সবুজ বিপ্লব বলতে কী বোঝো? Green Revaluation History


Sobuj Biplob


❋ ভারতে সবুজবিপ্লবের ইতিহাস এবং সবুজ বিপ্লব এর জনক?
 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সদ্যস্বাধীন ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির
সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন সেভাবে বৃদ্ধি না পাওয়ার ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা যায় (যেমন—1961 খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষ)। এই সমস্যা সমাধান করার জন্য ভারতীয় কৃষিমন্ত্রক পৃথিবীর সবুজবিপ্লবের জনক [Norman Borlaug] কে আমন্ত্রণ জানান। পরে Borlaug ভারতের পঞ্জাব রাজ্যের কৃষির উন্নতির পরম্পরা দেখে পঞ্জাব রাজ্যকেই সবুজবিপ্লবের মূল স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেন। Norman Borlaug ভারত ত্যাগের পর Borlaug এর  স্নেহধন্য ড. এম .এস স্বামীনাথন ভারতের এই কৃষিবিপ্লবের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যান। যিনি পরবর্তীকালে ভারতের কৃষিবিপ্লবের জনক হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন। এই দুজনের যুগলবন্দিতে পৃথিবীতে খাদ্যের অভাব দূর হয়। Norman Borlaug  নােবেল শান্তি পুরস্কার (1970) গ্রহণের সময় বলেন— “ড. স্বামীনাথন যদি মেক্সিকোর বামন প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে ফসল সংকরায়ণ না ঘটাতেন তাহলে সবুজবিপ্লবের স্বপ্ন সফল হতে পারত না।”
  
❋ [Green Revaluation] সবুজ বিপ্লব কাকে বলে?
ロ পৃথিবীর, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশসমূহের কৃষিকাজের ইতিহাসে এক গুরুত্বপৃর্ণ মাইলফলক হল সবুজবিপ্লব । 1968 খ্রিস্টাব্দে (United States Agency for International Development, USAID)- ইউ এস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এর তৎকালীন অধিকর্তা (William Gaud) উইলিয়াম গাউড  সবুজবিপ্লৰ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন। 1960-এর দশকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ প্রভৃতি এশিয়ার দেশসমূহে ; গিয়ানা,মালউই ইত্যাদি আফ্রিকার দেশসমূহে এবং মেক্সিকো, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ইত্যাদি দক্ষিণ আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশসমূহে উন্নত সংকর বীজের ব্যবহার, রাসায়নিক সারের প্রয়ােগ, জলসেচের উন্নতি, নানা ধরনের কটিনাশকের ব্যবহার, বীজ শােধনে ওষুধের প্রয়ােগ, ভূমিসংস্কার ও ব্যাংকিং সংস্কার পরিষেবা ইত্যাদি উন্নতির মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতার যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়,তাকে সবুজবিপ্লব বলে।

✸ সবুজবিপ্লবের পরিকল্পিত স্থান : ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকীপরিকল্পনায় (1961–1966) পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের সাতটি জেলাকে বেছে নেওয়া হয়। উচ্চফলনশীল বিভিন্নতা কর্মসূচি (High-Yielding Varieties Programme, HYVP) ও নিবিড় অঞ্চল বিকাশ কর্মসূচির (Intensive Agricultural
District Programme, IADP) সাহায্যে এই বিপ্লবের পরিকল্পনার আওতায় ভারতের আরও কিছু জেলাকে আনা হয়। যেমন—বিহারের সাহাবাদ, ছত্তিশগড়ের রায়পুর, উত্তরপ্রদেশের আলিগড়, তামিলনাড়ুর থাঞ্জাভুর ও রাজস্থানের পালি জেলা।

 সবুজবিপ্লবে ভারতবর্যের কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব প্রাপ্তি ঘটে, যা ইতিপূর্বে হয়নি। সবুজবিপ্লবে ভারতের সেরা প্রাপ্তি প্রধান শস্য-দানা ধান ও গমের ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি । ভারতের প্রধান ফসল ধানের উৎপাদন ছিল মাত্র 35 মিলিয়ন টন, তা 2016–17 খ্রিস্টাব্দে দাঁড়িয়েছে 164.2 মিলিয়ন টন তালিকায়। ধানের মােট উৎপাদনই শুধু বাড়েনি, হেক্টর প্রতি উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন—1960-61 খ্রিস্টাব্দে যা ছিল 1,010 কেজি/হেক্টর, তা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে 2,840 কেজি/হেক্টর।

ভারতের দ্বিতীয় শস্য-দানা গমের উৎপাদন ধানের থেকেও বেশি বৃদ্ধি পায়। 1960–61 খ্রিস্টাব্দে ভারতে গম উৎপাদন ছিল মাত্র 11 মিলিয়ন টন, তা 2016-17 খ্রিস্টাব্দে দাঁড়িয়েছে 94.5 মিলিয়ন টন। হেক্টর প্রতি উৎপাদন 1960–61 খ্রিস্টাব্দে ছিল মাত্র 800 কেজি/হেক্টর, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে 2,733 কেজি/হেক্টর। অর্থাৎ, ভারতে প্রধান শস্য-দানা ধান ও গমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে 3 গুণ ও 7 গুণ সবুজ বিপ্লবে প্রধানত শস্য-দানার উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও বাণিজ্যিক ফসলের উৎপাদনও মােটামুটি বৃদ্ধি পায়। ইক্ষু, কার্পাস, পাট, তৈলবীজ ও আলুর উৎপাদন সবুজবিপ্লবে বৃদ্ধি পায়।1960–61 খ্রিস্টাব্দে ইক্ষুর উৎপাদন ছিল যেখানে 110 মিলিয়ন টন, তা 2016-17 খ্রিস্টাব্দে এসে দাঁড়িয়েছে 4263 মিলিয়ন টন।

সবুজবিপ্লবের ফলে কৃষি যন্ত্রপাতির কারখানা, সার কারখানা ও সরাসরি কৃষিক্ষেত্রে কাজ করার সুযােগ ঘটে। বহু কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। সেইসব স্থানেও কর্মসংস্থানের সুযােগ ঘটে। এ ছাড়া কৃষিভিত্তিক শিল্পে (যেমন—কার্পাসশিল্প, পাটশিল্প, চা-শিল্প) বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। আবার কৃষি বাণিজ্যের প্রসারের ফলে মাধ্যমিক ও তৃতীয় স্তরেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়।

❋ সবুজবিপ্লবে ক্ষয়ক্ষতি বা সবুজ বিপ্লবের সুফল ও কুফল :- সবুজ বিপ্লব ভারতে অনেক প্রাপ্তিযােগ আনলেও বর্তমানে ভারতকে অনেক ক্ষয়ক্ষতির মাশুল দিতে হচ্ছে। এর প্রাপ্তির চেয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি যে আধুনিক কৃষিবিজ্ঞানীরা সবুজবিপ্লবকে ‘বিপ্লব’ বলতে ইচ্ছুক নন? তাঁর কারণ গুলি নীচে আলোচনা করা হলো .....
  •  সবুজবিপ্লবে ভারতের পঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি কতকগুলি মুষ্টিমেয় রাজ্য উপকৃত হয় কিন্তু বিহার, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, কর্ণাটক ও সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতে (পশ্চিমবঙ্গসহ) এর প্রভাব পড়েনি। ফলে ভারতে আন্তঃআঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।
  •  সবুজবিপ্লবে বিভিন্ন উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহার করে ধান, গম ও বাজরার উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেলেও তিল, তিসি, বার্লি ইত্যাদি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি তাে হয়নি, বরং অনেক ফসলের উৎপাদন কমে যায়।
  • সবুজবিপ্লবের প্রারম্ভে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হলেও পরবর্তীকালে কৃষিতে ব্যাপক যান্ত্রিকীকরণ ঘটায় শ্রম উদ্বৃত্ত হয়, যা ভারতের মতাে বিপুল জনসংখ্যার দেশে কর্মসংস্থানে মন্দা এনেছে।
  • সবুজবিপ্লবে যেসব স্থান উপকৃত সেইসব স্থানে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি হয় এবং তাদের ফসল উৎপাদনের ব্যয়ও কম পড়ে। ফলে তারা কম দামেই ফসল বাজারজাত করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। ফলে তাদের কৃষি অলাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়। আবার ধনী কৃষকেরা সহজেই ঋণ পেয়ে যায় ও তা সহজেই মুকুব হয়ে যায়। কিন্তু গরিব ও ভাগচাষিরা সহজে ঋণ পায় না, তাই বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে কৃষি ছেড়ে শ্রমিকের কাজ করছেন। আবার কেউ কৃষিকাজ করতে এসে মহাজনি ঋণের ফাঁস সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। 2001 থেকে 2006 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরালা ও মহারাষ্ট্র মাত্র এই চারটি রাজ্যে 8,900 জন সর্বহারা কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। বস্তুত এক সর্বাঙ্গীণ অবক্ষয়ের চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠছে ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রে।
  • সবুজবিপ্লবের অন্যতম কুফল হল বাস্তুতান্ত্রিক অবনমন, যা ভারতীয় কৃষিকে ভয়ংকর সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। যেমন—মৃত্তিকার লবণতা ও মৃত্তিকার ক্ষয় বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে দেখা যায় সরকার বর্তমানে পূর্ব-ভারতেও সবুজবিপ্লব আনার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।

❋ শ্বেত বিপ্লব কী বা শ্বেত বিপ্লব কাকে বলে?
ロ ভারতে উন্নত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও জিন তত্ত্বের সাহায্য নিয়ে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের পরিমাণ বৃদ্ধির বৈপ্লবিক পরিবর্তনকে শ্বেত বিপ্লব বলে। 

❋ নীল বিপ্লব কি এবং নীল বিপ্লবের জনক কাকে বলা হয়?
ロ সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে (1985–1990) ভারতে উন্নত মৎস্য প্রজাতি চাষ, হিমাগার স্থাপন,
পরিবহণের উন্নতি ও আর্থিক আনুকূল্যে অভ্যন্তরীণ ও বহির্দেশীয় মৎস্যচাষে যে ব্যাপক উন্নতি হয়,
ভারতের কৃষিবিজ্ঞানের ইতিহাসে তাকে নীলবিপ্লব বলা হয়
ロ ভারতের নীল বিপ্লবের জনক ডঃ অরূপ কৃষ্ণনন কে বলা হয়

❋ গ্রিন হাউস কাকে বলে?
ロ ইংরেজি Greenhouse কথাটির অর্থ হল শীতপ্রধান অঞ্চলে চাষাবাদ বা ফুল চাষের জন্য স্বচ্ছ কাচের ঘর । এক্ষেত্রে গ্রিনহাউস কথাটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। শীতের দিনে বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে থাকলেও সবুজ ঘরের তাপমাত্রা থাকে 38°C-40°C। ফলে সবুজ উদ্ভিদ খুব সহজেই স্বাভাবিক জৈবিক ক্রিয়া সম্পাদন করতে পারে একেই সবুজ ঘর বা গ্রিনহাউস বলে

❋ গ্রিনহাউস প্রভাব কাকে বলে?
ロ কাচের ঘরের সাহায্যে সৌরশক্তিকে আবদ্ধ রেখে উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে।
ক্ষুদ্র তলঞ্জের সৌর বিকিরণ

❋ বায়ুমণ্ডল গ্রিনহাউস প্রভাব কাকে বলে?
ロ শিল্পবিপ্লবের পরবর্তীকালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ক্লোরােফ্লোরো কার্বন ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাসের অতিরিক্ত ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য এই গ্যাসগুলি মিলিতভাবে চাঁদোয়ার (Canopy) মতো সষ্টি করে এবং এই স্তর শীতপ্রধান অঞলে গ্রিনহাউসের মতো কাজ করে। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে। 

❋ গ্রিন হাউস গ্যাস কাকে বলে?
ロ যে সব দূষক পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্যে করে তাকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। 

❋ বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে ? বিশ্ব উষ্ণায়ন অনুচ্ছেদ বা প্রতিবেদন রচনা?
ロ মানবজাতির কাছে সবচেয়ে বড়াে বিপদ বিশ্ব উন্নয়ণ। পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন, 1850 থেকে 1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে 0:5°C, 1900 থেকে 2000 খ্রিস্টাব্দে 1°C ও এভাবে চললে 2050 খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর উন্নতা বৃদ্ধি পাবে 3:5°C। উষ্ণতার এই ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিকেই বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে।
ロ একুশ শতকের মানব সভ্যতা জ্ঞানে ও মেধায় মানুষের ব্ৰহ্মান্ড জয়ের উপাখ্যান। বিজ্ঞানের অজস্র আবিষ্কার একদিকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে সভ্যতাকে, অন্যদিকে মানুষের জীবনেও এনেছে স্বাচ্ছন্দ্য। কিন্তু এরই মধ্যে বিজ্ঞানের অনিয়ন্ত্রিত প্রয়ােগ, পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন মানুষের সভ্যতায় অশনিসংকেতের সৃষ্টি করেছে। আতঙ্কের যেসব আবহ বিপন্ন করে তুলেছে আধুনিক পৃথিবীকে তার অন্যতম হল বিশ্ব-উন্নয়ন।

বিশ্ব-উন্নয়ন বলতে সারা পৃথিবীর উষ্ণতার  ক্রমশ বাড়তে থাকা অবস্থাকে বােঝানাে হয়। এর পরিচিত ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Global Warming। ১৮৯৬ সালে নােবেলজয়ী সুইডিশ বিজ্ঞানী আরথেনিয়াস বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিষয়ে আশঙ্কা  প্রকাশ করেন। সেই আশঙ্কা প্রগতির অনিয়ন্ত্রিত প্রবাহে আজ রপান্তরিত হয়েছে আতঙ্কে।
বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন গ্রিনহাউস গ্যাসগুলিকে। গ্রিনহাউস গ্যাস, যেমনঃ—কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ক্লোরােরো কার্বন, জলীয় বাষ্ণ ইত্যাদির তাপ ধরে রাখার ক্ষমতা আছে। বলা বাহুল্য, এর মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা কার্বন ডাইঅক্সাইড-এর। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, শিল্পবিপ্লবের সাতশাে বছর আগে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ ছিল ২৪০ পিপিএম। ২০০৫ সালে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৭৯ পিপিএম। বিজ্ঞানীদের আশঙ্ককা যে, ২০৫০ সাল নাগাদ এই পরিমাণ বেড়ে হতে পারে ৪৫০ পিপিএম। যেখানে পৃথিবীতে গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভূমিকা প্রায় ৫০ শতাংশ, সেখানে তার এই বৃদ্ধি যথেষ্টই আশঙ্কার কারণ।

এই গ্রিনহাউস এফেক্ট পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব মানুষেরই। যথেষ্ট ভাবে জীবাশ্ম এবং কাঠকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা, অরণ্য ধ্বংস করা ইত্যাদি বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সিমেন্ট, স্প্রে, ফোম ইত্যাদি কারখানাও কার্বন ডাইঅক্সাইডের জোগান দিচ্ছে পরিবেশে। একইভাবে এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটর শিল্প, গ্যাস-তেল-কয়লার উৎপাদন ও পরিবহন পরিবেশে মিথেনের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে। ধারাবাহিকভাবে রাসায়নিক সারের ব্যবহার এবং বন ধ্বংস করার ফলে পরিবেশে নাইট্রাস অক্সাইড ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এইভাবে মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কাজ কর্ম পৃথিবীর উষ্ণতার বৃদ্ধিকে নিশ্চিত করে তাকে পরিচালিত করছে এক সমূহ সর্বনাশের দিকে।

গ্রিনহাউস প্রভাবের ফল সুদূরপ্রসারী ১৮৫০ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন, ২০৩০ খ্রিস্টাব্দে এই বৃদ্ধির হার হবে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ২০৪০ সালের মধ্যে মেরুপ্রদেশের বরফ সম্পূর্ণ গলে যেতে পারে। এর ফলে সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাবে এবং উপকূলবর্তী এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল চিরকালের মতাে সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়বে পৃথিবীর প্রায় ৫০ কোটি লােক। তৈরি হবে খাদ্য ও পানীয় জলের সংকট। এর পাশাপাশি জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হবে। হয়তাে কোথাও গ্রীষ্মকাল দীর্ঘ হবে, আবার কোথাও শীত। অতিবৃষ্টি ও খরা-প্রধান অঞ্চল নতুনভাবে সৃষ্টি হবে। বাড়বে সুনামি ইত্যাদি বিভিন্নরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই উন্নয়নের প্রভাবে হৃদযন্ত্রের অসুখ, রক্তচাপ এসব যেমন বাড়বে তেমনি ক্রান্তীয় অঞ্চলে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ভাইরাল এনকেফেলাইটিস ইত্যাদি অসুখের প্রকোপ বাড়বে।
অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী চিরতরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। দাবানল বৃদ্ধি পাবে। জলস্তর বাড়ায় ম্যানগ্রোভ শ্রেণির অরণ্য ধ্বংস হওয়া নিশ্চিত। এভাবে বিশ্ব-উয়ায়ন নানাভাবে পালটে দেবে পরিচিত পৃথিবীকে।

গ্রিনহাউস গ্যাসসমূহের নির্গমন রােধ করার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিত্ত ডি জেনিরােতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বসুন্ধরা শীর্ষ সম্মেলন। ২০০২ সালে জোহানেসবার্গেও একই উদ্দেশ্যে সম্মেলন হয়। কিন্তু উন্নত পশ্চিমী দেশগুলির অসহযােগিতায় কোনােক্ষেত্রেই কোনাে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছােনাে যায়নি। ২০০৫ সালে জাপানের কিয়েটো শহরে পৃথিবীর ১৫৬টি দেশ গ্রিনহাউস গ্যাসের উদগিরণ কমানাের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। কিন্তু এখানেও আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া চুক্তিতে সই করতে অস্বীকার করে। ২০০৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনেও একই ঘটনা ঘটে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলির একাংশের ধারাবাহিক অসহযােগিতা সত্ত্বেও আশার কথা যে অধিকাংশ
রাষ্ট্র এবং বিশ্বজনমত এখন বিশ্ব-উন্নয়নের বিষয়ে সচেতন হচ্ছে।

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন