✰ মিশরকে “নীলনদের দান” বলা হয় কেন?
➺ এখানে প্রধানত ৮টি কারণের জন্য মিশরকে “নীলনদের দান” বলা হয় সেগুলি নীচে আলোচনা করা হলো ......
🗆 নীলনদের জলে উর্বর ও শস্যশ্যামলা মিশর :- প্রায় সমস্ত মিশর নীলনদের পলি দিয়ে গঠিত এবং নীলনদের জলে উর্বর ও সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা হয়েছে।
🗆 সাহারা মরুভূমির কবল থেকে মিশরকে রক্ষায় নীলনদের অবদান :- নীলনদ না থাকলে ঊষর মরুভূমিতে অবস্থিত মিশর মানুষের বাস করার অনুপযুক্ত হত। বিশেষ করে খার্তুম শহর থেকে মােহনা পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানকে সাহারা মরুভূমি ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলত এবং নীলনদের উপস্থিতির জন্য তা সম্ভব হয়নি।
🗆 বৃষ্টিহীন মিশরের সেচ ও কৃষিতে নীলনদের অবদান : - মিশরে তেমন বৃষ্টিপাত শীতকালে হয় না। বর্তমানে নীলনদের ওপর আসােয়ান, অ্যাসিয়ুট প্রভৃতি বাঁধ দিয়ে জলাধার তৈরি করে তার সাহায্যে সারা বছর ধরে মিশরে জলসেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। ফলে শ্রেষ্ঠ মানের দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলা, গম, যব, ধান, আখ প্রভৃতি মূল্যবান কৃষি দ্রব্যের চাষ করা সম্ভব হয়েছে। সেইজন্য বলা হয়, মিশর একটি মরুপ্রায় কিন্তু কৃষিপ্রধান দেশ।
🗆 রেল ও সড়ক পরিবহনে নীলনদের অবদান :- নীলনদের দুই তীরের সমতলভূমির ওপর রেল লাইন ও প্রশস্ত সড়ক পথ নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে।
🗆 মিশরের নৌ-পরিবহনে নীলনদের অবদান :- নীলনদ দিয়ে সারা বছর জাহাজ ও নৌকা চলাচল করতে পারে, তাই এই অঞ্চলের জল পরিবহন ও যােগাযােগ ব্যবস্থা উন্নত।
🗆 পশুপালনে নীলনদের অবদান :- নীল অববাহিকার তৃণভূমিতে গরু, ভেড়া, ছাগল প্রভৃতি পশুপালন করা হয় এবং বহু লােকের জীবিকানির্বাহ সম্ভব হয়।
🗆 বৃষ্টিহীন মিশরের সেচ ও কৃষিতে নীলনদের অবদান : - মিশরে তেমন বৃষ্টিপাত শীতকালে হয় না। বর্তমানে নীলনদের ওপর আসােয়ান, অ্যাসিয়ুট প্রভৃতি বাঁধ দিয়ে জলাধার তৈরি করে তার সাহায্যে সারা বছর ধরে মিশরে জলসেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। ফলে শ্রেষ্ঠ মানের দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলা, গম, যব, ধান, আখ প্রভৃতি মূল্যবান কৃষি দ্রব্যের চাষ করা সম্ভব হয়েছে। সেইজন্য বলা হয়, মিশর একটি মরুপ্রায় কিন্তু কৃষিপ্রধান দেশ।
🗆 রেল ও সড়ক পরিবহনে নীলনদের অবদান :- নীলনদের দুই তীরের সমতলভূমির ওপর রেল লাইন ও প্রশস্ত সড়ক পথ নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে।
🗆 মিশরের নৌ-পরিবহনে নীলনদের অবদান :- নীলনদ দিয়ে সারা বছর জাহাজ ও নৌকা চলাচল করতে পারে, তাই এই অঞ্চলের জল পরিবহন ও যােগাযােগ ব্যবস্থা উন্নত।
🗆 পশুপালনে নীলনদের অবদান :- নীল অববাহিকার তৃণভূমিতে গরু, ভেড়া, ছাগল প্রভৃতি পশুপালন করা হয় এবং বহু লােকের জীবিকানির্বাহ সম্ভব হয়।
🗆 মিশরের শিল্পোন্নতিতে নীলনদের অবদান :- উন্নত কৃষি, সুলভ শ্রমিক ও জলবিদ্যুৎ এবং জলপথে খনিজদ্রব্য, কাঁচামাল ও পরিবহনের সুবিধা থাকায় নীলনদের অবাহিকায় নানান শিল্প গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে বস্ত্রবয়ন ও কৃষিজাত শিল্প উল্লেখযােগ্য, বৃষ্টিবিরল উষর সাহারা মরুভূমির মধ্যে বিভিন্ন দিকে মিশরের এই সমৃদ্ধি নীলনদের জন্যেই সম্ভব হয়েছে, এই জন্যই মিশরকে নীলনদের দান বলা হয়।
✰ নীল নদ অববাহিকার কৃষিকার্যে অতীতে বন্যা ও বর্তমানে নদী পরিকল্পনার গুরুত্ব ?
[1 ] নীলনদে বন্যার কারণ : ব্লু নীল ও হােয়াইট নীলের মিলিত প্রবাহে নীলনদের সৃষ্টি হয়েছে। হােয়াইট নীল বুরুন্ডির উচ্চ ভূমি থেকে এবং ব্লু নীল ইথিওপিয়া উচ্চভূমির টানা হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। নীলনদের এইসব উৎপত্তিস্থান নিরক্ষীয় জলবায়ুর অন্তর্গত হওয়ায় নিরক্ষীয় জলবায়ুর প্রভাবে সারা বছর ধরে নীলনদের উৎপত্তি স্থানে প্রবল পরিচলন বৃষ্টিপাত হতে থাকে, যার পরিমাণ গ্রীষ্মকালে আরও বেড়ে যায়। উৎপত্তির স্থানে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতিবছর অন্যান্য, উপনদীসহ হােয়াইট নীল ও ব্লু নীল নদে প্রবল জলােচ্ছ্বাস 'ঘটে, এর ফলে প্রতি গ্রীষ্মে মিশরের অন্তত নীলনদের নিম্ন অববাহিকা ও বদ্বীপ অঞ্চলে প্রবল বন্যা হয়।
[2] মিশল্পের জলসেচ ও কৃষিকাজে বন্যার গুরুত্ব : বৃষ্টিবিরল মিশরের জলসেচ ও কৃষিকাজে নীলনদের বন্যার অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। প্রতি গ্রীষ্মকালে কালের প্রবল বন্যার সময় নীলনদের গতিপথের দু'পাশের ভূমি প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় নীলনদের অববাহিকায় প্রতি বছর নতুন পলিমাটি সঞ্চিত হয় এবং জমি হয়ে ওঠে অত্যন্ত উর্বর ও শস্য শ্যামলা। নীলনদের বন্যার কল্যাণে বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই অঞ্চলে মিশরের প্রায় সব লােক (৯৬%) বাস করে।
[3] নীল অববাহিকার জলসেচ :- বৃষ্টিবিমুখ মিশরের জলসেচ ও কৃষিকাজে নীলনদেরবন্যার অপরিসীম গুরুত্ব থাকলেও , এই বন্যার একটা মূল অসুবিধা ছিল যে, এই বন্যা শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালেই হত। গ্রীষ্মকাল ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ে শুধুমাত্র জলের অভাবে নিম্ন নীল অববাহিকা ও ব-দ্বীপ অঞ্চলের অতি উর্বরভূমিতে কৃষিকাজ করা যেত না। বর্তমানে মিশরের অ্যাসিয়ুট, আসােয়ান প্রভৃতি স্থানে নীলনদের ওপর বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ করে তার সাহায্যে সারাবছর ধরে মিশরে জলসেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে।
ফানেলের মত দেখতে এই অববাহিকার পূর্বদিক চওড়া কিন্তু পশ্চিমে কেনেট উপত্যকার দিকে ক্রমশ সরু হয়ে গিয়েছে। এই অববাহিকার উত্তর-পশ্চিম দিকে চিলটার্ন, পশ্চিমে হােয়াইট হর্স এবং দক্ষিণে নর্থ ডাউনস্ নামে তিনটি খড়িমাটির পাহাড় (উচ্চভূমি) রয়েছে।অতীতে ভূ-আন্দোলনের ফলে এইউচ্চভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চল বসে গিয়ে মালসা বা সরার মত দেখতে এক নিম্নাঞ্চল সৃষ্টি করে; পরবর্তীকালে পলি, কাদা, নুড়ি, বালি, কঁকর ইত্যাদি জমা হয়ে এই নিম্নভূমি অঞ্চলটি ধীরে ধীরে উচু হয়ে লণ্ডন অববাহিকার সৃষ্টি করেছে। লণ্ডন অববাহিকার মাটির সবচেয়ে নীচের স্তরে রয়েছে খড়ি মাটির শক্ত স্তর,এর ওপরে রয়েছে উল-উইচ বালির স্তর এবং সবচেয়ে ওপরের স্তরে রয়েছে বালি, নুড়ি এবং লণ্ডন ক্লে নামে এক বিশেষ পলিমাটির স্তর, যা প্রকৃতিতে বেশ উর্বর।
✰ লণ্ডন শহরের ভৌগােলিক গুরুত্ব নিরূপণ কর?
✵ পরিবহন : পরিবহন কেন্দ্র হিসাবে এই শহরের গুরুত্ব অপরিসীম। লণ্ডন থেকে চতুর্দিকে দেশের বিভিন্ন অংশে জালের মতন রাজপথ ও রেলপথ ছড়িয়ে পড়েছে। এই রাস্তা ও রেলপথগুলাে চিলটার্ণ ও নর্থ ডাউনস্ পর্বতগুলাের গিরিপথ দিয়ে বাইরের দিকে বিস্তৃত হয়েছে। হিথরাে লণ্ডন মহানগরের প্রধান বিমান বন্দর। পৃথিবীর প্রায় সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সঙ্গে বিমানপথে লণ্ডনের যােগাযােগ রয়েছে।
✵ বন্দর : লণ্ডন বন্দরটি যদিও একটি নদী বন্দর, তথাপি রপ্তানীযােগ্য মাল লণ্ডন শহরের গুদামে জড় করে তারপর জাহাজ যােগে বিদেশে রপ্তানী করা হয়, কারণ স্থলপথ ও জলপথের মিলন স্থান টেমস্ খাঁড়ির মুখে লণ্ডন শহরটি অবস্থিত। লণ্ডন পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ‘পুনঃ রপ্তানী বন্দর হিসাবে খ্যাত। দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য এই বন্দরের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
✵ শিল্প : লণ্ডনে যে সমস্ত শিল্পদ্রব্য তৈরী হয় তার মধ্যে সাবান, আসবাবপত্র, কাচ, দেশলাই, রাসায়নিক দ্রব্য প্রভৃতি প্রধান। বর্তমানে হালকা ধরনের শিল্প সামগ্রী উৎপাদনকারী সংস্থাগুলাে লণ্ডনের ভিড় এড়াতে শহরতলীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
✵ বাণিজ্য কেন্দ্র : লণ্ডন পশম, চা, রবার, প্রভৃতি পণ্যের পৃথিবীর একটি প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। এ ছাড়া লণ্ডন পৃথিবীর এক অন্যতম প্রধান ব্যাঙ্ক ব্যবসা কেন্দ্র।
✰ ইউক্রেনের কৃষির প্রধান বিষয়গুলাে উল্লেখ কর?
অথবা, ইউক্রেনের কৃষি সম্পদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও?
ロ বর্তমান ইউরােপের অন্যতম সেরা কৃষিসমৃদ্ধ দেশ হল ইউক্রেন।উর্বর কৃষ্ণমৃত্তিকা, নাতিশীতােষ্ণ মৃদু জলবায়ু, বিস্তীর্ণ সমতলভূমি, আধুনিক জলসেচ, ফসল বপনের উপযােগী দীর্ঘ সময়, উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক সারের ব্যবহারিক প্রয়ােগ এবং সমবায় প্রথায় চাষ- আবাদের ফলে ইউক্রেন ইউরােপের অন্যতম প্রধান কৃষি অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। কৃষিকাজে ইউক্রেন অঞ্চল খুবই উন্নত। কৃষিকাজের প্রয়ােজনে এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ স্টেপস্ তৃণভূমির অধিকাংশ স্থান পরিষ্কার করে উন্নত প্রথায় চাষবাস করা হয়। এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন রকমের ফসল উৎপন্ন হয়। ইউক্রেন অঞ্চলের উৎপন্ন ফসলের মধ্যে গম সর্বপ্রধান। বীট ইউক্রেনের দ্বিতীয় প্রধান ফসল। এই বীট প্রধানত চিনি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়।
✰ ইউক্রেনের কৃষির প্রধান বিষয়গুলাে উল্লেখ কর?
অথবা, ইউক্রেনের কৃষি সম্পদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও?
ロ বর্তমান ইউরােপের অন্যতম সেরা কৃষিসমৃদ্ধ দেশ হল ইউক্রেন।উর্বর কৃষ্ণমৃত্তিকা, নাতিশীতােষ্ণ মৃদু জলবায়ু, বিস্তীর্ণ সমতলভূমি, আধুনিক জলসেচ, ফসল বপনের উপযােগী দীর্ঘ সময়, উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক সারের ব্যবহারিক প্রয়ােগ এবং সমবায় প্রথায় চাষ- আবাদের ফলে ইউক্রেন ইউরােপের অন্যতম প্রধান কৃষি অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। কৃষিকাজে ইউক্রেন অঞ্চল খুবই উন্নত। কৃষিকাজের প্রয়ােজনে এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ স্টেপস্ তৃণভূমির অধিকাংশ স্থান পরিষ্কার করে উন্নত প্রথায় চাষবাস করা হয়। এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন রকমের ফসল উৎপন্ন হয়। ইউক্রেন অঞ্চলের উৎপন্ন ফসলের মধ্যে গম সর্বপ্রধান। বীট ইউক্রেনের দ্বিতীয় প্রধান ফসল। এই বীট প্রধানত চিনি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়।
সূর্যমুখী হল ইউক্রেন অঞ্চলের তৃতীয় প্রধান ফসল। বিশ্বের প্রায় ৩৮% সূর্যমুখী ইউক্রেন অঞ্চলে উৎপন্ন হয়। সূর্যমুখীর বীজ থেকে ভােজ্য তেল তৈরী করা হয়। সমগ্র রাশিয়ান কমনওয়েলথের ২০% গম, ৭৫% বীট, এবং ৪০% সূর্যমুখী ইউক্রেনে উৎপন্ন হয়।
🟆 কৃষিতে ইউক্রেন অঞ্চলের ব্যাপক উন্নতির কারণ :
(১) উর্বর চানোজেম কৃষ্ণমৃত্তিকা,
(২) নাতিশীতােষ্ণ মৃদু জলবায়ু;
(২) নাতিশীতােষ্ণ মৃদু জলবায়ু;
(৩) ফসল বপনের উপযােগী দীর্ঘ সময়;
(৪) পরিমিত বৃষ্টিপাত;
(৫) যন্ত্র নির্ভর আধুনিক কৃষি পদ্ধতি প্রয়ােগের উপযােগী বিস্তীর্ণ সমতলভূমি ;
(৫) যন্ত্র নির্ভর আধুনিক কৃষি পদ্ধতি প্রয়ােগের উপযােগী বিস্তীর্ণ সমতলভূমি ;
(৬) নীপার,ডন, নীস্টার প্রভৃতি নদীর জলের সাহায্যে উন্নত বিজ্ঞানভিত্তিক জলসেচ,
(৭) আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ;
(৮) উন্নত রাসায়নিক সারের প্রয়ােগ এবং
(৯) সমবায় পদ্ধতিতে চাষ আবাদের ফলে ইউক্রেন অঞ্চল পৃথিবীর একটি সর্বশ্রেষ্ঠ কৃষি বলয়ে পরিণত হয়েছে।
গম ইউক্রেন অঞ্চলের প্রধান ফসল। ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর গম উৎপন্ন হয় বলে, ইউক্রেনকে "রুটির ঝুড়ি' বলা হয়। এছাড়া ইউক্রেন অঞ্চলের অন্যান্য প্রধান ফসল হল ভুট্টা, যব, রাই, বীট, সূর্যমুখী প্রভৃতি।
✰ ইউক্রেনের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের বিবরণ দাও?
ロ ইউক্রেনের খনিজ ও শিল্পাঞ্চলটিকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা যায়,....
(১) ডনবাস শিল্পাঞ্চল : ডােনেৎস নদীর দক্ষিণে প্রায় ৩২০ কিলােমিটার দীর্ঘ বিশাল ডােনেৎস্ কয়লাখনি অঞ্চলবিস্তৃত। এখানকার ৪০০টি খাদ থেকে বছরে প্রায় ২০ কোটি টন উৎকৃষ্ট জাতের কয়লা উত্তোলন করা হয়। এর অংশ ইউক্রেন শিল্পাঞ্চলের নিজস্ব প্রয়ােজনে লাগে এবং বাকি অংশ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হয়। মাকাইভা এবং স্ট্যালিনাে শহর দুটিতে ক্ৰিভয়রগ অঞ্চলের লৌহ আকরিক, নিকোপল
অঞ্চলের ম্যাঙ্গানীজ এবং ডােনেৎস্ কয়লাখনি অঞ্চলের কোক কয়লার সাহায্যে ঢালাই লৌহ ও ইস্পাত প্রস্তুত করা হয়। কয়লাখনি অঞ্চলের পূর্বদিকে ভলগাগার্ডে ভলগা নদীর তীরে পৃথিবী বিখ্যাত ট্রাক্টর উৎপাদনের কারখানা গড়ে উঠেছে।
(২) নীপার শিল্পাঞ্চল : নীপার নদীর তীরবর্তী নীপ্রােপেট্রোভস্ক, জাপারােঝে এবং নীপ্রােজেস এই তিনটি শিল্পাঞ্চল একত্রে নীপার সংযুক্ত অঞ্চল’নামে পরিচিত। এই শিল্পাঞ্চলটি ডােনেৎস কয়লা অঞ্চল ও ক্ৰিভয়রগ লৌহ-আকরিক অঞ্চলের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করছে। নীপার নদীর ওপর নীপ্রােসট্রাহে বাঁধ দিয়ে ১.৩ কিলােমিটার দীর্ঘ ও ৬০ মিটার উঁচু জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। কয়লা, লৌহ ও জলবিদ্যুতের সুবিধা থাকায় এখানে কোক কয়লা, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। নিকটবর্তী জাপারােঝে শহরে কৃষি- যন্ত্রপাতি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম তৈরীর কারখানা আছে। এছাড়া, লুগানস্কে যানবাহন ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং জাগনভে ট্রাক্টর নির্মাণ করা হয়।
(৩) ক্ৰিভয়রগ শিল্পাঞ্চল: এই লৌহ-আকরিক সমদ্ধ অঞ্চলটি ক্ৰিভয়রগ শহর থেকে দক্ষিণ- পশ্চিমে বাগ নদীর মােহনায় অবস্থিত নিকোপল শহর পর্যন্ত বিত। (১) স্থানীয় লৌহ আকরিক, (২) নিকোপলের ম্যাঙ্গানীজ ও (৩) ডােনেৎস অঞ্চলের কোক-কয়লার সাহায্যে এখানে লৌহ ও ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেছে। বাগ নদীর মােহনার পূর্বদিকে অবস্থিত ওডেসা বন্দর মারফৎ গম রপ্তানী করা হয়। এখানে জাহাজ, জামাকাপড় ও কৃষি -যন্ত্রপাতি ও তৈরী হয়।
(৪) আজভ সাগরের তীরবর্তী শিল্পাঞ্চল : রােস্তভ, মারিউপােল, টাঙ্গনরােগ প্রভৃতি এই অঞ্চলের উল্লেখযােগ্য শিল্প-শহর। (১) কাট উপদ্বীপের লৌহ আকরিক, (২) স্থানীয় কয়লা ও (৩) জলবিদ্যুতের সাহায্যে লৌহ-ইস্পাত, ট্রাক্টর প্রভৃতির কারখানাগুলাে গড়ে উঠেছে।
(৫) অন্যান্য শিল্প : এই শিল্পাঞ্চলগুলাে ছাড়াও ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলে নানা ধরনের শিল্প দেখা যায়। এর মধ্যে ময়দাকল, সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল উৎপাদনের কল, চিনি শােধনকারী কল এবং প্রত্যক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। কিয়েভে শতকরা ৫০% চিনি স্থানীয় বীট থেকে উৎপন্ন হয়।
✰ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হ্রদ অঞ্চল শিল্পে উন্নত কেন?
অথবা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হ্রদ অঞ্চলে লৌহ ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলাে কি?
অথবা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হ্রদ অঞ্চলে লৌহ ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলাে কি?
ロ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব দিকে কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা বরাবর সুপিরিয়র, মিচিগান, ব্রণ, ইরী এবং অন্টারিও—এই পাঁচটি হ্রদের দক্ষিণ তীরবর্তী বিরাট এলাকা নিয়ে গঠিত হ্রদ অঞ্চলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা সারা পৃথিবীর একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। লৌহ ইস্পাত হল হ্রদ অঞ্চলের সর্বপ্রধান শিল্প। হ্রদ অঞ্চলের অন্যান্য শিল্পের মধ্যে মােটর গাড়ী, এরোপ্লেনও রেল ইঞ্জিন নির্মাণ শিল্প, পেট্রোরসায়নও রাসায়নিকশিল্প; টায়ার, সিমেন্ট, কাগজ ও বস্ত্র শিল্প এবং ময়দা ও খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প (যেমন: মাংস প্যাকিং) উল্লেখযােগ্য।
🟆 হ্রদ অঞ্চলের শিল্পে উন্নত হওয়ার কারণগুলাে হল :
✵ খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য : সুপিরিয়র হ্রদের তীরবর্তী মেসবি রেঞ্জ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ লৌহখনি, ভারমিলিয়ন রেঞ্জ, গােজিবিক রেঞ্জ, মার্কেট রেঞ্জ এবং মিনিমিনি রেঞ্জ-কে নিয়ে গঠিত খনি অঞ্চলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা পৃথিবীর একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ লৌহখনি অঞ্চল। এইসৰ লৌহ খনিগুলির উৎকৃষ্ট লােহা এবং নিকটবর্তী পিটসবার্গ, পশ্চিম ভার্জিনিয়া এবং অ্যাপােলেসিয়ান পার্বত্য অঞ্চলের উৎকৃষ্ট কয়লার সাহায্যে হ্রদ অঞ্চলে প্রধানতঃ লৌহ-ইস্পাত শিল্প, মােটরগাড়ি শিল্প, ভারী যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্প গড়ে উঠেছে। এছাড়া হ্রদ অঞ্চলে তামা এবং খনিজ তেল-ও এই অঞ্চলের ধাতু ও রাসায়নিক শিল্পোন্নতির সহায়ক হয়েছে।
✵ রাসায়নিক কাচামালের প্রাচুর্য : (১)ডকৃষ্ট গন্ধক, পটাশ, ফসফেট, বিভিন্ন খনিজ লবণ প্রভৃতি। রাসায়নিক কাচামালের প্রাচুর্য, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, কয়লা, জলবিদ্যুৎ প্রভৃতি শক্তি সম্পদের সহজলভ্যতা, (৩) শিল্পোন্নত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা এবং (৪) পৃথিবীব্যাপী বিরাট বাজারের জন্য হ্রদ অঞ্চলের ডুলুথ, শিকাগাে, ডেট্রয়েটে সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, সােডা অ্যাশ, কস্টিক সােডা প্রভৃতি জারি রাসায়নিক শিল্পের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
✵ কৃষিজকাচামাল ও বনজ সম্পদের প্রাচুর্য ; উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে কৃষিকাজের প্রসারের ফলে
এখানে কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। এছাড়া এই অঞ্চলের নিকটবর্তী বনভূমি থেকে কাগজ ও রেয়ন শিল্পের প্রয়ােজনীয় বনজ কাঁচামাল সংগ্রহের সুবিধা আছে।
✵ জলবিদ্যুৎ : নায়াগ্রা জলপ্রপাত থেকে উৎপন্ন বিপুল জলবিদ্যুৎহ্রদ অঞ্চলের ধাতু ও রাসায়নিক শিল্পের প্রয়ােজনীয় বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়েছে। এছাড়া হ্রদ অঞ্চলের অন্যান্য জলসম্পদের প্রাচুর্য সেন্ট লরেন্স নদী এবং পাঁচটি হ্রদ এই অঞ্চলের শিল্পের জন্য প্রয়ােজনীয় জলের বিপুল চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।
✵ উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা : গােটা হ্রদ অঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থায় সেন্ট লরেন্স নদী ও খালবাহিত
জলপথগুলাে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সুপিরিয়র, মিচিগান,হুরণ, ইরি, অন্টারিও এই পাঁচটি হ্রদ সেন্ট লরেন্স নদীর দ্বারা পরস্পর যুক্ত হলেও এরা একই সমতলে অবস্থিত না হওয়ার জন্য নায়াগ্রা সহ আরও কয়েকটি জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। এই সব জলপ্রপাতকে এড়িয়ে চলার জন্য ওয়েল্যাণ্ড, সিওয়ে ক্যানেল, সুক্যানেল প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ খাল কাটা হয়েছে। ফলে সমুদ্রগামী জাহাজগুলাে হ্রদ অঞ্চল থেকে অনায়াসেই সেন্ট লরেন্স নদী এবং বিভিন্ন খাল দিয়ে অনায়াসেই আটলান্টিক মহাসাগরে যেতে পারে।
লােহা ও কয়লা পরিবহনেও হ্রদ অঞ্চলের জলপথ অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুপিরিয়র হ্রদের পশ্চিমদিকে প্রাপ্ত আকরিক লােহা প্রধানত ডুলুথবন্দরের মাধ্যমে পিটসবার্গ কয়লা খনি অঞ্চলে পাঠানাে হয়। আবার ফিরতিপথে জাহাজগুলাে পিটসবার্গ, পশ্চিম ভার্জিনিয়া এবং মধ্যাঞ্চলের কয়লা, হ্রদ অঞ্চলের লৌহ-ইস্পাত কারখানায় নিয়ে আসে। এই দোলক পরিবহনের জন্য পরিবহন ব্যয় অনেক কমে যায়। জলপথ ছাড়াও হ্রদ অঞ্চলের চারদিকে বহু সড়কপথও রেলপথজালের মত ছড়ানাে আছে।
এছাড়া হ্রদ অঞ্চলের বিমানপথও অতি উন্নত। হ্রদ অঞ্চলের শিকাগাে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বিমানবন্দর।
✵ বন্দরের নৈকট্য : হ্রদ অঞ্চলের শিকাগাে, ডুলুথ প্রভৃতি বন্দরগুলাে কাচামাল আমদানী এবং তৈরী মাল রপ্তানীতে সাহায্য করে এই অঞ্চলের শিল্পোন্নতির বিশেষ সহায়ক হয়েছে।
✵ উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা : বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর অন্যতম উন্নত দেশ। এই দেশের বিজ্ঞানী
ও প্রযুক্তিবিদদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা হ্রদ অঞ্চলের শিল্পোন্নতির বিশেষ সহায়ক হয়েছে।
✵ ব্যাপক মূলধন বিনিয়ােগ : হ্রদ অঞ্চলের করপােরেট হাউস এবং ধনী ব্যবসায়ী সমিতির প্রচুর মূলধন বিনিয়ােগ এই অঞ্চলের শিল্প বিকাশে বিশেষ সহায়তা করেছে।
✵ ঘন বসতি : হ্রদ অঞ্চলটি ঘন বসতিপূর্ণ হওয়ায় এখানে বিভিন্ন শিল্পের জন্য প্রয়ােজনীয় শ্রমিক পেতে কোন অসুবিধা হয় না। এছাড়া এই ঘনবসতি এই অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্যের স্থানীয় চাহিদা সৃষ্টি করে।
✵ শ্রমিকের প্রাচুর্য : জনবহুল হ্রদ অঞ্চলের শ্রমিক, প্রাচুর্য বিশেষত পরিশ্রমী নিগ্রো শ্রমিক এই অঞ্চলের শিল্পোন্নতিতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।
✵ চাহিদা : দেশে ও বিদেশে হ্রদ অঞ্চলের উৎপন্ন শিল্পদ্রব্যের প্রচুর চাহিদা থাকায় এখানকার শিল্পসামগ্রীর বাজারের অভাব হয় না।
বৃহত্তম লৌহ-ইস্পাত কারখানা); শিকাগাে, গ্যারি, হ্যামন্ড,ইন্ডিয়ানা হারবার, টলেডাে, ক্লীভল্যাণ্ড,
ডেট্রয়েট, বাফেলাে, ডুলুথ, লােরেন প্রভৃতি, ] ইঞ্জিনিয়ারিং ও মােটরগাড়ী নির্মাণ শিল্প [ ডেট্রয়েট
(বিশ্বের বৃহত্তম মােটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র), টলেড়াে, শিকাগাে, ক্লিভল্যাণ্ড, ফ্লিন্ট, পন্টিয়াক,
লানসিং, ] রাসায়নিক শিল্প (শিকাগাে, ডুলুথ, ডেট্রয়েট), জাহাজ নির্মাণ শিল্প (শিকাগাে, ডুলুথ,
ডেট্রয়েট), তৈলশােধনাগার (শিকাগাে, ডুলুথ প্রভৃতি), বস্ত্রশিল্প (ক্লিভল্যাণ্ড), ডেয়ারী শিল্প এবং
মাংস সংরক্ষণ ও রপ্তানী শিল্প [ শিকাগাে (পৃথিবীর বৃহত্তম কসাইখানা ও মাংস রপ্তানী কেন্দ্র),
সেন্টলুই, সেন্টপলস্, ] কৃত্রিম রবার ও টায়ার শিল্প (এক্রন ), ময়দা শিল্প (বাফেলাে : বিশ্বশ্রেষ্ঠ
ময়দা শিল্প কেন্দ্র) এবং অন্যান্য শিল্প গড়ে উঠেছে।