গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রোইকা (Mikhail Gorbachev)


১৯৯০-এর দশক ছিল বিশ্বের ইতিহাসে অত্যন্ত ঘটনাবহুল দশক। এই পর্বের সবচেয়ে চমকপ্রদ ও আলােড়নকারী ঘটনাটি ছিল সােভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন যার পরিণতিতে বিশ্বরাজনীতিতে স্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল। এই অভাবনীয় কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়েছিল সামগ্রিকভাবে সােভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্রমাবনতি ও দ্রুত অবক্ষয়কে কেন্দ্র করে। এই ভাঙনের প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছিল ৮০-র দশকের মাঝামাঝি সােভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সংস্কারপন্থী কমিউনিস্ট নেতা মিখাইল গরবাচভের কার্যভার গ্রহণের সূত্র ধরে। গরবাচভের ক্ষমতালাভ, সােভিয়েত রাশিয়া সহ পূর্ব ও মধ্য ইউরােপে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান আলােচনা প্রসঙ্গে ক্যালভােকোরেসির বক্তব্য বিশেষ -ভাবে প্রধান যােগ্য , তিনি বলেছেন, ১৯৮৫ সালে গরবাচভ মস্কোতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন এবং পরে পরেই স্তালিনীয় সাম্রাজ্য গুটিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেন।


 ১৯৮৯ সালে এটি বিলুপ্ত হয়েছিল। রুমানিয়া ব্যতীত অন্যত্র এটি অবলুপ্ত হয়েছিল কোনােরূপ রূপান্তর 
ছাড়াই। গরবাচভের নয়া নীতি ও উদারবাদী রাজনৈতিক বীক্ষণ এবং আশির দশকের শেষ দিকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে তার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিখর বৈঠক সােভিয়েত কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রব্যবস্থায় যেমন সংকট ঘনীভূত করেছিল তেমনি পূর্ব ও মধ্য ইউরােপের কমিউনিস্ট দেশগুলিতে সমাজতন্ত্রী শাসনব্যবস্থার পতন অনিবার্য করে তুলেছিল। এই দুইয়ের মিথস্ক্রিয়া ছিল সােভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তি।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত হল, ‘The fragile socialist system suddenly collapsed like a house of cards as the Soviet Union allowed the East European regimes to go their own way' অর্থাৎ গরবাচভের শাসনাধীন সােভিয়েত ইউনিয়ন, দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে প্রভাবাধীনে রাখার পর বিগত শতাব্দীর আশির দশকের শেষভাগে পূর্ব ইউরােপীয় দেশগুলি থেকে হাত গুটিয়ে নিলে কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থা সংশ্লিষ্টঅঞ্চলে ও সর্বোপরি, সোভিয়েত রাশিয়ায় তাসের ঘরের মতাে ভেঙে পড়েছিল। এতসব রােমাঞ্চকর ও ইতিহাস সৃষ্টিকারী ঘটনাক্রমের জন্যে প্রত্যক্ষ মতান্তরে পরােক্ষভাবে গরবাচভের দায়িত্ব নেহাত কম ছিল না।

যাই হোক, ১৯৮৫ সালের মার্চে সংস্কারকামী বামপন্থী নেতা মিখাইল গরবাচভ ৫৪ বছর বয়সে সােভিয়েত কমিউনিস্ট দলের সাধারণ সম্পাদক তথা সােভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দল ও সরকারের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে গরবাচভ লক্ষ করেন যে সমগ্র সােভিয়েত ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্গত দুর্বলতা ও ব্যর্থতা পুরােদস্তুর অনাবৃত হয়ে গেছে এবং বিশেষ করে আর্থিকভাবে সােভিয়েত রাশিয়া প্রায় দেউলিয়ার পর্যায়ে নেমে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী মহাশক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে পাল্লা দিতে গিয়ে তাকে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে। নিত্যনতুন সমরাস্ত্র। নির্মাণ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে গিয়ে সােভিয়েত অর্থনীতি একরকম মুখ-থুবড়ে পড়েছে, উৎপাদন প্রায় স্তব্ধ হতে বসেছে এবং সার্বিক বিপর্যয় দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। CPSU-এর নিয়ামক হিসেবে গরবাচভ সােভিয়েত অর্থনীতির রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে আমেরিকার সাথে চলতে থাকা দ্বিতীয় ঠান্ডা যুদ্ধের আশু অবসান চেয়েছিলেন।

এর প্রয়ােজনে দুই শক্তিশালী রাষ্ট্রের সম্পর্কে উষ্ণতা আনতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন এবং এভাবে সােভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। এরিক হব
সবম  গরবাচভের ক্ষমতারােহণ ও তার সংস্কারকামী বৈপ্লবিক আদর্শকে কোনাে দুর্ঘটনা বলতে চাননি। তাঁর মতে, পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল কট্টরপন্থী ব্রেজনেভ-এর স্থলাভিষিক্ত, গরবাচভের পূর্বসূরি পার্টির সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ ইউরি আন্দ্রোপভ (Yuri Andropov ১৯১৪-৮৪)-এর আমলে। সেই পরিবর্তনের প্রবাহে-শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট গতি দান করেছিলেন গরবাচভ। সােভিয়েত ব্যবস্থার অস্তিত্বের তাগিদেই। গরবাচভ প্রথম সুযােগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝােতার নীতি অনুসরণ করেন। প্রাঙ্গত উলেখযােগ্য যে উন্নত মারণাস্ত্রসম্ভার নির্মাণে এবং মহাকাশ গবেষণার মতাে বিষয়ে সােভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখলেও পশ্চিমি পুঁজিবাদী সভ্যতার মাপকাঠিতে সােভিয়েত জনগণের জীবনযাপনের তৈরির কর্মসূচি গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে সােভিয়েত রাষ্ট্রের আর্থিক সঙ্গতি প্রায় বিনষ্ট হতে বসেছিল। ঐ পর্বে ১৯৬৪ সাল থেকে সােভিয়েত রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যয় বার্ষিক ৪-৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছিল। এছাড়া ব্রেজনেভ নীতি (Brezhnev Doctrine) অনুসারে উন্নয়নশীল বিশ্বে বিপ্লব-অভ্যুত্থানকে সমর্থন ও সাহায্য করার ফলে দেশের অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল।

সেই বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা ও দিশাহীন জরাজীর্ণ রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থা গরবাচভ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। সেই শোচনীয় পরিস্থিতি রাশিয়ার ইতিহাসে স্থবিরতার যুগ' ('Era of stagnation) বা জাসতােই (Zastoi') নামে পরিচিত ছিল। এই জটিল প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত পতনের হাত থেকে সােভিয়েত ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে গরবাচভ কালবিলম্ব না করে একগুচ্ছ মৌলিক সংস্কারমূলক কর্মসূচির কথা ঘােষণা করেন যা ‘গরবাচভ নীতি’ (Gorbachev Doctrine') বা গরবাচভের নতুন নীতি’ (New Policy') নামে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সােভিয়েত সমাজতন্ত্রের রূপান্তর ঘটাতে তার এই নীতি দুটি অংশে বিভক্ত ছিল?

‘গ্লাসনস্ত’ (Glasnost') ও “পেরেস্রোইকা’ (Perestroika)। গ্লাসনস্ত’-এর অর্থ ছিল মুক্ত চিন্তা ও মুক্ত পরিবেশ বা স্বচ্ছতা (openness or transparency) এবং অন্যদিকে, পেরেস্রোইকা’বলতে বােঝাত পুনর্গঠন’ (reconstruction), আলাদাভাবে অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন। গরবাচভের বিশ্বাস ছিল যে খােলামেলা গণতান্ত্রিক পরিবেশে মানবিক মূল্যবােধের ওপর ভিত্তিশীল থেকে অত্যাবশ্যক সংস্কারগুলি প্রবর্তিত হলে সােভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার যথার্থতা বজায় থাকবে। এবং ক্রমান্বয়ে সামরিকী করণের প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটবে ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মানবিকীকরণ সম্ভব হবে।

১৯৮৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি গরবাচভ সােভিয়েত কমিউনিস্ট দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় তার উদ্ভাবিত সংস্কার কর্মসূচি, গ্লাসনস্ত’-“পেরেস্রোইকা’র প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। বলাবাহুল্য, সেই নীতি পার্টি কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে বলা যায়, - "This was the first and last effort to reform the command structure of party/state which made the Soviet system work since Stalin's days, and which was at the same time the chief obstacle to transforming a system it had created to which it had adjusted, and in which it had a large vested interest'। গরবাচভ তার সংস্কারের মধ্যদিয়ে রুশ সমাজতন্ত্রকে একটি মানবিক মুখের অধিকারী’ (socialism with a human face') করে তুলতে চেয়েছিলেন যেখানে একদলীয় কমিউনিস্ট পার্টির শাসনের জায়গা গ্রহণ করবে আইনের শাসন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে মুক্ত ও স্বচ্ছ পরিবেশে সময়ােচিত সংস্কার পুনর্গঠনের কাজ সমাপ্ত করবে। তিনি মনে করতেন গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবােধের মাধ্যমে সংস্কার কর্মসূচি যথাযথ রূপায়িত হলে সােভিয়েত রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাসঙ্গিকতা যেমন বজায় থাকবে তেমনি এই ব্যবস্থার অস্তিত্ব সংকটে পড়বে না। তিনি বিশ্বাস করতেন সংস্কার বিমুখ সনাতন সমাজতন্ত্রের দিন ফুরিয়েছে; অপরদিকে পুঁজিবাদ ক্রমে তার অবিনাশী অবয়ব নিয়ে প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে।

 
গরবাচভ তাই জানিয়েছিলেন পশ্চিমি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার লাগামহীন বিরােধিতা কাম্য হতে পারে না,
কেননা বর্তমান সময়ে সমাজতন্ত্র রাষ্ট্র ও সমাজের সংকট নিরসনে একমাত্র সার্বজনীন সমাধান’ (universal solution) হয়ে উঠতে ব্যর্থ প্রতিপন্ন হয়েছে। গরবাচভ গৃহীত এই নতুন নীতি ও সংস্কার কর্মসূচি সােভিয়েত রাশিয়ার সাথে সাথে বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা তথা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে এনেছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর গরবাচভ নীতির প্রভাব ছিল যুগান্তকারী। তার এই নীতি সােভিয়েত পররাষ্ট্র নীতিকে আমূল পরিবর্তিত করেছিল। এই নীতির প্রয়ােগের সুফল হিসেবে সােভিয়েত-মার্কিন সম্পর্কের বিশেষ উন্নতি ঘটে এবং পরিণামে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান হয়। এই পর্বে গরবাচভ-রেগন ও গরবাচভ বুশ একাধিক শীর্ষ বৈঠক সম্পর্কে পূর্ববর্তী অধ্যায়ে বিস্তারিত আলােচনা করা হয়েছে। 

যাইহােক, ঐ সমস্ত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলির পরিণতিতে একদিকে যেমন পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়েছিল, আণবিক অস্ত্রসম্ভার হ্রাস ও রাসায়নিক অস্ত্রের নিরস্ত্রীকরণের মতাে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে-সদর্থক পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছিল অন্যদিকে তেমনি দুই সুপার পাওয়ারের মধ্যে আর্থ- রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের লক্ষণীয় অগ্রগতি ঘটেছিল। এছাড়া, গরবাচভ নীতি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দাঁতাত-এর নীতির নবপর্যায়ে সম্প্রসারণ ঘটিয়েছিল এবং আমেরিকা ছাড়াও ব্রিটেন, ফ্রান্স ও পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে সুসম্পর্কের এক প্রস্থ উন্নতি ঘটিয়েছিল। এসবের পরিণতিস্বরূপ বিশ্বজুড়ে সােভিয়েত নির্দিষ্ট সমাজতান্ত্রিক আধিপত্যবাদের চেনা ছবিটি ক্রমে বিলীন হতে থাকল। গরবাচভ এই পর্যায়ে পূর্ব ও মধ্য ইউরােপের কমিউনিস্ট দেশগুলির ওপর থেকে সােভিয়েত ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ দ্রুত প্রত্যাহার করার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিলেন। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি ব্রেজনেভের আমলে আফগানিস্তানে সােভিয়েত সামরিক আগ্রাসন বিশ্বজুড়ে তীব্র রুশ-বিরোধী প্রতিক্রিয়া সূচিত করেছিল। গরবাচভ নিজ উদ্যোগে বিনা শর্তে আফগানিস্তান থেকে সােভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের কথা ঘােষণা করেন। এসব কিছুই ১৯৯০ সালে স্নায়ুযুদ্ধের চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়েছিল।

বলাবাহুল্য, সােভিয়েত রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও গরবাচভ প্রবর্তিত নতুন নীতি ও সংস্কারসমূহ ব্যাপক পরিবর্তন বয়ে এনেছিল। ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত দলীয় সম্মেলনে গরবাচভ এক ঐতিহাসিক বক্তৃতায় সােভিয়েত রাশিয়ার একদলীয় স্বৈরশাসন ও পার্টিতন্ত্রকে তীব্র ভাষায় সমালােচনা করেন। তিনি বলেছিলেন যে ঐ একতরফা চাপিয়ে দেওয়া ব্যবস্থা এতটাই কেন্দ্রীকৃত যেখানে স্থানীয় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের কোনাে স্থান নেই, কেননা 'It was based almost completely on state ownership and control... তিনি ঐ সম্মেলনেই সােভিয়েত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ভারী শিল্পের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব আরােপকে বিপজ্জনক প্রবণতা বলে উল্লেখ করেন এবং রুশ জনসাধারণের জীবনযাপনের মান উন্নয়নের প্রয়ােজনে নানাবিধ ভােগ্যপণ্যের উৎপাদনে জোর দেওয়ার কথা বলেন।

 গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রোইকার নীতি ও সেগুলির রূপায়ণের এই প্রেক্ষিতটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এই দুটি নীতি একটি অপরটির যথার্থ পরিপূরক। অল্প কথায়, গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রোইকার মূল লক্ষ্য ও কর্মসূচি ছিল অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে গণতন্ত্রীকরণের বিস্তার ঘটানাে এবং পররাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে পুঁজিবাদ-বিরােধিতা ও ঠান্ডা লড়াই-এর নীতি পরিত্যাগ করে শান্তি ও সমঝােতার ভিত্তি মজবুত করা। গরবাচভ প্রবর্তিত ব্যবস্থায় সােভিয়েত ইউনিয়ন রূপান্তরিত হয়েছিল একটি আইনানুগ রাষ্ট্র এবং স্বশাসিত সমাজ - তান্ত্রিকসমাজ পরিবর্তিত ব্যবস্থায় জনগণের সার্বজনীন ভােটাধিকার, যে-কোনাে প্রশাসনিক পদে নিয়ােজিত হবার অধিকার, রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার ইত্যাদি স্বীকৃত হয়েছিল।

                           ____________

⦿ Glasnost : - ‘গ্লাসনস্ত’ অর্থাৎ স্বচ্ছতাপূর্ণ মুক্ত পরিবেশে চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গরবাচভ প্রবর্তিত নতুন নীতি ও কর্মসূচির অনেকটা জায়গা দখল করেছিল। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে মুক্ত পরিবেশের অভাবে সােভিয়েত ইউনিয়নের বদ্ধ আর্থ রাজনীতিক কাঠামােয় সময়ােপযােগী পরিবর্তন আসা অসম্ভব। তাই বড়াে ধরনের ঝুঁকি সত্ত্বেও মুক্ত পরিবেশ ও স্বচ্ছতা আনতে প্রয়ােজনীয় সংস্কারের দিকে তিনি ঝুঁকেছিলেন। তার ভাবনায় সংস্কারের কোনাে বিকল্প ছিল না এবং আমূল সংস্কার প্রবর্তন করা তার নিকট ছিল একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব। গ্লাসনস্ত-এর প্রয়ােজন কেন ছিল তার উৎস সন্ধান করা যেতে পারে সােভিয়েত রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও তার বেড়ে ওঠার ইতিহাসের গভীরে।
 
কার্ল মার্কস পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পথে সর্বহারার একনায়কতন্ত্র বা প্রােলেতারীয়রাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে লেনিন-ট্রটস্কিস্তালিন-এর মতাে বলশেভিক কমিউনিস্ট নেতারা রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। এর পরের সকলেরই জানা। ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লবের পর থেকে সােভিয়েত ইউনিয়নের দীর্ঘ ইতিহাস ছিল এককথায় বিরামহীন একদলীয় শাসনের ইতিহাস। এই বিস্তৃত সময়কালে একদিকে যেমন সােভিয়েত রাশিয়ায় পুঁজিবাদ-বিরােধী সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিতও সুদৃঢ় হয়েছিল; অপরদিকে তেমনি বিশেষত স্তালিনের আমলে রুশ জনসাধারণকে ব্যক্তিস্বাধীনতা বহুলাংশে বিসর্জন দিতে হয়েছিল। লেনিন-পরবর্তী সময়ে স্তালিনের শাসনকালে সােভিয়েত ইউনিয়নে অতিকেন্দ্রিক কমিউনিস্ট দলের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব কায়েম। হয়েছিল।

 ত্রিশ-এর দশকের শেষ থেকে রাশিয়ায় স্তালিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনাধীনে রুশ জন সাধারণের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মানবাধিকার (Human Rights) রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার যূপকাষ্ঠে একপ্রকার বলিপ্রদত্ত হয়েছিল। এই পর্বে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসের বলি হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা সবাই প্রতিক্রিয়াশীল ছিল না। মেদ - ভেদেভ (Medvedev)-এর ভাষায় স্তালিনীয় শাসনাধীনে সােভিয়েত রাষ্ট্র এক নির্মম হৃদয়হীন যন্ত্রে পরিণত হয়েছিল এবং তার ফলে রুশ সমাজতন্ত্র মানবিক মূল্যবােধ বর্জিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধজনিত পরিস্থিতিতে সােভিয়েত কর্তৃত্ববাদ ও স্তালিনের ব্যক্তিগত স্বৈরশাসন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। 

বৈদেশিক ক্ষেত্রে যুদ্ধ-পরবর্তী দিনগুলিতে সােভিয়েত রাশিয়া আমেরিকার সাথে এক দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং পরিণতিতে বিশ্বরাজনীতির দ্বি-মেরুকরণ (bi-polar) চূড়ান্ত হয়। সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ায় আলাদাভাবে পূর্ব ইউরােপের কমিউনিস্ট শাসিত উপগ্রহ রাষ্ট্রগুলিতে সােভিয়েত প্রাধান্য সুদৃঢ় করে তুলতে অতঃপর সােভিয়েত কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র তার সম্পদের একটা বড়াে অংশ প্রতিরক্ষাখাতে ও সমরাস্ত্র নির্মাণে ব্যয় করে চলেছিল। এই পরিস্থিতি সমাজবাদী রাশিয়ার পক্ষে কল্যাণকর ছিল না। এই যুদ্ধবিলাসী নীতির বিরূপ প্রভাব পড়েছিল অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে। এর পরিণতিতে রাশিয়ার জনসাধারণের স্বাভাবিক প্রয়ােজন ও চাহিদাগুলি অবহেলিত হতে থাকল এবং সর্বোপরি, সােভিয়েত অর্থনীতির গতি প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেল। স্তালিন-পরবর্তী সময়ে সােভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান ত্রুচেভের আমলে অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও ব্রেজনেভ ও তার উত্তরসূরিদের শাসনাধীনে পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি ঘটেছিল। জড়তা গ্রাস করেছিল সমগ্র সােভিয়েত ব্যবস্থাকে। সলঝেনি স্টাইন ও শাখারভ-এর মতাে রুশ বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাহিত্যিক-বিজ্ঞানীরাও এই পর্বে রাষ্ট্রীয় দমন নীতি ও সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন। একদলীয় নির্মম শাসনে অসন্তুষ্ট ও রুষ্ট রুশ জনগণের হৃদয়ে সােভিয়েত ব্যবস্থা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাও অবশিষ্ট থাকল না। তারা এই রাষ্ট্রশক্তির নাগপাশ থেকে পরিত্রাণ পেতে চেয়েছিল। এই বদ্ধ, পরিবর্তনহীন ও পতনশীল আর্থ-সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে আমূল পরিবর্তনে নতুন জীবনদান করতে চেয়ে ছিলেন মিখাইল গরবাচভ। 

তৎকালীন সংস্কারকামীদের কাছে গ্লাসনস্ত বস্তুত, পেরেস্রোইকার তুলনায় অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি সমন্বিত ছিল। হব্সবম এর ভাষায়, 'Glasnost meant the introduction or re-introduction of a constitutional and democratic state based on the rule of law and the enjoyment of civil liberties as commonly understood.' এর অন্য অর্থ ছিল দল ও রাষ্ট্রের মধ্যে পৃথকীকরণ। গ্লাসনস্তের রাজনৈতিক কর্মসূচি অনুসারে যেমন বলা হয়েছিল দলীয় কাঠামাের গণতন্ত্রীকরণ ঘটানাে হবে তেমনি গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি পুনর্মূল্যায়িত হবে। অপরদিকে, মানবাধিকার ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে গরবাচভ প্রণীত গ্লাসনস্তের প্রভাব বিশেষভাবে পড়েছিল তার আমলে সােভিয়েত রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরােধী ও সমালােচকদের একটা বড় অংশ যারা পূর্বতন জমানায় কারারুদ্ধ ছিলেন, এখন জেল থেকে মুক্তি পেলেন। ১৯৮৬ সালে
শাখারভ ও তাঁর নির্বাসন পর্বের শেষে মস্কোতে প্রত্যাবর্তনের রাষ্ট্রীয় অনুমতি লাভ করলেন। স্তালিন জমানায় রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বুখারিন-এর মতাে স্বাধীনচেতা প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব নিরপরাধ বলে ঘােষিত হলেন এবং ছাড়া পেলেন।

‘গ্লাসনস্ত’ প্রভাবে প্রাভদা'-র মতাে কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্রেও ব্রেজনেভ নীতির সমালােচনামূলক নিবন্ধ প্রকাশিত হতে থাকল। এই সংস্কারসমৃদ্ধ উদার পরিমণ্ডলে ১৯তম সােভিয়েত পার্টি কংগ্রেসের (১৯৮৮ সাল) কাজকর্ম সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারের উদ্যোগ গৃহীত হল যা আগে কল্পনার অতীত ছিল। ১৯৮৬ সালের মে মাসে সােভিয়েত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সােভিয়েত লেখকদের আলাদা আলাদা সংগঠনগুলি কট্টর ও প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্বকে অপসারিত করে স্বাধীন চিন্তাধারার অধিকারী প্রগতিশীল নেতাদের নির্বাচিত করেছিল। স্তালিন শাসন-বিরােধী চলচ্চিত্র ও কথাসাহিত্য বিশেষ করে উপন্যাসগুলি যেগুলি দীর্ঘদিন ধরে সােভিয়েত রাশিয়ায় কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল, গরবাচভের গ্লাসনস্তের প্রভাবে সেগুলি প্রদর্শিত ও প্রকাশিত হওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনাে সরকারি বাধার সম্মুখীন হল না। সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলিকে সরকারি ও দলীয়স্তরের ভ্রষ্টাচার ও অকর্মণ্যতার সর্বোপরি, এই সময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও বহুলাংশে ফিরে এল।

                 
⦿ Perestroika : -  গরবাচভের সংস্কার কর্মসূচি অনুসারে ‘গ্লাসনস্ত’-এর আনুষ্ঠানিক পরিপূরক ছিল পেরেস্ত্রইকা বা পুনর্গঠন প্রকল্প। তাঁর কাছে পেরেস্ত্রইকা'-র অর্থ শুধু প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন ছিল না, তিনি সােভিয়েত পদ্ধতি সম্পর্কে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন বােঝাতে এই বিশেষ  শব্দটি চয়ন করেছিলেন। গরবাচভের ভাবনায় পেরেস্ত্রইকার অর্থ ছিল 'Humanization of social structure' বা 'সামাজিক কাঠা -মাের মানবিকীকরণ'। পেরেস্ত্রইকা ছিল দক্ষ একটি নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থা যেটি গরবাচভের একক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

হব্সবম বলেছেন, পেরেস্ত্রইকার নতুন অর্থনৈতিক কর্মসূচির খসড়া প্রস্তুত হয়েছিল ১৯৮৭-৮৮ সালে। ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়নগুলির ১৯তম সম্মেলনে গরবাচভ অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ়তার সাথে ঘােষণা করেন যে পেরেস্ত্রইকার মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্রের আধারে এমন একটি সমাজ গঠিত হবে যেখানে থাকবে একটি অর্থনীতি এবং সর্বোপরি একটি উন্নত বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-সংস্কৃতি নির্ভর মানবায়িত ও গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামাে। উৎসাহী রুশ জনসাধারণের সক্রিয় উদ্যোগ, প্রয়াস ও অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে বহুজাতিক সমাজ সেখানে প্রকৃত কল্যাণমুখী সমাজতন্ত্রের দিশা দেখাবে। কার্যত, পেরেস্ত্রইকা প্রবর্তনের মাধ্যমে গরবাচভ রাশিয়ার জনগণকে এক উন্নততর সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন। অবশ্য তার চরম পরিণতি হয়েছিল ‘Desperately Dangerous'; স্বপ্ন ও বাস্তবের মধ্যে বিস্তার ফারাক থেকে গেল। পরিণামে সােভিয়েত সমাজতন্ত্রেরই পতন ঘটল।

যাইহােক, অর্থনৈতিক সংস্কারসাধন পেরেস্ত্রইকার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল। গরবাচভ  পরিকল্পিত পেরেস্ত্রইকা কার্যত, 'Command Economy'-র পরিসমাপ্তি ঘােষণা করে “Market Economy' বা বাজার অর্থনীতির দিকে পা বাড়িয়েছিল। ১৯৮৭ সালে সােভিয়েত রাশিয়ায় নানা ছােটো বড়াে বেসরকারি ব্যক্তিগত শিল্প বাণিজ্য উদ্যোগ গুলি রাষ্ট্রীয় অনুমােদন প্রাপ্ত হল, শ্রমিক সমবায়গুলি স্বীকৃতি পেল এবং অর্থনৈতিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ পাশাপাশি জায়গা করে নিল। এই
পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়েই রচিত হবে কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত। এখন থেকে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতির লক্ষ্যে কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুস্থ প্রতিযােগিতার  ওপর জোর দেওয়া হল।

এই পর্বের অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য ছিল শিল্পক্ষেত্রে পণ্যসামগ্রীর গুণগত মান নিশ্চিত করার (Quality Control) ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ। ১৯৮৭ সালের জুনে প্রবর্তিত হল 'Law on state enterprises' এবং একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটল এবং এর পরিণতিতে কাঁচামাল, উৎপাদন কোটা ও বাণিজ্যের ওপর কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বের পেরেস্ত্রইকা ও সােভিয়েত রাজনীতি (Perestroika and Soviet Politics) রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পেরেস্ত্রইকা প্রয়োেগ সােভিয়েত রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন এনেছিল। এর সূচনা হয়েছিল ১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে যখন গরবাচভ দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের প্রচারের জন্য জোর সওয়াল করেন। তার প্রবর্তিত সংস্কার ও সমাজতন্ত্রের পুনর্গঠন কর্মসূচি ঘােষিত হওয়ার সাথে সাথে সমগ্র সােভিয়েত ইউনিয়ন জুড়ে তুমুল আলােড়ন উঠল। এই পরিস্থিতিতে গরবাচভ এক নতুন সমস্যার সম্মুখীন হলেন। 

বেশ কিছু পাটিসদস্য যেমন মস্কোর পার্টিনেতা বরিস ইয়েলৎসিন গরবাচভের চেয়ে অনেক বেশি চরম মনােভাবাপন্ন ছিলেন। তাদের বক্তব্য ছিল গরবাচভ প্রবর্তিত সংস্কারগুলি প্রয়ােজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। তারা পূর্ণমাত্রায় অর্থনীতি সহ উদারীকরণ ও আমূল সংস্কারের দাবি তুললেন। ইয়েলৎসিন (Boris Yeltsin) বলশেভিক বিপ্লবের ৭০-তম বার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে এইসব সংস্কারের দাবিতে পাল্টা সংশােধনী প্রস্তাব আনেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে পেরেস্ত্রইকার প্রয়ােগ রুশ নাগরিকদের মনে গণতন্ত্রের তীব্র আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছিল এবং সেই মানসিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন বরিসইয়েলৎসিন। ইয়েলৎসিন ১৯৮৫ সালে কমিউনিস্ট পার্টির মস্কো শাখার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি একই সাথে পলিটব্যুরাের অন্যতম সদস্যপদেও মনােনীত হন।

যাইহােক, ইয়েলৎসিনের দাবির কারণে গরবাচভের সঙ্গে তার বিরােধ দেখা দিল এবং পরিণতিতে মস্কোর পার্টি-প্রধানের পদ থেকে তিনি অপসারিত হলেন। কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে অতঃপর উগ্র সংস্কারকামী ও মধ্যপন্থীদের মধ্যে তীব্র মনােমালিন্য দেখা দিল। ১৯৯০ সালের ২৮তম পার্টি সম্মেলনে ইয়েলৎসিনের অনুগামী সংস্কারকামী নেতা আলেকজান্ডার ইয়াকোভলেভ ও শেভার্নাদজে  অধিক উদারনৈতিক সংস্কারের সপক্ষে জোরালাে বক্তব্য রাখলেন। তারা কর্তৃত্ববাদী রুশ কমিউনিস্ট পার্টিকে সােশ্যাল ডেমােক্রাটিক দলে রূপান্তরিত করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এমনকি শেভার্নাদজে পূর্ব ইউরােপের গণতন্ত্রীকরণের আন্দোলনের প্রতিও সমর্থন জ্ঞাপন করেন সম্মেলনে তাঁদের তােলা দাবিসমূহ বহুলাংশে প্রত্যাখ্যাত হলে তাঁরা একযােগে পলিটব্যুরাে থেকে পদত্যাগ করেন। রাজনৈতিক গােলযােগের জন্ম দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনেও পেরেস্রোইকার সীমিত সংস্কার সাফল্য আনতে ব্যর্থ হয়েছিল।
                                       ____________

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন