Francois Bernier | ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ে? History Of Bernier in Bengali



ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ে (Francois Bernier)

🗆 মুঘল আমলে যেসব ইউরোপীয় পর্যটক ভারতে এসেছিলেন তাদের ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে সমসাময়িক ভারতবর্ষ সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা গেছে। তবে ইউরোপীয় পর্যটকদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন ফরাসি পর্যটক ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ে। তিনি ফ্রান্সের দক্ষিণে আজু প্রদেশে জন্ম গ্রহন করেন 1620-88 খ্রিস্টাব্দে। বার্নিয়ে সপ্তদশ শতকে ফরাসি দার্শনিক গ্যাস্যাদির ছাত্র ছিলেন, তিনি ডাক্তারি পাশ করেছিলেন এবং তার খুব ভ্রমণের নেশা ছিল। ডাক্তারি পাশ করার পর তিনি প্যালেস্টাইন ও সিরিয়া ভ্রমণ করেন। 1658 খ্রিস্টাব্দে তিনি মিশরের কায়রো যান। সেখান থেকে লোহিত সাগরের বন্দর মোখা হয়ে তিনি ভারতের সুরাট বন্দরে এসে উপস্থিত হন। তিনি দেশে ফিরে তার ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখেছেন ফ্রান্স থেকে 16 70 খ্রিস্টাব্দে তার ভয়েজেস প্রকাশিত হয়েছিল। তার ভ্রমণ বৃত্তান্তে এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ হলো ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী মঁসিয়ে কলবেয়ারকে লেখা একটি চিঠি।

এই চিঠির মাধ্যমে তিনি ফ্রান্সের একজন গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকার এর কাছে ভারতবর্ষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার এক স্পষ্ট ছবি তুলে ধরেছেন। তার ভ্রমণ কাহিনী থেকে ভারতের সমাজ রাজনীতি অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতির অনেক কথা জানা যায়। 1658 খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট শাহজাহান ও অসুস্থ হলে তার চার পুত্রের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ঠিক এই সময় বার্নিয়ে দিল্লিতে উপস্থিত হন এবং প্রথমে তিনি ওরঙ্গজেব এর অধীনে

চিকিৎসকের চাকরি নেন। কিছুকাল পরে অভিজাত সভাসদ দানিসমন্দ খানের অধীনে চাকরি নেন। ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে দানিসমন্দ শাহজাহানবাদ নতুন দিল্লির শাসনকর্তা নিযুক্ত হলেও অভিজাত বলে বার্নিয়ের গতিবিধি বেড়েছিল। কারণ সরকারি কাজে তিনি ভারতের বড় বড় শহরগুলিতে গিয়েছিলেন এবং প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। বার্নিয়ে আগ্রার তাজমহলের বর্ণনা দিয়েছেন এবং তাজমহল তাকে মুগ্ধ করেছিল তিনি আগ্রার তাজমহল ও সেকেন্দার আকবরের স্মৃতিসৌধের অসাধারণ প্রশংসা করেছেন। বার্নিয়ের লেখা থেকে বাংলার ফসল খাদ্যাভাস , হস্তশিল্প ইত্যাদি নানা বিষয় সম্পর্কে জানা যায় এছাড়াও বার্নিয়ে কাশ্মীরের ভূস্বর্গ এখানকার লোকেদের বর্ণ ও দেহ সৌষ্ঠব প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন যে কাশ্মীরের শাল ও আসবাবপত্র খুবই উন্নত মানের ছিল। পরবর্তীকালে ফরাসি পর্যটক Count of Modavie বার্নিয়েকে পর্যটকদের যুবরাজ 'Prince of Traveler' বলে অভিহিত করেন ।

Q. Estado-Da-India || এস্টাডো দা ইন্ডিয়া?
➮ ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষ করে সামুদ্রিক বাণিজ্য একসময় আরবীয় বণিকদের প্রাধান্য ছিল। কিন্তু পঞ্চদশ শতকের শেষদিক থেকে সেখানে পর্তুগিজ বণিকদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ বণিকরা গোয়া কে কেন্দ্র করে জেনো সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তা -"Estado-Da-India" নামে পরিচিত। পর্তুগিজ বণিকরা জাভা, সুমাত্রা দ্বীপ থেকে ভারত ও পশ্চিম এশিয়ার বন্দর গুলিতে বাণিজ্যের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ স্থাপনে সক্ষম হন।

ভারত মহাসাগরে বাণিজ্য করতে গেলে যে কোন বণিককে "Estado-Da-India" গভর্নর কাছ থেকে লাইসেন্স কিনে বাণিজ্য করতে হতো। পর্তুগীজদের সামরিক শক্তি কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা "Estado-Da-India" সতেরো শতকে এসে সপ্তদশ শতকের দিকে হ্রাস পেতে থাকে।

সে সময় ইংরেজ , ডাচ ,ফরাসিরা প্রচুর শক্তি প্রয়োগ করে ভারত মহাসাগরে বাণিজ্য করতো। এদিকে পর্তুগিজরা আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপনের বেশি আগ্রহ দেখালে ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে তাদের কে পরাজিত করেন। যার ফলে ভারত মহাসাগরে ওলন্দাজ বণিকদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে এবং তাদের নৌবহরের দাপটে "Estado-Da-India" সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।

Q. Fa-hien (ফা-হিয়েন)
➮ চীনের বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের পর যে সমস্ত বৌদ্ধ পর্যটকরা ভারতবর্ষে আসেন তাদের পথপ্রদর্শক ছিলেন গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে খ্যাতনামা আগত চিনা তীর্থযাত্রী ফা-হিয়েন (জন্ম ৩৩৭AD)। তিনি ভারতে বুদ্ধদেবের স্মৃতিবিজাড়িত স্থানগুলো ভ্রমণ করেন। তার ভ্রমণকাহিনী 'ফো-কুয়ো-কিং' নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।এই গ্রন্থটি তৎকালীন ভারতের ইতিহাস রচনায় একটি মূল্যবান দলিল ছিল।

জগতের সকল বৌদ্ধর কাছে ভারত বর্ষ একটি পূর্ণ দেশ।এতে তীর্থ পরিক্রমা এবং বিনয় পিটক মূল গ্রন্থটি সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে ফা-হিয়েন ৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে যাত্রা করেন। ভারতবর্ষে তিনি প্রায় দশ বছর ধরে বাস করেন এবং নানান মঠে মান ও সকল তীর্থ দর্শন করেন। কথিত আছে যে ফা-হিয়েন পাঁচজন সাথীকে নিয়ে যাত্রা আরম্ভ করেছিলেন। তাদের মধ্যে দুজনের পথেই মৃত্যু ঘটে দুইজন ফিরে যান আর একজন ভারতে বসবাস করতে থাকেন।

ফা-হিয়েন তার বইয়ের কোথাও রাজার নাম উল্লেখ করেননি কিন্তু তিনি যে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শাসনকালে এদেশে এসেছেন তার সাল তারিখ হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। স্থলপথে ভারতে ফেরার সময় তাম্রলিপি থেকে বিভিন্ন দ্বীপে ঘুরে বেড়ান যা দেখে মনে হয় তিনি তিন বছর পাটলিপুত্রে দুই বছর তাম্রলিপ্তি তে অতিবাহিত ছিলেন। তদানীন্তন ভারতের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশংসা করে ফা-হিয়েন বলেন যে তখন রাজ্যের অবস্থা ছিল খুব উন্নত। জিনিসপত্র সস্তা হওয়ায় অভাব এর হাত থেকে সাধারণ লোক কষ্ট পেত না। তখনকার সময় চুরি ছিল না পথে সোনা পড়ে থাকলেও তা ফিরে পাওয়া যেত।আর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল সে সময় খুবই কঠোর তবে ফা-হিয়েন বলেছেন শুধু রাজদ্রোহের শাস্তি ছিল ডান হাত কেটে দেওয়া। দক্ষিণ বিহারের বড় বড় শহর গুলির ছিল মধ্যে অন্যতম হল পাটলিপুত্র। সে সময় অশোক যে প্রসাদ নির্মাণ করেন তা ধ্বংস হয়নি এ দেখে ফা-হিয়েন বিস্মিত হন আর বলেন এটা মানুষ নির্মাণ করতে পারেনা দানবের কাজ।পাটলিপুত্রের এক বিরাট উৎসব হত বছরের মধ্যে সে সময় দেবী মূর্তি কে রথে বসিয়ে শোভাযাত্রা করে শহরের পথ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। মথুরা নগরী দেখে ফা-হিয়েন মুগ্ধ হন। ফা-হিয়েন পর্যটন কালে বুদ্ধগয়া ছিল প্রায় জনশূন্য।

বুদ্ধদেবের মহাপরি নির্বাণ স্থান কুশীনগর মাঠ ও জনসংখ্যা ছিল খুবই কম। পাটলিপুত্রের বিনয় পিটক এর পুথি বহু চেষ্টার পর তিনি সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। ভুজপত্র, তালপাতা ইত্যাদির উপর লেখা পুথির সংখ্যা ছিল কম সে সময়ে পুঁথি বেশিদিন টিকত না ,পরবর্তীকালে ফা হিয়েন এর বর্ণনায় ধর্মভাব অবশ্য আছে বলে মাঝে মাঝে সহজ ভাষায় তার মনের আবেগ প্রকাশ পেয়েছে - "সিংহলের বুদ্ধমূর্তির কাছে উৎসর্গ করা সাদা রেশমের একটি চীনা ছাতা দেখে হঠাৎ বহুদিন ছেড়ে আসা স্বদেশের মায়া থাকে আবির্ভূত করেছিল।" ফা-হিয়েন দেশে ফেরার সময় সমুদ্রে ভীষণ ঝড় ওঠে তখন ভারী জিনিসপত্র জাহাজ থেকে ফেলে দেওয়া হচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে ফা-হিয়েন আশঙ্কা করে তিনি বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানান আর সমুদ্র শান্ত হয়ে আসে এর ফলশ্রুতিতে পরিপ্রেক্ষিতে তার বইটি মনমুগ্ধকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলীর পরিচয় বহন করে।

Q. মাৎস্যন্যায় (History of Matsyanyaya)
Or, বাংলায় মাৎস্যন্যায় বলতে কী বােঝ?

➮ শশাঙ্কের মৃত্যুর পর প্রায় একশাে বছর (৬৫০-৭৫০ খ্রি.) বাংলায় যে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক অনাচার দেখা দেয়, সেই অবস্থাকে মাৎস্যন্যায় বলা হয়। মাৎস্যন্যায়’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায় বিখ্যাত তিব্বতি ইতিহাসবিদ লামা তারানাথের বর্ণনায় এবং কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে। এর পাশাপাশি বৌদ্ধগ্রন্থ “আর্য Manjushree মূলকল্প" থেকে এই সময়ের বাংলার রাজাদের দুর্দশার কথা জানা যায়। ধর্মপালের খালিমপুর তাম্রশাসনে এই অবস্থার কথা রয়েছে।

মাৎস্যন্যায়’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হিসেবে মাছের মতাে আচরণকে বােঝায়। পুকুরের বড়াে মাছ যেমন সুযােগ পেলে ছােটো মাছকে গিলে খায়, ঠিক তেমনি শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলায় শক্তিশালী বিত্তবান পুরুষেরা দুর্বল ও অসহায়দের সর্বস্ব আত্মসাৎ করত—এই অবস্থাই হল প্রকৃতরূপে মাৎস্যন্যায়। শক্তিশালী রাজতন্ত্রের পতনের পর গৃহবিবাদ,রাজবংশের দ্রুত পরিবর্তন ও ছােটো ছােটো প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি ছিল বাংলার সমকালীন চিত্র। রাজনৈতিক অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলার সুযােগ নিয়ে বৈদেশিক রাজন্যবর্গ এই সময় বারবার বাংলা দেশ আক্রমণ করতে থাকেন। মাৎস্যন্যায়ের মতাে অরাজক অবস্থা থেকে বাঁচবার জন্য বাংলার গণ্যমান্য মানুষজন প্রকৃতিপুঞ্জ প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী সামন্তরাজ গােপালকে বাংলার সিংহাসনে বসান। গােপাল কঠোর হাতে মাৎস্যন্যায়ের অবসান ঘটান। মাৎস্যন্যায়ের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে জোর যার-মুলুক-তার’, এই অবস্থার অবসান হয়, সমাজে শান্তি ফিরে আসে।
                                                      ____________

 মনসবদার কারা ছিলেন?
         অথবাঃ 
মনসবদারী প্রথা কি?

🗆 সুলতানী আমলে প্রবর্তিত জায়গীব প্রথার নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করে আকবর সামরিক ও বে - সামরিক প্রশাসনের ক্ষেত্রে এক নতুন পদ - বিন্যাস, মনসব প্রথা, প্রবর্তন করেছিলেন। বস্তুতঃ মনসব কথাটির অর্থই হল ‘পদমর্যাদা’। প্রধানত সামরিক প্রয়ােজনে গড়ে উঠলেও সামরিক ও বে- সামরিক উভয় কাজের ক্ষেত্রেই মনসবদার পদটি প্রযুক্ত ছিল।

মনসব প্রথার মধ্য দিয়ে আকবর রাজকীয় সেবার ( Imperial Service) ঐতিহ্যগঠন করতে চেয়েছিলেন। মনসবদাররা নগদ অর্থে বেতন পেত এবং সেই বেতন থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য ও ঘােড়া রাখতে বাধ্য হত। মনসবদাররা ৩৩টি স্তরে বিভক্ত ছিল। সর্বনিম্ন মনসবদারের পদমর্যাদা ছিল ২০, অর্থাৎ তার অধীনে ২০ জন সৈন্য থাকত । সর্বোচ্চ মনসবদার ছিলেন দশ হাজারী। সাধারণত ৬ হাজার এবং তার চেয়ে উচ্চ মনসবদারের পদগুলি রাজপরিবারের লােকদের জন্য সংরক্ষিত থাকত। তবে, কখনাে কখনাে এর ব্যতিক্রমও দেখা গিয়েছে। মনসবদাররা নিজ নিজ কাজের জন্য বাদশাহের কাছে দায়বদ্ধ থাকত। এই পদে বংশানুক্রমিক অধিকার স্বীকৃত ছিল না।


সুল হি-কুল সম্পর্কে একটি টাকা লেখ?
           অথবা,
Sulh-i kul-এর ধারণা ব্যাখ্যা কর?

🗆 সুল-ই-কুল  What does SULH-I Kul mean? এর একেশ্বরবাদী ধর্মমত ঘােষণা (১৫৮১ খ্রীঃ) আকবরের ধর্মভাবনার চরম ফলশ্রুতি। এই ধর্মমত কোন বিশেষ ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, আবার কোন বিশেষ ধর্মের সমর্থনে প্রচারিত হয়নি। ইবাদৎখানায় বিভিন্ন ধর্মের প্রখ্যাত পণ্ডিতদের আলােচনা ও বিতর্ক শুনে আকবরের মনে এই ধারণাই হয়েছিল যে কোন ধর্মই এককভাবে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি গড়ে তােলার পক্ষে যথেষ্ট নয়। এজন্যই স্বভাব -উদার আকবর সকল ধর্মের শ্রেষ্ঠ
দিকগুলি গ্রহণ করে সুল-ই-কুল নামক সমন্বয়বাদী ধর্মের প্রবর্তন করেছিলেন।

বদাউনীর মতে এই ধর্মানুরাগীদের কাছ থেকে সম্রাট চার প্রকার আনুগত্য দাবী করতেন। সম্রাটের কাছে তাদের জীবন, সম্পত্তি সম্মান ও ধর্ম বিসর্জন দেবার প্রতিশ্রুতি দিতে হত। সম্রাটের অনুমতি ব্যতীত
এই ধর্ম কেউ গ্রহণ করতে পারত না। অর্থাৎ, এর অন্তর্ভুক্তি অবাধ ছিল?


➽ ‘সুবাদার’ ও ‘দেওয়ান’ কি?

🗆 আকবরের সাম্রাজ্য ১৫টি সুবা বা প্রদেশে বিভক্ত ছিল। সুবার প্রধান দুজন কর্মচারি ছিলেন সুবাদার’ ও ‘দেওয়ান’। সুবদার ছিলেন প্রদেশে সম্রাটের প্রতিনিধি এবং তার প্রধান কাজ ছিল প্রদেশের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করা। প্রাদেশিক সেনা ও প্রশাসন তাঁরই নিয়ন্ত্রণে ছিল কিন্তু রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা তার ছিল না। রাজস্ব বিভাগের প্রধান ছিলেন দেওয়ান এবং তিনি সুবাদারের অধীনস্থ ছিলেন না। তাঁর সামরিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ছিল না। সুবার রাজস্ব আদায় করে তিনি সম্রাটের কোষাগারে জমা দিতেন।


➽ বর্গী এবং শিলাদারের মধ্যে পার্থক্য?

🗆 মারাঠা জাতির স্রষ্টা ও সংগঠক ছিলেন ছত্রপতি শিবাজী। তার সামরিক বাহিনীতে অশ্বারােহী বাহিনী ছিল। এই অশ্বারােহী বাহিনী আবার দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। যারা সরকারের বেতনভুক্ত ছিল এবং সরকারের কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র পেত তাদের বলা হত “বৰ্গী’, আর শিলাদাররা যুদ্ধের সময়ে সরকারের কাছ থেকে বেতন পেত, কিন্তু তাদের নিজেদের যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করতে হত।


➽ জিজিয়া কর? ( jizya tax )?

🗆 ঔরঙ্গজেবের ধর্মনীতির চরম পদক্ষেপ হিন্দুদের উপর জিজিয়া (Jizya or jizyah) কর ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয়। ঔরঙ্গজেব নতুন করে এই কর ধার্য করেন। তাই সমালােচকরা মনে করেন, তার এই নতুনত্বের মূলেই রয়েছে অত্যুচ্চ ধর্মান্ধতা। মুসলমান শাসনাধীনে ব্যক্তিগত জীবন এবং সম্পত্তির নিরাপত্তার জন্যই অ-মুসলমানদের উপর এই কর প্রাক্ ঔরঙ্গজেবের আমলেই প্রচলিত হয়েছিল। ইসলামী রীতি অনুযায়ী সামরিক দায়িত্ব পালন না করার পরিবর্তে ‘ জিম্মীদের উপর এই কর আরােপিত হয়েছিল। কেউ কেউ মনে করেন, স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করার জন্যই জিজিয়া কর ধার্য করা হয়েছিল। তাই জিম্মীদের ধর্মাচার্য এবং পুরােহিতগণ এই কর থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। ঔরঙ্গজেব কর্তৃক এই কর আরােপের কারণ হিসাবে মুসলমান শাস্ত্রো ব্যক্তিদের-ও কিছুটা দায়ী করা যায়। জিজিয়া কর ধার্য্য
করে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের মনে অযথা ক্ষোভের সঞ্চার ঘটিয়ে ছিলেন।

  জিন্দা পীর কি?
         অথবা,
 জিন্দা পীর’ নামে কে জনপ্রিয় ছিলেন?

🗆 ১৬৫৮ - ১৬৮১ সালে ঔরঙ্গজেব কিছুকাল উত্তর ভারতে ছিলেন। তখন তিনি ছিলেন
একজন নিষ্ঠাবান সুন্নী মুসলমান। ইসলামের মূলমন্ত্র ‘কলেমার’ যাতে কোন অসম্মান না হয়।
তার জন্য মুদ্রায় কলেমা খােদাই করা তিনি এই সময়ে নিষিদ্ধ করেন। এছাড়া ইসলামীর অনুশাসন এইসময়ে তিনি বিশেষভাবে প্রচলন করেন। ১৮৬১-র পর দক্ষিণ ভারতে থাকাকালীন তিনি ফকীর বা সন্তের মতাে জীবনযাপন করতেন, তাই লােকে তাকে ‘জীন্দাপীর’ বলত

➽  জাবতি প্রথা?
         অথবা,
টোডরমলের ‘জাবতি ব্যবস্থা সম্পর্কে যা জান লেখ?

🗆 টোডরমল ছিলেন অসাধারণ সংগঠনী প্রতিভার অধিকারী। বিভিন্ন বিষয়ে তার ছিল অনন্য সাধারণ জ্ঞান তাই মহামতি আকবর বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে পরামর্শ করতেন। সাম্রাজ্য পরিচালনায় তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জমি সম্পর্কিত এক বিশেষ বন্দোবস্তের প্রচলন করেছিলেন, যা ‘জাবতি’ ব্যবস্থা নামে খ্যাত। এই ব্যবস্থা জমি জরিপ ও জমির পরিমান নির্ধারণ, জমির উৎপাদনের উপর জমির মান নির্ধারণ, ভূমি রাজস্বের হার নির্ণয় প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল।

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন