Free Download 2023 Madhymik Bengali Question With Answer
- File Name - 2023 Madhymik Bengali Question
- Quality : HD
- Size : 4.MB
- Total Page : 30

Madhyamik Bengali Important Questions
❐ কমবেশি ১৫০ শব্দে যে কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :
- প্রশ্নঃ ‘নদীর বিদ্রোহ’ অবলম্বনে নদীর প্রতি নদেরচাঁদের অকৃত্রিম ভালোবাসার পরিচয় দাও।
- প্রশ্নঃ ‘তপন আর পড়তে পারে না। বোবার মতো বসে থাকে।’ – তপনের এমন অবস্থার কারণ বর্ণনা করো।
- প্রশ্নঃ ‘অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না’ – হরিদা কী ভুল করেছিল? অদৃষ্ট ক্ষমা না করার পরিণাম কী হয়েছিল?
- প্রশ্নঃ ‘অমৃত সত্যি তার বাবা-মাকে খুব জ্বালিয়েছিল’ – অমৃত কীভাবে বাবা-মাকে জ্বালতন করেছিল? অবশেষে অমৃতের মা কী করেছিল?
- প্রশ্নঃ ও আমাকে শিখিয়েছে, খাঁটি জিনিস কাকে বলে।’ – কে, কাকে শিখিয়েছে? ‘খাঁটি জিনিস’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
- প্রশ্নঃ জগদীশবাবুর বাড়ি হরিদা বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল, তা বর্ণনা করো।
- প্রশ্নঃ ‘অদল-বদল’ গল্পে পারস্পরিক সম্প্রীতির যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা নিজের ভাষায় লেখো।
- প্রশ্নঃ ‘খাঁটি মানুষ তো নয়, এই বহুরূপীর জীবন এর বেশি কী আশা করতে পারে?’ – এই উক্তির প্রেক্ষিতে হরিদার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
- প্রশ্নঃ ‘শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তখন’ – তপনের কীসের দুঃখ? দুঃখের মুহূর্তে সে কী সংকল্প করে?
- প্রশ্নঃ ‘তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপান করিল’ - কে হাসি গোপন করল? হাসি পাওয়ার কারণ কী?
১. ‘নদীর বিদ্রোহ’ অবলম্বনে নদীর প্রতি নদেরচাঁদের অকৃত্রিম ভালোবাসার পরিচয় দাও।
উত্তরঃ বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে ত্রিশ বছর বয়সি স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদের চরিত্রের সঙ্গে নদীর প্রতি ভালোবাসা সম্পৃক্ত।
❐ অকৃত্রিম ভালোবাসার পরিচয় : নদীকে কেন্দ্র করে নদেরচাঁদের জীবন আবর্তিত হয়। নদীর তীরে জন্ম এবং বড়ো হওয়ায় নদীর প্রতি তার এক গভীর আবেগ তৈরি হয়। তাই দেশের ক্ষীণস্রোতা, নির্জীব নদীকে সে রোগগ্রস্ত দুর্বল আত্মীয়ার মতো মমতা করে। সেই নদী শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে সে কেঁদে ফেলে। আবার কর্মস্থলের এক মাইল দূরের নদীটিকে প্রবল বর্ষণে দেখতে যেতে না পারায় নদেরচাঁদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়। প্রবল উন্মত্ত নদীর সজীবতায় নদেরচাঁদ আমোদ অনুভব করে। নদীর চঞ্চল স্রোতে পরিপূর্ণতার বিকাশ তার মনে ঔৎসুক্য জাগিয়ে তোলে। নদীকে জীবন্ত মনে হয় তার ৷ শিশুসুলভ উন্মাদনায় সে নদীর জলপ্রবাহের সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠে। তাই স্ত্রীকে লেখা চিঠিও নদেরচাঁদ অবহেলায় নদীর স্রোতে ফেলে দেয়।
নদেরচাঁদ তার অস্তিত্বে নদীর সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে সম্পৃক্ত। তাই সে নদীর ভাষা ও সুর উপলব্ধি করতে পারে। নদেরচাঁদ নদীপ্রেমিক বলে সে নদীর বিদ্রোহের স্বর শুনতে পায়। তাই সে ভয় পায় নাগরিক সভ্যতার আগ্রাসনে গড়ে ওঠা ব্রিজ নদীর উন্মত্ত স্রোতে ভেঙে পড়বে। একইসঙ্গে বন্দি নদীর শৃঙ্খলমোচনের আনন্দে সে সভ্যতার দর্পে দর্পী সেই ব্রিজের প্রয়োজনও উপলব্ধি করে না। এভাবেই ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে সুস্পষ্টভাবে নদেরচাঁদের নদীপ্রীতির চিত্র চিত্রিত হয়েছে।
২. ‘তপন আর পড়তে পারে না। বোবার মতো বসে থাকে।’ – তপনের এমন অবস্থার কারণ বর্ণনা করো।
উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের লেখক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। তার কৈশোর মনের কল্পনাপ্রবণতায় সে মনে করত লেখক সাধারণ চেনা মানুষের মতো কেউ না, এমনকি আকাশ থেকে পড়া কোনো অদ্ভুত জীব। কিন্তু ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে নতুন মেসোর সঙ্গে আলাপে তপনের প্রথম বোধোদয় হয়।
❐ অবস্থার কারণ : নতুন মেসোর সাহচর্যে তপনের গল্প লেখার স্বপ্ন দৃঢ় হয়। স্কুলে প্রথম ভরতির অভিজ্ঞতা নিয়ে তপন নতুন যে গল্প লেখে, ছোটোমাসির তৎপরতায় তা নতুন মেসোর কাছে পৌঁছোয় এবং মেসোর সৌজন্যে ‘প্রথম দিন’ শিরোনামে ‘সন্ধ্যাতারা' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সেই গল্প মায়ের নির্দেশে পড়তে গিয়ে তপন আত্মানুসন্ধানী দৃষ্টিতে উপলব্ধি করে তার লেখা গল্পটি ‘কারেকশান’ করার পরিবর্তে নতুন মেসো নিজস্ব দক্ষতায় সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছেন। যে গল্প তপনের নিজের লেখা নয়, সেই গল্প তার নিজের নামে প্রকাশিত হওয়ার যে অপমান, সেই অপমানে তপন স্তব্ধ হয়ে যায়। স্বপ্নপূরণের সমস্ত উত্তেজনা এই মানসিক আঘাতে বিস্বাদ হয়ে যায়। তাই তপন আর পড়তে পারে না বোবার মতো বসে থাকে।
৩. ‘অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না’ – হরিদা কী ভুল করেছিল? অদৃষ্ট ক্ষমা না করার পরিণাম কী হয়েছিল?
❐ হরিদার ভুল : সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন। কিন্তু শিল্পের প্রতি সততায়, তার বৈরাগী সাজের সার্থকতার জন্য তিনি চরম দারিদ্র্যেও জগদীশবাবুর থেকে একশো এক টাকা প্রণামি গ্রহণ করেননি। তার এই নির্মোহ আচরণকেই উদ্ধৃতাংশে ভুল বলা হয়েছে।
❐ অদৃষ্ট ক্ষমা না করার পরিণাম : হরিদা হতদরিদ্র । দারিদ্র্যের চরম সীমায় দাঁড়িয়ে প্রায়ই তার ভাতের হাঁড়িতে শুধু জল ফুটে যায়। কিন্তু শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতায় হরিদা অর্থের প্রতি নির্মোহ থাকেন। তাই জগদীশবাবুর বাড়িতে তিনি তার প্রাপ্য প্রণামির অর্থ ফিরিয়ে দেন। এ কারণে তার সঙ্গীদের মনে হয় দরিদ্র জীবনে অর্থাগমের সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করায় অদৃষ্টে পরিণাম লেখা থাকবে। সেই পরিণতিতে হরিদার দরিদ্রতা চিরকালীন হয়ে যাবে।
৪. ‘অমৃত সত্যি তার বাবা-মাকে খুব জ্বালিয়েছিল’ – অমৃত কীভাবে বাবা-মাকে জ্বালতন করেছিল? অবশেষে অমৃতের মা কী করেছিল?
উত্তরঃ পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পের কাহিনি যে মূল দুই চরিত্রকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে তার একপ্রান্তে রয়েছে অমৃত চরিত্রটি। প্রিয় বন্ধু ইসাবের নতুন জামার কথা শোনামাত্র সেও নতুন জামা আদায়ের অভীষ্টে অবিচল থেকে সাফল্যলাভ করেছিল। অমৃত, ইসাবের মতো জামা পাওয়ার জন্য মায়ের কাছে বায়না করেছিল। কিন্তু দরিদ্র কৃষক জীবনের অসচ্ছলতার কারণে তার মা তাকে নিরস্ত করতে নানা পন্থা অবলম্বন করতে চেয়েছিলেন। তিনি যেভাবে জ্বালিয়েছিল অমৃতকে বোঝাতে চেয়েছিলেন খেতে কাজ করতে হয় বলে ইসাবের জামা ছিঁড়ে গিয়েছে, কিন্তু অমৃতের জামাটি প্রায় নতুন।
❐ অমৃতের মা যা করেছিলেন : অমৃত মায়ের কথায় না ভুলে কড়া ফতোয়া জারি করেছিল যে, ইসাবের মতো জামা না পেলে সে স্কুলে যাবে না এবং নিজের জামার ছেঁড়া জায়গায় আঙুল ঢুকিয়ে আরও ছিঁড়ে দিয়েছিল। অমৃতের মা এরপর প্রহারের ভয় দেখালে নাছোড় অমৃত মরিয়া হয়ে বলেছিল “ঠিক আছে, আমাকে বেঁধে রাখো! মারো! কিন্তু তোমাকে ইসাবের মতো একটা জামা আমার জন্য জোগাড় করতেই হবে।” অমৃত জানত মায়ের ইতিবাচক ইঙ্গিত-ব্যতীত বাবাকে সম্মত করা অসম্ভব। তাই পরিশেষে সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে, খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়ে, রাতে বাড়ি ফিরতে না চেয়ে ইসাবের বাবার গোয়ালঘরে আত্মগোপন করেছিল। অবশেষে অমৃতের দুর্দমনীয় জেদের কাছে হার মানতে হয়েছিল তার মাকে। আর জামার প্রত্যাশায় এক নিদারুণ পরিস্থিতি তৈরি করে অমৃতও তার ইচ্ছাপূরণে সফল হয়েছিল। অমৃতের মা বাধ্য হয়ে তার বাবাকে নতুন জামা কিনতে রাজি করিয়েছিলেন। এরপর অমৃতের বাবা ইসাবের বাবার গোয়ালঘর থেকে আত্মগোপনকারী অমৃতকে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছিলেন।
৫. ও আমাকে শিখিয়েছে, খাঁটি জিনিস কাকে বলে।’ – কে, কাকে শিখিয়েছে? ‘খাঁটি জিনিস’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
❐ যে যাকে শিখিয়েছে : পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল' গল্পে বর্ণিত অমৃত যে, যাকে শিখিয়েছে তার কাছের বন্ধু ইসাবের বাবাকে শিখিয়েছে ‘খাঁটি জিনিস’ কাকে বলে।
❐ 'খাঁটি জিনিস' বলার কারণ : হাসান পেশায় ছিলেন কৃষক। বিপত্নীক এই মানুষটি হয়তো অভাবের কারণে স্বভাবগত দিক থেকে ছিলেন কিছুটা রুক্ষ প্রকৃতির। মাতৃহীন সন্তানকে তিনি যথেষ্ট শাসন করতেন। ইসাবকে নতুন জামা কিনে দেওয়ার পূর্বে তিনি প্রচণ্ড প্রহার করেছিলেন। কড়া মেজাজি হাসান যেন ইসাবের কাছে মূর্তিমান বিভীষিকা ছিলেন। কিন্তু একদিন আকস্মিকভাবে তিনি অমৃত ও ইসাবের জামা পরিবর্তনের ঘটনা দেখতে পান। সেইসঙ্গে শুনতে পান অমৃত ইসাবকে বলছে, ছেঁড়া জামা দেখে তার বাবা হয়তো তাকে প্রহার করবে কিন্তু তাকে বাবার প্রহারের হাত থেকে রক্ষা করতে তার মা আছেন, কিন্তু ইসাবের তা নেই। হাসান তখন অনুভব করেন মাতৃহীন সন্তানের প্রতি তাকে যথেষ্ট যত্নশীল ও সংবেদনশীল হতে হবে। শুধু আপন সন্তানের প্রতি কর্তব্যবোধে তিনি ঋদ্ধ হননি, বালক অমৃতের মানবিক, উদার ও অসাম্প্রদায়িক আচরণে তিনি খাঁটি মানবতার শিক্ষা লাভ করেছেন।
৬. জগদীশবাবুর বাড়ি হরিদা বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল, তা বর্ণনা করো।
❐ হরিদার বিরাগী সাজ : বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদা শহরের এক জ্যোৎস্নালোকিত স্নিগ্ধ ওশান্ত সন্ধ্যায় বিরাগীর ছদ্মবেশে জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হন। হরিদা তার পেশাগত নৈপুণ্যে বিরাগীর বেশধারণের উদ্দেশ্যে আদুড় গায়ে ধবধবে সাদা উত্তরীয় এবং ছোটো বহরের সাদা থান পরেছিলেন। কোনো জটাজুটধারী গৈরিকবেশী সন্ন্যাসীর মতো হরিদার হাতে কমণ্ডলু বা চিমটে ছিল না। তার মাথায় শুকনো সাদা চুল ফুরফুর করে উড়ছিল, আর ধুলো মাখা পাঁ, কাঁধে ছিল একটা ঝোলা। হরিদার এই প্রকৃষ্ট বিরাগী রূপ জগদীশবাবুকে চমকে দিয়েছিল। তাঁর শীর্ণ চেহারা অশরীরী হয়ে উঠেছিল সেদিন। আর তার দৃষ্টিতে ছিল শান্ত উজ্জ্বল ভাব।
❐ জগদীশবাবুর বাড়ির ঘটনা : বিরাগীর ছদ্মবেশধারী হরিদার অতর্কিত ব্যক্তিত্বময় উপস্থিতিতে বিস্মিত জগদীশবাবু স্বস্থানে স্থির থাকলে হরিদা বলেন, অর্থের অহংকারেই তিনি হয়তো নিজেকে ভগবানের চেয়ে বড়ো বলে মনে করেছেন। এই কথার উত্তরে জগদীশবাবু তাকে রাগ করতে বারণ করলে হরিদা বলেন বিরাগীর চরিত্রে কোনো রিপুর অস্তিত্ব নেই। জগদীশবাবু তাঁর বাড়িতে বিরাগীজিকে থাকতে অনুরোধ করেন। তখন হরিদা বলেন বিপুলা এই পৃথিবীর মাটিতেই তার স্থান। জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদা কোনো কিছু স্পর্শ না করে কেবলমাত্র জলগ্রহণ করেন ৷ অর্থের মোহ কেবল একটি বঞ্চনা, তাই সন্ন্যাসীরূপী হরিদা জগদীশবাবুকে সেই এককের সাধনা করতে বলেন, যিনি সমগ্র সৃষ্টির কর্তা। হরিদার সাজসজ্জা, কথনভঙ্গি এবং ব্যক্তিত্বময় উপস্থিতিতে মুগ্ধ হয়ে জগদীশবাবু তীর্থভ্রমণের জন্য একশো এক টাকার একটি থলি দেন। কিন্তু সন্ন্যাসব্রত অনুযায়ী নিরাসক্ত হরিদা ধুলো মাড়িয়ে যাওয়ার মতো এই অর্থও তিনি অনায়াসে মাড়িয়ে যেতে পারেন। এভাবেই হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে নিষ্ঠা ও শিল্পগত আদর্শে এক প্রকৃত সন্ন্যাসীর চরিত্রকেই উপস্থাপন করেন।
৭. ‘অদল-বদল’ গল্পে পারস্পরিক সম্প্রীতির যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ গুজরাটি কথাসাহিত্যিক পান্নালাল প্যাটেল ‘এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে’ দাঁড়িয়ে ‘অদল বদল’ গল্পে যে কাহিনি নির্মাণ করেছেন, সেখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষতার সুর।
❐ পারস্পরিক সম্প্রীতির পরিচয় : আলোচ্য গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বালক অমৃত জাতিতে হিন্দু, ইসাব মুসলমান। অথচ তারা পড়শি, অভিন্নহৃদয় বন্ধু। অমৃত নতুন জামা পাওয়ার জন্য বায়না করে ঠিকই, আবার বন্ধুকে বাবার মারের হাত থেকে বাঁচাতে নিজের ভালো জামাটি পরিয়ে অমৃত-ইসাবের বন্ধুত্ব দিতে দ্বিধা করে না। বিপরীতে বন্ধুর অপমানের প্রতিশোধ নিতে বাবার মারের কথা ভুলে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে নিজের জামাটি ছিঁড়ে ফেলতেও পিছপা হয় না ইসাব। তাদের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা কোনো ধর্মীয় ইন্ধন নয়, বন্ধুত্বের এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন । মানবিক সংবেদনেই তারা পরস্পরের আপনার জন। এই ভারততীর্থে বিবিধের মাঝে মিলনের যে সুমহান ঐতিহ্য বর্তমান, তার নিদর্শনও ‘অদল বদল’ গল্পটিতে রয়েছে। অমৃতের মা বাহালি বৌদি এবং ইসাবের বাবা হাসানের আচরণে এবং কথনেও পারস্পরিক সম্প্রীতির দিকটিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অমৃত ইসাবের জামা অদলবদলের ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে এবং তাদের গভীর ভালোবাসার পরিচয় পেয়ে ইসাবের বাবা সন্তানস্নেহে অমৃতকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। অমৃতকে আপন সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে হাসান ধর্মীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। এভাবেই ‘অদল বদল’ গল্পে পান্নালাল প্যাটেল হিন্দু-মুসলমানের পারস্পরিক সম্প্রীতির চিত্রটি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
৮. ‘খাঁটি মানুষ তো নয়, এই বহুরূপীর জীবন এর বেশি কী আশা করতে পারে?’ – এই উক্তির প্রেক্ষিতে হরিদার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ বিচিত্র জীবনপথের পথিক সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ ‘বহুরূপী’ গল্পে অপূর্ব মমত্বে হরিদা চরিত্রটি নির্মাণ করেছেন। পেশায় বহুরূপী হরিদা সাধারণ হয়েও অনন্য জীবনদর্শনে অসাধারণ হয়ে উঠেছেন।
❐ হরিদার চরিত্র : দরিদ্র হরিদা নিজের সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিলেন। শহরের সবচেয়ে সরু গলির ছোটো একটা ঘরে তিনি বাস করতেন। গল্পকথক ও তার বন্ধুদের সামান্য চা খাওয়ানোর সামর্থ্যটুকুও নির্লোভ মানসিকতা তার ছিল না। তাই চা-চিনি-দুধ তাদের কাছ থেকেই তিনি হাত পেতে নিতেন। কারণ তার নিজের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দশা—‘হরিদার উনানের হাঁড়িতে অনেক সময় শুধু জল ফোটে, ভাত ফোটে না।' বহুরূপী পেশাতেও তার রোজগার ছিল অত্যন্ত স্বল্প। পরিচিতরা হরিদাকে বহুরূপীর বেশে দেখে এক-আনা, দু-আনা বকশিশ দেয়। অপরিচিতরা দেয় আরও কম—দুটো-একটা পয়সা। সেই অর্থে সংসার চালানো ছিল দুঃসাধ্য। অথচ তা নিয়ে হরিদাকে কখনও অসন্তোষ বা ক্ষোভ জানাতে দেখা যায়নি। একটা অদ্ভুত নির্লোভ, নির্লিপ্ত ও নির্মোহ মনোভাব ফুটে উঠেছে তার আচরণে। ব্যতিক্রম ঘটেছে কেবল একবার। তাও সাময়িক। জগদীশবাবুর বাড়িতে ‘জবর খেলা’ দেখিয়ে কিছুটা বাড়তি রোজগার করতে চেয়েছিলেন হরিদা—কিন্তু নিজের শিল্পের প্রতি নিষ্ঠা ও নির্লোভ মনোভাব হরিদাকে সেই উপার্জনে বাধা দেয়। জগদীশবাবু কয়েকদিন থাকতে বললে বিরাগীরূপী হরিদা সেই প্রস্তাবে সম্মত হননি। প্রণামিস্বরূপ একশো এক টাকা দিতে চাইলেও খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো তিনি তা প্রত্যাখান করেছেন। হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে বকশিশ চাইতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও আট আনা বা দশ আনার বেশি টাকা চাইতে পারেন না। বিরাগীর নির্মোহ মানসিকতাই তার কারণ। উদ্ধৃত উক্তি চরিত্রের অন্তর্লীন থেকে হরিদার শিল্পের প্রতি ভালোবাসা এবং দায়বদ্ধতা প্রকাশিত হয়।
৯. ‘শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তখন’ – তপনের কীসের দুঃখ? দুঃখের মুহূর্তে সে কী সংকল্প করে?
❐ দুঃখের প্রকৃত কারণ : সুখ-দুঃখের আবর্তনে আবর্তিত যে মনুষ্য জীবন, তার দুঃখের নেপথ্যে নানা লৌকিক কারণ বর্তমান। আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের আবেগদীপ্ত চরিত্র তপনের জীবনেও ঘটে যাওয়া দুঃখময় অনুভূতির বিশেষ কারণ ছিল। প্রায় না চাইতেই পেয়ে যাওয়ার মতো তপনের লেখা জীবনের প্রথম গল্পটি ‘প্রথম দিন' শিরোনামে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশ করে দিয়েছিলেন তার সাহিত্যিক মেসো৷ এই ঘটনায় অপ্রত্যাশিত সুখের শিখরে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল তপনের। কিন্তু একদিকে নিজের বাড়িতেই তার লেখা নিয়ে বিদ্রুপ এবং অন্যদিকে ‘কারেকশান’-এর নামে ছোটোমেসোর দ্বারা তপনের গল্পটির সামগ্রিক পরিবর্তন তপনের মনকে ভয়ানক আঘাত করেছিল। সে কারণেই ওই মুহূর্তটি তার কাছে হয়ে উঠেছিল দুঃখের।
❐ দুঃখবোধ থেকে সংকল্প : এই দুঃখবোধে তপন প্রথমে আবেগের বশে কান্নায় ভেঙে পড়লেও পরে সে তার মনকে শক্ত করে। সে গভীরভাবে সংকল্প করে যদি কখনও সে তার লেখা ছাপতে দেয়, তবে সেই লেখা সে নিজে গিয়ে পত্রিকার দপ্তরে জমা দেবে। কারো কোনো সাহায্য নেবেনা। সেই অপটু লেখা যদি পত্রিকার সম্পাদকের দ্বারা বাতিলও হয়, তাহলেও তপন দুঃখিত হবে না। কারণ সেক্ষেত্রে তপনকে শুনতে হবে না অন্য কেউ তপনের লেখা ছাপিয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে বড়ো কথা নিজের লেখা গল্প পড়তে বসে অন্যের লেখা লাইন পড়তে হবে না তাকে।
১০. ‘তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপান করিল’ - কে হাসি গোপন করল? হাসি পাওয়ার কারণ কী?
উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথের দাবী’ উপন্যাস থেকে গৃহীত ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশের অন্যতম প্রধান চরিত্র অপূর্ব হাসি গোপন করল।
❐ হাসি পাওয়ার কারণ : গিরীশের বেশভূষার বৈচিত্র্য সবার হাসির উদ্রেক করে। তার মাথার সামনে বড়ো বড়ো চুল থাকলেও ঘাড় ও কানের কাছে তা নেই বললেই চলে—এমনই ছোটো করে ছাঁটা। চেরা সিঁথি কাটা গিরীশের সাজসজ্জা চুলগুলি উগ্র লেবুতেলে নিষিক্ত। গিরীশের গায়ে জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের পাঞ্জাবি, পরনে বিলিতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি ধুতি করে পরা, বুক-পকেটে বাঘ আঁকা রুমাল, পায়ের সবুজ ফুল মোজাটি লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা, লোহার নাল দিয়ে বাঁধানো পাম্প-শু— সর্বোপরি হাতে একটি হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি। অবশ্য কয়েকদিন জাহাজে আসার ফলে সবই নোংরা হয়ে গিয়েছে। নিমাইবাবু গিরীশের বেশভূষার পারিপাট্যের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেই আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।