Geography Answer Page [1] [3]
আর উত্তর গুলি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
অধ্যায় - প্রাকৃতিক ভূগোল
চ্যাপ্টার ➲ মৃত্তিকা
প্রশ্নঃ মৃত্তিকা সৃষ্টিতে জলবায়ু আদি শিলা ও ভূ প্রকৃতি আলোচনা করো?
口 ইংরেজি 'Soil' শব্দটি লাতিন শব্দ 'Solum' থেকে এসেছে। যার অর্থ হল ‘ভূমিতল’ বা ‘মেঝে। সাধারণভাবে দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন প্র্রাকৃতিক পরিবেশে বিভিন্ন ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদিশিলার পরিবর্তন ঘটে। ফলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে বিভিন্ন খনিজ ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ যে পাতলা ভঙ্গুর আবরণ বা স্তর সৃষ্টি হয়, যা উদ্ভিদ বৃদ্ধির সহায়ক, তাকে মৃত্তিকা বলে।
জলবায়ু (Climate) : মৃত্তিকা গঠনে জলবায়ু সক্রিয় ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জলবায়ুর দুটি প্রধান উপাদান বৃষ্টিপাত ও উষতা। এরা জল ও তাপসরবরাহ করে আদিশিলা বা মূল পদার্থের রাসায়নিক বিয়ােজনে সাহায্য করে। আবার জলবায়ু উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর বণ্টন, প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে, যা জৈব পদার্থরূপে মৃত্তিকায় ফিরে আসে। জৈব পদার্থের পচন-ক্রিয়ার সময় যে অ্যাসিড ও লবণ মুক্ত হয় তা শিলা ও খনিজ পদার্থের ওপর ক্রিয়াশীল থাকে। জলবায়ুর প্রভাবে গঠিত মাটি সমূহ 'এক্টোডায়নামােমরফিক' মাটি নামে পরিচিত । যেমন—কৃষ্ণ মৃত্তিকা, চারনােজেম মৃত্তিকা প্রভৃতি।
বৃষ্টিপাত :
- অধিক হলে মৃত্তিকায় হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে pH এর পরিমাণ কমে, মৃত্তিকা আম্লিক হয়।
- অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে উদ্ভিদের প্রাচুর্যলক্ষ করা যায়। অধিক জৈব পদার্থের সঞ্চয়ের ফলে মৃত্তিকায় নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে ক্যালশিয়াম কার্বোনেট ,কার্বনেশন পদ্ধতিতে ক্যালশিয়াম বাই কার্বনেটে পরিণত হয়ে মৃত্তিকার অনেক গভীরে স্থানান্তরিত হয়।
- আর্দ্রক্রান্তীয় অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে রাসায়নিক আবহবিকার ত্বরান্বিত হয় এবং মৃত্তিকায় কর্দমের পরিমাণ বাড়ে।
উষ্ণতা :
- অধিক উষ্ণতার জন্য আবহবিকার ভূত্বকের অধিক গভীরতা (Deep Weathering) পর্যন্ত ক্রিয়াশীল থাকে।
- তাপমাত্রা বেশি হলে জৈব পদার্থ ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ হ্রাস পায়।
- আর্দ্র-ক্রান্তীয় অঞ্চলে গড় বার্ষিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে রাসায়নিক বিয়ােজন অধিক হয় ও মৃত্তিকায় কর্দমের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- আক্রান্তীয় অঞ্চলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে সিলিকা সেস্কুই-অক্সাইডের অনুপাত কমে যায়।
আদি শিলা : যে শিলা থেকে মাটি গঠিত হয় তাকে আদি বা জনক শিলা বলে। আদি শিলা মাটি গঠনে যে যে প্রভাব ফেলে তা হল-
(ক) মৃত্তিকার মূল উপাদান দ্বারা মৃত্তিকার ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম, যেমন—গ্ৰথন, কাঠামাে, জলধারণ ক্ষমতা, বর্ণ, pH-এর মান প্রভৃতিনিয়ন্ত্রিত হয়। এজন্য বিভিন্ন শিলা থেকে বিভিন্ন ধরনের মাটি গঠিত
হতে দেখা যায়।
(খ) আদি শিলার প্রভাব সর্বাধিক হলে এন্ডােডায়নামােমরফিক মাটির উৎপত্তি হয়। যেমন—লিথােসল, রেগােসল ও অ্যালুভিয়াম হয়।
(গ) খনিজ লবণ, চুনাপাথর ও কোয়ার্টজসমৃদ্ধ মাটির রং সাদা, ধূসর ও কখনাে-কখনাে জলপাই রঙের হয়।
(ঘ) আদিশিলা পেরিডােটাইট ও সারপেনটাইন হলে মাটি ক্ষারধর্মী হয়।
(ঙ) আদিশিলায় চুনের পরিমাণ বেশি থাকলে মাটি শক্ত গঠনের হয়।
(চ) কখনাে কখনাে আদিশিলায় গঠিত মাটি অন্যত্র পরিবাহিত হয়ে পলি মাটি অর্থাৎ পরিবাহিত মাটি গঠন করে। যদি মাটি আদিশিলার ওপর অবস্থান করে তখন তাকে স্থিতিশীল মাটি বলা হয়।
ভূপ্রকৃতি : ভূমির ঢাল, ঢালের অবস্থান, জলনিকাশি ব্যবস্থা ইত্যাদি মাটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এগুলি হল— অপরিণত বা নবীন অবস্থায় থাকে এবং কঙ্কালসার (Skeletal) মাটি সৃষ্টি হয়।
(ক) উপত্যকার উচ্চ অংশ থেকে নিম্ন অংশ পর্যন্ত মৃত্তিকা পরিলেখের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। একে মাটির জলনিকাশি ব্যবস্থার তারতম্যের কারণে উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে মৃত্তিকার রং লালচে, মধ্যভাগে হলদে এবং নিম্নাংশে সবুজাভ ধূসর থেকে স্বাভাবিক ধূসর রঙের হয়।
(খ) পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন উচ্চতায় বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু বিরাজ করায় নানা ধরনের মৃত্তিকা গঠিত হয়।
(গ) উত্তর গােলার্ধে পর্বতের দক্ষিণমুখী ঢাল অধিকতর উয়, আলােকিত ও আর্দ্র থাকে। এখানে ক্ষারধর্মী চুনজাতীয় মাটি সৃষ্টি হয়।
(ঘ) ভূমির ঢাল অবতল হলে মৃত্তিকা সঞ্জয়ের উপযােগী পরিবেশ গড়ে ওঠে আবার ওই ঢাল উত্তল হলে ক্ষয়কার্যের অনুকূল পরিবেশ ভূমির একই ঢালে উত্তল ও অবতল অংশে ভিন্ন প্রকৃতির মৃত্তিকা গড়ে ওঠে।
(ঙ) খাড়া ঢালযুক্ত ভুমিভাগে মৃত্তিকা অগভীর হয় এবং অঞ্চলটি বােল্ডার, নুড়ি, পাথর, কাকর, বালি
ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ থাকে।
প্রশ্নঃ মৃত্তিকা পরিলেখ এর বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে লেখ?
口 ভূপৃষ্ঠ থেকে নীচের দিকে আদি শিলা পর্যন্ত পরপর মাটির সুবিন্যস্ত স্তরসমূহের উল্লম্ব প্রস্থচ্ছেদকে মাটির পরিলেখ বা প্রোফাইল বলে। হিউমিফিকেশন, খনিজকরণ, এলুভিয়েশন ও ইলুভিয়েশন প্রভৃতি মৃৎ উৎপাদী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবিন্যস্ত রেগােলিথের মধ্যে চূর্ণীকৃত ও বিয়োজিত শিলাসমূহ অনুভূমিকভাবে বিন্যস্ত হয়ে হোরাইজন বা স্তর তৈরি করে। বুশ বিজ্ঞানী ডকুচেভ (V. V. Dokanchateve) প্রথম স্তরায়ন তথা মৃত্তিকা পরিলেখ এর কথা উল্লেখ করেন।
বৈশিষ্ট্য : পরিণত মৃত্তিকার পরিলেখে দুটি স্তর খুবই স্পষ্ট। এগুলি হল—(ক) জৈবিক স্তর (খ) খনিজ স্তর।
(ক) জৈবিক স্তর: মৃত্তিকা পরিলেখের ওপরের স্তরটি জৈব পদার্থে সমৃদ্ধ। এই স্তরের ওপরের অংশ বা স্তরটি অ-বিয়ােজিত জৈবপদার্থে ঢাকা থাকে। এই স্তরটি O1 , বা Aooস্তর নামে পরিচিত। এর ঠিক নীচের স্তরটি আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বিয়ােজিত এই স্তরটি O2 বা Ao স্তর নামে পরিচিত। এই স্তরগুলি সাধারণত বনভূমি অঞ্চলে দেখা যায়।
(খ) খনিজ স্তর: মৃত্তিকা পরিলেখে খনিজ স্তরকে তিনটি উপস্তরে ভাগ করা হয়। এগুলি হল—
- A হেরাইজন বা ক্ষরিত স্তর : জৈবিক স্তরের ঠিক নীচের স্তরটি 'A হােরাইজন নামে পরিচিত। এই স্তরটি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মৃত্তিকা কণা দ্বারা গঠিত। এই স্তরটি খনিজ ও জৈব পদার্থে সমৃদ্ধ। দ্রবীভূত পদার্থসমূহ এই স্তর থেকে এলুভিয়েশন অর্থাৎধৌত প্রক্রিয়ায় নীচের স্তরে ক্ষরিত বা অপসারিত হয়। তাই এই হােরাইজনকে ক্ষরিত বা ধৌত স্তর (Zone of Eluviation) বলে। এই স্তরের মাটির রং হালকা হয়।
- B হোরাইজন বা সঞ্চয় স্তর : A স্তরের নীচের স্তর B হােরাইজন নামে পরিচিত। ধৌত প্রক্রিয়ায় A হােরাইজনের অতিসূক্ষ্ম কর্মকণা ও দ্রবীভূত পদার্থসমূহ অপসারিত হয়ে B হােরাইজনে সঞ্জিত হয়। এই স্তরে A স্তরের বাহিত পদার্থসমূহ সঞ্চিত হয় বলে, এই স্তরকে পুষ্টি মৌলের ভাণ্ডার বলা হয়। এই স্তরের মাটির রং গাঢ় হয়।
- C হােরাইজন বা শিলাচূর্ণ স্তর : মৃত্তিকা পরিলেখের সর্বনিম্ন স্তরটি C স্তর বা C হােরাইজন নামে পরিচিত। এই স্তরটি আংশিক বা সম্পূর্ণ শিলাচূর্ণ দ্বারা সৃষ্ট। এই স্তরটি আদি শিলা ও মৃত্তিকার মধ্য সংযােগ সাধনকারী স্তর।
প্রশ্নঃ মৃত্তিকা ক্ষয় বা সংরক্ষণের পদ্ধতি লেখ?
口 মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—(1) প্রাকৃতিক কারণ (2) অপ্রাকৃতিক কারণ।
(1) প্রাকৃতিক কারণ :
- বায়ুপ্রবাহ : মরু অঞলে ও উপকূলবর্তী অঞ্চলে বায়ু দ্রুত গতিতে বিনা বাধায় প্রবাহিত হয়। এখানে বায়ুর বেগ বেশি হওয়ার কারণে মৃত্তিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- বৃষ্টিপাত : যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি এবং বৃষ্টির ফোটার আকার বড়াে হয় সেইসব অণ্ডলে ফোঁটার আঘাতে মৃত্তিকা আলগা হয়ে যায় এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- ভূমির ঢাল : কোনাে অঞলে ভূমির ঢাল খাড়া হলে জলের পৃষ্ঠপ্রবাহ দ্রুততর মৃত্তি হয় এবং তা মৃত্তিকার ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে। ভূমির ঢালের দৈর্ঘ্য মৃত্তিকা ক্ষয়কে প্রভাবিত করে। H.H. Bennet-এর মতে, 1% ভূমিঢাল বৃদ্ধিতে 25% ভূমিক্ষয় বাড়ে।
- সমুদ্রতরঙ্গ :উপকূলবর্তী অঞ্চলে বিনাশকারী তরঙ্গের আঘাতে উপকূলভাগের মৃত্তিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- জলপ্রবাহ:মৃত্তিকার অবক্ষয় প্রধানত জল, বাতাস, জীব, তুষার, অভিকর্ষইত্যাদির দ্বারা সংঘটিত হয়। প্রবাহিত জলের দ্বারা চার ধরনের মৃত্তিকার অবক্ষয় হতে পারে।
যথা- (i) শিট অবক্ষয়, (ii) রিল অবক্ষয়, (iii) গালি অবক্ষয়, ইত্যাদি
(i) শিট অবক্ষয় : মৃত্তিকার পৃষ্ঠস্তর থেকে চাদরের মতাে মৃত্তিকার ক্ষয়কে শিট অবক্ষয় বলে। সমতলভূমির বিস্তৃত এলাকায় অনেকক্ষণ ব্যাপী প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে এধরনের মৃত্তিকার অবক্ষয় ঘটে।
(ii) রিল অবক্ষয় : চাদর ক্ষয় বেশিদিন চলতে থাকলে সেখানে কিছু সুক্ষ্ম নালিকা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ঢালু জমির সব জায়গা থেকে মৃত্তিকা সমানভাবে অপসারিত না হয়ে সূক্ষ্ম জলধারার প্রবাহপথ দিয়ে অপসারিত হয়। তখন ক্ষয়ের মাত্রা বেশি হয়, এই ক্ষয়কে নালি ক্ষয় বলে।
(iii) গালি অবক্ষয় : ছােটো নালিকা ক্ষয় দীর্ঘদিন ধরে চললে একসময় নালিটি গভীর ও চওড়া হয় এবং ক্রমশ বড়াে আকারের ও স্পষ্ট হয়। এদের গালি বলে এবং এই নালিকার মাধ্যমে যে ক্ষয় হয় তাকে গালি ক্ষয় বলে।
(2) অপ্রাকৃতিক কারণ :
- বৃক্ষচ্ছেদন : উদ্ভিদ তার শিকড়ের সাহায্যে মৃত্তিকাকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বসতি নির্মাণ এবং কাঠের চাহিদার জন্য ব্যাপকভাবে গাছ কাটার জন্য মৃত্তিকা আলগা হয়ে যায় এবং সহজেই ক্ষয় হয়।
- অতিরিক্ত পশুচারণ : অতিরিক্ত পশুচারণের ফলে তৃণভূমি শেষ হয়ে যায় এবং মৃত্তিকা আলগা হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ : অবৈজ্ঞানিকভাবে ঝুম চাষ করার ফলে বনভূমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে ফলে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায় : বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মৃত্তিকার গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে মৃত্তিকাকে ক্ষয় ও
অবনমনের হাত থেকে সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করা যায়, একে বলে মৃত্তিকা সংরক্ষণ। (1) শস্যাবর্তন পদ্ধতির মাধ্যমে চাষাবাদ করতে হবে যাতে করে মৃত্তিকার গুণগত মান অক্ষুন্ন থাকে। (2) পার্বত্য অঞলে ধাপ চাষের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করতে হবে।মালচিং পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষিকাজ করলে মৃত্তিকা ক্ষয় রােধ করা যায়। (3) নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করে মৃত্তিকা ক্ষয় রােধ করা সম্ভবপর হয়। ও বায়ুর গতিপথ বৃক্ষরােপণ করলে মৃত্তিকা ক্ষয়ও নিয়ন্ত্রিত হয় (4) প্রয়ােজনমতাে জমিতে সার প্রয়ােগ করে ফসল
উৎপাদন করলে মৃত্তিকা ক্ষয় নিয়ন্ত্রিত হয়।
_________
প্রশ্নঃ এলুভিয়েশন ও ইলুভিয়েশন এর পার্থক্য লেখ?
口 ধৌত প্রক্রিয়ায় মাটির ঊর্ধ্বস্তর থেকে খনিজ পদার্থের নীচের দিকে গমন কিংবা কৈশিক প্রক্রিয়ায় মাটির নীচ থেকে পদার্থের ওপরের দিকে আগমন কে বলা হয় এলুভিয়েশন। তেমনি স্থানান্তরের মাধ্যমে কোনাে পদার্থের সঞ্চয় হল ইলুভিয়েশন। পার্থক্য গুলি হল—
বিষয় |
এলুভিয়েশন |
ইলুভিয়েশন |
প্রক্রিয়ার
স্থান |
এলুভিয়েশন
পদ্ধতি মাটির ওপরের স্তরে ঘটে থাকে। |
ইলুভিয়েশন
পদ্ধতি মাটির নীচের স্তরে ঘটে থাকে। |
পদার্থের
স্থানান্তর |
ধৌত
প্রক্রিয়ায় মাটির শীর্ষস্তর থেকে দ্রবীভূত খনিজের অপসারণ ঘটে। |
মাটির
নিম্নস্তরে দ্রবীভূত খনিজের সঞ্চয় ঘটে। |
বর্ণ |
মাটির উপরি
স্তর খনিজশূন্য হয়ে পড়ে এবং স্তরের রং হালকা হতে থাকে। |
মাটির
নীচের স্তর খনিজসমৃদ্ধ হয় এবং মাটির রং গাঢ় হয়। |
পদ্ধতি |
যান্ত্রিক
ও রাসায়নিক পদ্ধতিতেএলুভিয়েশন ঘটে। এজন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত
দরকার। |
ইলুভিয়েশনের
বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে এলুভিয়েশনের প্রকৃতি ও পদ্ধতির ওপর। |
_______
চ্যাপ্টার ➲ বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগ
প্রশ্নঃ ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত এর উৎপত্তি বা জীবন-চক্র লেখ?
口 নিরক্ষরেখার উভয় দিকে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে যেসব ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়, তাদের ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলে। তীব্রতার মাপকাঠি অনুযায়ী বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) ক্রান্তীয়
গােলযোেগকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে। যথা—
[1] ক্রান্তীয় ডিপ্রেসন (গতিবেগ ঘণ্টায় 40 কিমির কম),
[2] ক্রান্তীয় ঝড় (গতিবেগ ঘণ্টায় 40 থেকে 120 কিমি) এবং
[3] ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বা প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণবাত (গতিবেগ ঘণ্টায় 120 কিমি অপেক্ষা অধিক)
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত উৎপত্তির শর্তসমূহ: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত উৎপত্তির শর্তগুলি হল—
(i) লীনতাপের জোগান: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের শক্তির উৎস হল লীনতাপ। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস ঘনীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে লীনতাপ সরবরাহ করে।
(ii) উষ্ণ জলের বিস্তৃতি : সমুদ্রজলের গভীরতা 30 মিটার থেকে 70 মিটার এবং উয়তা 27°C-এর বেশি হওয়া প্রয়ােজন। অন্যথায় ঘূর্ণবাত বিলীন হয়ে যায়।
(iii) কোরিওলিস বল : ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টিতে কোরিওলিস বল 10-5 ডাইন/সে হওয়া প্রয়ােজন। নিরক্ষ রেখার উভয় দিকে 5° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার পর ওই শক্তি বাড়তে থাকে। তাই 15° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখা বরাবর অধিকাংশ ঘূর্ণর্বাত জন্ম নেয় ।
(iv) অন্যান্য শর্ত: বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে পুবালি বায়ুতরঙ্গে অবস্থান, উর্ধ্ব ট্রপােস্ফিয়ারে নাতিশীতােয় ট্রাফের উপস্থিতি এবং বাতাসের ন্যূনতম উল্লম্ব উত্থান প্রভৃতি ক্রান্তীয় ঘূর্ণাত সৃষ্টির অন্যান্য শর্ত।
নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি :
নিরক্ষরেখার উভয় দিকে 35° থেকে 65° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে দুই বিপরীতধর্মী বায়ুর মিলনের ফলে নাতিশীতােয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়। নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের ব্যাখ্যায় ভি বার্কনেস ও জে বার্কনেসের প্রবর্তিত মেরু সীমান্ত মতবাদ অধিক গ্রহণযােগ্য। এই তত্ত্বের মূল বক্তব্য হল- উপক্ৰান্তীয় বলয় থেকে উম্ন আদ্র পশ্চিমা বায়ু ও মেরু অঞ্চলের শুষ্ক শীতল মেরু বায়ুর মিলনের ফলে মধ্য অক্ষাংশীয় অঞলে নাতিশীতােয় ঘূর্ণবাত হয়। আবহাওয়া বিদগণ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তিকে 4টি পর্যায়ে ব্যাখ্যা করেছেন। এই 4টি ক্রমিক পর্যায়কে ঘূর্ণবাতের জীবনচক্র বলে।
পর্যায়গুলি হল-
[1] প্রারম্ভিক পর্যায় : এই পর্যায়ে মেরু অঞ্চল থেকে আগত ভারী শুষ্ক-শীতল বায়ুপুঞ্জ এবং উপক্ৰান্তীয় অঞ্চল থেকে আগত হালকা,উষ্ণ-আর্দ্র বায়ুপুঞ্জ নাতিশীতোষ্ণঅঞ্চলে এসে মিলিত হয়। ফলে এই অঞ্চলে একটি সীমান্ত বা বায়ুপ্রাচীর সৃষ্টি হয়। মেরু বায়ু পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং পশ্চিমা বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। এই পর্যায়ে সীমান্ত প্রায় স্থির থাকে বাতাসের কোনাে উত্থান ঘটে না।
[2] জন্মলাভ পর্যায় : এই পর্যায়ে সীমান্তপৃষ্ঠে তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। শীতল বাতাস উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের ভিতর ঢুকে শীতল সীমান্ত সৃষ্টি করে। আবার উয় বায়ু শীতল বায়ুপুঞ্জকে সরিয়ে দিয়ে উষ্ণ সীমান্ত তৈরি করে এই অবস্থায় উষ্ণ ও শীতল সীমান্তের মিলন বিন্দুতে একটি তরঙ্গশীর্য তৈরি হয় এবং ঘূর্ণবাত জন্মলাভ করে।
[3] পরিণত পর্যায় : পরিণত পর্যায়ের প্রথম ভাগে সীমান্ত বরাবর তীব্র আলােড়ন শুরু হয়। তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিস্তার ও বক্রতা উল্লেখযােগ্যভাবে বেড়ে যায়। এ সময়ে উষ্ণ ক্ষেত্র থেকে শীতল ক্ষেত্রের দিকে বাতাসের প্রবাহ শুরু হয়। ভারী শীতল বাতাস মাটি ঘেঁসে হালকা উষ্ণবাতাসকে দ্রুত সরাতে থাকে কিন্তু উষ্ণ বাতাস শীতল বাতাসকে ঠেলে দ্রুত অগ্রসর হতে পারে না। ফলে, তখন উষ্ণ শীতল বাতাসের সঙ্গে গঠিত একটি তির্যক তল, অর্থাৎ, এই সময় তরঙ্গের বিস্তার ও বক্রতা সবচেয়ে বেশি হয় এবং ঘূর্ণবাত পরিণতি লাভ করে, অর্থাৎ ঘূর্ণবাত পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়। উষ্ণ বায়ু ওপরে উঠে ঘনীভূত হয় এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
এই পর্যায়ের শেষ পর্বে উষ্ণ ক্ষেত্র দ্রুত সংকীর্ণ হতে শুরু করে, অর্থাৎ, আয়তনে ছােটো হয়ে আসে।
এবং অচিরেই শীতল সীমান্ত শীর্ষবিন্দুর নিকটবর্তী উষ্ণ সীমান্তকে ধরে ফেলে এ সময় থেকে বন্ধ বাতাগ্র
বা অন্তর্লীন পর্যায় (Occlusion Stage) শুরু হয়।
[4] অন্তর্লীন পর্যায়: এই পর্যায়ে শীতল সীমান্ত উষ্ণ সীমান্তকে অতিক্রম করে। ফলে শীতল বায়ুপুঞ্জ উষ্ণ সীমান্তের বায়ুপুঞ্জকে ঠেলে শীতল বায়ুপুঞ্জের ওপরে তুলে দেয়। সমগ্র অঞ্চল শীতল বায়ুর দখলে আসে। ওই সময়ে কেবল শীতল বায়ুর মৃদু আবর্তন লক্ষ করা যায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘূর্ণবাতের পরিসমাপ্তি ঘটে।