Ancient India History Note Bengali Version

                       - : সূচিপত্র :-

1. Describe the main Physiographical features of India
2. Archaeological Sources for the reconstruction of Ancient Indian

❋ 1 . Describe the main Physiographical features of India?

 ロ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণভাগের সর্ববৃহৎ উপদ্বীপ হল ভারতবর্ষ। বিশালতা ও প্রাকৃতি বৈচিত্রের দিক থেকেও ভারত একটি স্বতন্ত্র দেশ। আয়তনের দিক থেকে ভারতবর্ষ বিশ্বের মত পঞ্চম স্থানের অধিকারী। এর আয়তন প্রায় ৪০,৯৫,০০০ বর্গ কিলােমিটার। রাশিয়াকে বাদ দিলে প্রায় সমগ্র ইউরােপের সমান। ভারতবর্ষে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য চোখে পড়়ার মতাে। ঐতিহাসিকগণ ভারতবর্ষের মহাদেশ সুলভ বিশাল আয়তন, প্রাকৃতিক ও সামাজি বৈচিত্রের জন্য ভারতবর্ষকে “উপমহাদেশ” বা “ক্ষুদ্রাকৃতি মহাদেশ” বলে অভিহিত করেছে।

ভারতবর্ষের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা এক উচ্চ রক্ষা প্রাচীর ন্যায় দণ্ডায়মান। উত্তর-পশ্চিমে সুলেমান ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা। দক্ষিণে ভারত মহাসাগ দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিম উপকূল আরবসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই দেশে তিন দিক সমুদ্র দ্বারা পরিবেষ্টিত বলে একে উপদ্বীপও বলা হয়।ভারতের ভৌগােলিক উপাদানগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় যথা- 

  • (i) পাহাড় ও পর্বত
  • (ii) নদ-নদী ও সমুদ্র 
  • (iii) সমভূমি ও উপকূল ভূমি
  • (iv) জলবায়ু
  • (v) বনভূমি

 এই ভৌগােলিক বৈচিত্র্য ভারতের ইতিহাসকে বৈচিত্র্যমণ্ডিত করেছে। ভূ-প্রকৃতির তারতম্যের ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে ভূ-তত্ত্ব বিদগণ পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করেছেন।

  • (১) উত্তরে হিমালয় সংলগ্ন পার্বত্য অঞ্চল
  • (২) সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রম্মপুত্র বিধৌত সমতল ভূমি
  • (৩) মধ্য ভারতের মালভূমি
  •  (৪) দাক্ষিণাত্যের মালভূমি
  • (৫) সুদূর দক্ষিণের উপকূল অঞল

 ঐতিহাসিক স্মিথ দাক্ষিণাত্যে মালভূমির দক্ষিণে মাদ্রাজ, কেরল, কোচিন, ত্রিবাঙ্কুর ইত্যাদি নিয়ে গঠিত দক্ষিণ ভাগকে সুদূর দক্ষিণ বলে চিহিত করেছেন। যে কোনাে দেশের ইতিহাস ভৌগােলিক উপাদান বিশেষ ভাবে প্রভাবিত। ভারতের ইতিহাস, সভ্যতা, সংস্কৃতির উপর ভৌগােলিক উপাদানের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক ও সুদূর প্রসারী। ঐতিহাসিক টয়েনবিরের মতে "Geographical facts are the only Fact as approached by man" অর্থাৎ “ভৌগােলিক উপাদানকে মানুষ যেভাবে ব্যবহার করেন সেই ভাবেই সব কিছু নির্ধারিত হয়।”

ভারতবর্ষ বিভিন্ন পাহাড় ও পর্বত পরিবেষ্টিত দেশ ! এইগুলি ভারতের সভ্যতাকে স্বতন্ত্র রূপে গড়ে তুলেছে। পর্বতগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল হিমালয়, বিন্ধ্য, সুলেমান, হিন্দুকুশ, পূর্বঘাট এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালা প্রভৃতি।

হিমালয়ের প্রভাব এর ফলে ভারতের সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্ষেত্রে হিমালয় একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। ঐতিহাসিক ডঃ কে, এম. পাণিকরতার “A Survey of Indian History" গ্রন্থে ভারতবর্ষকে “হিমালয়ের দান” বলে উল্লেখ করেছেন। ঐতিহাসিক টলেমী হিমালয়কে ‘ইয়ামােস’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই হিমালয় ভারতের উত্তরে অর্ধচন্দ্রাকারে ২৫৭৪.৪ কিমি. এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ভারতের অভ্যন্তরের ৩২১৮ কি. মি. স্থলভাগের উপর হিমালয়ের প্রভাব খুবই গভীর ফলে ভারতীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসে হিমালয়ের প্রভাব অপরিসীম। 

  • প্রথমতঃ গিরিরাজ হিমালয় ভারতের উত্তরে এক বিশাল প্রাচীরের মত ভারতবর্ষকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে নিরাপদ রেখেছে। 
  • দ্বিতীয়তঃ হিমালয় ভারতকে মধ্য-এশিয়ার শীতল ও শুদ্ধ বায়ু প্রবাহ থেকে রক্ষা করছে। 
  • তৃতীয়তঃ ভারত মহাসাগর ও আরব সাগর থেকে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ু হিমালয়ের বুকে বাধা পেয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং ভারতের সমভূমিকে উর্বর করে তােলে। 
  • চতুর্থতঃ হিমালয় থেকে নির্গত ভারতের প্রধান নদ-নদী সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রম্মপুত্র এবং তাদের শাখানদী ও উপনদীগুলি ভারতভূমিকে উর্বর ও শস্যশ্যামল করে তুলেছে। 
  • পঞ্চমতঃ হিমালয় ভারতের প্রতিরক্ষার কাজ করলেও ভারতকে প্রকৃত পক্ষে বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখেনি। সুপ্রাচীন কাল থেকে খাইবার’, ‘বােলান’, ‘গােমাল’, ‘বানিহাল, কারাকোরাম’, ‘পীরপাল’ প্রভৃতি গিরিপথের মধ্য দিয়ে ভারত ও মধ্য-এশিয়ার সংযােগ গড়ে উঠেছে। 
  • ষষ্ঠতঃ বহু ভারতীয় আধ্যাত্ম সাধনার পীঠস্থান হিমালয়। তাই মহাকবি ব্যাস ও কালিদাসর্তাদের রচিত কাব্যে হিমালয়কে “দেবতাত্মা”বলে অভিহিত করেছেন। তাই ভারতীয় ধর্ম, সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্যতম প্রতীক হল হিমালয়।

 হিমালয়ের মত বিন্ধ্য পর্বতও ভারতীয় ইতিহাসকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে। ভারতের মধ্যস্থানে অবস্থিত বিন্ধ্য পর্বত ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করেছে। একটি হল উত্তর ভারত বা আর্যাবর্তএবং অপরটি হল দক্ষিণভারত বা দাক্ষিণাত্য। ভারতের ইতিহাসে এই পর্বতের সবচেয়ে বড়াে প্রভাব হল এ পর্বতের জন্যই দক্ষিণে দ্রাবিড় সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে এবং সৃষ্টি হয়েছে উন্নত ও মৌলিক শিল্প-স্থাপত্য। শত আক্রমণেও দ্রাবিড় সভ্যতার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রেখে গেছে।

ভারত নদীমাতৃক দেশ। নীলনদকে কেন্দ্র করে যেমন মিশরীয় সভ্যতা এবং ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীকে কেন্দ্র করে মেসােপটেমিয়ার সভ্যতা গড়ে উঠেছে, তেমনি ভারতে সিন্ধুনদকে কেন্দ্র করে প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার সূচনা ও বিকাশ ঘটেছে। অসংখ্য নদনদী ভারতে বর্তমান। প্রাচীনকাল থেকেই এই নদ-নদীগুলি একদিকে যেমন সমতলভূমিকে উর্বর করে শস্য শ্যামল করেছে, অন্য দিকে তেমনই এই নদ-নদীগুলি বিভিন্ন অঞলের সঙ্গে যােগাযােগ স্থাপন ও ব্যবসা বাণিজ্যে সাহায্য করে। বাণিজ্য ও জীবন যাত্রার সুবিধার জন্যই নদীর ধারে ধারে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বন্দর ও জনপদ। গঙ্গানদীর তীরে হরিদ্বার, এলাহাবাদ, বারাণসী, পাটনা, প্রভৃতি শহর। যমুনা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে দিল্লি, আগ্রা, মথুরা প্রভৃতি শহর। ভারতীয় রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি নদ-নদী দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত।

সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রম্মপুত্র বিধৌত উর্বর ভারতীয় সমভূমিকে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার পীঠস্থান বলা হয়। এর মধ্যে গাঙ্গেয় সমভূমিকে ভারতের হৃৎপিণ্ড ঐতিহাসিকগণ অভিহিত করেছেন। গাঙ্গেয় সমভূমির দৈর্ঘ প্রায় ৩,০০০ কি.মি. এবং প্রস্থে প্রায় ২৫০-৩০০ কি.মি.। স্বল্প পরিশ্রমেই উর্বর সমভূমিতে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হয়। খাদ্যে স্বনির্ভর ভারতীয়গণ তাদের চিন্তন ও মননশীলতার মধ্য দিয়ে শিল্পে, সাহিত্যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে ।

ভারতের উর্বর সমভূমির বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে রাজস্থানে বিস্তৃত মরু অঞ্চল। এই অঞলের আয়তন প্রায় ১ লক্ষ ৬ হাজার বর্গ কি.মি.। এই বালুকাময় মরুপ্রান্তর অনুর্বর এবং যােগাযােগ ব্যবস্থাও অনুন্নত। এই ভূ-প্রকৃতি এখানকার মানুষদের পরিশ্রমী,কষ্টসহিষ্ণু, স্বাধীন ও দৃঢ়চেতা মানসিকতা গড়ে তুলেছে।

নদ-নদী, পাহাড় পর্বতের ন্যায় সমুদ্রও ভারতের ইতিহাসের গতি প্রকৃতি নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। ভারতের তিনদিক সমুদ্রবেষ্টিত। ভারতের দক্ষিণে ভারত মহাসাগর ও পশ্চিমে আরবসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়ায় অতীতকাল থেকে সমুদ্র ভারতকে বহিরাক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করেছে। সামুদ্রিক বন্দর ও পােতাশ্রয় থাকায় সিংহল, কম্বােজ, সুমাত্রা, জাভা, চীন এবং পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যােগসূত্র স্থাপিত হয়। সমুদ্র থেকে নির্গত মৌসুমি বায়ু কৃষিকার্যে বিশেষতঃ সাহায্য করে। ভারতে আধুনিক সভ্যতার বিকাশে সমুদ্রের প্রভাব অপরিসীম। সমুদ্র সংলগ্ন হওয়ায় দক্ষিণ ভারতের চোলরা সামুদ্রিক নৌ-বিদ্যায় ও বাণিজ্যে অতি দক্ষ। ১৪৯৮ খ্রি: পাের্তুগীজ নাবিক ভাস্কো-ডা-গামা দিয়াজ ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার করার পর ওই পথ ধরেই পাের্তুগীজ, ওলন্দাজ, দিনেমার, ফরাসি এবং ইংরেজ প্রভৃতি বণিকগণ ভারতে আসে এবং শেষ পর্যন্ত ইংরেজ বণিকরা ভারতে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে। তাই আধুনিক ভারতীয় সভ্যতার বিকাশে সমুদ্রের প্রভাব অপরিসীম।

উপসংহারঃ ফরাসি চিন্তাবিদ বােডিন-এর মতে “ভূগােল ও আবহাওয়া বিভিন্ন জাতির ভাগ্য নির্ধারিত করে ভারতের ক্ষেত্রেও তা প্রযােজ্য। পাহাড় পর্বত, নদনদী, সমুদ্র, মরুভূমি প্রভৃতি বিভিন্ন অঞ্চলের বৈচিত্র্যপূর্ণ। ভৌগােলিক ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ভারতবাসীর চরিত্র, জীবন, জীবিকা ও বৃত্তি গ্রহণে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ভৌগােলিক বৈচিত্র্যের জন্য ভারতের ইতিহাস বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং 'ভারত পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম সংস্করণ’-এ পরিণত হয়েছে।

❋ 2 . Discuss the importance of archaeological Sources for the reconstruction of Ancient Indian history?

ロ যে সমস্ত তথ্য সূত্রের অবলম্বনের মাধ্যমে ঐতিহাসিকগণ ইতিহাস রচনা করেন তাকে ইতিহাসের উপাদান বলে। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান গুলি কে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় -

  • প্রথমতঃ সাহিত্যিক উপাদান
  •  দ্বিতীয়তঃ প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান
সাহিত্যিক উপাদান কে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায় যেমন- 

  • (১) ভারতীয় সাহিত্য
  • (২) বৈদেশিক সাহিত্য

 প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান গুলি কেউ আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় সেগুলি হল -

  •  (i) লিপি 
  • (ii) মুদ্রা 
  •  (iii) স্থাপত্য ও ভাস্কর্য এবং প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ

💭 সাহিত্যিক উপাদান  ভারতের ইতিহাস রচনায় সাহিত্যিক উপাদান গুলির গুরুত্ব অপরিসীম।দেশীয় সাহিত্য গুলির মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ, ধর্মনিরপেক্ষ গ্রন্থ, জীবনচরিত এবং আঞ্চলিক ইতিহাস উল্লেখযোগ্য। ধর্মীয় গ্রন্থ প্রাচীন ভারতের হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ- বেদ ,উপনিষ, পুরাণ , রামায়ণ , মহাভারত , বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ - ত্রিপিটক ও জাতক বিভিন্ন স্মৃতিশাস্ত্র উল্লেখযোগ্য। যেমন - নারদ স্মৃতি ,মনুস্মৃতি , প্রভৃতি থেকে প্রাচীন ভারতের নানান সামাজিক, ধর্মীয় , অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনযাত্রার পরিচয় পাওয়া যায়। ধর্মনিরপেক্ষ গ্রন্থ গুলির মধ্যে কৌটিল্যের - 'অর্থশাস্ত্র' ,পতঞ্জলির - 'মহাভাষ্য', পাণিনির - 'অষ্টাধ্যায়ী', বিশাখদত্তের - 'মুদ্রারাক্ষস', কালিদাসের - 'অভিজ্ঞান শকুন্তলম', কবি বিজ্ঞানেশ্বরের -'মিত্রাক্ষরা' প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ৷ আর জীবনী গ্রন্থ গুলির মধ্যে কনিষ্কের সভাকবি অশ্বঘোষের 'বুদ্ধচরিত' হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্টের 'হর্ষচরিত' সন্ধ্যাকর নন্দীর 'রামচরিত' বিলহন এর লেখা 'বিক্রমাঙ্কদেব চরিত' বাক্পতি 'গৌড়বাহ' ইত্যাদি। এছাড়াও আঞ্চলিকভাবে রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ যেমন কলহনের 'রাজতরঙ্গিনী' খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর কাশ্মীরের ইতিহাস, সোমেশ্বর 'রচিত রাসমালা'। এবং রাজ শেখর রচিত 'প্রবন্ধ কোষ' থেকে প্রাচীন গুজরাটের রাজনৈতিক ইতিহাস জানা যায়।

🖵 বৈদেশিক সাহিত্য :  এর মাধ্যমে বিদেশী লেখকদের ও সাহিত্যিকদের লেখা থেকে ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে যেসব তথ্য পাওয়া যায় তাকেই বৈদেশিক সাহিত্য বা বৈদেশিক বিবরণ বলা হয়। বিদেশি সাহিত্যের মধ্যে গ্রিক-রোমান চীনা-তিব্বতী আরবি ও ইংরেজি লেখক ও পর্যটকদের বিবরণ থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভারতের নানা ইতিহাস ও তথ্য জানা যায়।

ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস এর লেখা ইতিহাসমালা ও 'Persae' থেকে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের ইতিহাস ,মেগাস্থিনিসের 'ইন্ডিকা' থেকে মৌর্যযুগ অজ্ঞাত পরিচয় গ্রিক নাবিক এর লেখা 'পেরিপ্লাস অফ দি এরিথ্রিয়ান সি ' বা 'ভারত মহাসাগর ভ্রমণ 'গ্রন্থ থেকে প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন বন্দর ও বাণিজ্য কেন্দ্র সম্বন্ধে ফা হিয়েন এর 'ফো-কিয়ো-কি' থেকে গুপ্তযুগ, হিউয়েন সাং এর 'সি-ইউ- কি' থেকে হর্ষবর্ধন ও আরবীয় ঐতিহাসিক অল-বেরুনীর 'তহকিক -ই -হিন্দ ' গ্রন্থ থেকে একাদশ শতকের ভারতে ধর্ম সমাজ শিক্ষা ও বিজ্ঞান চর্চার বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।

💭 প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান : প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান হল ইতিহাসের মূল উপাদান। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের গুরুত্ব সর্বাধিক । প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার সাহায্য ছাড়া ভারতের ইতিহাসের অনেক তথ্য অজানা থেকে যেত। প্রত্নতত্ব শব্দটির উৎস ইংরেজি - "Archaeology" থেকে ,এটি একটি গ্রিক শব্দ  "Arkhaiologia" এর অর্থ হলো 'অতীতের বস্তু বিষয়ক চর্চা' তাই প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের নোঙ্গর বলা হয়।প্রত্ন কথার অর্থ প্রাচীন প্রত্নতত্ত্ব বলতে প্রাচীন যুগের লিপি, মুদ্রা ,সীলমোহর ,পাথরের অস্ত্রশস্ত্র, ধাতুনির্মিত অর্থশাস্ত্র ,দৈনন্দিন ব্যবহৃত বস্তুসমূহ বোঝায়।প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান গুলি মূলত উৎখননের ফলেই আবিষ্কৃত হয়। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দয়ারাম সাহানি , প্রিন্সেপ, কানিংহাম ,জন্ মার্শাল প্রমূখ ।এইসব ইউরোপীয় ও ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিকদের নিরলস গবেষণার ফলে ভারতের ইতিহাসে অনেক অজানা অধ্যায় আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে ৷ প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান গুলি কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়-(i) লিপি বা লেখ (ii) মুদ্রা (ii) স্থাপত্য ও ভাস্কর্য।

(i) লিপি বা লেখ (Inscription) লিপি বা লেখ হল প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় একটি বিশ্বস্ত উপাদান।সোনা ,রূপা ,তামা, লোহা ,ব্রোঞ্চ, প্রভৃতি ধাতুর উপর লিপি বা লেখ গুলি উৎকীর্ণ করে রাখা হতো ৷ অধ্যাপক রাপ্সন এর মতে লিপি বা লেখ গুলি থেকে থেকে তৎকালীন সমাজের রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের পরিচয় পাওয়া যায়। ডক্টর ভিন্সেন্ট স্মিথ বলেন যে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে লিপি গুলি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বপ্রধান স্থানের অধিকারী।ডঃ রমেশচন্দ্র এর মতে প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনায় লিপি গুলির গুরুত্ব সর্বাধিক।কারণ সাহিত্যের ভিতরে যুগে যুগে পরিবর্তন এসেছে কিন্তু লিপি বা লেখাগুলি অপরিবর্তিত থেকে গেছে ।লিপি বা লেখর অনুমোদন ছাড়া কোনো তথ্য এবং তারিখ সত্যের মর্যাদা পায় না। এই দিক থেকে লিপি বা লেখ গুলিকে ইতিহাসের জীবন্ত দলিল বলা যায়। লিপি বা লেখ আবার বিভিন্ন প্রকারের যেমন - শিলালিপি ,স্তম্ভলিপি ,তাম্রলিপি ইত্যাদি।

 প্রাচীন ভারতের লিপি কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় - (১) দেশীয় লিপি (২)বিদেশি লিপি। তবে এখানে লিপি উৎকীর্ণ বিদ্যাকে বলা হয় এপিগ্রাফি এবং লিপি অনুশীলনকে বলা হয় প্যালিওগ্রাফি(Paleography)।
প্রাচীনকালে খরোষ্ঠী, তামিল, পালি ,সংস্কৃত, কানারি ,মালায়ালাম , প্রাকৃত প্রভৃতি ভাষায় দেশীয় লিপি গুলি লেখা হতো।রাজ্য জয় ভূমিদান শাসন ধর্ম রাজনৈতিক ঘটনা ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি ছিল দেশীয় লিপি গুলি বিষয়বস্তু। এইসব লিপি গুলির মধ্যে সম্রাট অশোকের লিপি গুলি প্রধান এবং অন্যতম ছিল। অশোকের লেখ গুলি শিলাখণ্ডে স্তম্ভ গ্রাএে এবং গিরিগুহায় পাওয়া গেছে। এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল এর সম্পাদক স্যার জন প্রিন্সেপ 1837 খ্রিস্টাব্দে অশোকের লিপি গুলি পাঠোদ্ধার করেন, এছাড়াও সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি হরি সেন রচিত 'এলাহাবাদ প্রশস্তি' থেকে গুপ্তযুগ সাতবাহন রাজ গৌতমি পুত্র সাতকর্ণীর 'নাসিক প্রশস্তি' থেকে সাতবাহন শাসনকাল চালুক্য রাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর 'আইহোল' লিপি থেকে তার রাজত্বকাল ও কলিঙ্গরাজ খারবেল এর 'হাতি গুম্ফা' শিলালিপি থেকে খারবেলের কীর্তিকাহিনী জানা যায়।

(ii) মুদ্রা (Coin) প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মুদ্রার মূল্য আকর উপাদান ।সাহিত্য ও লিপি থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যায় মুদ্রার সাহায্যে তার সত্যতা যাচাই করা যায়। মুদ্রা গুণগত উৎকর্ষ বা অপকর্ষ এবং মুদ্রা ব্যবহৃত ধাতু সেই যুগের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিচয় বহন করে।যেমন গুপ্ত যুগে স্বর্ণমুদ্রার প্রাচুর্য এবং মুদ্রায় রোমান প্রভাব থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও রোমের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের কথা জানা যায়। সমুদ্রগুপ্তের 'বিনাবাদন মূর্তি' থেকে তার সংগীত প্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়।মুদ্রায় খোদিত দেবদেবীর মূর্তি এবং নানা ছবি থেকে সমসাময়িক যুগের মানুষের ধর্ম বিশ্বাস ও সমাজ জীবন সম্বন্ধে জানতে পারা যায়। এবং সেই সময়ে আর্যদের স্বর্ণ মুদ্রা 'মনা ও নিস্ক' চোলদের স্বর্ণ মুদ্রা 'ক্যান্ড' থেকে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।মুদ্রার গুরুত্ব সম্পর্কে ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার তার "Ancient India" গ্রন্থে বলেন -'মুদ্রা রাজাদের নাম ও সংশ্লিষ্ট এলাকার শাসনকাল সম্বন্ধে জানতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। '

(iii) স্থাপত্য ও ভাস্কর্যপ্রত্নতত্ত্ববিদগণের খননকার্যের মাধ্যমে মাটির নিচে যে সমস্ত অট্টালিকা মন্দির মূর্তি বিভিন্ন ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও শিল্প কার্য পাওয়া গেছে তাকে স্থাপত্য ভাস্কর্যের নিদর্শন বলা হয়।রাজনৈতিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে ও অপ্রয়োজনীয় হলেও শিল্প-সংস্কৃতি ধর্ম অর্থনীতি সমাজ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে স্থাপত্য ভাস্কর্যের নিদর্শন এর ভূমিকা অপরিসীম। হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো ,তক্ষশীলা ,সাচি সারনাথ ,গুজরাট ,পাটলিপুত্র ,নালন্দা ও ভাস্কর্যের উৎকর্ষের পরিচয় বহন করে।সাম্প্রতিককালে পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরের কাছে অজয় নদীর তীরে পান্ডু রাজার ঢিবি ও বেড়াচাঁপা তে খননকার্যের মধ্যে দিয়ে প্রাচীন স্থাপত্য ভাস্কর্যের বহু নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন