B.A Philosophy Note | বি.এ ফিলোসফি নোট্স সেট - ২


Q1. বৈশেষিক মতে মমবায় ও সংযােগের পার্থক্য আলোচনা কর?
বৈশেষিক দর্শনে সমবায়কে একটি স্বতন্ত্র পদার্থ হিসাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। দুটি পদার্থ যখন এক নিত্য সম্বন্ধে সম্বন্ধযুক্ত হয় যে, পদার্থ দুটির একটি আরেকটিতে থাকে, তখন এই সম্বন্ধকে বলে সমবায়। যেমন- সমগ্রের সঙ্গে অংশের সম্বন্ধ। প্রশস্থপাদ তার 'পদার্থ সংগ্রহে' সমবায় সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন,-“অযুত-সিদ্ধ নামা ধার্যাধার ভূতানাং সং সম্বন্ধ হই প্রত্য হেতু সঃ সমবায়”। অর্থাৎ যে দুটি বস্তু আঁধার ও আঁধেয় হতে একটি বর্জন করে অপরের আঁধার আঁধেয়ভাব সম্পূর্ণ হয় না। এমন দুটি বস্তুকে অযুতসিদ্ধ বলা হয়। এরূপ দুটি বস্তুর সম্বন্ধের নাম সমবায়।

ন্যায় বৈশেষিকগণ যে দুই প্রকার সম্বন্ধ স্বীকার করেছেন, সে দুটি হল সংযােগ ও সমবায়। যে দুটি বস্তু সাধারণতঃ পৃথকভাবে থাকে তাদের মধ্যে যে অনিত্য সম্বন্ধ থাকে, তাকে অনিত্য সংযােগ বলে। ঘরের ছাদের উপর থেকে পাখীটা যখন উড়ে এসে গাছের উপর বসল তখন গাছের সঙ্গে পাখীটার সংযোেগ হল। এই সংযােগ নিত্য বা স্থায়ী নয়। কেননা যে মুহূর্তে পাখীটা গাছের উপর থেকে উড়ে চলে যাবে সেই মুহূর্তে উভয়ের মধ্যে সংযােগ আবার বিচ্ছিন্ন হবে। সুতরাং এই সম্বন্ধ হল সাময়িক। যতক্ষণ সেই সংযােগ বস্তুর গুণ রূপে বস্তুকে আশ্রয় করে থাকে বস্তুর সত্তা সংযােগের উপর নির্ভর করে না। গাছ ও পাখীর মধ্যে যে সম্বন্ধ স্থাপিত হল সেই সম্বন্ধের উপর গাছ ও পাখীর সত্তা নির্ভর করে না। দুটি বস্তুর একটি যদি আরেকটি থেকে পৃথক করা যায় এবং তাতে যদি তাদের অস্তিত্বের হানি না হয়, তাহলে তাদের বলা হবে যুতসিদ্ধ। আর যদি দুটি বস্তুর একটিকে আরেকটি থেকে পৃথক করা না যায় অর্থাৎ পৃথক করলেই অস্তিত্বেই হানি ঘটে, তাহলে তাদের বলা হয়, অযুতসিদ্ধ। যুতবস্তুর মধ্যে একটি সম্বন্ধকে
সংযােগ বলা হয় এবং অযুত বস্তুর সম্বন্ধকে বলা হয় সমবায়।

⦿ সমবায় ও সংযােগের পার্থক্য : -
(১) যখন দুটি পদার্থ পরস্পর সংযুক্ত না হয়ে থাকতেপারে, তাদের মধ্যে অনিত্য সম্বন্ধকে সংযােগ বলে। সংযােগ সম্বন্ধ আকস্মিক, কখনই আবশ্যিক হতে পারে না। কিন্তু সমবায় একদিকে যেমন নিত্য পদার্থ অপরদিকে তেমন সম্পর্কযুক্ত বিষয়দুটি একটি অপরটিকে ছাড়া থাকতে পারে না। 
যেমন-দ্রব্য ও গুণ। (২) সংযােগ, বিভাগ কোন পদার্থ নয় এরা দ্রব্যের শুধু গুণ। অন্যদিকে সমবায় কোন গুণ নয়, একটি স্বতন্ত্র পদার্থ। (৩) সংযােগ অনেক, কিন্তু সমবায় এক। (৪) সমবায় দ্রব্য, কর্ম ও গুণে থাকে বলে সংযােগের তুলনায় সমবায়ের আশ্রয় বেশী। (৫) সংযােগ সামান্যবান পদার্থ নয়, সংযােগ কেবলমাত্র দ্রব্যেই থাকে, কিন্তু সমবায় সামান্যবান পদার্থ। (৬) সংযােগ উৎপাদিত, সমবায় অনুৎপাদিত। (৭) সমবায়কে কোনভাবে ভাগ করা যায় না, কিন্তু তা স্বাভাবিক সম্বন্ধ। কিন্তু সংযােগ হল কৃত্রিম ও অস্বাভাবিক সম্পর্ক। (৮) সংযােগ বিভাগ দ্বারা ধ্বংস হতে পারে। কিন্তু সমবায় নিত্য কোন মতেই তা ধ্বংসশীল নয়। (৯) সমবায় ইন্দ্রিগ্রাহ্য নয়, অনুমান সাপেক্ষ। কিন্তু সংযােগ সম্পর্ক হল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। (১০) যুতসিদ্ধ বস্তুর সম্পর্ককে সংযােগ বলা হয়, কিন্তু সমবায় বলা হয় অযুতসিদ্ধ বস্তুর সম্পর্ককে।

ন্যায় ও বৈশেষিক মতে, সমবায় সম্বন্ধ পাঁচ প্রকার-- (i) ব্যক্তি ও জাতীয় সম্বন্ধ, (ii) অংশ ও অংশির সম্বন্ধ, (iii) নিত্য দ্রব্য ও বিশেষের সম্বন্ধ, (iv) দ্রব্য ও গুণে সম্বন্ধ, (v) দ্রব্য ও কার্যের সম্বন্ধ।

প্রভাকর মীমাংশক সম্প্রদায় মনে করেন যে, সমবায় সংখ্যায় বহু একটি নয়। এরা ন্যায় বৈশেষিক মতের বিরােধিতা করে বলেন যে, একটি সমবায় সম্বন্ধের মধ্যে সমরকম আঁধার ও আঁধেয় থাকতে পারে। কিন্তু সব সম্বন্ধকে ব্যাখ্যা করা যায় না। ভট্ট মীমাংশকগণ সমবায় সম্বন্ধ না মেনে নিয়ে সমবায়ের
ক্ষেত্রে তাদাত্মের সঙ্গে সমবায়ে অভিন্নতার কথা বলেছেন। বেদান্ত দর্শনে সমবায়কে সম্পূর্ণ বর্জন করা হয়েছে বা স্বীকার করা হয় নি।
                                __________

Q2. অভাব কি ? অভাব কয় প্রকার ও তার শ্রেণীবিভাগ করো?
বৈশেষিক দর্শনে পদার্থের অভাব বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেননা বৈশেষিক দর্শনের প্রবর্তক মহর্ষি কণাদ একটি পৃথকরূপেও অভাবের উল্লেখ করে নি ,কিন্তু পরবর্তী বৈশেষিকরা (বিশেষত হাস্যকর প্রশস্তবাদ আচার্য তার পদার্থ সংগ্রহ গ্রন্থে) অভাবের সপ্তম পদার্থরূপে স্বীকার করেন। কারণ; ভাব পদার্থ যেমন আমাদের প্রত্যক্ষ বিষয় তেমনি অভাবকেও সাক্ষাৎভাবে উপলব্ধি করা যায়। 

ন্যায় বৈশেষিক দের মতে সপ্তম পদার্থ হলো অভাব। বিশ্বনাথ বলেন যেখানে দ্রব্য নেই , গুন নেই ,কার্য নেই , প্রভৃতি ছয়টি ভাব পদার্থের মধ্যে ভেদ করে থাকে তাকে অভাব পদার্থ বলে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, বৈশেকিরা দুই রকমের পদার্থ স্বীকার করেন- (i) ভাব পদার্থ (ii) অভাব পদার্থ

দ্রব্য, কর্ম, গুণ, সামান্য, বিশেষ, সমবায় এই ছয়টি হল ভাব পদার্থ। অন্যদিকে অভাব পদার্থ হল নঞর্থক পদার্থ। টেবিল, চেয়ার, ঘঠ, পট ইত্যাদি ভাব পদার্থ। টেবিল না থাকা, চেয়ার না থাকা ইত্যাদি হল অভাব পদার্থ। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, অভাব হল কোন কিছুর অস্তিত্বহীনতা। কোন বস্তুর অভাব বাস্তব ঘটনা হিসাবে আমাদের অভিজ্ঞতার বিষয়। অভাব পদার্থে যে কোনো কোন ভার পদার্থের মতােই কোন বাস্তব পরিস্থিতির অংশ।

অভাব অবশ্য হল একটি আপেক্ষিক বা সাপেক্ষ পদ। অভাবস্বয়ং বােধগম নয়। এটি অন্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে বােধগম্য হয়। সুতরাং কোন বিষয়ের অভাব কোন না কোন আধারের সঙ্গে যুক্ত। অভাব হল আধার এর বিশেষণ। আধারের সঙ্গে অভাবের সম্বন্ধ হল বিশেষণতা এই সম্বন্ধ সংযােগ নয়। কিন্তু অনেক ভারতীয় দার্শনিক অভাবকেও পদার্থ বলে স্বীকার করে না।

⦿ অভাবের শ্রেণীবিভাগ : - বৈশেষিকদের মতে অভাব দুই প্রকার (ক) সংসৰ্গাভাব (খ) অনেন্যাভাব
(ক) সংসৰ্গাভাব  : - কোন একটি বস্তুতে কোন একটি বস্তুর যে অভাব তাকে বলে সংসৰ্গাভাব। সংসৰ্গাভাব তিন প্রকার। যথা- (১) প্রাগাভাব, (২) ধ্বংসাভাব এবং (৩) অত্যন্তাভাব
(১) প্রাগাভাব : কোন একটি বস্তু উৎপন্ন হবার পূর্বে বস্তুর উপাদানের মধ্যে বস্তুটির যে অভাব তাকেই বলে প্রাগাভাব যেমন- ইট, চুন, সিমেন্ট, বালি, সুড়কি ইত্যাদির মধ্যে মন্দিরের যে অভাব তাকে বলে প্রাগাভাব।  যেমন - ঘট তৈরির হওয়ার পূর্বে ঘটের উপাদান, কারণ মৃত্তিকাতে ঘটের অস্তিত্ব ছিলোনা ,ঘটের এই অভাব কে বলে  প্রাগাভাব।
(২) ধ্বংসাভাব : কোন বস্তু উৎপন্ন হবার পর যদি ধ্বংস হয়ে যায়, সেই ধ্বংস-বশেষ বস্তুটি যে অভাব থাকে তাকে ধ্বংসাভাব বলে। যেমন -কোনো একটি জামাকে ছিঁড়ে  টুকরাে করা হল। সেই ছেঁড়া  টুকরোতে জামার যে অভাব তাকে ধ্বংসাভাব বলে। 
(৩) অত্যন্তাভাব : কোন একটি বস্তুতে অপর একটি বস্তুর যদি চিরকাল অভাব থাকে, সেই অভাবকে বলে অত্যন্তাভাব। যেমন-কলমেতে চেতনার অভাব, বায়ুতে রূপের অভাব ইত্যাদি।অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ– এই তিনকালের কোন কালেই কলমের চেতনার ও বায়ুতে রূপ নেই। অত্যন্তাভাব সর্বকালের বলে এর উৎপত্তি নেই, বিনাশ নেই, এটি নিত্য।

(খ) অনেন্যাভাব :- অনেন্যাভাব সংসর্গাভাবের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। সংসর্গাভাবের দ্বারা দুটি বস্তুর সংযােগের বা সম্পর্কের অভাবকে বােঝায় আর অনেন্যাভাবের দ্বারা দুটির ভেদকে বােঝায়। সহজ ভাবে বলতে গেলে অনেন্যাভাব বলতে বোঝায় একটি বস্তু আরেকটি বস্তু নয়। 
 যেমন-কুকুর গরু নয়। মহিষ গাধা নয়।

মূল্যায়ন : বৈশেষিক মতে অভাব অতিরিক্ত পদার্থ। অভাবকে অধিকরণ স্বরূপ বলে। অভাব কল্পনা করতে হয় ফলে গেট গৌরব হয়। বিশেষ্য বিশেষণ ভাব সন্নিকর্ষের  দ্বারা আমাদের অভাব প্রত্যক্ষ হয়। সুতরাং অভাব স্বতন্ত্র পদার্থ। 
                               ___________
  
Q3. সাংখ্য মতে পুরুষের স্বরূপ ব্যাখ্যা করাে?
ロ সাংখ্য দর্শনে দ্বিতীয় যে মূল তত্ত্বটি স্বীকার করা হয়েছে তা হল পুরুষ। সাংখ্য দর্শনে ‘আত্মা’কে পুরুষ নামে অভিহিত করা হয়। পুরুষ শব্দটি উপনিষদে ব্যবহার করা হয়েছে। পুরীতে অর্থাৎ দেহের মধ্যে স্বয়ং যিনিই থাকেন তিনি পুরুষ। ভারতীয় দর্শনে আত্মার স্বরূপ সম্পর্কে বিভিন্ন মত প্রচলিত। চার্বাক দেরমতে দেহের অতিরিক্ত আত্মার কোন সত্তা নেই। তাদের মতে চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই হল আত্মা। জৈন দার্শনিক আত্মাকে নিত্য, সক্রিয়, স্বগুণ এবং সচেতন দ্রব্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। বৌদ্ধমতে আত্মা হল সকল প্রকার মানসিক অবস্থার প্রবাহ। আত্মা বলে কোন নিত্য সত্তা নেই।

ন্যায় দর্শনে বলা হয়েছে যে দেহ, ইন্দ্রিয় মনের অতিরিক্ত এক স্বতন্ত্র সত্তা হল আত্মা। অদ্বৈত বেদান্ত মতে, আত্মার সৎচিৎ আনন্দ বিশিষ্ট দ্বৈতাবাদ চৈতন্য আত্মার নিত্যগুণ। সাংখ্য দর্শনে পুরুষ বা আত্মা হল আধ্যাত্মিক সত্তা। আত্মা হল বিশুদ্ধ চৈতন্য। ইন্দ্রিয় মন বুদ্ধি থেকে তা স্বতন্ত্র, আত্মা জড় পদার্থ নয়। জড়ের নিজস্ব প্রকাশ ক্ষমতা নেই। জড়কে প্রকাশ করে আত্মাই। আত্মা হল স্বঃপ্রকাশ জ্ঞান স্বরূপ শুদ্ধ ভোক্তা।

সাংখ্য দর্শনে পুরুষ বা তার সঙ্গে প্রকৃতির পার্থক্য আছে। প্রকৃতি নিত্য ও পরিবর্তনশীল হওয়ার প্রকৃতির বিকার আছে কিন্তু  আত্ম অপরিবর্তনশীল, তার কোন বিকার নেই। প্রকৃতি সত্ব ,তম , রজ  এই তিনটি গুণে সাম্য অবস্থায়। পুরুষ যখন আত্মা অভিমান বশতঃ  দেহ, মন, ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে একই ভূত হয়ে নিজেকে কর্তা বলে মনে করে, তখন সুখ- দুঃখের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। আসলে পুরুষ বদ্ধহীন , পুরুষ বা আত্মা উদাসীন দ্রষ্টা এবং প্রকৃতি দৃশ্য। পুরুষ যেখানে নির্বিকার প্রকৃতি সেখানে বিকারশীল। পুরুষ সনাতন, তার উৎপত্তি বা ধ্বংস নেই। পুরুষ লােভ, মােহ, রাগ বিরাগ মুক্ত পুরুষ অপরিসীম ও অদ্বিতীয়।

পুরুষ বা আত্মার অস্তিত্বকে প্রমাণ করার জন্য সাংখ্য দার্শনিকগণ কতক যুক্তির আলোচনা করেছেন ---
(i) যা একাধিক উপাদান বা অংশের দ্বারা গঠিত হয় তা হল 'সংঘাত' বা ‘সংহত। যা সংঘাত তাই পদার্থ অথাৎ সংঘাত বস্তুমাত্র যেমন ঘট, পট, শয্যা বস্ত্র, সব কিছুই অপরের প্রয়ােজন সাধন করে থাকে। এগুলি অচেতন এবং এরা অপরের প্রয়ােজন সাধন করে। সুতরাং এমন কোন চেতন সত্তা আছে যার প্রয়ােজন এরা নিজেরাই নির্বাহ করে আর এই চেতন সত্তাই হল পুরুষ বা আত্মা। যাকে বলা হল সংঘাত বা পরার্থতা।
(ii) যে কোন দলশ্য থাকলেই তার বিপরীত গুণ সম্পন্ন দ্রষ্টা অবশ্যই থাকবে। এই দৃশ্য জগৎ তিনটি গুণের দ্বারা গঠিত। অচেতন এই জগতের দ্রষ্টারূপে সচেতন নিত্য সত্তার অস্তিত্ব রূপে অবশ্যই স্বীকার করতে হয়। এই সত্তাই হল পুরুষ বা আত্মার ত্রিগুণাতিক বিপর্যয়।
(iii) জড় দ্রব্য অচেতন। যেহেতু নিজে নিজেই ক্রিয়া করতে পারে না। জড় চেতনার অধিষ্ঠান হলে তবেই জড় ক্রিয়া করতে পারে। সারথী ভিন্ন কি রথ চলতে পারে? সেই রকমভাবে প্রকৃতি এবং প্রকৃতির পরিণাম, মন বুদ্ধি এবং যাবতীয় স্তুল বস্তুর পরিচালন করার জন্য ঠিক সেই রথের সারথীর মত চেতন পুরুষের অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়।
(iv) দৃশ্য থাকলেই যেমন দ্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়, তেমন ভােগ্য থাকলেই ভোক্তার অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়। সুতরাং সুখ, দুঃখ, বেদনা,বিরহের ভােক্তা অধিকার হাতে অবশ্যই মেনে নিতে হয়।
(v) শাস্ত্র ও মহর্ষিগণ মানুষ কে মুক্তি লাভের জন্য বিভিন্ন পথ ধরে এগিয়ে যওয়ার জন্য উৎসাহিত  করেন। এই মুক্তির অর্থ হল দুঃখকে মুছে ফেলা, সুতরাং শাস্ত্র ও সর্বাঙ্গ সরাসরি ঋষিদের উপদেশ এবং মানুষের মুক্তি কামনা চেতন পুরুষের অস্তিত্ব প্রমাণ করে।

⦿ পুরুষ এক না বহু :- (ক) বিভিন্ন জীবের মধ্যে জন্ম, মৃত্যু, ইন্দ্রিয় বিষয়ে পার্থক্য দেখা যায় এবং ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যু হলে অন্য ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যু হয় না। একজন ব্যক্তি অন্ধ বা বধির হলে অন্যজন অন্ধ বা বধির হয় না। এই রকম যখন বাস্তবে হয় না, তখন আমাদের মানতেই হবে আত্মা এক নয় বহু।(খ) সমস্ত জীবনের মধ্যে একই থাকলে সমস্ত জীবের প্রবৃত্তি একই রকম হত, কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। একজন যখন যাচ্ছে, আরেকজন তখন আসছে। একজন যখন সংসারের মধ্যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা মগ্ন, তখন অন্যজন মোড়ের মাথায় গভীর আড্ডায় ব্যস্ত। সুতরাং জীবের প্রকৃতিগত ভিন্নতাই আত্মার বহু প্রমার করে। তাই আত্মা এক নয় বহু।(গ) সত্ত্ব, রজ, তম— এই তিন গুণের বিপর্যয়ও আত্মার বহুত্ব স্বীকার করে। কোন লােকের মজধ্যে সত্ত্বগুণ থাকে, তাই সে সুখী। কোন লােকের মধ্যে রজগুণ প্রবল, তাইতাে দুঃখী আবার কোন লােকের মধ্যে তম গুণ প্রবল হওয়ায় সে মােহমুক্ত। যদি একই আত্মা সবার মধ্যে বিরাজ করে তাহলে তিন গুণের পার্থক্য থাকত না। সবার মধ্যে যদি একই আত্মা বিরাজ করত তাহলে দেবতা- মানুষ ও পশু-পাখির মধ্যে কোন প্রভেদ থাকত না। মানুষ, দেবতা ও পশু পাখি
হল ভিন্ন জীব। এ থেকেও প্রমাণিত হয় আত্মা বহু, এক নয়।(ঘ) মৃত্যুর পর পূণ্যাত্মার স্বর্গ বাস, পাপাত্মার নরক বাস ঘটে। এর দ্বারাও প্রতিপন্ন হয় যে বিভিন্ন জীবের মধ্যে বিভিন্ন আত্মা বিরাজমান। সমস্ত
জীবের মধ্যে একই আত্মা থাকলে একজনের মৃত্যুতে সবাই মুক্তি লাভ করত।


☆ ☆ ☆☆  টীকা   ☆ ☆ ☆☆
৫ নম্বরের সংক্ষিপ্ত ছোটো টীকা:

Q1.  বৈশেষিক মতে ময়রায় কোন কোন ক্ষেত্রে হয়?
🖛 তত্ত্বগত পদার্থ ছাড়াও জ্ঞান তাত্ত্বিক পদার্থ হিসেবে বৈশেষিকরা সমরায় স্বীকার করেণ! সমরায় সম্বন্ধের পাঁচটি দিক আছে। প্রথম অংশের সঙ্গে অংশীর, দ্বিতীয় দ্রব্যের সঙ্গে গুণের। তৃতীয় দ্রব্যের সাথে কর্মের। চতুর্থ— দ্রব্য, গুণ ও কর্মের সঙ্গে তাদের সামান্য ধর্মের সম্বন্ধ, পঞ্চম বিশেষ ও নিত্য পদার্থের সম্বন্ধ।

Q2. প্রাগভাব কাকে বলে?
🖛 কোন বস্তু উৎপন্ন হওয়ার পূর্বে এই বস্তুর উৎপাদনের মধ্যে বস্তুটির যে অভাব থাকে তাকেই প্রাকভাব বলে। যেমন— ইট, পাথর, বালি, সিমেন্ট, লােহা প্রভৃতি উপাদানের সাহায্যে বাড়ী তৈরী হয়। প্রাগভাবের কোন শুরু নেই, শেষ আছে। উৎপত্তি নেই বিনাশ আছে।

Q3. বৈশষিক মতে আত্মা কী ?
🖛 বৈশেষিক মতে আত্মা হলাে নিত্য সর্বব্যাপী দ্রব্য। আত্মা হলাে জ্ঞানের আধার। আত্মা দু-প্রকার— (১) জীবআত্মা (২) পরমাত্মা। অনিত্য জ্ঞানের আধার যে দ্রব্য তাই জীবাত্মা, প্রাণী বহু বলে জীবাত্মা বহু, আর পরমাত্মা নিত্য জ্ঞানের আধার পরমাত্মা বা ঈশ্বর এক।

Q4. সাংখ্য মতে আত্মা বা পুরুষ কী ?
🖛 আত্মার স্বরূপে ব্যাখা করতে গিয়ে সাংখ্য দার্শনিকগণ বলেন আত্মা বা পুরু দেহ, মন ইন্দ্রিয় ও বুদ্ধি থেকে ভিন্ন। পুরুষ বা আত্মা বিশুদ্ধ চৈতন্য স্বরূপ। সাংখ্য দার্শনিক দের মতে পুরুষ নির্গুণ, পুরুষ সচেতন। পুরুষের উৎপত্তি নেই, বিনাষ নেই, পুরুষ সচেতন। সাংখ্য দার্শনিকগণ পুরুষ রূপে আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেন।

Q5. বৈশষিক মত ব্যোম বা আকাশ কী ?
🖛 বৈশেষিক মতে ব্যোম বা আকাশ হলাে পঞ্চম ভৌতিক দ্রব্য। এটি অতীন্দ্রিয়, নিত্য এবং সর্বব্যাপী দ্রব্য। আকাশের কোন পরমাণু নেই। আকাশ প্রত্যক্ষের অতীত শব্দ রূপ গুণ প্রত্যক্ষের মাধ্যমে শব্দের আশ্রয় স্থল হিসাবে আকাশের অনুমান হয়ে থাকে।

Q6. সাংখ্য সৎকাৰ্যবাদ কাকে বলে?
🖛 সাংখ্য দর্শনে কার্যকারণবাদকে সৎকাৰ্যবাদ বলা হয়। কার্যকারণবাদ অনুসারে কারণ ছাড়া কার্যের উৎপত্তি ব্যাখা করা যায় না। সৎকাৰ্যবাদ অনুসারে উৎপত্তির পূর্বে কার্যতার কারণের মধ্যে অব্যক্ত অবস্থায় থাকে। উপাদান কারনের মধ্যে  কার্য হল অস্তিত্বশীল বা সৎ, এটিই হল সৎকার্য কথার অর্থ।

Q7. বৈশেষিক মতে সংযােগ কী?
🖛  বৈশেষিক মতে সংযােগ একটি গুণ, আর এই গুণটি যে কোন দ্রব্যের থাকতে পারে। যুতসিদ্ধ দুটি দ্রব্যের যে সম্বন্ধ তাই সংযােগ। সংযােগ একটি অনিত্য গুণ, এটি উৎপন্ন ও বিনিষ্ট দুটিই হয় যেমন—যখন টেবিলে বই রাখা হয় তখন টেবিলের সঙ্গে বই এর সংযােগ হয় তখন সংযােগ বিনিষ্ট হয়।

Q8. নির্বিকল্পক ও সবিকল্পকের পার্থক্য কী?
🖛 সবিকল্পক প্রত্যক্ষে কোন না কোন বিশেষণের জ্ঞান হয় আর নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষে কোন বিশেষণের জ্ঞান হয় না। জয়ন্ত ভট্ট বলেছেন— যখন দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য পৃথক পৃথক ভাবে প্রত্যক্ষ করা হয় না তখন তা নির্বিকল্পক, আর যখন এদের নব্য নৈয়ায়িকদের মতে নির্বিকল্পক জ্ঞান বিশেষ্যতা, ও 
সংসৰ্গতা বিহীন বলে এই জ্ঞান প্রমাও নয়, আবার ভ্রমও নয়। সবিকল্পক জ্ঞান প্রমাও অপ্রমা উভয় হতে পারে।

Q9.  পঞ্চাবয়বী ন্যায় কাকে বলে?
🖛 পরার্থানুমান অপরের কাছে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যক্ত করতে হয় বলে এর বিস্তৃত আলােচনা করা হয়, নৈয়ায়িকরা পাঁচটি অবয়ব বা বচনের সাহায্যে প্রকাশ করে থাকেন। পাঁচ অবয়ব যুক্ত অনুমানকে পঞ্চাবয়বী ন্যায় বলে। পাঁচটি অবয়ব হলাে-(১) প্রতিজ্ঞা (২) হেতু (৩) উদাহরণ (৪) উপনয় (৫)নিগমন।

Q10. ন্যায় মতে জ্ঞান কী?
🖛  জ্ঞানের অপর নাম বুদ্ধি, আত্মসমবেত গুণরূপে পরিচিত। জ্ঞানের লক্ষণ হলাে তা বিষয়ের প্রকাশক। নব্য ন্যায় মতে মনের সঙ্গে আত্মার সংযােগের পর চেতনায় যে বিষয়ের প্রকাশ ঘটে তাকে জ্ঞান বলে। অর্থাৎ আত্মা-ত্বক-মনঃ সংযােগের দ্বারা ব্যক্তি চেতনায় যার প্রকাশ ঘটে, সেই চেতনাকে জ্ঞান বলে। জ্ঞান দুই প্রকার যথার্থ জ্ঞান ও অযথার্থ জ্ঞান।

Q11. ন্যায় মতে পদার্থ কাকে বলে? ইহা কয়প্রকার ও কী কী ?
🖛 ন্যায় যে পদের দ্বারা কোন বিষয় নির্দিষ্ট হয় অর্থাৎ যা কিছু মানুষ তার বুদ্ধির সাহায্যে জানতে পারে এবং প্রমাণ করতে পারে তাকে পদার্থ বলে। ন্যায় মতে পদার্থ ১৬ প্রকারঃ- (১) প্রমাণ, (২) প্রমেয়, (৩) সংশয়, (৪) দৃষ্টান্ত, (৫) প্রয়ােজন, (৬) সিদ্ধান্ত, (৭) অবয়ব, (৮) তর্ক, (৯) নির্ণয়, (১০) বাদ, (১১) জল্প, (১২) বিতণ্ডা, (১৩) হেত্বাভাস, (১৪) জাতি, (১৫) ছল এবং (১৬) নিগ্রহস্থান।

Q12. ন্যায় মতে ব্যাপ্তি কি? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কী কী?
🖛 ব্যাপ্তি কথাটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলাে বিস্তৃতি, হেতুপদ এবং সাধ্যপদের মধ্যে যে নিয়ত ব্যতিক্রমহীন সহ উপস্থিতির সম্পর্ক থাকে তাকেই ব্যাপ্তি বলা হয়। ব্যাপ্তি দুই প্রকার— 'সমব্যাপ্তি ও অসমব্যাপ্তি। দুটি সমব্যাপক বিষয়ের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি এবং অসম বিষয়ের ব্যাপ্তিকে অসম ব্যাপ্তি বলে।

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন