B.A History notes in Bengali | ভারতেরসংবিধান_ভারত বিভাজনের কারণ_জোট নিরপেক্ষ?


ভারতেরসংবিধান রচনার বিষয়ে একটি নিবন্ধ আলোচনা করো?
            গণপরিষদ গঠনের প্রস্তুতিঃ- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ৬ ডিসেম্বর ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছিল ভারতের কোনাে প্রদেশ যদি গণপরিষদে যােগ না দেয়, তবে জোর করে তার উপর ওই শাসনতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়া হবে না। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ৯ ডিসেম্বর গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। ২০৭ জন সদস্য এই অধিবেশনে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু মুসলিম লিগের নিবাচিত প্রতিনিধিরা গণপরিষদে যােগ না দিয়ে পৃথক পাকিস্তানের দাবিতে অবিচল থাকেন। এই অবস্থায় ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ গণপরিষদের স্থায়ী সভাপতি (১১ ডিসেম্বর) নিযুক্ত হন। ৯ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন চলে। এই সময় ড, ভীমরাও রামজি আম্বেদকর-এর নেতৃত্বে সংবিধানের একটি খসড়া কমিটি (Draft Committee) গঠিত হয়। তারপর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় অধিবেশন বসে। তৃতীয় অধিবেশন। ২২ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত এবং চতুর্থ অধিবেশন ১৪ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত চলে।

⦿ ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রধান বৈশিষ্ট্য : - ভারতীয় সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য বা ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা বলতে --- "আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ,গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে এবং তার সকল নাগরিকই যাতে সামাজিক,
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার, চিন্তা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযােগের সমতা প্রতিষ্ঠা এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তির মর্যাদা এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তাদের মধ্যে যাতে ভ্রাতৃত্বের ভাব গড়ে ওঠে তার জন্য সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথ গ্রহণ করে, আমাদের গণপরিষদে আজ, ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর, এতদ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ, বিধিবদ্ধ এবং নিজেদের অর্পণ করছি।”

              CONSTITUTION OF INDIA PREAMBLE

    WE, THE PEOPLE OF INDIA, having solemnly resolved to constitute India into a SOVEREIGN SOCIALIST, SECU- LAR, DEMOCRATIC REPUBLIC AND SECURE TO ALL ITS CITIZENS :
   JUSTICE, social, economic and political;
   LIBERTY of thought, expression, belief, faith and worship, and to promote among them all-
EQUALITY of Status and of opportunity and to promote among them all
FRATERNITY assuming the dignity of the individual and the unity and integrity of the Nation;
IN OUR CONSTITUENT ASSEMBLY THIS TWENTY-SIXTH day of November 1949, do HEREBY ADOPT. ENACT AND GIVE TO OURSELVES THIS CONSTITUTION.
  

        গণপরিষদের উদ্যোগে সংবিধান রচনা : - গণপরিষদের উদ্যোগে জওহরলাল নেহরুর সভাপতিত্বে যুক্তরাষ্ট্রিয় শাসনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সভাপতিত্বে প্রাদেশিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ১৯৪৭ খ্রিঃ ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতীয়দের হাতে পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করলে স্বাধীন ও সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন গণপরিষদ জনগনের ইচ্ছামতাে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ক্ষমতা লাভ করে। ভারতকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’রূপে গড়ে তুলতে গণপরিষদ সচেষ্ট হয়। ড. বি. অর আম্বেদকরের নেতৃত্বে সংবিধানসভা যে সংবিধান রচনা করেছিল, তা ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ নভেম্বর ভারতীয় গণপরিষদে গৃহীত হয় এবং পরিষদ সভাপতি ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ এতে স্বাক্ষর করেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি এই নতুন সংবিধান অনুসারে ভারতশাসন শুরু হয়।

             ロ সংবিধান রচনার সময়সীমা :- ভারতের গণপরিষদ ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন ধরে স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনা করে। এইসময় মােট গণপরিষদের ১১টি অধিবেশন বসেছিল। খসড়া সংবিধানের ওপর ৭৬৩৫ টি সংশােধনী প্রস্তাবের মধ্যে ২৪৭৩টি প্রস্তাব উত্থাপিত ও আলােচিত হয়, প্রায় তিন বছর ধরে এই সংবিধান রচনার কাজে মােট ৬৪ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছিল। ভারতের সংবিধান রচনাকালে যেসব পখ্যাত মনীষীর ভূমিকা ছিল তাঁদের মধ্যে ড. বি. আর. আম্বেদকর, ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ, ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ, জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, গােবিন্দবল্লভ পন্থ, আবুল কালাম আজাদ, আচার্য জে.বি. কৃপালনী, কে. এম. মুনশি, টি. টি.কৃষ্ণমাচারী, গােপাল স্বামী আয়ার, আল্লাদিকৃষ্ণস্বামী আয়ার, পুরুষােত্তম দাস ট্যান্ডন প্রমুখ উল্লেখযােগ্য।

                                     _______

✯ ভারত বিভাজনের কারণ ও সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো?
     ロ ভারত বিভক্তির কারণ ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারতীয় স্বাধীনতা আইনপাশ হয়। এই আইনের দ্বারা ভারতের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু এই আইনের দ্বারা ভারতকে দ্বিখন্ডিত করা হয়েছিল। ভারত ও পাকিস্তান নামে পাশাপাশি দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তান ও ১৫ই আগষ্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর ভারতে দেখা দেয় অভিবাসন সমস্যা। ভারত কি করে ভাগ হলো এই সমস্যার কারণগুলি ছিল ভারত ব্যবচ্ছেদ। বিষয়টি এভাবে আলােচনা করা যেতে পারে।

       ⦿ ভারত বিভক্তির কারণ :- দেশভাগের ইতিহাস ও বাঙালি জীবন ১৯৪৭ সালে ভারত ব্যবচ্ছেদ কি কি কারণে ঘটেছিল এবং ব্যবচ্ছেদ অনিবার্য ছিল কি না সে সম্পর্কে বিভিন্ন মত আছে। ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের কারণগুলিকে বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাখ্যা করে ভারত বিভাগ অনিবার্য ছিল কিনা সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসা যায়।

প্রথমতঃ- দীর্ঘকাল ধরে ইংরেজ শাসকগণ ভারতকে নিজেদের অধীনে রাখার জন্য যে ভেদনীতি অনুসরণ করে আসছিল ভারত বিভাগ তারই পরিণতি। ১৯০৫ সালে ঢাকা শহরে মুসলীম লীগ গঠন ও ১৯০৬ সালে সিমলায় বড়লাটের কাছে মুসলিম প্রতিনিধিদের শারকলিপি পেশ, ১৯০৯ সালে মলেমিন্টো সংস্কারে মুসলমানদের জন্য আলাদা প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা ও ১৯১৯ সালের আইনে তা বহাল রাখা, ১৯৬১ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডােনাল্ডের সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা একথাই প্রমাণ করে যে, ভারতের জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল ও ধ্বংস করার জন্য ইংরেজগণ সুপরিকল্পিতভাবে যে বিভেদনীতি প্রয়ােগ করেছিল তার ফলে ভারত বিভাগ ঘটেছিল।

দ্বিতীয়তঃ- কারাে কারাে মতে মুসলীম লীগ নেতা জিন্না ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযােগ গ্রহণ করতে পেরেছিলেন বলে ভারত বিভাগ ঘটেছিল। তিনি প্রথমে ছিলেন জাতীয়তাবাদী, পরে তিনি মুসলীম লীগে যােগ দেন। যে কোন কারণে জিন্না কংগ্রেস বিরােধী হয়ে ওঠেন এবং কংগ্রেসের আন্দোলনের পথে বাধা সৃষ্টির জন্য মুসলীম লীগকে ব্যবহার করেন। এছাড়া ভারতে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়ার একটি বড় কারণ মুসলমানদের একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি কখনও গড়ে ওঠেনি। তখনও অধিকাংশ মুসলমান ছিল দরিদ্র, অশিক্ষিত ও ধর্মোন্মাদ। তাছাড়া জাতীয়তাবাদী মুসলমানরা মুসলমান জনগণের উপর কার্যকরি প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়। ফলে জিন্নার নেতৃত্বে মুসলীম লীগ জাতীয় রাজনীতিকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যায় যার ফলে ভারত বিভাগ ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব ছিল না।

তৃতীয়তঃ- অনেকে মনে করেন হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা মুসলমান সাম্প্রদায়িকতায় ব্যাপক সাহায্য করেছিল। হিন্দু মহাসভার সভাপতি দামােদর সাভারকার ভারতের রাজনীতিতে হিন্দু আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আপােষহীন প্রকাশ ঘটালেন। তিনি প্রকাশ্যে ঘােষণা করেছিলেন যে, ভারতবর্ষ হল হিন্দুস্থান,এই নীতি মুসলমানদের মেনে নিতে হবে। হিন্দু মহাসভার এই নীতি হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়েছিল বলে অনেকের ধারণা।

চতুর্থতঃ- কোন কোন ইংরেজ লেখক দেখাবার চেষ্টা করেন যে, ভারত বিভাগের পেছনে ব্রটিশ সরকারের কোন দায়িত্ব ছিল না। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে ছিল তার চাপে ব্রিটিশ সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়।

 এই সকল বহুবিধ কারণে ভারত ব্যবচ্ছেদ ঘটেছিল সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। একথা সত্য যে, এই ব্যবচ্ছেদের কোন একটি স্বতন্ত্র কারণ ছিল না। এর ফলে অভিবাসন সমস্যা দেখা দেয়। কোন নাগরিক পাকিস্তানে যাবে আর কোন নাগরিক ভারতে থাকবে এ নিয়ে বিরােধ দেখা দেয়। পাকিস্তান মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেও ভারত হিন্দুস্থান হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে নি। যার পরিনামে এখনও দুটি দেশের মধ্যে বিরােধ লেগেই চলেছে।

                                       __________

✯ জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে ভারতের ভূমিকা আলোচনা করো?
       ロ ভারতের বিদেশনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল জোটনিরপেক্ষতা।জোটনিরপেক্ষতাই হল ভারতীয় পররাষ্ট্র নীতির মূল ভিত্তি। স্বাধীনতালাভের আগে থেকেই ভারতের নেতৃবৃন্দ জোটবদ্ধ রাজনীতির বিরুদ্ধে সােচ্চার ছিল। ভারতের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের সঙ্গে শান্তির স্বপক্ষে বক্তব্য তুলে ধরা খুবই স্বাভাবিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবী ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক এই দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। এশিয়া ও আফ্রিকার সদ্যমুক্ত দেশগুলি স্থির করে যে তারা বিবাদমান এই দুই
শিবিরের কোনটিতে যােগদান না করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। ভারত এই নির্জোটবাদের প্রধান রূপকার! জোট নিরপেক্ষতার অর্থ হল দুই মহাশক্তিধর রাষ্ট্র সম্পর্কে কোন মােহ না রেখে বিশ্বের প্রতিটি সমস্যার ক্ষেত্রে তার গুণাগুণ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। 

⦿ জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে ভারতের ভূমিকা :- ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে যে জোটনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে তা হল গতিশীল নিরপেক্ষতা। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা, সামরিক জোটে যােগদান করা, কোন রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আগ্রাসন ও যুদ্ধের বিরােধিতা করা,
শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধের মীমাংসা করার চেষ্টা ইত্যাদি বিষয়কে গতিশীল নিরপেক্ষতা বলা যেতে পারে।

১৯৫৫ সালে দিল্লীতে এশিয়ার ১৪ টি রাষ্ট্র মিলিত হয়ে সাম্রাজ্যবাদ,ঔপনিবেশিকতা ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য প্রস্তাব পাস করেছিল। ঐ একই বৎসরে বান্দুং,এশিয়া ও আফ্রিকার ২৬ টি দেশ মিলিত হয়। সব জাতির সার্বভৌমত্ব, আগ্রাসন মূলক কাজ থেকে বিরত থাকা, শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধ মীমাংসা করা ইত্যাদি বিষয়ে সম্মেলনে প্রস্তাব পাশ করা হয়। এইসব প্রস্তাবই জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের মূল কথা।

 ১৯৬২ সালে বেলগ্রেডে নিজোট দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। ১৫ সদস্য রাষ্ট্র ও ২ টি পরিদর্শক রাষ্ট্র এই সম্মেলনে যােগদান করে। এই সম্মেলনে, শান্তিপূর্ণ সহ- অবস্থান, নয়া ঔপনিবেশিকতা, বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা, নিরস্ত্রীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রস্তাব পাশ করা হয়। এই সম্মেলনে ভারত মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল।

                                  ____________

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন