B.A History Ancient India Notes Bengali Version


❋ 1. মগধ সাম্রাজ্যের উত্থানের কারণগুলি কি কি ছিল তা আলোচনা করো?
🖵  খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে বিম্বিসারের আমল থেকে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে বৃহত্তম শক্তি হিসেবে মগধের উত্থান ঘটতে শুরু করে। সিংহলের বৌদ্ধ গ্রন্থ মহাবংশ থেকে জানা যায় যে, গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক সম্রাট বিম্বিসার আনুমানিক ৫৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রাজপদে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। তিনি 'শ্রেণীক' উপাধি ধারণ করেছিলেন। বিম্বিসার রাজ্যজয় ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে মগধের শক্তি বৃদ্ধি করেছিলেন। বিম্বিসার কোশল রাজকন্যা কোশলদেবীকে বিবাহ করে যৌতুক হিসেবে সমৃদ্ধশালী কাশী গ্রাম লাভ করেন। কাশী গ্রাম থেকে তিনি বছরে প্রায় ১ লক্ষ মুদ্রা রাজস্ব হিসেবে পেতেন। তিনি লিচ্ছবি রাজকন্যা চেল্পনা, বিদেহ রাজকন্যা বাসৰী এবং মদ্র রাজকন্যা ক্ষেমাকে বিবাহ করে এই রাজ্যগুলির সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তুলেছিলেন ৷

অতঃপর প্রতিবেশী অঙ্গ রাজ ব্রম্ম দত্তকে পরাজিত করে সমৃদ্ধশালী অঙ্গ রাজ্যটি দখ করেন। ড. হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী মন্তব্য করেছেন যে, “অঙ্গ রাজ্য আক্রমণের দ্বারা বিম্বিসার মগধের রাজ্য বিস্তারের যে সূচনা করেন,তা অশােকের কলিঙ্গ বিজয়েই তার পরিসমাপ্তি ঘটে।

✡️ মগধের( (Magadha Kingdom) উত্থানের কারণ - মগধের এই উত্থানের মূলে ছিল— 
  •  প্রথমতঃ- অবস্থানগত সুবিধা ও প্রাকৃতিক সুরক্ষা: মগধের প্রাচীন রাজধানী রাজগৃহের চারদিকে ছিল বৈহার, বরাহ, বৃষভ, ঋষিগিরি ও চৈত্যক—এই পাঁচটি পাহাড় ও একটি উঁচু পাথরের সুরক্ষা পাঁচিল। গঙ্গ, শােন ও গণ্ডক নদী পরবর্তী রাজধানী পাটলিপুত্রকে প্রাকৃতিক সুরক্ষা দিয়েছিল।
  • দ্বিতীয়তঃ- আর্থিক সমৃদ্ধি : (ক) কৃষি: গঙ্গ, শােন ও গণ্ডক নদীর পর্যাপ্ত জল, পলিবিধৌত উর্বর জমি এবং লােহার তৈরি কৃষি সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে মগধে কৃষির উন্নতি ঘটেছিল।
(খ) বাণিজ্য: স্থল ও জল পথে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে মগধের নিবিড় সংযােগ থাকায় বাণিজ্যেও সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠেছিল।
(গ) খনিজ: সে-যুগে ভারতের লােহা ও তামার খনিগুলাের অধিকাংশই ছিল মগধ ও তার পার্শ্ববর্তী ধলভূম ও সিংভূম অঞ্চলে।
  • তৄতীয়তঃ- সুযােগ্য নেতৃত্ব: বিম্বিসার, অজাতশত্রু, শিশুনাগ, মহাপদ্মনন্দ, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও অশােক—এই কয়েকজন রাজার সুযােগ্য নেতৃত্ব এবং বস্সাকর, চাণক্য ও রাধাগুপ্ত—এই তিন মন্ত্রীর কূটনৈতিক দক্ষতায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে মগধ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল।
  • চতুর্থতঃ- মিশ্র সংস্কৃতি:- গাঙ্গেয় উপত্যকার মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় মগধ পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের আর্য সংস্কৃতি এবং নিম্ন গাঙ্গেয় অঞ্চলের অনার্য সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। এই দুই সংস্কৃতির মিলনে মগধ একটি বৃহৎ সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠতে পেরেছিল।
❋ 2 .প্রশ্ন: ঋক বৈদিক যুগে আর্যদের সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো? 
অথবা,পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের সামাজিক জীবন সম্পর্কে আলোচনা করো?

আজকের হিন্দু সমাজে বর্ণভেদ বা জাতিভেদ প্রথা বৈদিক যুগের বর্ণভেদ প্রথার অনুসরণেই গড়ে উঠ ফলে আর্য-অনার্য এর সমন্বয় সাধন ছিল সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

   🖵 ঋক বৈদিক যুগে আর্যদের সামাজিক ব্যবস্থা কি কি ছিল তা আলোচনা করা হলো---

  • প্রথমতঃ  পরিবার প্রথা:-পিতৃতান্ত্রিক যৌথ একান্নবর্তী পরিবার কে ঋকবেদে বলা হতো 'কুল' আর পরিবারের প্রধান বা পুরুষকে বলা হতো 'কুলপতি' বা 'গৃহপতি।'
  •  দ্বিতীয়তঃ  সমাজে নারীর স্থান:- ঋক বৈদিক যুগে নারীরা যথেষ্ট সম্মানের অধিকারী ছিল এবং তারা সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানে বিদ্যাচর্চা এমনকি যুদ্ধেও অংশ নিতেন। শুধু তাই নয় তারা উপযুক্ত জীবনসঙ্গীপছন্দ করতে পারতেন।সে সময় সমাজের বাল্যবিবাহ, বিধবা বিবাহ, ও পর্দা প্রথার প্রচলন ছিল না। প্রচলিত পণ প্রথা অনুসারে কন্যার পিতা পণ পেতেন। এবং ঘোষা, আপালা ,লোপামুদ্রা ,গার্গী , প্রভৃতি নারীরা সমাজের উচ্চ স্থান পেয়েছিল
  •  তৃতীয়তঃ  বর্ণভেদ প্রথা :- আর্যদের মধ্যে গুণ ও কর্মের ভিত্তিতে ব্রাহ্মণ ,ক্ষত্রিয় ,বৈশ্য, শূদ্র এই চার বর্ণের উদ্ভব হয়।পরাজিত অনার্যদের শূদ্র বর্ন ভুক্ত করা হয়েছিল ব্রাহ্মণরা-পূজা ,ক্ষত্রিয়রা-যুদ্ধ, বৈশ্যরা-বাণিজ্য এবং শূদ্ররা অপর তিন বর্ণের সেবা করতো। 

চতুর্থতঃ চতুরাশ্রম :- ঋক বৈদিক যুগের ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্যর জীবনে যে পর্যায়ে বিভক্ত ছিল তা বিভিন্ন ভাগে-

  •  ব্রহ্মচর্য ; গুরু বিদ্যা চর্চা কাল।
  •  গার্হস্থ্য যৌবনে বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালনের পর্যায়।
  •  বানপ্রস্থ ;সাংসারিক ব্যাপারে থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ঈশ্বরচিন্তা কাল।   
  •  সন্ন্যাস ; সংসার ত্যাগ করে পরিব্রাজকের জীবন গ্রহণ করা।

                পঞ্চমতঃ  খাদ্য:-  তাদের খাদ্যর মধ্যে ছিল দুধ, ঘি, ফলমূল-সবজি ও  যব । এছাড়াও তারা গম যব ,ধান ,ভুট্টা চাষ করত। উৎসবের দিনে ঘোড়া ,ভেড়া ,ছাগল ও গরুর মাংস খেত।  এবং পানীয় হিসেবে  সুরা ও সোমরস পান করত।

                  ষষ্ঠতঃ  অলংকার:- এর যুগে নারী পুরুষের পোশাকের বিশেষ কোনো পার্থক্য ছিল না ।তারা নিম্নাঙ্গে বাস ও উর্ধাংগে অধিবাস এই পোশাক মূলত শূদ্র পশম ও হরিণের চামড়া দিয়ে তৈরি হতো সেগুলি পরিধান করতো। এবং সোনার তৈরি হিরণ্য কন পুরুষের কানের, নিস্ক গলার হার, কুরীর ও ন্যোচনী বিবাহের নববধূর অলংকার ইত্যাদি অলঙ্কারে  সাজতে ভালোবাসতো।

                উপসংহার ;-  পরিশেষে দেখা যায় যে, নাচ-গান, শিকার, পাশাখেলা ও মুষ্টিযুদ্ধ প্রভৃতি ছাড়া ও রথের দৌড় প্রতিযোগিতা ছিল তাদের প্রিয় বিনোদনের মাধ্যম।

                    --------------

অথবাপরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের সামাজিক জীবন সম্পর্কে আলোচনা করো?                       

ঋক বৈদিক যুগের মত পরবর্তী বৈদিক যুগের সমাজ জীবনে ছিল পরিবারভিত্তিক এ সময়ে ব্রাহ্মণ ও  ক্ষত্রিয় দের প্রাধান্য বেশ ছিল। 

🖵 পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের সামাজিক ব্যবস্থা কি কি ছিল তা আলোচনা করা হলো---

  •  প্রথমত; বর্ণভেদ প্রথার কঠোরতা আরোপ:- পরবর্তী বৈদিক যুগে বর্ণভেদ প্রথা ঋক বৈদিক যুগের তুলনায় অনেক কঠোর আকার ধারণ করে। বর্ণপ্রথা বৃত্তি  ভিত্তিক ও জন্মগত হয়ে দাঁড়ায় ।ফলে সমাজে বেশ কিছু  উপ বর্ণের  উদ্ভব হয়। 
  •   দ্বিতীয়তঃ সমাজে মর্যাদা:- পরবর্তী বৈদিক যুগের সমাজে ব্রাত্মণক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যের বর্ণগত মর্যাদা শূদ্রের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। শূদ্র ছাড়া বাকি তিন বর্ণ দ্বিজবলে পরিচিত হয় এবং উপনয়নের অধিকার লাভ করে।
  •  তৃতীয়তঃ ব্রাত্য ও নিষাদ:- পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে 'ব্রাত্য ও নিষাদনামে দুটি জনগােষ্ঠীর উল্লেখ মেলে। উভয়েই পশুপালন ও খাদ্যসংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। ব্রাত্যরা আর্য, তারা যাযাবর জীবন যাপন করত। অপর দিকে নিষাদরা ছিল অনার্য, তারা নিজ শাসকদের অধীনে গ্রামে বসবাস করত
  • চতুর্থতঃ নারীর মর্যাদা হ্রাস:- পরবর্তী বৈদিক সমাজে নারীর মর্যাদার হ্রাস হয়েছিল, নারীর সম্পত্তির অধিকারকে খর্ব করা হয়।
  •  পঞ্চমতঃ খাদ্য ও পরিধেয়:- পরবর্তী বৈদিক যুগে গমের মতাে চাল একটি প্রধান খাদ্যে পরিণত হয়। মাংস খাওয়ার অভ্যাস কিছুটা কমে যায়। সুতি কাপড়ের সঙ্গে রেশমের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া এই সময় থেকে বাসঅধিবাসের সঙ্গে নীবির (অন্তর্বাস) ব্যবহারের প্রচলন ঘটে। যজ্ঞের সময় পরিধেয় পােশাকের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল তার্পউষাম।
  • ষষ্ঠতঃ বিবাহবিধি:- সমাজে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের প্রচলন বেড়েছিল। সমাজে সবর্ণ বিবাহ প্রচলিত থাকলেও অন্য গােত্রে বিবাহের আদর্শ এসময় থেকেই শুরু হয়। এযুগে বিবাহরীতির ওপর   অভিভাবকদের অনুমােদন ও কর্তৃত্ব অনেক গুণ বাড়ে।
উপসংহার ;-  পরিশেষে দেখা যায় যে অবসর সময়ে নাটক, যন্ত্রসংগীত, কণ্ঠসংগীত ইত্যাদি ছাড়াও ঘােড়দৌড়, পাশাখেলা ছিল তাদের প্রিয় বিনােদনের মাধ্যম।

                  ----------------

 Short SAQ Type Question And Answer :

🔵  ঋগবৈদিক যুগে দ্বিজকাদের বলা হত এবং কেন ঋগবৈদিক যুগে ব্রাত্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যদের দ্বিজবলা হত। উপনয়ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই তিন জাতির মানুষের দ্বিতীয়বার জন্ম ঘটে, এই কল্পনা করে তাদের দ্বিজ আখ্যা দেওয়া হত।

🔵 শ্রেষ্ঠীকারা ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসারের ফলে বৈশ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে এক ধনশালী বণিকশ্রেণির উদ্ভব হয়, এরা শ্ৰেষ্ঠীনামে  পরিচিত। শ্রেষ্ঠীরা সাধারণত নগরে বসবাস করত।

🔵 বৈদিক যুগে বর্ণভেদ প্রথা কীরকম ছিল ঝগবৈদিক সমাজে কর্ম অনুযায়ী ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণের মানুষের কথা জানা যায়। ব্রাহ্মণরা ছিলেন সমাজের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী, তারপর ছিল যথাক্রমে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের আধিপত্য। শূদ্ররা ছিল সবার নিম্নে, তাদের কাজ ছিল উপরােক্ত তিন বর্ণের সেবা করা।

🔵 সভা' 'সমিতি'র কাজ কী ছিলসভাসমিতির কাজ ছিল শাসনকাজে রাজাকে পরামর্শ দেওয়া এবং রাজার স্বৈরাচারী ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করা।
🔵 বৈদিক যুগে প্রচলিত মুদ্রার নাম কী?  বৈদিক যুগে প্রচলিত মুদ্রার নাম নিষ্ক। এটি ছিল স্বর্ণমুদ্রা, যদিও তখনও সেভাবে মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলিত হয়নি।
🔵 আর্যদের প্রাচীনতম গ্রন্ধের নাম কী? কে কয় প্রকার আর্যদের প্রাচীনতম গ্রন্থের নাম ঋবেদ। বেদ চার প্রকারঋক্, সাম, যজু ও অথর্ব।
🔵 সুত্র সাহিত্যের কয়টি ভাপ ও কী কী সূত্র সাহিত্যের দুটি ভাগ, যথা-বেদাঙ্গ ও ষড়দর্শন।
🔵 আর্য বলতে কাদের বােঝায়?  সুদূর অতীতে ভারত ভূখণ্ড যারা বৈদিক সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল তাঁদেরই সাধারণ নাম আর্য। তবে আর্য বলতে কোন মানব গোষ্ঠীকে না বুঝিয়ে একটি ভাষা গোষ্ঠীকেই বোঝায় যারা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় কথা বলতো।
🔵 অনুলােম ও প্রতিলােম কী বৈদিক যুগে উচ্চবর্ণের পুরুষের সঙ্গে নিম্নবর্ণের কন্যার বিবাহ হলে তাকে অনুলােম এবং নিম্নবর্ণের পুরুষের সঙ্গে উচ্চবর্ণের কন্যার বিবাহ হলে তাকে প্রতিলােম বলা হয়।
🔵 ব্রাত্য কারা যে সমস্ত আর্য বনের ফলমূল ও পশুপাখির মাংস খেয়ে জীবনধারণ করত তারা ব্রাত্যনামে পরিচিত। এরা আর্যদের আদি জীবিকা পশুপালনকে অবলম্বন করে যাযাবর জীবন যাপন করত।
🔵 'কুসীদকুসীদিনশব্দের অর্থ কী শতপথ ব্রাত্মণগ্রন্থে কুসীদকুসীদিনশব্দ দুটি পাওয়া যায়। কুসীদশব্দের অর্থ ঋণএবং যে বা যারা সুদের বিনিময়ে ঋণের কারবার করত তাদের বলা হত কুসীদিন।

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন