শিক্ষক দিবস speech
Teacher's Day Speech In Bengali 2022
শিক্ষক দিবসের বক্তব্য
তুলে ধরেন পরিপূর্ণ জীবনের আদর্শ। সেজন্যই জাতীয় জীবনে শিক্ষকদের গুরুত্ব এত বেশি, সমাজের কাছে এত বেশি তাঁদের মান্যতা। আর তাই তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য একটি দিনকে আলাদা করে রাখা হয়েছে।
৫ই সেপ্টেম্বরকে শিক্ষক দিবসরূপে বেছে নেওয়ারও একটা তাৎপর্য আছে। এই দিনটি আমাদের দেশের এক মহান শিক্ষাব্রতীর জন্মদিন। সেই শিক্ষাব্রতীর নাম সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মাদ্রাজ (চেন্নাই) শহরের চল্লিশ মাইল দূরে তিরুতানি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯০৫ সালে দর্শনশাস্ত্রে এম.এ পাশ করেন তিনি। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পর ১৯২১ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকরূপে যোগ দেন। সাদর আমন্ত্রণ পেয়েছেন বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও। স্বদেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রাধাকৃষ্ণণ শিক্ষাক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। সর্বজনমান্য এই শিক্ষক ১৯৬২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতিপদে বৃত হন। ‘The Philosophy of Rabindranath Tagore' নামে তিনি রচনা করেন এক অসামান্য গ্রন্থ। শিক্ষাক্ষেত্রে চিরস্মরণীয় এই আদর্শ শিক্ষকের জন্মদিনটিকে শিক্ষক দিবসরূপে নির্বাচন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে হয়।
প্রতিবছর শিক্ষক দিবস উদ্যাপন শিক্ষককুলের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে যেন অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। একসময় আর্থিক দিক থেকে শিক্ষকতার জীবিকাটি তেমন আকর্ষণীয় ছিল না। বহু শিক্ষকের অবসর জীবন অতিবাহিত হত চরম অর্থ-সংকটের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু আজ আর সেই সমস্যা নেই। সরকার এখন এ বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী। এখন শিক্ষকতার জীবিকা আর পাঁচটা আকর্ষণীয় জীবিকার পর্যায়েই পড়ে। তবু আর পাঁচটা জীবিকা থেকে এই জীবিকা স্বতন্ত্র। এই জীবিকা শুধু জীবিকামাত্র নয়, এ এক মহান ব্রত। দেশের ভবিষ্যতের দায়িত্ব শিক্ষকসমাজের ওপর। শিক্ষক দিবস সেই দায়িত্বের কথা প্রতিবছর বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়।
সর্বজনশ্রদ্ধেয় সর্বপল্লী রাধাকৃয়নের আদর্শ সামনে রেখে শিক্ষক দিবস পালন শুধু শিক্ষকসমাজের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন মাত্র নয়। এ দিবস পালনের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার গুরুত্বের দিকটিকেও যেন আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকার করা হয়। এখনও আমাদের দেশের বহু মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। তাই শিক্ষক দিবসকে সার্বিক শিক্ষা-প্রসারের সংকল্প-দিবস হিসেবেও গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।
শিক্ষক দিবস ভাষণ
এই দিনটি সম্পর্কে জানতে গেলে একজনের কথাই আমাদের মনে আসে যিনি হলেন ড: সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ। আমরা সবাই জানি ৫ ই সেপ্টেম্বর ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এর জন্মদিন। ১৮৮৮ সালে আজকের দিনে তামিলনাড়ুর তিরুতানি এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন। ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, সর্বোপরি একজন প্রকৃত শিক্ষক। তিনি তার জীবনে চল্লিশ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি ছাত্রদের জীবনে শিক্ষকদের অবদান এবং ভূমিকার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি দেশের অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় যেমন - বানারস,চেন্নাই, কলকাতা, মহীশূর এবং লন্ডনে অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন একজন শিক্ষক এমন একজন ব্যক্তি যিনি যুব সমাজকে দেশের ভবিষ্যৎ হিসেবে প্রস্তুত করেন। এই কারণে তিনি অধ্যাপকের এই দায়িত্ব এত আন্তরিকতার সাথে পালন করেছেন এবং সর্বদা তার ছাত্রদেরকে ভালো মূল্যবোধ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
শিক্ষকতা পেশায় সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি 1949 সালে বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৫৪ সালে ভারতরত্ন সম্মান পান। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ৫ই সেপ্টেম্বর দিনটিতে তিনি যখন নিজের কার্যালয়ে পৌঁছান তখন সেখানে তার কিছু গুণমুগ্ধ ছাত্র ও বন্ধু আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন তার জন্মদিন পালন করবেন বলে। তবে তিনি কার্যালয়ে পৌঁছার পর জানিয়ে দেন কোনরকম সেলিব্রেশন করতে চান না তবে তিনি তার ছাত্রদের এটাও বলেন এই দিনটাকে বিশেষ করে রাখতে। ৫ ই সেপ্টেম্বর দিনটা দেশের শিক্ষকদের উৎসর্গ করা হোক তবে তিনি অধিক সম্মানিত বোধ করবেন। সেই থেকে শুরু হয় শিক্ষক দিবস পালন করা যা এখনো সকল ভারতবাসী তাকে এবং সমস্ত শিক্ষকদের সম্মান জানানোর জন্য পালন করে থাকে।
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ বলেছিলেন দেশের সবথেকে সেরা মস্তিষ্কের অধিকারী হলেন একজন শিক্ষক। শিক্ষকেরাই তৈরি করেন ছাত্রদের কে দিয়ে আগামী ভবিষ্যতের এক উন্নত দেশ। শিক্ষক দিবসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটি আমরা আমাদের শিক্ষকদের প্রচেষ্টা এবং কাজের প্রতি শ্রদ্ধার চিহ্ন হিসেবে উদযাপন করি। একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের ভূমিকা যে গুরুত্বপূর্ণ তা নতুন করে বলার কিছু নেই। শিক্ষকতা পেশা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ গুলোর মধ্যে একটি। কারণ তাদের রয়েছে তরুণদের শিক্ষিত করার দায়িত্ব। তাই সমাজের মেরুদন্ড হলেন শিক্ষক। একমাত্র শিক্ষকেরাই পারেন এই সমাজকে সঠিক পথে চালনা করতে। কবে যে শুধুমাত্র পড়াশোনার ক্ষেত্রে হবে তা নয় থাকতে পারে জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রেই। একজন আদর্শ শিক্ষক সব সময় তার ছাত্রদের স্বার্থকে বিবেচনায় নেন এবং তাদের যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দেন। তিনি যে পড়ুয়াকে শুধু শেখাবেন তা নয়, তিনি তাকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেবেন। ব্যর্থতায় পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেবেন, সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেবেন। তিনি তাকে শুধু সফল নয়, সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হতে শেখাবেন।
একজন শিক্ষককে মোমবাতের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে, কেননা মোমবাতি যেমন নিজে পুড়ে অন্যের পথ প্রদর্শন করে তেমনি শিক্ষক সারা জীবন ধরে তার মেধার মাধ্যমে শিক্ষাদান করে অন্যের পথ প্রদর্শন করে। তাই একজন সফল মানুষের পেছনে একজন শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। প্রতিবছর ছোট-বড় সকলেই নিজেদের সাধ্যমত শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। ফুল, চকলেট, গিফট, আরো কত কিছুর আয়োজন করা হয়। এই একটা দিন শিক্ষকদের থেকে কোন বকাঝকা নেই এক কথায় তাদের ভয় পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আনন্দ অনুষ্ঠান তার সাথে খাওয়া-দাওয়া হই হই করে কেটে যায় গোটা দিন। সঠিক শিক্ষার আলোই শিক্ষিত হোক সব ক্ষুদ্র প্রান। কিন্তু এই একই দিনের ভালোবাসা সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষকদের সঠিক সম্মান প্রদর্শন করা হয় না। একজন শিক্ষক তিনি সব সময়ের জন্যই শিক্ষক। শিক্ষক ছাড়া যোগ্যসমাজ ও উজ্জ্বল জীবন কল্পনাতীত। প্রতিটা দিনেই প্রত্যেকটা শিক্ষককেই সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা উচিত।
তাই শিক্ষকদের সম্মান শিক্ষক দিবসের মধ্যে বা একটা দিনের মতো সীমাবদ্ধ করে রাখা উচিতও নয়। প্রতিটা দিনই আমাদের শিক্ষক দিবস মনে করা উচিত। তবে শিক্ষকদের আসর সম্মান প্রদর্শন করা যাবে। আজকের এই বক্তব্যটি ড: এপিজে আবদুল কালাম এর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি- teaching is a very noble profession that shapes the character caliber and future of an individual if the people remember me as a good teacher that will be the biggest Honours for me.অর্থাৎ শিক্ষকতা খুব মহান একটি পেশা যেটা কারোর চরিত্র ক্ষমতা এবং ভবিষ্যৎ গঠন করে। যদি মানুষজন আমাকে একজন ভালো শিক্ষক হিসেবে মনে রাখে তাহলে এটাই হবে আমার কাছে সবচেয়ে বড়ো সম্মান।