বি.এ সেকেন্ড সেমিস্টার সোসিওলজি নোটস পিডিএফ ২০২২ জেনারেল পাস
(বি. এ.) 2nd সেমিস্টার সমাজবিদ্যা প্রশ্নও উত্তর সহ নোটস পিডিএফ ভার্সন || University of Gour Banga

প্রশ্নঃ ১৬ সামাজিক পরিবর্তনের আধুনিক
রীতিসমূহ পর্যালোচনা করো।
প্রশ্নঃ ১৭ পরিবারের কার্যাবলী আলোচনা
করো।
প্রশ্নঃ ১৮ লিঙ্গগত বৈষম্যের প্রকৃতি
বর্ণনা করো।
প্রশ্নঃ ১৯ বিবাহের নিয়মাবলীর ওপর
একটি টীকা লেখো।
প্রশ্নঃ ২০ যৌথ পরিবারের সুবিধা ও
অসুবিধাগুলি আলোচনা করো।
প্রশ্নঃ ২১ পরিবার কাকে বলে? পরিবারের
মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
প্রশ্নঃ ২২ বিবাহের শ্রেণীবিভাগ
করো।
প্রশ্নঃ ১৬ সামাজিক পরিবর্তনের আধুনিক রীতিসমূহ পর্যালোচনা করো।
ভূমিকা : ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে
বিচার বিশ্লেষণ করলে চিরাচরিত, প্রথাগত নিয়ম কানুনের পরিবর্তন দেখা যায়।
স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সমাজ সংস্কারের আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলন
কে সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল সমাজ
সংস্কার। নিম্নবর্ণের মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা ছড়িয়ে দেওয়া
আবশ্যিক ছিল। তবে তা তখনই সম্ভব ছিল যখন সর্ব -স্তরের মানুষকে সমাজের মূল স্তরে
নিয়ে আসা সম্ভব হবে। তার জন্য সমাজ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ছিল। সমাজের প্রতিটি
মানুষকে একই শ্রেণীতে আনার ফলে সমাজের পরিবর্তন দেখা যায়। পিছিয়ে পড়া
মানুষগুলো এগিয়ে এনে সমাজকে পরিবর্তনের রূপ দেওয়া, অস্পৃশ্যতা, জাতি ধর্মভেদকে
দূর করা প্রয়োজন ছিল। সমাজে বহুল পরিবর্তন ঘটে গণ আন্দোলনের মাধ্যমে, বৈপ্লবিক ও
প্রতিরোধ আন্দোল -নের দ্বারা।
বিভিন্ন লেখনীর দ্বারা মানুষকে সজাগ করার প্রচেষ্টাকে জোরালো করার চেষ্টা করা
হয়। এই সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া বা সময় সাপেক্ষ।
সামাজিক আন্দোলনের তত্ত্বগত দিক থেকে বিচার করলে দু’ধরণের তত্ত্বে সন্ধান
পাওয়া যায়। তা হল— মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব (psychological theories) এবং
সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব (sociological theories)। মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্বের
ক্ষেত্রে আবার অসন্তোষ জনক তত্ত্ব (discontent theory), ব্যক্তিগত অসঙ্গতিমূলক
তত্ত্ব (personal maladjustment theory) দেখা যায়। আমরা দেখে থাকি পৃথিবীর
তৃতীয় বিশ্বের স্বাধীন দেশগুলির নাগরিকগণ মনে করেন— দেশের
জনগণের প্রত্যাশা দেশগুলি পূরণ করবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে তা বাস্তবরূপ ধারণ না করায় আজ নানাবিধ আন্দোলন লেগেই আছে।
জনগণের প্রত্যাশা দেশগুলি পূরণ করবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে তা বাস্তবরূপ ধারণ না করায় আজ নানাবিধ আন্দোলন লেগেই আছে।
সংঘঠিত হয়েছে। যেমন নারীবাদী আন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতার সপক্ষে আন্দোলন, কল্যাণমূলক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির আন্দোলন ইত্যাদির ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও বহু আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে।
প্রশ্নঃ ১৭ পরিবারের কার্যাবলী আলোচনা করো।
ভূমিকা : সমাজে অবস্থিত নানাবিধ গোষ্ঠী সমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক গোষ্ঠী হল পরিবার। আয়তনের দিক থেকে অন্যান্য গোষ্ঠী থেকে ক্ষুদ্র হলেও ব্যক্তির শৈশব থেকে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নানাবিধ প্রয়োজনগুলি চরিতার্থ করে তার জৈবমানসিক চাহিদা পূরণে এ এক বিকল্প ব্যবস্থা। ‘পরিবার’ শব্দটি রোমান শব্দ ‘Famulus’ থেকে এসেছে। এই অর্থে পরিবার হল সামাজিক মানব জীবনের প্রথম ধাপ এবং গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের এক বিশ্বজনীন রূপ।
পরিবারের কার্যাবলী : পরিবার
নিম্নোক্ত কার্যাবলীগুলি গৃহীত করে সমাজে তার গুরুত্ব বা প্রভাব বিস্তার করে।
ম্যাকাইভার ও পেজ পরিবারের কার্যাবলীকে প্রধান দুভাগে ভাগ করেছেন। যথা- 🅐
অপরিহার্য কার্যাবলী 🅑 অপরিহার্য নয় এমন কার্যাবলী
🅐 অপরিহার্য কার্যাবলী : এই
অপরিহার্য কার্যাবলীগুলির মধ্যে নিম্নোক্ত কাজগুলি পরিলক্ষিত হয়।
- দৈহিক ও মানসিক নিরাপত্তা প্রদান : প্রতিটি পরিবার তার সন্তান সন্ততিদের দৈহিক ও মানসিক নিরাপত্তা প্রদান করে।
- সামাজিক মর্যাদা প্রদান : ব্যক্তিকে সামাজিক বিষয়ে পরিচয় ঘটিয়ে সামাজিক মর্যাদা প্রদান করে তার পরিবার।
- আবাসস্থল : প্রত্যেক ব্যক্তির নির্দিষ্ট নির্বাচিত আবাসস্থলের কাজ করে প্রতিটি পরিবার।
- প্রাথমিক আচরণের উৎপত্তিস্থল : পরিবার শিশুকে প্রথম বেঁচে থাকার প্রাথমিক আচরণগুলি শেখায়।
🅑 অপরিহার্য নয় এমন কার্যাবলী :
- শিক্ষামূলক ভূমিকা : পরিবারের মধ্যেই শিশু প্রথম তার শিক্ষামূলক বিষয়গুলি গ্রহণ করে। অর্থাৎ পরিবার প্রতিটি শিশু শিক্ষামূলক আচরণগুলি শিখতে সাহায্য করে।
- সংস্কৃতির ধারণ ও সংরক্ষণ : পরিবারগুলি সমাজে প্রচলিত সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে, যা পারিবারিক শিক্ষাদানের মধ্যেই চৰ্চা করা হয়। ফলে সমাজের সংস্কৃতির সাথে শিশুটি সহজে মানিয়ে নিয়ে বৃহত্তর সমাজের একজন হয়ে ওঠে।
- অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দান : শিশুর সার্বিক বিকাশে সহায়তা করে পরিবার অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিয়ে। এক্ষেত্রে বৃত্তি নির্বাচনের মাধ্যমে কিংবা পারিবারিক বিভিন্ন বৃত্তি গ্রহণের মাধ্যমে পিতা-মাতার কাছ থেকে শিশুটি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভ করে।
- সু-অভ্যাস গঠন : একজন শিক্ষার্থী বা শিশুর আচার ব্যবহার, অভ্যাস ইত্যাদি গঠনের ক্ষেত্রে একটি পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও জ্ঞানের উৎসরূপে, ঐতিহ্য সংরক্ষকরূপে ধর্ম সম্পর্কে, সন্তান প্রজনন ও প্রতিপালন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপসংহারঃ উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাধারণত পরিবার হল শিশুর
আত্মীয়-স্বজনকে কেন্দ্র করে একটি পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, যেখানে তার জীবনের
শিক্ষার সূত্রপাত ঘটে, যাদের মাধ্যমে শিশু প্রথম সমাজকে চিনতে শেখে।
প্রশ্নঃ ১৮ লিঙ্গগত বৈষম্যের প্রকৃতি বর্ণনা করো।
ভূমিকা : জন্ম থেকেই নারী ও পুরুষ
পৃথক। শারীরিক গঠনগত দিক থেকে নারী ও পুরুষের মধ্যে একটা বিশেষ তফাৎ রয়েছে। নারী
নমনীয় ও কোমলধর্মী, অপর দিকে পুরুষ বলিষ্ট ও মজবুত শরীর ও সবল তার প্রকাশ।
ভারতবর্ষের সামাজিক ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় সুদীর্ঘকাল ধরে পুরুষ তান্ত্রিক
সমাজ এবং পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক কাঠামোয় পুরুষের তুলনায় নারীর সঙ্কোচিত ভূমিকা
পরিলক্ষিত হয়।
নারী বৈষম্য: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ভারতীয় নারীর প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রাচীন যুগ থেকে পুরুষের তুলনায় নারী নানা ধরণের নির্যাতনের শিকার। তবে বৈদিক যুগে নারী ছিল পুরুষের প্রায় সমগোত্রীয়, সবধরণের ক্রিয়াকর্মে কোন বাধা ছিল না। এমনকি তারা যাগযজ্ঞেও অংশগ্রহণ করতো। পরবর্তীতে অনেক নারী ঘোড়ায় চেপে যুদ্ধ করেছে, চালিয়েছে রাজকার্য। প্রাচীন প্রাক্বৈদিক এবং ঋক্বৈদিক যুগে নারীর ভুমিকা কিছুটা বিস্তত হলেও পরবর্তী বৈদিক যুগ থেকে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রভাবে নারীর ভূমিকা ঘর-গৃহস্থালির মধ্যে আবদ্ধ রয়েছে। মধ্যযুগে পুনরায় ইসলাম ধর্মের প্রভাবে হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সমাজেই নারীর ভূমিকা বিশেষভাবে সঙ্কচিত হতে থাকে এবং নারীকে একাধিক সামাজিক কুসংস্কারের জালে আবদ্ধ করা হয়। যেমন— বহুপত্নীবিবাহ, বাল্যবিবাহ, শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, সতীদাহ প্রথা, পর্দা প্রথা প্রভৃতি।
নারী বৈষম্য: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ভারতীয় নারীর প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রাচীন যুগ থেকে পুরুষের তুলনায় নারী নানা ধরণের নির্যাতনের শিকার। তবে বৈদিক যুগে নারী ছিল পুরুষের প্রায় সমগোত্রীয়, সবধরণের ক্রিয়াকর্মে কোন বাধা ছিল না। এমনকি তারা যাগযজ্ঞেও অংশগ্রহণ করতো। পরবর্তীতে অনেক নারী ঘোড়ায় চেপে যুদ্ধ করেছে, চালিয়েছে রাজকার্য। প্রাচীন প্রাক্বৈদিক এবং ঋক্বৈদিক যুগে নারীর ভুমিকা কিছুটা বিস্তত হলেও পরবর্তী বৈদিক যুগ থেকে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রভাবে নারীর ভূমিকা ঘর-গৃহস্থালির মধ্যে আবদ্ধ রয়েছে। মধ্যযুগে পুনরায় ইসলাম ধর্মের প্রভাবে হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সমাজেই নারীর ভূমিকা বিশেষভাবে সঙ্কচিত হতে থাকে এবং নারীকে একাধিক সামাজিক কুসংস্কারের জালে আবদ্ধ করা হয়। যেমন— বহুপত্নীবিবাহ, বাল্যবিবাহ, শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, সতীদাহ প্রথা, পর্দা প্রথা প্রভৃতি।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গৃহীত ব্যবস্থা : কেবল জাতীয় ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ৮০ এর দশক থেকে শুরু করে
নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে
১৯৯৩-৯৮, ভিয়েনা কনভেনশন, ১৯৯৫ তে বেজিং সম্মেলন প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের
কথা বলা যায়। ১৯৭৫ সাল সারা বিশ্বে নারীকে তাদের মৌলিক অধিকার দিতে এই সালকে
আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এই সময় সারা বিশ্বে নারী বিষয়ক
সচেতনা বাড়তে থাকে, মহিলাদের শিক্ষা, চাকরি, প্রশাসনিক ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে
নতুন করে নতুনভাবে চিন্তা-ভাবনা শুরু হল।
বৈষম্যের প্রকৃতি : আধুনিক ভারতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নারী- পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণে ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করার ফলে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য পূর্বের তুলনায় হ্রাস পেলেও তা এখনও পর্যন্ত বর্তমান।
জৈবিক ক্ষেত্রে বৈষম্য : ভারতে এখনও পর্যন্ত প্রতি ১০০০ জন পুরুষে উন্নত দেশগুলির তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক কম। ১৯৯১ সালে প্রতি ১০০০ জন পুরুষে নারীর অনুপাত ছিল ৯২৭ জন, তা ২০০১ সালে হ্রাস পেড়ে দাঁড়ায় ৭৩৩।
প্রসুতি মৃত্যুর হার : সামাজিক অর্থনৈতিক কারণে মহিলারা শিশুর জন্মদান করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাদের মৃত্যু ঘটলে তাকে প্রসূতি মৃত্যু বলে । কোন বছরে প্রতি ১ লক্ষ প্রসবকালীন মহিলাদের প্রসব সংক্রান্ত জটিলতার জন্য যত সংখ্যক মায়ের মৃত্যু ঘটে তাকে প্রসূতি মৃত্যু বলে। এর ফলে নারী-পুরুষে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য : অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। ১৯৯১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যেখানে ৬০ ভাগের বেশী পুরুষ নিযুক্ত সেখানে ১৪ শতাংশ নারী নিযুক্ত। ২০০১ সালে মহিলাদের অর্থনীতিতে কাজে নিযুক্ত থাকার হার কিছুটা বৃদ্ধি পেলে Gender gap অর্থাৎ
নারী-পুরুষে বৈষম্য প্রায় একই রয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক কাজে যে সকল মহিলারা যুক্ত তারা একই সাথে ঘর-গৃহস্থালী-সন্তান প্রতিপালনের পাশাপাশি পেশাগত দায়িত্ব পালন করার ফলে চরম মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার সম্মুখীন হয়, যা পুরুষের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় না।
বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ : নবম
পরিকল্পনায় মহিলাদের ক্ষমতায়নের বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই নীতি
অনুযায়ী Womens impowerment অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে
মহিলা দের সক্রিয় অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী গৃহীত
হয়েছে। এছাড়া বিশেষ করে বিভিন্ন আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরতার মাধ্যমে মহিলারা
যাতে স-উদ্যোগে স্বাধীনভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হয়েছে।
উপসংহারঃ নারীশিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবেশ সম্পর্কে নারীর সচেতনতার বিকাশ, তুলনামূলক স্তরে নারীর বাধ্যতামূলক রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য পূর্বের তুলনায় অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে তা বলা যেতে পারে। কিন্তু এই বৈষম্য পুরোপুরি দূর করার জন্য
কেবলমাত্র সরকারী উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। বিভিন্ন NGO এবং স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলির পাশাপাশি প্রকৃত ক্ষমতা অর্জনের জন্য নারী সমাজেও সংগঠিত ভূমিকা পালনে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
হিন্দুদের কাছে বিবাহ ধর্মাচরণ বিশেষ একটি পবিত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এটি তাদের
কাছে ধর্মাচরণের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। বস্তুত হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে বিবাহের
ত্রিবিধ উদ্দেশ্যর কথা বলা হয়েছে। হিন্দু বিবাহের এই ত্রিবিধ উদ্দেশ্য
হল—‘ধর্ম’, ‘প্রজা’ এবং ‘রতি’ (যৌন সম্ভোগ)। হিন্দু বিবাহের অন্যতম লক্ষ্য হল
যৌনক্রিয়া একথা ঠিক, কিন্তু যৌনক্রিয়াই হিন্দু বিবাহের মূল লক্ষ্য নয়। রতি
সুখের বিষয়টি এক্ষেত্রে নিতান্তই গৌণ। হিন্দু বিবাহের মুখ্য উদ্দেশ্যই হল
ধর্মাচরণ । মহাত্মা গান্ধীর মন্তব্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন—
“Marriage is a bence that protects religious."
বিবাহের নিয়ম (Rules of marriage) : বিবাহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বিবাহের কেবলমাত্র ব্যক্তিগত গুরুত্ব রয়েছে তাই নয়, সামাজিক দিক দিয়েও বিবাহের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজের মূল ভিত্তি হিসেবে পারিবারিক সংগঠনে শৃঙ্খলা এবং ভারসাম্য বজায় থাকে বিবাহ বন্ধনের
দায়িত্বের মাধ্যমে। এই কারণে পৃথিবীর প্রতিটি সমাজে বিবাহ প্রথা সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কতকগুলি সার্বজনীন নিয়ম লক্ষ্য করা যায়। (i) বহির্বিবাহের নীতি (ii) অন্তর্বিবাহের নীতি (iii) অজাচার (iv) আত্মীয় বিবাহ।
(ii) অন্তর্বিবাহের নীতি : বিবাহের আরেকটি সার্বজনীন নিয়ম হল আন্তর্বিবাহ। যখন কোন দল বা গোত্র তাদের নিজের কোন দল বা গোষ্ঠী থেকে পাত্র-পাত্রী নির্বাচন সংগত বলে মনে করে এবং বাধ্যতামূলক রীতি হিসেবে গণ্য হয়, তখন তাকে বলা হয় আন্তর্বিবাহ। যেমন— হিন্দুসমাজে স-বর্ণ বিবাহকে এইরূপ বিবাহের নিদর্শন বলা যেতে পারে আদিবাসী সমাজেও Trible endogamy অর্থাৎ একই আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহ লক্ষ্য করা যায়, আন্তর্বিবাহ আবার দুই ধরণের হতে পারে – (i) জাতি ও
শ্রেণী আন্তর্বিবাহ এবং (ii) আদিবাসী আন্তর্বিবাহ। বেশীর ভাগ সমাজেই একই শ্রেণীর মধ্যে বিবাহ লক্ষ্য করা যায়। হিন্দু সমাজে জাতি ব্যবস্থায় অসবর্ণ বিবাহ আইন অনুযায়ী স্বীকৃত হলেও সামাজিক ভাবে সম্পূর্ণ বিবাহ প্রথা প্রচলিত। নৃতাত্ত্বিকদের মতে মূলত তিনটি কারণে আন্তর্বিবাহ প্রচলিত হয়েছে— ক
(iii) অজাচার : পৃথিবীর প্রতিটি সমাজেই অজাচার বা Incest taboo- এর নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। এমনকি আধুনিক রাষ্ট্রও তা আইন দ্বারা সুরক্ষিত। এই নিয়ম অনুযায়ী বলা হয় যে পিতার সাথে কন্যা, মাতার সাথে পুত্রের এবং নিজেদের ভাই-বোনদের মধ্যে বিবাহ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোন কোন সমাজে অবশ্য এই নিয়মেরও ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। যেমন— মিশরের ফ্যারাওদের মধ্যে রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য ভাই-বোনদের মধ্যে বিবাহ প্রচলিত ছিল। এছাড়া জাপানের আইনুস সম্প্রদায়ের মধ্যেও এইরূপ নিয়মের ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এই ব্যতিক্রম ছাড়া পৃথিবীর সব সমাজেই পারিবারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে কঠোরভাবে এই নীতিটি লক্ষ্য করা যায়।
(iv) আত্মীয় বিবাহ : কোন কোন সমাজে আবার এইরূপ নিয়ম লক্ষ্য করা যায় যে, নির্দিষ্ট নির্ধারিত আত্মীয়কেই বিবাহ করতে হবে। এইরূপ নিয়মের ব্যতিক্রমকে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করা হয়।
উপসংহার : বিবাহের উপরিউক্ত নিয়মগুলি আলোচনা করলে দেখা যায় যে, বিবাহ একটি বাধ্যতামূলক রীতি হিসেবেও গণ্য করা হলেও তা বাস্তবে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক অনুমোদনের প্রশ্নটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। সমাজে পরিবর্তন এবং গতিশীলতা সত্ত্বেও উপরিউক্ত
নিয়মগুলি প্রতিটি সমাজেই বাধ্যতামূলক রীতি হিসেবে এখনও লক্ষ্য করা যায়।
বৈষম্যের প্রকৃতি : আধুনিক ভারতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নারী- পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণে ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করার ফলে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য পূর্বের তুলনায় হ্রাস পেলেও তা এখনও পর্যন্ত বর্তমান।
জৈবিক ক্ষেত্রে বৈষম্য : ভারতে এখনও পর্যন্ত প্রতি ১০০০ জন পুরুষে উন্নত দেশগুলির তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক কম। ১৯৯১ সালে প্রতি ১০০০ জন পুরুষে নারীর অনুপাত ছিল ৯২৭ জন, তা ২০০১ সালে হ্রাস পেড়ে দাঁড়ায় ৭৩৩।
প্রসুতি মৃত্যুর হার : সামাজিক অর্থনৈতিক কারণে মহিলারা শিশুর জন্মদান করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাদের মৃত্যু ঘটলে তাকে প্রসূতি মৃত্যু বলে । কোন বছরে প্রতি ১ লক্ষ প্রসবকালীন মহিলাদের প্রসব সংক্রান্ত জটিলতার জন্য যত সংখ্যক মায়ের মৃত্যু ঘটে তাকে প্রসূতি মৃত্যু বলে। এর ফলে নারী-পুরুষে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য : অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। ১৯৯১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যেখানে ৬০ ভাগের বেশী পুরুষ নিযুক্ত সেখানে ১৪ শতাংশ নারী নিযুক্ত। ২০০১ সালে মহিলাদের অর্থনীতিতে কাজে নিযুক্ত থাকার হার কিছুটা বৃদ্ধি পেলে Gender gap অর্থাৎ
নারী-পুরুষে বৈষম্য প্রায় একই রয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক কাজে যে সকল মহিলারা যুক্ত তারা একই সাথে ঘর-গৃহস্থালী-সন্তান প্রতিপালনের পাশাপাশি পেশাগত দায়িত্ব পালন করার ফলে চরম মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার সম্মুখীন হয়, যা পুরুষের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় না।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য :
স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু থেকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর ভূমিকা
কম। স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজনৈতিক দাবী-দাবার ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা
লক্ষ্য করা গেলেও স্বাধীনতার ৫৯ বছর পরেও দেশের সর্বোচ্চ গণ প্রতিনিধি সভায়
নারীর অনুপাত
১০ শতাংশও নয়।
১০ শতাংশও নয়।
উপসংহারঃ নারীশিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবেশ সম্পর্কে নারীর সচেতনতার বিকাশ, তুলনামূলক স্তরে নারীর বাধ্যতামূলক রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য পূর্বের তুলনায় অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে তা বলা যেতে পারে। কিন্তু এই বৈষম্য পুরোপুরি দূর করার জন্য
কেবলমাত্র সরকারী উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। বিভিন্ন NGO এবং স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলির পাশাপাশি প্রকৃত ক্ষমতা অর্জনের জন্য নারী সমাজেও সংগঠিত ভূমিকা পালনে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
প্রশ্নঃ ১৯ বিবাহের নিয়মাবলীর ওপর একটি টীকা লেখো।
▢ রিভার্স এর অভিমত অনুসারে বিবাহ হল নারী ও পুরুষের যৌন সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে
অনুসৃত এক সমাজ স্বীকৃত ব্যবস্থা বিশেষ। ওয়েস্টার মার্ক (Edward Westermark)- এর মতে— Marriage
is something more than a regulated sexual behaviour. অর্থাৎ বিবাহ হল নিয়ন্ত্রিত যৌন আচরণ অপেক্ষা অধিক কিছু। বিবাহের উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয় পরিবার এবং এই পরিবারের মধ্যে বৈধ শিশু ভূমিষ্ট হয়। সুতরাং বিবাহকে শুধুমাত্র যৌনকামনা চরিতার্থ করার উপায় হিসাবে গণ্য করা যায় না, কারণ কেবল যৌনকামনা চরিতার্থ করাই বিবাহের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। পরিবার হল মানব সমাজের ক্ষুদ্রতম একক সংগঠন। এই পরিবারের মধ্যে বহু ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বর্তমান। পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে বিবাহ হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবাহ ব্যবস্থাই নতুন পরিবারের ভিত্তি রচনা করে। পরিবার জীবন এবং বিবাহ ব্যবস্থা পরস্পরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সংযুক্ত এই কারণে বিবাহ একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বা গার্হস্থ্য ব্যবস্থা হিসাবে বিবেচিত হয় ৷
▢ রিভার্স এর অভিমত অনুসারে বিবাহ হল নারী ও পুরুষের যৌন সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে
অনুসৃত এক সমাজ স্বীকৃত ব্যবস্থা বিশেষ। ওয়েস্টার মার্ক (Edward Westermark)- এর মতে— Marriage
is something more than a regulated sexual behaviour. অর্থাৎ বিবাহ হল নিয়ন্ত্রিত যৌন আচরণ অপেক্ষা অধিক কিছু। বিবাহের উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয় পরিবার এবং এই পরিবারের মধ্যে বৈধ শিশু ভূমিষ্ট হয়। সুতরাং বিবাহকে শুধুমাত্র যৌনকামনা চরিতার্থ করার উপায় হিসাবে গণ্য করা যায় না, কারণ কেবল যৌনকামনা চরিতার্থ করাই বিবাহের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। পরিবার হল মানব সমাজের ক্ষুদ্রতম একক সংগঠন। এই পরিবারের মধ্যে বহু ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বর্তমান। পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে বিবাহ হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবাহ ব্যবস্থাই নতুন পরিবারের ভিত্তি রচনা করে। পরিবার জীবন এবং বিবাহ ব্যবস্থা পরস্পরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সংযুক্ত এই কারণে বিবাহ একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বা গার্হস্থ্য ব্যবস্থা হিসাবে বিবেচিত হয় ৷
বিবাহের নিয়ম (Rules of marriage) : বিবাহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বিবাহের কেবলমাত্র ব্যক্তিগত গুরুত্ব রয়েছে তাই নয়, সামাজিক দিক দিয়েও বিবাহের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজের মূল ভিত্তি হিসেবে পারিবারিক সংগঠনে শৃঙ্খলা এবং ভারসাম্য বজায় থাকে বিবাহ বন্ধনের
দায়িত্বের মাধ্যমে। এই কারণে পৃথিবীর প্রতিটি সমাজে বিবাহ প্রথা সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কতকগুলি সার্বজনীন নিয়ম লক্ষ্য করা যায়। (i) বহির্বিবাহের নীতি (ii) অন্তর্বিবাহের নীতি (iii) অজাচার (iv) আত্মীয় বিবাহ।
(i) বহির্বিবাহের নীতি : পৃথিবীর
সব সমাজেই একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বাইরে বিবাহ করা প্রচলিত বিধি বলে মনে করা
হয়, একে বলা হয় বহির্বিবাহ। এই ধরণের বিবাহ গোষ্ঠী, পরিবার, বংশ এমনকি গ্রাম
হতে পারে। পৃথিবীর বেশিরভাগ সমাজেই গোত্রের ক্ষেত্রে বহির্বিবাহের নীতিটি
প্রচলিত। কারণ গোত্রে এই বিশ্বাস করা হয় যে গোত্রের অন্তর্ভুক্ত সদস্যগণ
প্রত্যেকেই যেহেতু একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত হয়েছে, সেহেতু তারা
পরস্পর রক্তের সম্পর্কে আবদ্ধ। বহির্বিবাহ আবার দুই ধরণের হতে পারে
(i) Simple exogamy (ii) Restricted exogamy.
(i) Simple exogamy (ii) Restricted exogamy.
(ii) অন্তর্বিবাহের নীতি : বিবাহের আরেকটি সার্বজনীন নিয়ম হল আন্তর্বিবাহ। যখন কোন দল বা গোত্র তাদের নিজের কোন দল বা গোষ্ঠী থেকে পাত্র-পাত্রী নির্বাচন সংগত বলে মনে করে এবং বাধ্যতামূলক রীতি হিসেবে গণ্য হয়, তখন তাকে বলা হয় আন্তর্বিবাহ। যেমন— হিন্দুসমাজে স-বর্ণ বিবাহকে এইরূপ বিবাহের নিদর্শন বলা যেতে পারে আদিবাসী সমাজেও Trible endogamy অর্থাৎ একই আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহ লক্ষ্য করা যায়, আন্তর্বিবাহ আবার দুই ধরণের হতে পারে – (i) জাতি ও
শ্রেণী আন্তর্বিবাহ এবং (ii) আদিবাসী আন্তর্বিবাহ। বেশীর ভাগ সমাজেই একই শ্রেণীর মধ্যে বিবাহ লক্ষ্য করা যায়। হিন্দু সমাজে জাতি ব্যবস্থায় অসবর্ণ বিবাহ আইন অনুযায়ী স্বীকৃত হলেও সামাজিক ভাবে সম্পূর্ণ বিবাহ প্রথা প্রচলিত। নৃতাত্ত্বিকদের মতে মূলত তিনটি কারণে আন্তর্বিবাহ প্রচলিত হয়েছে— ক
শ্রেণীগত ঘৃণা বা আভিজাত্য, খ. দৈহিক আকৃতিগত পার্থক্য এবং গ. রক্তের
পবিত্রতা রক্ষা।
(iii) অজাচার : পৃথিবীর প্রতিটি সমাজেই অজাচার বা Incest taboo- এর নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। এমনকি আধুনিক রাষ্ট্রও তা আইন দ্বারা সুরক্ষিত। এই নিয়ম অনুযায়ী বলা হয় যে পিতার সাথে কন্যা, মাতার সাথে পুত্রের এবং নিজেদের ভাই-বোনদের মধ্যে বিবাহ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোন কোন সমাজে অবশ্য এই নিয়মেরও ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। যেমন— মিশরের ফ্যারাওদের মধ্যে রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য ভাই-বোনদের মধ্যে বিবাহ প্রচলিত ছিল। এছাড়া জাপানের আইনুস সম্প্রদায়ের মধ্যেও এইরূপ নিয়মের ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এই ব্যতিক্রম ছাড়া পৃথিবীর সব সমাজেই পারিবারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে কঠোরভাবে এই নীতিটি লক্ষ্য করা যায়।
(iv) আত্মীয় বিবাহ : কোন কোন সমাজে আবার এইরূপ নিয়ম লক্ষ্য করা যায় যে, নির্দিষ্ট নির্ধারিত আত্মীয়কেই বিবাহ করতে হবে। এইরূপ নিয়মের ব্যতিক্রমকে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করা হয়।
উপসংহার : বিবাহের উপরিউক্ত নিয়মগুলি আলোচনা করলে দেখা যায় যে, বিবাহ একটি বাধ্যতামূলক রীতি হিসেবেও গণ্য করা হলেও তা বাস্তবে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক অনুমোদনের প্রশ্নটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। সমাজে পরিবর্তন এবং গতিশীলতা সত্ত্বেও উপরিউক্ত
নিয়মগুলি প্রতিটি সমাজেই বাধ্যতামূলক রীতি হিসেবে এখনও লক্ষ্য করা যায়।
প্রশ্নঃ ২০ যৌথ পরিবারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি আলোচনা করো।
যৌথ পরিবার ব্যবস্থার সুবিধাঃ-- যৌথ পরিবার ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যক্তিবর্গের আহার ও বাসস্থানের সুব্যবস্থা সুনিশ্চিত হয়। তাই ব্যক্তির পক্ষে প্ৰগতিমূলক অর্থনৈতিক কাজকর্মে আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা থাকে না।
- যৌথ পরিবার ব্যবস্থায় একটি বড় ধরণের সুবিধা হল ব্যয় সংকোচ। যৌথ পরিবারের সদস্য সংখ্যার আধিক্যের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্যের প্রয়োজন হয়। তাই এই ধরণের পরিবার ব্যবস্থায় এক কালীন বেশী পরিমাণে পরিবারের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বাজার থেকে ক্রয় করতে হয়। তার ফলে পাইকারী মূল্যস্তরের সস্তা দামের সুবিধা ভোগ করা সম্ভব হয়।
- একজন সুনাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যৌথ পরিবারে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। একজন ব্যক্তি সহযোগিতা, সহমর্মিতা, স্বার্থত্যাগ, উদার হৃদয়বত্তা প্রভৃতি গুণগুলি যৌথ পরিবারের মধ্যে অর্জন করার সুযোগ পায়।
- পরিবারের সকল সদস্যদের রোজগার পরিবারের সাধারণ তহবিলে জমা থাকে। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ সদস্যের নিয়ন্ত্রণে এই তহবিল থেকে খরচ করা হয়। পরিবারের সদস্যদের প্রত্যেকের প্রয়োজনের বিচারে ব্যয় করা হয়।
- যৌথ পরিবারে যৌথ মালিকানার জন্য কৃষিজমি বিখণ্ডিত হওয়ার আশঙ্কাকে আটকানো যায় এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যায়।
- যৌথ পরিবারের একজনকে সমস্ত কাজ করতে হয় না। এক্ষেত্রে শ্রমবিভাজনের বিশেষ সুবিধা রয়েছে। পরিবারের প্রত্যেকের জন্য সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ বন্টিত থাকে। তাছাড়া বয়স অনুযায়ী ও নারী, পুরুষ, লিঙ্গ অনুযায়ী পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রত্যেককেই কিছু না কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়।
- যৌথ পরিবারের সদস্যরা শ্রমবিভাজন অনুযায়ী কাজ বন্টিত থাকায় প্রত্যেকেই অবসর বিনোদনের সুযোগ পায় ।
- যৌথ পরিবারের সদস্যগণ নানাভাবে অবসর বিনোদন করেন। মহিলা সদস্যরা বাড়ীর যাবতীয় কাজকর্ম করার পর সকলেই একত্রিত হয়ে অবসর বিনোদন করে।
- যৌথ পরিবারের সকল সদস্যের জীবন, সম্মান, সম্পদ ও নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। তাছাড়া বার্ধক্য, অসুস্থ ও অসমর্থ অবস্থায় পরিবার থেকেই প্রয়োজনীয় পরিচর্যার ব্যবস্থা করা হয়।
যৌথ পরিবার ব্যবস্থার অসুবিধাঃ
উপরিউক্ত সুবিধাগুলি থাকার পাশাপাশি যৌথ পরিবারের বেশ কিছু অসুবিধা বর্তমান রয়েছে। সেগুলি হল নিম্নরূপ —
উপরিউক্ত সুবিধাগুলি থাকার পাশাপাশি যৌথ পরিবারের বেশ কিছু অসুবিধা বর্তমান রয়েছে। সেগুলি হল নিম্নরূপ —
- পরিবারের সদস্যদের স্বাধীন সত্তা ও স্বনির্ভরতার মতো গুণাবলী বিকশিত হওয়ার সুযোগ এই ধরণের পরিবার কাঠামোতে থাকে না।
- যৌথ পরিবারের কর্তা পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদেরও সন্তান-সন্ততি হিসেবেই মনে করেন এবং তাদের সঙ্গে সেইরকম আচরণ করেন। এই ধরণের মানসিকতা ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে।
- যৌথ পরিবারে প্রধান কর্তার অদেশ প্রত্যেককে মেনে চলতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতিবাদের কোন স্থান থাকেনা।
- যৌথ পরিবারে সদস্যদের রোজগার একত্রিত হয়ে সমানভাবে বন্টিত হওয়ায় পরিবারের অলস সদস্যরা আরো বেশি কর্মবিমুখ হয়ে পড়ে। রুজি-রোজগার ছাড়াই আরামে আহার- বিহারের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া গেলে সদস্যদের মধ্যে নিশানা শ্রমবিমুখতা প্রকট হয়ে ওঠে।
- যৌথ পরিবারগুলিতে ঝগড়াঝাঁটির বাড়াবাড়ি দেখা যায়। পরিবারের মহিলা সদস্যদের মধ্যে এই ঝগড়াঝাটির প্রবণতা দেখা যায়। সাধারণভাবে ভ্রাতৃবধূদের মধ্যে পারস্পরিক ঈর্ষা কলুষিত হয়ে থাকে।
- যৌথ পরিবারে সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বিবাদের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় এই বিবাদ আদালতের দোরগোড়ায় হাজির হয়। যৌথ পরিবারের কৃষিজমির ভাগ-বাঁটোয়ারায় ভূ-সম্পত্তি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
- যৌথ পরিবারে সদস্যদের সঞ্চয় হয় না। কারণ নিজের রোজগার কেউ একাই ভোগ করতে পায় না, সকলে মিলে ভোগ করতে হয়। তাই এই রকম অবস্থায় সঞ্চয় বড় একটা হয় না।
- যৌথ পরিবারে বিবাহের পর বধূদের বন্দীদশায় জীবন কাটাতে হয়। পরিবারে সকলের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তাদের প্রাণপণ চেষ্টা করতে হয়। বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলাদের লাঞ্ছনা-গঞ্জনা মুখ বুঁজে সহ্য করতে হয়। নিজের স্বামী-সন্তানের সেবা-যত্নের সুযোগ ও সময় তারা পায় না। দিনের বেলায় স্বামীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের রীতিও যৌথ পরিবারে অস্বীকৃত।
- সন্তানের লালন-পালন ও লেখা-পড়ার দায়িত্ব পিতা-মাতাকে পৃথকভাবে গ্রহণ করতে হয় না। ফলে পরিবার পরিকল্পনার ইচ্ছা বা উদ্যোগ যৌথ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দেখা যায় না।
- পরিবারে সদস্যদের শ্রমবিমুখতা, মহিলা সদস্যদের মধ্যে কলহ প্রভৃতি যৌথ পরিবারে দুর্গতির সৃষ্টি করে।
প্রশ্নঃ ২১ পরিবার কাকে বলে? পরিবারের মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা
করো।
ভূমিকা : সমাজে অবস্থিত নানাবিধ
গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক গোষ্ঠী হল পরিবার। আয়তনের
দিক থেকে অন্যান্য গোষ্ঠী থেকে ক্ষুদ্র হলেও ব্যক্তির শৈশব থেকে জীবনের প্রতিটি
পর্যায়ে নানাবিধ প্রয়োজনগুলি যথাযথভাবে চরিতার্থ করে তার জৈবমানবিক চাহিদা
পূরণে এ এক বিকল্পীহীন ব্যবস্থা। ‘পরিবার’ কথাটির ইংরেজী প্রতিশব্দ 'Family’ -র
উৎপত্তি হয়েছে রোমান শব্দ 'Famulus' থেকে পরিবার হল মানুষের সামাজিক জীবনের
প্রথম ধাপ এবং গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের একটি বিশ্বজনীন রূপ। অন্যভাবে বলা যায়, পরিবার
হল একত্রে ব সবাসকারী ব্যক্তিসমষ্টি গোষ্ঠী। যারা বিবাহসূত্রে, আত্মীয়তার
সূত্রে, পিতা-মাতার সূত্রে আবদ্ধ একটি সামাজিক গোষ্ঠী।
পরিবারের সংজ্ঞা পর্যালোচনার মধ্যে দিয়ে এর কতকগুলি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল—
(i) সর্বজনীন : দেশ-কাল, জাতি নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের সমাজেই এই প্রাথমিক সংস্থাটি পরিলক্ষিত হয়। কেবলমাত্র মানব সমাজেই নয়, পারিবারিক জীবনের অস্তিত্বের পরিচয় অনেক প্রাণীকুলেও দেখা যায়। তাই বলা যায় পরিবার এক সর্বজনীন রূপ।
(i) সর্বজনীন : দেশ-কাল, জাতি নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের সমাজেই এই প্রাথমিক সংস্থাটি পরিলক্ষিত হয়। কেবলমাত্র মানব সমাজেই নয়, পারিবারিক জীবনের অস্তিত্বের পরিচয় অনেক প্রাণীকুলেও দেখা যায়। তাই বলা যায় পরিবার এক সর্বজনীন রূপ।
(ii) ধারাবাহিকতা : পরিবারের একটি উল্লেখ্য বৈশিষ্ট্য হল ধারাবাহিকতা। পরিবার সৃষ্টির সময়ই সমাজের সৃষ্টি হয় বলে বিবেচিত হওয়ায় সমাজের ধারাবাহিকতার সাথে সাথে পরিবেশের গতিপ্রকৃতির ও ধারাবাহিকতা সূচিত হয়।
(iii) ব্যক্তিত্বের ওপর প্রভাব : পরিবার তার ব্যক্তিত্বের উপর স্থায়ীভাবে প্রভাব বিস্তার করে। পরিবারের আঙ্গিক ও
মানসিক অভ্যাস ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে তার চরিত্র গঠন ও নিয়ন্ত্রণ করে।
(iv) ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া : মানুষের চারপাশে পরিবেষ্টিত পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানগুলি সর্বদাই মানুষকে প্রভাবিত করে এবং মানুষ ও এই উপাদানগুলির উপর কোনো না কোনো প্রতিক্রিয়া করে। যা পরিবারের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং এর মাধ্যমেই মানুষ বেঁচে থাকে।
(v) সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ : শিশু পরিবারের মধ্যেই বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতি চর্চা করায় পরিবারকে সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
(vi) শক্তির সঞ্চার : পরিবেশ প্রতিটি শিশুকে সর্বদাই কোনো না কোনোভাবে শক্তি সঞ্চার করে সক্রিয় করে তোলে। তাছাড়াও পরিবেশের পরিবর্তন, সমানধর্মী দায়িত্বশীলতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুলিও পরিলক্ষিত হয়। উপরিউক্ত আলোচনার পর বলা যায় যে, একটি বিশেষ ধরণের গোষ্ঠী হিসেবে পরিবার হল স্বতন্ত্র। পরিবার একটি আত্মীয়গোষ্ঠী হলেও সীমাবদ্ধ গোষ্ঠী সমূহের মধ্যে অন্যতম।
প্রশ্নঃ ২২ বিবাহের শ্রেণীবিভাগ করো।
বিবাহের বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ : প্রতিটি সমাজ ব্যবস্থায় পতি এবং পত্নীর সংখ্যার ভিত্তিতে বিবাহের শ্রেণীবিভাজন করা হয়। প্রাথমিকভাবে বিবাহকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ❶ একগামীতা ❷ বহুগামীতা।
❷ বহুগামীতা : বহুগামীতা বলতে এককালে নারী বা পুরুষের একাধিক জনের সঙ্গে দাম্পত্য জীবন যাপন করাকে বোঝায়। ভারতবর্ষে কিছু কিছু উপজাতি দুর্গম পার্বত্য জাতির মধ্যে এই বিবাহের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। এই বহুগামীতা তিন প্রকারের - ❶ বহুপতিত্ব ❷ বহুপত্নীত্ব ❸ গোষ্ঠী বিবাহ
❶ বহুপতিত্ব : একজন নারীর একই সময়ে একাধিক পুরুষের সঙ্গে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করাকে বলা হয় বহুপতিত্ব বা বহুভর্ভূকত্ব। ভারতবর্ষে এবং পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশের সীমিত অঞ্চলে এধরণের বিবাহ প্রথার প্রচলন রয়েছে এই বিবাহ আবার দুই প্রকার। এই যেমন - (i) তিব্বতীয় বহুপতিত্ব : এরকম বিবাহে একজন নারীর পতিরা সকলেই সহোদর ভ্রাতা এবং এরা সকলে একই সাথে বসবাস করে। এক্ষেত্রে একজন পত্নী সকল সহোদর ভাইয়ের পত্নী হিসেবে বিবেচিত হয় এবং সকলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পত্নীর যৌন সম্পর্ক বজায় রাখে। এই রকম বহুপতিত্বকে ইংরেজীতে বলা হয় 'Adelphic polyandry’ বা ‘Fraternal polyandry (ii) নায়ার বহুপতিত্ব : এই বহুপতিত্ব ব্যবস্থায় একজন স্ত্রীর বহু পতি থাকে। পতিদের মধ্যে কোনো পারস্পারিক সম্পর্ক থাকে না। এক্ষেত্রে পতিরা পত্নীর ঘরে এসে তার সাথে মিলিত হয়। এর ফলে এক মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের সৃষ্টি হয়। একে ইংরেজীতে বলা হয় ‘Non-faternal polyandry”। এই বহুপতিত্ব ভারতের নায়ার সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা যায়।
❷ বহুপত্নীত্ব : প্রাচীনকাল থেকেই একজন পুরুষ একাধিক নারীকে পত্নী হিসেবে গ্রহণ করে একে বলা হয় বহুপত্নীত্ব। এক্ষেত্রে পত্নীরা সবাই সহোদর ভগ্নী নাও হতে পারে। সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন সাধারণত নারীর সংখ্যাধিক্য, খেতে খামারের কাজে সহযোগিতা, কোলিন্য প্রথা, বংশরক্ষার তাগিদ, ইসলাম ধর্মে অনুমোদন, বিচিত্র কামনা-বাসনা, যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ, সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠি ইত্যাদির জন্য এই ধরণের বিবাহ রীতি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাই একে ইংরেজীতে বলা হয় 'Sororal polygyny'.
❸ গোষ্ঠী বিবাহ : যখন একাধিক পুরুষের সঙ্গে একাধিক নারীর একই সময়ে বিবাহ সম্পাদিত হয়, তখন তাকে গোষ্ঠী বিবাহ বলা হয়। এই ধরণের বিবাহ গোষ্ঠী বিবাহের নজির হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই ধরণের বিবাহের অস্তিত্বের সম্পর্কে সমাজতান্ত্রিকদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ থাকলেও মার্ডক মনে করেন, ব্রাজিলের কাইগং উপজাতিদের মধ্যে অল্প বিস্তর এই প্রথা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও বিবাহকে আরও দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—স্থিরীকৃত বিবাহ ও রোমান্টিক বিবাহ।
উপসংহারঃ বিবাহ ব্যবস্থার বিবর্তনের ধারায় বিভিন্ন ধরণের বিবাহ প্রথা পরিলক্ষিত হয়, এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। বর্তমানে বিবাহের ধারণার সঙ্গে নৈতিক আদর্শের ধারণা সংযুক্ত হয়েছে। বিবাহ যে শুধু জৈবিক চাহিদা পূরণের উপায় মাত্র নয়, তা মানব সমাজ ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছে।