথবা, যজমানি ব্যবস্থা কী ? যজমানি ব্যবস্থার ধারণা ও বৈশিষ্ট্য লেখো।
অথবা, শ্রীনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুনর্গঠনের কর্মসূচীগুলি বিশ্লেষণ করো।
ভূমিকা : দেশ বিদেশে অনেক বড়ো মাপের মানুষ জন্মেছেন, এদের মধ্যে অনেকেই মানুষের কল্যাণের জন্য নানা তাত্ত্বিক বিষয়ে দিক নির্দেশ করে গেছেন। কিন্তু তত্ত্বকে যারা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করেছেন, শ্রম দিয়ে, সাধনা দিয়ে এমনকি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মহাত্মা গান্ধি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বারবার ব্যক্তির সর্বঙ্গীন বিকাশের কথা, মুক্ত সমাজ সৃষ্টির কথা বিভিন্ন ভাবে তুলে ধরেছেন। ভারতে ব্রিটিশ শাসনে উন্নত কুটিরশিল্প কীভাবে এমন দুর্বল হয়, তার প্রেক্ষাপটে লেখা ‘পণরক্ষা’ গল্পের মুখ্য উপজীব্য।
রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের গ্রামীণ সমাজকে জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন তাই অসংগঠিত কৃষি নির্ভরতা, সমবায় ব্যবস্থার সুফল, সমস্ত জমিকে একত্রে করে কলের লাঙলে চাষ করার সুবিধা তিনি কেবল উপলব্ধি করেই ক্ষান্ত হননি,নিজের জমিদারিতে তার প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন ঘটিয়েছিলেন।শান্তিনিকেতনে আসার পর রবীন্দ্রনাথ সুরুলের কুঠি বাড়ি কিনে শিলাইদহের আরব্ব কাজকে পরিণতি দিতে চেয়ে ছিলেন। পল্লি উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষা, চিকিৎসা, পূর্তকর্ম, ঋণদান ব্যবস্থা ও সালিশি বিচারব্যবস্থার সুষ্ঠ প্রয়োগের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই শ্রীনিকেতনে পল্লি পুনর্গঠনের কাজে ব্রতী হয়েছিলেন।
(i) পল্লী উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথের সক্রিয় ভূমিকা : ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ‘শ্রীনিকেতন’ গ্রাম কাজের সূচনা করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অন্যান্য সৃষ্টিধর্মী কাজের মধ্যে নিজেকে সঁপে দিলেও কবিগুরু নিজের উপলব্ধির আলোকে গ্রামীণ সমষ্টির সমস্যা, দুঃখ দুর্দশার গভীরে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমষ্টির মানুষকে এগিয়ে আসার এবং নিজেদের উদ্যোগে পল্লি উন্নয়নে পল্লিবাসীকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
(ii) শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় : শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার পেছনে যে দুটো মূল বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হলো- প্রথমত, পল্লিবাসীর সমস্যা ও অসুবিধাগুলি চিহ্নিত করা ও সেগুলি অনুধাবন করার ব্যাপারে পল্লিবাসীদের উদ্বুদ্ধ করা। দ্বিতীয়ত, নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীর প্রয়োজন থাকতে পারে কিন্তু সমষ্টি উন্নয়নের লক্ষ্যে পল্লিবাসীদের মধ্যে স্ব-সহায়তা ও পারস্পরিক বোঝাপড়াকে মজবুত করা।
(iii) বিজ্ঞানভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন : পল্লি উন্নয়নের কাজে প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বরাবরই বিজ্ঞানভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পথে হাঁটতে চেয়েছেন। গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তি কৃষিকাজের আরও উন্নত প্রথায় কীভাবে নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে তিনি সর্বদা সচেষ্ট থেকেছেন। তিনি জানতেন কৃষিকাজের মধ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রচলন হলে উৎপাদন বাড়বে ও গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
(iv) পল্লি পুনর্গঠনে অভিনব ভাবনা : পল্লি পুনর্গঠনে অভিনব ভাবনার অনেক দিক সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা গড়ে উঠবে। যেমন- (ক) সমষ্টির কোনো সমস্যা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা বা দূরীকরণের লক্ষ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরাসরি সমষ্টির সমস্যাগুলি শ্রেণিকক্ষে আলোচনার উদ্যোগগ্রহণ করা।
(খ) শ্রেণিকক্ষে অর্জিত শিক্ষা বা জ্ঞানকে পল্লিবাসীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। (গ) পল্লিবাসীদের জন্য শৌচাগারের বন্দোবস্ত করা ও তাদের স্বাস্থ্যের মান উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ সৃষ্টি করা। (ঘ) স্থানীয় সম্পদের সহজলভ্যতা ও পল্লিবাসীদের উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। (ঙ) এই পুনর্গঠন প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত প্রথার চাষাবাদ ও গবাদি পশুপাখি পালনে পল্লিবাসীদের উদ্বুদ্ধ করা। (চ) শিল্পকলা ও কারুকার্যের নানান বিষয় পল্লিবাসীদের শেখানোর বন্দোবস্ত করা। (ছ) পল্লিবাসীদের মধ্যে সমষ্টিবোধ, সহমর্মিতা ও স্বসহায়তার বোধ জাগ্রত করা যাতে সংঘবদ্ধ উদ্যোগে পল্লি উন্নয়নের পথ সুগম হয়।
শ্রীনিকেতন পল্লি পুনর্গঠনের উদ্যোগে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ, কুটিরশিল্পের পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে স্বনিযুক্তির পথ প্রশস্ত করার কর্মকান্ড রূপায়ণ করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কতগুলি নীতি মেনে চলতেন। সেগুলি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো-
Q2. গ্রামীণ সমাজ ও নগর সমাজের পার্থক্য নিরূপণ করো।
➣ গ্রামীণ সমাজ ও নগর সমাজের মধ্যে প্রধান পার্থক্য দেখা যায় জীবন প্রণালী ও জীবনধারায় সেগুলি হলো — (i) গ্রামীণ সমাজে প্রাথমিক সম্পর্কের প্রাধান্য থাকে। শহরাঞ্চলে মানুষে মানুষে সম্পর্ক পরোক্ষ ও যান্ত্রিক। (ii) গ্রামাঞ্চলে সামাজিক সচলতা নেই কিন্তু নগর সমাজে সামাজিক সচলতার সুযোগ যথেষ্ট থাকে।(iii) গ্রামীণ জীবনে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের কঠোরতা থাকে, কিন্তু নগর সমাজে এমন কোনোরূপ কঠোরতা নেই এবং নিয়ন্ত্রণ অনেক দুর্বল। (iv) গ্রামীণ সমাজে ভৌগোলিক দূরত্ব থাকলেও সামাজিক নৈকট্য থাকে। অন্যদিকে, নগর সমাজে ভৌগোলিক নৈকট্য সত্ত্বেও রয়েছে সামাজিক দূরত্ব। (v) গ্রামীণ সমাজে পরিবারের প্রভাব বেশি আর নগর সমাজে পরিবারের প্রভাব কম থাকে। (vi) গ্রামের জীবন কৃষি ও প্রকৃতি নির্ভর বলে গ্রামের লোকেরা অদৃষ্টবাদী। অন্যদিকে, শহরের মানুষজনের জীবনে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য, তারা প্রকৃতিনির্ভর নয় এবং প্রগতিশীল মানসিকতাসম্পন্ন। (vii) জনবসতির দিক দিয়েও গ্রাম ও নগর সমাজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। শহরে জনবসতি আঞ্চলিক ও বৃহদায়তন বিশিষ্ট হয়। গ্রামাঞ্চলে জনবসতির আঞ্চলিকতা স্বতন্ত্র প্রকৃতির। (viii) গ্রামীণ সমাজে বাসিন্দাদের জীবনধারা সহজ-সরল হয়, কিন্তু শহরে বসবাসকারী মানুষদের জীবন আড়ম্বরপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। (ix) গ্রামীণ সমাজে লোকসংস্কৃতি সহজ-সরল ও অনাড়ম্বর ধরনের। অন্যদিকে, নগর সমাজের সাংস্কৃতিক উপাদানগুলি কৃত্রিম, উত্তেজক ও আড়ম্বরপূর্ণ। (x) গ্রামীণ সমাজে রয়েছে সমষ্টিগত চেতনা। শহর জীবনে সমষ্টিগত চেতনা দুর্বল।
(i) পল্লী উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথের সক্রিয় ভূমিকা : ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ‘শ্রীনিকেতন’ গ্রাম কাজের সূচনা করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অন্যান্য সৃষ্টিধর্মী কাজের মধ্যে নিজেকে সঁপে দিলেও কবিগুরু নিজের উপলব্ধির আলোকে গ্রামীণ সমষ্টির সমস্যা, দুঃখ দুর্দশার গভীরে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমষ্টির মানুষকে এগিয়ে আসার এবং নিজেদের উদ্যোগে পল্লি উন্নয়নে পল্লিবাসীকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
(ii) শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় : শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার পেছনে যে দুটো মূল বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হলো- প্রথমত, পল্লিবাসীর সমস্যা ও অসুবিধাগুলি চিহ্নিত করা ও সেগুলি অনুধাবন করার ব্যাপারে পল্লিবাসীদের উদ্বুদ্ধ করা। দ্বিতীয়ত, নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীর প্রয়োজন থাকতে পারে কিন্তু সমষ্টি উন্নয়নের লক্ষ্যে পল্লিবাসীদের মধ্যে স্ব-সহায়তা ও পারস্পরিক বোঝাপড়াকে মজবুত করা।
(iii) বিজ্ঞানভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন : পল্লি উন্নয়নের কাজে প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বরাবরই বিজ্ঞানভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পথে হাঁটতে চেয়েছেন। গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তি কৃষিকাজের আরও উন্নত প্রথায় কীভাবে নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে তিনি সর্বদা সচেষ্ট থেকেছেন। তিনি জানতেন কৃষিকাজের মধ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রচলন হলে উৎপাদন বাড়বে ও গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
(iv) পল্লি পুনর্গঠনে অভিনব ভাবনা : পল্লি পুনর্গঠনে অভিনব ভাবনার অনেক দিক সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা গড়ে উঠবে। যেমন- (ক) সমষ্টির কোনো সমস্যা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা বা দূরীকরণের লক্ষ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরাসরি সমষ্টির সমস্যাগুলি শ্রেণিকক্ষে আলোচনার উদ্যোগগ্রহণ করা।
(খ) শ্রেণিকক্ষে অর্জিত শিক্ষা বা জ্ঞানকে পল্লিবাসীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। (গ) পল্লিবাসীদের জন্য শৌচাগারের বন্দোবস্ত করা ও তাদের স্বাস্থ্যের মান উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ সৃষ্টি করা। (ঘ) স্থানীয় সম্পদের সহজলভ্যতা ও পল্লিবাসীদের উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। (ঙ) এই পুনর্গঠন প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত প্রথার চাষাবাদ ও গবাদি পশুপাখি পালনে পল্লিবাসীদের উদ্বুদ্ধ করা। (চ) শিল্পকলা ও কারুকার্যের নানান বিষয় পল্লিবাসীদের শেখানোর বন্দোবস্ত করা। (ছ) পল্লিবাসীদের মধ্যে সমষ্টিবোধ, সহমর্মিতা ও স্বসহায়তার বোধ জাগ্রত করা যাতে সংঘবদ্ধ উদ্যোগে পল্লি উন্নয়নের পথ সুগম হয়।
শ্রীনিকেতন পল্লি পুনর্গঠনের উদ্যোগে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ, কুটিরশিল্পের পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে স্বনিযুক্তির পথ প্রশস্ত করার কর্মকান্ড রূপায়ণ করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কতগুলি নীতি মেনে চলতেন। সেগুলি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো-
- মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলা : পল্লিবাসীদের একের প্রয়োজনে অন্যের ছুটে আসবে এবং নিজেদের পারস্পরিক সাহচর্যে সামগ্রিক উদ্দেশ্য সাধনে সমবেত হবে, এই নীতির ভিত্তিতে রবীন্দ্রনাথ পরমুখাপেক্ষীতারকবল থেকে পল্লিবাসীদের আত্মনির্ভরতার পথে বিশেষভঅবে উদ্যোগী করে তোলার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন।
- প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা : শিক্ষালাভ ও স্বাবলম্বনকে স্বার্থক রূপদান করতে গিয়ে তিনি প্রশিক্ষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। সে কারণে, তিনি সেলাই, মৌমাছি পালন, উদ্যান পালন, কৃষিকাজ প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করেন।
- গ্রামবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা : সহমর্মিতা ও সহযোগিতার প্রয়োজন উপলব্ধি করে গ্রামবাসীদের পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুভূতিশীল হতে উদ্বুদ্ধ করেন। মানুষ হিসাবে সকলের যে আত্মমর্যাদা বোধ থাকা জরুরি সে বিষয়ে কবিগুরু সচেতন থেকে উপযুক্ত উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
- সুসংহত কর্মপ্রচেষ্টা : প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের কর্মদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন প্রকার সমস্যা মোকাবিলা করে সুসংহত উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে তিনি তাঁর গ্রাম পুনর্গঠন কর্মসূচি পরিকল্পনা ও রূপায়ণ করেছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই পরীক্ষামূলক গ্রাম পুনর্গঠনের উদ্যোগ সমষ্টিগত দর্শন প্রতিষ্ঠায় যেমন সাফল্য অর্জন করেছে তেমনি গ্রামীণ সংস্কৃতি ও সম্পদের ভিত্তিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গ্রামীণ সমষ্টি উন্নয়নের উদাহরণ স্থাপন করেছেন।
➣ গ্রামীণ সমাজ ও নগর সমাজের মধ্যে প্রধান পার্থক্য দেখা যায় জীবন প্রণালী ও জীবনধারায় সেগুলি হলো — (i) গ্রামীণ সমাজে প্রাথমিক সম্পর্কের প্রাধান্য থাকে। শহরাঞ্চলে মানুষে মানুষে সম্পর্ক পরোক্ষ ও যান্ত্রিক। (ii) গ্রামাঞ্চলে সামাজিক সচলতা নেই কিন্তু নগর সমাজে সামাজিক সচলতার সুযোগ যথেষ্ট থাকে।(iii) গ্রামীণ জীবনে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের কঠোরতা থাকে, কিন্তু নগর সমাজে এমন কোনোরূপ কঠোরতা নেই এবং নিয়ন্ত্রণ অনেক দুর্বল। (iv) গ্রামীণ সমাজে ভৌগোলিক দূরত্ব থাকলেও সামাজিক নৈকট্য থাকে। অন্যদিকে, নগর সমাজে ভৌগোলিক নৈকট্য সত্ত্বেও রয়েছে সামাজিক দূরত্ব। (v) গ্রামীণ সমাজে পরিবারের প্রভাব বেশি আর নগর সমাজে পরিবারের প্রভাব কম থাকে। (vi) গ্রামের জীবন কৃষি ও প্রকৃতি নির্ভর বলে গ্রামের লোকেরা অদৃষ্টবাদী। অন্যদিকে, শহরের মানুষজনের জীবনে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য, তারা প্রকৃতিনির্ভর নয় এবং প্রগতিশীল মানসিকতাসম্পন্ন। (vii) জনবসতির দিক দিয়েও গ্রাম ও নগর সমাজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। শহরে জনবসতি আঞ্চলিক ও বৃহদায়তন বিশিষ্ট হয়। গ্রামাঞ্চলে জনবসতির আঞ্চলিকতা স্বতন্ত্র প্রকৃতির। (viii) গ্রামীণ সমাজে বাসিন্দাদের জীবনধারা সহজ-সরল হয়, কিন্তু শহরে বসবাসকারী মানুষদের জীবন আড়ম্বরপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। (ix) গ্রামীণ সমাজে লোকসংস্কৃতি সহজ-সরল ও অনাড়ম্বর ধরনের। অন্যদিকে, নগর সমাজের সাংস্কৃতিক উপাদানগুলি কৃত্রিম, উত্তেজক ও আড়ম্বরপূর্ণ। (x) গ্রামীণ সমাজে রয়েছে সমষ্টিগত চেতনা। শহর জীবনে সমষ্টিগত চেতনা দুর্বল।
Q3. ভারতের গ্রামীণ সমাজের অর্থনীতির ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব বিশ্লেষণ করো।
➣ভূমিকা : ভারতে সামাজিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া হিসেবে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য প্রক্রিয়া হলো গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়ন। ভারতীয় সমাজকে স্থিতিশীল ও রক্ষণশীল সমাজ হিসেবে লক্ষ করা হলেও সুদূর অতীতকাল থেকে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে।◉ বিশ্বায়ন : সমাজের পরিবর্তনের প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিশ্বায়ন।ভারতবর্ষে বিশ্বায়নের ধরনটি সমাজতাত্ত্বিক আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট রূপ লাভ করেনি। তবে বুদ্ধিজীবী মহল বিশ্বায়নের ধারণাটিকে একই সাথে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করলে দেখা যায় যে বিশ্বায়নের বিষয়টি উদারীকরণ বা Liberization-এর সাথে যুক্ত। উদারীকরণের অর্থ হলো যতদূর সম্ভব শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও কড়াকড়ি থেকে মুক্ত হয়ে প্রতিযোগিতামূলক অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ। এই প্রতিযোগিতামূলক অবাধ বাণিজ্যের কারণে পুঁজির প্রয়োজন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ফলে শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেসরকারীকরণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
Organization, W.T.D-র মতো সংস্থা এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে N.G.O গুলির ভূমিকা বৃদ্ধি পাবে। (iv) নয়া নীতি : সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের বিধিনিষেধগুলির প্রাধান্য বৃদ্ধি পাবে।
◉ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাব:বিশ্বায়নের ফলে ভারতীয় অর্থনৈতিক উদারীকরণ, পুঁজি পতীকরণ, বেসরকারীকরণ বৃদ্ধি পাওয়ার বিশ্বায়নের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। ভারতীয় বাজারে বিদেশি পণ্যের জোগান বিশেষভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষুদ্র ও রুগ্ণ শিল্পগুলি চরমভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। আন্তর্জাতিক শিল্প বনাম স্বদেশি শিল্পের বিরোধ কোনো জাতীয়তাবোধক আবেগের দ্বারা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভারতীয় শিল্পের যে সংরক্ষণ নীতি বজায় ছিল উদারীকরণের নীতি গৃহীত হওয়ার ফলে তা ক্রমশ শিথিল হওয়ার ফলে ক্ষুদ্র শিল্পগুলি দুইভাবে বিপন্ন হচ্ছে। পুঁজির অভাবে বিদেশি পণ্যের সাথে টিকে থাকার মতো প্রতিযোগিতায় ক্ষুদ্র শিল্পগুলির পক্ষে তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ফলে এইগুলি রুগ্ণ শিল্প হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
◉ ক্ষুদ্র শিল্পগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া : বিশ্বায়ন থেকে উদ্ভুত শিল্পগুলি উন্নত প্রযুক্তির সাথে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় সরকারিভাবে এইগুলিকে বন্ধ করে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, বিশ্বায়নের হাত ধরে বেসরকারী করণ, বিলগ্নীকরণ, বহুজাতিক সংস্থা বা Multi National Company বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্বদেশি ও বিদেশি বৃহৎ বাণিজ্য সংস্থা বা Big Busines Farm-গুলি ভারতীয় অর্থনৈতিক অবস্থাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করেছে।
◉ বাজার অর্থনীতির অবাধ প্রসার : বিশ্বায়নের তথা উদারীকরণের হাত ধরে বাজার অর্থনীতির অবাধ প্রসার লক্ষ করা যায়। তা একইসাথে ভোগ্যপণ্য ও মূলধনের বাজারকে একযোগে প্রভাবিত করেছে।
◉ অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি : এই উন্মুক্ত বাজার ব্যবস্থা চরম প্রতিযোগিতা পরিলক্ষিত হয়। ভারতের মতো পিছিয়ে পড়া দেশে ক্রমশ মাঝারি, ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোগীরা পিছিয়ে পড়ায় প্রচলিত অর্থনীতির বৈষম্য আরো তীব্র হয়েছে।
বিশ্বায়নের হাত ধরে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে ভৌগোলিক সীমানা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। এর ফলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। গোটা বিশ্ব প্রায় হাতের মুঠোয় এসে যাওয়ায় তাকে ভুবন গ্রাম বা Global Village বলা হয়েছে। বিভিন্ন Website এবং Internet-এর মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রয়োজনীয় খবরাখবর সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই বিপ্লবের হাত ধরে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় ক্রেতাকে (Consumer) বেছে নেওয়ার ফলে জীবনযাপনের ধরনে সবশ্রেণির মানুষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। ভোগ্যপণ্যের বাজার বিস্তৃত করার জন্য কেবলমাত্র নাগরিক সমাজকেই বেছে নেওয়া হয়েছে তা-ই নয়, ভারতীয় গ্রামীণ ক্রেতাও এর অন্যতম লক্ষ্য হওয়ায় নগরজীবনের পাশাপাশি ভারতীয় গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী রূপটি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে।
উপসংহারঃ বিশ্বায়নের সমাজতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে বিশ্বায়নের ফলে কতকগুলি ক্ষেত্রে পরিবর্তন অনিবার্য হলেও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সবার পক্ষে এই সুযোগগুলি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। শুধু ভারতেই নয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এই বৈষম্য প্রকট পরিলক্ষিত হয়।
➣ভূমিকা : ভারতে বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব বদল দেখতে পাওয়া যায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো Urbanization বা নগরায়ণ। এখানে শিল্পায়নের পাশাপাশি অভিবাসন ও জনসংখ্যার স্ফীতি নগরায়ণের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ভারতে নগরায়ণ প্রক্রিয়া অনেক আগে শুরু হলেও বর্তমানে নগরায়ণের কারণে বিভিন্ন সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে। বর্তমানে ধারাবাহিক নগরমুখী অভিবাসন, নগর সংস্কৃতির অনুকরণের ফলে আধুনিক নগরগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে অত্যধিক হারে, যে কারণে বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
◉ নগরায়ণ : Urbanization হলো একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মূলত নাগরিক সংস্কৃতির বিস্তার ঘটে। নৈর্ব্যক্তিক, কৃত্রিম, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী, বিশেষীকরণভুক্ত দলগত চেতনার বিস্তার হলো নগরায়ণ। Theodorson-এর মতে–“Urbanization implies a cultural, social & phychological process where people acquire the material & non-material culture including behaviour, pat- terns, forms of organization & the idea that originated with distinctive nature of the city." বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী Urbanization-কে নানাভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন - (i) এটি একটি রাজনৈতিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, (ii) এটি একটি আর্থিক পদ্ধতি. (iii) এটি একটি ভৌগোলিক প্রক্রিয়া।
◉ নগরায়ণের প্রভাব : (i) সামাজিক মর্যাদার পরিবর্তন : নগরসমাজে বংশগত মর্যাদার পরিবর্তে অর্জিত মর্যাদার উপর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার ফলে মর্যাদার প্রশ্ন অনেকাংশে গুরুত্ব হারিয়েছে। (ii) জাতিগত ভেদাভেদ হ্রাস : জাতিভিত্তিক নাগরিক সমাজে সর্বজনীন চাহিদা পূরণের কারণে জাতিগত ছোঁয়াছুয়ি, বিধিনিষেধ বজায় রাখা সম্ভব হয় না। যেমন—প্রাত্যহিক জীবনে এই বিধিনিষেধ ধরে রাখা সম্ভব হয় না। (iii) বর্ণভেদ হ্রাস : নাগরিক সমাজের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় সাবেকি Cast ranking অনুযায়ী সামাজিক বিনিময় সম্ভব হয় না। মূল্যবোধ ও বাস্তব পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার ফলে শহরে Cast ranking-ভিত্তিক স্বাতন্ত্র্যবাদী চেতনা ক্রমে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে। (iv) মুক্ত সমাজ: নগরে বসবাসকারী বিভিন্ন ধরনের নাগরিকদের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিনিময়ের সুযোগ বেশি থাকায় জাতিভিত্তিক অনুশাসনের বাঁধন ধীরে ধীরে আলগা হয়ে যায়। ফলে বদ্ধ জাতিভিত্তিক সমাজের পরিবর্তে মুক্ত সমাজের জন্ম হয়।(v) পেশাগত সচলতা : শহরে অধিক মাত্রায় পেশাগত সচলতার কারণে মাঝারি ও নিম্নবৃত্ত মানুষও উচ্চবৃত্তির সুযোগ নিতে পারে। ফলস্বরূপ আগের তুলনায় তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা অনেকটাই উন্নত হয়েছে।(vi) বিবাহে প্রভাব : এখন শহরে জাতি ভিত্তিক আন্তর্বিবাহের রীতিনীতিতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। নারী-পুরুষের মেলামেশার সুযোগ বেড়ে যাওয়ায় অসবর্ণ বিবাহের প্রবণতা কমে গিয়েছে। (vii) সামাজিক স্তরবিন্যাসে প্রভাব : নগরসমাজে জাতিভিত্তিক স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে বড়ো ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। পবিত্রতা-অপবিত্রতা নীতি ও জাতিভিত্তিক বিন্যাসের জীবনশৈলী ও Life chances সুযোগসুবিধা নগরে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে কাজ করে।
উপসংহারঃ নগরায়ণের প্রভাব পরিবার ও জাতিভেদ প্রথার উপর পড়ে, তার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করে বলা চলে যে নগরায়ণের কারণে বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সাথে সংগতি রেখে অতীতের যৌথ পরিবার ও জাতিপ্রথায় একাধিক পরিবর্তন এলেও পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাপক বদল ঘটেনি এদেশে, বরং পরিবার ও জাতিব্যবস্থায় সনাতন উপাদানগুলি একইভাবে নগরজীবনেও চোখে পড়ে। প্রাত্যহিক শুচিতা-অশুচিতা ও Life cycle ceremony-কে ভিত্তি করে এখানে জাতিভিত্তিক অনুশাসনের পাশাপাশি, যৌথ পারিবারিক মূল্যবোধের মতো বনেদি অভ্যাস প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
➣ভূমিকা : ভারতবর্ষের সামাজিক সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম হলো দারিদ্র্য। এটি হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে কোনো ব্যক্তি তার ন্যূনতম দৈহিক ও মানসিক চাহিদা যথাযথভাবে পূরণে ব্যর্থ হয় এবং অভাবের মধ্যে দিন কাটায় ৷
◉ গ্রামীণ দারিদ্র্য : ভারতে দারিদ্র্যের প্রকোপ গ্রামাঞ্চলেই প্রবল। সমাজ বিজ্ঞানীদের পর্যালোচনা অনুসারে গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্যের ব্যাপ্তি ও প্রকোপের মূলত পেছনে বিবিধ কারণ বর্তমান।
- ভারতের গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতি কৃষিকেন্দ্রিক হওয়ায় গ্রামের অধিকাংশ অধিবাসী যারা কৃষিকাজে যুক্ত, তাদের রুজি-রোজগার জীবনধারণের প্রয়োজন পূরণের পক্ষে যথেষ্ট নয়, যা দারিদ্র্য সৃষ্টির পক্ষে অনুকূল।
- ভারতের অধিকাংশ কৃষিজীবীর মধ্যে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব থাকায় কৃষি উৎপাদনের হারও স্বভাবতই কম। এই কারণে অভাব-অনটন ভারতের কৃষিজীবীদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে।
- ভারতের বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে সেচ ব্যবস্থা সম্যকভাবে না থাকায় চাষিদের মূলত বৃষ্টিপাতের উপরই নির্ভর করতে হয়, যা অনিয়মিত, অপ্রতুল ও বিচ্ছিন্ন। এই অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি এবং সেচ ব্যবস্থার অভাবের কারণে কৃষি ব্যবস্থার উপর প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়।
- গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে ঘাটতিও গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলে। কৃষিক্ষেত্রে যেমন প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না, তেমনই গ্রামীণ শিল্পগুলিও প্রভাবিত হয়, যার ফলে অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকেই যায়।
- গ্রামাঞ্চলে জীবিকার্জনের অন্যতম উৎস হিসেবে পরিগণিত হয় গৃহপালিত পশু, যা অনুন্নত প্রজাতির। স্বভাবতই এই সূত্রে রোজগারের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।
- গ্রামগুলিতে জাতপাত, স্তরবিন্যাস, হিংসা, বিদ্বেষ, শত্রুতার মনোভাব প্রভৃতি পরিলক্ষিত হয় যা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে বাধাসৃষ্টি করে।
- ভারতের গ্রামীণ দারিদ্র্যের একটি বড়ো বৈশিষ্ট্য হলো শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য মূলধনের অভাব। শিল্পের এই অভাবের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি দুর্বল থেকে যায়।
- প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত স্বল্প হারে শিক্ষা ও অত্যধিক হারে নিরক্ষরতা—গ্রামীণ দারিদ্র্যের পেছনে আরো বড়ো একটি কারণ।
- ভারতবর্ষে গ্রামগুলিতে ঋণগ্রহণের সুযোগ-সুবিধা নিতান্তই কম; উপরন্তু ব্যাঙ্ক ব্যবস্থাও তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে সুদখোর মহাজনদের জাঁতাকলে গ্রামের দরিদ্র মানুষ শোষিত হচ্ছে। স্বভাবতই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে দারিদ্র্য। গ্রাম ও গ্রামবাসীদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো উপযুক্ত প্রগতিশীল নেতৃত্বের অভাব লক্ষ্য করা যায়।
◉ দারিদ্র্য দূরীকরণে শহরভিত্তিক কর্মসূচি : দরিদ্রতা নিবারণকারী শহরভিত্তিক কর্মসূচি নিম্নরূপ— (i) শহরভিত্তিক দরিদ্রদের জন্য স্বনিযুক্ত কর্মসংস্থান প্রকল্প, (ii) নেহরু রোজগার যোজনা। (iii) প্রধানমন্ত্রীর রোজগার যোজনা।(iv)স্বর্ণজয়ন্তী শহরি রোজগার যোজনা। (v)বেসরকারি ও আধাসরকারি ক্ষেত্রকে উৎসাহিত করা। (vi) বিকল্প বৃত্তির জন্য প্রশিক্ষণ (vii) সহজ শর্তে ঋণদান কর্মসূচি।
Q6.গান্ধিজির সর্বোদয় ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, গান্ধিজির সর্বোদয় ধারণার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
➣ভূমিকা :রাজনৈতিক চিন্তার জগতে গান্ধিজির সর্বোদয়ের ধারণা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই ধারণাই গান্ধিজির সমাজচিন্তার দিকদর্শন স্বরূপ। সর্বোদয়ের চেতনাই ছিল তাঁর সমাজচেতনার মূল আদর্শ। সমাজের সকলের মঙ্গল ও উন্নতিবিধানই ছিল তাঁর সর্বোদয়ের ধারণার মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণের স্বার্থে তিনি গ্রাম ব্যবস্থার সংস্কার সাধন, গ্রামে শিল্পের প্রসার, গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, জাত-পাত প্রথার বিলোপসাধন ইত্যাদির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন এবং এইভাবেই তিনি এমন এক সুষম সমাজ গড়ে তুলতে চেয়েছেন, যেখানে সকলের উত্থান তথা উন্নতি হবে। সকলের উন্নতির এই চিন্তাই হলো সর্বোদয় বা Sarvodaya.
অথবা, গান্ধিজির সর্বোদয় ধারণার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
➣ভূমিকা :রাজনৈতিক চিন্তার জগতে গান্ধিজির সর্বোদয়ের ধারণা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই ধারণাই গান্ধিজির সমাজচিন্তার দিকদর্শন স্বরূপ। সর্বোদয়ের চেতনাই ছিল তাঁর সমাজচেতনার মূল আদর্শ। সমাজের সকলের মঙ্গল ও উন্নতিবিধানই ছিল তাঁর সর্বোদয়ের ধারণার মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণের স্বার্থে তিনি গ্রাম ব্যবস্থার সংস্কার সাধন, গ্রামে শিল্পের প্রসার, গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, জাত-পাত প্রথার বিলোপসাধন ইত্যাদির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন এবং এইভাবেই তিনি এমন এক সুষম সমাজ গড়ে তুলতে চেয়েছেন, যেখানে সকলের উত্থান তথা উন্নতি হবে। সকলের উন্নতির এই চিন্তাই হলো সর্বোদয় বা Sarvodaya.
◉ প্রকৃতি : ‘সর্বোদয়’ কথাটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো ‘সর্ব’ এবং ‘উদয়’ অর্থাৎ সকলের উন্নতি বা উত্থান। জন রাস্কিনের Unto the Last গ্রন্থটি গান্ধিজিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। তিনি গ্রন্থটিকে গুজরাটি ভাষায় অনুবাদ করে তার নাম রাখেন সর্বোদয়। সর্বোদয়কে একদিকে ধর্মীয় চেতনা ও নীতিজ্ঞান এবং অন্যদিকে গণতন্ত্র ও নৈরাজ্যবাদী ধারণা উভয়ের সার্থক সমন্বয় বলা যেতে পারে।
বলা বাহুল্য, ‘সর্বোদয়’ ছিল গান্ধিজির সমাজচেতনার মহিমান্বিত আদর্শ। গান্ধিজি ‘সর্বোদয়’ ধারণার মধ্য দিয়ে এমন এক সমাজ গড়ার কথা বলেছেন, যেখানে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না এবং থাকবে না কোনো অস্পৃশ্যতাবোধ ও জাতপাত প্রথা। এই সমাজের কাজে আত্মনিয়োগ করে সকলেই উৎপন্ন সামগ্রীর অংশ লাভ করবে।
এইভাবে সর্বোদয়ের চেতনার মধ্যে দিয়ে গান্ধিজি সমাজের কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পরিবর্তে সকলের সামগ্রিক উন্নতির কথা বলেছেন। ‘সর্বোদয়’ সম্পর্কে তাই তাঁর সিদ্ধান্ত হলো : (i) সকলের মঙ্গলেই নিজের মঙ্গল ৷ (ii) জীবিকা হিসেবে ক্ষৌরকর্ম অন্যান্য কাজের সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং (iii) সাধারণ কৃষক ও মজুরের জীবনই হলো আদর্শ জীবন।
◉ সর্বোদয়ের বৈশিষ্ট্য : গান্ধিজির সর্বোদয়ের কতগুলি বৈশিষ্ট্য আছে; এগুলি হলো-
- কর্মমুখীনতা : গান্ধিজি ছিলেন কর্মযোগী। তিনি মনে করেন, কর্মের মধ্যেই মানুষের মুক্তি । শ্রীমত ভগবৎ গীতার নিষ্কাম কর্মের কথাই তিনি অন্তর থেকে বিশ্বাস করতেন।। তাই তিনি মনে করতেন, ফল লাভের আকাঙ্ক্ষা না করে সমাজের সামগ্রিক স্বার্থে সকলে কাজ করলে সকলেরই উন্নতি ঘটবে এবং সকলের সুষম উন্নতিসম্পন্ন সমাজই হলো ‘সর্বোদয়’ সমাজ।
- জনসেবা : গান্ধিজি জনগণের সেবাকেই সর্বোদয়ের সোপান বলে মনে করতেন। সত্য ও অহিংসার মধ্যে দিয়ে জনসেবার কথা তিনি বলেন। অহিংসার মধ্য দিয়েই সৎজীবন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সত্য ও অহিংসা তাই সর্বোদয় সমাজের ভিত্তিস্বরূপ।
- স্বরাজ : গান্ধিজি ‘সর্বোদয়কে’ কার্যকর করার জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের স্বাধীনতার কথা বলেছেন। রাগ, বুভুক্ষা এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তিই হলো প্রকৃত স্বাধীনতা। গান্ধিজির মতে, ব্যক্তির আত্মিক ও বাহ্যিক স্বাধীনতাই হলো স্বরাজ। তাঁর বাঞ্ছিত স্বরাজই হলো সকল প্রকার অধীনতা থেকে মুক্তি। এই অধীনতা তথা শাসন-শোষণ থেকে মুক্ত পরিস্থিতিতেই সকলের যথার্থ উন্নতি সম্ভব।
- শোষণমুক্ত সমাজ : গান্ধিজি সর্বোদয়ের মধ্যে দিয়ে যে সমাজ গড়ে তুলতে চেয়েছেন, সেখানে জনগণকে শাসন-শোষণের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব থাকলে, তা বিশেষ শ্রেণির নিয়ন্ত্রণের অধীন হয়ে পড়ে। তাছাড়া শ্রেণিস্বার্থে অর্থ ব্যবস্থা পরিচালিত হলে শ্রেণিতে-শ্রেণিতে অসাম্য সৃষ্টি হবে এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। গান্ধিজি তাই অর্থ ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বাবলম্বী অর্থনীতি গড়ে তোলার কথা বলেন। এদিক থেকে তিনি গ্রামীণ ও কুটির শিল্পের প্রসার এবং উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন। তিনি ভোক্তা ও সমবায় সমিতির হাতে আর্থিক নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন।
- স্বায়ত্তশাসন : শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও গান্ধিজি সর্বোদয় সমাজে গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলেছেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি পঞ্চায়েতিরাজ বা গ্রামস্বরাজ গঠনের কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, সমাজের সামগ্রিক স্বার্থে ব্যক্তি তার শারীরিক ও মানসিক শক্তিকে কাজে লাগাবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সে সামাজিক সম্পদের অংশ পাবে। এইরকমভাবে সমাজ গড়ে উঠলে তবেই তা সকলের উন্নতির পক্ষে সহায়ক হয়ে উঠবে বলে গান্ধিজি মনে করেন।
- সকলের স্বার্থে ভূদান ও সম্পত্তি প্রদান : গান্ধিজির সর্বোদয় নীতির উল্লেখযোগ্য দিক হলো শাসনক্ষমতা প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ও জনগণের মধ্যে দুর্নীতির অবসান এবং গ্রামদানের নীতি। এই নীতি অনুযায়ী ভূসম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তি সচেতনভাবে সাধারণের স্বার্থে তার জমি ও অন্যান্য সম্পত্তি দান করবে। শহরাঞ্চলে কারখানা ও ব্যাবসাকে সামগ্রিক মালিকানায় এনে সকলের স্বার্থ চরিতার্থ করার কথা গান্ধিজি বলেছেন।
- জনশক্তির প্রাধান্য : গান্ধিজির সর্বোদয় নীতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো জনশক্তির উপর গুরুত্ব আরোপ। তিনি মনে করেন, জনশক্তি সামাজিক কুসংস্কারকে দূর ক’রে এবং সুস্থ ও ক্রিয়াশীল সংস্কৃতিকে জাগ্রত করে সমাজ ও সভ্যতার বিকাশ ঘটাতে পারে। তিনি মনে করেন, সত্যাগ্রহ, অহিংসা, মৈত্রী, সংযম ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে জনশক্তি বা গণশক্তি জাগ্রত হয় এবং এই গণশক্তিই সকলের উন্নতির পথ প্রশস্ত করে। সুতরাং গান্ধিজি সর্বোদয় ধারণার মধ্য দিয়ে সকলের উন্নতির পক্ষে উপযুক্ত এক সুস্থ মানবিক সমাজ গঠন করার কথা বলেছেন, যার মূল ভিত্তি হবে “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।”
Q7.যজমানি ব্যবস্থার ধারণাটি ব্যাখ্যা কর। তুমি কি মনে কর এটি একটি শোষণমূলক ব্যবস্থা?
অথবা, যজমানি ব্যবস্থা কী ? যজমানি ব্যবস্থার ধারণা ও বৈশিষ্ট্য লেখো।
◉ যজমানি ব্যবস্থার ধারণা : যজমানি ব্যবস্থা হলো ভারতীয় সমাজজীবনের এক সাবেকি ব্যবস্থা। যজমানি ব্যবস্থায় ভূ-স্বামী পরিবারের সঙ্গে ভূমিহীন পরিবারসমূহের এক স্থায়ী প্রকৃতির সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। ভূমিহীন পরিবারগুলি ভূস্বামী পরিবারকে দ্রব্য-সামগ্রী ও বিবিধ পরিষেবা প্রদান করে।
এই ব্যবস্থাকে বলে যজমানি ব্যবস্থা। যজমানি ব্যবস্থা হলো জাতগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে দেওয়া-নেওয়ার এক বিশেষ সম্পর্ক।
◉ সেবক -সেবিত জাতগোষ্ঠী : গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থায় জাত ও জন্মগত বিচারেই ব্যক্তি মানুষের বৃত্তি স্থায়ীভাবে নির্ধারিত হয়ে যায়। এ রকম পরিস্থিতিতে গ্রামীণ সমাজে পরিষেবার লেনদেন ঘটে। এইভাবে গ্রামীণ সমাজে সেবক ও সেবিত, এই দুই শ্রেণির জাতগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়।
◉ সামাজিক আচারানুষ্ঠান ও যজমানি ব্যবস্থা : জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ প্রভৃতি অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণ-ধোপা-নাপিত, কামার-কুমোর ছুতোর প্রমুখ সমাজের সেবক জাতগোষ্ঠীর মানুষ যজমানের বাড়িতে প্রচলিত আচার-বিচার অনুযায়ী বিবিধ ক্রিয়াকর্ম সম্পাদন করে বা পরিষেবা প্রদান করে।
◉ যজমান-কামিন ভূমিকাগত সম্পর্ক : কামিনরা হলো সমাজে পরিষেবা প্রদানকারী জাতগোষ্ঠী। কামিনরা যজমান জাতগোষ্ঠীসমূহের জন্য আর্থনীতিক, ও পেশাগত পরিষেবা প্রদান করে। কামিন জাতগোষ্ঠীর এই পেশাগত পরিষেবার বিনিময়ে যজমান জাতগোষ্ঠীর মানুষ তাদের পারিতোষিক প্রদান করে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর বা বিশেষ উপলক্ষে এই পারিতোষিক প্রদত্ত হয়। যজমান জাতগোষ্ঠীর ব্যক্তিবর্গ কামিন জাতগোষ্ঠীর মানুষকে বিবিধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে ৷
◉ পিতা-পুত্রের সম্পর্ক': সমাজে যজমান ও কামিনদের দায়-দায়িত্ব, অধিকার-কর্তব্য, প্রাপ্য-প্রদেয়, সুযোগ-সুবিধা ও অব্যাহতি প্রভৃতি বিষয়ে নিয়ম-নীতি বর্তমান। কামিনদের প্রতি আচরণে ও দৃষ্টিভঙ্গিতে যজমানরা হবে পিতৃবৎ। কামিনদের দাবি-দাওয়া পূরণের ব্যাপারে যজমানরা হবে সহানুভূতিশীল। অনুরূপভাবে যজমানের প্রতি কামিনদের মনোভাব ও আচরণ হবে সন্তানতুল্য।
◉ যজমানি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি :
- যজমানি ব্যবস্থায় যজমান ও কামিনের মধ্যে যে সম্পর্ক বর্তমান থাকে তা বহুলাংশে স্থায়ী প্রকৃতির। যজমানি ব্যবস্থার এটি একটি বড়ো বৈশিষ্ট্য।
- যজমানি ব্যবস্থায় পরিষেবার পারিশ্রমিক দ্রব্যসামগ্রীতে দেওয়া হয়।
- যজমানি ব্যবস্থায় যজমান ও কামিনের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থায়ী প্রকৃতির এবং বংশানুক্রমিক। যজমানি ব্যবস্থার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
- যজমানি ব্যবস্থায় সকল ধরনের কামিনের কাজকর্মের পরিধি ও সুযোগ সমান হয়না। এক্ষেত্রে ব্যাপ্তিও প্রকৃতিতে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সকল গ্রামে সকল রকমকামিন থাকেনাবা পাওয়া যায়না। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, কোনো গ্রামে নাপিত না থাকার জন্য সেই গ্রামের যজমানরা পাশের গ্রামে গিয়ে বা পাশের গ্রামের নাপিতকে দিয়ে ক্ষৌরকর্ম সম্পাদনে সক্রিয় হয়।
- যজমানি ব্যবস্থায় গ্রাম ও গ্রামের অধিবাসীদের শান্তি ও সন্তুষ্টি সুনিশ্চিত হয়।
- সমাজতাত্ত্বিক যোগেন্দ্র সিং-এর মতে যজমানি ব্যবস্থা হলো গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের এক ব্যবস্থা। এই সম্পর্ক অধিকারএই সম্পর্ক উল্লম্বী প্রকৃতির। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী মৌলিক জীবনযাপনের ও কর্তব্যের মতো যজমান ও কামিনদের সঙ্গে সম্পর্ক।
- এই ব্যবস্থা পুরুষাক্রমে চলে আসছে। কামিনরা এই ব্যবস্থায় যজমানদের আর্থ-সামাজিক, পেশাগত পরিষেবা দেয় । যজমান কামিনদের পরিষেবার ওপরে নির্ভরশীল। যজমানরা তার পরিবর্তে কামিনদের জন্ম-মৃত্যু-বিবাহের সময় আর্থিক অনুদান দেয়। বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী উপহার দেয়।
- বৎসরের খারাপ সময়ে কৃষক যজমান কামিনকে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য দিতে না পারলেও যখন ভালো খাদ্যশস্য উৎপন্ন হতো তা থেকে পূর্বের ঘাটতি পুষিয়ে দিত। কামিনদের অবস্থার উন্নতি হলে, তারা সম্পদশালী হলে বংশানুক্রমিক পেশা পরিত্যাগ করে উন্নত চাকরির প্রচেষ্টা চালাত।
- এন. এস. রেড্ডির মতে যজমানি বৃত্তির অধিকারগুলি সম্পত্তিমূলক অধিকার হিসেবে পরিগণিত হয়। এই অধিকার পিতার পর সন্তানের ওপর অর্পিত হয়।
3rd Semester B.A Sociology (General)
⇩ Book PDF Download ⇩
● PDF Size - 86 MB
● Page Quality - High
● Total Page - 77
Thank You Thank You Thank You sir.
উত্তরমুছুনএই নোট স গুলি কি
উত্তরমুছুনB.A GENERAL - SEMESTER III- DC 5 - Rural and Urban Sociology
এবং B.A GENERAL
SKILL ENHANCEMENT COURSE I: COMMUNITY DEVELOPMENT
এই দুটি পেপার এর প্রশ্ন আছে ? একটু বলবেন স্যার