History of Harappa Civilization - হরপ্পা সভ্যতা | Write A Short Note in Lothal?

 Explain the History of Harappa Civilization? হরপ্পা সভ্যতা সম্পর্কে সংক্ষেপ লেখো?

Harappa Civilization

      আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর পূর্বে ভারতীয় বাড়িঘর উপমহাদেশে সিন্ধু অববাহিকা অঞ্চল জুড়ে এক সুপ্রাচীন সভ্যতার  উদয় ঘটে, ইতিহাসে যা হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতা নামে পরিচিত। মৌলিকত্বে, অভিনবত্বে ও উৎকর্ষে এই সভ্যতা বিশ্বের যে কোন প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে তুলনীয়। সুপ্রাচীন চৈনিক, মিশরীয় সুমেরীয় সভ্যতার সমসাময়িক ছিল হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতা।

হরপ্পা সভ্যতার আবিষ্কার :  প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৎকালীন অধিকর্তা স্যার জন মার্শালের তত্ত্বাবধানে দয়ারাম সাহানি পাঞ্জাবের মন্টগােমারি জেলায় ইরাবতী (রাভী) নদীর তীরে এক উন্নত নগর সভ্যতা আবিষ্কার করেন (১৯২১ খ্রি.)। পরে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ধুনদের পশ্চিম তীরে সিন্ধুপ্রদেশের লারকানা জেলায় মহেনজোদারাে নামক স্থানে এক উন্নত নগর সভ্যতার সন্ধান পান (১৯২২ খ্রি.)।সিন্ধু নদের তীরে প্রথম এই সভ্যতা আবিষ্কৃত হয় বলে আগে এই সভ্যতাকে সিন্ধু সভ্যতা বলা হত। বর্তমানে সিন্ধুতট পার  করে ভারত ও ভারতের বাইরে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে এই সভ্যতার প্রায় 1500 টি কেন্দ্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এ কারণে এখন আর সিন্ধু সভ্যতা না বলে প্রথম আবিষ্কৃত স্থানের নাম অনুসারে একে হরপ্পা সভ্যতা ও সংস্কৃতি বলা হয়।

আলেকজান্ডার কানিংহাম 1875খ্রিস্টাব্দে হরপ্পা একটি সিলমোহর আবিষ্কার করেছিলেন এছাড়াও হরপ্পা প্রাপ্ত নিদর্শনগুলি মহেঞ্জোদারো অপেক্ষা অনেক বেশি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই হরপ্পা সভ্যতা ও সংস্কৃতির নামটি যুক্তিযুক্ত। 

হরপ্পা সভ্যতার কালনির্ণয় : লিখিত তথ্যের অভাবের জন্য সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার যথাযথ কালনির্ণয় আজও সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন দেশের প্রত্নতত্ত্ববিদ ও নৃতত্ত্ববিদগণ খননকার্য থেকে প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এই সভ্যতার উত্থান ও পতনের কালনির্ণয়ের চেষ্টা করেছেন। স্যার জন মার্শালের মতে হরপ্পা সভ্যতার কালসীমা হল ৩২৫০-২৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। সি. জে. গ্যাডের মতে হরপ্পার সংস্কৃতির বিকাশকাল ছিল ২৩৫০-১৭৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।

 মর্টিমার হুইলারের মতে হরপ্পা সংস্কৃতির কালসীমা ২৫০০১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। ডব্লিউ. এ. ফেয়ারসার্ভিস রেডিয়াে কার্বনপদ্ধতি অনুসরণে সিন্ধু সংস্কৃতির কালসীমা ধার্য করেছেন ২০০০-১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। ও অলচিন দম্পতির মতে, “হরপ্পা সভ্যতার কালসীমা ছিল ২১০০-১৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।

শুধুমাত্র সিন্ধু উপত্যকা জুড়ে নয়, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান, গুজরাত, রাজপূতানা, সৌরাষ্ট্র এবং নর্মদা উপত্যকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে হরপ্পা সভ্যতার বিস্তার ঘটে। পশ্চিমে মাকরান উপকূলের সুতকাজেনদোর থেকে পূর্বে দিল্লির কাছাকাছি আলমগীরপুর এবং উত্তরে জম্মুর নিকটবর্তী মান্ডা থেকে দক্ষিণে গােদাবরী উপত্যকার দাইমাবাদ পর্যন্ত বিশাল অঞ্চলজুড়ে (আধুনিক মত অনুসারে ১২ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গকিমি) হরপ্পা সভ্যতার বিস্তার ঘটে।

হরপ্পার নগর-পরিকল্পনা: সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা ছিল মূলত একটি নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। নগরের রাস্তাঘাটগুলি ছিল উত্তর থেকে দক্ষিণে এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে দিকে বিস্তৃত। পােড়া ইট দিয়ে বাঁধানাে রাস্তাগুলি ছিল ৯ ফুট থেকে ৩৪ ফুট পর্যন্ত চওড়া। রাস্তার দুদিকে বাঁধানাে ফুটপাতে ছিল ল্যাম্পপােস্ট ও ডাস্টবিন। মূল রাস্তার দুদিকে, পােড়া ইটের তৈরি একতল, দ্বিতল, ত্রিতল বসতবাড়ির অস্তিত্ব ছিল। বাড়িগুলির দরজা জানালা রাস্তার দিকে না হয়ে, বাড়ির ভিতরের উঠোনের দিকে লাগানাে হত। নগর সভ্যতার অঙ্গ হিসেবে পথের দু-দিকে ছিল ১-২ ফুট গভীর নর্দমা। ঐতিহাসিক ব্যাসাম বলেছেন যে "বিশ্বের আর কোন  দেশে এরকম জল নিকাশি ব্যবস্থা নিদর্শন পাওয়া যায়নি।" প্রতিটি বাড়ির শৌচাগারের জল এইসব নর্দমা দিয়ে বাইরে পাঠানাে হত। জলাশয়ের নােংরা জল নিকাশ ও তাতে পরিষ্কার জল পূর্ণ করার ব্যবস্থা ছিল।

ঋতুভেদে জল গরম বা ঠান্ডা করার ব্যবস্থাও ছিল। এই জলাধারের তিনদিকে ছিল বারান্দা এবং একদিকে ছিল ছােটো ছােটো কিছু ঘর। ডঃ রামশরণ শৰ্মা (R, S. Sharma)-র মতে, স্নানের পর  পােশাক পরিবর্তনের জন্য ঘরগুলি ব্যবহৃত হত। স্যার মর্টিমার হুইলার মনে করেন যে, ভারতীয় ধর্মীয় জীবনে স্নানের গুরুত্ব অপরিসীম। স্নানাগারটি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হত এবং এর সন্নিহিত ঘরগুলি ছিল পুরােহিতদের বাসস্থান | অপরদিকে ডঃ দামােদর ধমানন্দ কোশাব্বী (D. D. Kosambi) এই কক্ষগুলিকে পতিতাদের বাসস্থান বলে উল্লেখ করেছেন। এরই পাশে ছিল একটি কেন্দ্রীয় শস্যাগার। এর আয়তন ছিল দৈর্ঘ্যে ২০০ ফুট এবং প্রস্থে ১৫০ ফুট। শস্যাগার-সংলগ্ন বিরাট চাতালে শস্য ঝাড়াই-মাড়াই হত। শস্যাগারের পাশেই ছিল শ্রমিকদের বাসস্থান। ডঃ এ. এল. ব্যাসাম এটিকে রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কের সঙ্গে তুলনা করেছেন। স্যার মর্টিমার হুইলার বলেন যে, খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের পূর্বে এ ধরনের বিশাল শস্যাগার পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় নি। এছাড়া ও হরপ্পায় এক কেন্দ্রীভূত পৌরব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল বলে অনুমান করা হয়। নগরবাসীরা পৌরশাসনের নিয়ম মেনে বাড়িঘর তৈরি করত।

হরপ্পা সভ্যতার  সামাজিক জীবন:  প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে হরপ্পা সভ্যতায় চারটি মানবজাতির অস্তিত্ব পাওয়া যায় .......

  • (১) প্রােটো অস্ট্রালয়েড,
  • (২) আলপিরিয়ড
  • (৩) মেডিটারেনিয়ান এবং
  • (৪) মালেয়ড প্রভৃতি জাতির মানুষ। 

হরপ্পা সভ্যতায় বিত্তশালী শাসক গােষ্ঠী, ব্যবসায়ী ও কারিগর শ্রেণি এবং শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষ এই তিন শ্রেণির মানুষের অস্তিত্ব ছিল। শ্রণি বিভক্ত সমাজ হল হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

খাদ্য, পােশাক-পরিচ্ছদ এবং গৃহস্থালি সরঞ্জাম:- এই সভ্যতা নগরকেন্দ্রিক হলেও, তার মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। শহরগুলির সন্নিহিত গ্রামাঞ্চলে কৃষিকার্য চলত। সিন্ধু নদের বন্যায় কৃষিক্ষেত্র ছিল উর্বর। এখানকার অধিবাসীরা গম, যব, বার্লি, ভাত, ফলমূল, তিল, মটর, রাই, খেজুর, বাদাম, শাক-সবজি ও মুরগি, ভেড়া, গরু ও বিভিন্ন পাখির মাংস, দুধ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করত। মাছ এবং ডিম তাদের খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।তাছাড়াও হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা নিরামিষ আমিষ উভয় প্রকার খাদ্য গ্রহণ করত। হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা পােষাক-পরিচ্ছদ হিসাবে প্রধানত সুতি ও পশম ব্যবহার করত। নারী ও পুরুষ উভয়ে লম্বা চুল রাখত এবং উভয়েই অলঙ্কার ব্যবহার করত। মেয়েরা সােনা ও রূপার পােশাক-পরিচ্ছদ ফিতে দিয়ে নানা ধরনের খোঁপা করত। তারা প্রসাধন ও অলঙ্কার সামগ্রী, সুগন্ধি এবং তামা, ব্রোঞ্জ, সােনা, রূপা ও পাথরের তৈরি জিনিস নানা আকারের হার, কানের দুল, চুড়ি, আংটি, মল, কোমরবন্ধ ও মালা ব্যবহার করত এবংমেয়েরা চোখে কাজল, ঠোটে লিপিস্টিক জাতীয় রং ব্যবহার করত ৷ ভ্যানিটি ব্যাগের ব্যবহারও এই যুগের মেয়েদের অজানা ছিল না।

হরপ্পা সভ্যতার অর্থনৈতিক জীবন:  মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ, পশুপালন,ও শিল্প। এছাড়া ব্যবসা, বাণিজ করেও তারা জীবিকা নির্বাহ করত। কৃষিজ ফসলের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল গম, যব, রাই, তিল, তুলা, শাকসঞ্জী এবং ধান। গৃহপালিত পশু হিসাবে গরু, যাঁড়, মহিষ, ভেড়া, কুকুর প্রভৃতি প্রতিপালন করত। তবে হরপ্পা সভ্যতায় ঘোড়ার ব্যবহার পাওয়া যায় না। জীবিকা নির্বাহের জন্য বিভিন্ন শিল্পী, কারিগর সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব হরপ্পা সভ্যতার সমাজে পাওয়া যায়।দের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল, মৃৎশিল্পী, কর্মকার, চর্মকার, স্বর্ণকার, রাজমিস্ত্রী, তন্তুবায় প্রভৃতি। 

 হরপ্পা সভ্যতার অর্থনীতির অপর ভিত্তি হল ব্যবসা-বাণিজ্য। এই যুগে বণিকদের বলা হতপণি'দেশের মধ্যে ও দেশের বাইরে ব্যাবসাবাণিজ্যে লিপ্ত ছিল। আমদানি  দ্রব্যের মধ্যে অন্যতম ছিল সােনা, রুপাে, সিসা, টিন, দামি পাথর,দেবদারু কাঠ ইত্যাদি। রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল তুলাে, সুতিবস্তু, তামা, হাতির দাঁতের তৈরি বিভিন্ন জিনিস।

হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন:- হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা বহু দেব-দেবীতে বিশ্বাসী ছিল ৷ হরপ্পা সভ্যতায় টটেম বা প্রতীক পূজার বহু নিদর্শন পাওয়া গেছে। একটি সিলে বাঘ, হাতি, গন্ডার,মোষ ও হরিণ এই পাঁচটি পশু দ্বারা পরিবৃত তিন মুখ বিশিষ্ট ধ্যানমগ্ন এক যোগী মূর্তির দেখা যায় মূর্তিটির মাথায় দুটি সিংহ আছে। অনেকের ধারণা এটি শিবমূর্তি ৷ ঐতিহাসিক স্যার জন মার্শাল এই যােগী দেবতাকে পশুপতি এবং ঐতিহাসিক ব্যাসাম একে Proto Shiva” “আদি শিববলে অভিহিত করেছেন। এছাড়াও একটি সিলে অর্ধনগ্ন বৃষ মূর্তিকে একটি বাঘের সঙ্গে লড়াই করতে দেখা যাচ্ছে। এই মূর্তিটি হলো সুমেরের গিলগামেশ নামক বীরের সাহায্যকারী অধ-নর অধ-বৃষ আকৃতিবিশিষ্ট ইঅবনি মূর্তির অনুরূপ। এবং সিন্ধু পতাকায় এই মূর্তি সুমেরীয় সভ্যতার সঙ্গে হরপ্পা সভ্যতার ঐক্য প্রমাণ করে এছাড়াও এই মূর্তি পৌরাণিক যুগের হিরণ্যকশিপু নিধনকারী নৃসিংহ মূর্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মনে হয় যে সিন্ধু বেশি এই নর- বৃষ মূর্তিকে দেবতা জ্ঞান হিসেবে পূজা করত।হরপ্পা সভ্যতায় মন্দিরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ আছে তবে কয়েকটি বড় বড় অট্টালিকা কে অনেকে মন্দির বলে মনে করেন। সেগুলি মন্দির হলেও সেখানে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে পুজোর রীতি প্রচলিত ছিল না। তারা পরলোকে বিশ্বাস করত বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যাই হোক, দেব-দেবীর পাশাপাশি হরপ্পাবাসীরাগাছ-পালা, জীব-জন্তু, নদ-নদী, পশু-পাখি, সাপ,যাঁড় প্রভৃতির উপাসনা করত। তাছাড়া স্বস্তিকা চিহ্নের ব্যবহার  তাদের সূর্য পূজার ইঙ্গিত বহন করে।

উপসংহার: সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা আক্ষরিক অর্থেই ছিল এক উন্নত নগর সভ্যতা। মহেনজোদারােয় প্রাপ্ত বিশাল স্নানাগার, শস্যাগার, প্রচুর বড়াে বড়াে বাসগৃহ, উন্নত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা প্রমাণ করে যে হরপ্পাবাসীরা এক উন্নত নাগরিক জীবন যাপন করত। স্যার জন মার্শালের মতে,হরপ্পা সংস্কৃতি সমসাময়িক সুমেরীয় ও মিশরীয় সভ্যতা অপেক্ষা অনেক উন্নত ছিল।



 Q. Write A Short Note in Lothal?

 লোথাল (Lothal) :  

গুজরাটি ভাষায় লোথালশব্দের অর্থ 'মৃতের স্থান'। লোথ’ আর থল = (স্থল) সুয়ের সন্ধি করে লোথাল। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে এসআররাও উৎখননের মাধমে লোথাল আবিষ্কার করেন। এই সময় তুমুল তর্ক-বিতর্কের ঝড় ওঠে।  লোথালে একটি ইস্টক নির্মিত কাঠামো আবিষ্কৃত হয়েছিল যার দুদিকের প্রবেশ ও বহির্গমনে উপযোগী খাল  অবস্থিত ছিল।

 গুজরাটের আমেদাবাদ জেলার সারাগওয়ালা গ্রামের কাছে  অবস্থিত অন্যতম  হরপ্পাবাসী ও লোথালএখান থেকে প্রাক্ হরপ্পাীয় ও হরপ্পার উত্তর দুই পর্যায়ের ধর্মীয় সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়।'লোথালকে এস আর রাও একে বলেছিলেন জাহাজঘাটা। এ কারণেই প্রবল বিতর্ক উপস্থিত হয়েছিল ,  বন্দর ও-নগর লােথালের  এই তিনটি প্রধান অংশ ছিল— ক. (The Citadel) প্রতিরক্ষা দুর্গ  খ. (The Lower Town) নীচে অবস্থিত নগর গ. জাহাজঘাটা (The Dockyard)

           লোথালে উৎখনন চলে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ফেয়ারি মাস থেকে  প্রায় ১৯৬০  খ্রিস্টাব্দের মে মাস পর্যন্ত। এই সময়ই আবিষ্কৃত হয় প্রাচীন নগর ও জাহাজঘাটার অধিকাংশ। এই সময়ে সমাধিস্থলটি ও আবিষ্কৃত হয়। খননের কাজ আবার চালানাে হয় ১৯৬১-৬২ সালে তখন আবিষ্কৃত হয় জাহাজঘাটার সঙ্গে নদীর সংযোগকারী নালা বা খাল টি ৷লোথাল এর অধিবাসীগণ সচ্ছল জীবন যাপন করত ৷ তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় এখানে প্রাপ্ত তামার জিনিসপত্র ও পাথরের পুঁথি থেকে ৷ প্রাপ্ত শিল্পকৃতি মধ্যে আছে ধাতুশিল্পকণ্ঠহারঝিনুকের বালা ৷ এখানে আবিষ্কৃত সমাধিক্ষেত্র পাওয়া গেছে মৃতদেহের সঙ্গে মৃৎশিল্প কিছু অলংকার ও উত্সর্গীকৃত পশুর অস্থি। লোথাল এর যে কাঠামোটি এসআররাও  মতে জাহাজঘাটা ছিল ট্রাপিজ আকার একটি গামলার মতো। এর গভীরতা 2.5 মিটার দৈর্ঘ্য প্রায় 218 মিটার। যারা একে জাহাজঘাটা বলে মানতে রাজি নন তারা এর অন্তর্মুখী নালী গুলির ঢাল নিয়ে সমস্যায় পড়েছেনতাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে এই এলাকার একটা বন্দরের নৌকার জন্য চারদিক বন্ধ এটা নোঙর করার জায়গার প্রয়োজন কেন বা পড়লো ৷ তাদের মতে উল্লেখিত গামলা টি একটি সঞ্চয় জলাধার তবে এই ব্যাখ্যা ও যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য নয় কারণ যেটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তা হলো খাম্বাত উপসাগর এর উচ্চতা জোয়ারের জল যার পরিমাণ ছিল প্রায় 10 মিটার ধরে তার উচ্চতা হত সাংঘাতিক এর ফলে বিপুল জলরাশি ছুটে আসত সংকীর্ণ উপসাগরের মধ্যে এবং পৌঁছে যেত খুব কাছে।ফলে এখানে আসতে নৌকা গুলির বিশেষ সুবিধা ছিল এবং  ঝুঁকিপূন ছিল  মারাত্মক। সেগুন কাঠের চারকোল আলাদাভাবে সনাক্ত করা হয়েছে সেগুন কাঠ হলো জাহাজ নির্মাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ৷ সমুদ্রের জলে অনেকদিন টিকে থাকে এই কাঠ। এক শ্রেণীর লেখক জলাধারটি কে চাষের জলের পুকুর বলে মনে করেছেন ৷ কিন্তু দিলীপ চক্রবর্তী লিখেছেন সম্প্রতি এই ডকে জমা পুরনো মাটি বিশ্লেষণ করে জানা গেছে এখানে জোয়ারের জল ঢুকতো। অধ্যাপক চক্রবর্তী  দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন  'ডক ছাড়া অন্য কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কম' তিনি আরও লিখেছেন এত বড় একটি জায়গা জল আটকানোর জন্য প্রাচীর দিয়ে ঘেরা তে লক্ষ লক্ষ টাকার দরকার হয়েছে ৷ জলের চাপ আটকানোলেভেল ঠিক করে অতিরিক্ত জল বাইরে যাওয়ার পথ ঠিক করা সব মিলিয়ে প্রযুক্তিগত কৌশল লক্ষ্য করার মতো ৷ পৃথিবীতে এরকম ডক পাওয়া যায়নি।

 বন্দর ছাড়াও লোথাল এ আর যা আবিস্কৃত হয়েছে তা হলো বাসগৃহের কাঠামো ,প্রতিরক্ষা দূর্গের মতো একটি স্থান কাদামাটির দিয়ে তৈরি সারি সারি মঞ্চের সমাবেশ ৷ এসআররাও তাকে বলেছেন শিল্পদ্রব্য তৈরীর কারখানা ৷ শেষ অংশে পাওয়া গেছে অগ্নিদগ্ধ 69 টি কাদামাটির ছাদ ৷ এই শিল্প কারখানায় একদিকে রয়েছে সুতো জট পাকানো তাল  মাদুরের বুনন বা কারুকার্য করা বস্ত্র  অন্যদিকে সীলের ছাপ ৷ বোঝা যাচ্ছে প্রাচীনকালে এখানে একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল গুদামজাত বান্ডলের গাটে ৷ 

 শিল্প-কারখানার ছাদের উপর এক ধরনের ছাপ পাওয়া গেছে ৷অথচ স্টিয়াটাইটের এরকম সীল লোথালে একটিও পাওয়া যায়নি ৷ সম্ভবত অন্য কোন স্থান থেকে পণ্য দ্রব্য আমদানি করা হতো ৷ যদি তা হয়তবে এটি ছিল একটি পণ্য বহনকারী স্থান ৷সমুদ্রপথে বাণিজ্যকেন্দ্র এখানকার বাহরিন/ কুয়েতে তৈরি ব্যবহূত যে সীল পাওয়া গেছে তা থেকে এই ধারণার যথেষ্ট পরিচয় ও নিদর্শন পাওয়া যায়।

                  লোথাল থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রত্ন সামগ্রী পাওয়া গেছে যেমন কার্নেলিয়ান ,অ্যাগেটজেসপার ,স্ফটিক ইত্যাদি নানা বর্ণের উপরত্ন স্বর্ণালঙ্কার  ,লিপি ও ছবি যুক্ত সীল এসআররাও প্রাপ্ত বাহরিন এর একটি অসাধারণ সীলের উল্লেখ করেছেন তিনি লিখেছেন-  "A unique seal found at Lothal is Bahrain origin.It is circular in shape and carries the motif of dragon flanked by jumping gazelle on either side." লোথাল থেকে আবিষ্কৃত একটি  আশ্চর্য প্রত্নদ্রব্য হল-(The model of Egyptian Mummy)এবং পোড়ামাটির তৈরি ঘোড়া ৷ প্রসঙ্গত প্রাণীবিদগণ লোথাল এ প্রাপ্ত কিছু হাড়কে ঘোড়ার হাড় বলে শনাক্ত করেছেন।তাছাড়াও সেখানে পাওয়া গেছে পোড়ামাটির জীবজন্তু মূর্তি যা ছিল শিশুদের খেলনা।

যাইহোক পরিশেষে দেখা যায় যেলোথালের সঙ্গে সমুদ্রের সম্পর্ক বিষয়ে একটি তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ ও তা হলো  এখনো (Vanuvati Sikotarimata) ভানুবতী  সিকোটারিমাতা নামে এক সমুদ্র দেবীর অর্চনা প্রচলিত আছে। জনশ্রুতি হিসেবে লোথাল ছিল প্রাচীনকালের একটি বন্দর আর ভানুমতী সিকোটারিমাতা  ছিলেন সমুদ্রের প্রধান দেবী। (The presiding deity of the sea).

          -------------

                                    কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নঃ 

 

  1. প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতা কাকে বলে?

➡️ যে প্রাচীন সভ্যতার কোন লিখিত বিবরণ নেইকেবলমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের উপর ভিত্তি করেই সভ্যতাটি সম্পর্কে জানতে হয় সেই সভ্যতা কে প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতা বলে। 

Exm. সিন্ধু সভ্যতা ও মেহেরগড় সভ্যতা ।

2.            প্রাক হরপ্পা সভ্যতার দুটি প্রধান কেন্দ্রের নাম কি?

➡️ দাবার কোট /কোটদিজি।

3.             সিন্ধু সভ্যতার আরেক নাম হিন্দু সভ্যতা কেন?

➡️ সপ্তসিন্ধু অঞ্চলের অধিবাসীরা ( কে  এবং  কে 

(সিন্ধুকে হিন্দুউচ্চারণ করত  তাই সিন্ধু সভ্যতার আরেক নাম হিন্দু সভ্যতা।

4.            প্রত্নতাত্ত্বিক বলতে কী বােঝাে?

➡️ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছেএবং মাটির নীচে চাপা পড়ে যায়। সেইসব পুরােনাে দিনের কথা জানতে মাটি খুঁড়ে বের করতে হয় ইতিহাসের নানা রকম উপাদান। সেইসব টুকরাে টুকরে উপাদান যারা খুঁজে বার করে আমাদের ইতিহস সম্পর্কে জানতে সাহয্য করে তাদের প্রত্নতাত্ত্বিক বলা হয়।

5.            অশোকের অনুশাসন গুলি মূলত কোন ভাষায় ও কোন হরফে লেখা?

➡️ অশোকের অধিকাংশ অনুশাসন প্রাকৃত ভাষায় এবং ব্রাহ্মী হবে লিখিত হয়েছিল।

6.            মেগাস্থিনিস কে ছিলেন?

➡️ মেগাস্থিনিস ছিলেন ভারতে আগত প্রথম গ্রীক দূত। তিনি সিরিয়ার গ্রিক রাজা সেলুকাসের রাষ্ট্রদূত হয়ে সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বকালে ভারতে এসেছিলেন। তার বিখ্যাত গ্রন্থ হল ইন্ডিকা।

7.            আল-বেরুনীর আসল নাম কি তার রচিত গ্রন্থের নাম লেখ?

➡️ তার আসল নাম হল আবু রিহান। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম হল তহকক্- ই -হিন্দ।

8.            ফা হিয়েন কে ছিলেন তার মধ্যে নাম কি?

➡️ চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েন গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে ভারতে আসেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম হল ফো-কুয়ো-কিং।

9.            সবচেয়ে প্রাচীন সংস্কৃত লেখমালার নাম কি?

➡️ সৌরাষ্ট্রের শক ক্ষত্রপ রুদ্রদামন এর সংস্কৃত ভাষায় রচিত জুনাগড় শিলালেখ সবচেয়ে প্রাচীন। এটি রয়েছে গুজরাতের গিরনারে।

10.          কে কোন গ্রন্থে ভারতবর্ষকে হিমালয়ের দান বলে অভিহিত করেন?

➡️ ঐতিহাসিক কে .এম পান্নিকর। তিনি সার্ভে অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি গ্রন্থে ভারতবর্ষকে হিমালয়ের দান বলেছেন ।

11.          ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এর দুটি গিরিপথ এর নাম কি?

➡️ বোলান/খাইবার।

      12.  ইতিহাসের উপাদান কাকে বলে?

 ➡️ মুদ্রালিপিগয়নাঅস্ত্র-শস্ত্রমূর্তি প্রভৃতি থেকে পুরােনাে দিনের কথা জানতে পারা যায়। এই জিনিসগুলােই পুরােনাে দিনের সাক্ষ্য। তাই এই সমস্ত জিনিসগুলিকে ইতিহাসের উপাদান বলা হয়।

    13. লুসি কে?

➡️ আফ্রিকা মহাদেশের ইথিওপিয়ার হাদার নামে একটা জায়গা আছে। সেখানে ১৯৭৪ সালে একই অস্ট্রালােপিথেকসের কঙ্কালের কিছু অংশ পাওয়া গেছে।কঙ্কালটি প্রায় ২ লক্ষ বছর আগের একটি ছােট্ট মেয়ের। কঙ্কালটির নাম দেওয়া হয়েছিল লুসি।


Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন