পঞ্চম অধ্যায় (কারক : বিভক্তি ও অনুসর্গ)
১. নির্দেশ অনুসারে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
১.১ কারক কাকে বলে? সম্বন্ধপদকে কারক বলা যায় কিনা বিচার করো।
➛ কোনো বাক্যে ক্রিয়া পদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে। যেমন- রহিম মাঠে খেলে। এখানে খেলে হলো ক্রিয়াপদ এবং রহিম একটি নামপদ। এই বাক্যে খেলে ক্রিয়াপদের সঙ্গে রহিম নাম পদের একটি সম্পর্ক রয়েছে।
যেহেতু সম্বন্ধ পদের সঙ্গে বাক্যের ক্রিয়াপদের কোনো প্রত্যক্ষ সম্বন্ধ থাকে না; তাই সম্বন্ধ পদ কারক নয়। যেমন— মিতালির গান শুনে সকলে মুগ্ধ হল। ক্রিয়াপদ ‘মুগ্ধ হওয়ার সঙ্গে ‘গান’ আর ‘সকলে’ এই দুটি পদের প্রত্যক্ষ সম্বন্ধ আছে। মিতালির সঙ্গে গান কথাটির সম্বন্ধ থাকলেও মূল ক্রিয়া ‘মুগ্ধ হওয়ার কোনো সম্বন্ধ নেই। সুতরাং ‘মিতালির' পদটিকে কারক বলা হয় না, বলা হয় সম্বন্ধ পদ।
১.২ শব্দবিভক্তি কাকে বলে? বাংলায় শব্দবিভক্তি কয় রকমের ও কী কী?
➛ যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দটিকে নামপদে পরিণত করে, সেই বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে শব্দবিভক্তি বলা হয় ৷ বাংলায় শব্দবিভক্তি দু-প্রকার—[১] মৌলিক বিভক্তি চিহ্ন (এ, তে,-কে ইত্যাদি) [২] অনুসর্গ বিভক্তি চিহ্ন (দ্বারা, দিয়ে, নিমিত্ত ইত্যাদি)।
১.৩ অনুসর্গ কাকে বলে? একে অন্য কী নামে ডাকা যায়? কোন কোন কারকে অনুসর্গের ব্যবহার রয়েছে?
➛ যেসব অব্যয় বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে পৃথকভাবে বসে শব্দবিভক্তির কাজ করে, তাদের অনুসর্গ বলে। একে অনেকসময় ‘পরসর্গ' বা ‘কর্মপ্রবচনীয়' নামেও উল্লেখ করা হয়। করণকারক, নিমিত্ত কারক, অপাদান কারক ও অধিকরণ কারকে অনুসর্গের ব্যবহার রয়েছে।
১.৪ বিভক্তিও অনুসর্গের মিল ও অমিল আলোচনা করো।
➛ বিভক্তি ও অনুসর্গের মিল হল—বিভক্তি এবং অনুসর্গ দুটোই শব্দকে পদে রূপান্তরিত করে তাকে বাক্যে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে।
বিভক্তি | অনুসর্গ |
---|---|
১. বিভক্তির নিজেস্ব অর্থ নেই। | ১. অনুসর্গ নিজেস্ব অর্থ আছে। |
২.পদকে আশ্রয় করে থাকে। যেমন—আকাশে চাঁদ উঠেছে [ আকাশ + ‘এ' বিভক্তি ] | ২. পদ থেকে আলাদাভাবে থাকে। যেমন—আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে। |
৩. সবসময় শব্দের শেষে যুক্ত হয়। | ৩. সাধারণভাবে শব্দের পরে বসলেও কখনো-কখনো আগেও বসে। |
৪. শব্দের শেষে যুক্ত হওয়ায় আলাদা কোনো অস্তিত্ব নেই। | ৪. শব্দের পরে যুক্ত হওয়ায় আলাদা অস্তিত্ব আছে। |
১.৫ এমন একটি বাক্য লেখো যেখানে সমস্ত কারকের প্রয়োগ আছে। রচিত বাক্যটিতে কোন
কারকে কোন বিভক্তি প্রযুক্ত হয়েছে, চিহ্নিত করো।
➛ রানি ভবানী প্রতিদিন সকালে ধনভাণ্ডার থেকে গরিবদুঃখীদের স্বহস্তে ধনরত্ন দান করতেন। এই বাক্যে ‘দান করতেন' হল ক্রিয়াপদ। বাক্যের বিভিন্ন নামপদের সঙ্গে এই ক্রিয়াপদের অন্বয় রয়েছে।
নামপদ | সমাপিকা ক্রিয়া | অন্বয়ের ধরন | সম্বন্ধ কর্তৃসম্বন্ধ |
---|---|---|---|
১. রানি ভবানী ('শূন্য’ বিভক্তি) | দান করতেন | কে? | কর্তৃসম্বন্ধ |
২. ধনরত্ন (শূন্য বিভক্তি) | দান করতেন | কী? | কর্ম সম্বন্ধ |
৩. স্বহস্তে (‘এ’ বিভক্তি) | দান করতেন | কী দিয়ে? | করণ সম্বন্ধপদ |
৪. গরিব দুঃখীদের (‘দের’ বিভক্তি) | দান করতেন | কাদের নিমিত্ত? | নিমিত্ত সম্বন্ধ |
৫. ধনভাণ্ডার (‘থেকে’ অনুসর্গ) | দান করতেন | কোথা থেকে? | অপাদান সম্বন্ধ |
৬. প্রতিদিন সকালে (‘এ’ বিভক্তি) | দান করতেন | কখন? | অধিকরণ সম্বন্ধ |
১.৬ 'অ'-বিভক্তি কী? কোন্ কোন্ কারকে 'অ'-বিভক্তি হয় উদাহরণ-সহ দেখাও।
উত্তর: ‘অ' বিভক্তি——অ’ বিভক্তি আসলে শূন্যবিভক্তি।
কর্তৃকারকে ‘অ’ বিভক্তি | তাঁতি তাঁত বুনছিল। |
---|---|
কর্মকারকে ‘অ' বিভক্তি | তাঁতি তাঁত বুনছিল। |
করণকারকে ‘অ’ বিভক্তি | লোকেরা তাস খেলছে। |
অধিকরণকারকে ‘অ’ বিভক্তি | রাতদিন সে খাটছে। |
১.৭ ‘তির্যক বিভক্তি’কী? দৃষ্টান্তসহ এমন নামের কারণ বুঝিয়ে দাও।
➛ যে বিভক্তি যে-কোনো কারকেই প্রযুক্ত হতে পারে, তাকে তির্যক বিভক্তি বলে ৷ যেমন—
[১] পাগলে কিনা বলে। (কর্তা)
[২] পাঠাইব রামানুজে শমন ভবনে। (কর্ম)
[৩] চাঁদ সদাগর বাঁ হাতে ফুল দিলেন। (করণ)
[৪] তিনি আহারে বসেছেন। (নিমিত্তকারক)
[৫] পুঞ্জে পুঞ্জে গাহে অলি। (অধিকরণ)
২. উদাহরণ—সহ লেখো :
২.১ গৌণকর্ম : মা আমাকে কত গল্প শোনাতেন।
২.২ প্রযোজক কর্তা : মা শিশুকে খাওয়ান।
২.৩ কালাধিকরণ : শীতকালে উত্তুরে হাওয়া বয়
২.৪ ব্যতিহার কর্তা : মায়ে ঝিয়ে করব ঝগড়া
২.৫ নিমিত্ত সম্বন্ধ : পড়ার বই ছাড়াও অন্য বই পড়বে।
২.৬ প্রযোজ্য কর্তা : মা শিশুকে চাঁদ দেখান
২.৭ বিষয়াধিকরণ : ব্যাকরণে তার ধারেকাছে কেউ নেই।
২.৮ বিধেয় কর্ম : তিনি বিদ্যালয়কে উপাসনাস্থল মনে করতেন।
২.৯ হেত্বর্থক করণ : রাগে তার দুকান লাল হয়ে গেল।
২.১০ অনুক্ত কর্তা : তোমার দ্বারা এ কাজ হবে না ৷
২.১১ করণের বীপ্সা : হাতে হাতে কাজটা সেরে ফেলো।
২.১২ বাক্যাংশ কর্ম : নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান—ক্ষয় নাই,তার ক্ষয় নাই।
২.১৩ সমধাতুজ কর্ম : বিসর্জনের বাজনা বাজছে।
২.১৪ উপবাক্যীয় কর্তা : সে এভাবে চলে যাবে ভাবা যায় না।
২.১৫ তারতম্যবাচক অপাদান : তাহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন।
৩. শব্দরূপ লেখো।
৩.১ 'মানুষ'।
কারক | একবচন | বহুবচন |
---|---|---|
কর্তৃকারক | মানুষ, মানুষে,মানুষেতে | মানুষেরা,মানুষসকল |
কর্মকারক | মানুষ, মানুষকে | মানুষদের, মানুষদেরকে, |
করণকারক | মানুষে, মানুষেতে | মানুষদের দিয়ে,মানুষের দ্বারা |
নিমিত্তকারক | মানুষের জন্য | মানুষদের জন্য |
অপাদান কারক | মানুষ থেকে, মানুষদের থেকে | মানুষদের কাছ থেকে |
অধিকরণকারক | মানুষে, মানুষদের,মানুষের কাছে | মানুষদেরকে, মানুষদের মধ্যে |
সম্বন্ধ পদ | মানুষের | মানুষদের, মানুষসকলের |
সম্বোধন পদ | হে মানুষ ! ওহে হে মানুষ ! | হে মানুষেরা |
৩.২ ‘তুমি’শব্দের সম্ভ্রমার্থের রূপ।
➛ ‘তুমি' শব্দের সম্ভ্রমার্থের রূপ—আপনি।
৩.৩ ‘আমি’।
➛ Updated Soon
👇 Class 7 Bengali Grammar book PDF
⚡Size :
⚡Version : Bengali