আমাজনের জঙ্গলে প্রশ্ন উত্তর class 4


চতুর্থ শ্রেণি বাংলা (class 4) পাতাবাহার বই এর উত্তর সমাধান

চতুর্থ পাঠ প্রশ্নও উত্তর সমাধান বইয়ের পৃষ্ঠা - ৩৮,৩৯ / ৪৫,৪৬,/ ৪৭, / ৫২,৫৩,৫৪,৫৫

▻ আমাজনের জঙ্গলে
▻ সত্যি চাওয়া
▻ আমি সাগর পাড়ি দেবো
▻ দক্ষিণ মেরু অভিযান
▻ বহুদিন ধরে


class 4 bengali patabahar book west bengal board answer

❑ আমাজনের জঙ্গলে গল্পটির লেখক পরিচিতি :
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এই কাহিনির লেখক অমরেন্দ্র চক্রবর্তী। তিনি বাংলার একজন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক। তাঁর রচনাগুলি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির নাম হল—শাদা ঘোড়া, আমাজনের জঙ্গলে, হীরু ডাকাত, গৌর যাযাবর, টিয়াগ্রামের ফিঙে নদী ইত্যাদি। পর্যটক এই লেখক শুধুমাত্র ভ্রমণ কাহিনি লেখেননি, তিনি একজন কবি, আলোকচিত্রী, তথ্যচিত্র নির্মাতা ইত্যাদি। তিনি অনেকগুলি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। তাঁর সম্পাদিত পত্রপত্রিকাগুলির মধ্যে ‘কালের কষ্টিপাথর’, ‘ছেলেবেলা’, ‘ভ্রমণ’, ‘কর্মক্ষেত্র’ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

❑ আমাজনের জঙ্গলে গল্পটির  বিষয়বস্তু :
সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর তীরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে থাকা গভীর জঙ্গল। 'আমাজনের জঙ্গলে' কাহিনির লেখক তখন এক কিশোর। কিশোরটি কোনোদিন বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা সেই ভয়ানক দুশ্চিন্তা নিয়ে ওই জঙ্গলে একা ঢুকে পড়ে ‘উবা’ নামে সেখানকার এক কিশোরকে তার বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিল।একদিন তারা দুজনে আমাজনের জলে নৌকায় ভেসে গভীর চাঁদনি রাতের জঙ্গলের রূপ উপভোগ করছিল। অকস্মাৎ একে একে সবগুলি নৌকার ভারি সুরেলা গানবাজনা থেমে গেল। গভীর স্তব্ধতার মধ্যে বিশাল চাঁদের আলোয় নদীর জলে উঁকি মেরে উবা কিছুক্ষণ দেখল। তারপর জলে আঙুল দিয়ে তার সঙ্গীকে ফিসফিস বলল–বোতো! বোতো! উবা বোঝাতে চাইল এভাবে আমাজনের জলে বোতো ভেসে থাকতে দেখা। অর্থাৎ, বোতোই নাকি আমাজনের বিপদে-আপদে মানুষকে রক্ষা করে। তাই নদীর বুকে যতগুলি নৌক ভাসছিল সেগুলি ধীরে যতটা সম্ভব নিঃশব্দে চারদিক থেকে গোল হয়ে যে নৌকা প্রথম বোতো দেখেছে তার চারপাে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। এতে বোতো এতটুকু রেগে গেল না, বিরক্ত হল না। সে যেন তার মনের ভিতরের তালে ছন্দে লয়ে জলের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগল।

নদীর তিন চার-হাত জলের নীচে খুব লম্বা মতো একটা প্রাণী ধীরে ধীরে এঁকে বেঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার ঠোঁট খুব সরু, লম্বায় প্রায় এক দেড় হাত। মস্ত বড়ো মাথা। এর মস্তিষ্ক মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে বড়ো হয়ে
আশ্চর্যের কিছু নেই। এর ল্যাজটা শরীরের শেষপ্রান্ত থেকে দু-দিকে ভাগ হয়ে ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে। রংটা ঠিক নয়, যেন গোলাপির দিকেই। কিশোর এই লেখক ভাবছিল, উবা সত্যিকারের কী তা তার কাছে ঠিক স্পষ্ট নয়। তথাপি আমাজনের জলে পূর্ণিমার রাতে ডলফিন দেখাও ভাগ্যের ব্যাপার। তাই মা-বাবা কাকা ও অন্যান্য সঙ্গীদের ছেয়ে থাকা কিশোর-লেখক মনে মনে বোতো-র কাছে প্রার্থনা করল, বোতো, তুমি কে আমি জানি না। তুমি যদি সতি আমাজনের রক্ষাকর্তা হও, তুমি আমাকে আমার মা-বাবা আর স্কুলের বন্ধুদের কাছে ফিরে যাওয়ার উপায় করে দিয়ো। উবা ছিল কিশোর-লেখকের সঙ্গী। উবা আমাজন জঙ্গলের এক আদিবাসী সরল কিশোর। সে একেক দিন এই লেখক-কিশোর বন্ধুকে নিয়ে হাঁটু গেড়ে মাটিতে মুখোমুখি বসে সঙ্গীর চোখের ওপর চোখ মেলে রেখে কিছু বুঝে ওঠার চেষ্টা করতে লাগল, কারণ কেউ কারও ভাষা জানে না। বেশ কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন সে মাটিতে তার কাঠকুটোর ছবি তৈরি করে ইঙ্গিতে জানতে চাইল তার এই কিশোর বন্ধুটি কোথা থেকে এসেছে, সে কোন পৃথিবীর মানুষ, সে পৃথিবীটা কেমন? কীভাবে তার প্রশ্নের উত্তর দেবে এসব অনেক ভেবে কিশোর-লেখক খানিকটা জায়গা মাটিতে পরিষ্কার করে ছবি এঁকে যতটা সম্ভব বোঝাতে চেষ্টা করল সে কোথায় থাকে, তার মা-বাবা, বন্ধু স্কুল, কলকাতা, কলকাতার বাড়ি-গাড়ি-ঘোড়া, দোকানবাজার, লোকজন ইত্যাদির কথা।

উবা অনেকক্ষণ ধরে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেই ছবি বুঝে গেল। তারপর সে আবার তেমনি কাঠকুটোর ছবি তৈরি করে দুই ঠোঁট গোল করে যেন প্রশ্ন করতে চাইল, কলকাতায় জঙ্গল নেই, পাখি নেই, প্রজাপতি নেই, বড়ো বড়ে নদনদী নেই, সেটা তো বালির দেশ অর্থাৎ একটা মরুভূমি! তুমি সেখানে থাকো কেমন করে? লেখক-কিশোরের এঁকে দেখানো ছবিতে ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা গাদাগাদি করে বসে স্কুলে যাচ্ছে। টিনের দেয়ালে ছোটো ছোটো জানালার ফাঁক দিয়ে কেউ কেউ তার কচি মুখ তুলে বাইরেটা দেখতে দেখতে চলেছে এই দৃশ্য অনেকক্ষণ মুখ ঝুঁকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল উবা। প্রথমটা ঠিক বুঝল না। কিশোর-লেখক এখন আবার একট ছবি এঁকে যথাসম্ভব স্কুলের ব্যাপারটা যখন তাকে বোঝাতে পারল তখন সেও আবার কাঠকুটোর একটা ছবি দিয়ে জঙ্গলের গাছপালা ফুল-ফল-কীটপতঙ্গের সঙ্গে না থেকে গ্রীষ্ম বর্ষা শীত বসন্ত না দেখে তুমি জগৎটাকে......

    ✐ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর :
১. অমরেন্দ্র চক্রবর্তীর লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখো। 
উত্তরঃ হীরু ডাকাতও শাদাঘোড়া অমরেন্দ্র চক্রবর্তীর লেখা দুটি বই।
২. ভ্রমণ পত্রিকা ছাড়াও তিনি আর কোন পত্রিকার সম্পাদক?
উত্তরঃ তিনি কর্মক্ষেত্র, কালের কষ্টিপাথর পত্রিকার সম্পাদক।
 
  ৩.  ঠিক উত্তরের তলায় দাগ দাও :
৩.১ লেখক গল্পটিতে যে জায়গার উল্লেখ করেছেন সেটি হল (ইউক্রেন/আমাজন/ সুন্দরবন)।
৩.২ আমাদের একেবারে (পিছনের/সামনের/পাশের) নৌকা থেকে ভারি সুরেলা বাজনা ভেসে আসছিল।
৩.৩ কোনও একটা নৌকা থেকে বোতোর দেখা পাওয়ার (মিনিট দুয়েকের/মিনিট সাতেকের/মিনিট দশেকের) মধ্যেই সব নৌকায় সেই সুখবর ছড়িয়ে যায়।
৩.৪ (উবা/বোতো/টোবো) আমার চোখের দৃষ্টি দেখে বুঝতে চায় আমি কে?
৩.৫ উবা (চকখড়ি/লতাপাতা/কাঠকুটো) দিয়ে ছবি আঁকায় ভারি ওস্তাদ।

৪. ‘গান-বাজনা’ শব্দটির প্রথম অংশ ‘গান’ এবং দ্বিতীয় অংশ ‘বাজনা’ পরস্পরের পরিপূরক। নীচের শব্দগুলির পরে তাদের সমার্থক বা প্রায় সমার্থক অন্য শব্দ জুড়ে নতুন শব্দজোড় তৈরি করো।
লোক রোগ ভাবনা ডাক্তার আশা হাঁক কাঠ ধন
লোকলস্কর রোগব্যাধি ভাবনাচিন্তা ডাক্তারবদ্যি আশাভরসা হাঁকডাক কাঠকুটো ধনসম্পদ


৫. নীচে কিছু কর্তা, কর্ম ও ক্রিয়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কর্তার সাথে কর্ম ও ক্রিয়াকে মিলিয়ে ৫টি বাক্য লেখো।
উত্তরঃ ১। আমি প্রার্থনা করলাম। ২। উবা ছবি আঁকছিল। ৩। বোতো আকাশে দেখো। ৪। সে পাখি দেখছে। ৫। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে।

৬. নীচের শব্দগুলি দিয়ে বাক্যরচনা করো :
  1. ধীরে-ধীরে—খোঁড়া পায়ে লোকটি ধীরে ধীরে হাঁটছিল। 
  2. বসে-বসে—অনেক খেলা আছে বসে বসে খেলতে হয়।
  3. আগে-আগে—মায়ের আগে-আগে ছোট্ট মেয়েটা খুশিতে হাঁটছিল। 
  4. হেঁটে-হেঁটে—যেখানে যানবাহন নেই সেখানে হেঁটে-হেঁটে যেতে হয়। 
  5. জেগে-জেগে—তুমি কি বাপু আজকাল জেগে-জেগে স্বপ্ন দেখছ? 
৭. গল্পের ঘটনা অনুযায়ী নীচের বাক্যগুলি পরপর সাজিয়ে লেখো :
উত্তর : ৭.৫ সামনের নৌকা থেকে সুরেলা বাজনা ভেসে আসছিল। 
৭.১ বোতোকে দেখা গেছে।
৭.২ বোতোকে দেখার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলাম। 
৭.৪ একটা নৌকার গানবাজনা থেমে গেলে বাকিরা যারা যত আগে আগে খেয়াল করবে তারা তত আগে তাদের নৌকার বাজনা থামাবে। 
৭.৩ বোতো মনের ভিতরের সুরে তাদে ছন্দে নেচে বেড়াচ্ছে।

৮. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
৮.১ লেখক কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন?
উত্তর : লেখক আমাজনের জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছিলেন।
৮.২ লেখক কাকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন?
উত্তর : লেখক আমাজনের বাসিন্দা উবা নামে এক সহজ-সরল আদিবাসী কিশোরকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন।
৮.৩ জলের দেবতা বলে কাকে আমাজনের বাসিন্দারা মানে?
উত্তর : বোতো নামে একটি জলজ গোলাপি রঙের প্রাণীকে জলের দেবতা মানে।
৮.৪ উবা কোন শহরকে বালির দেশ বলে বুঝিয়েছিল?
উত্তর : কলকাতা শহরকে উবা বালির দেশ বলে বুঝিয়েছিল।
৮.৫ বালির দেশ–কথার অর্থ কী?
উত্তর : বালির দেশ কথার অর্থ মরুভূমি।

৯ . নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৯.১ উত্তর : কাকাদের সঙ্গে থাকলে আগন্তুক.ছেলে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের জঙ্গলে ঢুকতে পারত না। আমাজনের জঙ্গলের বর্ণময় রূপ, আমাজনের মতো সুন্দর সেখানকার আকাশে চাঁদের দৃশ্য, সেখানকার কৃত্রিম সরস মানুষজনের সঙ্গলাভ করতে পারত না। লেখক তাই একে সৌভাগ্যজনক মনে করেছেন।
৯.২ উত্তর : পাঠ্যাংশে নৌকা উৎসবের কথা বলা হয়েছে। কিশোর লেখক নৌকা উৎসবের দিনে তার সমবয়সি সেখানকার এক কিশোরের সঙ্গলাভ করে একটি নৌকায় উৎসব দেখতে আমাজনের জলে ভাসছিল। সেই নদীর জলে রাতে চাঁদের আলোয় বোতো নামে একটি বিচিত্র জলজ প্রাণীর দেখা পাওয়ায় এই উৎসবের প্রসঙ্গ এসেছে। 
৯.৩ উত্তর : ‘বোতো’ সম্পর্কে আমাজন অঞ্চলে প্রচলিত বিশ্বাসটি হল, ওই জলজ জীবটির দর্শন পাওয়া সবসময় ভালো। এ ছাড়া নৌকো উৎসবের দিনে বোতোর দেখা পাওয়া সৌভাগ্যের লক্ষণ। তার সম্পর্কে সকলে কল্পনা করে যে, বোতোই নাকি আমাজনের বিপদে-আপদে মানুষকে রক্ষা করে। জলের তলায়
তার মস্ত শহর, সেখানে রঙিন পাথরে তৈরি তার বিরাট প্রাসাদ।

৯.৪ উত্তর : গল্পকথকের চোখে দেখা ‘বোতো’-র শারীরিক গঠনের পরিচয় নিম্নরূপ — খুব লম্বা মতো একটি প্রাণী তিন-চার হাত জলের নীচে ধীরে ধীরে এঁকেবেঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার নাক বা ঠোঁট খুব সরু, লম্বায় প্রায় এক-দেড় হাত। মস্ত বড়ো মাথা, এর মস্তিষ্ক মানুষের চেয়ে বড়ো হলে আশ্চর্যের কিছু নেই।
এর ল্যাজটা শরীরের শেষপ্রান্ত থেকে দু-দিকে ভাগ হয়ে ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে। রংটা ঠিক লাল নয়, মনে হয় যেন গোলাপির দিকেই।

৯.৫ উত্তর : পাঠ্যাংশে যে রাতের ছবিটি রয়েছে তার বিশেষত্ব হল, সেই রাত ছিল নৌকো উৎসবের রাত। সেই নৌকা উৎসবের রাতে আমাজনের জলে ভাসে অসংখ্য নৌকো। নৌকো ভাসিয়ে সেখানকার আদিবাসীরা সুরেলা বাজনা বাজায়। গান-বাজনা চলে। সেই রাতের নদীর বুকে ‘বোতো’ নামক জলজ প্রাণীর দর্শন লাভ করলে মানুষের সৌভাগ্য মনে করা হয়  এটাই হল সেখানকার বিশেষত্ব।
৯.৬ উত্তর : বোতোর কাছে আগন্তুক ছেলেটির নীরব প্রার্থনা ছিল, বোতো যদি সত্যিই আমাজনের রক্ষাকর্তা হয় তাহলে আগন্তুককে সে যেন তার মা-বাবার কাছে আর স্কুলের বন্ধুদের কাছে ফিরে যাওয়ার উপায় করে দেয়।
৯.৭ উত্তর : ছবি এঁকে আগন্তুক ছেলেটি উবাকে বোঝাতে চেয়েছিল, আগন্তুক কলকাতায় থাকে, তার বাবা-মায়ের কথা, বন্ধুদের কথা, স্কুলের কথা, কলকাতা শহরের কথা, শহর ভরা ঘরবাড়ি, গাড়ি-ঘোরা, দোকানবাজার, লোকজনের কথা বোঝাল।
৯.৮ উত্তর : কলকাতা সম্পর্কে উবার ধারণা হল, কলকাতায় জঙ্গল নেই, পাখি নেই, প্রজাপতি নেই, বড়ো বড়ো নদী নেই। কলকাতা একটা শুধু বালির দেশ। অর্থাৎ, কলকাতা একটা মরুভূমির দেশ।
৯.৯ উত্তর : কলকাতা সম্পর্কে ‘উবা’-র ধারণাকে বদলে দিতে আমি যা যা করতাম তা হল এইরকম-
গঙ্গা আমাদের দেশের দীর্ঘতম নদী। এই নদী-তীরেই আমাদের কলকাতা নগরী। তাই প্রসঙ্গত গঙ্গার তীরে কলকাতার যত দূর অংশ বিস্তৃত আছে ততদূর অংশে অন্তত একশো মিটার চওড়া এলাকায় ঘন জঙ্গলের উপযোগী গাছপালা লাগানোর ব্যবস্থা করতাম। কলকাতায় যত রাস্তা বা গলি আছে সেই সব স্থানে নানারকম সুদৃশ্য গাছ লাগিয়ে দিতাম। কলকাতা জুড়ে এমন এমন ফুলের গাছ লাগাতাম যেসব গাছে প্রচুর ফুল হয় এবং সেইসব ফুলে মৌমাছির বা প্রজাপতির ছাপ পড়ে। এমন এমন গাছপালা যেখানে নানা রকমের পাখি স্বাভাবিক আকর্ষণে ছুটে এসে বসে। শহরটাকে এমনভাবে গড়ে তুলতাম যেখানে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত, বসন্ত এই চারটি ঋতুর বৈচিত্র্য অনুভব করা যায়। এছাড়া গঙ্গানদীকে করে তুলতাম স্বচ্ছসলিলা মনোমুগ্ধকর নদী, যার জলে আয়নার মতো মুখ দেখার সম্ভাবনা থাকে।

৯.১০ উত্তর : কলকাতার আকর্ষণ ছাড়িয়ে দিতে ‘উবা’ যে জগতে আগন্তুক ছেলেটাকে আহ্বান জানিয়েছিল তা নিম্নরূপ— আমাজনের জঙ্গল পৃথিবীর বিখ্যাত বনভূমি। এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তাই আমাজনের বনভূমির সমস্ত গাছপালা চিরসবুজ। এই অরণ্য যত গভীর তত বৈচিত্র্যময়। এখানে আছে বড়ো বড়ো নদী। আছে হাজার হাজার ফুলের গাছ। আছে নিত্যনিয়ত হাজার প্রজাতির প্রজাপতির আনাগোনা। আছে নানারকমের পশু। আছে হাজার প্রজাতির পাখির কলকাকলি। জঙ্গলে ফুল-ফল, কীটপতঙ্গ রাশি রাশি। আছে শীতের প্রভাব, আছে গ্রীষ্মের প্রভাব, আছে হেমন্তের প্রভাব আর বসন্তের মোহময় আমেজ।

১০. ঘটনার পাশাপাশি কারণ উল্লেখ করো : 
উত্তর : ↴
কারণ ঘটনা
(১) সেদিন নৌকা উৎসব (১) সামনের নৌকো থেকে ভারি সুরেলা বাজনা ভেসে আসছিল।
(২) বোতোর দর্শন সৌভাগ্যের ব্যাপার (২) উবার ফিশফিস গলায় শুনতে পেলাম—বোতো! বোতো!
(৩) বোতোর দর্শনলাভের প্রয়াস (৩) সকলেই গান বাজনা থামিয়ে যতটা সম্ভব নিঃশব্দে চারদিক থেকে গোল হয়ে প্রথম নৌকোটার কাছে ফিরে আসতে থাকে।
(৪) সঙ্গী কিশোরের পরিচয় জানার কৌতূহল (৪) জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে উবা একেকদিন হঠাৎই হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে।
(৫) কলকাতার স্কুলে যাওয়া ছাত্রছাত্রীর পরিচয় (৫) আরও কয়েকটি ছবি এঁকে যতটা সম্ভব স্কুলের বিষয়ে বললাম।


চতুর্থ পাঠ সত্যি চাওয়া প্রশ্নও উত্তর

❑ সত্যি চাওয়া কবিতাটির  বিষয়বস্তু :
কবি নরেশ গুহর লেখা ‘সত্যি চাওয়া’ কবিতার কথাগুলি আমাদের অনেক সতর্কতার বাণী শুনিয়ে দিয়েছে। কবি বলেছেন—'তোরা সত্যি যদি চাস', অর্থাৎ, আমরা চাইব বলে যদি প্রতিজ্ঞা করি এবং প্রাণপণ চেষ্টা করি তাহলে আমরা আমাদের সবাকছুই ভালো করতে পারি। আমাদের আশপাশে আমরা যা দেখি তা সবই আমাদের পরিবেশ। এই পরিবেশ আমরা যত ভালো রাখতে পারব ততই আমরা ভালো থাকব, সুস্থ থাকব, সুখে থাকব, আনন্দে দিন কাটাব। কবির কথামতো, আমরা চাইলেই সবুজ ঘাস দেখতে পারি। কারণ ঘাস জন্মায় স্বচ্ছ জল সুস্থ পরিবেশে। আমরা গাছ ছাড়া বাঁচতে পারি না। ঘাস বলতে এখানে সুন্দর সবুজ বনভূমির কথা বোঝানো হয়েছে। বন না থাকলে আমরা বাঁচতেই পারব না।

প্রথমত আমাদের বাঁচার জন্য চাই অক্সিজেন। বাতাসে মিশে থাকা ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে গাছ। তার বিনিময়ে গাছ আমাদের প্রাণদায়ী অক্সিজেন গ্যাস বিতরণ করে। সুতরাং আমাদের বনসৃজন করা দরকার। আমরা চাইলেই মিষ্টি জল পেতে পারি। মিষ্টি জল বলতে বিশুদ্ধ জল। চাষের জমিতে সার, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে আমরা পানীয় জল দূষিত করে তুলছি। কিন্তু আমরা যদি পরিবেশবিদগণের পরামর্শ অনুযায়ী চাষ ভালো করার জন্য বিকল্প কিছু ব্যবহার করি তাহলে জল নির্মল থাকবে। পরিবেশবিদগণের পরামর্শ মতো আমরা যদি তরিতরকারি বা ফলসমূহে বিষ প্রয়োগ না করি তাহলে সুস্বাদু ফল আমরা পেতে পারি। এসব সতর্কতা অবলম্বন করলে আমরা নির্মল বাতাস উপভোগ করতে অবশ্যই পারব।

⭕ সত্যি চাওয়া অধ্যায় থেকে প্রশ্নোত্তর প্র্যাকটিস সেট :
      ১. সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো :
(১) সত্যি চাইলে বাতাস—(গন্ধে/গানে/অক্সিজেনে) ভরে উঠবে।
(২) তোরা সত্যি চাইলে ঘাসের রং হবে—(লাল/নীল/সবুজ)।
(৩) সত্যি চাইলে জল হবে—(নোনতা/তেতো/মিষ্টি)।
(৪) সত্যি চাইলে ফল হবে— (স্বাদের/তেতো/মিষ্টি)।

২. বামপক্ষের সঙ্গে ডানপক্ষ মেলাও :
বামপক্ষ ডানপক্ষ
(১) সবুজ হবে উত্তর : ঘাস
(২) মিষ্টি হবে উত্তর : জল
(৩) স্বাদের হবে উত্তর : ফল
(৪) বাতাস ভরে উত্তর : গানে

৩ . অক্ষরগুলি সাজিয়ে অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরি করো :
রদেস্বা, বুজস, সতাবা, ষ্টিমি।
উত্তর :  স্বাদের; সবুজ, বাতাস, মিষ্টি।
৪. এলোমেলো শব্দগুলি সাজিয়ে সম্পূর্ণ বাক্য তৈরি করো :
(১) পরে আরও চাইলে সত্যি।
উত্তর : আরও সত্যি চাইলে পরে।
(২) ফল আরও হবে স্বাদের।
উত্তর : আরও স্বাদের হবে ফল।
(৩) হবে ঘাস আরও সবুজ।
উত্তর : আরও সবুজ হবে ঘাস।
(৪) চাস তোরা সত্যি যদি।
উত্তর : তোরা সত্যি যদি চাস।
৫. বনসৃজন করা আমাদের দরকার কেন?
উত্তর : আমরা গাছ ছাড়া বাঁচতে পারি না। বন না থাকলে আমরা বাঁচতেই পারব না। আমাদের বাঁচার জন্য চাই  অক্সিজেন। বাতাসে মিশে থাকা ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে গাছ তার বিনিময়ে গাছ আমাদের প্রাণদায়ী অক্সিজেন গ্যাস বিতরণ করে। সুতরাং আমাদের বনসৃজন করা দরকার।

আমি সাগর পাড়ি দেবো চতুর্থ পাঠ প্রশ্নও উত্তর

❑ আমি সাগর পাড়ি দেবো গল্পটির লেখক পরিচিতি :
বর্ধমানের আসানসোলের কাছে চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ। ১০ বছর বয়সে মক্তবের নিম্ন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষা শেষ করে শিয়ালসোলের রাজস্কুলে ভরতি হন। সেই স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। ‘ধুমকেতু’, ‘নবযুগ’, ‘লাঙল' ইত্যাদি পত্রিকার তিনি ছিলেন সম্পাদক। তাঁর লেখা কাব্য গ্রন্থগুলির নাম হল- ‘রিক্তের বেদন’, ‘ব্যথার দান’ প্রভৃতি গল্প, ‘মৃত্যুক্ষুধা’, ‘বাঁধনহারা’ প্রভৃতি। ‘আলেয়া’, ‘ছিনিমিনি’‘অগ্নিবীণা’, ‘সঞ্চিতা’, ‘দোলনচাপা’, বিষের বাঁশি’, ‘সর্বহারা’ প্রভৃতি নাটক কবি রচনা করেন। এ ছাড়াও তিনি তিন হাজারের বেশি গান রচনা করেছেন ও সুর দিয়েছেন। ১৯৪৫
সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই মহান স্রস্টাকে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ এবং ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। পক্ষাঘাতে তিনি শেষ জীবনে মূক হয়ে যান। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বাংলাদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট বাংলাদেশের ঢাকা শহরে এই বিদ্রোহী কবি মৃত্যুবরণ করেন।


❑ আমি সাগর পাড়ি দেবো গল্পটির বিষয়বস্তু :
সওদাগর হয়ে কবি সাগরপাড়ি দেবেন। তাঁর সপ্ত মধুকর অর্থাৎ, মূল্যবান জিনিসপত্রের নৌকা ভাসাবে সাগরের জলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঘাটে অর্থাৎ, বন্দরে বন্দরে তাঁর জিনিসপত্র দেওয়া-নেওয়া করবেন। বিশ্বজোড়া হাটে তাঁর জিনিস বেচাকেনা চলবে। কবির হৃদয়ে আছে নিঃস্বার্থ ভাবনা, তাই সিন্ধু অর্থাৎ, বিভিন্ন দেশের মানুষ তাঁকে ভালোবেসে তাঁর নৌকায় পরম সম্পদ উপহার দেবে। তাঁর গুণের জন্য দ্বীপে দ্বীপে মুক্তামালা তাঁকে উপহার দেবে সকলে। গাংচিল আকাশে উড়ে বেড়ায় লোভনীয় খাদ্যের সন্ধানে। কবির নৌকায় সুখাদ্যের সন্ধান পেয়ে তারা তাঁকে আমন্ত্রণ করে বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাবে। জলের যেসব হাঙর-কুমির তাঁর ওপর আক্রমণের চেষ্টা করবে তাদের তিনি বীরদর্পে বলবেন
তিনি আদৌ ভয় পাওয়ার ছেলেই নন। কবি মনে করেন, সপ্ত সাগরেই তাঁর বাণিজ্যের প্রসার। বিভিন্ন নদনদীর জল তাঁর বাণিজ্যের খাজনা বা শুল্ক মিটিয়ে দেয় । কবির রাজ্যে যদি কোনো জলদস্যু হানা দেয় তো তাদের ধারালো দাঁত ও নখ অর্থাৎ হিংস্রতা দেখে সওদাগর রূপী কবি এতটুকু ভয় পান না। কারণ তিনি সিন্ধুগাজি মোল্লামাঝিদের এবং ছেলেদের নৌ-সেনা।
জলদস্যুরা তাঁর রাজ্যে হানা দিলে ওই নৌ-সেনারা বর্শা দিয়ে তাদের হত্যা করবে। নিজেদের দেশের সুধা কবি অপরের দেশে বিতরণ ,করবেন। আবার, অপর দেশের সুধা এনে নিজের দেশে বণ্টন করবেন।
উদার-হৃদয় কবি মুক্তচিত্তে ঘোষণা করছেন, তিনি দেশে দেশে কোনো দেয়াল অর্থাৎ, পরস্পরের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ না রেখে ভালোবাসার বন্যায় সকলকে আপ্লুত করবেন। দেশজননীকে তিনি সগর্বে বলবেন, দেশের মায়ের ঘরে যা নেই তা তিনি বিদেশ থেকে এনে দেবেন, জগৎজুড়ে দেশমাতার যে দুঃখিনী নাম তা মুছে দিয়ে তিনি মায়ের লজ্জা নিবারণ করবেন। বিদেশ থেকে বাণিজ্য করে তিনি লাল জহরত পান্নাচুনি মুক্তামালা এনে দেশমাতাকে রাজরানির আসনে বসিয়ে নিজেকে রাজার কুমার রূপে প্রতিষ্ঠিত করবেন।

আমি সাগর পাড়ি দেবো চতুর্থ পাঠ প্রশ্নও উত্তর
     ✐ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর :
১. কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা কাব্যজগতে কী অভিধায় অভিহিত?
উত্তর : ‘বিদ্রোহী কবি' এই অভিধায় অভিহিত।
২. তাঁর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর : নজরুলের লেখা কাব্যগ্রন্থের নাম অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি।
৩. কবিতায় উল্লিখিত ‘বিভেদ’ শব্দটি দেখো। ‘ভেদ’ শব্দটির আগে ‘বি’ বসে তৈরি হয়েছে নতুন শব্দ ‘বিভেদ। নীচে বেশ কিছু শব্দ দেওয়া হল। নীচের শব্দগুলির আগে ‘বি’ যোগ করে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করো :
উত্তর : ভাগ➙ বিভাগ। তৃষ্ণা➙ বিতৃষ্ণা । চার➙ বিচার। হার➙ বিহার। জ্ঞান➙ বিজ্ঞান।  ক্রয়➙ বিক্রয়।

৪. নির্দেশ অনুসারে লেখো :
৪.১ ‘তালে তালে’ শব্দটিতে একই শব্দ পরপর দু-বার বসেছে। তোমাদের কবিতায় দেখো তো এরকম একই শব্দ পাশাপাশি দু-বার বসে কী কী শব্দ তৈরি হয়েছে।
উত্তর : দ্বীপে দ্বীপে, দেশে দেশে।
৪.২ 'তালে তালে' শব্দটিতে যেমন একই বর্ণ ‘ল’ দু-বার বসেছে তেমনি 'ল' ধ্বনিকে দু-বার ব্যবহার করে। আরও একটি শব্দ লেখো।
উত্তর : লাল
৪.৩ উপরের প্রশ্ন দুটিতে ব্যবহৃত শব্দটির মতো পাঁচটি শব্দ তুমি নিজে তৈরি করো।
উত্তর : ঘাটে ঘাটে, পথে পথে, গাছে গাছে, ফুলে ফুলে, চলে চলে।
 ৪.৪ 'র' ধ্বনিকে দু-বার ব্যবহার করে দেখ তো কোন কোন শব্দ পাও। একটি করে দেওয়া হল। (যেমন- থরথর।)
উত্তর : ঝরবার। ফরফর। ঘরঘর। ধরধর। গরগর।
৫. কোন কোন শব্দগুলির অন্ত্যমিল আছে তাদের মেলাওঃ


৬. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
৬.১ সওদাগর কোথায় পাড়ি দিতে চায়?
উত্তর : সাগরপাড়ি দিতে চায়।
৬.২ ময়ূরপঙ্খি বজরা কীসের মতো দুলে দুলে চলবে?
উত্তর : মরাল-এর মতো।
৬.৩ শুক্তি সওদাগরকে কী নজরানা দেবে?
উত্তর : মুক্তামালা নজরানা দেবে।
৬.৪ কথক সওদাগর হয়ে কাদের ভয় পান না?
উত্তর : হাঙর কুমিরদের ভয় পান না।
৬.৫ কথক সওদাগর কীভাবে বিভেদ ভেঙে সমস্তকে একাকার করতে চান?

উত্তর : বন্যা এলে বিভেদের সমস্ত প্রাচীর ভেঙে একাকার করতে চান।
৬.৬ কথক কাদের জলদস্যু বলেছেন? তাদের জন্য তিনি কাদের পাহারায় রেখে যেতে চান?
উত্তর : জলপথে যারা ডাকাতি করে তারা জসদস্যু। জলদস্যুদের জন্য তিনি সিন্ধু-গাজি, মোল্লামাঝি, নৌসেনা এবং জেলেদের পাহারায় রেখে যেতে চান।
৬.৭ দেশে দেশে দেয়াল গাঁথা’—বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? কীভাবে তিনি এর প্রতিকার করবেন?
উত্তর : দেশে দেশে মানুষের মধ্যে যে উচ্চনীচ, ধনী-গরিব, অধম-উত্তম এই ভেদাভেদ বুঝিয়েছেন। তিনি ভালোবাসার বন্যা বইয়ে সমস্ত বিভেদের প্রাচীর ভেঙে দিতে চান।
৬.৮ কবিতায় কথক কোন কোন জিনিসকে 'সাত সংখ্যা’ দিয়ে উল্লেখ করেছেন?
উত্তর : সাত সংখ্যা দিয়ে কথক সাত সাগর বুঝিয়েছেন। সপ্ত মধুকর ডিঙাকে বুঝিয়েছেন।
৬.৯ দুঃখিনী মায়ের দুঃখ ঘোচাতে কবি কী করতে চান?
উত্তরঃ কবি নিজের দেশের সুধা নিয়ে অন্য দেশে দেবেন এবং অন্য দেশের সুধা এনে তাঁর দুঃখিনী মায়ের দুঃখ ঘোচাতে চান।
৬.১০ কবিতায় কোন্ কোন্ রত্নের উল্লেখ আছে খুঁজে বার করো।
উত্তর : কবিতায় উল্লেখ আছে রত্ন, মাণিক, মুক্তা, জহরত, পান্না ও চুনি।
৬.১১ কবিতায় কোন কোন জলজ প্রাণীর উল্লেখ আছে? 
উত্তর : কবিতায় হাঙর ও কুমিরের উল্লেখ আছে।

৭. কবিতায় ‘বেচাকেনা’ শব্দ দুটি একসঙ্গে বসলেও শব্দ দুটি বিপরীতার্থক। পাশের শব্দঝুড়ির সাহায্যে এরকম কিছু শব্দের শূন্যস্থান পূরণ করো :
শব্দঝুড়ি : আলো, আকাশ, পাওনা, আগা, সুখ, নামা, মরণ, পশ্চাৎ
  1. উত্তর :  মরণ➙ বাঁচন, আকাশ ➙ পাতাল। 
  2.  দেনা ➙ পাওনা। সুখ ➙ দুঃখ। 
  3.  অগ্র➙ পশ্চাৎ, ওঠা ➙ নামা।
  4. আলো➙ আঁধার, আগা ➙ গোড়া।
 ৮. মনে করো, তুমি সওদাগর। বিভিন্ন দেশে জিনিসপত্র বেচাকেনা করতে যাও। জিনিসপত্র ছাড়া আর কী কী তুমি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেবে? তাদের দেশ থেকে কী কী তোমার সঙ্গে আনবে?
উত্তর : আমি কবি নজরুলের মতোই উদার মন নিয়ে বিশাল নৌকা নিয়ে সওদাগর হয়ে দেশে দেশে বাণিজ্য করতে। যাব। বাণিজ্য করার আনন্দ সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষ যা চায় তা যদি হাতের কাছে পেয়ে যায় তাহলে তারও যেমন আনন্দ হয়, আবার যে তাকে পাইয়ে দেয় সেও পায় খুব আনন্দ। আমি কবির মতো আমাদের দেশের নানারকম মণিমুক্তা এবং শৌখিন পণ্যদ্রব্য জাহাজে বোঝাই করে নিয়ে বিদেশে যাব। আবার, সেইসব দেশ থেকে আমাদের দেশের মানুষের চাওয়া বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য নিয়ে যাবে। এ ছাড়া আমি মনে মনে যা খুব আশা করি তা হল এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, মিত্রতার বন্ধন, পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বন্ধন। যেমন আমাদের নাচ বা নৃত্যকলা অন্য দেশে গিয়ে শেখাব, আবার তাদের দেশের নৃত্যকলা এদেশের মানুষকে শেখাব। আমি মনে করি এটাও বাণিজ্যের একটা অঙ্গীকার।
ভাবি আর বলি
১। জল খেলে মরে যায়।
➬ আগুন। 
২। নেই মই নেই ডানা, দেয় তবু আকাশে হানা।
➬ ধোঁয়া।
৩। কখনও ভুল করে না অথচ সবসময় মার খায়—কে সে?
➬ ঢাক।
৪। বসে এক কোণে উড়ে যায় বিশ্বভ্রমণে।
➬ ডাকটিকিট।
৫। জিনিসটা তোমারই অথচ অন্যে ব্যবহার করে তোমার চাইতে বেশি—কী সেটা?
➬ তোমার নাম।
৬। ভরা পেটে হেলে রয়, খালি পেটে সোজা হয়।
➬ ধান গাছ। 
৭। তোমার ডান হাত দিয়ে কোন জিনিস তুমি কখনও ধরতে পারো না?
➬ তোমারই ডান হাত।
৮। ছোট্ট দুটি জানালা। তা দিয়ে পুরো পৃথিবী দেখা যায়।
➬ দুটি চোখ।
৯। পা ছাড়া আসে যায়, জিভ ছাড়া কথা কয়।
➬ চিঠি।
১০। জন্মেও জন্মায়নি, না জন্মেও জন্মেছে—কী সেটা?
➬ ডিম।


দক্ষিণ মেরু অভিযান চতুর্থ পাঠ প্রশ্নও উত্তর সমাধান

❑ দক্ষিণমেরু অভিযান গল্পটির লেখক পরিচিতি :
বাংলার কল্লোল যুগের জনপ্রিয় লেখক নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। অনুবাদ সাহিত্যে এবং শিশুসাহিত্যে তাঁর প্রচুর অবদান। তিনি বাংলার গীতিকার হিসেবে একজন বিখ্যাত মানুষ। তিনি চলচ্চিত্রে এবং রঙ্গমঞ্চেও অভিনয় করেছেন। তিনি আবার একজন কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার এবং চিত্রপরিচালক। তিনি গল্প, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও ধর্ম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অনেক লিখেছেন। তাঁর লেখা দুর্গমপথে, দুঃখজয়ীর দল, বন্ধুর চিঠি, না জানলে চলে না ইত্যাদি হল তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। ‘মা’, ‘কুলি’ ইত্যাদি তাঁর অনুবাদ করা সাহিত্য। আমাদের বর্তমান পাঠ্য বিষয়টি
তাঁর লেখা ‘নতুন যুগের মানুষ’ বই থেকে গৃহীত হয়েছে। এই সুবিখ্যাত মানুষটি ১৯৬৩ সালে মৃত্যু ঘটে।


❑ দক্ষিণমেরু অভিযান গল্পটির বিষয়বস্তু :
অজানাকে জানার আগ্রহ মানুষের স্বাভাবিক নেশা। সেই নেশার বশে একসময় দক্ষিণমেরু আবিষ্কারের চেষ্টায় পৃথিবীর অনেকগুলি দেশ তখন খুব মেতে উঠেছিল। ১৯০১ সালের আগস্ট মাসে ইংল্যান্ডের কম্যান্ডার স্কট ‘ডিসকভারি' নামক জাহাজে চেপে স্যার আর্নেস্ট স্যালটন নামে এক বড়ো নাবিককে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণমেরু আবিষ্কারে চললেন। কয়েক মাস এগিয়ে যাওয়ার পর বরফের ওপর দিয়ে সহজে যাওয়া যাবে না ভেবে ১৯০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কিং এডওয়ার্ড দ্বীপে জাহাজ নোঙর করে থাক লেন। তারপর উনিশটা কুকুর নিয়ে স্লেজগাড়িতে এগিয়ে চললেন। কয়েক মাস এডওয়ার্ড দ্বীপে কাটিয়ে দ্বিতীয়বার যাত্রা শুরু করলেন স্কট। এবার অন্য দুজন তাঁর সঙ্গী হলেন ইভানস ও লাসলি। কিন্তু এবারেও খাদ্য ফুরিয়ে যাওয়ায় তাঁরা ফিরে এলেন ১৯০৩ সালের শেষ নাগাদ।

তাঁরা সে যাত্রায় যতদূর এগিয়েছিলেন তাতে আর মাত্র ৪৬৩ মাইল দূরে ছিল দক্ষিণ মেরু। স্যার আর্নেস্ট স্যাকলটন ১৯০৮ সালে আলাদাভাবে নিজের দল নিয়ে দক্ষিণ মেরু যাত্রা করেছিলেন। তাঁরা অনেক
দূর এগিয়েছিলেন। মাত্র ৯৭ মাইল পেরোতে পারলেই তাঁরা দক্ষিণমেরুতে পৌঁছে যেতেন। কিন্তু আর এগোনো 'তাদের পক্ষেও সম্ভব হল না। ১৯১০ সালে জুন মাসে কম্যান্ডার স্কট আবার তাঁর দলবল নিয়ে ‘টেরানোভা’ জাহাজে করে এগিয়ে চললেন দক্ষিণমেরু বিজয়ে। ১৯১১ সালের প্রথম দিকে সেই দুর্লঙ্ঘ্য বরফের প্রাচীরের কাছে হাজির হলেন। দক্ষিণমেরু এখান থেকে মাত্র ৩৫০ মাইল। ১৯১২ সালের নব বর্ষের প্রথম দিনে আটজন সঙ্গী নিয়ে তিনি দক্ষিণমেরুর ১৭০ মাইলের মধ্যে এসে পড়লেন। কয়েক দিন বিশ্রাম নিয়ে আবার বরফের অসম্ভব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চললেন। অবশেষে ১৮ জানুয়ারি ১৯১২ সালে দক্ষিণমেরুতে পৌঁছে গেলেন। গিয়ে দেখলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে নরওয়ের এক ব্যক্তি তাঁদের দেশের পতাকা লাগিয়ে গেছেন। ব্যথিত মনে দেশে ফিরে চললেন স্কট। কিন্তু ফেরার পথে এত বেশি বরফের ঝড়ের আক্রমণে পড়লেন যে সকলে পথেই মারা গেলেন।


 হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর :
১. দক্ষিণমেরু অভিযান রচনাংশটি লেখকের কোন বই থেকে নেওয়া?
উত্তর : লেখকের নতুন যুগের মানুষ বই থেকে নেওয়া।
২ .তাঁর লেখা আরও দুটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : দুর্গম পথে, দুঃখজয়ীর দল।
৩. শূন্যস্থান পূরণ করো :
৩.১ স্কট ১৮৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
৩.২ ছেলেবেলা থেকে স্কট জাহাজে কাজ শিখতেন।
৩.৩ প্রত্যেক তাঁবুর উপর একটা করে পতাকা গুঁজে রাখা হল।
৩.৪ ১৯১০ সালের জুন মাসের প্রথম দিকে দলবল নিয়ে স্কট টেরানোভা জাহাজে করে দক্ষিণমেরুর পথে আবার যাত্রা করলেন।
৩.৫ ক্যাপ্টেন স্কট-এর মৃতদেহের সঙ্গে তাঁর ডায়ারিও পাওয়া যায়।

৪. গল্পটিতে যে ইংরেজি মাসের নামগুলি পেয়েছ সেগুলি সাজিয়ে লেখো। সেই সেই মাসের ঘটনাগুলি পাশাপাশি উল্লেখ করো।
  1. ১৮৬৮ সালের ৫ জুন➙ ইংল্যান্ডের ডিভনশায়ারের এক গ্রামে স্কট জন্মগ্রহণ করেন।
  2. ফেব্রুয়ারি ১৯০২➙ কিং এডওয়ার্ড দ্বীপে স্কট নোঙর করে রইলেন।
  3. ১৯০২ সালের নভেম্বর ➙ স্কট শ্লেজযাত্রার আয়োজন করলেন। ১৯০২ সালের ডিসেম্বর অবধি এগিয়ে চললেন।
  4. জুন প্রথম সপ্তাহ ১৯১০➙ ক্যাপ্টেন স্কট তাঁর দলবল নিয়ে ‘টেরানোভা’ জাহাজে শেষ বারের মতো দক্ষিণমেরু যাত্রা করলেন। ১৯০১ সালের আগস্ট মাসে স্কট প্রথম দক্ষিণমেরুতে যাত্রা করেন।
  5. ১৯১১ সালের সেপ্টেম্বর➙ স্কট প্রায় ৩৫০ মাইল দূরত্বে দক্ষিণমেরু পৌঁছোলেন।
  6. ১ জানুয়ারি ১৯১২➙ স্কট দক্ষিণমেরুতে পৌঁছোলেন।
৫. দক্ষিণমেরু অভিযানে ক্যাপ্টেন স্কটের সাহায্যকারী কোন কোন ব্যক্তির নাম পেয়েছ তার একটি তালিকা প্রস্তুত করো।
উত্তর : ক্যাপ্টেন স্কটের সাহায্যকারী ব্যক্তিরা হলেন যথাক্রমে—‘রয়েল জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট স্যার ক্লেমেন্টস মার্কহাম। নাবিক স্যার আর্নেস্ট স্যাকলটন। উইলসন। ইভানস। লাসলি। ক্যাপ্টেন ওটস।

৬. বাক্যরচনা করো : শ্লেজ, আবিষ্কার, গৌরব, ব্যর্থ, সমুদ্রযাত্রা।
  1. শ্লেজ➙ বরফের দেশে কুকুরের টানা শ্লেজ গাড়িই একমাত্র বাহন। 
  2. আবিষ্কার➙ রাইট ভ্রাতৃদ্বয় এরোপ্লেন আবিষ্কার করেন। 
  3. গৌরব➙ সুভাষচন্দ্র সমগ্র বাঙালি জাতির গৌরব। 
  4. ব্যর্থ➙ প্রাণপণ চেষ্টায় কোনো কাজ করলে তা ব্যর্থ হবে না। 
  5. সমুদ্রযাত্রা➙ আগেকার দিনে পালতোলা নৌকায় নাবিকরা সমুদ্রযাত্রা করতেন।
৭. দক্ষিণমেরু অভিযানে স্কট যে যে বিপদের মুখে পড়েছিলেন তার তালিকা তৈরি করো। (একটি উদাহর দেওয়া হল)

অভিযান বিপদ
স্কটের দক্ষিণমেরু অভিযান (১৯০২ সালের নভেম্বর) বরফের ঝড়, স্যাকলটনের অসুখ, অন্যান্য যাত্রীরা অবসন্ন ও অজ্ঞান, খাদ্য সংকট।
১৯০৩ সালে ব্যর্থ হয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে আসার পথে। ঘন বরফে পথ অবরুদ্ধ।
১৯১০ সালের জুন মাসে দ্বিতীয়বার দক্ষিণমেরু যাত্রা। দক্ষিণমেরু পদার্পণ করে ফিরে আসার পথে বরফ বৃষ্টি, দলের সকল যাত্রীর তুষার সমাধি।


৮. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
৮.১ স্কটের পূর্বপুরুষেরা কোথায় চাকরি করতেন?
উত্তর : স্কটের পূর্বপুরুষেরা সামুদ্রিক বিভাগে বড়ো বড়ো চাকরি করতেন।
৮.২ ইংল্যান্ডের দক্ষিণমেরু অভিযানের আয়োজক সংস্থার নাম লেখো।
উত্তর : রয়েল জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটি।
৮.৩ প্রথম দক্ষিণমেরু অভিযান কত সালের কোন মাসে শুরু হয়েছিল?
উত্তর : ১৯০১ সালের আগস্ট মাসে।
৮.৪ দক্ষিণমেরু যাত্রায় স্কটের সঙ্গী কারা ছিলেন? মোট কয়টি কুকুর নেওয়া হয়েছিল?
উত্তর : স্যার আর্নস্ট স্যাকলটন, উইলসন। উনিশটা কুকুর নেওয়া হয়েছিল।
৮.৬ এডওয়ার্ড দ্বীপ থেকে দ্বিতীয়বার যাত্রাকালে কারা স্কটের সঙ্গী হয়েছিলেন?
উত্তর : দ্বিতীয়বার যাত্রাকালে স্কটের সঙ্গী ছিলেন ইভানস আর লাসলি।
৮.৭ স্কট আর কত মাইল দূরত্ব অতিক্রম করতে পারলেই দক্ষিণমেরুতে পৌঁছোতে পারতেন?
উত্তর : ৪৬৩ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করতে পারলেই স্কট দক্ষিণমেরুতে পৌঁছোতে পারতেন।
৮.৮ ১৯০৮ সালে কে দক্ষিণমেরুর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন?
উত্তর : স্যার আর্নেস্ট স্যাকলটন।
৮.৯ স্যাকলটন আর কতদূর যেতে পারলেই দক্ষিণমেরুতে পৌঁছোতে পারতেন?

উত্তর : আর মাত্র ৯৭ মাইল।
৮.১০ স্কট তৃতীয় অভিযান কত সালে শুরু করেন?
উত্তর : ১৯১০ সালের জুন মাসের প্রথম দিকে।

৯. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো : 
৯.১ ছেলেবেলা থেকেই সামুদ্রিক অভিযানে স্কটের আগ্রহ ছিল কেন?
উত্তর :  স্কটের পূর্বপুরুষেরা অনেকেই সামুদ্রিক বিভাগে বড়ো বড়ো চাকরি করে গিয়েছেন। তাঁদের রক্তের প্রভাবেই সমুদ্রের প্রতি স্কট একটা টান অনুভব করতেন।
৯.২ স্কট ছাড়া অন্যান্যদের দক্ষিণমেরু আবিষ্কারের অভিযানের প্রচেষ্টার কথা লেখো।
উত্তর : দ্বিতীয়বার স্কট দক্ষিণমেরুর পথ থেকে ফিরে এসেছেন শুনে স্কটের ১৯০১ সালের সঙ্গী স্যার আর্নেস্ট স্যাকলটন ১৯০৮ সালে নিজের দল নিয়ে আবার দক্ষিণমেরুর দিকে রওনা হলেন। আর মাত্র ৯৭ মাইল পেরোতে পারলেই তিনি দক্ষিণমেরুতে পৌঁছোনোর গৌরব অর্জন করতে পারতেন। কিন্তু তাঁকে বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয় দুর্লঙ্ঘ্য বাধার মুখোমুখি হয়ে।
৯.৩ অভিযান-আবিষ্কারের কাহিনি আমাদের ভালো লাগে কেন?
উত্তর : আমরা ছোটোবেলা থেকে সকলেই অজানাকে জানার অসীম কৌতূহল নিয়ে বড়ো হয়েছি। আমাদের জীবনে আমাদের মধ্যে এই বিপুল আগ্রহ আছে বলেই আমরা অর্থাৎ, মানবসমাজ এত উন্নত। অসীম কৌতূহলের বাসনা সকলেরই চিরকাল শুধু অজানাকে জানার, অচনাকে চেনার এবং অসম্ভবকে সম্ভব করার অদম্য মন নিয়ে বেঁচে থাকি। থেকেই নানা অভিযানে মানুষ বারবার ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু শেষ অবধি বিজয়ী হয়েছে। যে-কোনো অভিযানে এই যে বারবার চেষ্টা এবং ব্যর্থতা, আবার সফলতা লাভের নেশা এ জানতে আমাদের সকলেরই ভীষণ ভালো লাগে নতুন নতুন উৎসাহ লাভ করি।
৯.৪ দক্ষিণমেরু পৌঁছোনোর পরেও ক্যাপ্টেন স্কট কেন খুশি হতে পারেননি? ফেরার পথে তিনি যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর : ক্যাপ্টেন স্কট দক্ষিণমেরুতে পৌঁছে দেখলেন তাঁদের কয়েক সপ্তাহ আগে নরওয়ের বিখ্যাত আবিষ্কারক আমুন্ডসেন তাঁদের দেশের পতাকা একটি কাষ্ঠফলকে লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছেন।বরফের দক্ষিণমেরু আবিষ্কারের কৃতিত্ব অন্যজন করেছেন জেনে ব্যর্থ মনে স্কট দেশে ফিরতে লাগলেন। কিন্তু ভয়াবহ বাধার মুখোমুখি হতে লাগলেন। হাওয়া আর বয় না। শুধু জমাট বরফের কণা বইতে থাকে। দিনের পর দিন শুধু বৃষ্টি ছাড়া আকাশ কিংবা পৃথিবী কিছুই দেখা যায় না। প্রায় শ্বাসবন্ধ হতে যাওয়ার উপক্রম। ভীষণ বরফ পড়ার জন্য তাঁরা কিছু না দেখতে পেয়ে পথ খুঁজে পেলেন না। তাঁদের সারা শরীর অবসন্ন হয়ে পড়ল। স্কটের এক সঙ্গী ইভানস বরফ চাপা পড়ে মারা গেলেন। বরফ পড়া বন্ধ হল না। অবশেষে স্কট তাঁর অন্যান্য সঙ্গীদের নিয়ে একটি ডিপোতে ফিরে এলেও সবাই একে একে বরফের স্তূপে চিরতরে ঘুমিয়ে রইলেন।


১০. টীকা লেখো :
  1. স্লেজ গাড়ি ➙ কুকুরবাহী একপ্রকার যান। গ্রিনল্যান্ড, নরওয়ে, কানাডা এসব দেশের এক-এক অঞ্চলে বরফ জমে থাকে। এই বরফ গলে না। মানুষের যাতায়াতের অসুবিধা হয়। তাদের দেশে চাকাবিহীন এমন এক গাড়ি আছে তাতে দু-একজন লোক বসে যায়, আর তা টেনে নিয়ে চলে কুকুর। সেই দেশের কুকুর এই গাড়ি অনায়াসে টেনে নিয়ে চলে। কোনো গাড়ি একটি কুকুর টেনে নিয়ে যায়। কোনো গাড়ি চার-পাঁচটি কুকুরেও টেনে নিয়ে যায়। সেই গাড়িতে কুকুরের ক্ষমতা অনুযায়ী দুজন বা চারজন যাত্রী বসে যায়।
  2. কিং এডওয়ার্ড দ্বীপ➙ দ্বীপ শব্দের অর্থ হল চারদিকে জল মাঝখানে স্থল। অর্থাৎ, সমুদ্রের মাঝখানে একটি স্থান যেখানে মানুষজন বা কোনো প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে। পৃথিবীতে যা কিছু আছে তাদের সকলেরই নাম আছে। দক্ষিণমেরু অভিযানকারী ব্রিটিশ নাবিক ক্যাপ্টেন স্কট ১৯০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কিং এডওয়ার্ড নামক দ্বীপে কিছুদিনের জন্য অবস্থান করেছিলেন।
  3. ডিসকভারি ➙ ডিসকভারি শব্দের অর্থ আবিষ্কার। শব্দটি ইংরেজি discovery. এই ডিসকভারি হল একটি বৃহৎ জাহাজ। ইংল্যান্ডের নাবিক ক্যাপ্টেন স্কট দক্ষিণমেরু অভিযানের উদ্দেশ্যে তাঁর দলবল নিয়ে এই জাহাজে চেপেই সমুদ্রযাত্রা করেছিলেন।
  4. রয়েল জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটি➙ দক্ষিণমেরু হল বরফের দেশ। একশো বছরেরও কিছুকাল আগে পর্যন্ত সেখানে কোনো মানুষ যেতে পারেনি। পৃথিবীর বহু দেশ চেষ্টা করেছে দক্ষিণমেরুতে তাদের লোক পাঠানোর জন্য। কিন্তু পারেনি। তা সত্ত্বেও কোনো দেশের চেষ্টারও অন্ত ছিল না। প্রত্যেক দেশই চাইত আগে সেই উত্তরমেরুতে প্রথম তাদের দেশের পতাকা পুঁতে রেখে বিজয়ের সম্মান লাভ করবে। তাই দক্ষিণমেরু অভিযানের জন্য একটি দল গড়া হচ্ছিল। এই দলের নাম রয়েল জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটি। এই সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন স্যার ক্লেমেন্টস মার্কহাম।
  5. টেরানোভা➙ দক্ষিণমেরু অভিযানকারী ইংল্যান্ডের নাবিক ক্যাপ্টেন স্কট ১৯০১ সালের আগস্ট মাসে দক্ষিণমেরুর উদ্দেশ্যে সমুদ্রপথে এগিয়ে যান। কিন্তু তিনি বিফল হয়ে ফিরে আসেন। তারপর তিনি দ্বিতীয়বার দক্ষিণমেরু জয়ের স্বপ্নে ১৯১০ সালের জুন মাসে যে জাহাজে করে যাত্রা করেন তার নাম ‘টেরানোভা’।
  6. স্কট ➙ ইংল্যান্ডের ডিভনশায়ারের এক গ্রামে ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন স্কট জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষেরা সামুদ্রিক বিভাগে বড়ো বড়ো চাকরি করতেন বলে সমুদ্রের প্রতি তাঁর ছিল একটা প্রবল আকর্ষণ। সেইজন্য ছেলেবেলা থেকে তিনি জাহাজের কাজে যোগদান করে সমুদ্রযাত্রা করেন। তিনি ইংল্যান্ডের একটি মেরু অভিযানকারী দলের হয়ে প্রথমে ১৯০১ সালের আগস্ট মাসে দক্ষিণমেরুর উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। কিন্তু কোনোভাবেই আর বরফের দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর ডিঙিয়ে তিনি দক্ষিণমেরুতে পৌঁছতে পারেননি। এরপর দশ বছর পর ১৯১০ সালের জুন মাসে দক্ষিণমেরু অভিযানে বেড়িয়ে পড়েন। ১৯১২ সালের ১৮ জানুয়ারি দক্ষিণমেরু পৌঁছে যান। কিন্তু তার কয়েকদিন আগেই নরওয়ের এক নাবিক সেই দেশের পতাকা পুঁতে রেখে গিয়েছেন দেখে হতাশ হয়ে তাঁর দলবল নিয়ে ফিরে আসেন। ফিরে আসার পথে তিনি বরফের ঝড়ে এমনভাবে আক্রান্ত হন যে তিনি ও তাঁর দলবল সকলেই বরফের মধ্যে মারা যান।

বহুদিন ধরে চতুর্থ পাঠ প্রশ্নও উত্তর সমাধান



❑ বহু দিন ধরে কবিতাটির বিষয়বস্তু :
ভ্রমণপ্রেমী মানুষরা যত খরচই হোক না কেন ঘুরতে খুব ভালোবাসে। বাধাবিপত্তি, দুর্যোগ অতিক্রম করে বেরিয়ে পড়ে অজানাকে জানার উদ্দেশ্যে, এই রকমই এক কবিতা রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘বহু দিন ধরে’ কবিতায়। কবি নিজেই যেন বেড়াতে গেছেন বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে। বহু টাকাও তিনি ব্যয় করেছেন। তিনি গেছেন পর্বতমালা দেখতে, সমুদ্র দেখতে। কিন্তু তিনি চোখ মেলে সবকিছু দেখতে পাননি বলে অনুশোচনা করছেন। বাইরে বেড়াতে যাওয়া যেমন আনন্দদায়ক তেমন নিজের চারপাশের পরিবেশ সম্বন্ধেও ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন। কবি ঘর থেকে শুধু দু পা-ই ফেলেছেন। একটি ধানের শিষের ওপরে যেমন একটি শিশির বিন্দু জমে তেমনি লেখকের পায়ের ওপর পা পরেই চলেছে। শিশির যেমন রোদের তাপে শুকিয়ে যায় বা ঝড়ে পড়ে তেমন কবিরও ঘর থেকে বেরোনো হয়েছে কিন্তু চোখ মেলে দেখে সবকিছু অনুভব করতে, বুঝতে পারেননি। এই কবিতায় কবির আক্ষেপের সুর ফুটে উঠেছে।

⭕ বহু দিন ধরে অধ্যায় থেকে প্রশ্নোত্তর প্র্যাকটিস সেট :
      ১. সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো :
১) দেখিতে গিয়েছি — (সিন্ধু/গঙ্গা/গোদাবরী)।
উত্তর : সিন্ধু
২) দেখা হয় নাই— (চক্ষু মেলিয়া/হৃদয় মেলিয়া/পা ফেলিয়া)।
উত্তর : চক্ষু মেলিয়া
৩) শিশিরবিন্দু রয়েছে — (পদ্মপাতার ওপর/ধানের শিষের ওপর)।
উত্তর : ধানের শিষের ওপর
৪) ঘর হতে শুধু — (দুই পা/তিন পা/চার পা) ফেলিয়া।
উত্তর : দুই পা

২. এলোমেলো অক্ষরগুলি সাজিয়ে অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরি করো :
শক্রো, লামার্বতপ, রশিষে, ন্দুরবিশিশি।
উত্তর : ক্রোশ, পর্বতমালা, শিষের, শিশিরবিন্দু।

৩. শব্দগুলি সাজিয়ে বাক্যগুলি তৈরি করো :
(১) দূরে ক্রোশ ধরে বহু দিন বহু।
উত্তর : বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে।
(২) পর্বতমালা দেখিতে গিয়েছি।
উত্তর : দেখিতে গিয়েছি পবর্তমালা।
(৩) মেলিয়া নাই চক্ষু হয় দেখা।
উত্তর : দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া।
(৪) ফেলিয়া শুধু পা দুই হতে ঘরে।
উত্তর : ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া।
(৫) শিশিরবিন্দু একটি।
উত্তর :  একটি শিশিরবিন্দু।

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন