M.A ফার্স্ট সেমিস্টার ইতিহাস নোটস বাংলা ভার্সন

 M.A First Semester History Note || University Of Gour Banga Malda


Paper Name - (International Relation)
Paper Code - Hist/C/102

Q. Critically Comment on the view that NAM became relevant with the Cold War?

পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃত্ব ব্রিটিশের স্বার্থে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হতো। 1947 খ্রিস্টাব্দে 15 আগস্ট স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই ভারতের স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতির সূচনা। স্বাধীনতার পূর্বে ভারতীয় নেতৃবৃন্দ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পরবর্তীকালে বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে এবং বর্ণবৈষম্যবাদ, উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও গোষ্ঠী রাজনীতির বিরুদ্ধে ভারতের বক্তব্য রাজনীতিতে  এক নতুন ধারার সংযোজন করে। ভারতের এই বৈদেশিক নীতির প্রধান রূপকার হলেন জহরলাল নেহেরু। তিনি ছিলেন এই নীতির দার্শনিক এবং তার প্রধান প্রচারক, সমকালীন বিশ্বে আরো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তার মতো এককভাবে কোন দেশের বৈদেশিক নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হননি।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত - রাশিয়া ও আমেরিকার নেতৃত্বে  বিশ্ব দুটি পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমী রাষ্ট্র বর্গের সাম্যবাদ ভীতি এবং অপরদিকে রাশিয়া ও তার মিত্রদের ধণতন্ত্র বাদের ভীতি  থেকেই এই দুই পরস্পরবিরোধী গোষ্ঠীর উৎপত্তি । নিজের নিজের স্বার্থ ভারী করার জন্য দুই গোষ্ঠী বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের সমর্থন খুজছিল । স্বাধীনতার পর ভারত এই দুই গোষ্ঠীর কোনোটিতে যোগ না দিয়ে  উভয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার যে নীতি গ্রহণ করে তা জোট নিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত (Policy of Non - Alignment)। জহরলাল নেহেরু বিশ্বাস করতেন যে, সামরিক জোট প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীতে শান্তি আনা যায় না বরং এই জোট যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাই  স্বাধীনতার ও পক্ষপাতহীন নীতি গ্রহণ করে পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।


1955 খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসের শুরুতে এশিয়ার 14 টি রাষ্ট্র নতুন দিল্লিতে এক সম্মেলনে মিলিত হয়। তারা নিজেদের মধ্যে ঐক্য সুদীর্ঘ করা এবং সাম্রাজ্যবাদ,ঔপনিবেশিকতা ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের শপথ গ্রহণ করে। 1955 এর 18-26 এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে আফ্রিকায় 29 টি দেশের প্রতিনিধিরা এক সম্মেলনে Bandung Conference  এ মিলিত হন। এই সম্মেলনের মধ্যমণি ছিলেন জহরলাল নেহেরু এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলি শাস্ত্র Mid JoJo। এই সম্মেলনের মধ্যে পাকিস্তান, ইরান ,ইরাক ,ফিলিপাইন, তুরস্ক , থাইল্যান্ড, প্রভৃতি  পশ্চিমী জোটভুক্ত 6 টি দেশ যোগদান করে। বলা যায় যে , এই সম্মেলন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা হয়।


তাছাড়া এই সম্মেলনে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান, এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে বর্ণবিদ্বেষ নির্মূলকরণ, আণবিক ও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা ও ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয় যা পরবর্তীতে ‘পঞ্চশীল ও দশশীল’ নীতি তে পরিণত হয় । NAM  এর প্রথম আনুষ্ঠানিক সম্মেলন বসে ছিল যুগোস্লাভিয়ার রাজধানীর বেলগ্রেডে  এ  1970 সালে অনুষ্ঠিত  লুসাকা সম্মেলনে গোষ্ঠী নিরপেক্ষ দেশের শীর্ষ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল যে প্রতি তিন বছর অন্তর NAM দেশগুলির সম্মেলন হবে তৃতীয় বিশ্বের কোন কোন দেশে। জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক পর্বে নির্জোট আন্দোলনের প্রধান কাজ হয়ে উঠেছিল সামরিক জোট গুলির বিরোধিতা করা এবং এই সময়ে উপনিবেশবাদের  অবসানের ক্ষেত্রেও নির্জোট  দেশ গুলি সক্রিয় ছিল। তারা সুপারপাওয়ার গুলির অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এবং আঞ্চলিক সংঘর্ষের অবসানে রাষ্ট্রসঙ্ঘের  প্রয়াসকে সর্বতোভাবে সমর্থন করেছিল। অল্প কথায় ঠান্ডা লড়াই এর বিকল্প সন্ধান দিয়েছেন নির্জোট আন্দোলন এবং সত্তরের দশকে  ঠান্ডা লড়াই কিছুটা স্বাভাবিক ঘটে এবং দাঁতাত রাজনীতির সূচনা হয় সেই সময়। অন্যদিকে আবার নয়া উপনিবেশবাদের বিপদ ভয়াবহ চেহারা নিয়েছিল  NAM  এই পরিস্থিতিতে নতুন আন্তর্জাতিক  অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা (New International Economic Order)  বা NIEO  ডাক দেয় । 70 দশকের শেষদিকে দাঁতাত এর অবসান  ও নব পর্যায়ে লড়াই এর সূচনা হয়।


পরবর্তী প্রায়  আশির দশকে  ইরাক, ইরান যুদ্ধ, আফগানিস্তান সংকট এবং কাম্পুচিয়া সংঘর্ষের মত আঞ্চলিক সংঘাতের অবসান এ  জোট নিরপেক্ষ দেশগুলির সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় তারপর NAM  এই পর্যায়ে  অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত দাবি গুলি  উত্থাপন করেছিল। উত্তর-দক্ষিণ সম্পর্কের পাশাপাশি এই সময় দক্ষিণ দক্ষিণ সহযোগিতা প্রয়োজন জোরদার হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে NAM  তার সমস্ত শক্তি নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে কিন্তু বিগত নব্বইয়ের দশকে বিশ্ব পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। সোভিয়েত রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতন ঘটে । এর ফলে সামরিক জোট বদ্ধতা অনেকটা প্রাসঙ্গিকতা হারায় এবং সর্বোপরি ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান । এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকেই ধরে নিয়েছে যে ঠান্ডা যুদ্ধ পরবর্তী কালীন দুনিয়ায় NAM  তার প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে পরিশেষে  বিলুপ্ত হয়ে যাবে, কিন্তু সেটা হয়নি এবং প্যালেস্টাইনের প্রশ্নে ইসরায়েলের ভূমিকা ও সমালোচনার মাধ্যমে NAM  এর পক্ষ থেকে তীব্রতর হতে থাকে যার ফলে নতুন সহস্রাব্দে NAM  তার স্মৃতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। 

পরিশেষে বলা যায় যে আধুনিক বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তির সুফল কে সর্বত্র পৌঁছে দিতে নির্জোট আন্দোলন অবিরত কাজ করে  চলেছে এই ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা অপরিসীম ছিল। আফগানিস্থান ,ইরাকে মার্কিন হামলা ও NATO বোমা বর্ষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে নির্জোট আন্দোলন বারংবার সোচ্চার হয়ে উঠেছে । NATO,IMF ছাড়া ইত্যাদির মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ ফাঁদ পৃথিবী থেকে নির্মূল করতে এ আন্দোলন করা হয়েছে । সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন ও বাজার অর্থনীতির ক্রম সম্প্রসারণ এর ফলে নির্জোট আন্দোলনের উপর তার প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি, বরং পরিবর্তিত পরিস্থিতির মোকাবিলায় সক্ষম হয়ে উঠলে জোট নিরপেক্ষতা অপরিহার্য আরো গভীরভাবে অনুভব হবে।                                   

Q. Comment on the rise of Fidel Castro and creation of Cuba?

 

কিউবা পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের (West Indian Island) মধ্যে সর্ববৃহৎ দ্বীপ। ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত এই দ্বীপটি 1898  খ্রিস্টাব্দে স্পেনের অধীনতা পাশ ছিন্ন করে, 1903 খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত ‘Platt Agreement’  প্ল্যান্ট চুক্তি দ্বারা কিউবাতে মার্কিন  রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তৃত হয় এবং মার্কিন সরকার কিউবার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার অধিকার লাভ করে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টের ক্ষমতা লাভের পর 1934 খ্রিস্টাব্দে এই চুক্তি বাতিল করা হয় আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে কিউব একটি মার্কিন উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল। 1952 খ্রিস্টাব্দে মার্চ মাসে মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বাতিস্তায়  কিউবার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে একনায়কতন্ত্র শাসন ব্যবস্থা চালু করেন।


তার শাসনকালে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে ফিদেল কাস্ত্রো এবং Che Guevara  এর যৌথ বিপ্লবী আন্দোলনের মাধ্যমে বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটে। দরিদ্র, অসামান্য, দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং মার্কিন সমর্থনপুষ্ট বাতিস্তা সরকারের পেছনে জনসমর্থন ছিল না। 1959 খ্রিস্টাব্দে 1 লা জানুয়ারি ফিদেল কাস্ত্রো নেতৃত্বে এক অভ্যন্তরীণ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং কাস্ত্রো তখন দেশের শাসন ব্যবস্থা ভার গ্রহণ করেন।


তিনি সোভিয়েত রাশিয়া ,চীন এবং সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এবং নানা ধরনের বৈপ্লবিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করে জনগণের উন্নতি সাধনে সচেষ্ট হন। কাস্ত্রো অনুসৃত নীতি প্রগতিশীল হওয়ার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের এটি পরিপন্থী ছিল তাছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য কমিউনিস্ট রাষ্ট্র থেকে তিনি আর্থিক সাহায্য প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করেন আর ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি,নিকারাগুয়া, ভেনিজুয়েলা প্রভৃতি দেশের মার্কিন বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে উৎসাহিত করতে থাকেন। 1961 খ্রিস্টাব্দে এপ্রিল মাসে মার্কিন উদ্যোগে কাস্ত্রো সরকারকে উচ্ছেদ এর উদ্দেশ্যে 1400  কাস্ত্রো বিরোধী কিউবান নিকারাগুয়া থেকে এসে পিগ সাগর (Bay of Pigs Sea) সাগরে অবতরণ করেন। বিদ্রোহীদের সাহায্যের জন্য প্রস্তুত ছিল মার্কিন  B-26  বোমারু বিমান এবং মাত্র দুই দিনের মধ্যে এই বিদ্রোহ দমিত হয়।সারাবিশ্ব এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন কিউবা সরকারকে উচ্ছেদ এর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিল,তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি John  F. Kennedy ঘোষণা করেন যে - “ We do not intend to abandon Cuba to the Communists.” আমরা কিউবাকে কমিউনিস্টদের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না এ অবস্থায় কাস্ত্রো সোভিয়েত রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়তে বাধ্য হন।


ম্যাপ এর মাধ্যমে দেখানো হলো বিভিন্ন জায়গা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে একাজ করছিল। সােভিয়েত রাশিয়ার পক্ষে বিদেশের মাটিতে এ ধরনের কাজ ছিল এই প্রথম। এই ঘটনায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেনেডি বিচলিত হন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ২২শে অক্টোবর এক বেতার ঘােষণা মারফত তিনি কিউবার চতুর্দিকে নৌ-অবরােধের ব্যবস্থা করেন এবং ঘােষণা করেন যে, কিউবাগামী সব দেশের জাহাজ—এমনকি সােভিয়েত রাশিয়ার জাহাজও অনুসন্ধানের পর,তবেই তা কিউবায় যেতে দেওয়া হবে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি দৃঢ় ভাষায় বলেন যে, কিউবা থেকে কোনাে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এজন্য সােভিয়েত রাশিয়াকে দায়ী করবে এবং সোভিয়েত রাশিয়ার ওপর পালটা আক্রমণ হানার ব্যাপারে কোনাে দ্বিধা করা হবে না। কেবলমাত্র এই নয়—তিনি বুশ প্রধানমন্ত্রী কুশ্চেতের কাছে কিউবা থেকে আক্রমণাত্মক অস্ত্রশস্ত্র অপসারণ এবং পৃথিবীকে আসন্ন যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করার অনুরােধ জানান।
রাষ্ট্রপতি কেনেডির এই ঘােষণায় রুশ প্রতিক্রিয়া হয় মারাত্মক। সোভিয়েত সরকার তাঁর সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়। সােভিয়েত সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে,কিউবা গামী কোনাে জাহাজ বাধাপ্রাপ্ত হলে যেন সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালানো হয়। বিশ্বে এক যুদ্ধের পরিবেশ ঘনিয়ে ওঠে। কিউবা, সােভিয়েত রাশিয়া ও আমেরিকা—তিন পক্ষই জাতিপুঞ্জে বিষয়টি উত্থাপন করে। আবার অন্যদিকে আমেরিকা কিউবাগামী রুশ জাহাজগুলি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে। জাতিপুঞ্জের সেক্রেটারি জেনারেল উ থান্ট (U Thant) এবং পৃথিবীর বিভিন্ন জোটনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলি দু-পক্ষের কাছেই শান্তির জন্য সনির্বন্ধ অনুরােধ জানান।

শেষ পর্যন্ত ২৭ শে অক্টোবর (১৯৬২ খ্রি.) কুশ্চেত মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে জানান যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি কিউবা আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিউবা থেকে নৌ-অবরােধ প্রত্যাহার করে এবং তুরস্ক থেকে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ঘাটি অপসারণ করে, তাহলে সােভিয়েত রাশিয়াও কিউবা থেকে সকল সামরিক সাজসরঞ্জাম সরিয়ে নেবে। শেষ পর্যন্ত সােভিয়েত রাশিয়া কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি সরিয়ে নেয় এবং ২০শে নভো ইং (১৯৬২ খ্রি.) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কিউবার নৌ-অবরােধ তুলে নেয়। এইভাবে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের শুভবুদ্ধির প্রভাবে বিশ্ব একটি সর্বনাশা মহাযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা পায়।

Q. Impact of the Cold War on the Third World?
ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব আলোচনা করো?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে দুই বৃহৎ শক্তির (Super Powers) প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন একটি ধারণা—“তৃতীয় বিশ্ব’-এর উদ্ভব হয়েছে। মােটামুটিভাবে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার সদ্য-স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলিকে ‘তৃতীয় বিশ্ব' বলা হয়ে থাকে। সাধারণভাবে এই দেশগুলি সাম্রাজ্যবাদ-বিরােধী,দারিদ্র পীড়িত ও পশ্চাৎপদ এবং তাদের অনেকেই জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের শরিক।
তৃতীয় বিশ্বে ঠান্ডা লড়াই দুই বৃহৎশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে দূরে সরে থাকলেও বা জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত হলেও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির পক্ষে ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্ত থেকে দুরে সরে থাকা সম্ভব হয়নি। দুই বৃহৎশক্তিই এই দেশগুলির। ওপর প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট হয়েছে এবং বহুলাংশে তারা সফলও হয়েছে। পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে জাপানি, ফরাসি ও ইংরেজ আধিপত্যের বিলুপ্তির ফলে এশিয়া মহাদেশের এক বৃহৎ অংশে যে-ব্যাপক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত রাশিয়াকে আকৃষ্ট করেছে। এর ফলে ইউরােপকেন্দ্রিক ঠান্ডা লড়াই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তৃতীয় দুনিয়াও তা থেকে বাদ যায়নি। কোরিয়া যুদ্ধ, কিউবা সংকট, সুয়েজ খাল সংকট আরব-ইজরায়েল সংঘর্ষ, ভিয়েতনাম সংকট, ইরান-ইরাক যুদ্ধ, ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ প্রভৃতি হল এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তৃতীয় বিশ্বের এইসব স্থানীয় যুদ্ধে প্রধান দুই বৃহৎ শক্তি জড়িয়ে পড়েছে এবং নানাভাবে তারা এইসব যুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে।

SEATO: ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন মদতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা (South-East Asia Treaty Organization = SEATO) বা ‘সিয়াটো।কমিউনিস্ট চিনকে প্রতিরােধ এবং ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট অগ্রগতি রােধ করার উদ্দেশ্যেই মার্কিন মদতে এই সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থার সদস্যরা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনস্—এই আটটি দেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কমিউনিস্ট আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা এর উদ্দেশ্য হলেও এই অঞ্চলের মাত্র দুটি দেশ—থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনস্ এর সদস্য।
CENTO: মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন এবং এই অঞ্চলে সােভিয়েত আধিপত্য স্থাপনে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে গঠিত হয় বাগদাদ চুক্তি। পরবর্তীকালে এর নাম হয় সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন (Central Treaty Organization = CENTO)। ব্রিটেন, পাকিস্তান, ইরাক, ইরান ও তুরস্ক এর সদস্য ছিল। অপরপক্ষে, দেখা যায় যে, কাশ্মীর সমস্যা, সুয়েজ সংকট প্রভৃতি ক্ষেত্রে সােভিয়েত রাশিয়া ছিল ভারত ও মিশরের পক্ষে। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়া ও মিশর 'সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র’ (United Arab Republic) প্রতিষ্ঠা করলে সােভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হয়। ১৯৬৩-তে কুয়েত এবং ১৯৬৪-তে জর্ডন সােভিয়েত রাশিয়ার স্বীকৃতি লাভে সমর্থ হয়। কোরিয়া যুদ্ধ, সুয়েজ সংকট, ভিয়েতনাম সংকট এবং আরব-ইজরায়েল বিবাদকে কেন্দ্র করে তৃতীয় বিশ্বে ঠান্ডা লড়াই তীব্র রূপ ধারণ করে।

Next Page

Click Here



সঠিক উত্তরটি চিহ্নিত করাে: (Multiple Choice Question)

[১] হ্যারি টুম্যান হলেন ➤ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী/মার্কিন রাষ্ট্রপতি/রুশ মন্ত্রী।
[২] চার্চিল হলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি/ফরাসি রাষ্ট্রপতি/ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
[৩] ফালটন বক্তৃতা করেন মলাটোভ/কেন্নান/চার্চিল।
[৪] বার্লিন অবরােধ শুরু হয় ১৯৪৭/১৯৪৮/১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে।
[৫] চৌ-এন-লাই হলেন চিনের চেয়ারম্যান/প্রধানমন্ত্রী/বিদেশমন্ত্রী।
[৬] ফ্যালজেনিকো বাতিস্তা হলেন রাশিয়া/কোরিয়া/কিউবার নেতা।
[৭] জন এফ. কেনেডি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট/মার্কিন রাষ্ট্রদূত/ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

Answer Try & Solved to Comment Now

1 মন্তব্যসমূহ

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন