Wbuttepa b.ed 2nd-semester assignment :
১. সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য প্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন কোন বিষয়গুলিকে নথিভুক্ত করণ আবশ্যকীয় বলে মনে হয় এই বিষয় সম্পর্কে নতিদীর্ঘ আলোচনা করো?
✦ ভূমিকা (Introduction) : প্রতিটি বিদ্যালয় এক একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং এই সামাজিক প্রতিষ্ঠান (Social organization)-র একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা (Organizational planning) থাকবে
যা সংশ্লিষ্ট সমাজের শিক্ষাসহ অন্যান্য অনেক বিষয়েই উন্নয়নে সাহায্য করবে। কখনও সরকারি অর্থনৈতিক সাহায্য নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। অথবা বেসরকারি ভাবে কখনও সমাজের বহু মানুষের দান, অবদান এবং অর্থনৈতিক সাহায্যেও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। একটি স্বচ্ছ, দুর্নীতিহীন বিদ্যালয় পরিচালনাও সমাজের সকল মানুষ আশা করে থাকে। কিন্তু এই স্বচ্ছতা বজায় রাখা সহজে গড়ে ওঠা সম্ভব নয়, যদি না বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতি (Managing Committee) সঠিকভাবে গঠিত, মনোনীত বা নির্ধারিত হয়। এই নির্বাচন ও মনোনয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি চাই। যাতে সমাজের এবং প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে বিদ্যালয়ের সকল স্তরের কর্মী ও অন্যান্য মানুষজনের প্রতিনিধিত্ব থাকে।
✦ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে নথিভুক্ত করণ : বিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকে সমস্ত তথ্য ও নথি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করাও একান্ত জরুরি। এইজন্য বিদ্যালয় পরিচালন ব্যবস্থাকেও বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে অত্যন্ত যত্নশীল হতে হয়। বর্তমানে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে যে কয়েক ধরনের উচ্চপ্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে সেগুলি হল—
(1) সরকারি বিদ্যালয় ( Government School)
(2) সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয় (Government Aided School)
(3) সরকারি স্পনসর্ড বিদ্যালয় (Government Sponsored School)
(4) বেসরকারি বিদ্যালয় (Private/Self Financing School)
প্রত্যেক বিদ্যালয়ে পরিচালনার জন্য একটি করে পরিচালন সমিতি থাকে। প্রত্যেক প্রকার বিদ্যালয়ের জন্য পরিচালন সমিতির নাম হয় ভিন্ন ভিন্ন যেমন— (i) সরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে গভর্নিং বডি (Governing body) (ii) বেসরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বোর্ড অফ ডিরেক্টরর্স বা ট্রাস্টি বডি (Board of Directors/Trusty Body) (iii) সরকারি স্পনসর্ড বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট কমিটি (Management Committee) (iv) সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটি (Managing Committee)
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষা দফতরের বিশেষ নির্দেশিকায় বেশি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলি স্পনসর্ড বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। অপর একটি নির্দেশিকায় সরকার প্রতিটি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পরিচালন সমিতির একটি সাংগঠনিক গঠন কাঠামোর রূপরেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে পরিচালন সমিতির নির্বাচন বন্ধ হয়েছে এবং পরিচালন সমিতির কার্যকাল তিন বছর ধার্য হয়েছে।
(ক) শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকার সমিতি ও উপসমিতি (Committees & Sub-committees for Academic Purposes) : বিদ্যালয়ে শিখন ব্যবস্থার মূল্যায়নে বিদ্যালয় প্রশাসন ও পরিচালনা সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে মনে রাখতে হবে বিদ্যালয়ের প্রধান কার্য শিখন। সেই শিখন ঠিকমতো হলে ও পঠনপাঠনকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে শিক্ষা সংক্রান্ত নানা বিষয় যেমন—সময় তালিকা প্রস্তুতি, পাঠক্রমের বিশ্লেষণ, পরীক্ষা বা মূল্যায়ন, সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, শিক্ষামূলক ভ্রমণ, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা, খেলাধুলার চর্চা ও শিক্ষামূলক প্রদর্শনীর আয়োজন ইত্যাদিতে প্রধান শিক্ষকের সমিতি বা উপসমিতি গঠন করা দরকার।
(খ) বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের কমিটি (Different Committees in School) : বিদ্যালয়ের সুষ্ঠ পরিচালনার জন্য ও প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ের সমস্ত কাজ ও সমস্যা সুনিপুণভাবে শান্তি শৃঙ্খলার সাথে সমাধান করার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সমিতি ও উপসমিতি থাকে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কাজের ভিন্নতার উপর বিভিন্ন উপসমিতি গঠন করা হয়। তবে কতকগুলি সাধারণ কাজ সব বিদ্যালয়ে অবশ্যই করতে হয়। তাই প্রায় সব বিদ্যালয়ে সেই সমিতি বা উপসমিতিগুলি রাখতেই হয়। যেমন— শিক্ষা সংসদ ও অর্থনৈতিক উপসমিতি ইত্যাদি। সমিতি ও উপসমিতির একটি তালিকা দেওয়া হল— (i) অর্থনৈতিক উপসমিতি। (ii) সময় তালিকা প্রস্তুত করণ উপসমিতি। (iii) ভরতি সংক্রান্ত উপসমিতি। (iv) পরীক্ষা ও মূল্যায়ন উপসমিতি। (v) পুস্তক নির্বাচন উপসমিতি। (vi) পত্রিকা পরিচালন উপসমিতি। (vii) শিক্ষামূলক ভ্রমণ উপসমিতি। (viii) সাংস্কৃতিক উপসমিতি। (ix) খেলাধুলা সংক্রান্ত উপসমিতি। (x) লাইব্রেরী উপসমিতি। (xi) স্বায়ত্তশাসন উপসমিতি। (xii) বিল্ডিং উপসমিতি। (xiii) শৃঙ্খলা রক্ষা উপসমিতি। (xiv) স্কাউট/এন.সি.সি./এন.এস.এস. উপসমিতি।
(গ) বিদ্যালয়ের সময় তালিকা (Schools Time table) : সারা বছর ধরে বিদ্যালয়ের নানা কাজকর্ম সুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য, যেমন— একটি নির্দিষ্ট প্রয়োজন হয় একটি পরিকল্পনার। এই পরিকল্পনার একটি রূপ হল সময় তালিকা বা Time পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয় তেমনি প্রত্যেক দিনের কাজগুলিকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্যও tables । বিদ্যালয়ের একটি দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসম্পাদনের একটি রূপরেখা যা সূচিত বা নির্দেশ করে- (i) বিদ্যালয় দিবসের শুরু আর সমাপ্তির সময়। (ii) প্রতিটি শ্রেণির প্রতি পর্যায় বা পিরিয়ডের কার্যক্রমকে নিশ্চিত করে। (iii) বিষয় এবং তাদের কার্যাবলির। (iv) প্রতিটি পর্যায় বা পিরিয়ডে নির্ধারিত শিক্ষকের নাম এবং তাঁদের প্রত্যেকের নির্দিষ্ট বিষয়। (v) নির্দেশনামূলক কার্যাবলির সময় পরিসর।
(ঘ) বিদ্যালয়ের তথ্য সংরক্ষণ (Record Maintenance) : বিদ্যালয়ের শিখন ব্যবস্থায় নিত্য নৈমিত্তিক বিভিন্ন ঘটনা, পঞ্জী, চমকপ্রদ বিষয়, ইত্যাদির জন্য তথ্য সংরক্ষণ করা একান্ত জরুরি। এই তথ্য সংরক্ষণ বিদ্যালয়ের কার্যের যেমন ইতিহাস রক্ষা করে তেমনি ভবিষ্যতে চলার পথে ঐ ঐতিহাসিক তথ্য থেকে নানা পাথেয় সংগ্রহ করে উন্নত শিখন ব্যবস্থার আয়োজন করা সম্ভব হয়। তবে খুঁটিনাটি সব তথ্য রাখা সম্ভব না হলেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কয়েক ধরনের তথ্য একান্তই জরুরি সরকারি কাজে এবং শিক্ষক ছাত্র ও পাঠ্যক্রম পর্যালোচনার কাজে।
(ঙ) পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ (Curriculum Related Records): বিদ্যালয়ের শিখন ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে পাঠক্রম সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত অনেক তথ্য যেমন তার পর্যালোচনা, ইতিহাস, বিবর্তন এবং বর্তমান রূপরেখা ইত্যাদি অনেক কিছুই জরুরি এবং ভবিষ্যতের জন্যও তা এক দিশা দিতে পারে। তাই প্রতিটি বিদ্যালয়ই পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত যে সব তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে তা নিম্নে উল্লেখ করা হল— (i) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমের (Curriculum) বিস্তারিত বিবরণ। (ii) প্রত্যেকটি শ্রেণির পাঠ্যসূচি (Syllabus) সংক্রান্ত তথ্য। (iii) প্রত্যেকটি পাঠের ভাগ সংক্রান্ত তথ্য। (iv) ত্রৈমাসিক পাঠ্যক্রম কার্যাবলির অগ্রগতি। (v) প্রতিটি বিষয়ের একক ভিত্তিক পদ্ধতিগত পাঠ বিশ্লেষণ (Pedagogic Analysis ) । (vi) ভৌগোলিক মানচিত্রের তালিকা। (vii) বিভিন্ন বিষয়ের যে সমস্ত শিক্ষা প্রদীপন (TLM) সংগ্রহ, তৈরি করা, গেছে বা কেনা হয়েছে তার তালিকা। পাওয়া (viii) ভাষা বিজ্ঞান পরীক্ষাগারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির তালিকা। (ix) ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যালয় স্তরের পাঠক্রম। (x) বিভিন্ন দেশের বিদ্যালয়ের স্তরের পাঠক্রম। (xi) বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকের নাম ও সংখ্যার তালিকা। (xii) বিভিন্ন বিষয়ের অন্য সহযোগী পুস্তকের তালিকা, লেখকের নাম, উৎস এবং মূল্যসমেত। (xiii) প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্ন ব্যাঙ্ক। (xiv) প্রতিবৎসর বাৎসরিক পরীক্ষার প্রশ্নসমূহ। (xv) পূর্বের দিনে বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যক্রম।
যাইহোক, পরিশেষে বলতে চাই যে এই বিষয় গুলি সংক্রান্ত কাজের জন্য এক বা একাধিক শিক্ষককে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিতে হবে। তিনি যত্নপূর্বক বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহার করে এই ধরনের তথ্য সংরক্ষণের চেষ্টা করতে পরেন। এছাড়া প্রতিটি রেজিস্টার বা খাতা যত্নের সাথে বর্তমান দিন পর্যন্ত হিসাব ঠিক করে নেবার জন্য অন্যান্য শিক্ষকদের বা ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য নেবেন। এটি বিদ্যালয়ের একটি
গুৰুত্বপূর্ণ সম্পদ এবংএই বিষয়গুলিকে নথিভুক্ত করণ আবশ্যকীয় বা প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়।
২. কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়, সংখ্যালঘু এবং বিশেষভাবে চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার স্বার্থ কিভাবে রক্ষা করা সম্ভব এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো?
✦ ভূমিকা (Introduction) : বিদ্যালয় বলতে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পাঠ্যক্রম, মূল্যায়ন—এসব কথাই আগে মনে আসে। কিন্তু শুধুমাত্র এগুলির সাহায্যে শিক্ষার কাজ চলতে পারে না। শিক্ষার কাজ বা প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ও সার্থক করার জন্য চাই সহায়ক উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা। এই উপকরণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পাঠ্যক্রম, বিদ্যালয়ের বাড়িঘর, প্রশাসন সব মিলিয়ে গড়ে ওঠে শিক্ষাব্যবস্থাপনা (Teaching Learning System)। শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়নে একথা মনে রাখা একান্তই আবশ্যক যে শিক্ষার্থী অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীই শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্র বিন্দু। তাদের ঘিরেই শিক্ষা ব্যবস্থার বিশেষ করে বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার এতো ভাবনা চিন্তা, এতো আয়োজন। শিক্ষার মধ্য দিয়েই আগামী দিনে দেশ তথা বিশ্ব পাবে এক সুনাগরিক যে কিনা সৎ, নিষ্ঠাবান, চরিত্রবান, একজন মানুষই শুধু হবে না, দেশের প্রতিটি ভালো কাজে তার কিছু না কিছু অবদান থাকবে।
✦ তপশিলি জাতি এবং তপশিলি উপজাতি (SC/ST) :
শিখন ব্যবস্থার মূল্যায়নে মানব সম্পদ হিসেবে তপশিলি জাতি সম্পর্কে আলোচনায় প্রথমেই একথা বলা যায় যে-কোনো মানুষই কোনো প্রতিষ্ঠানের সম্পদ। বিদ্যালয় একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর মূল কাজ হচ্ছে শিখন-শিক্ষণ পরিবেশ গড়ে তোলা এবং মানব সম্পদ সৃষ্টি বা উন্নয়নে একান্ত সাহায্য করা। ভারতের সংবিধানের ভিত্তিতে সমগ্র দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া বেশ কিছু জাতিকে তপশিলি জাতি (Scheduled Caste/ SC) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া অতি পিছিয়ে পড়া কিছু আদিম অধিবাসী সহ জনজাতিকে তপশিলি উপজাতি (Scheduled Tribe / ST) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের সংবিধানের এই অংশের মূল লক্ষ্য হল সাধারণ উন্নত জাতি (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য)। যে সমস্ত পিছিয়ে পড়া জনজাতি রয়েছে শিক্ষাসহ সমগ্র ক্ষেত্রে তাদের বেশ কিছুটা সুবিধা দিয়ে অতি সত্বর উন্নত করে নেওয়া হবে। এই জন্যই শিক্ষাসহ সমস্ত ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গে এদের জন্য যথাক্রমে 22% (SC) এবং 6% (SC) সংরক্ষণে ব্যবস্থা করা হয়। সংবিধানের 46নং ধারা বলে দুর্বলতর শ্রেণির শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা করা হয়। এই ধারায় বলা হল যে, সরকার দুর্বলতর শ্রেণির মানুষের বিশেষত তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি শ্রেণির শিক্ষা এবং আর্থিক স্বার্থে যাবতীয় উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা সযত্নে গ্রহণ করবে এবং তাদের সকল প্রকার সামাজিক অবিচার ও সকল প্রকার শোষণ থেকে রক্ষা করবে।
✦ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (Other Backward Class) : ভারতবর্ষের সংবিধানে বাবাসাহেব আম্বেদকরের বিশেষ প্রচেষ্টায় যেমন তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতির উন্নয়নের জন্য শিক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে বিশেষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তেমনি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিদের উন্নয়নের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কার্যকরী রূপ পায় “মন্ডল কমিশন” হিসেবে। শিক্ষাসহ সমস্ত কর্মক্ষেত্রেই পনেরো (15%) শতাংশ অতিরিক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য বিদ্যালয়গুলিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পিছিয়ে পড়া অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সংযোজন ঘটেছে। ফলে উচ্চ প্রাথমিক স্তর তো বটেই, উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এই সংরক্ষণও মানব সম্পদের বিশেষ উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
✦ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় (Minority) :
ভারতের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বাস যাদের ধর্ম, ভাষা এবং সংস্কৃতি পরস্পরের থেকে পৃথক। ভারতে সংখ্যালঘু বলতে আমরা সাধারণভাবে বুঝি (১) ধর্মীয় সংখ্যালঘু (২) ভাষাগত সংখ্যালঘু (৩) কৃষ্টিগত সংখ্যালঘু মানবসম্পদ হিসেবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলিম ছাত্রীরা বা মেয়েরা নানা কারণে শিক্ষার আঙিনার বাইরে রয়ে যাওয়ায় অনেক মানব সম্পদের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটছে না। বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এর বিশেষ প্রচেষ্টায় দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সংখ্যালঘু কমিশন কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ায় সংখ্যালঘু মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি সংখ্যায় বিদ্যালয় মুখী হচ্ছে। মাদ্রাসাগুলিকে আধুনিক শিক্ষার বিস্তারের জন্য যথেষ্ট অনুদান দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পাঠক্রমের আধুনিকীকরণ ঘটছে।
✦ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু : যে সমস্ত শিশুরা কোনো না কোনো ভাবে দৈহিক বা মানসিকভাবে অন্যান্য সাধারণ স্বাভাবিক শিশুদের সক্ষমতা থেকে অল্প বা যথেষ্ট পরিমানে দুর্বল এবং যে সমস্ত শিশুদের বিশেষ সাহায্যের প্রয়োজন হয় জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মে, তাদের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলা যায়। এই সমস্ত শিশুরা শিক্ষার্থী হিসেবে স্বাভাবিক বিদ্যালয় বা বিশেষ বিদ্যালয়ে শিখনের জন্য যখন আসে তখনই প্রয়োজন হয় বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থার এবং তারই যথাযথ মূল্যায়ন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন আগামীদিনে শিশু-শিক্ষার্থীকে সক্ষম করে মানব সম্পদে পরিণত করতে পারে।
✦ ভূমিকা (Introduction) : প্রতিটি বিদ্যালয় এক একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং এই সামাজিক প্রতিষ্ঠান (Social organization)-র একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা (Organizational planning) থাকবে
যা সংশ্লিষ্ট সমাজের শিক্ষাসহ অন্যান্য অনেক বিষয়েই উন্নয়নে সাহায্য করবে। কখনও সরকারি অর্থনৈতিক সাহায্য নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। অথবা বেসরকারি ভাবে কখনও সমাজের বহু মানুষের দান, অবদান এবং অর্থনৈতিক সাহায্যেও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। একটি স্বচ্ছ, দুর্নীতিহীন বিদ্যালয় পরিচালনাও সমাজের সকল মানুষ আশা করে থাকে। কিন্তু এই স্বচ্ছতা বজায় রাখা সহজে গড়ে ওঠা সম্ভব নয়, যদি না বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতি (Managing Committee) সঠিকভাবে গঠিত, মনোনীত বা নির্ধারিত হয়। এই নির্বাচন ও মনোনয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি চাই। যাতে সমাজের এবং প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে বিদ্যালয়ের সকল স্তরের কর্মী ও অন্যান্য মানুষজনের প্রতিনিধিত্ব থাকে।
✦ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে নথিভুক্ত করণ : বিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকে সমস্ত তথ্য ও নথি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করাও একান্ত জরুরি। এইজন্য বিদ্যালয় পরিচালন ব্যবস্থাকেও বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে অত্যন্ত যত্নশীল হতে হয়। বর্তমানে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে যে কয়েক ধরনের উচ্চপ্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে সেগুলি হল—
(1) সরকারি বিদ্যালয় ( Government School)
(2) সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয় (Government Aided School)
(3) সরকারি স্পনসর্ড বিদ্যালয় (Government Sponsored School)
(4) বেসরকারি বিদ্যালয় (Private/Self Financing School)
প্রত্যেক বিদ্যালয়ে পরিচালনার জন্য একটি করে পরিচালন সমিতি থাকে। প্রত্যেক প্রকার বিদ্যালয়ের জন্য পরিচালন সমিতির নাম হয় ভিন্ন ভিন্ন যেমন— (i) সরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে গভর্নিং বডি (Governing body) (ii) বেসরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বোর্ড অফ ডিরেক্টরর্স বা ট্রাস্টি বডি (Board of Directors/Trusty Body) (iii) সরকারি স্পনসর্ড বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট কমিটি (Management Committee) (iv) সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটি (Managing Committee)
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষা দফতরের বিশেষ নির্দেশিকায় বেশি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলি স্পনসর্ড বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। অপর একটি নির্দেশিকায় সরকার প্রতিটি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পরিচালন সমিতির একটি সাংগঠনিক গঠন কাঠামোর রূপরেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে পরিচালন সমিতির নির্বাচন বন্ধ হয়েছে এবং পরিচালন সমিতির কার্যকাল তিন বছর ধার্য হয়েছে।
(ক) শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকার সমিতি ও উপসমিতি (Committees & Sub-committees for Academic Purposes) : বিদ্যালয়ে শিখন ব্যবস্থার মূল্যায়নে বিদ্যালয় প্রশাসন ও পরিচালনা সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে মনে রাখতে হবে বিদ্যালয়ের প্রধান কার্য শিখন। সেই শিখন ঠিকমতো হলে ও পঠনপাঠনকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে শিক্ষা সংক্রান্ত নানা বিষয় যেমন—সময় তালিকা প্রস্তুতি, পাঠক্রমের বিশ্লেষণ, পরীক্ষা বা মূল্যায়ন, সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, শিক্ষামূলক ভ্রমণ, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা, খেলাধুলার চর্চা ও শিক্ষামূলক প্রদর্শনীর আয়োজন ইত্যাদিতে প্রধান শিক্ষকের সমিতি বা উপসমিতি গঠন করা দরকার।
(খ) বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের কমিটি (Different Committees in School) : বিদ্যালয়ের সুষ্ঠ পরিচালনার জন্য ও প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ের সমস্ত কাজ ও সমস্যা সুনিপুণভাবে শান্তি শৃঙ্খলার সাথে সমাধান করার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সমিতি ও উপসমিতি থাকে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কাজের ভিন্নতার উপর বিভিন্ন উপসমিতি গঠন করা হয়। তবে কতকগুলি সাধারণ কাজ সব বিদ্যালয়ে অবশ্যই করতে হয়। তাই প্রায় সব বিদ্যালয়ে সেই সমিতি বা উপসমিতিগুলি রাখতেই হয়। যেমন— শিক্ষা সংসদ ও অর্থনৈতিক উপসমিতি ইত্যাদি। সমিতি ও উপসমিতির একটি তালিকা দেওয়া হল— (i) অর্থনৈতিক উপসমিতি। (ii) সময় তালিকা প্রস্তুত করণ উপসমিতি। (iii) ভরতি সংক্রান্ত উপসমিতি। (iv) পরীক্ষা ও মূল্যায়ন উপসমিতি। (v) পুস্তক নির্বাচন উপসমিতি। (vi) পত্রিকা পরিচালন উপসমিতি। (vii) শিক্ষামূলক ভ্রমণ উপসমিতি। (viii) সাংস্কৃতিক উপসমিতি। (ix) খেলাধুলা সংক্রান্ত উপসমিতি। (x) লাইব্রেরী উপসমিতি। (xi) স্বায়ত্তশাসন উপসমিতি। (xii) বিল্ডিং উপসমিতি। (xiii) শৃঙ্খলা রক্ষা উপসমিতি। (xiv) স্কাউট/এন.সি.সি./এন.এস.এস. উপসমিতি।
(গ) বিদ্যালয়ের সময় তালিকা (Schools Time table) : সারা বছর ধরে বিদ্যালয়ের নানা কাজকর্ম সুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য, যেমন— একটি নির্দিষ্ট প্রয়োজন হয় একটি পরিকল্পনার। এই পরিকল্পনার একটি রূপ হল সময় তালিকা বা Time পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয় তেমনি প্রত্যেক দিনের কাজগুলিকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্যও tables । বিদ্যালয়ের একটি দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসম্পাদনের একটি রূপরেখা যা সূচিত বা নির্দেশ করে- (i) বিদ্যালয় দিবসের শুরু আর সমাপ্তির সময়। (ii) প্রতিটি শ্রেণির প্রতি পর্যায় বা পিরিয়ডের কার্যক্রমকে নিশ্চিত করে। (iii) বিষয় এবং তাদের কার্যাবলির। (iv) প্রতিটি পর্যায় বা পিরিয়ডে নির্ধারিত শিক্ষকের নাম এবং তাঁদের প্রত্যেকের নির্দিষ্ট বিষয়। (v) নির্দেশনামূলক কার্যাবলির সময় পরিসর।
(ঘ) বিদ্যালয়ের তথ্য সংরক্ষণ (Record Maintenance) : বিদ্যালয়ের শিখন ব্যবস্থায় নিত্য নৈমিত্তিক বিভিন্ন ঘটনা, পঞ্জী, চমকপ্রদ বিষয়, ইত্যাদির জন্য তথ্য সংরক্ষণ করা একান্ত জরুরি। এই তথ্য সংরক্ষণ বিদ্যালয়ের কার্যের যেমন ইতিহাস রক্ষা করে তেমনি ভবিষ্যতে চলার পথে ঐ ঐতিহাসিক তথ্য থেকে নানা পাথেয় সংগ্রহ করে উন্নত শিখন ব্যবস্থার আয়োজন করা সম্ভব হয়। তবে খুঁটিনাটি সব তথ্য রাখা সম্ভব না হলেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কয়েক ধরনের তথ্য একান্তই জরুরি সরকারি কাজে এবং শিক্ষক ছাত্র ও পাঠ্যক্রম পর্যালোচনার কাজে।
(ঙ) পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ (Curriculum Related Records): বিদ্যালয়ের শিখন ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে পাঠক্রম সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত অনেক তথ্য যেমন তার পর্যালোচনা, ইতিহাস, বিবর্তন এবং বর্তমান রূপরেখা ইত্যাদি অনেক কিছুই জরুরি এবং ভবিষ্যতের জন্যও তা এক দিশা দিতে পারে। তাই প্রতিটি বিদ্যালয়ই পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত যে সব তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে তা নিম্নে উল্লেখ করা হল— (i) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমের (Curriculum) বিস্তারিত বিবরণ। (ii) প্রত্যেকটি শ্রেণির পাঠ্যসূচি (Syllabus) সংক্রান্ত তথ্য। (iii) প্রত্যেকটি পাঠের ভাগ সংক্রান্ত তথ্য। (iv) ত্রৈমাসিক পাঠ্যক্রম কার্যাবলির অগ্রগতি। (v) প্রতিটি বিষয়ের একক ভিত্তিক পদ্ধতিগত পাঠ বিশ্লেষণ (Pedagogic Analysis ) । (vi) ভৌগোলিক মানচিত্রের তালিকা। (vii) বিভিন্ন বিষয়ের যে সমস্ত শিক্ষা প্রদীপন (TLM) সংগ্রহ, তৈরি করা, গেছে বা কেনা হয়েছে তার তালিকা। পাওয়া (viii) ভাষা বিজ্ঞান পরীক্ষাগারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির তালিকা। (ix) ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যালয় স্তরের পাঠক্রম। (x) বিভিন্ন দেশের বিদ্যালয়ের স্তরের পাঠক্রম। (xi) বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকের নাম ও সংখ্যার তালিকা। (xii) বিভিন্ন বিষয়ের অন্য সহযোগী পুস্তকের তালিকা, লেখকের নাম, উৎস এবং মূল্যসমেত। (xiii) প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্ন ব্যাঙ্ক। (xiv) প্রতিবৎসর বাৎসরিক পরীক্ষার প্রশ্নসমূহ। (xv) পূর্বের দিনে বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যক্রম।
যাইহোক, পরিশেষে বলতে চাই যে এই বিষয় গুলি সংক্রান্ত কাজের জন্য এক বা একাধিক শিক্ষককে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিতে হবে। তিনি যত্নপূর্বক বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহার করে এই ধরনের তথ্য সংরক্ষণের চেষ্টা করতে পরেন। এছাড়া প্রতিটি রেজিস্টার বা খাতা যত্নের সাথে বর্তমান দিন পর্যন্ত হিসাব ঠিক করে নেবার জন্য অন্যান্য শিক্ষকদের বা ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য নেবেন। এটি বিদ্যালয়ের একটি
গুৰুত্বপূর্ণ সম্পদ এবংএই বিষয়গুলিকে নথিভুক্ত করণ আবশ্যকীয় বা প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়।
২. কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়, সংখ্যালঘু এবং বিশেষভাবে চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার স্বার্থ কিভাবে রক্ষা করা সম্ভব এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো?
✦ ভূমিকা (Introduction) : বিদ্যালয় বলতে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পাঠ্যক্রম, মূল্যায়ন—এসব কথাই আগে মনে আসে। কিন্তু শুধুমাত্র এগুলির সাহায্যে শিক্ষার কাজ চলতে পারে না। শিক্ষার কাজ বা প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ও সার্থক করার জন্য চাই সহায়ক উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা। এই উপকরণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পাঠ্যক্রম, বিদ্যালয়ের বাড়িঘর, প্রশাসন সব মিলিয়ে গড়ে ওঠে শিক্ষাব্যবস্থাপনা (Teaching Learning System)। শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়নে একথা মনে রাখা একান্তই আবশ্যক যে শিক্ষার্থী অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীই শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্র বিন্দু। তাদের ঘিরেই শিক্ষা ব্যবস্থার বিশেষ করে বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার এতো ভাবনা চিন্তা, এতো আয়োজন। শিক্ষার মধ্য দিয়েই আগামী দিনে দেশ তথা বিশ্ব পাবে এক সুনাগরিক যে কিনা সৎ, নিষ্ঠাবান, চরিত্রবান, একজন মানুষই শুধু হবে না, দেশের প্রতিটি ভালো কাজে তার কিছু না কিছু অবদান থাকবে।
✦ তপশিলি জাতি এবং তপশিলি উপজাতি (SC/ST) :
শিখন ব্যবস্থার মূল্যায়নে মানব সম্পদ হিসেবে তপশিলি জাতি সম্পর্কে আলোচনায় প্রথমেই একথা বলা যায় যে-কোনো মানুষই কোনো প্রতিষ্ঠানের সম্পদ। বিদ্যালয় একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর মূল কাজ হচ্ছে শিখন-শিক্ষণ পরিবেশ গড়ে তোলা এবং মানব সম্পদ সৃষ্টি বা উন্নয়নে একান্ত সাহায্য করা। ভারতের সংবিধানের ভিত্তিতে সমগ্র দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া বেশ কিছু জাতিকে তপশিলি জাতি (Scheduled Caste/ SC) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া অতি পিছিয়ে পড়া কিছু আদিম অধিবাসী সহ জনজাতিকে তপশিলি উপজাতি (Scheduled Tribe / ST) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের সংবিধানের এই অংশের মূল লক্ষ্য হল সাধারণ উন্নত জাতি (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য)। যে সমস্ত পিছিয়ে পড়া জনজাতি রয়েছে শিক্ষাসহ সমগ্র ক্ষেত্রে তাদের বেশ কিছুটা সুবিধা দিয়ে অতি সত্বর উন্নত করে নেওয়া হবে। এই জন্যই শিক্ষাসহ সমস্ত ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গে এদের জন্য যথাক্রমে 22% (SC) এবং 6% (SC) সংরক্ষণে ব্যবস্থা করা হয়। সংবিধানের 46নং ধারা বলে দুর্বলতর শ্রেণির শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা করা হয়। এই ধারায় বলা হল যে, সরকার দুর্বলতর শ্রেণির মানুষের বিশেষত তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি শ্রেণির শিক্ষা এবং আর্থিক স্বার্থে যাবতীয় উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা সযত্নে গ্রহণ করবে এবং তাদের সকল প্রকার সামাজিক অবিচার ও সকল প্রকার শোষণ থেকে রক্ষা করবে।
✦ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (Other Backward Class) : ভারতবর্ষের সংবিধানে বাবাসাহেব আম্বেদকরের বিশেষ প্রচেষ্টায় যেমন তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতির উন্নয়নের জন্য শিক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে বিশেষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তেমনি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিদের উন্নয়নের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কার্যকরী রূপ পায় “মন্ডল কমিশন” হিসেবে। শিক্ষাসহ সমস্ত কর্মক্ষেত্রেই পনেরো (15%) শতাংশ অতিরিক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য বিদ্যালয়গুলিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পিছিয়ে পড়া অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সংযোজন ঘটেছে। ফলে উচ্চ প্রাথমিক স্তর তো বটেই, উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এই সংরক্ষণও মানব সম্পদের বিশেষ উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
✦ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় (Minority) :
ভারতের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বাস যাদের ধর্ম, ভাষা এবং সংস্কৃতি পরস্পরের থেকে পৃথক। ভারতে সংখ্যালঘু বলতে আমরা সাধারণভাবে বুঝি (১) ধর্মীয় সংখ্যালঘু (২) ভাষাগত সংখ্যালঘু (৩) কৃষ্টিগত সংখ্যালঘু মানবসম্পদ হিসেবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলিম ছাত্রীরা বা মেয়েরা নানা কারণে শিক্ষার আঙিনার বাইরে রয়ে যাওয়ায় অনেক মানব সম্পদের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটছে না। বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এর বিশেষ প্রচেষ্টায় দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সংখ্যালঘু কমিশন কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ায় সংখ্যালঘু মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি সংখ্যায় বিদ্যালয় মুখী হচ্ছে। মাদ্রাসাগুলিকে আধুনিক শিক্ষার বিস্তারের জন্য যথেষ্ট অনুদান দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পাঠক্রমের আধুনিকীকরণ ঘটছে।
✦ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু : যে সমস্ত শিশুরা কোনো না কোনো ভাবে দৈহিক বা মানসিকভাবে অন্যান্য সাধারণ স্বাভাবিক শিশুদের সক্ষমতা থেকে অল্প বা যথেষ্ট পরিমানে দুর্বল এবং যে সমস্ত শিশুদের বিশেষ সাহায্যের প্রয়োজন হয় জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মে, তাদের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলা যায়। এই সমস্ত শিশুরা শিক্ষার্থী হিসেবে স্বাভাবিক বিদ্যালয় বা বিশেষ বিদ্যালয়ে শিখনের জন্য যখন আসে তখনই প্রয়োজন হয় বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থার এবং তারই যথাযথ মূল্যায়ন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন আগামীদিনে শিশু-শিক্ষার্থীকে সক্ষম করে মানব সম্পদে পরিণত করতে পারে।