Geography Answer Page [1] [2]
আর উত্তর গুলি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
চ্যাপ্টার ➲ বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগ
প্রশ্নঃ মৌসুমী বায়ু জেট বায়ুর সম্পর্ক লেখ?
口 মৌসিম একটি আরবী শব্দ এর অর্থ হল ঋতু , ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বায়ুপ্রবাহ পরিবর্তিত হয় । আর সাধারণত উচ্চ ট্রপােস্ফিয়ার অঞলে ভূপৃষ্ঠ থেকে 9–12কিমি উচ্চতায় উধ্ব বায়ুমণ্ডলে সাধারণত পশ্চিম থেকে পূর্ব-দিকে সর্পিলাকারে দীর্ঘ তরঙ্গবিশিষ্ট (ঘণ্টায় 100-500 কিমি গতিবেগে) যে শক্তিশালী বায়ু সমচাপরেখার সমান্তরালে প্রবাহিত হয়, তাকে জেট বায়ুপ্রবাহ (Jet Stream) বলে।
(Relation between Jet Stream and Monsoon) মৌসুমী বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক :
গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও শীতকালীন উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ গভীরভাবে জেট বায়ুপ্রবাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
(ক) গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক :
21 মার্চের পর সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হয় ও 21 জুন সূর্য প্রায় 23 এর একাংশের দুই ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা বা কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে ভূপৃষ্ঠের উচ্চচাপ বলয় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং উপক্ৰান্তীয় পশ্চিমি জেট বায়ুপ্রবাহ যা 20°-35° উত্তর অক্ষাংশ বরাবর বিস্তৃত থাকে ক্রমশ উত্তরে স্থানান্তরিত হয়। কালক্রমে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি তথা জুনের মধ্যভাগে হিমালয় পর্বতের উত্তরে এই পশ্চিমি জেট বায়ুপ্রবাহ অবস্থান করে। ঠিক এই সময় তিব্বতীয় মালভূমি, ভারত, পাকিস্তানে তীব্র তাপে নিম্নচাপ বিরাজ করে এবং ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ুপ্রবাহ ভারতে প্রবেশ করে 13° – 14° উত্তর অক্ষাংশ বরাবর 14– 16 কিমি উচ্চতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। পুবালি জেট বায়ুপ্রবাহ গঙ্গা সমভূমি অতিক্রম করার সময় ভারতীয় আকাশে কিউমুলােনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি করে ও ক্রমশ তিব্বতীয় মালভূমিতে বজ্রপাতসহ প্রচুর বৃষ্টি ঘটায়। আবার এই সময় ভারত মহাসাগরে স্থায়ী উচ্চচাপ কেন্দ্র অবস্থান করে এবং উর্ধ্বাকাশের পুবালি জেট বায়ুপ্রবাহ এগিয়ে ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ কেন্দ্রের কাছে অবস্থান করে। ফলে জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে পুবালি জেট বায়ুপ্রবাহ ভারতে প্রবেশে ত্বরান্বিত করে ও প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়,যা (Blast of Monsoon)মৌসুমি বিস্ফোরণ নামে পরিচিত। অর্থাৎ, ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
(খ ) শীতকালীন মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক :
শীতকালীন মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে জেট বায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক রয়েছে। এই সময় নিম্ন ট্রপােস্ফিয়ারে পুবালি জেট বায়ুপ্রবাহের আধিপত্য থাকলেও ঊর্ধ্ব ট্রপােস্ফিয়ারে পশ্চিমাবায়ু ঢুকে পড়ে শীতকালীন পশ্চিমি ঝঞা (Western disturbance) নিয়ন্ত্রণ করে। পশ্চিমি জেট বায়ুপ্রবাহ এই ঘূর্ণবাতগুলিকে সক্রিয় করে, ফলে এরা ভারতীয় উপমহাদেশে ঘূর্ণিঝড়সহ বৃষ্টিপাত ঘটায় বিশেষত উত্তর ভারতে। আর দক্ষিণ ভারতসহ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে উচ্চ ট্রপােস্ফিয়ারে সৃষ্ট রসবি তরঙ্গের প্রভাবে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়সহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়, যা প্রাক-মৌসুমি বৃষ্টিপাত (Pre-Monsoon rainfall) নামে পরিচিত। জেট বায়ুপ্রবাহ পৃথিবীতে ঝড়-ঝঞা, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, প্রতীপ ঘূর্ণবাত,টর্নেডাে, উন্নতার ভারসাম্য, মৌসুমি বায়ুকে কার্যকরী করা ইত্যাদিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। জেট বায়ুপ্রবাহ সম্পর্কে সমস্ত তথ্য আমরা এখনও পাইনি। অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীদের অবিরত গবেষণাতে আরও যে নিত্যনতুন বিষয় বেরিয়ে আসবে, তা নিশ্চিত।
প্রশ্নঃ ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত পার্থক্য লেখো ?
বিষয় | ঘূর্ণবাত | প্রতীপ ঘূর্ণবাত |
বায়ুচাপের প্রকৃতি | ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে থাকে নিম্নচাপ | প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে থাকে উচ্চচাপ |
বায়ুর গতিবেগ | মাঝারি থেকে তীব্র গতিসম্পন্ন | ধীর গতিসম্পন্ন |
বায়ুর প্রকৃতি | ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রের বায়ু উষ্য ও উর্ধ্বমুখী | প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বায়ু শীতল ও অধােমুখী |
বৃষ্টিপাত | ঘূর্ণবাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় | প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বৃষ্টি হয় না। আবহাওয়া শুষ্ক থাকে |
মেঘচ্ছিন্নতা | আকাশ মেঘে পরিপূর্ণ থাকে | মেঘের কোনাে চিহ্ন থাকে না। আকাশ রােদে প্রবাহিত হয় , ঝলমল করে। |
ধ্বংস ও ক্ষমতা | অল্পক্ষণ স্থায়ী হয়। তবে খুব শক্তিশালী ও বিধ্বংসী হয় | দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়। তবে খুব শক্তিশালী ও বিধ্বংসী হয় না |
বিষয় |
উষ্ণ সীমান্ত |
শীতল সীমান্ত |
সংজ্ঞা |
উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ শীতল
বায়ুপুঞ্জকে যে সীমান্তপৃষ্ঠ বা তল বরাবর স্থানচ্যুত করে, তাকে উয় সীমান্ত বলে। |
শীতল বায়ুপুঞ্জ উষ্ণ
বায়ুপুঞ্জকে যে তল বা সীমান্তপৃষ্ঠ বরাবর স্থানচ্যুত করে, সেই সীমান্ত পৃষ্ঠকে শীতল
সীমান্ত বলে। |
সীমান্তপৃষ্ঠের প্রকৃতি |
সীমান্তপৃষ্ঠের সীমান্ত তল বা
পৃষ্ঠ তির্যক প্রকৃতির, এর
ঢাল মৃদু। |
সীমান্ত তল বা পৃষ্ঠ উত্তল
প্রকৃতির, এর
ঢাল উষ্ণ সীমান্ত অপেক্ষা অনেক বেশি। |
বায়ুর গতিপ্রকৃতি |
এই বায়ুপুঞ্জ শীতল
বায়ুপুঞ্জকে ধীর গতিতে স্থানচ্যুত করে। |
এই বায়ুপুঞ্জ উষ্ণ
বায়ুপুঞ্জকে অতি দ্রুত স্থানচ্যুত করতে পারে। |
তাপ ও চাপ |
উষ্ণ সীমান্ত বরাবর শীতল
বায়ুপুঞ্জের উষ্ণ ধীরে ধীরে বাড়ে এবং বায়ুর চাপ হ্রাস পায়। |
শীতল সীমান্ত বরাবর উষ্ণ
বায়ুপুঞ্জের উষ্ণতা ধীরে ধীরে কমে,
ফলে বায়ুর চাপ ধীরে ধীরে বাড়ে। |
আবহাওয়া |
উষ্ণ সীমান্ত বরাবর
বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়-ঝঞ্ঝার পরিমাণ কম,
এবং বৃষ্টিপাতের তীব্রতাও কম। |
শীতল সীমান্ত বরাবর
বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়-ঝঞা ও বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বেশি। |
বিষয় |
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত |
নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত |
সংজ্ঞা |
প্রধানত 5°— 30° অক্ষাংশের মধ্যে ক্রান্তীয়
অঞলে সংঘটিত হয় নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত। |
সাধারণত 35°—65° অক্ষাংশের নাতিশীতোষ্ণ অঞলে
সংঘটিত ঘূর্ণবাতকে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত বলে। |
গতিবেগ |
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের গতিবেগ 100- 250 কিমি পর্যন্ত হতে পারে। |
এইরূপ ঘূর্ণবাতের গতিবেগ 50 কিমি কিমি পর্যন্ত হতে পারে। |
পরিসর |
এই ঘূর্ণবাত খুব অল্প স্থান
জুড়ে হয়ে থাকে। |
এই ঘূর্ণবাত বিশাল স্থান জুড়ে
হয়ে থাকে। |
উৎপত্তিস্থল |
এইরূপ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি কেবলমাত্র
সমুদ্রের ওপর হয়। |
এইপ্রকার ঘূর্ণবাত স্থলভাগ
ও জলভাগ উভয়ের ওপর হতে পারে। |
স্থান পরিবর্তন |
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত পূর্ব থেকে
পশ্চিমে চলাচল করে। |
নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত পশ্চিম
থেকে পূর্বে চলাচল করে। |
- জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO,) পরিমাণ বৃদ্ধি ।
- কারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া থেকে বায়ুমণ্ডলে CO,-এর পরিমাণ বৃদ্ধি।
- জ্বালানি কাঠ দহনের ফলে বায়ুমণ্ডলে CO,-এর পরিমাণ বৃদ্ধি।
- পচনশীল আবর্জনা, গবাদি পশুর গােবর, জলাভূমি, ধানখেত ইত্যাদি থেকে নির্গত গ্যাস থেকে মিথেনের (CH,) পরিমাণ বৃদ্ধি।
- রেফ্রিজারেশন, হিমঘর, রং শিল্প, ইলেকট্রনিক শিল্প প্রভৃতি থেকে বায়ুমণ্ডলে ক্লোরােফ্লুরাে কার্বনের (CFC) পরিমাণ বৃদ্ধি।
- পৃথিবীর জনসংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধির ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস ও বর্জ্য বৃদ্ধিতে বায়ুমণ্ডলে CO,-এর পরিমাণ বৃদ্ধি।
- জলবায়ুর পরিবর্তন : পৃথিবীর উম্লতা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়া ও জলবায়ুর নানা রকমের পরিবর্তন ঘটবে। যেমন—বন্যা, খরা, দীর্ঘায়িত গ্রীষ্মকাল, বজ্রপাত, বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়-বৃষ্টি, সাইক্লোন, টর্নেডাে প্রভৃতির ক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে।
- বরফ গলন : পৃথিবীর উয়তা বৃদ্ধির ফলে কুমেরু অঞ্চলের গভীর পুরু বরফের স্তর এবং অন্যান্য মহাদেশীয় ও পার্বত্য হিমবাহ গলতে থাকবে এবং সমুদ্রজলপৃষ্ঠের উচ্চতার বৃদ্ধি ঘটবে।
- সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি : বিশ্ব উষ্যায়নে মেরুদেশীয় বরফের গলনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে—ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটবে, কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে, সামুদ্রিক পরিবেশের পরিবর্তন ঘটবে।
- দাবানলের সৃষ্টি : পৃথিবীর উন্নতা বৃদ্ধি পেলে গাছে গাছে ঘষা লেগে বারে বারে দাবানল সৃষ্টির মাধ্যমে বনভূমি নষ্ট হবে।
- জৈববৈচিত্র্য হ্রাস : পৃথিবীর গড় উষ্মতা বৃদ্ধির কারণে অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনহানি ঘটবে এবং জৈববৈচিত্র্য বিপন্ন হবে।
- ব্যাবহারিক গুরত্ব: মানবজীবনে উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের নিত্য প্রয়ােজনীয় প্রায় 4500 রকমের দ্রব্য আসে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি থেকে। অন্ন, বস্ত্র ও কর্মসংস্থানের জন্য মানুষসম্পূর্ণরূপে জীব প্রজাতির ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ, পানীয়, খেলার সরঞ্জাম, কাগজ প্রভৃতি পাওয়া যায় বন্য উদ্ভিদ, প্রাণী প্রজাতির থেকে। সবুজ বিপ্লব, শ্বেত বিপ্লব, নীল বিপ্লব প্রভৃতি জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। বনজ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে জিন-পরিবর্তিত খাদ্যদ্রব্য (GM Food) সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন বেড়েছে এবং বর্ধিত জনসংখ্যার মুখে প্রয়ােজনমতাে খাদ্যদ্রব্য তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে।
- জলবায়ুর স্থায়িত্ব রক্ষায় জীববৈচিত্রের গুরুত্ব: উদ্ভিদজগৎ আবহাওয়ার বিশুদ্ধীকরণ, বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ, জলীয়বাষ্প নির্গমন, অক্সিজেন প্রস্তুত প্রভৃতি কাজে অংশগ্রহণ করে এবং জলবায়ুর মূল বৈশিষ্ট্যগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্ভিদ মাটি থেকে জল শােষণ ও বাম্পমােচনের মাধ্যমে পৃথিবীর জলচক্রকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
- মৃত্তিকা সৃষ্টিতে জীববৈচিত্রের গুরুত্ব: মৃত্তিকা সৃষ্টিতে জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা অপরিসীম। মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে শিলাখণ্ড চূণ-বিচূর্ণ করার ক্ষেত্রে জীবমণ্ডলের প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয়েই অংশ নেয়। এরপর জল ও বায়ুর উপস্থিতিতে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, কীটপতঙ্গ, কেঁচো জাতীয় প্রাণী মৃত্তিকা গঠন সম্পূর্ণ করে। মৃত্তিকার উপস্থিত বিভিন্ন প্রকার নীলাভ-সবুজ শৈবাল জৈবরাসায়নিক চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন মৌলের আবর্তনে সাহায্য করে।
- নান্দনিক গুরুত্ব: প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি প্রতিটি মানব মনকে আকৃষ্ট করে। তাই মানুষ ছুটে চলে নদীর পাড়ে, সমুদ্র সৈকতে, নির্জন দ্বীপ অঞলে অথবা পার্বত্য অঞলে, যেখানে রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। বর্তমানে যে সব অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান, বায়ােস্ফিয়ার রিজার্ভ গড়ে তােলা হয়েছে সেই সব স্থানে অসংখ্য মানুষ নির্মল আনন্দ উপভােগের জন্য পাড়ি দেয়। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের বিশেষ আকর্ষণেকথা মাথায় রেখে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ইকোট্যুরিজম ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন গড়ে তােলা হচ্ছে।
- চিকিৎসা ক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব: মানবদেহের বিভিন্ন রােগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত মােট ওযুধের প্রায় 40% উদ্ভিদ প্রাণীজগৎ থেকে সংগৃহীত হয়। নিম, তুলসি, বাসক, ঘৃতকুমারী, প্রভৃতি উদ্ভিদ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অ্যালােপ্যাথি ওষুধ তৈরি হয় বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে। যেমন—সিঙ্কোনা গাছের পাতা থেকে কুইনাইন; সর্পগন্ধা থেকে প্রাপ্ত রেসারপিন থেকে সর্পদংশন, স্নায়ু রােগ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ তৈরি হয়। ইরিথ্রোমাইসিন, পেনিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন প্রভৃতি জীবাণু থেকে অ্যান্টিবায়ােটিক, ভিনিগার, ল্যাকটিক অ্যাসিড, অ্যামিনাে অ্যাসিড ইরিথ্রোমাইসিন, পেনিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন প্রভৃতি জীবাণু থেকে অ্যান্টিবায়ােটিক, ভিনিগার, ল্যাকটিক অ্যাসিড, অ্যামিনাে অ্যাসিড প্রভৃতি তৈরি হয়।
- খাদ্যের জোগান: পৃথিবীতে প্রায় 30 হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ আছে, যা প্রাণীরা খাদ্যরূপে ব্যবহার করে। 18-20 প্রকার উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে মানুষ প্রায় 90% খাদ্য সংগ্রহ করে। ধান, গম, ভুট্টা মানুষের প্রায় 60% প্রােটিন ও ক্যালােরির জোগান দেয়। প্রাণীজ প্রােটিন ও ফ্যাটের প্রধান উৎস হল মাছ ও বিভিন্ন প্রাণী (গােরু, ছাগল)।
প্রশ্নঃ (১) আলফা বৈচিত্র্য ?
✅ কোনাে একটি বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন জীবগােষ্ঠীর মধ্যের বৈচিত্র্যকে আলফা বৈচিত্র্য বলে। অর্থাৎ, একই গােষ্ঠীভুক্ত সমগ্র জীবসমূহের মধ্যেকার বৈচিত্র্য হল আলফা বৈচিত্র্য। এই প্রকার বৈচিত্র্যতা বাস্তুতন্ত্রের প্রজাতির সংখ্যা তুলনা করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্নঃ (২) বিটা বৈচিত্র ?
✅ একটি ভৌগােলিক অঞ্চলের বিভিন্ন সংলগ্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন বাসস্থানের জীবগােষ্ঠীর মধ্যে যে বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়, তাকে বিটা বৈচিত্র্য বলে।
প্রশ্নঃ (৩) গামা বৈচিত্র্য ?
✅ যেকোনাে বৃহৎ আয়তন ভৌগােলিক অঞ্চলের মধ্যে পরিবেশ, প্রাকৃতিক বাসভূমি এবং গােষ্ঠীগত বিভিন্নতার জন্য উদ্ভূত জীববৈচিত্র্যকে বলা হয় গামা বৈচিত্র্য।
প্রশ্নঃ (৪) বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য ?
✅ কোনাে নির্দিষ্ট অঞলের বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে যে বিভিন্নতা লক্ষ করা যায়, তাকে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে।
প্রশ্নঃ (৫) জিনগত বৈচিত্র্য ?
✅ একই প্রজাতির জীবের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জিনের প্রাচুর্য লক্ষ করা যায়, তাকে জিনগত বৈচিত্র বলে। জিনের বিভিন্নতা অনুসারে জীবসংখ্যাকে প্রজাতি, উপপ্রজাতি, জাতি ইত্যাদিতে বিভক্ত করা যায়।
প্রশ্নঃ (৬) প্রজাতি বৈচিত্র ?
✅ কোনাে নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন প্রকার প্রজাতির সম্মিলিত রূপকে প্রজাতিগত বৈচিত্ররূপ বলে। প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বিভিন্ন ধরনের হয় যথা— কম সমতাবিশিষ্ট, অধিক সমতা বিশিষ্ট, ও অধিক বৈচিত্রময় প্রভৃতি।
প্রশ্নঃ (৭) ইন-সিটু ও এক্স-সিটু (Ex-situ Conservation) এর সংজ্ঞা দাও ?
✅ ইন-সিটু সংরক্ষণ (In-situ Conservation) প্রাকৃতিক পরিবেশে অর্থাৎ কোনাে বিপন্ন প্রজাতির নিজস্ব বাসস্থানে সংরক্ষণ করার পদ্ধতিকে ইন-সিটু সংরক্ষণ বলে।
✅ এক্স-সিটু সংরক্ষণ (Ex-situ Conservation) কোনাে উন্নত বা বিরল, অবলুপ্তপ্রায় বিপন্ন জীবের উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রােটোপ্লাজমযুক্ত কোশ, জ্বণ, পরাগরেণু, শুক্রাণু, ডিম্বাণুকে চরম শৈত্য অবস্থায় সংরক্ষণ করাকে এক্স-সিটু সংরক্ষণ বলে। এই প্রকার সংরক্ষণ জীবের বাসভূমি থেকে দূরবর্তী স্থানে করা হয় বলে একে Ex-situ Conservation.