১। ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ যে নিষ্কাম কর্মযােগের কথা বলেছেন তার বিবরণ দাও?
অথবা
“কর্মযােগ’ অংশটির সারমর্ম লেখাে?
ロ মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের অক্ষয় সারস্বতকৃতি অমরকীর্তি মহাকাব্য মহাভারতের ভীষ্মপর্বের ২৫ থেকে ৪২ – এই অষ্টাদশ অধ্যায় শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা’ নামে পরিচিত।
‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা' হল শ্ৰীকৃষ্ণ মুখনিঃসৃত বাণী। তাঁর মতে, কমই ধর্ম, কমেই মুক্তি। মােক্ষলাভের একটি পথ হল কর্ম । কোনো ব্যক্তি কর্ম না-করে থাকতে পারে না। মানুষ জন্মালেই তার মধ্যে প্রকৃতি থেকে জাত তিনটি গুণ যেমন – সত্ত্ব/সাত্ত্বিক (সৎ গুণ), রজঃ (রাজসিক। সুখ ও প্রভুত্বের আকাক্ষা), তমঃ (তামসিক – আলস্য, নিদ্রা মূখর্তা) থেকেই রাগ-দ্বেষাদির উৎপত্তি হয়। আর এই রাগ-দ্বেষটি থেকেই কর্মপ্রেরণার উদ্ভব। কর্ম যদি করতেই হয় তবে এমন কর্ম করতে হবে, যাতে বন্ধনের কারণ না-হয়ে মােক্ষের কারণ হয়।
সাধারণত নিয়ত কর্ম হল শাস্ত্রবিহিত কর্তব্যকর্ম বর্ণাশ্রমােচিত স্বধর্ম পালন। কর্মশূন্যতা অপেক্ষা নিয়ত কর্ম শ্রেষ্ঠ। কর্ম না-করলে মানুষের দেহযাত্রাও নির্বাহ হতে পারে না। মােক্ষপ্রাপ্তি লােকরক্ষা, সৃষ্টি রক্ষা (লােক সংগ্রহ)-র জন্য। নিষ্কাম কর্মের মাহাত্ম আরও বড়াে করে দেখানাের জন্য বলেন – ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ চাওয়ার ও পাওয়ার কিছু না-থাকলেও তিনি দিবারাত্র কর্ম করে চলেছেন (বর্ত এব চ কর্মণি)। স্বধর্ম অনুসারে কর্ম করলে শ্রেয়ের দিকে অগ্রসর হতে পারে। তার বিপরীত দিকে গেলে তার আত্মার স্বাভাবিক বিকাশ বিপর্যস্ত হয়।
২া “স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ।” – তাৎপর্য বর্ণনা করো?
ロ মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের অক্ষয় সারস্বতকৃতি অমরকীর্তি মহাকাব্য মহাভারতের ভীষ্মপর্বের ২৫ থেকে ৪২ – এই অষ্টাদশ অধ্যায় শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা’ নামে পরিচিত।
শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায় হলাে কর্মযােগ। কর্মযােগ সম্পর্কে বহু মূল্যবান উপদেশ এখানে সখা অর্জুনের উদ্দেশে উচ্চারণ করেছেন ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ - নিজ ধর্ম পালন করার মাধ্যমে মৃত্যু হলেও তা শ্রেয় কিন্তু অন্যের ধর্ম অনুসরণ করা বিপজ্জনক। যুদ্ধ পরিত্যাগ করে অর্জুন যদি সংগীত, শিল্প প্রভৃতি কর্মে সময় অতিবাহিত করেন সেক্ষেত্রেও তিনি কর্মযােগ থেকে বিচ্যুত হবেন না। তাই এখানে কোনাে আপত্তি ওঠা অনর্থক। কিন্তু অর্জুন যুদ্ধ না করলে শ্ৰীকৃষ্ণ ধর্ম সংস্থাপন করতে পারবেন না। তাই অর্জুনকে যুদ্ধে মনােযােগী করার জন্য শ্ৰীকৃষ্ণ সচেষ্ট হলেন। তিনি বললেন, নিজের ধর্ম পালনে হাজারটা দোষ করলেও তা উত্তমরূপে পালিত, পরধর্ম অপেক্ষা দোষণীয় নয়। নিজ ধর্ম পালন করতে গিয়ে মৃত্যু হলেও শ্রেয়, তবু পরধর্ম বিপজ্জনক। শ্ৰীকৃষ্ণ ভালােভাবেই জানেন, পরের ধর্ম প্রথম থেকেই মনে দ্বিধার মনােভাব তৈরি করে। সেই কারণে তার সঙ্গে কখনােই একাত্ম হওয়া যায় না। পরের ধর্ম অনুসরণ করলে পদে পদে এতে মনের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়। পরধর্ম আসলে কৃত্রিম ভয়। সেটা মেনে চলার মাধ্যমে জীবনে পরম সার্থকতা আসে না। ফলে অর্জুন ক্ষত্রিয় হয়ে তার ক্ষাত্রধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে যেন পরধর্ম না গ্রহণ করেন। শ্ৰীকৃষ্ণ সাবধানবাণী, অর্জুন যদি স্বধর্মচ্যুত হন সেক্ষেত্রে বিপদ আরাে বাড়বে।
৩। মিথ্যাচার কাকে বলে বিস্তারিত লেখো?
ロ গীতার কর্মযােগে মিথ্যাচার বলতে ব্যর্থ বা নিস্ফল আচরণকে বােঝানাে হয়েছে। যিনি বাহ্যিক ইন্দ্রিয়গুলিকে কর্মহীন রেখে মনে মনে ইন্দ্রিয় দ্বারা উপভােগ্য নানা বিষয়ে চিন্তা করেন তিনি হলেন মিথ্যাচারী। সাংখ্যদর্শন অনুসারে, কর্মসন্ন্যাসই মােক্ষলাভের আদর্শ পথ। কাজেই যেহেতু জীবনের বন্ধন রচিত হয়, তাই কর্মত্যাগ করলেই মুক্তি পাওয়া যায়। যদিও শ্ৰীকৃষ্ণ বলেছেন, কর্মেন্দ্রিয়কে নিষ্ক্রিয় করলেই কর্মকে ত্যাগ সম্ভব হয় না। কারণ, অন্তরিন্দ্রিয় সর্বদা ক্রিয়াশীল। তাই মনকে সচল রেখে হাত-পা নিষ্ক্রিয় করলে লাভ হয় না। কর্মযােগ অনুসারে, এ ধরনের নিষ্ফল আচরণ এক অর্থে মিথ্যাচার।
অর্থাৎ কর্মেন্দ্রিয়র কর্মকে পরিত্যাগের মাধ্যমে কোনাে ফল পাওয়া যায় না। যে ব্যক্তি এধরনের চেষ্টা করেন, তিনি। মিথ্যাচারী। এক অর্থে বলতে গেলে, বাহ্যিক কর্ম ত্যাগের অর্থ মিথ্যাচার। তিনি আসলে ব্যর্থচারী। গীতায় বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি বাইরে সংযত অথচ ভিতরে মনে মনে রূপ-রসাদি বাহ্যিক আনন্দের বিষয়গুলি ভােগ করে সে আসলে ভণ্ড। আর যিনি কিন্তু মনের দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করে অনাসক্তভাবে কর্মেন্দ্রিয় দ্বারা কর্মযােগ করেন, তিনি মিথ্যাচারীর থেকে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।
অধ্যায় ➺ [ নাট্যাংশ ]
১। বাসন্তিকস্বপ্নম’ নাট্যাংশের চরিত্রগুলির পরিচয় দাও?
ロ সংস্কৃত পণ্ডিত আর. কৃষ্ণমাচার্য বিরচিত ‘বাসন্তিকস্বপ্ন’ নাটকে প্রথম অঙ্কের অন্তর্গত । নির্বাচিত পাঠাংশে আমরা মঞ্চে পাঁচটি চরিত্র পাই, সেগুলি হল – (১) রাজা ইন্দ্রবর্মা
(২) কনকলেখা
(৩) প্রমােদ
(৪) ইন্দুশর্মা
(৫) কৌমুদী
(১) রাজা ইন্দ্রবর্মা : অবন্তীরাজ ইন্দ্রবর্মা একজন প্রেমিক পুরুষ। কনকলেখার সঙ্গে বিয়ে হতে মাত্র চারদিন বাকি। রাজা হিসাবে সকলকে সমান চোখে দেখেন। নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবােধ অসীম। তিনি কনকলেখার কথাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রজাবৎসল রাজা শত ব্যস্ততার মধ্যেও বৃদ্ধ ইন্দুশর্মার প্রার্থনায় গুরুত্ব দেন। সহমর্মী রাজা কৌমুদীর কথা মন দিয়ে শুনেছেন, আবার সুশাসক হয়ে পিতার অবাধ্য কৌমুদীকে কঠোর শাস্তির ইঙ্গিত করেন। সংগীতের প্রতি অনুরাগ অসীম।
(২) কনকলেখা : কনকলেখা যথার্থ গৃহিণীর মতাে ঘরের মঙ্গল চেয়ে রাজাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। আনন্দ প্রিয়া কনকলেখা উৎসবে রাজাকে সাহায্য করেন। তার মধ্যে রাজকৰ্তব্য জ্ঞান অসীম। তার মতাে সংযত আদর্শ প্রেমিকা সমাজে ব্যাপক সাফল্যের অবদান রাখে।
(৩) প্রমােদ : রাজা ইন্দ্রবর্মার যােগ্য অনুচর প্রমােদ রাজা দেশ পালনে তৎপর হলেও প্রভুকে সম্মান করতে ভুলে যায় না।
(৪) ইন্দুশর্মা : কৌমুদীর বৃদ্ধ ব্রাত্মণ পিতা ইন্দুশর্মা অত্যন্ত রাগি এবং মেয়ের আচরণে ক্রুদ্ধ ও শােকাহত। কিন্তু রাজাকে সম্মান করতে ভোলেননি । ইন্দুশর্মা আদর্শ পিতা হলেও স্নেহশীলা কন্যার প্রতি নিষ্ঠুরতা মানবিকতা বিরােধী।
(৫) কৌমুদী : অল্প বয়সি কৌমুদী তার প্রেমিক বসন্তকে গভীর ভালােবাসে। প্রেমের প্রতি সে একনিষ্ঠ। রাজার ভয়ে নিজের পছন্দ থেকে সরে আসেনি। এতে তার সাহসিকতা বা নির্ভীকতার পরিচয় পাই। তার মধ্যে শালীনতা বা শিষ্টাচারবােধ যথেষ্ট ছিল। আদর্শ প্রেমিকার মতাে প্রাণ বিসর্জন দিতে বদ্ধপরিকর ছিল সে।
২া ‘বাসন্তিকস্বপ্ন’ অবলম্বনে রাজা ইন্দ্রবর্মা কনকলেখার কথােপকথন সংক্ষেপে আলােচনা করাে? অথবা
“তৎ কিমিতি দূয়তে মহারাজেন” - প্রসঙ্গ উল্লেখ করাে?
ロ আর. কৃষ্ণমাচার্য বিরচিত ‘বাসন্তিকস্বপ্নম্ (১৮৯২)-এর প্রথমাঙ্কে রাজা ইন্দ্রবর্মা ও তার প্রণয়ী কনকলেখার কথােপকথন পাই। কথােপকথন রাজা ইন্দ্রবর্মার সঙ্গে কনকলেখার আর চারদিন পরে বিবাহ সম্পন্ন হবে। তারা দুজনে এ বিষয়ে কথাবার্তা বলছেন। রাজা ইন্দ্রবর্মার আর ধৈর্য ধরে না তিনি খুব দুঃখিত। বসন্তের কোকিলের ডাক শুনতে আর বেশি সময় নেই, চাঁদ ও রাজার মনে প্রভাব বিস্তার করছে নির্দয়ের মতাে “শশাঙ্কস্কৃতিনির্ঘণঃ।” মাঝখানের এই চারদিন যেন কৃয়পক্ষের ক্ষয় হওয়া চাঁদের মতাে অতি ধীরে বিদায় নিচ্ছে।
রাজা এই চারটি দিন কীভাবে কাটাবেন ভেবে পাচ্ছেন না। কারণ তার কাছে একদণ্ড কাল যেন বহু যুগ বলে মনে হচ্ছে। তখন কনকলেখা রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন যে, চারটি দিন প্রায় চারটি রাত্রি হয়ে ক্ষণকালের মধ্যে দেখতে দেখতে শীঘ্রই কেটে যাবে। যে রাত্রিতে দুজনের পরিণয় মহােৎসব হবে তা শীঘ্র এসে যাবে। অতএব তার কষ্ট পাওয়ার প্রয়ােজন নেই। এইভাবে রাজা ইন্দ্রবর্মা ও কথােপকথনের মাধ্যমে নাট্যকার বসন্ত প্রকৃতির প্রভাব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।
৩। ইন্দ্রবর্মা ও কৌমুদীর কথােপকথন সংক্ষেপে লেখাে?
ロ কৃষ্ণমাচার্য রচিত ‘বাসন্তিকস্বপ্নম’ নামক নাট্যাংশে রাজা ইন্দ্রবর্মা বিরােধ মেটাতে কৌমুদীকে বােঝানাের চেষ্টা করেন ফলে পরস্পরের মধ্যে কথােপকথন যুক্তিতর্কের জায়গায় পৌছােয়।
ইন্দ্রবর্মা ও কৌমুদীর কথােপকথন :
- প্রথমতঃ রাজা ইন্দ্রবর্মা প্রথমে কৌমুদীকে ‘বালিকা’ বলে স্নেহযুক্ত সম্বােধন করে বলেন যে, পিতার ইচ্ছার বিরােধিতা করা আস কৌমুদীর উচিত হয়নি। কৌমুদীর পতি/বর মকরন্দ যাকে পাই। তার পিতা পছন্দ করেছে সে যেমন তরুণ তেমনই রমণীয়। ”কৌমুদী তখন রাজাকে ভয় না-পেয়ে অতি সাহসের সঙ্গে বলে যে, তার পছন্দের প্রার্থীও মকরন্দের মতাে বয়সে তরুণ ও রমণীয়।
- দ্বিতীয়তঃ বসন্ত প্রিয়দর্শন হলেও পিতারপক্ষপাতী হয়ে বলা যায় মকরন্দ বসন্তের চেয়ে অপেক্ষাকৃত প্রিয় হওয়া উচিত। রাজার কথার উত্তরে কৌমুদী বলে যে তার পিতা ইন্দুশর্মা যদি কৌমুদীর চোখ দিয়ে দেখতেন তবে বসন্তকেই শ্রেষ্ঠ বলে মনে হত। তৃতীয়তঃ রাজা পরেও কৌমুদীকে পিতার পছন্দের পাত্রকে বিবেচনা করতে বললে কৌমুদী রাজার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলে যে তার সিদ্ধান্ত ভুল হলেও কিছু করার নেই – “বিস্মৃতং চ ময়া কিং কর্তব্য।” তখন রাজা কৌমুদীকে ‘ভদ্রে’ বলে সম্বােধন করে তার প্রশংসা করে বলেন কৌমুদী দেখতে সুন্দর, বয়সও অল্প। যদি পিতার আদেশ না-মানে তবে দেশাচার লঙ্ঘনের দায়ে মৃত্যু অনিবার্য অথবা যাবজ্জীবন বিবাহ না-করে থাকতে হবে। কৌমুদীর দৃঢ়সংকল্প যে বসন্তের জন্য সে রাজার দুইপ্রকারের শাস্তি মাথা পেতে নেবে।
৪। ইন্দ্রবর্মা চরিত্র সম্পর্কে লেখো ?
ロ সংস্কৃত পণ্ডিত কৃষ্ণমাচার্য বিরচিত ‘বাসস্তিকায়াম নাট্যাংশে রাজা ইন্দ্রবর্মার কথোপকথনের মাধ্যমে তার চরিত্রের কিছু পরিচয় পাই। প্রেমিক নাট্যাংশের প্রথমেই প্রেমিক রাজা ইন্দ্রবর্মার উল্লেখ পাই। তিনি বসন্তকালে কনকলেখাকে বিবাহ করতে চান। শােনা যায় তার আরও প্রেমিকা ছিল। এই প্রেমিক পুরুষ বসন্তের কোকিলের কূজনে মদন পীড়নে আক্রান্ত। তাই বিয়ের চারদিনও তার কাছে বহু যুগ বলে মনে হয়েছে। সমদর্শী রাজা ইন্দ্রবর্মা পরিণয় মহােৎসবের আনন্দ সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান। প্রজাদের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার উদারতা দেখিয়েছেন তিনি।
নারী মর্যাদার প্রতীক রাজা ইন্দ্রবর্মা নারীকে মর্যাদা দিতে সচেষ্ট থাকেন। তাই পরিণয় ব্যাপারে কনকলেখার সঙ্গে আলােচনা করেন, তার কথাকে গুরুত্ব দেন। প্রজানুরঞ্জক রাজা ইন্দ্রবর্মা বিশেষ কাজে ব্যস্ত থেকেও বৃদ্ধ ইন্দুশর্মার প্রার্থনা মনােযােগ দিয়ে শুনে তার সমাধানের জন্য সময় দেন। দূরদর্শী দূরদর্শী ইন্দ্রবর্মা বৃদ্ধ প্রজা ইন্দুশর্মাকে নমস্কার করে বৃদ্ধের আগমনের গুরুত্ব অনুভব করে বলেন - “কথং কার্যাতুর ইব দৃশ্যতে ভবান্।” সমব্যথী রাজা ইন্দ্রবর্মা নিজে প্রেমিক হওয়ার কারণে কৌমুদীর প্রতি সমব্যথী হয়ে তাকে ‘বালিকা’ সম্বােধন করে স্নেহের পরশে বােঝানাের চেষ্টা করেন এবং কৌমুদীর সব কথা শােনেন। দেশশাসক কৌমুদীর প্রতি সমব্যথী হলেও দেশাচার রক্ষায় তিনি কঠোর অবস্থান নেন কোমলে-কঠোরে সার্থক দেশশাসক।
৫। ‘বাসন্তিকস্বপ্নম’ নাট্যাংশের নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে?
ロ শেকসপিয়র রচিত ইংরেজি নাটক ‘A Midsummer Night's Dream'-এর কৃষ্ণমাচার্য সংস্কৃত অনুবাদ বাসন্তিকস্বপ্ন’নাট্যাংশে নাট্যকার গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রকাশ করেছেন। নাট্যাংশটিতে তদানীন্তন সময়ের সামাজিক চিত্র বিশেষত বিবাহ সম্পর্কিত নিয়মনীতির বর্ণনা প্রধান হয়ে উঠেছে। সেইসময়ের আইন অনুযায়ী বাবা-মায়ের কথা শুনেই মেয়েদের বিয়ে করতে হতাে। বিবাহের ব্যাপারে পাত্র নির্বাচনে মেয়েদের স্বাধীনতা ছিল না। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে মেয়েকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতাে অথবা তাকে অবিবাহিত রাখা হতাে। আলােচ্য নাট্যাংশে দেখা যায়, কৌমুদী তার পছন্দের প্রেমিক বসন্তকে ভালােবাসার কারণে মা-বাবার পছন্দ করা যুবক মকরন্দকে বিয়ে করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে পিতা দেশের আইনানুযায়ী মেয়েকে শাস্তি দেওয়ার জন্য রাজার কাছে উপস্থিত হয়।
প্রেমের শাশ্বত ধর্ম নাট্যাংশটিতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। প্রেম শুদ্ধ-পবিত্র, সমাজের বিধি-নিধেধের ওপরে তার স্থান। নাট্যাংশটিতে দেখা যায়, কৌমুদী যথার্থ প্রেমিকা, তাই সে রাজার দণ্ডকে, পিতার তর্জন-গর্জনকে উপেক্ষা করেছে। সে সমাজবিধি লঙ্ঘন করেছে। আসলে সত্যিকার প্রেম সমাজের বাঁধন মানে না। মৃত্যুকেও গণ্য করে না
Mid-summer মধ্যগ্রীষ্ম। নাটকের ঘটনাগুলি ঘটেছে মধ্যগ্রীষ্মের রাতে কোনাে একসময়ে যেটি খ্রিস্টানদের কাছে সবচেয়ে আনন্দমুখর দিন। অমরকোষের হিসাব অনুসারে বাসন্তিকস্বপ্নম চৈত্র-বৈশাখ = বসন্ত ঋতু। সুতরাং, Mid-summer Night (বাসন্তিক) Dream (স্বপ্ন) নামকরণ এদিক দিয়েও সফল। “বাসন্তিকস্বপ্নমেব যুজ্যতে। কালােহপায়ং বসন্তঃ।” এতে বসন্ত ঋতুর উল্লেখ পাই বলে ‘বাসন্তিকস্বপ্নম’ নাট্যাংশরটি নামকরণের সার্থক হয়েছে।