পৃথিবীর-আবর্তন-পরিক্রমণ-ও-তার-ফল | prithibir abartan porikromon o tar fol

পৃথিবীর আবর্তন, পরিক্রমণ ও তার ফল


Q1. সৌরদিন কাকে বলে?
➣ পৃথিবীর নিজের মেরুদণ্ডের উপর একবার পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করতে সময় লাগে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট বা মোটামুটি ২৪ ঘণ্টা বা একদিন। একে সৌরদিন বলে।

Q2. পৃথিবীর অক্ষ এবং কক্ষপথ কাকে বলে?
➣ পৃথিবীর মেরুদণ্ড বা উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর সংযোগকারী রেখাকে অক্ষ বলে। 
➣ পৃথিবী যে নির্দিষ্ট পথে সূর্যকে পরিক্রমণ করে তাকে কক্ষপথ বলে। পৃথিবীর কক্ষপথের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৬ কোটি কিমি.। যে সমতলে কক্ষটি অবস্থিত তাকে কক্ষতল বলে । পৃথিবীর কক্ষপথটি উপবৃত্তাকার।

Q3. পৃথিবীর সব স্থানে আহ্নিক গতির বেগ একরকম হয় না কেন?
➣ পৃথিবী একটি অভিগত গোলক বলে পৃথিবীপৃষ্ঠের পরিধি সর্বত্র সমান নয়। ফলে, পৃথিবীপৃষ্ঠে সমস্ত স্থানের আবর্তনের বেগও সমান নয়। নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর পরিধি সবচেয়ে বেশী (প্রায় ৪০,০০০ কি.মি.)। এইজন্য নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তনের বেগ সবচেয়ে বেশী, ঘণ্টায় প্রায় ১,৭০০ কি.মি.।

কলকাতায় পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগ ঘণ্টায় প্রায় ১,৫৩৬ কিলোমিটার। আবর্তনের বেগ নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে কমতে কমতে মেরুদ্বয়ে প্রায় নিঃশেষহয়ে যায়।

Q4. পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না কেন?
➣ ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থান করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ, জীবজন্তু, যাবতীয় জিনিসপত্র প্রভৃতি, পৃথিবীর সঙ্গে একই গতিতে আবর্তন করে বলে আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি অনুভব করতে পারি না। অন্যদিকে ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থিত সমস্ত বস্তুকে পৃথিবী অভিকর্ষ শক্তির বলে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে বলে আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না।

Q5. সূর্যের আপাত দৈনিক গতি বা আপাত সঞ্চরণ কাকে বলে?
➣ আহ্নিক গতির সময় পৃথিবী পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করে বলে আপাতদৃষ্টিতে সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে গতিশীল বলে মনে হয়। এই গতিকে সূর্যের আপাত দৈনিক গতি বা আপাত সঞ্চরণ বলে।


Q6. বার্ষিক রবি সঞ্চরণবা রবি মার্গ কাকে বলে?
➣ সূর্যের আপাত গতির বিভিন্ন পর্যায়ে বছরের বিভিন্ন সময় সূর্য পৃথিবীর নিরক্ষরেখা, কর্কটক্রান্তি রেখা এবং মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। পৃথিবীর এই তিনটি রেখার ওপর সূর্যের আপাত বার্ষিক গতিশীলতা বার্ষিক রবি সঞ্চরণ বা রবিমার্গ নামে পরিচিত।

Q7. সূর্যের উত্তরায়ণ কাকে বলে?
➣ 21শে ডিসেম্বরের মকরসংক্রান্তি থেকে 21 শে জুনের কর্কটসংক্রান্তি পর্যন্ত অর্থাৎ 23 `\frac{1}{2}`° দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে 23 `\frac{1}{2}`° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত সময়ে সূর্যের উত্তরমুখী আপাত গতিকে উত্তরায়ণ বলা হয় ।

Q8. সূর্যের দক্ষিণায়ন কাকে বলে?
➣ 21শে জুনের কর্কটসংক্রান্তি থেকে 21 শে ডিসেম্বরের মকরসংক্রান্তি পর্যন্ত অর্থাৎ  23 `\frac{1}{2}`°
 উত্তর অক্ষাংশ থেকে  23 `\frac{1}{2}`° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত সময়ে সূর্যের দক্ষিণমুখী আপাত গতিকে দক্ষিণায়ন বলা হয়।

Q9. কোন দিন দুটিতে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের সর্বত্র দিন ও রাত্রি সমান হয়?
➣ 21 শে মার্চ ও 23 শে সেপ্টেম্বর দিন দুটি বিশেষভাবে স্মরণীয়। কারণ, এই তারিখ দুটিতেই দিন ও রাত্রির মধ্যে বিন্দুমাত্র তফাৎ থাকে না।

Q10. গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকালে দিন ছোট হয় কেন?
➣ সূর্য পরিক্রমার সময়ে পৃথিবীর মেরুরেখা তার কক্ষতলের সঙ্গে 66 `\frac{1}{2}`° কোণে অবস্থান করার জন্য শীতকালে ডিসেম্বর মাসে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের কাছে সরে আসে এবং ঐ সময় পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় সূর্য থেকে বেশী দূরে অবস্থান করে। এই সময় সূর্য কিরণ দক্ষিণ গোলার্ধে লম্বভাবে বা ‘প্রায় লম্বভাবে’পড়ে এবং উত্তর গোলার্ধে তির্যকভাবে পড়ে। ফলে এই সময় উত্তর গোলার্ধে রাত্রি বড় এবং দিন ছোট হয়। বলা বাহুল্য, দক্ষিণ গোলার্ধে এই একই সময় দিন বড় এবং রাত ছোট হয়, অর্থাৎ দক্ষিণ গোলার্ধে তখন গ্রীষ্মকাল। 21শে ডিসেম্বর মকর সংক্রান্তির দিন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের সবচেয়ে দূরবর্তী হয়, ফলে ঐ দিন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে ছোট এবং রাত সবচেয়ে বড় হয় (14 ঘণ্টা রাত ও 10 ঘণ্টা দিন)।

Q11. শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালে দিন বড় হয় কেন?
➣ গ্রীষ্মকালে জুন মাসে পৃথিরীর উত্তর গোলার্ধ দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় সূর্যের অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী হয়। এইসময় ছায়াবৃত্ত নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণে সমাক্ষরেখাগুলোকে এমনভাবে ভাগ করে যে, উত্তর গোলার্ধে দিন বড় এবং রাত্রি ছোট হয়। সূর্যের উত্তরায়ণের ফলে ২১শে জুন কর্কটসংক্রান্তির দিন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় এবং সূর্যকিরণ উত্তর গোলার্ধে লম্বভাবে পড়ে। ফলে ২১শে জুন তারিখটিতে উত্তর গোলার্ধে দিনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশী এবং রাতের পরিমাণ সবচেয়ে কম হয় (১৪ ঘন্টা দিন এবং ১০ ঘন্টা রাত)।

Q12. পৃথিবীর কোন অঞ্চলে বছরের সব সময়েই গ্রীষ্মকাল এবং কোন অঞ্চলে সারা বছরই শীতকাল?
➣ (১) নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা দিন-রাত্রি সমান বলে এখানে সবসময়ই গ্রীষ্মকাল, ফলে সেখানে কোন ঋতু-পরিবর্তন হয় না এবং (২) মেরু অঞ্চলে স্বল্পস্থায়ী সূর্যকিরণ সর্বদা তির্যকভাবে পড়ে বলে এখানে উষ্ণতার পরিমাণ সামান্য, তাই সেখানে সর্বদা শীতকাল।

Q13. অপসূর ও অনুসূর বলতে কি বোঝ?
➣ পৃথিবীর পরিক্রমণের সময় সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব সর্বদা সমান থাকে না। এর কারণ হল সূর্য পৃথিবীর কক্ষপথের একটি নাভিতে অবস্থিত। ৪ঠা জুলাই সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশী (১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি.) হয় একে পৃথিবীর অপসূর অবস্থান বলে। অন্যদিকে ৩রা জানুয়ারী সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে কম (১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি.) হয় একে পৃথিবীর অনুসূর অবস্থান বলে

Q14. সৌর বৎসর কাকে বলে?
➣ একবার সূর্যকে পূর্ণ পরিক্রম করতে পৃথিবীর ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড (বা ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা সময় লাগে) একে সৌর বৎসর বলে।

Q15. নিশীথ সূর্য কাকে বলে এবং কেন?
➣ (ক) পৃথিবীর অভিগত গোলাকৃতি, (খ) পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ, (গ) পৃথিবীর মেরুরেখার সর্বদা একই মুখে অবস্থান এবং (ঘ) সূর্য প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবীর কক্ষপথের সঙ্গে তার মেরুরেখার 66 `\frac{1}{2}`°কোণে অবস্থানের জন্য বছরে একবার পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ এবং আর একবার পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের নিকটবর্তী হয়, এর ফলে বছরের একই সময় সূর্য কিরণ উভয় গোলার্ধে একইভাবে পড়ে না। 21 শে মার্চ থেকে 23 শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত 186 দিন সময়ে সুমেরু বৃত্ত অথবা 66 `\frac{1}{2}`° উত্তর অক্ষরেখার উত্তরে অবস্থিত উত্তর মেরু অঞ্চলে 24 ঘণ্টাই সূর্যের আলো থাকে। ফলে স্থানীয় সময় অনুসারে গভীর রাতেও উত্তর মেরুর আকাশে সূর্য দেখা যায়, একে নিশীথ সূর্য বলে।

Q16. আহ্নিক গতির ফলাফল কি কি?
➣ পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে : (১) দিন-রাত্রি, (২) জোয়ার-ভাঁটা এবং (৩) উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ সৃষ্টি এবং (৪) বায়ু প্রবাহ ও সমুদ্র স্রোতের গতিবিক্ষেপ হয়।

Q17. ঋতু পরিবর্তনের কারণ কি?
➣ বছরের বিভিন্ন সময়কে উত্তাপের পার্থক্য অনুসারে যে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয় তাদের প্রত্যেকটি ঋতু বলে। পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে : (১) পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দিনরাত্রির হ্রাস বৃদ্ধির জন্য উত্তাপের হ্রাস-বৃদ্ধি এবং (২) পৃথিবীর কক্ষপথের তলের সঙ্গে মেরুদণ্ডের 66 `\frac{1}{2}`° কৌণিক অবস্থানের ফলে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে লম্ব ও তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মির জন্য উত্তাপের পরিবর্তন, প্রধানত এই দুই কারণে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়।

Q18. অধিবর্ষ কি?
➣ যে বছর ফেব্রুয়ারী মাসের দিন সংখ্যা ১ দিন বাড়িয়ে (২৮ + ১ = ২৯ দিন করে) বছরটিকে ৩৬৬ দিন করা হয়, সেই বছরকে অধিবর্ষ বা লিপইয়ার বলা হয়।

 ➣ টীকা লেখ:
Q19. পৃথিবীর আবর্তন গতি বা আহ্নিক গতি :  পৃথিবী তার নিজের মেরুদণ্ডের বা অক্ষের চারদিকে একদিনে একবার নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে। এই গতিকে দৈনিক গতি বা আবর্তন গতি বা আহ্নিক গতি বলে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীতে দিন-রাত্রি, জোয়ার-ভাঁটা সৃষ্টি, বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্র স্রোতের গতিবিক্ষেপ এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। 

পৃথিবী একটি অভিগত গোলক হওয়ায় পৃথিবী পৃষ্ঠের পরিধিসর্বত্র সমান নয়। ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের সমস্ত স্থানের আবর্তনের বেগও সমান হয় না, যেমন নিরক্ষরেখায় আবর্তন গতির বেগ সবচেয়ে বেশী। আবর্তনের বেগ নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণে কমতে কমতে দুই মেরু বিন্দুতে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়।

Q20. কর্কটসংক্রান্তি : নিজের কক্ষতলের সঙ্গে 66 `\frac{1}{2}`° কোণ করে পৃথিবীর মেরুরেখা নিজের কক্ষপথ ধরে অবিরাম সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এভাবে পৃথিবীর সূর্য পরিক্রমার সময়, বছরের কয়েকটি বিশেষ দিনে মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর নির্দিষ্ট কয়েকটি অক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে।
সেই সময় ভূ-পৃষ্ঠের অন্যত্র সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পতিত হয়। ফলে একদিকে যেমন : দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি হয়, অন্যদিকে তেমনি তাপমাত্রারও পরিবর্তন ঘটে। ২১শে জুন তারিখে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে। ঐদিন সূর্যকিরণ কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে বলে, ২১শে জুন তারিখটিতে উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় এবং রাত সবচেয়ে ছোট হয় (১৪ ঘণ্টা দিন আর ১০ ঘণ্টা রাত্রি) আর দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক এর বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয়' (১০ ঘণ্টা দিন, ১৪ ঘণ্টা রাত্রি)। ২১শে জুন সূর্য উত্তরায়ণের শেষ সীমা কর্কটক্রান্তি রেখায় পৌঁছায় বলে ২১শে জুন দিনটিকে কর্কটসংক্রান্তি
উত্তর অয়নান্ত বলে।

Q21. অপসূর ও অনুসূর : পৃথিবীর সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণের সময় সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব সর্বদা সমান থাকে না। এর কারণ হল, সূর্য পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথের একটি নাভিতে অবস্থিত। ৪ঠা জুলাই সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশী ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কি. মি. হয়, একে পৃথিবীর অপসূর অবস্থান বলে। অন্যদিকে ৩রা জানুয়ারী সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে কম হয় ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কি. মি., একে পৃথিবীর অনুসূর অবস্থান বলে।

গ্রীষ্মকালে আমাদের পৃথিবী থেকে অপসূর অবস্থানে বেশী দূরত্বের জন্য সূর্যকে ছোট এবং শীতকালে অনুসূর অবস্থানে কম দূরত্বের জন্য সূর্যকে বড় দেখায়। দূরত্বের পার্থক্যের জন্য পৃথিবীর পরিক্রমণের বেগ গ্রীষ্মকালে পরিবর্তিত হয়। শীতকালে আমাদের পৃথিবীর পরিক্রমণের বেগ বাড়ে এবং গ্রীষ্মকালে কমে।

Q22. লিপইয়ার বা অধিবর্ষ : যে বছর ফেব্রুয়ারী মাসের দিন সংখ্যা ১ দিন বাড়িয়ে (২৮ +১ = ২৯ দিন করে) বছরটিকে ৩৬৬ দিন করা হয় সেই বছরকে অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার বলা হয়। পৃথিবীর একবার সূর্য পরিক্রমার সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড বা ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা। কিন্তু আমরা ৩৬৫ দিনে এক বছর ধরি। এতে প্রতি বছর প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় বাড়তি থেকে যায়। এইজন্য প্রতি চার বছর অন্তর ফেব্রুয়ারী মাসে ১ দিন বাড়িয়ে (৪ বছর × ৬ ঘণ্টা = ২৪ ঘণ্টা বা ১ দিন) বাড়তি সময়ের সমতা বজায় রাখা হয়। সাধারণভাবে খ্রীষ্টাব্দ সংখ্যাকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি কোন ভাগশেষ না থাকে তবে ঐসব বছরকে অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার বলা হয়। এই হিসেবে ২০০৪ সালটি একটি লিপ ইয়ার,
কেননা এটি ৪ দিয়ে বিভাজ্য। কিন্তু এইভাবে নির্ণয় করা অধিবর্ষে প্রতি বছর ১১ মিনিট ১৪ সেকেণ্ড সময় বেশী ধরা হয়ে যায়।

এই ভুল সংশোধনের জন্য যে ১০০ বছরগুলো ৪০০ দিয়ে বিভাজ্য, অর্থাৎ যে সব শতাব্দী বছরকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকে না, শুধুমাত্র সেইসব শতাব্দী বছরগুলোকেই লিপ ইয়ার হিসেবে ধরা হয়। এই হিসেবে ১৬০০, ২০০০, ২৪০০, ২৮০০ প্রভৃতি শতাব্দী-বছরগুলোকে অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার বলা যাবে, কারণ ৪০০ দিয়ে ভাগ করলে এদের কোনো ভাগশেষ থাকে না। কিন্তু ১৭০০, ১৮০০, ১৯০০ অথবা ২১০০ শতাব্দী বছরগুলোকে লিপ ইয়ার বলা যাবে না কারণ ৪০০ দিয়ে এদের প্রত্যেকটিকে ভাগ করলে ভাগশেষ থেকে যাবে।

Q23. ফেরেল সূত্র : পৃথিবী নিজের অক্ষের ওপর পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে সবসময় আবর্তন করছে, কিন্তু নিজের অভিগত গোলাকৃতির জন্য এই আবর্তনের বেগ পৃথিবীর সর্বত্র সমান নয়। নিরক্ষরেখা থেকে দুই মেরুর দিকে আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কমতে থাকে। এছাড়া ভূ-পৃষ্ঠের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু ওপরের বায়ু থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে।


এই সব কারণের জন্য পৃথিবীর বায়ুপ্রবাহ বা সমুদ্রস্রোতের গতির দিক সরাসরি উত্তর-দক্ষিণে না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁ দিকে সামান্য বেঁকে যায়। বিজ্ঞানী ফেরেল এই গতিবিক্ষেপের নিয়মটি আবিষ্কার করেছিলেন বলে এই সূত্রটি ‘ফেরেল সূত্র’নামে পরিচিত। ফেরেলের সূত্র অনুসারে, পৃথিবী স্থির থাকলে পৃথিবীর নিরক্ষীয় উত্তর দিকে শান্ত বলয়ের দিকে প্রবাহিত যে বায়ু দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ থেকে সোজাসুজি প্রবাহিত হত, তা পৃথিবীর আবর্তনের জন্য খানিকটা বাঁ দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়, যা দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নামে পরিচিত। দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করার পর উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু হিসাবে প্রবাহিত হয়।

Q24. মহাবিষুব : ‘বিষুব’ কথাটির অর্থ ‘সমান দিনরাত্রি' যে দিন পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় দিন-রাত সমান হয়, সেই দিনকে ‘বিষুব’ বলে। ২১শে মার্চ ২৩শে সেপ্টেম্বর দিন দুটিতে পৃথিবীর সমস্ত অক্ষরেখায় দিনরাত্রি সমান হয়, (দিন-রাত = ১২ ঘন্টা)। সূর্য প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবীর মেরুরেখা নিজের কক্ষতলের সঙ্গে 66 `\frac{1}{2}`° কোণ করে অবস্থান করায় ২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর, বছরের এই দুটি বিশেষ দিনে সূর্য নিরক্ষরেখার ঠিক মাথার ওপর থাকে এবং সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখার ওপর ঠিক লম্বভাবে পড়ে।
 এর ফলে এই দুই দিন সূর্য থেকে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুদ্বয় সমান দূরত্বে অবস্থান করে। সেই জন্য ২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর তারিখে পৃথিবীর সমস্ত স্থানে দিন রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয় (অর্থাৎ ১২ ঘন্টা দিন ও ১২ ঘন্টা রাত)। এই দুটি পৃথিবীর আলোকিত অর্ধাংশ পৃথিবীর দুই মেরুকে স্পর্শ করে। এছাড়া এই দুই দিন সূর্য পৃথিবীর ঠিক পূর্ব আকাশে ওঠে এবং পশ্চিম আকাশে অস্ত যায়। ২১শে মার্চ উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল বলে ঐ তারিখটিকে বসন্তকালীন বিষুব বা মহাবিষুব বলা হয়।

Q25. (আহ্নিক) আবর্তন গতি বার্ষিক গতির পার্থক্য?

(আহ্নিক) আবর্তন গতি বার্ষিক গতি
(১) পৃথিবী তার নিজের মেরুদণ্ড বা অক্ষের চারদিকে দিনে একবার নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে, একে পৃথিবীর আবর্তন গতি বলে। (১) নিজের মেরুদণ্ডের ওপর অবিরাম ঘুরতে ঘুরতে, পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট পথে, নির্দিষ্ট দিকে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে) এবং নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারদিকে ঘোরে, একে পৃথিবীর বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলে।
(২) আবর্তন গতির সময় নিজের মেরুদণ্ডের ওপর একবার পাক খেতে পৃথিবীর সময় লাগে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট বা মোটামুটি ২৪ ঘণ্টা বা একদিন, একে ‘সৌর দিন' বলে। (২) বার্ষিক গতির সময়ে একবার সূর্যকে পূর্ণ পরিক্রমণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড বা ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা, একে ‘সৌর বছর’ বলে।
(৩) আবর্তন গতির ফলে পৃথিবীর কোন স্থানে পর্যায়ক্রমে দিন ও রাত্রি এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। (৩) বার্ষিক গতির ফলে বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।
(৪) আবর্তন গতির ফলে পৃথিবীর নদী, হ্রদ বা সমুদ্রে জোয়ার-ভাঁটার সৃষ্টি হয়। (৪) বার্ষিক গতির ফলে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়।
(৫) আবর্তন গতির ফলে পৃথিবীতে বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের নানানরকম গতিবিক্ষেপ ঘটে। (৫) বার্ষিক গতির ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য সেই সব স্থান গুলোতে উত্তাপেরও হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।
(৬) আবর্তন গতির সময় পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করে বলে আপাতদৃষ্টিতে সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে গতিশীল গতি বলে। মনে হয়, এই গতিকে সূর্যের আপাত দৈনিক গতি বলে। (৬) পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে সূর্য বছরের বিভিন্ন সময় পৃথিবীর নিরক্ষরেখা, কর্কটক্রান্তি রেখা এবং মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। পৃথিবীর এই তিনটি রেখার ওপর সূর্যের আপাত গতিশীলতাকে ‘বার্ষিক রবি সঞ্চরণ’ বা ‘রবিমার্গ’ বলে। এর ফলে সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণ ঘটতে দেখা যায়।

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)