অধ্যায়ঃ ৪ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা
দ্বিতীয় পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৬০০
❖ সংক্ষেপে অধ্যায়ঃ ❖ ভারতের অনেকগুলি ভাষার মধ্যে একটি ভাষা হল
ইন্দো-ইউরােপীয়
ভাষা। ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইউরােপের অনেক ভাষার সংমিশ্রণে এই ভাষা গড়ে উঠেছে।
অনেক ঐতিহাসিকের মতে মধ্য এশিয়ার তৃণভূমি অঞ্চলে কিছু যাযাবর জাতি নিজেদের ও
তাদের পালিত পশুর খাদ্যের অভাবে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরােপের বিভিন্ন
অঞ্চলে, ইরানে ও ভারতে ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষা পরিবারের এক সদস্য হল ইন্দো-ইরানীয়
ভাষা। ওই ভাষা মানুষের মুখে ধীরে ধীরে বদলে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষায়
পরিণত হয়েছে। তার সঙ্গে মিশেছে নানান আঞ্চলিক শব্দ, সংস্কৃত ভাষা সেই ভাষাগুলির
মধ্যে একটি। ইন্দো-ইরানের একটি ভাষাগােষ্ঠী উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত হয়ে ভারতীয়
উপমহাদেশে পৌঁছেছিল। এদেরই ইন্দো-আর্য ভাষা গােষ্ঠী বলা হয়। এদের সভ্যতার নাম হল
বৈদিক সভ্যতা।
বৈদিক সভ্যতা ও বৈদিক সাহিত্য বেদ কথাটি এসেছে বিদ শব্দ থেকে। বিদ মানে হল-
জ্ঞান। বৈদিক সাহিত্যকে চারভাগে ভাগ করা যায়। সংহিতা, ব্রাম্মন, আরণ্যক ও
উপনিষদ। ঋক, সাম, যজুঃ ও অথর্ব এই চারটি হল সংহিতা, সংহিতাগুলি ছন্দে বাঁধা
কবিতা, ঋকবেদ সবথেকে পুরােনাে বৈদিক সংহিতা। বাকি তিনটি সংহিতা ঋকবেদের পরের রচনা
তাই সেগুলিকে পরবর্তী বৈদিক সাহিত্য বলা হয়। বৈদিক যুগের দুটি ভাগ একটি আদি
বৈদিক যুগ যা ঋকবেদ থেকে জানা যায় আর অপরটি পরবর্তী বৈদিক যুগ যা পরবর্তী বৈদিক
সাহিত্য থেকে জানা যায়। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১০০০ অব্দকে আদি বৈদিক
যুগ ধরা হয়। এবং তারপর থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ পর্যন্ত পরবর্তী বৈদিক যুগ।
ঋকবেদে ভূগােলের অনেক বিষয় আলােচনা করা আছে। হিমালয় ও কাশ্মীরের মূজবন্ত
শৃঙ্গের উল্লেখ থাকলেও বিন্ধ্যপর্বতের উল্লেখ নেই। অনেক নদীর উল্লেখ আছে যা থেকে
বােঝা যায় ওই নদীর কাছাকাছি এলাকাগুলিতেই আদি বৈদিক যুগের বসতি। ঋকবেদের
আলােচনায় গুরুত্বপূর্ণ নদী ছিল সিন্ধু। সরস্বতী নামক নদীর উল্লেখ থাকলেও আজ আর
খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঋকবেদের একেবারে শেষের দিকে মাত্র একবার গঙ্গা ও যমুনা নদীর
কথা পাওয়া যায়। ঋকবেদের ভূগােল থেকে জানা যায় বৈদিক সভ্যতা আজকের আফগানিস্তান
ও পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের সঙ্গে আদি বৈদিক যুগের মানুষের পরিচয় ছিল।
সিন্ধু ও তার পূর্বদিকের উপনদীগুলি দিয়ে ঘেরা অঞল ছিল আদি বৈদিক মানুষের
বাসস্থান।