Childhood and Growing Up (1st Half) Notes Mark 5 | বি.এড ফার্স্ট সেমিস্টার নোটস শিশু ও বিকাশ Course-1 (1.1.1)

childhood and growing up important questions

 বি.এড ফার্স্ট সেমিস্টার নোটস শিশু ও বিকাশ 1st Half Course-1 (1.1.1)



❐ আরো পড়ুনঃ B.Ed Notes A2z


প্রশ্নঃ১. বৃদ্ধি ও বিকাশের বৈশিষ্ট্যগুলি বিবৃত করুন। 
State the characteristics of growth and development.
❏ জন্মের পর শিশুর বৃদ্ধি কীভাবে ঘটে সে সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষণা থেকে মনোবিজ্ঞানীরা বৃদ্ধির যে বৈশিষ্ট্যগুলি নির্ণয় করেছেন সেগুলি হল-
  1. বংশগতি ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফলে শিশুর বৃদ্ধি ঘটে।
  2. জন্মের পর থেকে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির হার বিভিন্ন বয়সে কখনও বাড়ে, আবার কখনও কমে।
  3. জন্ম থেকে আড়াই বছর বয়স পর্যন্ত দৈহিক বৃদ্ধির হার খুব দ্রুত হয়।
  4. আড়াই বছর বয়স থেকে বারো কিংবা তেরো বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর দৈহিক বুদ্ধির হার খুব কমে যায়।
  5. পনেরো-ষোলো বছর বয়সে অর্থাৎ কৈশোরে দৈহিক বৃদ্ধির হার আবার বেড়ে যায়।
  6. মেয়েদের আঠারো এবং ছেলেদের কুড়ি-একুশ বছর বয়স পর্যন্ত খুব ধীরে হলেও দৈহিক বৃদ্ধি ঘটতে থাকে।
  7. পুষ্টিকর খাদ্য, উপযুক্ত পরিবেশ এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পরিচর্যার উপর শিশুর স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি নির্ভর করে।
  8. প্রত্যেক শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি একই হারে ঘটে না। কারও দৈহিক বৃদ্ধি দ্রুতগতিতে ঘটে, আবার কারও দৈহিক বৃদ্ধির গতি ধীর।
  9. প্রত্যেক শিশুর বুদ্ধি তার নিজস্ব গতিতে চলে।
  10. একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত শিশুর বৃদ্ধি নিরবচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিকভাবে ঘটে।
  11. আবহাওয়ার উপরও বৃদ্ধি নির্ভর করে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধির হারের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
বিকাশের সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ (General Characteristics of Development) :
বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে মনোবিদগণ বিকাশের যে সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি নিরূপণ করেছেন তা নিম্নরূপ —
  1. অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া: বিকাশ জীবনকালব্যাপী একটি অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। মাতৃগর্ভে ভ্রূণ সঞ্চারের মুহূর্ত থেকে আমৃত্যু এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন চোখে পড়ে না। তবে এই পরিবর্তন ব্যক্তির ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যাকে নষ্ট করে না। বিকাশের ধারায় এক পর্যায় থেকে আর এক পর্যায়ে উন্নীত হওয়াটিও কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। বিকাশের প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্নভাবেই এগিয়ে চলে।
  2. ক্রমসংযোজনশীল প্রক্রিয়া: বিকাশ একটি ক্রমসংযোজনশীল প্রক্রিয়া অর্থাৎ ব্যক্তির বিকাশের যে-কোনো একটি পর্যায় তার পূর্ববর্তী সকল পর্যায়ের বিকাশের সমষ্টির ফল। ব্যক্তিজীবনে বিকাশ কোনো বিশেষ মুহূর্তে হঠাৎ করে আসে না। বিকাশের যে কোনো পর্যায় তার পূর্ববর্তী পর্যায় থেকেই আসে।
  3. সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রক্রিয়া: বিকাশের ধারা সামাস্যপূর্ণ। কারণ কোন আচরণের পর কোন আচরণ হবে তা মোটামুটি নির্দিষ্ট। যেমন— প্রত্যেক মানবশিশু প্রথমে উপুড় হবে, তারপর বসবে, তারপর হামাগুড়ি দেবে, তারপর হাঁটবে। এই নিয়মানুবর্তিতা প্রায় প্রত্যেক শিশুর ক্ষেত্রেই লক্ষ করা যায়।
  4. পৃথকীকরণ অভিমুখী প্রক্রিয়া: বিকাশ পৃথকীকরণ অভিমুখী প্রক্রিয়া অর্থাৎ সাধারণ থেকে বিশেষের দিকে অগ্রসর হয়। যেমন—মানবশিশু জীবনের প্রথম পর্যায়ে যে-কোনো প্রতিক্রিয়া করার জন্য সমগ্র দেহ কাঠামোকে ব্যবহার করে কিন্তু জীবনবিকাশের পথে সে যতই অগ্রসর হয়, ততই সে তার দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারে।
  5. শৃঙ্খলিত প্রক্রিয়া: মানবজীবনের বিভিন্ন দিকের বিকাশের মধ্যে একটি শৃঙ্খলা বজায় থাকে। একদিকের বিকাশ অপর দিকের বিকাশে সহায়তা করে। যেমন—দৈহিক বিকাশ মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে, আবার মানসিক বিকাশ সামাজিক বিকাশে সহায়তা করে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে সমস্ত ধরনের বিকাশই ব্যক্তিজীবনে একটি শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলে।
  6. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য অভিমুখী প্রক্রিয়া: বিকাশের প্রক্রিয়া ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য অভিমুখী। সাধারণভাবে বিকাশ বিশেষ বয়সের ক্ষেত্রে কতকগুলি সাধারণ নিয়ম মেনে চলে। কিন্তু পরিণত ব্যক্তিজীবনে তা বিশেষ রূপ ধারণ করে। অর্থাৎ প্রত্যেকটি শিশুর ক্ষেত্রে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেই বিকাশ ঘটে।
প্রশ্নঃ ২. বয়ঃসন্ধিকালের বিভিন্ন সমস্যাগুলি আলোচনা করুন এবং এই সমস্যাগুলি সমাধানে নির্দেশনা ও পরামর্শদানের প্রয়োজনীয়তা লিখুন। 
Give a brief account on problems of adolescence and mention the needs of guidance and counselling for solving the problems.

বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যাসমূহ ( Problems of Adolescence) :
কৈশোরে ছেলেমেয়েরা উন্নত মানসিক ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় তাদের মধ্যে যে চাহিদাগুলি দেখা যায় সেগুলি যদি সঠিকভাবে পরিতৃপ্ত না হয় তাহলে এই চাহিদাগুলিকে কেন্দ্র করে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় কৈশোরের এই চাহিদাগুলি পরিতৃপ্তির উপযুক্ত কোনো ব্যবস্থা নেই। উপরন্তু তাদের প্রতি আছে সমাজের নিষ্ঠুর উপেক্ষা ও অবহেলা। একদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো সমাজের বিভিন্ন কাজকর্মে অংশগ্রহণের প্রবল আকাঙ্ক্ষা, অপরদিকে সমাজের নিষ্ঠুর উপেক্ষা এই দুটি বিপরীত শক্তির সংঘাতের ফলে এই বয়সের ছেলেমেয়েরা দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং তাদের মানসিক জগতে এক তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ফলে দেখা দেয় নানারকম সমস্যা। কৈশোরে সাধারণত যে সমস্যাগুলি দেখা দেয় সেগুলি নিম্নরূপ-
  1. কৈশোরে স্বাধীনভাবে কাজ করার ইচ্ছা বাধাপ্রাপ্ত হলে তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতার সৃষ্টি হয়। এই বয়সের ছেলেমেয়েরা এই সংঘাত এড়িয়ে চলার জন্য নানারকম কৌশল অবলম্বন করে।
  2. কৈশোরের ছেলেমেয়েরা সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে যখন খাপ খাইয়ে নিতে পারে না তখন তারা তাদের অক্ষমতার গ্লানিকে দূর করার জন্য অনেক সময় দিবাস্বপ্ন কিংবা অলীক কল্পনার আশ্রয় নেয়। অতিরিক্ত মাত্রায় দিবাস্বপ্নের প্রবণতা দেখা দিলে তারা বাস্তববিমুখ হয়ে পড়ে এবং অবাস্তব কল্পনার জগতে বিচরণ করে তাদের অতৃপ্ত ইচ্ছার পরিতৃপ্তি সাধন করার চেষ্টা করে।
  3. পিতামাতা বা বয়স্কদের আচরণে তারা যদি দৈহিক ও মানসিক নিরাপত্তার অভাববোধ করে তাহলে তাদের মধ্যে নানারকম আচরণমূলক বৈষম্য দেখা দেয়। অনেক সময় এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য তারা বাড়ি থেকে পালিয়েও যায়। এই সময় গৃহ পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে অভিযোজন করা তার কাছে একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
  4. কৈশোরে আত্মপ্রকাশের চাহিদা পূরণ না হলে তারা গোপনে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে এই সময় তাদের মধ্যে যে নৈতিক চাহিদা তৈরি হয়, তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ জীবন অভিজ্ঞতার সংঘর্ষ বাধে। অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে তারা প্রচলিত সমাজব্যবস্থার প্রতি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং নানারকম ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়।
সমস্যাগুলি সমাধানে নির্দেশনা ও পরামর্শদানের প্রয়োজনীয়তা : মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হল কৈশোরকাল, যাকে বলা হয় বয়ঃসন্ধিকাল। ছোটো থেকে বড়ো হওয়ার সময়। সবাই জানে এই সময়কালে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা স্বাভাবিক নিয়মেই বড়ো হয়। আসলে কৈশোরকাল হল বড়ো হওয়ার সময়কাল। যেমন আগুনের মধ্যে কাঁচামাটি পুড়ে পুড়ে লাল শক্ত পোড়ামাটি হওয়ার এক ধারাবাহিক সজাগ প্রক্রিয়া। সামান্য সমস্যাতেই কাঁচামাটি ভেঙে যেতে পারে বা আগুনে বিকৃত হতে পারে বা বেশি পুড়তে কঠিন লালিত্যহীন হতে পারে। তাই এই সময়কাল হল শিক্ষার্থীকে জীবনে আগুনের মধ্যে দিয়ে চলার সময়কাল। চারদিকে সবাই আছে কিন্তু ভিতরে একা একজন কিশোর বা কিশোরী। যথার্থ পূর্ণ মানুষ হওয়ার জন্য চাই উপযুক্ত শিক্ষা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা। এই শিক্ষা পরিচালনা হবে পরামর্শদান ও নির্দেশদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা দেবে তথ্য ও জ্ঞান। স্বাভাবিক জীবনে আদর্শ অভিযোজনের জন্য চাই জীবনকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা। পিতামাতা, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অন্যান্য গুরুজনদেরকে এই শিক্ষার্থীদেরকে কেন্দ্র করে পরামর্শদান ও নির্দেশদান প্রক্রিয়াকে আদর্শায়িত করে তুলতে হবে। 

কৈশোরের শিক্ষার্থীরা চাহিদা ও সমস্যাকে সমন্বয় করে নিম্নলিখিত উপায়ে পিতামাতা ও শিক্ষক-শিক্ষিকা পরামর্শদান ও নির্দেশদান প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়িত করতে হবে। যেমন- পিতামাতা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ সচেতন প্রয়াস দ্বারা উন্মুক্ত মন নিয়ে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে পরামর্শদান প্রক্রিয়াটিকে পরিচালিত করবেন। নিম্নলিখিত বিষয়গুলিতে পরামর্শ দেবেন— দৈহিক পরিবর্তন স্বাভাবিক নিয়মে ঘটবে। সকলের একই বয়সে হয় না কারও আগে কারও পরে। এজন্য না ভেবে নিজ কাজে মনোনিবেশ করতে বলতে হবে। অসুবিধা হলে- নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়াম করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রাক্ষোভিক ভারসাম্য বজায় রাখতে অযথা তিরস্কার বা বকাবকি না করে বুঝিয়ে বলতে হবে। প্রয়োজনে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। মানসিক আঘাত কখনোই করা যাবে না, বুঝিয়ে যথার্থ নির্দেশদান করবেন। যথার্থ নির্দেশদান দ্বারা প্রাক্ষোভিক শক্তিকে উপযুক্ত পথে প্রবাহিত করবেন। ছোটো ছোটো কাজেও তাদের সাফল্যকে মর্যাদা দিতে হবে।

প্রশ্নঃ৩. প্রাক্ষোভিক বিকাশ সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখুন। 
Give a brief account on Emotional development.
❏ মানুষের প্রক্ষোভ তার আচরণধারাকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে। প্রক্ষোভ সব সময়ই দৈহিক আচরণের সঙ্গে সংযুক্ত। এই আচরণগুলি হল প্রাক্ষোভিক আচরণ (Emotional behavior) ।  জন্মের পর থেকেই শিশুর মধ্যে এই ধরনের আচরণগুলি বিকশিত হতে শুরু করে। এই ধরনের পরিবর্তনই হল প্রাক্ষোভিক বিকাশ (Emotional Development)। প্রাক্ষোভিক বিকাশ আলোচনার আগে প্রক্ষোভ (Emotion) বিষয়টি কী তা জানার চেষ্টা করা যাক। লাতিন শব্দ 'Emovere' থেকে Emotion কথাটি এসেছে, যার অর্থ হল উত্তেজিত করা (to exite)। অর্থাৎ প্রক্ষোভ হল ব্যক্তির এক উত্তেজক অবস্থা। উডওয়ার্থ (Woodworth)-এর মতে প্রক্ষোভ হল কোনো প্রাণীর উত্তেজক অবস্থা (Emotion is a moved' or 'Stirred up' state of an organism)

মরিস ( C G Morris) মনে করেন, প্রক্ষোভ হল একটি জটিল প্রভাববিস্তারকারী অভিজ্ঞতা যা ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত এবং এটি পর্যবেক্ষণযোগ্য আচরণের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় (Emotion is a complex affective experiences that involves diffuse psychological changes and can be expressed overtly in characteristics behavior patterns ) । অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ মানসিক দ্বন্দ্বের ফলস্বরূপ ব্যক্তির মন উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং তার সেই উত্তেজনা পর্যবেক্ষণযোগ্য আচরণের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এই আচরণটিই হল প্রাক্ষোভিক আচরণ। জন্মাবস্থায় শিশুর মধ্যে গুটিকয়েক প্রক্ষোভ বিদ্যমান থাকে। সেগুলি হল ভয় (Fear), রাগ (Anger), ভালোবাসা (Love) ও ঘৃণা (Hate)। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রাক্ষোভিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এইরূপ পরিবর্তনই হল প্রাক্ষোভিক বিকাশ।

শৈশবে শিশুদের প্রক্ষোভের তীব্রতা খুব বেশি থাকে। সামান্য উদ্দীপনার প্রভাবে তারা ভীষণভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এইসময় তাদের প্রাক্ষোভিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকে। এই সময়ে তাদের প্রাক্ষোভিক অবস্থা স্বল্পস্থায়ী হয়। শৈশবের প্রাক্ষোভিক অবস্থার পরিবর্তনশীলতা একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। শিশুরা হঠাৎ রেগে যায় আবার পরমুহূর্তে শান্ত হয়ে যায়। পরের মুহূর্তেই আবার তাদের মন খুশিতে ভরে ওঠে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এরূপ পরিবর্তনশীল প্রাক্ষোভিক অবস্থার পরিবর্তন একমাত্র শিশুদের মধ্যেই লক্ষ করা যায়। শিশুদের বিচারবুদ্ধির বিকাশ না হওয়ার দরুন তাদের আচরণ মূলত প্রক্ষোভ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। শিক্ষক শিশুদের প্রাক্ষোভিক প্রতিক্রিয়াকে পরিবর্তন করতে পারেন।

প্রশ্নঃ৪. বয়ঃসন্ধিকালে প্রক্ষোভমূলক বিকাশের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করুন। 
Mention the characteristics of Emotional development at adolescence.
❏ বাল্যকাল এবং যৌবনকালের মধ্যেকার সংযোগস্থাপনকারী বয়সকালই হল বয়ঃসন্ধি। সাধারণত এগারো বা বারো বছর বয়স থেকে উনিশ বা কুড়ি বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকেই বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়। জীবনবিকাশের ক্ষেত্রে এই স্তরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বয়সের প্রাক্ষোভিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ-
  1. এই স্তরে প্রাক্ষোভিক প্রতিক্রিয়ার কিছু অসাম্য লক্ষ করা যায়। কখনও তীব্র আনন্দানুভূতির প্রকাশ দেখা যায়, আবার কোনোসময় তীব্র বিষন্নভাব পরিলক্ষিত হয়। 
  2. অভিজ্ঞতার ফলে আবেগের জটিলতা বৃদ্ধি পায়। এই স্তরের শিক্ষার্থীদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ সর্বদা দেখা যায় না। অনেকসময় এরা প্রক্ষোভ দমন করে।
  3. বিমূর্ত বস্তু এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রক্ষোভ দেখা যায়। বিমূর্ত প্রক্ষোভ বিকশিত হয়।
  4. প্রক্ষোভের ক্ষেত্র বিস্তৃতি লাভ করে।
  5. প্রক্ষোভজনিত অনুভূতি বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার ক্ষমতা দেখা যায়।
  6. প্রাক্ষোভিক অভিজ্ঞতার মধ্যে বাস্তবতা বৃদ্ধি পায়।
  7. এই বয়সের কিশোর-কিশোরী ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিশেষ চিন্তান্বিত হয়।
  8. অনেক কিশোর-কিশোরীরা আবার তাদের আশা এবং প্রত্যাশাকে বাস্তবায়িত করার জন্য কল্পনার আশ্রয় নেয়।
  9. দিবাস্বপ্নের মাধ্যমে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে।
  10. এই বয়সে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ভালোবাসা-প্রেম এই বয়সের বৈশিষ্ট্য।
  11. এই স্তরের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আশঙ্কা ও অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রাবল্য দেখা যায়।
  12. হীনম্মন্যতা, লজ্জাবোধ, অপরাধবোধ, ভয়, আগ্রাসী মনোভাব ইত্যাদি অনেকসময় প্রকট সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়।
প্রশ্নঃ৫. কৈশোরকালের মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করুন। 
Discuss briefly the main features of adolescence period.
কৈশোরকালের মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল :
▸ দৈহিক বৈশিষ্ট্য (Physical Characteristics) :
  1. কৈশোরে ওজন ও উচ্চতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তবে এই সময় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বৃদ্ধির হার বেশি হয়।
  2. এই সময় দেহের মাংসপেশি, হাড়, গ্রন্থি, মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড প্রভৃতির বৃদ্ধি হয়।
  3. কৈশোরের প্রারম্ভে মেয়েদের চেহারায় একটি লাবণ্য আসে, কিন্তু সেই তুলনায় ছেলেদের চেহারার মধ্যে একটি শীর্ণতা ও কাঠিন্য লক্ষ করা যায়।
  4. এই সময় ছেলেমেয়েদের বাগযন্ত্র দ্রুত প্রসার লাভ করে, ফলে ছেলেদের কণ্ঠস্বর ভাঙা ভাঙা ও কর্কশ হয় এবং মেয়েদের কণ্ঠস্বর কিছুটা তীক্ষ্ণ হয়।
▸মানসিক বৈশিষ্ট্য (Mental Characteristics ) :
  1. এই সময় দৈহিক বিকাশ যত দ্রুত হয় মানসিক বিকাশ তত দ্রুত হয় না।
  2. এই সময় স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ গ্রহণ ক্ষমতা, ভাষার উপর দখল বৃদ্ধি পাওয়ায় ধারণার বিকাশ দ্রুত হয় এবং বুদ্ধিমত্তার যথেষ্ট বিকাশ ঘটে।
  3. মনোযোগের চঞ্চলতা কমে যায়, বিমূর্ত চিন্তনের ক্ষমতা বিকশিত হতে শুরু করে।
  4. বিশেষ বিশেষ বস্তুকে কেন্দ্র করে অনুরাগ বিকশিত হয়।
▸প্রাক্ষোভিক বৈশিষ্ট্য (Emotional Characteristics) :
  1. এই স্তরে প্রক্ষোভমূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ কখনও খুব তীব্রভাবে হয়, আবার কখনও একেবারেই হয় না।
  2. এই বয়সের ছেলেমেয়েরা কখনও আনন্দে মাতোয়ারা আবার কখনও বিমর্ষ বা ভারাক্রান্ত থাকে।
  3. হীনম্মন্যতা, লজ্জাবোধ, অপরাধবোধ, ভয়, আগ্রাসী মনোভাব ইত্যাদি অনেক সময় প্রকট সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়।
  4. এরা ভাবালু, আবেগপ্রবণ এবং কল্পনাবিলাসী হয়।
▸সামাজিক বৈশিষ্ট্য (Social Characteristics ) :
  1. সামাজিক দিক থেকে এই বয়সের ছেলেমেয়েদের খুব বেশি রকম অসামাজিক মনে হয়।
  2. দৈহিক বিকাশকে লুকিয়ে রাখার জন্য তারা সামাজিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আবার বাবা-মায়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
  3. এই বয়সের ছেলেমেয়েদের বহির্বিশ্বের প্রতি সমাজের প্রতি প্রবল আকর্ষণ দেখা যায়, তাই এই সময় জনকল্যাণমূলক কাজের প্রতি প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এদের মধ্যে মানবতাবোধও প্রবল আকারে দেখা যায়।
  4. এই স্তরের শেষের দিকে দলের প্রতি আকর্ষণ হঠাৎ করে আবার বেড়ে ওঠে এবং দলের কাজে নিজের ইচ্ছা, ভালোলাগা সবই সমর্পণ করে এবং দলের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়।
▸জ্ঞানমূলক বৈশিষ্ট্য (Cognitive Characteristics) :
  1. এই স্তরে যুক্তিপূর্ণ বিমূর্ত চিন্তনের ক্ষমতার বিকাশ ঘটে।
  2. সততা, সত্যবাদিতা ইত্যাদি বিমূর্ত আদর্শকে কেন্দ্র করে ধারণা গঠিত হয়।
  3. এই স্তরের ছেলেমেয়েরা যে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক-বিবাদ করে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবে সেগুলির কোনো অস্তিত্ব থাকে না।
  4. জ্ঞানার্জনের দিক থেকে এই স্তর হল প্রকল্পভিত্তিক অবরোহী যুক্তির স্তর।
প্রশ্নঃ৬. কৈশোরের সমস্যাসমাধানে বিদ্যালয় ও শিক্ষকের ভূমিকা আলোচনা করুন। 
Discuss the role of school and teacher in solving the problems of adolescence.
❏ আধুনিক শিক্ষার মূলকথা হল শিশুদের চাহিদা, আগ্রহ ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা। কৈশোরে ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে বিশেষ বিশেষ চাহিদা দেখা দেয়, সেগুলি যদি শিক্ষার মাধ্যমে যথাযথভাবে পূরণ করা যায় তাহলে তাদের সকল রকম সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হয়। আর যদি এই চাহিদাগুলি পরিতৃপ্ত না হয় তাহলে এই বয়সের ছেলেমেয়েদের বিপথে পরিচালিত ওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। তাদের চাহিদাপূরণ এবং সমস্যাসমাধানের জন্য বিদ্যালয়ে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা প্রয়োজন—
  1. শিক্ষক কৈশোরের দৈহিক পরিবর্তনগুলিকে খোলা মনে গ্রহণ করবেন এবং এই বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকার খেলাধুলা, যোগাসন ও ব্যায়ামের ব্যবস্থা করবেন। সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিকর খাদ্যেরও ব্যবস্থা করবেন।
  2. শিক্ষক কৈশোরের প্রাক্ষোভিক প্রবণতাগুলিকে সহানুভূতিশীলতার সঙ্গে বিচার করবেন এবং তাদের প্রাক্ষোভিক বিকাশকে সমাজ নির্দেশিত পথে পরিচালনা করার চেষ্টা করবেন।
  3. কৈশোরের স্বাধীনতার চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য তারা যাতে বিদ্যালয়ে স্বাধীনভাবে বিভিন্ন কাজকর্মে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে ছেলেমেয়েদের উপর শৃঙ্খলা রক্ষা ও অন্যান্য কাজের দায়িত্ব দিতে হবে।
  4. বিতর্ক, আলোচনা সভা ইত্যাদির মাধ্যমে তারা যাতে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পায় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। এতে তাদের আত্মপ্রকাশের চাহিদাও পরিতৃপ্ত হয়।
  5. বিদ্যালয়ে খেলাধুলা, অভিনয়, শিল্পকলা, সংগীত, সাহিত্যচর্চা, NCC, রেডক্রস, গার্লগাইড প্রভৃতি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা করে তাদের মধ্যে দলগতভাবে কাজ করার প্রবণতা তৈরি করতে হবে।
  6. বিভিন্ন প্রকার সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে কৈশোরের ছেলেমেয়েরা নিজের নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার যথেষ্ট সুযোগ পাবে। সাফল্য অর্জন করার মাধ্যমে তারা আত্মস্বীকৃতি লাভ করবে এবং সৃজনাত্মক কাজে অংশগ্রহণ করার ফলে তারা আত্মপ্রকাশেরও যথেষ্ট সুযোগ পাবে।
  7. কৈশোরের সামাজিক চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য তাদের যৌথ কাজকর্মে অংশগ্রহণ করার অধিকতর সুযোগ দিতে হবে। এইসব কাজের মধ্য দিয়ে সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে তারা রা ভালোভাবে সংগতিস্থাপন করতে পারবে।
  8.  জ্ঞানের চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য শিক্ষক কোনো সমস্যার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে তাদের সামনে উপস্থাপন করবেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তারা যাতে তাদের প্রবণতা অনুযায়ী স্বচ্ছন্দে বিচরণ করতে পারে শিক্ষকতার ব্যবস্থা করবেন।
  9. কৈশোরের শিক্ষণ পরিকল্পনা এমনভাবে রচিত হবে যাতে তাদের মধ্যে হিতকর আদর্শবোধ ও নীতিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়। কিশোরদের জন্য শিক্ষার কার্যসূচিতে যৌনশিক্ষার যাতে একটি বিশেষ স্থান থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তাদের যৌন চাহিদার যাতে উদ্‌গমন (Sublimation) হয়, তার জন্য শিক্ষক তাদের বিভিন্ন সৃজনধর্মী কাজ করার সুযোগ করে দেবেন।
  10. শিক্ষক জীবনাদর্শ গড়ে তোলার জন্যও শিক্ষার্থীকে সাহায্য করবেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অহং সত্তাকে এমনভাবে বিকাশের সুযোগ করে দেবেন যাতে অহং সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে যে জীবনাদর্শ গড়ে উঠবে তার সঙ্গে বাস্তবের সংঘাত ঘটার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
  11. যথাযথ নির্দেশনা ও পরামর্শদানের অভাবের জন্য কৈশোরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও উদ্দেশ্যহীনতা লক্ষ করা যায়। কৈশোরে ছেলেমেয়েরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয় সেগুলির প্রভাব থেকে তাদের দূরে রাখার জন্য তাদের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এই সময় নতুন নতুন চাহিদা থেকে তাদের মধ্যে অতৃপ্তি ও অভাববোধ থেকে যায়, যার স্বরূপ তারা নিজেরাই বুঝতে পারে না। জীবনের এই সন্ধিক্ষণের যে-কোনো ভুলত্রুটি তাদের অবাঞ্ছিত পথে নিয়ে যেতে পারে। তাই এই সময় পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজের প্রধান কর্তব্য হল ছেলেমেয়েদের যথাযথ নির্দেশনা ও পরামর্শ দান করা। এই সময় শিক্ষামূলক নির্দেশনা ও পরামর্শ দানের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক নির্দেশনাও দান করা প্রয়োজন যাতে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য তৈরি করতে পারে।
প্রশ্নঃ৭. মনো-যৌন বিকাশ সম্পর্কিত ফ্রয়েডের তত্ত্বটি বর্ণনা করুন।
Describe Freud's theory on development.
❏ ফ্রয়েডের তত্ত্ব অনুযায়ী শিশুর ক্রমবিকাশের তিনটি প্রধান স্তর হল – (a) শৈশবকাল, (b) প্রসুপ্তিকাল (c) বয়ঃসন্ধিকাল। জন্মের সময় থেকে লিবিডোর প্রাণশক্তি চলা শুরু হয় এবং নানা বিচিত্র পথ ধরে লিবি পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে চলে। শিশুর ক্রমবিকাশ বা মনের ক্রমপরিণতি দুই-ই এই লিবিডোর অগ্রগতির সঙ্গে সমার্থক

▸ শৈশবকাল: শৈশবকালে মৌখিক পর্যায়, পায়ু পর্যায় ও লৈঙ্গিক পর্যায়—এই তিনটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে লিবিঘ্নে এগিয়ে চলে।
  1. লিবিডোর মৌখিক পর্যায়: শিশুর লিবিডোর অবস্থান সর্বপ্রথম মুখে থাকে। একে মৌলিক রীতির পর্যায় এই সময় শিশু তার মুখের নানা প্রকারের ব্যবহার, যেমন—আঙুল চোষা, পরে কামড়ানো, চিবানো ইত্যাদি মধ্য দিয়ে তার লিবিডো তৃপ্তি পায়। এই পর্যায়ের শেষে মৌখিক ঘর্ষণমূলক পর্যায়। এই পর্যায়ে শিশু জিনিস ভাঙে ও নষ্ট করে লিবিডোর তৃপ্তি খুঁজে পায়।
  2. লিবিডোর পায়ু পর্যায়: মৌখিক পর্যায়ের পর শিশুর লিবিডো পায়ু দেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। পায়ু দেয় সঞ্চালনের মধ্য দিয়ে শিশু তৃপ্তি খুঁজে পায়। নিঃসরণ ও মলসংরক্ষণে লিবিডোর তৃপ্তি ঘটাতে দেখা যায় ফ্রয়েড-এর মতে, পরবর্তী জীবনে অনেক ব্যক্তির মধ্যে যে কৃপণতা বা অতিমাত্রায় সঞ্জয়ের প্রবণতা দেখ যায় তা এই পর্যায়ের লিবিডোর সংবন্ধন (Fixation) থেকে সৃষ্ট হয়।
  3. লিবিডোর লৈঙ্গিক পর্যায়ঃ পায়ু পর্যায়ের পরে আসে লৈঙ্গিক পর্যায়। এই সময় শিশু যৌন ইন্দ্রিয়ে সুখদানের ক্ষমতা আবিষ্কার করে। প্রথম প্রথম লিবিডোর আসক্তি কেবলমাত্র নিজের দৈহিক সুখানুভূতিয় সীমাবদ্ধ থাকে। এখানেই লিবিডোর স্বতঃরতি স্তরের শুরু। এই সময় কোনো বিশেষ বিষয়ে লিবিডোর সংযুক্ত থাকে না, দেহগত সুখই তখন শিশুর কাম্য, ধীরে ধীরে তার অহংসত্তার বিকাশ শুরু হতে থাকে এবং লিবিডো অহমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। এটিই হল প্রাথমিক আত্মরতি, এই স্তরে শিশুর আসক্তি নিজের সত্তার কেন্দ্রীভূত হয়।
▸ প্রসুপ্তিকাল: শৈশবকালের পর যৌনতার প্রসুপ্তিকাল আসে। সাধারণত বালকদের ক্ষেত্রে ছ-বছর এবং বালিকারে ক্ষেত্রে সাত থেকে আট বছরে আসে এবং স্থায়ী হয় যৌবনাগম পর্যন্ত। এই সময়ে শিশুদের মধ্যে যৌন প্রবৃদ্ধি কোনো বাহ্যিক প্রকাশ থাকে না বলে একে প্রসুপ্তিকাল বলা হয়। এই সময়ে শিশুর শৈশবকালীন বিভিন্ন যৌন প্রবণতাগুলির প্রভাব তার আচরণকে সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে প্রভাবিত করে এবং বহু অচেতন আচরণধারার জন্ম দেয়।

▸ বয়ঃসন্ধিকাল : প্রসুপ্তিকালের পরে আসে যৌবনাগম। আর এটিই হল যৌন প্রবৃত্তির বিকাশের শেষ স্তর। এই সময়ে লিবিডো তার অবস্থাগুলি ত্যাগ করে জননেন্দ্রিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। এই স্তরকে উপস্থ বা Genital স্তব ফল হয়। এখানেই লিবিডোর বৈচিত্র্যময় যাত্রার শেষ হয়। এই স্তরেই কিশোর-কিশোরীরা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি  আকৃষ্ট হয়। অনেক সময়েই আত্মরতিতে (Masturbation) লিপ্ত হয়ে সুখানুভূতি বোধ করে। এই বয়সে  কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের সুন্দর করে তোলায় সচেষ্ট হয় যাতে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়।

প্রশ্নঃ৮. Piaget-এর মতে জ্ঞানমূলক বিকাশের বিভিন্ন স্তরগুলি আলোচনা করুন। 
Discuss the different stages of cognitive development according to Piaget.
 পিয়াজেঁ জ্ঞানমূলক বিকাশের চারটি স্তরের কথা বলেছেন। এগুলি হল- 
❏ সংবেদন-সঞ্চালনমূলক চিন্তনের স্তর (Period of Sensory-motor Thinking): এই স্তরটি জন্ম  2 বছর বয়স পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্তরে শিশু অঙ্গ সঞ্চালন ও ইন্দ্রিয়ের দ্বারা পরিবেশের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে তাই এই স্তরকে সংবেদন-সঞ্চালনমূলক স্তর বলা হয়।

▸বৈশিষ্ট্য : (i)  এই স্তরে শিশুর চিন্তা মূলত তার সংবেদন-সঞ্চালনমূলক ক্রিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। (ii) প্রাথমিকভাবে শিশু অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক থাকে। তার চারপাশে অন্যান্যদের অস্তিত্ব সম্পর্কে অচেতন থাকে। জন্মগত তাৎক্ষণিক ক্রিয়াগুলির পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে আচরণধারার পরিবর্তন হয়।

❏ প্রাক্-সক্রিয়তার স্তর (Period of Pre-operation): এই স্তরের সময়কাল 2 বছর বয়স থেকে প্রায় ৪ বছর বয়স পর্যন্ত। পিয়াজেঁ এই স্তরটিকে আবার দুটি উপস্তরে বিভক্ত করেছেন। এগুলি হল-
(a) প্রাক্‌-ধারণামূলক স্তর (Pre-conceptual stage): এই স্তর 2 থেকে 4 বছর বয়স পর্যন্ত বিস্তৃত।
▸বৈশিষ্ট্য : (i) এই স্তরে শিশু সংবেদন-সঞ্চালনমূলক ক্রিয়াগুলিকে কতকগুলি সংকেতের সাহায্যে প্রকাশ করে পরিবেশের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করার সময় শিশু এই সংকেতগুলিই নিজেই ব্যবহার করে।

সজ্ঞামূলক চিত্তনের স্তর (Period of intuitive thought): এই স্তর 4 থেকে ৪ বছর বয়স পর্যন্ত বিস্তৃত।
▸বৈশিষ্ট্য : (i)  এই স্তরে শিশুর সক্রিয় বাস্তবধর্মী চিন্তনের বিকাশ হতে থাকে। (ii) শিশু ভাষার মাধ্যমে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া (Social interaction) করে। ফলে তার মানসিক সংগঠন ও ধারণা পরিবর্তিত হতে থাকে এবং বিভিন্ন বিষয়ে ধারণার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে।

নির্দিষ্ট সক্রিয়তার স্তর (Period of Concrete Operation): এই স্তরটি ৪ থেকে 14 বছর বয়স পর্যন্ত নির্দিষ্ট। এই স্তরে চিন্তনের মূলভিত্তি হল 'ধারণা' যা শিশুরা সজ্ঞামূলক চিন্তনের স্তরে গঠন করে। এই ধারণাগুলিকে পিয়াজেঁ বলেছেন 'অপারেশন' (Operation)। এগুলি হল এমন কতকগুলি মানসিক প্রতিক্রিয়া যা শিশুরা আত্তীকরণের মাধ্যমে নিজেদের আচরণের অঙ্গীভূত করে।

▸বৈশিষ্ট্য :  (i) এই স্তরে শিশু যুক্তিপূর্ণ চিন্তার দ্বারা সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে পারে। (ii) এই স্তরে শিশু বাস্তব কোনো উদাহরণ পেলে তা থেকে অভিসারী চিন্তন বিচ্ছুরিত করতে পারে। কোনো বস্তুর উপস্থিতি তার মনে ঔৎসুক্য জাগায়। কিন্তু বিমূর্ত চিন্তন বা ধারণা গঠন করতে পারে না।

❏ সংগঠিত সক্রিয়তার স্তর (Period of Formal Operation): এই স্তর 14 থেকে 18 বছর বয়স পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্তরে শিশু কৈশোর কাটিয়ে বয়ঃসন্ধিক্ষণের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়। ফলে তার মনন ও চিন্তন সুসংবদ্ধ সক্রিয়তায় রূপান্তরিত হয়।

▸বৈশিষ্ট্য : (i) এই স্তরে শিশু যে-কোনো কাজের সমগ্র সম্ভাব্যতাই গ্রহণ করে, প্রকল্প গঠন করে, পরীক্ষা করে, বিশ্লেষণ করে, সিদ্ধান্তগ্রহণ করে এবং প্রয়োজনে তা গ্রহণ বা বর্জন করে। (ii) এই স্তরে শিশুর মনে যে যুক্তিগ্রাহ্যতা জন্ম নেয় তার মূল কারণ তার মনের মধ্যে কী, কিন্তু, কেন-র মতো প্রশ্ন জাগে। তাই সে বস্তুভিত্তিক চিন্তার বাইরেও বিমূর্ত ভাবনার আশ্রয় নেয়। শুধুমাত্র মূর্ত বস্তু নয়, কোনো বর্ণ বা শব্দও তাকে এক দুর্রেয় বিমূর্ত চিন্তার জগতে নিয়ে যেতে পারে।

প্রশ্নঃ৯. পিয়াজেঁ বর্ণিত জ্ঞানমূলক বিকাশের প্রাক-সক্রিয়তা স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলি লিখুন। 
Write the characteristics of the pre-operational stage of cognitive development as stated by Piaget.
▸ প্রাক-সক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছু তথ্য উল্লেখ করা যায়। এই স্তরের শিশুরা তাদের জগৎ ছাড়াও বাইরের জগতের অস্তিত্ব বুঝতে পারে। শিশুদের ক্ষমতা এবং জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে, এই স্তরের চারটি বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্ট করা যায়- (a) বাস্তববাদ (Realism); (b) সর্বপ্রাণবাদ (Animism); (c) কৃত্রিমতা (Artificiality) এবং (d) অবযুক্তিপূর্ণ বিচার (Transductive reasoning) |
  • (a) বাস্তববাদ (Realism): শিশুরা ধীরে ধীরে প্রকৃত জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করে। বহির্জগৎ ও অন্তর্জগৎ সম্পর্কে। তাদের জ্ঞান হয়। পিয়াজেঁ বলেন, শিশুদের প্রথম বহির্জগৎ ও অন্তর্জগৎ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকে না পরে প্রায় 7 বছর বয়সে এই বিভ্রান্তি দূর হয়।
  • (b) সর্বপ্রাণবাদ (Animism): সর্বপ্রাণবাদ হল সব বস্তুকেই সজীব বলে মনে করা, শিশুদের এই বৈশিষ্ট্যটি দেখা যায়। তারা এমন অনেক বস্তুকে সজীব এবং সচেতন বলে মনে করে বড়োদের নিকট সেগুলি জড়বস্তু। পিয়াজেঁ মনে করেন, পরে শিশু তার চিন্তার সঙ্গে অন্যদের চিন্তার তুলনা করার মধ্য দিয়ে সর্বপ্রাণবাদের অসারতা বুঝতে পারে। পিয়াজেঁ সর্বপ্রাণবাদের চারটি স্তরের উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল যথাক্রমে- (i) প্রায় সব বস্তুই সজীব এবং সচেতন।(ii) কেবল চলনক্ষম বস্তু সজীব। (ii) যেসব বস্তু স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলনক্ষম তারাই সজীব।(iv) সচেতনতা কেবল জীবজগতে সীমাবদ্ধ।
  • (c) কৃত্রিমতা (Artificiality): শিশুরা মনে করে সবকিছুই মানুষের সৃষ্টি। একেই কৃত্রিমতাবাদ বলে। এর উদাহরণ দিতে গিয়ে পিয়াজেঁ বলেছেন, তাঁর পরীক্ষিত অনেক শিশুকেই যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল 'কেমন করে চাঁদের সৃষ্টি হয়?' অনেকেই উত্তর দিয়েছিল 'যখন থেকে আমরা বেঁচে আছি"। শিশুর মধ্যে যতই আত্মকেন্দ্রিকতা হ্রাস পেতে থাকে ততই সে বাস্তববাদী হয়ে ওঠে এবং তার প্রজ্ঞা-সংগঠনে বাস্তবতা বিশেষ ভূমিকা নেয়। এই স্তরের শেষের দিকে কৃত্রিমতাবাদ কিছুটা অংশ বাস্তব এবং কিছু অংশ কৃত্রিম হয়। চাঁদের উৎস সম্পর্কে তাদের বক্তব্য 'চাঁদ মেঘ থেকে আসে আর মেঘ আসে উঁচু বাড়ি থেকে। 7 বছর বয়সে শিশুরা বুঝতে পারে চাঁদের উৎসের ক্ষেত্রে মানুষের কোনো ভূমিকা নেই।
  • (d) অবযুক্তিপূর্ণ বিচার (Transductive Reasoning): অবযুক্তিপূর্ণ বিচার আরোহী বা অবরোহী কোনোটিই নয়। এখানে বিচারকরণ একটি থেকে অন্যটি হয় যা অযৌক্তিক। যেমন—সূর্য পড়ে যায় না কারণ এটি উত্তপ্ত। সূর্য থেমে আছে কারণ এটি হলুদ।
প্রশ্নঃ১০. এরিকসন-এর মনো-সামাজিক বিকাশের তত্ত্বটি আলোচনা করুন। 
Briefly describe Erickson's theory on psycho-social development.
▸ ফ্রয়েড বলেছিলেন—জন্মাবস্থায় মানুষের অবচেতন মনে ইদ (Id) অবস্থান করে। এই ইদ থেকেই মানুষের সমস্ত আচরণ এবং ইগো (Ego) সৃষ্টি হয়। এই ইদ, ইগো এবং সুপার ইগোর (Super ego) দ্বন্দ্বের ফলেই ব্যক্তিজীবনের বিকাশ ঘটে। কিন্তু এরিকসন-এর মতে—
  1. জন্মাবস্থায় মানুষের মধ্যে ইগো বর্তমান থাকে এবং ইদ-এর প্রভাব ছাড়াই তা স্বাধীনভাবে অবস্থান করে। সুতরাং, ইগো একটি স্বাধীন সত্তা।
  2. ইগো যেহেতু ইদ-এর শক্তির উপর নির্ভরশীল নয়, তাই ইদ এবং ইগোর মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। অর্থাৎ ইগোঁ জন্মাকথা থেকেই দ্বন্দ্বমুক্ত অবস্থায় থাকে।
  3. সামাজিক পরিবেশে অভিযোজনের ফলে ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়। ব্যক্তিত্ব বিকাশের অর্থ হল ইগোর বিকাশ। সুতরাং, ইগোর বিকাশের মৌলিক উপাদান হল সমাজ।
  4. চাহিদা পূরণের জন্য ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বকে এরিকসন বলেছেন মনো-সামাজিক দ্বন্দ্ব (Psycho-social conflict) এই মনো-সামাজিক দ্বন্দ্বের ফলেই ইগোর বিকাশ ঘটে।
  5. সুতরাং, ইগো বিকাশের মূল কারণ হল মনো-সামাজিক দ্বন্দ্ব, যৌনশক্তির দ্বন্দ্ব নয়।
  6. ইগোর বিকাশে ব্যক্তিগত পার্থক্য দেখা যায়। ইগোর বিকাশে যে ব্যক্তিগত বৈষম্য দেখা যায় তা জন্মগত এবং এর শক্তিও অন্ত্যজ। এই ইগোর বিকাশের ফলেই ব্যক্তিজীবনের বিকাশ ঘটে।
ফ্রয়েড তাঁর মনোসমীক্ষণ তত্ত্বে ‘লিবিডো’-কেই আত্মগত শক্তির মূল উৎস বলেছেন। সেই কারণে লিবিডোকে তিনি ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রাথমিক শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ব্যক্তির ইগো কীভাবে বিকশিত হয় তা ব্যাখ্যা করেননি। কিন্তু এরিকসন তাঁর তত্ত্বে ইগো বিকাশের মাধ্যমে কীভাবে ব্যক্তিজীবনে বহুমুখী ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে তা বর্ণনা করেছেন।
  1. ইগো ব্যক্তিকে অভিযোজনে সহায়তা করে। বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তি যে অভিজ্ঞতাগুলি অর্জন করে সেগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন করে ইগো।
  2. ইগো, ইদ ও সুপার ইগোর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে। ইদের চরম জৈবিক চাহিদা এবং সুপার ইগোর চরম নৈতিক চাহিদার মধ্যে সাম্যাবস্থা বজায় রাখে ইগো। 
  3. এই সাম্যাবস্থা বজায় রাখার জন্য ইগো বাস্তব পরিস্থিতি, পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং আনুষঙ্গিক পটভূমি ইত্যাদি বিচার করে, ব্যক্তি কোন পরিস্থিতিতে কী ধরনের আচরণ করবে তার প্রকৃতি নির্দেশ করে। এই কাজ করার জন্য ইগো প্রয়োজনে আত্মরক্ষার কৌশল (Defence Mechanism) অবলম্বন করে।
  4. ব্যক্তির ইগো যখন বাহ্যিক জগতের সংস্পর্শে আসে তখনই বাহ্যিক জগতের সঙ্গে ইগোর সংঘাত ঘটে এবং ব্যক্তি সেই সংকটজনক পরিস্থিতির মোকাবিলা করে। প্রত্যেক পরিস্থিতি ইগোর কাছে নতুন। সাধারণত একইরকম পরিস্থিতি দ্বিতীয়বার আসে না। যদি কোনো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে সেই পরিস্থিতি পূর্ব পরিচিতির প্রভাবেই বদলে যায়। অর্থাৎ একবার ইগোর যে সাংগঠনিক পরিবর্তন হয়, তা কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যায় না। এইভাবেই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন স্তরে ইগোর বিকাশ ঘটে।
  5. ব্যক্তির ইগোর বিকাশ পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ঊর্ধ্ব ক্রমানুসারে পৃথকীকরণ ও বিশেষীকরণ (Increasing Differentiation and Specialization) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে।
  6. ব্যক্তির জীবনবিকাশ তার জন্মগতভাবে প্রাপ্ত কতকগুলি বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলির দ্বারা ব্যক্তি তার সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন করে। এর ফলে তার ইগোর বিস্তৃতি ঘটে, নিত্যনতুন পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনে সক্ষম হয়।
  7. যখন ব্যক্তির ইগোর চাহিদা এবং সমাজের চাহিদার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় তখনই সৃষ্টি হয় মনোসামাজিক দ্বন্দ্ব,যা ব্যক্তিকে অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে। এই বিরোধকে এরিকসন বলেছেন সংকটকাল এই সংকটের উৎস দুটি। একটি ব্যক্তি নিজে এবং অপরটি হল একটি সামাজিক বাধা যার সৃষ্টি সমাজ থেকে।ব্যক্তি এই সংকটমূলক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই অভিযোজন করে এবং এর ফলেই ব্যক্তিজীবনের বিকাশ ঘটে।
  8. জীবনবিকাশের বিভিন্ন স্তরে এই সংকটগুলি বিভিন্ন রকম হয়। ব্যক্তি বিভিন্ন স্তরে কীভাবে এই সংকটগুলির মোকাবিলা করে তার উপরই নির্ভর করে তার ব্যক্তিত্ব কেমন হবে। ব্যক্তির আচরণে এর প্রভাব ধনাত্মক বা ঋণাত্মক দু-প্রকারই হতে পারে।
  9. এরিকসন এই জাতীয় আটটি সংকটের কথা বলেছেন এবং এই সংকটগুলিকে জীবনবিকাশের এক-একটি স্তর হিসেবে বর্ণনা করে ব্যক্তির সম্পূর্ণ জীবনে কীভাবে মনো-সামাজিক বিকাশ ঘটে তা বর্ণনা করেছেন।
প্রশ্নঃ১১. প্রাক্-সক্রিয়তার স্তর কোনটি? প্রাক্-সক্রিয়তার স্তরের শিক্ষাগত তাৎপর্য উল্লেখ করুন। 
What is preoperational stage? Mention the educational significance of pre-operational stage.
▸ এই স্তরের সময়কাল 2 বছর থেকে 7 বছর। প্রাক্-সক্রিয়তার স্তর সম্পর্কে অনুধাবন করতে হলে সক্রিয়তা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। পিয়াজেঁ-র মতে, সক্রিয়তা হল জ্ঞান অর্জনের জন্য মানসিক ক্রিয়া করা। কোনো বস্তু সম্পর্কে জানতে তার প্রতি সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। কোনো বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা, সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বোঝা, পরিমাপ করা, সরিয়ে নেওয়া, পুনরায় ফিরিয়ে নেওয়া প্রভৃতিকে পিয়াজেঁ মানসিক প্রক্রিয়া হিসেবে চিন্তা করেছেন।

প্রাক্-সক্রিয়তার স্তরের শিক্ষাগত তাৎপর্য (Educational Significance of Pre-operational Stage): প্রাক্‌-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা যাতে বস্তুকে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে পারে সে ব্যাপারে শিক্ষক সর্বদা উদ্যোগী হবেন এবং যত বেশি সম্ভব শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনে সচেষ্ট হবেন। এই স্তরের শিক্ষার্থীরা যে সমস্ত বিষয় পছন্দ করে এবং যেগুলি দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, তা নিম্নে উল্লেখ করা হল—
  1. বিলম্বিত অনুকরণ (Delayed imitation): প্রাক্-সক্রিয়তা স্তরের শিক্ষার্থীরা পূর্বে প্রত্যক্ষ করা কোনো কাজকে অনুকরণ করতে পারে। যেমন – চিড়িয়াখানা দেখা, কোনো জন্তুর আচরণ নকল করতে পারা ইত্যাদি। একেই বলে বিলম্বিত অনুকরণ।
  2. রূপক অভিনয় (Mental acting): শিশুরা ঘুমিয়ে পড়ার ভান করতে বা নিজেদের অন্য কিছু ভাবতে ভালোবাসে।
  3. অঙ্কন (Drawing): এই বয়সের শিশুরা তাদের কল্পনাগুলিকে অঙ্কনের মধ্যে রূপ দিতে ভালোবাসে। অঙ্কনের মধ্যে দিয়ে তাদের চিন্তা ও চিন্তার মাত্রার পরিচয় পাওয়া যায়। তাদের অঙ্কন প্রসঙ্গে কথাবার্তা বলতে উৎসাহ দিতে হবে।
  4. মানসিক প্রতিকল্প (Mental Image): এই স্তরের শিশুরা মানসিক প্রতিকল্প গঠন করতে পারে, বিষয়বস্তুসমূহ প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু বস্তু বা ঘটনাসমূহকে পরিবর্তন বা অনুমান করতে পারে না।
  5. ভাষা (Language): এই স্তরের শিশুরা চিন্তার বাহন হিসেবে ভাষাকে ব্যবহার করে। শিক্ষক, অভিভাবক সেজন্যএমন পরিবেশ রচনা করবেন যেখানে শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায়।
প্রশ্নঃ১২. ব্যক্তির বৃদ্ধি এবং বিকাশে পরিবারের ভূমিকা ব্যাখ্যা করুন। 
Describe the role of family in Growth and Development of individuals.
▸সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলির মধ্যে পরিবারের ভূমিকাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি কাঁচামাল জোগায়, সংস্কৃতি নকশা জোগায় এবং পরিবারে পিতামাতা কারিগর হিসেবে কাজ করেন। কারণ শিশুর দৈহিক, মানসিক, পার্থিব ও অপার্থিব যাবতীয় প্রয়োজন মেটায় পরিবার। কীভাবে কথা বলতে হবে, নিজের আবেগ কীভাবে প্রকাশ করা যায় তা শিশু পরিবার থেকে শিক্ষালাভ করে। পরিবারেই শিশু তার চিন্তা, আবেগ ও কর্মের অভ্যাস গঠন করে। পরিবারেই তৈরি হয় ব্যক্তিত্ববান কিংবা ব্যক্তিত্বহীন মানুষ।

ব্যক্তিত্ব হল কার্যকরী সম্পদ, সাফল্যের চাবিকাঠি, চৌম্বক শক্তি, অগ্রণী শক্তি, এগিয়ে নেওয়ার শক্তি, মানুষের চালনা শক্তি, একটি আদর্শ, একটি দর্শন, চারিত্রিক গুণাবলি। অন্যের সঙ্গে কীভাবে মিশতে হবে, চালচলন বা ভাবভঙ্গি কেমন হবে—এসব শিক্ষা প্রথম পরিবার থেকেই শুরু হয়। মা-বাবা এবং চারপাশের পরিবেশ থেকে কোন্‌টা ঠিক কোনটা বেঠিকএসব সঠিকভাবে শেখার ফলে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিত্ব সহজেই গড়ে ওঠে। মৌলিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দেওয়ার ফলে শুধু ব্যক্তির নিজেরই নয়, আশেপাশের লোকদেরও সমস্যা দেখা দেয়। ব্যক্তিজীবনের ব্যক্তিত্বের সীমারেখা নির্ধারিত হয় কথাবার্তায়, আচার-আচরণে, চালচলনে, ধ্যানধারণায় ও মন-মানসিকতায়। ব্যক্তিত্বহীনদের আত্মনিয়ন্ত্রণ থাকে না, আত্মনির্ভরশীল হতে পারে না, পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে, আত্মজ্ঞান, আত্মোপলব্ধি থাকে না, আত্মবিশ্লেষণ, আত্মসমালোচনা, আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মশুদ্ধি করতে পারে না, আত্মত্যাগের মন-মানসিকতা হারিয়ে ফেলে, আত্মসম্মান করে না, মানবতা লোপ পায়, ইচ্ছা, স্বপ্নও লক্ষ্য হারায়, ভয় পায়, হীনম্মন্যতায় ভোগে, কর্মদক্ষতা হারায়, ব্যর্থ হয়।

ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সুনাগরিকরা শালীন ভাষা ব্যবহার করে, সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়, মার্জিত ও স্বাভাবিক আচার-আচরণ করে, ক্রোধ-উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখে, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা গড়ে তোলে, অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না, কথা বলার সময় সুন্দর সুন্দর ভাষা ব্যবহার করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মার্জিত পোশাক পরিধান করে, হাসি মুখে কথা বলে, অতিরিক্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকে, যেখানে যেমন যথাযথ তেমন থাকে, চরিত্রবান হয়, ইতিবাচক চিন্তা করে,
বাঁকা বা জটিল কথা বলে না, অন্যের কাজকর্মের প্রশংসা করে এবং ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। শিশুর দেহ-মনের পূর্ণ বিকাশের জন্য আনন্দ, ভালোবাসা ও সমঝোতাপূর্ণ পরিবেশে তাকে বেড়ে উঠতে দিতে হবে। পরিবারে ধর্মীয় রীতিনীতি, নৈতিকতা, সততা এসব বিষয় শেখাতে হবে। শিশুর সম্ভাব্য সর্বোত্তম চাহিদা পূরণে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিশুর সফলতার প্রশংসা করতে হবে। শিশুর অকৃতকার্যতার বিষয়গুলি বড়ো করে তুলে ধরলে শিশু হীনম্মন্যতায় ভুগবে। পরিবারে ছোটোরা বড়োদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ছোটোদের প্রতি বড়োরা আন্তরিক হলে—তা থেকেই শিশুরা এসব গুণাবলি অর্জন করবে। শিশুর শিক্ষার ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। শিশুকে গালমন্দ বা তিরস্কার করা যাবে না তোমার দ্বারা কিছু  হবে না' এমন নেতিবাচক বাক্যও শিশুকে বলা যাবে না। শিশুর মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, শৃঙ্খলা ও জন্য উপদেশমূলক ও শিক্ষামূলক গল্প-ছড়া শোনাতে হবে। একটি শিশুর যখন আমি-তুমি সম্পর্ক, নিজের নাম অথবা সকল বস্তু বা ব্যক্তির নাম সম্পর্কে কৌতূহলী হয় তখন থেকেই তাকে হ্যাঁ-না, ভালোমন্দ, সুন্দর-অসুন্দরের ধারণাকে সুস্পষ্ট করে দেওয়া মায়ের কর্তব্য। শিশু মায়ের পছন্দের বিষয়গুলিকে বারবার করতে পছন্দ করে, উৎসাহিত হয় এবং অপছন্দের বিষয়গুলি করে না। তাই মাকে ভালোমন্দের বিচার করে শিশুকে বুঝিয়ে দিতে হবে তাঁর পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়। মায়ের আচরণ যদি মার্জিত হয় তাহলে শিশুর ক্ষেত্রে মার্জিত ও শিষ্ট আচরণ আশা করা যায়। সুতরাং বলা যায় যে, শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণই শুধু নয়, পরিবারের কোনো বিকল্পই নেই।

প্রশ্নঃ১৩. অহংবোধের বিকাশের বিভিন্ন স্তরগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। 
Describe briefly the different stages of development of self-concept.
▸অহংবোধের বিকাশের বিভিন্ন স্তরগুলি হল -
দৈহিক অহংবোধের বিকাশ : (i) শিশুর অহংবোধের বিকাশ শুরু হয় তার দেহ সম্পর্কে সচেতনতার মধ্যে দিয়ে। (ii) ঠিক কোন্ সময়ে এই অহংবোধের বিকাশ শুরু হয় তা সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে মনোবিদদের মতে, শিশু যখন প্রাথমিকভাবে তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলির ব্যবহার শুরু করে সে সময়েই তার দৈহিক সচেতনতা লক্ষ করা যায়। এই অবস্থা থেকেই অহংবোধের বিকাশ শুরু হয়।

সামাজিক অহংবোধের বিকাশ :
(i) শিশু যে বয়স থেকে তার চারপাশের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে সামাজিক প্রতিক্রিয়া করতে সক্ষম হয়, সেই বয়স থেকেই তার সামাজিক অহংবোধ বিকাশের প্রক্রিয়া শুরু হয়। (ii) শিশুর পাঁচ মাস বয়স থেকে মূলত মাকে ঘিরেই তার অহংবোধ সামাজিক মাত্রা লাভ করে।

মৌলিক অহংবোধের বিকাশ : (i) মৌলিক অহংবোধের বিকাশ শুরু হয় ব্যক্তির চোদ্দো-পনেরো বছর বয়সের পর। (ii) দৈহিক ও সামাজিক অহংবোধ গঠনের জন্য শিশুকে অন্যের উপর নির্ভর করতে হয় কিন্তু মৌলিক অহংবোধ সম্পূর্ণ স্বনির্ভর ধারণা।

আদর্শগত অহংবোধের বিকাশ : (i)মৌলিক অহংবোধ বিকাশের পূর্বেই শিশুর আদর্শগত অহংবোধ গড়ে ওঠে। (ii) বিভিন্ন পর্যবেক্ষণলব্ধ গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, তিন থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু যাকে আদর্শ ব্যক্তি বলে মনে করে, তার সঙ্গে নিজেকে অভিন্ন মনে করে এবং খেলার মধ্যে সেই ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করে। এই অভিন্নতার অনুভব থেকে তার অহংবোধ জাগ্রত হয়।

উপরোক্ত বিভিন্ন অহংবোধগুলি ব্যক্তির জীবনে বিভিন্ন সময়ে আবির্ভাব ঘটে এবং এক-এক সময় এক এক ধরনের অহংবোধ তার আচরণকে বেশি প্রভাবিত করে। তবে এগুলি কখনোই বিচ্ছিন্নভাবে থাকে না। মৌলিক অহংবোধের বিকাশ শুরু হলে অন্যান্য অহংবোধগুলি ধীরে ধীরে তার অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে এবং বিভিন্ন অহংবোধগুলির মধ্যে সমন্বয় ঘটতে থাকে। এই সমন্বয়নের কাজ সম্পূর্ণ হলে বিভিন্ন সময়ে গঠিত অহংবোধগুলির মধ্যে আর দ্বন্দ্ব থাকে না। ফলে প্রকৃত অহংবোধ গড়ে ওঠে এবং ব্যক্তির আচরণের মধ্যে পরিপূর্ণ সামগ্রস্য দেখা যায়। বাস্তবে এই ধরনের আদর্শ অবস্থা খুবই কম ঘটে। তবে ব্যক্তিকে এই আদর্শ ব্যক্তিত্ব অর্জনের জন্য সচেষ্ট হতে হবে। এইভাবেই ব্যক্তির নিজস্ব পরিচয় (Personal Identity) গড়ে ওঠে। শিক্ষা তাকে এই বিষয়ে সর্বতোভাবে সহায়তা করে।

প্রশ্নঃ১৪. এরিকসন-এর মনোসামাজিক বিকাশের স্তরগুলি উল্লেখ করুন। শিক্ষকরা কীভাবে বয়ঃসন্ধি স্তরের শিক্ষার্থীদের আত্মপরিচয় লাভে সহায়তা করতে পারেন? 
State the stages of psychosocial development identified by Erickson. How teachers can help the adolescents in their search for identity?
❏  প্রথম অংশ: এরিকসন-এর মনোসামাজিক বিকাশের স্তরগুলি হল-
  1. প্রথম স্তর; বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব,
  2. দ্বিতীয় স্তর: স্বাধীনতা, লজ্জা ও সন্দেহের দ্বন্দ্ব,
  3. তৃতীয় স্তর: উদ্যোগ ও অপরাধবোধের দ্বন্দ্ব,
  4. চতুর্থ স্তর: উদ্যম ও হীনম্মন্যতার দ্বন্দ্ব,
  5. পঞ্চম স্তর: আত্মপরিচয় ও আত্মপরিচয় বিভ্রান্তির দ্বন্দ্ব,
  6. যষ্ঠ স্তর: হৃদ্যতা ও একাকিত্বের দ্বন্দ্ব,
  7. সপ্তম স্তর: অগ্রমুখিতা ও স্থবিরতার দ্বন্দ্ব,
  8. অষ্টম স্তর: সামগ্ৰস্যপূর্ণতা ও হতাশার দ্বন্দ্ব।
দ্বিতীয় অংশ: প্রাক্-কৈশোর কাল থেকে ছেলেমেয়েরা নিজেদের স্বভাব, সক্ষমতা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বিমূর্ত ভাষায় (Abstract terms) বর্ণনা করতে পারে। বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী, বদরাগী-শান্ত, চালাক-চতুর, সহজ-সরল, লাজুক ইত্যাদি নানাভাবে নিজেকে প্রায় সঠিকভাবে বর্ণনা করতে পারে। কিন্তু মোটের উপর নিজেকে সম্পূর্ণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বর্ণনা করা সাধারণত স্বাভাবিক নয়। ক্রমশ মধ্য ও উত্তর-কৈশোর কালে নিজের সম্বন্ধে এই সমস্ত ধারণা আরও সংগঠিত হয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব তথা আত্মপরিচয়ের একটি জটিল কিন্তু সংহত রূপ চূড়ান্ত হিসেবে গঠন করে নেয়। তখন একজন ছেলে বা মেয়ে পরিষ্কারভাবে জানে সে কী, কীরকম এবং কী পারে বা পারে না। নিজের সম্বন্ধে এই স্পষ্ট ধারণা বা পরিচয় তার চূড়ান্ত আত্মপ্রত্যয়। একটি প্রশ্ন এখানে করা যায় যে ব্যক্তির আত্মপ্রত্যয় পরিমাপ করার যে সমস্ত অভীক্ষা আছে তার সাহায্যে তার যে বর্ণনা পাওয়া যায় এবং সরাসরি তাকে নিজের সম্বন্ধে বিমূর্ত ভাষায় বর্ণনা করতে বললে দুই বর্ণনা কি একই রকম হবে। এই প্রশ্নের উত্তর নেতিবাচক কারণ সরাসরি নিজেকে শান্ত-চঞ্চল, পরোপকারী, আত্মকেন্দ্রিক ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যসূচক বর্ণনার মাধ্যমে প্রকৃত ও সঠিক আত্মপ্রত্যয়ের বর্ণনা পাওয়া কঠিন কারণ সেখানে সামাজিক আকাঙ্ক্ষার বিচার (Social Desirability) যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থাৎ আত্মপ্রত্যয় গঠন ও তার বহিঃপ্রকাশ কোনোটিই সমাজ নিরপেক্ষ নয়।

প্রশ্নঃ১৫.  ভাষা বিকাশের স্তরগুলি ব্যাখ্যা করুন। 
Explain the stages of language development.
ভাষা ও বাচনিক বিকাশ প্রধান দুটি স্তরে বিভক্ত – 1. প্রাক্-বাচনিক স্তর (Pre-linguistic stage) এবং 2. বাচনিক স্তর (Linguistic stage)। প্রাক্‌-বাচনিক স্তর মূলত গৃহীত ভাষার স্তর (Receptive language stage) এবং বাচনিক স্তর ব্যক্ত ভাষার স্তর (Expressive language stage ) । তবে এই বিভাজন সর্বার্থে সঠিক নয় তার কারণ প্রাক্-বাচনিক স্তরের শিশুর যোগাযোগ প্রচেষ্টা শুরু হয় কিন্তু তার যোগাযোগের অভিব্যক্তিকে পুরোপুরি ভাষা বলা যায় না।
  • প্রাক্‌-বাচনিক স্তর (Pre-linguistic Stage): কথা বলার বহুপূর্ব থেকেই শিশুদের ভাষাবোধের সূত্রপাত হয়। প্রকৃতপক্ষে জন্মের পর থেকেই তারা ভাষা আয়ত্ত করতে প্রস্তুত হয়। কেন শিশুরা ভাষা শেখে অথবা কীভাবে শেখে সে বিষয়ে একাধিক তত্ত্ব আছে। আপাতত প্রাক্‌-বাচনিক স্তরের শিশুদের ভাষাবোধ সম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলা প্রয়োজন। গবেষকরা দেখছেন এক মাস বয়স থেকেই শিশুরা মাতৃভাষা, অর্থাৎ যে ভাষায় তার চারপাশের মানুষজন, পিতামাতা কথা বলে তার সঙ্গে ভিন্ন ভাষার পার্থক্য বুঝতে শুরু করে। কথা বলতে না পারলেও শিশুরা- চোখের দিকে তাকিয়ে অন্যের চোখে চোখ রাখতে পারে, আবার দৃষ্টি ফিরেও নিতে পারে। অন্যদের দেখাদেখি কোনো একটি বিশেষ দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করে রাখে। দুই মাস বয়সে তীক্ষ্ণ স্বরধ্বনি (স্বরবর্ণবাচক শব্দ) যুক্ত শব্দ করতে পারে। সাধারণত খুশি হলে তারা অনুরূপ শব্দ করে (Coning) | চার মাস বয়সে স্বরধ্বনির মধ্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে নানা ধরনের শব্দ করতে পারে (Babbling) | অন্য ব্যক্তির সঙ্গে একত্রে কোনো বস্তুর প্রতি মনোযোগ দিতে পারে এই সময়ে কোনো বস্তু ইঙ্গিতে দেখিয়ে, হাত দিয়ে ধরে নিজের অস্তিত্ব বোঝাতে চেষ্টা করে। কিছু একটা পাওয়ার জন্য ইঙ্গিত, কণ্ঠধ্বনি বা কোনো বস্তুকে ধরে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। 6 থেকে 12 মাস বয়সের মধ্যে স্বরধ্বনির সঙ্গে কিছু কিছু ব্যঞ্জনধ্বনি যুক্ত হয়ে উচ্চারিত শব্দবৈচিত্র্যকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। তখন কথা বলতে না পারলেও তাদের চাহিদা, ভালো লাগা, মন্দ লাগা, প্রক্ষোভজনিত মনোভাব জোরালোভাবে প্রকাশ করতে পারে। তারা কয়েকটি বস্তুর নাম জানে, মা-বাবাকে চেনে এবং নানাভাবে তা বুঝিয়ে দিতে পারে। কিছু সহজ নির্দেশ শিশুরা পালন করতে পারে যেমন— দেওয়া নেওয়া। ছয় মাস বয়সের পর থেকেই শিশুরা শব্দের অর্থ, এক শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের অর্থ বুঝতে পারে।মনোবিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন ওই সময় থেকে তাদের বাচনিক বিকাশের প্রস্তুতি দ্রুততর হতে শুরু করে। শিশুরা তখন কথা বলতে না পারলেও কথ্য ভাষার পরিচিত শব্দগুলিকে চিনতে পারে। তার চারপাশের মানুষ যখন কথা বলে তখন শুধু একক শব্দ নয়, শব্দগুচ্ছ বা বাক্যাংশের অর্থও বুঝতে পারে। 7 থেকে 9 মাস বয়সের মধ্যে অন্যের কথার প্রতি মনোযোগ দীর্ঘতর হয়। তার ফলে কথার ঝোঁক, উচ্চারণের বৈশিষ্ট্য, ধ্বনির পারম্পর্য ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা তৈরি হয়। এককথায় প্রথম বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মাতৃভাষার গঠনশৈলী সম্বন্ধে তার কিছুটা ধারণা তৈরি হয়ে যায়। একটি পরীক্ষা করে মনোবিজ্ঞানীরা দেখেছেন আট মাস বয়সের শিশুরা মাত্র এক মিনিট কথা শোনার পরই অর্থহীন ও অর্থযুক্ত শব্দের মধ্যে পার্থক্য আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারে।
  • বাচনিক স্তর (Lingual Stage): 12 মাস বয়সের কাছাকাছি সময় থেকে শিশুর বাচনিক বিকাশ শুরু হয়ে যায়, কারণ এই সময় থেকে 15 মাস বয়সের মধ্যেই তারা ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি যুক্ত করে কিছু কিছু অর্থযুক্ত কিন্তু একবর্ণবিশিষ্ট শব্দ বলতে শুরু করে (তা, দা, মা, দে, নে, ইত্যাদি)। এই পর্যায়ের শুরুতে একই শব্দ ক্রমাগত অনেকবার উচ্চারণ করার প্রবণতা দেখা যায়। তবে অন্যদের পক্ষে তার অর্থবোধ করা কঠিন। প্রায় 18 মাস বয়সের সময় দুই বর্ণবিশিষ্ট শব্দ বলতে শুরু করে এবং তখন থেকে তার শেখা শব্দভাণ্ডার দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
প্রশ্নঃ১৬. শিশুর ভাষা বিকাশে প্রভাব সৃষ্টিকারী উপাদানগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করুন। 
Discuss the factors affecting the language development of child.
শিশুর ভাষা বিকাশে নানা বিষয় প্রভাব বিস্তার করে। যেমন-
  1. ভাষার বিকাশ এবং পরিবারের আর্থসামাজিক আবস্থা: পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থা শিশুর ভাষা বিকাশে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা ভাষা বিকাশে এগিয়ে থাকে। কারণ এই ধরনের পিতামাতাগণ তাদের শিশু সন্তানদের শুদ্ধভাবে কথা বলতে উৎসাহিত করে, শিশুদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছোটোবেলা থেকেই স্থাপিত হয় এবং বই, টেলিভিশন ইত্যাদি শিশুর ভাষা শিক্ষাকে ত্বরান্বিত করে। অন্যদিকে নিম্নবিত্ত পরিবারের পিতামাতাদের সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক কেবলমাত্র শাসনকেই কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এবং শুদ্ধভাবে কথা শেখার কোনো পরিবেশ থাকে না। যার ফলে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা ভাষা শিক্ষায় পিছিয়ে থাকে। অনেক সময় অনাথ আশ্রমে, হোমে বা পরিবারের বাইরে পালিত শিশুদের মধ্যে ভাষার বিকাশ যথাযথ হয় না। এর কারণ হল অধিকাংশ অনাথ আশ্রম বা হোমে শিশুদের কেবলমাত্র দৈহিক চাহিদা যেমন—খাদ্য, নিদ্রা ইত্যাদি পূরণ করা হয়, শিশুর সঙ্গে কথা বলা বা শিশুকে কথা বলতে উৎসাহিত করা হয় না।
  2. মানসিক ও বোধশক্তির বিকাশ: ভাষার বিকাশে মানসিক ও বোধশক্তির বিকাশ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক বিকাশ, বুদ্ধির বিকাশ, ধারণার বিকাশ পরস্পর সম্পর্কিত, বস্তুর স্থায়িত্ব (Object Permanence) এবং অনুকরণের (Imitation) দক্ষতার উপর ভাষার বিকাশ অনেকাংশে নির্ভর করে। এই সব বিকাশে পিছিয়ে পড়লে শিশুর ভাষার বিকাশও ব্যাহত হয়।
  3. চলনের বিকাশ: শিশুর বিকাশে প্রথম দু-বছর সাংকেতিক ভাষা (Symbolic Language) শেখার জন্য চলনের বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ। দৈহিক অপরিণত এবং অঙ্গসঞ্চালনে ত্রুটি ভাষার বিকাশকে পিছিয়ে দেয়।
  4. পরিবেশগত উদ্দীপনা: ইন্দ্রিয়ের সচলতা বিশেষ করে চোখ, কান এবং জিহ্বা ভাষার বিকাশকে দ্রুত করে। এর ত্রুটি হলে ভাষার বিকাশ বাধা পায়। শিশু শুনতে না পারলে বলতে পারে না। আবার দেখতে না পারলে বলতে পারে না। আবার দেখতে না পারলে এবং কথা না বলতে পারলে (যার জন্য জিহ্বার প্রয়োজন) ভাষার বিকাশ ব্যাহত হয়। তাই প্রয়োজন হল এই ইন্দ্রিয়গুলি যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তাহলে সময়মতো চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
  5. বাবা-মা ও শিশুর সম্পর্ক: গবেষণায় দেখা গেছে পিতামাতা এবং শিশুর মধ্যে ভাষার মাধ্যমে যত বেশি যোগাযোগ হয় ততই ভাষার বিকাশ দ্রুত হয়। পিতামাতার শাসন পরিচালনা এই বিকাশকে প্রভাবিত করে। শাসনতান্ত্রিক, অতিরিক্ত রক্ষণশীল পরিবারের শিশুদের অপেক্ষা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় পরিচালিত শিশুদের ভাষার বিকাশ দ্রুত হয়। কারণ দ্বিতীয় ক্ষেত্রের শিশুরা ভাষার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা পায়।
প্রশ্নঃ১৭. এরিকসন-এর মতে শিশুর মনোসামাজিক বিকাশ তত্ত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্য উল্লেখ করুন। 
Discuss Educational Implication of Erikson's Psycho-social development theory of Child.
▸ এরিকসন-এর মতে, মনো-সামাজিক বিকাশের স্তরগুলি ব্যক্তির জীবনে পর্যায়ক্রমে ঘটে এবং একটি স্তরের সংকট কাটিয়ে ওঠার পরই ব্যক্তি তার পরবর্তী স্তরের সংকটগুলির অভিযোজনে প্রস্তুত হয়। প্রত্যেকটি স্তরে অভিযোজনে তাকে সাহায্য করে শিক্ষা তাই তিনি প্রত্যেকটি স্তরের শিক্ষাগত তাৎপর্যও ব্যাখ্যা করেছেন।

প্রথম স্তর : যেহেতু বিশ্বাস-অবিশ্বাস বা আস্থা-অনাস্থার দ্বন্দ্বের স্তর, তাই এই স্তরে শিশুর নিরাপত্তা যাতে কোনো কারণেই বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। তারা যেন কোনোভাবেই অবহেলিত না হয় সে বিষয়েও সচেতনতা প্রয়োজন। পিতামাতা বা শিক্ষকের আচরণে যাতে শিশুরা বিভ্রান্ত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর কোনো আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে তা এমনভাবে করতে হবে যাতে শিশু দৈহিক বা মানসিকভাবে অবহেলিত বোধ না করে।

দ্বিতীয় স্তর : অর্থাৎ স্বাধীনতা, লজ্জা ও সন্দেহের দ্বন্দ্বের স্তরে শিশুদের এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে তাদের স্বাধীনতা কোনোভাবে ক্ষুণ্ন না হয়। এই স্তরে তাদের এমন কাজ দিতে হবে যাতে তারা স্বাধীনভাবে সেই কাজ সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে তাদের দক্ষতা, নিয়মানুবর্তিতা এবং আদর্শ চরিত্রগঠন করতে পারে। এই বয়সের শিশুরা যেহেতু অনুকরণপ্রিয় হয় তাই পিতামাতা ও শিক্ষকের আচরণ হতে হবে আদর্শস্থানীয়।

তৃতীয় স্তর : যেহেতু উদ্যোগ ও অপরাধবোধের দ্বন্দ্বের স্তর তাই এই স্তরে খেলার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ খেলা শিশুর উদ্যোগী মনোভাবকে উৎসাহিত করে এবং আনন্দদান করে। খেলার মধ্য দিয়ে শিশু জ্ঞান অর্জন করে, পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন করতে শেখে, প্রক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সহযোগিতার মনোভাব গড়ে ওঠে, সামাজিক বিকাশ ঘটে এবং সৃজনশীল কাজে যুক্ত হতে পারে। সুতরাং এই স্তরে শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত শিখনের প্রবণতাকে ভিত্তি করে পাঠক্রম ও শিক্ষণ পদ্ধতি রচনা করতে হবে। পাঠক্রমের পাশাপাশি খেলা ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে তারা মানসিক ও দৈহিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। তাহলেই তারা আর অপরাধপ্রবণ হয়ে জীবনের মূলস্রোত থেকে দূরে সরে যাবে না।

চতুর্থ স্তর : অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার স্তরটি হল উদ্যম ও হীনম্মন্যতার দ্বন্দ্বের স্তর। এই স্তরের প্রথম দিকে শিশুরা যে ক্ষমতা বা দক্ষতা অর্জন করে তার ব্যবহারে খুব আগ্রহ বোধ করে। এই আগ্রহের ফলেই তাদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত হয়। কাজেই এই স্তরে শিক্ষক শিশুর প্রতিভাকে এমনভাবে পরিচালনা করবেন যাতে সে তার নিজের ক্ষমতা ও চাহিদা অনুযায়ী পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে। শিশু যদি তার প্রত্যাশা অনুযায়ী পারদর্শিতা দেখাতে পারে তাহলেই তার মধ্যে কর্মক্ষমতা গড়ে উঠবে।

পঞ্চম স্তর : অর্থাৎ কৈশোরকাল হল আত্মপরিচয় ও আত্মপরিচয় বিভ্রান্তির দ্বন্দ্বের স্তর। এই স্তরের শিক্ষায় সামাজিক বিকাশের গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বয়ঃসন্ধিক্ষণের এই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বয়স্কদের মতোই আচরণ করতে হবে এবং স্বাধীনতা ও মর্যাদা দিতে হবে। এই স্তরের পাঠক্রম এমন হবে যা তাদের বাস্তব লক্ষ্য অর্জনে উৎসাহিত করবে, ভবিষ্যতে বৃহত্তর জীবনে প্রয়োগ করতে পারবে এবং স্বাধীন মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকবে। বিষয়গুলি চ্যালেঞ্জিং হলেও তা তাদের ক্ষমতার বাইরে হবে না। তাই এই স্তরে শিক্ষক বিদ্যালয়ে বিতর্কসভা, আলোচনা সভা এবং তাৎক্ষণিক বক্তৃতার ব্যবস্থা করবেন। তাহলেই কিশোর-কিশোরীরা তাদের আত্মপরিচয় খুঁজে পাবে এবং পরিচয় বিভ্রান্তির জন্য অসামাজিক পথে প্রতিরক্ষণ কৌশলের সাহায্য নেবে না।

প্রশ্নঃ ১৮. নিজস্বতার বিকাশ কাকে বলে? নিজস্বতার কারণগুলি লিখুন। 
What is development of Personal Identity? Write the causes of Personal Identity.
▸ প্রতিটি মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তার নিজস্বতা বা অনন্যতা। মনোবিদ আলপোর্ট (Allport) এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন—ব্যক্তির মধ্যে যে সংলক্ষণ (Traits) গুলি আছে তার সংগঠন এবং সমন্বয় ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন হয় যার ফলে প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্বতা বা অনন্যতা গড়ে ওঠে। এই নিজস্বতা ব্যক্তির আত্মবোধ বা নিজ সম্পর্কে ধারণার মধ্যেও প্রতিফলিত হয়। তবে ব্যক্তির মধ্যে নিজস্বতা প্রকৃতিগত (Kind) অপেক্ষা পরিমাণগত (Amount) পার্থক্যটিই অধিক একেই নিজস্বতার বিকাশ বলে। 

নিজস্বতার কারণ (Causes of Personal Identity) :
ব্যক্তি বা শিশুর মধ্যে নিজস্বতার কারণ হিসেবে আলপোর্ট-এর সাধারণ সংলক্ষণ (Common traits) এবং বিশেষ সংলক্ষণের (Special traits) কথা বলা যায়। সব শিশুর মধ্যে কতকগুলি সাধারণ সংলক্ষণ দেখা যায়, যেমন—সততা, ভদ্র আচরণ, সামাজিকতা ইত্যাদি। এর কারণ হল শিশুরা একই পরিবেশে বড়ো হয়েছে, একই ধরনের পরিচর্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং সমাজের প্রত্যাশাও একই রকমের। তবে এই সাধারণ সংলক্ষণের ক্ষেত্রেও ব্যক্তিভেদে পরিমাণগত পার্থক্য দেখা যায়। একই সঙ্গে শিশুদের মধ্যে বিশেষ সংলক্ষণ (Special Traits) পরিলক্ষিত হয়। যার ফলে শিশুর মধ্যে নিজস্বতা গড়ে ওঠে। এই নিজস্বতার প্রধান কারণ হল বিশেষ ধরনের বংশগত বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং সামাজিক পরিবেশ, অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় শিশুর মধ্যে নিজস্বতার কারণ হল – (ক) শিশুর মধ্যে বিশেষ ধরনের সংলক্ষণের উপস্থিতি এবং (খ) সাধারণ সংলক্ষণগুলির মধ্যে পরিমাণগত পার্থক্য এবং (গ) শিশুভেদে বিশেষ ধরনের সংলক্ষণ এবং সাধারণ সংলক্ষণের সমন্বয়। এই কারণেই দেখা যায় দুটি শিশু সবদিক থেকে সদৃশ হলেও (যেমন—সমকোশী যমজ শিশু) তারা যদি ভিন্ন পরিবেশে বড়ো হয় তাহলে তাদের আচার-আচরণে পার্থক্য দেখা যায়।

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, দুটি শিশুর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সামাজিক পরিবেশ সদৃশ হলেও সম উদ্দীপকের উপর তাদের প্রতিক্রিয়া বয়সবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ অধিক পার্থক্য ঘটে। এর কারণ হল বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক পরিবেশে বিস্তৃত এবং ভিন্ন হয়ে ওঠে সেই কারণে শিশুদের আচরণে পার্থক্য গড়ে ওঠে এবং নিজস্বতা বৃদ্ধি ও দৃঢ় হয়। Thomas প্রমুখ ছোটো শিশুদের ব্যক্তিত্বে সাধারণ তিনটি লক্ষণ (Syndrome) উল্লেখ করেছেন যার সবগুলির মধ্যেই পার্থক্য লক্ষণীয়। এই তিনটি লক্ষণ বা Syndrome' হল- (i) Easy Children' যারা শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে সহজভাবে অভিযোজন করতে পারে। (ii) ‘Difficult Children' যারা শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে অভিযোজনে পিছিয়ে পড়ে, প্রতিক্রিয়া করতে অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় এবং কোনো কাজ সম্পন্ন করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে (Warm Up) সময় বেশি নেয়। (iii) Slow-to-warm up Children' এদের প্রতিক্রিয়ার হার নিম্নমানের হয় এবং নতুন পরিস্থিতিতে অভিযোজনে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। একটি উদাহরণের সাহায্যে প্রথম দলের (Easy Children) শিশুদের মধ্যে নিজস্বতা বোঝানো যেতে পারে। 

এদের অর্থাৎ প্রথম দলের শিশুদের মধ্যে কোনো শিশু অন্য শিশুকে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়, কোনো শিশু সবক্ষেত্রেই উদ্যোগী হয় এবং পরবর্তী সময়ে এরা নেতা হয়। কোনো শিশু ‘জোক’ করে এবং অন্যদের হাসায়। কোনো শিশু অন্যদের নিকট খুব প্রিয় হয় আবার কোনো শিশু সর্বদা নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে। এইগুলিই হল প্রথম দলের শিশুদের মধ্যে নিজস্বতা, একইভাবে অন্য দলের শিশুদের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ সব শিশুর মধ্যেই কম বা বেশি নিজস্বতা থাকবেই।

প্রশ্নঃ১৯. প্রক্ষেপণ অভীক্ষার সুবিধা ও অসুবিধাগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করুন। 
Discuss in brief the advantage and disadvantages of Projective Test.
প্রক্ষেপণ অভীক্ষার সুবিধা :
  1. এই পদ্ধতিতে ব্যক্তি অবচেতন প্রক্ষেপণের প্রক্রিয়াকে কাজে লাগায় বলে নিজের সম্পর্কে তথ্য পরিবেশন করারসময় কোনো সংকোচ থাকে না।
  2. ব্যক্তিগত তথ্য গোপন করার প্রবণতা রোধ করা যায়।
  3. এই পদ্ধতিতে ব্যক্তিত্বের একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায়।
  4. শিশু, নিরক্ষর ও ভাষা প্রতিবন্ধীদের জন্য এই অভীক্ষা বিশেষ কার্যকরী।
  5. বিভিন্ন মানসিক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
  6. সমস্যা সংক্রান্ত শিশুদের চিহ্নিত করা যায়।
  7. মনের গভীরে অবস্থিত জটিল ও গোপন বিষয়গুলি প্রকাশিত হয়।
  8. শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনাদানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
  9. শিক্ষককে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বৈষম্যগুলি অনুধাবন করতে সাহায্য করে।
প্রক্ষেপণ অভীক্ষার অসুবিধা :
  1. আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতির যথার্থতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন।
  2. এই পদ্ধতিতে যে অভীক্ষাগুলি ব্যবহৃত হয় সেগুলি প্রয়োগ, পরিচালনা ও সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞতার প্রয়োজন।
  3. এই পদ্ধতিতেও ব্যক্তিগত প্রভাব লক্ষ করা যায়।
  4. আদর্শায়িত প্রতিফলন অভীক্ষার সংখ্যা খুবই কম।
প্রশ্নঃ২০. প্রক্ষেপণ অভীক্ষার একটি টীকা লিখুন। 
Write a short note on Projective test.
প্রক্ষেপণ বা প্রতিফলন অভীক্ষা :
  1. পরিমাপের ক্ষেত্র থেকে ব্যক্তিগত প্রভাব দূর করার জন্য যে কৌশল ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় প্রতিফলন কৌশল। প্রতিফলন কথাটির অর্থ হল—নিজের কোনো বৈশিষ্ট্যকে অপরের মধ্যে প্রতিফলিত হতে দেখা।
  2. এই পদ্ধতির মূলনীতি হল—ব্যক্তিকে যদি স্বাধীনভাবে প্রতিক্রিয়া করতে দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সে তার ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলিকে অবচেতনভাবে প্রকাশ করে এই পদ্ধতিতে ব্যক্তির কাছে এমন কতকগুলি অনির্দিষ্ট ও অসম্পূর্ণ প্রকৃতির সমস্যা উপস্থাপন করা হয় যা সমাধান করতে গিয়ে ব্যক্তিকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া করতে হয়।
  3. এই প্রতিক্রিয়াগুলির প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে ব্যক্তিত্বের সংগঠন সম্পর্কে সিদ্ধান্তগ্রহণ করা হয়।
  4. এই পদ্ধতি মনের জানার (Cognitive) দিক ছাড়াও অনুভূতির (Affective) দিকের তথ্যও কার্যকরভাবে উদ্ঘাটন করতে সাহায্য করে।
  5. মনের গভীরে অবস্থিত গোপন ও জটিল বিষয়গুলি এই পদ্ধতির দ্বারা প্রকাশিত হয়।
  6. এই পদ্ধতিতে অভীক্ষার্থী অপেক্ষাকৃত স্বাধীন, তাই তার প্রতিক্রিয়াগুলি নিজস্ব ও স্বাভাবিক। ফলে প্রতিক্রিয়ায় পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তির সম্পর্কে মন্তব্যগুলি অধিকতর নির্ভরযোগ্য।
  7. প্রতিফলন অভীক্ষাগুলিকে মোটামুটি পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল—(a) সংযোগমূলক (Associative) (b) নির্মাণভিত্তিক (Constructive) (c) সম্পূর্ণকরণ (Completion) (d) নির্বাচনমূলক (Choice) (e) প্রকাশকরণ ( Expressive)
প্রক্ষেপণ বা প্রতিফলন অভীক্ষার সুবিধা (Advantages ) :
  1. এই পদ্ধতিতে ব্যক্তি অবচেতন প্রক্ষেপণের প্রক্রিয়াকে কাজে লাগায় বলে নিজের সম্পর্কে তথ্য পরিবেশন করার সময় কোনো সংকোচ থাকে না।
  2. ব্যক্তিগত তথ্য গোপন করার প্রবণতা রোধ করা যায়।
  3. এই পদ্ধতিতে ব্যক্তিত্বের একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায়।
  4. শিশু, নিরক্ষর ও ভাষা প্রতিবন্ধীদের জন্য এই অভীক্ষা বিশেষ কার্যকরী।
  5. বিভিন্ন মানসিক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
  6. শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনাদানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
  7. শিক্ষককে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বৈষম্যগুলি অনুধাবন করতে সাহায্য করে।
  8. সমস্যা সংক্রান্ত শিশুদের চিহ্নিত করা যায়।
  9. মনের গভীরে অবস্থিত জটিল ও গোপন বিষয়গুলি প্রকাশিত হয়।
প্রক্ষেপণ বা প্রতিফলন অভীক্ষার অসুবিধা (Disadvantages ) :
  1. আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতির যথার্থতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন।
  2. প্রক্ষেপণ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অভীক্ষাগুলির প্রয়োগ, পরিচালনা ও সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞতার প্রয়োজন।
  3. এই পদ্ধতিতেও  ব্যক্তিগত প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। 
প্রশ্নঃ ২১. ব্যক্তিত্বের সংলক্ষণের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লিখুন। 
Write a short note on personality traits.
❏ শিশুর বিকাশের পথে তার সহজাত গুণাবলি পরিবেশের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য গড়ে  ওঠে। একই ধরনের একাধিক বৈশিষ্ট্য সমন্বিত হয়ে ব্যক্তিত্বের একক বা সংলক্ষণ সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিসত্তার বিকাশ অনুধাক করলে দেখা যায় যে, শিশু প্রথমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে প্রতিবর্ত প্রতিক্রিয়ার সাহায্যে। পরবর্তী স্তরে প্রতিবর্তীয় প্রতি ক্রিয়াগুলি সংখ্যায় অনেক এবং অনুবর্তিত হওয়ায় পুনরায় সমন্বিত হয়ে বিভিন্ন ধরণে স্থায়ী মানসিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এর দ্বারা ব্যক্তি কোনো বিশেষ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তিতে এক সদৃশ প্রতিক্রিয়া করে এদের বলা হয় অভ্যাস। তৃতীয় স্তরে কতকগুলি অভ্যাস নিজেদের মধ্যে সংযোজিত হয়ে আরও উন্নত সমন্বয় ঘটায়। এই সমন্বিত  অভ্যাসগুলিকে সংলক্ষণ বলে।

বমগার্টেন (Boumgarten) বলেছেন, ব্যক্তিজীবনে যে স্থায়ী শক্তি, তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকৃতি যার উপর নির্ভর করে তাকেই সংলক্ষণ বলে। আবার আলপোর্ট (Allport)-এর মতে, সংলক্ষণ হল সামগ্রিক এবং কেন্দ্রীভূত এমন এক জৈব-মানসিক সত্তা যা বিভিন্ন উদ্দীপককে সমন্বিত করে ব্যক্তির মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। মিচেল (Michel) তাঁর 'Introduction to Personality' পুস্তকে বলেছেন যে, সংলক্ষণ হল নিরবচ্ছিন্ন মাত্রাসম্পন্ন ব্যক্তিসকলের মধ্যে ওই সংলক্ষণ কী পরিমাণে বর্তমান তার ভিত্তিতে ব্যক্তি সকলের অবস্থান নির্ণয় করে তাদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা হয়।

সংলক্ষণের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Traits) : সংলক্ষণের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল—
  1. পরিমাপযোগ্যতা—প্রতিটি সংলক্ষণ প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে কী পরিমাণে বর্তমান তা নির্ধারণ করা যায়।
  2.  সংলক্ষণ আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় — ব্যক্তিত্বের সংলক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণসাপেক্ষ নয়। বিভিন্ন কার্যাবলি এবং বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তাদের প্রকাশ ঘটে। অর্থাৎ আচরণের মধ্য দিয়েই আমরা সংলক্ষণ সম্পর্কে মন্তব্য করি।
  3. নমনীয়তা–সংলক্ষণ প্রকৃতিগতভাবে স্থায়ী নয় শৈশবে সংলক্ষণগুলি নমনীয় থাকে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেস্থায়ী রূপ পেলেও কিছু পরিমাণে নমনীয়তা থেকে যায়।
  4. সর্বজনীনতা — কিছু সংলক্ষণ সর্বজনীন, যেমন—উচ্চতা এবং ওজন।
  5. ঐক্যবদ্ধ কার্যকারিতা— সংলক্ষণগুলি ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যকরী হয়।
  6. নিজস্বতা বা অনন্যতা—সংলক্ষণ ব্যক্তির নিজস্বতা বা অনন্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  7. অর্জিত—কোনো কোনো প্রবণতা ব্যক্তির মধ্যে জন্মগতভাবে দেখা দিলেও জন্মগত প্রবণতাগুলি পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন সংলক্ষণে পরিণত হয়।
  8. ব্যক্তিসত্ত্বার একক— মনোবিদ আলপোর্ট-এর মতে, সংলক্ষণ হল ব্যক্তিসত্তার একক অর্থাৎ সংলক্ষণ হল ব্যক্তিসত্তার উপাদান।
  9. দ্বিমুখিতা — ব্যক্তিসত্তার সংলক্ষণগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর দ্বিমুখিতা, যেমন—সামাজিকতা সংলক্ষণটির দুটি দিক আছে, একটি সামাজিকতা এবং অপরটি অসামাজিকতা।
  10. সংলক্ষণ হল মানসিক অবস্থা—কোনো কোনো মনস্তত্ত্ববিদ সংলক্ষণকে মানসিক প্রস্তুতি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁরা সংলক্ষণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে স্থায়ী প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতি হল সংলক্ষণ।
প্রশ্নঃ ২২. ব্যক্তিত্বের যে কোনো একটি সংলক্ষণ তত্ত্ব আলোচনা করুন। 
Discuss any one trait theory of personality.
▸মনোবিদ আইজেঙ্ক ( HJ Eysenck) 1953 খ্রিস্টাব্দে রাশিবিজ্ঞানের আধুনিক পদ্ধতি উপাদান বিশ্লেষণের সাহায্যে ব্যক্তিত্বের শ্রেণিবিভাগের এক নতুন পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। তিনি একাধিক ব্যক্তির উপর নৈর্ব্যক্তিক ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা প্রয়োগ করে দেখেছেন যে, ব্যক্তিত্বের তিনটি মৌলিক উপাদান আছে। এই উপাদানগুলিকে তিনি ব্যক্তিত্বের মাত্রা (Dimensions of Personality) বলেছেন এই তিনটি মাত্রা হল—
(i) অন্তর্মুখিতা-বহির্মুখিতা (Introversion-Extroversion)
(ii) মনোবিকার প্রবণতা (Neuroticism)
(iii) উন্মত্ততা প্রবণতা (Psychoticism)

প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যেই ব্যক্তিত্বের এই তিনটি মাত্রা বর্তমান থাকে। তবে সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তির মধ্যে যে মানসিক বৈশিষ্ট্যগুলি থাকে, অস্বাভাবিক ব্যক্তির মধ্যেও সেই বৈশিষ্ট্যগুলি আছে, তবে অনেক বেশি মাত্রায়। সুতরাং, ব্যক্তিত্বে ব্যক্তিত্বে যে পার্থক্য দেখা যায়, তা মাত্রাগত; শ্রেণিগত নয়। তবে, এই তিনটি মাত্রার মধ্যে পারস্পরিক কোনো সংযোগ নেই। তাই কোনো একটি মাত্রায় ব্যক্তির অবস্থা জানা গেলেও, অপর দুটি মাত্রায় তার অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। আইজেঙ্ক-এর মতে, ব্যক্তিত্বের পরিসর এই তিনটি মাত্রার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।


এই মাত্রাগুলি নির্ণয়ের জন্য আইজেঙ্ক এবং তাঁর অনুগামীরা প্রথম যে অভীক্ষাটি প্রস্তুত করেন সেটি হল Maudsley Medical Questionnaire (1953)। এটি আইজেঙ্ক-এর MMQ নামে পরিচিত। এরপর 1958 খ্রিস্টাব্দে আইজেঙ্ক আর-একটি সংক্ষিপ্ত অভীক্ষা নির্ণয় করেন, যেটি Maudsley Personality Inventory (MPI) নামে পরিচিত। এটিতে মাত্র 12টি নির্ণায়ক প্রশ্ন ছিল। 1964 খ্রিস্টাব্দে আইজেঙ্ক যে অভীক্ষাটি নির্ণয় করেন সেটি Eysenc Personality Inventory (EPI) নামে পরিচিত। এটিতে 108টি প্রশ্ন ছিল। এটিতে একটি Lie scale-ও ছিল।

▸ সমালোচনা : (i) অনেক মনোবিজ্ঞানীর মতে, এই পদ্ধতি অত্যন্ত কঠিন। (ii) অনেকের মতে, অন্তর্দৃষ্টির সাহায্য ছাড়া শুধুমাত্র উপাদান বিশ্লেষণের সাহায্যে ব্যক্তিত্ব নির্ধারণ করলে, ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় না।

প্রশ্নঃ ২৩. আত্মবিবরণী কৌশলের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লিখুন। 
Discuss in brief the advantages and disadvantages of Self-Report Technique.
আত্মবিবরণী কৌশলের সুবিধা (Advantages of Self- Report Technique): ব্যক্তিত্ব পরিমাপে নিজ-বিবরণী কৌশলের সুবিধাগুলি হল :—
  1. এখানে ব্যক্তি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করার সুযোগ পায়। কোনোরকম নির্দেশের বাধ্যবাধ্যকতা থাকে না।
  2. ব্যক্তি সম্পর্কিত এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসংগ্রহ করা যায় যা অন্য কোনো কৌশল ব্যবহার করে পাওয়া যায় না।
  3. অভীক্ষা প্রয়োগ করা সহজ এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সময় কম লাগে।
আত্মবিবরণী কৌশলের অসুবিধা (Disadvantages of Self Report Technique): আত্মবিবরণী কৌশলের একাধিক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কিছু অসুবিধাও দেখা যায়। যার মধ্যে অন্যতম হল—
  1. অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তি বা প্রতিক্রিয়াকারী (Respondent) প্রয়োজন অতিরিক্ত নিজেকে প্রকাশ করে।
  2. অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তির আচরণ, অনুভূতি, চিন্তাভাবনা যদি ব্যক্তি সমাজ অবাঞ্ছিত বলে মনে করে সেক্ষেত্রে সে নিজেকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করে না।
  3. প্রশ্নাবলির উত্তরকালে ব্যক্তির মেজাজ নিজ সম্পর্কে বিবরণীর উপর প্রভাব বিস্তার করে। উত্তর দেওয়ার সময় তার মেজাজ বা মানসিক অবস্থা উত্তম থাকলে উত্তরগুলি ধনাত্মক হয়, আর বিপরীত হলে উত্তরগুলি ঋণাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রশ্নঃ২৪. ব্যক্তিত্ব পরিমাপের উপর সংক্ষেপে লিখুন। 
Write a note measurement of personality.
❏ বহু প্রাচীনকাল থেকেই মনোবিজ্ঞানীরা ব্যক্তিত্ব পরিমাণের চেষ্টা করে আসছেন। সেই সময় প্রধানত পর্যবেক্ষণ ও সংব্যাখ্যানের মাধ্যমেই ব্যক্তিত্ব পরিমাপ করা হত। কিন্তু এই পদ্ধতিগুলি বিজ্ঞানসম্মত ছিল না। বর্তমানে মনোবিজ্ঞান ও রাশিবিজ্ঞানের যথেষ্ট উন্নতির ফলে ব্যক্তিত্ব পরিমাপের বহু বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়েছে। পদ্ধতিগুলি নিম্নরূপ—
ব্যক্তিত্ব পরিমাপের পদ্ধতি :


(1) স্বীয় মতামত প্রকাশ পদ্ধতি :
a. ব্যক্তিগত লিপি 
b.আত্মজীবনী

(2) বিশ্লেষণ পদ্ধতি :
a. সাক্ষাৎকার
b. পর্যবেক্ষণ
c. প্রশ্নগুচ্ছ
d. রেটিং স্কেল
e. কেস স্টাডি
f. সমাজমিতি

(3) সামগ্রিক পদ্ধতি বা প্রতিফলন পদ্ধতি :
a. সংযোগমূলক
b. নির্মাণভিত্তিক
c. সম্পূর্ণকরণ
d. নির্বাচনমুলক
e. প্রকাশমূলক

প্রশ্নঃ২৫. শিশু পালনের বিভিন্ন প্রকার রীতিগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। 
Describe briefly the different types of child rearing practices.
▸শিশুপালনের বিভিন্ন রীতিগুলি হল—
প্রশ্রয়সূচক সন্তানপালন (Permissive Indulgent Type) :
  1. কোনো নিয়ম পালনে জোর করা হয় না।
  2. পারিবারিক রীতি ভালো করে বলা হয় না।
  3. শিশুর জেদ, আবদার, কান্না ইত্যাদির কাছে আত্মসমর্পণ।
  4. ধারাবাহিকতা ও সামঞ্জস্যহীন শৃঙ্খলা।
  5. শিশুর কাছে কোনো প্রত্যাশা বা মান নেই।
  6. খারাপ আচরণ অগ্রাহ্য করা বা মেনে নেওয়া হয়।
  7. অধৈর্য মনোভাব, রাগ, বিরক্তি চেপে রাখা হয়।
  8. অবাধ ইচ্ছাপ্রকাশ ও আবেগ প্রকাশে উৎসাহ বেশি আদর।

❏  কর্তৃত্ব পরায়ণ সন্তানপালন (Authoritarian Type) :
  1. কঠোর শাসন।
  2. নিয়ম ও আদেশ পালনে বাধ্য করা হয় কিন্তু নিয়মের কারণ ব্যাখ্যা করা হয় না।
  3. ব্যতিক্রম হলে প্রবল ক্রোধ প্রকাশ।
  4. শাসন ও নিয়ন্ত্রণই শিশুকে মানুষ করার একমাত্র উপায় হিসেবে গণ্য হয়।
  5. শিশুর চাহিদা বা মতামতের গুরুত্ব জানতে চাওয়া হয় না।
  6. জোর করে নিয়ম পালন করানো হয়।
  7. শাস্তিভিত্তিক শৃঙ্খলা শিক্ষা।
  8. নরম মনোভাব বা আদর করা প্রশ্রয়ের সমতুল।
  9. শিক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ে যুক্তিসংগত প্রত্যাশার অভাব।
কর্তৃত্বসূচক সন্তানপালন (Authoritative Type):
  1. অন্যায় আবদার মেনে নেন না।
  2. নিয়ম শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে দৃঢ়।
  3. অবাধ্যতার যথাযথ প্রতিকার।
  4. নিয়ম শৃঙ্খলার কারণ পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া হয়।
  5. সন্তানের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চাহিদার মূল্য দেওয়া হয়।
  6. ক্ষেত্র বিশেষে বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়।
  7. সম্পর্কের উন্নতা থাকে, সন্তানের প্রতি মনোযোগী।
  8. আশা করেন ধীরে ধীরে তারা নিজের দায়িত্বে নিয়ন্ত্রিত হবে।
  9. আমোদপ্রমোদে সঙ্গ দেওয়া এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রত্যাশা যথাযথ থাকে।
  10. সন্তানের বয়সোচিত আচরণ প্রত্যাশা করা হয়।
প্রশ্নঃ ২৬. ব্যক্তিগত বৈষম্যের বিভিন্ন দিকগুলি কী? শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বৈষম্যের গুরুত্ব লিখুন। 
What are the different aspects of individual difference? Write the importance's of individual differences in education.

▸ ব্যক্তিগত বৈষম্যের বিভিন্ন দিক :
  1. দৈহিক বৈষম্য (Physical Difference)
  2. মানসিক বৈষম্য (Mental Difference)
  3. ব্যক্তিত্বের বৈষম্য বা মেজাজগত বৈষম্য (Personality Difference or Temperamental Difference)
  4. সামাজিক বৈষম্য (Social Difference)
  5. কৃষ্টিমূলক বৈষম্য (Cultural Difference)
  6. প্রাক্ষোভিক বৈষম্য (Emotional Difference)
  7. শিক্ষাগত বৈষম্য (Educational Difference)
ব্যক্তি বৈষম্যের শিক্ষাগত গুরুত্ব (Educational Importance of Individual difference) :
আধুনিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ সাধন করা। সেইজন্য ব্যক্তি বৈষম্যকে উপেক্ষা করে শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করা সম্ভবপর নয়। ব্যক্তি বৈষম্য কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত আমরা এখানে সেটিই আলোচনা করব।
  1. ব্যক্তি বৈষম্য ও শিক্ষার লক্ষ্য: আধুনিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য শিক্ষার্থীর ক্ষমতানুসারে জীবন বিকাশে সহায়তা করা, অর্থাৎ ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো। তার জন্য প্রয়োজন ব্যক্তির ক্ষমতাগুলিকে শনাক্ত করে তদনুযায়ী পাঠক্রম রচনা করা। ব্যক্তি শিখনের প্রভাবে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অর্জন করে যা তার নিজস্বতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সেইজন্য শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণের সময় ব্যক্তি বৈষম্যকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।
  2. ব্যক্তি বৈষম্য ও পাঠক্রম: পাঠক্রম হল এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ক্ষমতাগুলি বহিঃপ্রকাশে সহায়তা করে। ব্যক্তি বৈষম্য অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা, অনুরাগ, ক্ষমতা, আগ্রহ ইত্যাদি বিভিন্ন। ফলে সাধারণ কোনো পাঠক্রমের মাধ্যমে সমস্ত ব্যক্তির চাহিদাপূরণ করা সম্ভব নয়। সেইজন্য বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় বহুমুখী পাঠক্রম চালু হয়েছে। এর ফলে ব্যক্তি জীবনের বিকাশও যেমন সহজ হয় তেমনি শিক্ষার কাজও সহজতর হয়।
  3. ব্যক্তি বৈষম্য ও শিক্ষণ পদ্ধতি: ব্যক্তির ক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় স্থান পেয়েছে। শ্রেণিকক্ষে বক্তৃতা পদ্ধতির ব্যবহার ব্যক্তি বৈষম্যের নীতিকে একেবারেই গুরুত্ব দেয় না। বর্তমানে প্রকল্প পদ্ধতি (Project Method), সমস্যাসমাধান পদ্ধতি (Problem solving Method), প্রোগ্রাম শিখন ( Programme learning) ইত্যাদি ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
  4. সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ও ব্যক্তি বৈষম্য: বিদ্যালয়ের দ্বারা পরিচালিত এমন কার্যাবলি আছে, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে। এই সমস্ত কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের নিজস্ব আগ্রহের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, ফলে তারা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করার সুযোগ পায় এবং শিক্ষণ তাদের কাছে আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে।
প্রশ্নঃ২৭. ব্যক্তিগত বৈষম্যের ক্ষেত্রে সমাজ-কৃষ্টিমূলক পরিবেশের ভূমিকা আলোচনা করুন। 
Discuss the role of socio-cultural environment in individual difference.
▸বীজের মধ্যে জীবনের সম্ভাবনা থাকে বলেই তার থেকে গাছ হয়। কিন্তু সে সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়িত করে জল, আলো, তাপ ইত্যাদি। অর্থাৎ পরিবেশ। ঠিক একইভাবে মানুষের জীবনের সবরকম সম্ভাবনা বংশগতির সূত্রে প্রাপ্ত হলেও উপযুক্ত পরিবেশে তা বিকাশের সুযোগ না পেলে তার পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য ব্যক্তিজীবনে কতটা বিকশিত হবে তা নির্ভর করে তার পরিবেশের কোন অংশ তাকে প্রভাবিত করছে তার উপর। মাতৃগর্ভে প্রথম জীবন সঞ্চারের মুহূর্ত থেকে পরিবেশ যদি তাকে উপযুক্তভাবে উদ্দীপ্ত না করে, তাহলে শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনাই থাকে না। তেমনি জন্মের পরেও তার জীবনের বিভিন্ন দিকের বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ শিশুকে দিতে না পারলে, তার মধ্যেকার অনেক সম্ভাবনাই সুপ্ত অবস্থায় থেকে যাবে। শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে মনোবিদরা পরিবেশকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। এগুলি হল—

(a) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বের পরিবেশ (Pre-natal Environment): গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উত্তেজনা ভ্রুণকে প্রভাবিত করে। তাই মায়ের আঘাত লাগলে, মা খুব কড়া ওষুধ খেলে বা মায়ের কোনো অসুখ করলে শিশুকে তা নানাভাবে প্রভাবিত করে। এই ধরনের প্রভাবকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বের পরিবেশ বলে। এই পরিবেশের প্রভাব শিশুর বিকাশকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।

(b) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরের পরিবেশ (Post-natal Environment): ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুর জীবনে যেসব প্রাকৃতিক শক্তি মৃত্যু পর্যন্ত সক্রিয় থাকে তাই হল ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরের পরিবেশ। ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া ক্ষেত্রের বিভিন্নতা অনুযায়ী এই পরিবেশ বিভিন্ন রকম হয়। যেমন—প্রাকৃতিক পরিবেশ, পারিবারিক পরিবেশ, বিদ্যালয় পরিবেশ, সামাজিক পরিবেশ, কর্ম পরিবেশ ইত্যাদি।
  • প্রাকৃতিক পরিবেশ: প্রাকৃতিক পরিবেশ শিশুর জীবন বিকাশের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। জলবায়ু, মৃত্তিকা, গাছপালা, জীবজন্তু এবং খাদ্য— এই সবকিছুর প্রভাবে শিশু পরবর্তীকালে কর্মঠ বা আয়েশি, শক্তিমান বা দুর্বল, পরিশ্রমী বা কুঁড়ে হয়। মানুষের বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের উপরও প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় যা তার শক্তি ও সামর্থ্যকেও প্রভাবিত করে। মানুষের আকার, বর্ণ ও স্বভাবের উপরও প্রাকৃতিক পরিবেশ গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
  • বিদ্যালয় পরিবেশ: বিদ্যালয়ে শিশু যেসব উদ্দীপকের সম্মুখীন হয়, তার সমবায়কেই বলা হয় বিদ্যালয় পরিবেশ।বিদ্যালয়ের পরিবেশ, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, শ্রেণি শৃঙ্খলা, শিক্ষকের আচরণ, সহপাঠীদের আচরণ শিশুর বিকাশকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। শিক্ষকের সহৃদয় ব্যবহার, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাপরায়ণতা, শিক্ষা দেওয়ার আগ্রহ, তাঁর আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা, চালচলন, জীবনদর্শন সবকিছুর দ্বারাই শিশু ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়। আবার শিক্ষকের রূঢ় ব্যবহার শিশুকে অসহযোগী, বিদ্রোহী করে তোলে। সে অমনোযোগী, রূঢ় ও বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে।
  • সামাজিক পরিবেশ: শিশু পরিণত হয়ে যখন বৃহত্তর সমাজে মেলামেশা করে তখন বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সমাজের রীতিনীতি, আচার-আচরণ, ক্লাব-অফিস, রাষ্ট্রীয় সংস্থা প্রভৃতির প্রভাবে ব্যক্তি সমাজে বিশেষভাবে মিথস্ক্রিয়া করার সুযোগ পায়। এইসব সামাজিক অনুষ্ঠান ও সংস্থার প্রভাবের তারতম্য অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তির বিকাশের অভিমুখ বিভিন্ন হয় এবং বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন রকম ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়।
প্রশ্নঃ২৮. ব্যক্তির বৃদ্ধি ও বিকাশের উপর দারিদ্র্যের প্রভাব উল্লেখ করুন। 
Write the effects of poverty in Growth and Development of individuals.
▸সাধারণত দারিদ্র্য বলতে যে বিষয়গুলি বোঝায় সেগুলি হল-
  1. জীবনযাপনের সমাজভিত্তিক স্বাভাবিক মানের অভাব।
  2. জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম বিষয়, যেমন— খাদ্য, বাসস্থান, পোশাক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় মাত্রায় সংগ্রহ করতে না পারা।
  3. অর্থ, জমি, ঋণ ইত্যাদি আহরণে অসমর্থ সম্পদের অভাবে সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন ও তা রক্ষার অক্ষমতা।
  4. নিরাপত্তার অভাববোধ থেকে হতাশাগ্রস্ত অবস্থা। সুতরাং শিশুর সুষম বিকাশের পথে একটি বিরাট বাধা হল দারিদ্র্য। 
  5. শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের উপর দারিদ্র্যের প্রভাব পরিবারের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি শিশুর বুদ্ধি ও বিকাশের অন্তরায়।
  6. দারিদ্র্যের প্রধান প্রভাব পড়ে শিশুদের দৈহিক সুষম বৃদ্ধির উপর। দরিদ্র পরিবারের শিশুরা সঠিক পুষ্টিকর খাবারপায় না ফলে দরিদ্র পরিবারের বেশিরভাগ শিশুই অপুষ্টিতে ভোগে।
  7. অপুষ্টিজনিত রোগের ফলে শিশুর মধ্যে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠে না। প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বয়সে শিশুকে যে প্রতিষেধক (টিকা) দেওয়া প্রয়োজন দরিদ্র পরিবার অনেক সময় তারও ব্যবস্থা করতে পারে না। অর্থাৎ দারিদ্র্যতা শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ও বিকাশের উপর প্রত্যক্ষভাবে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে।
  8. দরিদ্র পরিবারের বেশিরভাগ পিতামাতা উভয়েই উপার্জনের জন্য নিযুক্ত থাকেন। তারা শিশুর ন্যূনতম পরিচর্যা করারও সময় পান না। ফলে তাদের শিশুরা নিজেদের বঞ্চিত মনে করে এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে যা শিশুর মানসিক, সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।
  9. হীনম্মন্যতা, হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, ক্ষমতাহীনতা ইত্যাদি শিশুর মধ্যে বাসা বাঁধে। আত্মনিয়ন্ত্রণ, মনোযোগ, কৌতূহল, ভাষা, প্রেষণা, পেশির ব্যবহার ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা তৈরি হয়। ফলে সুস্থ সামাজিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
  10. দরিদ্র পরিবারের শিশুরা অনেক সময় তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। চুরি করা, মিথ্যে কথা বলা, ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা যায়।
  11. বিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষাগ্রহণের জন্য যে মানসিক প্রস্তুতি শিশুর প্রয়োজন তা থেকেও তারা বঞ্চিত হয়।
  12. দরিদ্র পরিবারের শিশুরা অর্থনৈতিক নিরাপত্তাবোধের অভাব থেকে নানাপ্রকার অপরাধমূলক আচরণ করে থাকেন সুতরাং দারিদ্র্যতা শিশুর দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক ইত্যাদি নানা দিকের বিকাশের উপরই নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। তবে পরিবারে শৃঙ্খলা থাকলে অভাববোধ বা প্রাচুর্য কোনোটাই শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় না।
প্রশ্নঃ ২৯. ব্যক্তির বৃদ্ধি এবং বিকাশে পরিবারের ভূমিকা ব্যাখ্যা করুন। 
Describe the role of family in Growth and Development of individuals.
❏ সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলির মধ্যে পরিবারের ভূমিকাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি কাঁচামাল জোগায়, সংস্কৃতি নকশা জোগায় এবং পরিবারে পিতামাতা কারিগর হিসেবে কাজ করেন। কারণ শিশুর দৈহিক, মানসিক, পার্থিব ও অপার্থিব যাবতীয় প্রয়োজন মেটায় পরিবার। কীভাবে কথা বলতে হবে, নিজের আবেগ কীভাবে প্রকাশ করা যায় তা শিশু পরিবার থেকে শিক্ষালাভ করে। পরিবারেই শিশু তার চিন্তা, আবেগ ও কর্মের অভ্যাস গঠন করে। পরিবারেই তৈরি হয় ব্যক্তিত্ববান কিংবা ব্যক্তিত্বহীন মানুষ।

ব্যক্তিত্ব হল কার্যকরী সম্পদ, সাফল্যের চাবিকাঠি, চৌম্বক শক্তি, অগ্রণী শক্তি, এগিয়ে নেওয়ার শক্তি, মানুষের চালনা শক্তি, একটি আদর্শ, একটি দর্শন, চারিত্রিক গুণাবলি। অন্যের সঙ্গে কীভাবে মিশতে হবে, চালচলন বা ভাবভঙ্গি কেমন হবে—এসব শিক্ষা প্রথম পরিবার থেকেই শুরু হয়। মা-বাবা এবং চারপাশের পরিবেশ থেকে কোন্‌টা ঠিক কোন্‌টা বেঠিক এসব সঠিকভাবে শেখার ফলে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিত্ব সহজেই গড়ে ওঠে। মৌলিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দেওয়ার ফলে শুধু ব্যক্তির নিজেরই নয়, আশেপাশের লোকদেরও সমস্যা দেখা দেয়। ব্যক্তিজীবনের ব্যক্তিত্বের সীমারেখা নির্ধারিত হয় কথাবার্তায়, আচার-আচরণে, চালচলনে, ধ্যানধারণায় ও মন-মানসিকতায়। ব্যক্তিত্বহীনদের আত্মনিয়ন্ত্রণ থাকে না, আত্মনির্ভরশীল হতে পারে না, পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে, আত্মজ্ঞান, আত্মোপলব্ধি থাকে না, আত্মবিশ্লেষণ, আত্ম সমালোচনা, আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মশুদ্ধি করতে পারে না, আত্মত্যাগের মন-মানসিকতা হারিয়ে ফেলে, আত্মসম্মান করে না, মানবতা লোপ পায়, ইচ্ছা, স্বপ্নও লক্ষ্য হারায়, ভয় পায়, হীনম্মন্যতায় ভোগে, কর্মদক্ষতা হারায়, ব্যর্থ হয়।

ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সুনাগরিকরা শালীন ভাষা ব্যবহার করে, সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়, মার্জিত ও স্বাভাবিক আচার-আচরণ করে, ক্রোধ-উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখে, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা গড়ে তোলে, অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না, কথা বলার সময় সুন্দর সুন্দর ভাষা ব্যবহার করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মার্জিত পোশাক পরিধান করে, হাসি মুখে কথা বলে, অতিরিক্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকে, যেখানে যেমন যথাযথ তেমন থাকে, চরিত্রবান হয়, ইতিবাচক চিন্তা বাঁকা বা জটিল কথা বলে না, অন্যের কাজকর্মের প্রশংসা করে এবং ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।


শিশুর দেহ-মনের পূর্ণ বিকাশের জন্য আনন্দ, ভালোবাসা ও সমঝোতাপূর্ণ পরিবেশে তাকে বেড়ে উঠতে দিতে হবে। পরিবারে ধর্মীয় রীতিনীতি, নৈতিকতা, সততা এসব বিষয় শেখাতে হবে। শিশুর সম্ভাব্য সর্বোত্তম চাহিদা পূরণে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিশুর সফলতার প্রশংসা করতে হবে। শিশুর অকৃতকার্যতার বিষয়গুলি বড়ো করে তুলে ধরলে শিশু হীনম্মন্যতায় ভুগবে। পরিবারে ছোটোরা বড়োদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ছোটোদের প্রতি বড়োরা আন্তরিক হলে—তা থেকেই শিশুরা এসব গুণাবলি অর্জন করবে। শিশুর শিক্ষার ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। শিশুকে গালমন্দ বা তিরস্কার করা যাবে না। তোমার দ্বারা কিছু হবে না” এমন নেতিবাচক বাক্যও শিশুকে বলা যাবে না। শিশুর মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, শৃঙ্খলা ও সংস্কৃতিচর্চার জন্য উপদেশমূলক ও শিক্ষামূলক গল্প-ছড়া শোনাতে হবে। একটি শিশুর যখন আমি-তুমি সম্পর্ক, নিজের নাম অথবা সকল বস্তু বা ব্যক্তির নাম সম্পর্কে কৌতূহলী হয় তখন থেকেই তাকে হ্যাঁ-না, ভালোমন্দ, সুন্দর-অসুন্দরের ধারণাকে সুস্পষ্ট করে দেওয়া মায়ের কর্তব্য। 

শিশু মায়ের পছন্দের বিষয়গুলিকে বারবার করতে পছন্দ করে, উৎসাহিত হয় এবং অপছন্দের বিষয়গুলি করে না। তাই মাকে ভালোমন্দের বিচার করে শিশুকে বুঝিয়ে দিতে হবে তাঁর পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়। মায়ের আচরণ যদি মার্জিত হয় তাহলে শিশুর ক্ষেত্রে মার্জিত ও শিষ্ট আচরণ আশা করা যায়। সুতরাং বলা যায় যে, শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণই শুধু নয়, পরিবারের কোনো বিকল্পই নেই।

প্রশ্নঃ ৩০. নিম্নমানের প্রতিবেশীর কুপ্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে পিতামাতা ও শিক্ষকের করণীয় কী? 
What should be done by parents and teachers to keep children out of the ill effects of poor neighborhoods?
নিম্নমানের প্রতিবেশীর কুপ্রভাব থেকে মুক্ত করতে পিতামাতার করণীয় বিষয়গুলি হল—
  1. দুষিত প্রাকৃতিক পরিবেশ শিশুর মনে যাতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার না করতে পারে তার দিকে নজর দেওয়া।  
  2. শিশুরা যাতে কোনোভাবেই অসামাজিক কাজে লিপ্ত না হয় সেইজন্য সঠিক নির্দেশনা প্রদান করা। 
  3. শিশুদের মধ্যে পারিপার্শ্বিক মানুষের দ্বারা মূল্যবোধের অভাব হলে তাকে সঠিক উপায়ে নিরাময় করা।
  4. শিশুর নৈতিক চরিত্র যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় তার জন্য নীতিশাস্ত্র পাঠ করে তাদের নীতিজ্ঞান প্রদান করা।
  5. সমবয়সি বন্ধুদের প্রভাবে শিশুরা অনেক সময় চুরি, মিথ্যা বলা ইত্যাদির মতো অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সেগুলি থেকে শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসাও পিতামাতার করণীয় ও দায়িত্ব হয়ে ওঠে।
▸নিম্নমানের প্রতিবেশীর কুপ্রভাব থেকে মুক্ত করতে শিক্ষকের করণীয় বিষয়গুলি হল-
  1. শিশুদের পরিবেশের কুপ্রভাব থেকে রক্ষা করা।
  2. শিশুদের অনৈতিক কাজ থেকে দুরে রাখতে তাদের মধ্যে ইতিবাচক উৎসাহদান করা।
  3. শিশুর মধ্যে উপস্থিত সকল ধরনের কৌতূহলকে নিবৃত্তি করার দ্বারা তাদের সঠিক পথ দেখানো।
  4. শিশুদের নীতি পরায়ণ হতে সাহায্য করা।
  5. শিশুদের সামগ্রিক আচরণের পরিবর্তনে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করা।
প্রশ্নঃ৩১. বঞ্চনা ও বিপর্যস্ত পরিবারের দ্বারা শিক্ষার্থীর বৃদ্ধি ও বিকাশ কীভাবে প্রভাবিত হয়? 
How is the learner's growth and development affected by Deprivation and Disrupted family?
▸ মানুষের জীবনধারণের জন্য যা প্রয়োজন তা না পাওয়ার অবস্থাকে বলা হয় বঞ্চনা। অর্থাৎ শিশুর সার্বিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাভাবিক বিষয়গুলি থেকে কোনো না কোনো কারণে তার দূরত্ব তৈরি হওয়া। যেসব কারণে শিশু বঞ্চিত হয় সেগুলি হল—
  1. মা-বাবার স্নেহভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হলে শিশুর দৈহিক, মানসিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
  2. আর্থিক ও সামাজিক সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে শিশুর সামাজিক ও নৈতিক বিকাশ সঠিক হয় না।
  3. শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলে শিশুর সঠিক জ্ঞানমূলক বিকাশ ও বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটে না।
  4. সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত হলে শিশুর সামাজিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
শিশুর বিকাশের যে দিকগুলি বঞ্চনা ও বিপর্যস্ত পরিবারের জন্য বিঘ্নিত হয় সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল—
  1. দৈহিক বিকাশে: শিশু যদি তার পরিবারের কাছ থেকে সঠিক পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে তার দৈহিক বিকাশ ব্যাহত হয়, অপুষ্টিহীনতায় ভোগে এবং নানারকম দৈহিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। শিশু উপযুক্ত খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হলেও তার দৈহিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
  2. মানসিক বিকাশে: শিশু মা-বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ভালোবাসা ও মনোযোগ থেকে বঞ্চিত হলে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং ধীরে ধীরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তার কল্পনাশক্তি, সৃজনশীলতা, কৌতূহল প্রবৃত্তি, চিন্তন ক্ষমতা, মনোযোগ প্রভৃতি প্রবৃত্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  3. প্রাক্ষোভিক বিকাশে: শিশু খাদ্য নিরাপত্তা ও যত্ন থেকে বঞ্চিত হলে শিশুর মধ্যে রাগ ও ভয় প্রবল মাত্রায় বিকশিত হয়। ভালোবাসার প্রক্ষোভটি অবলুপ্ত হয়ে যায়। তার ব্যক্তিত্বের বিকাশও সঠিকভাবে হয় না। স্বাধীন চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরি হয় না। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতাও দেখা দেয়।
  4. সামাজিক বিকাশে: শিশু পরিবারের মা-বাবা এবং অন্য সদস্যদের মনোযোগ থেকে বঞ্চিত হলে শিশুর সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। শিশু অন্তর্মুখী হয়ে পড়ে, সবার সঙ্গে মেলামেশা করতে পারে না এবং অনেকসময় সমাজের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা তৈরি হয় যার জন্য অনেক শিশু কৈশোরে অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে।
প্রশ্নঃ ৩২. বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করুন। 
Distinguish between growth and development.
▸ বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল-
বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্য
বৃদ্ধি (growth) বিকাশ (development)
1. আকার ও আয়তনে বেড়ে যাওয়াকেই বৃদ্ধি বলে। 1. আকার ও আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে সক্রিয়তা এবং কার্য সম্পাদনে উৎকর্ষতা বিকাশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
2. বৃদ্ধি হল কারণ। 2. বিকাশ তার ফল।
3. বৃদ্ধির ধারণা কেবল দৈহিক বা শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। 3. বিকাশের ধারণায় দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক সবই অন্তর্ভুক্ত।
4. বৃদ্ধি স্বতঃস্ফূর্ত, তবে অনুশীলনের প্রভাব দেখা যায়। 4. পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ফলেই বিকাশ ঘটে অর্থাৎ ব্যক্তির সক্রিয়তা এবং অনুশীলন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
5. বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনুশীলন ‘বিশেষ’ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট, যেমন হাতের পেশির ব্যায়াম করলে হাতের পেশির বৃদ্ধি হবে, পায়ের পেশির উপর এর প্রভাব নেই। 5. বিকাশ সামগ্রিক। মানসিক বিকাশের চর্চা করলে তার প্রতিফলন সামাজিক, প্রাক্ষোভিক বিকাশের উপরে দেখা যায়।
6. বুদ্ধি একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত ঘটে। 6. বিকাশ আমৃত্যু ঘটে।
7. বৃদ্ধি পরিমাপযোগ্য। 7. বিকাশ পর্যবেক্ষণ-সাপেক্ষ।
৪. বৃদ্ধি পরিমাণগত। ৪. বিকাশ গুণগত।




Tags : childhood and growing up important questions,mcqs childhood and growing up,mcqs on childhood and growing up,childhood and growing up notes pdf,childhood and growing up mock test,childhood and growing up mcq,mock test childhood and growing up,mcq childhood and growing up,childhood and development years notes,mcq on childhood and growing up childhood and growing up,childhood and growing up notes,childhood and growing up b.ed,mcqs childhood and growing up,childhood and growing up b.ed in hindi,childhood and growing up important questions,childhood and growing up notes pdf,childhood and growing up mock test,childhood and growing up mcq,mock test childhood and growing up,mcq childhood and growing up,mcq on childhood and growing up,tamil childhood and growing up,mcqs on childhood and growing up

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন