
Q. সংক্ষেপে মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
অনুরূপ প্রশ্ন : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন : মহাবিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো। (মার্ক : ৮)
❐ ভূমিকা : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ব্রিটিশবিরোধী মহাবিদ্রোহ অত্যন্ত তীব্র হয়ে ওঠে এবং ভারতে ইংরেজ শাসনের ভিতকে কাঁপিয়ে দেয় । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদের অন্ত নেই । অনেকের মতে, এটি ছিল নিছক একটি সামরিক বিদ্রোহ। অনেকে আবার ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন । কারও কারও মতে, এটি নিছক সামন্ত বিদ্রোহ । ব্রিটিশ সেনাধ্যক্ষ জেনারেল আউট্রাম একে ‘মুসলমানদের ষড়যন্ত্র' বলে অভিহিত করেছেন । এই বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে ।
❐ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র :
① স্বত:স্ফূর্ত বিদ্রোহ : ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে অনেকে ‘স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ' বলেছেন । কোম্পানির আমলে ইংরেজ শাসনে ভারতীয়রা এতই ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট ছিল যে মিরাটে সিপাহি বিদ্রোহের সূত্রপাতের সঙ্গে সঙ্গে জনগণ নিজে থেকেই এই বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ।
② সিপাহিদের বিদ্রোহ: স্যার জন লরেন্স, জন সিলি, চার্লস রেক্স প্রমুখ ইউরোপীয় ঐতিহাসিক এবং অক্ষয়কুমার দত্ত, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কিশোরীচাঁদ মিত্র, দাদাভাই নওরোজি প্রমুখ ভারতীয় ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে 'সিপাহি বিদ্রোহ' বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, এই বিদ্রোহে যোগদানকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীর লক্ষ্য ছিল নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধি করা । এই বিদ্রোহে সারা ভারতের সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ যোগ দেয়নি । দেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি বড়ো অংশ বিদ্রোহকে সমর্থন করেনি ।
কিশোরীচাঁদ মিত্র বলেছেন, “এই বিদ্রোহ ছিল একান্তভাবেই সিপাহিদের অভ্যুত্থান। এতে গণ-আন্দোলনের কোনোও উপাদান ছিল না । ”
③ কৃষক বিদ্রোহ : অনেকে ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে ‘কৃষক বিদ্ৰোহ বলেছেন। সমকালীন ইংরেজ কর্মচারীরা কৃষকদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রত্যক্ষ করে বলেছেন যে জমিতে অধিকারচ্যুতি ও ব্যাপক জমি হস্তান্তর ১৮৫৭-তে কৃষক বিদ্রোহে ইন্ধন জুগিয়েছিল । তালমিজ খালদুন বলেছেন, 'The rebellion ended as a peasant war against indigenous landlordism and foreign imperialism'। অধ্যাপক এরিক স্টোকস, মার্কসবাদী তাত্ত্বিক পি. সি. যোশী প্রমুখ অবশ্য এই বিদ্রোহকে কৃষক বিদ্রোহ মানতে চাননি ।
④ সামন্ততান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া : ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার, ড. সুরেন্দ্রনাথ সেন, রজনীপাম দত্ত প্রমুখ ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে ‘সামন্ত্রতান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার এই বিদ্রোহকে চিহ্নিত করেছেন ‘অভিজাত শ্রেণি ও বিভেদকামী সামন্ততন্ত্রের মৃত্যুকালীন আর্তনাদ' হিসেবে । ড. সুরেন্দ্রনাথ সেন এই বিদ্রোহকে ‘প্রতিবিপ্লব’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন ইংরেজ সরকারের প্রগতিশীল সংস্কার বিদ্রোহীদের মনঃপূত ছিল না বলেই তারা এই প্রতিক্রিয়াশীল বিদ্রোহ করেছিল ।
⑤ ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম : স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনায়ক দামোদর সাভারকর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে 'ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম' বলেছেন । কিন্তু অনেক ঐতিহাসিকই এই মত স্বীকার করেননি । ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের তথাকথিত প্রথম জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম— প্রথম নয়, জাতীয় নয় এবং স্বাধীনতা সংগ্রামও নয়। তাঁর মতে, এই বিদ্রোহে ভারতের সকল অঞ্চলের জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেনি । ভারতের কয়েকটি ক্ষুদ্র অঞ্চলে এই বিদ্রোহ সীমাবদ্ধ ছিল ।
❐ উপসংহার : এই বিদ্রোহকে নিছক সিপাহি বিদ্রোহ, সামন্ত বিদ্রোহ বা সনাতনপন্থীদের বিদ্রোহ বলে অভিহিত করা ঠিক হবে না । কোনো ধৰ্মীয় কারণ বা এনফিল্ড রাইফেলের টোটার জন্য এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়নি । এই বিদ্রোহ হল মানুষের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ । অধ্যাপক এরিক স্টোক্স, বেইলি প্রমুখ মনে করেন যে, এই বিদ্রোহে স্থানীয় কৃষকদের প্রতিরোধ, জাতীয় প্রতিরোধ প্রভৃতি বিভিন্ন ধারা-উপধারার সংমিশ্রণ ঘটেছিল । তাই নানা ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই বিদ্রোহের গণচরিত্রকে অস্বীকার করা যায় না ।
Q. লেখায় ও রেখায় ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশ আলোচনা করো । (মার্ক : ৮)
❐ ভূমিকা : উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিভিন্ন কারণে ইংরেজ শাসনের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে । তাদের এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এযুগের সাহিত্য এবং চিত্রকলায় । শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি তাঁদের সাহিত্য রচনা, পত্রিকা প্রকাশ, চিত্র নির্মাণ প্রভৃতির মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদী মননকে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিল । এই সকল সাহিত্যের মূল বিষয়বস্তু ছিল জাতীয় ঐক্য ও দেশের মুক্তি । অপরদিকে চিত্রশিল্পীরা তাঁদের সৃষ্টির দ্বারা ভারতবাসীর মনে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলেন । এইভাবে লেখায় ও রেখায় ভারতীয় জাতীয়তাবোধ বিকশিত হয় ।
➧ লেখায় ও রেখায় জাতীয়তাবোধের বিকাশ :
(১) আনন্দমঠ : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর উপন্যাস আনন্দমঠ স্বদেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল নিদর্শন । এই উপন্যাসের বিশিষ্ট সম্পদ বন্দেমাতরম সংগীত । এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে যুবসমাজকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচনের জন্য জাতীয়তাবোধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেন বঙ্কিমচন্দ্র । স্বদেশি আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীকালের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনগুলিতে বন্দেমাতরম্ মন্ত্র বিপ্লবীদের বীজমন্ত্র হয়ে ওঠে ।
(২) বর্তমান ভারত : স্বামী বিবেকানন্দের ‘বর্তমান ভারত’ (১৯০৫) -এ তাঁর মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে । এই গ্রন্থে ভারতে আগত জাতিসমূহের দ্বারা এদেশের আচারব্যবহার ও কার্যপ্রণালীর পরিবর্তন ও তার ভবিষ্যৎ-এর আলোকপাত করাই এই গ্রন্থের আলোচ্য বিষয় । আলোচ্য গ্রন্থে স্বামীজি মানুষ হয়ে ওঠার পথ নির্দেশ করেছেন । স্বামীজি বলেছেন, ভুলে গেলে চলবে না যে, আমরা সকলেই জন্ম থেকে মাতৃভূমির জন্য আত্মবিসর্জনে প্রস্তুতি । বিবেকানন্দ দেশকে মাতৃরূপে কল্পনা করেন । দেশের মুক্তির জন্য আত্মোৎসর্গের আদর্শ তুলে ধরে তিনি সকলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান । বিদেশি ইংরেজ শাসনে নির্যাতিত, হীনমন্যতায় আক্রান্ত ভারতবাসীকে জাগিয়ে তোলার জন্য তিনি দেশবাসীকে উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত মন্ত্র দেন ।
(৩) গোরা : রবীন্দ্রনাথের 'গোরা' উপন্যাসে দেশপ্রেম, মানব মুক্তি ও বিশ্বাত্মবোধ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে । ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত গ্রন্থটিতে সনাতন হিন্দুধর্ম ও নবজাত ব্রাক্ষ্মণ ধর্মের মানুষের দ্বন্দ্ব সংঘাতে সমাজজীবন যেভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল তারই প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে এই উপন্যাসে । গোরা উপন্যাসটিতে ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের, সমাজের সঙ্গে ধর্মের এবং ধর্মের সঙ্গে মানবসভ্যতার বিরোধ ও সমন্বয়ের ছোঁয়া রয়েছে । গোরা পারিবারিক গণ্ডির মধ্যে এক বৃহত্তর ভারতবর্ষের অনুসন্ধান করেছে । উপন্যাসটিতে রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবোধ ও হিন্দুত্বকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে দেখিয়েছেন ।
(৪) অবনীন্দ্রনাথ ও ভারতমাতা চিত্র : ভারতীয় চিত্রশিল্পের জগতে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর । তাঁর চিত্রশৈলীর একটি বড়ো বৈশিষ্ট্য ছিল ওয়াশ চিত্ররীতি । এই চিত্ররীতি অবলম্বনে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতমাতা চিত্র আঁকেন । এই চিত্রের মাধ্যমে শান্ত, অভয় ও সমৃদ্ধি প্রদানকারী মাতৃদেবীর রূপকে কল্পনা করা হয়েছে । এর মধ্য দিয়ে ভারতমাতার মাতৃরূপ ধরা পড়ে । এই চিত্রটি একাধারে মানবী ও দেবী হিসেবে কল্পিত হয়েছে । জাতীয়তাবোধের উজ্জীবনে ও স্বাদেশিকতার প্রসারে এই চিত্রটির যথেষ্ট ভূমিকা ছিল।
(৫) গগনেন্দ্রনাথ ও ব্যঙ্গচিত্র : গগনেন্দ্রনাথের ব্যঙ্গচিত্রগুলিতে সমকালীন বাংলায় ও ঔপনিবেশিক সমাজের ছবি ধরা পড়ে । মূলত সামাজিক অসংগতিকে মূল বিষয় করে তিনি তীব্র ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে তাঁর চিত্রগুলি আঁকেন । গগনেন্দ্রনাথের ব্যঙ্গচিত্রগুলি তিনভাগে বিভক্ত । তাঁর জাতাসুর নামে ব্যঙ্গচিত্র আমাদের সমাজের জাতপাত তথা বর্ণবৈষম্যের ভয়াবহ পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে । সমাজের উচ্চবর্ণের রক্ষণশীল মানুষদের অন্ধবিশ্বাস ও গোঁড়ামির জন্য কীভাবে সামাজিক ঐক্য ভেঙে পড়ছে, তার ইঙ্গিত দেয় এই ব্যঙ্গচিত্রটি ।
❐ উপসংহার : ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশে জাতীয়তাবাদ নির্ভর সাহিত্য এবং চিত্রকলা খুব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল । এই রচনাগুলি উদ্বুদ্ধ করেছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ এবং বিপ্লবী আন্দোলনের প্রসারে । এভাবে দেশীয় লেখক-সাহিত্যিক এবং চিত্রশিল্পী ও ব্যঙ্গচিত্রশিল্পীরা তাঁদের সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করতে সাহায্য করেছেন ।
Q. নীল বিদ্রোহ ঘটেছিল কেন? এই বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করো। (৩+৫=৮)
❐ ইউরোপে কৃত্রিম নীল আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রভৃতি দেশের খামার মালিকরা ভারতে নীলের লাভজনক ব্যাবসা করতে আসত । বাংলা ও বিহারে ১৭৮২-৮৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নীলচাষ শুরু হয় । বাংলার নদিয়া, যশোহর, পাবনা, রাজশাহি, ময়মনসিংহ, মালদহ প্রভৃতি জেলায় প্রচুর পরিমাণ নীলের চাষ হত । ইউরোপ থেকে আগত শ্বেতাঙ্গ খামার মালিকরা এদেশে জমি কিনে বা লিজ নিয়ে নীলচাষ করত এবং উৎপাদিত নীল ইউরোপে রপ্তানি করে যথেষ্ট লাভবান হত । এই কারণে নীলকর সাহেবরা বাংলার চাষিদের ওপর প্রচণ্ড অত্যাচার করে তাদের নীল চাষ করার জন্য বাধ্য করত । এই ধরনের চরম অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলার নীলচাষিরা ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলে, যা ইতিহাসে নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত ।
❐ নীল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য : ব্রিটিশ সরকারের অধীন ভারতে নীল বিদ্রোহ একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল। এই বিদ্রোহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি হল —
(১) নীলকর বিরোধী বিদ্রোহ : নীল বিদ্রোহটি হয়েছিল অত্যাচারী নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে । জমিদার বা মহাজন শ্রেণির বিরুদ্ধে নয়। কৃষকরা চেয়েছিল নীল চাষ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে । শেষ পর্যন্ত তাদের সেই লক্ষ্যটি সফল হয় ।
(২) বিদ্রোহের সফল বিস্তার : নীল চাষিরা যে বিদ্রোহ করেছিল, সেটি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল না । এটি নদিয়া জেলার চৌগাছা থেকে বারাসাত, মালদা, যশোহর, ফরিদপুর, খুলনা প্রভৃতি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে ।
(৩) শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির সহযোগিতা : নীল বিদ্রোহে বাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি সহায়তা করেছিল । দীনবন্ধু মিত্র, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার দত্ত, শিশিরকুমার ঘোষ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি তাঁদের রচনা দ্বারা নীল বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিলেন ।
(৪) খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা বিদ্রোহীদের সমর্থন : নীল বিদ্রোহকে খ্রিস্টান মিশনারিরা সমর্থন করেছিল । খ্রিস্টান মিশনারি রেভারেন্ড জেমস লং নীল কমিশনের কাছে নীলকর সাহেবদের শোষণ ও অত্যাচারের ব্যাপারে জানান । ‘নীল দর্পণ’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ মাইকেল মধুসূদন দত্ত করলেও সেটি লং সাহেবের নামে প্রকাশিত হলে তাঁর জরিমানা ও কারাদণ্ড হয় ।
(৫) ধর্মনিরপেক্ষ বিদ্রোহ : নীল বিদ্রোহে হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মের চাষিরা অংশগ্রহণ করেছিল । ফলে এই বিদ্রোহটি ধর্মনিরপেক্ষভাবে সংঘটিত হয়েছিল ।
❐ উপসংহার : নীল বিদ্রোহ প্রকৃতপক্ষে ছিল একটি গণ আন্দোলন । হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ঐক্য এই বিদ্রোহকে অনন্যতা দিয়েছে । সিপাহি বিদ্রোহের কিছু সময় পর সংঘটিত এই বিদ্রোহটি ভারতে কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয় ।