H.S Bangla Suggestion Series-2 | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২২

⦿ Higher Secondary Bengali Suggestion 2022 | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২২

H.S Bangla Suggestion Series-2

  •  সাজেশন সূচিপত্র :
  • ⦾ ভারতীয় গল্প অলৌকিক
  • ⦾ গারো পাহাড়ের নীচে

ভারতীয় গল্প অলৌকিক সাজেশন

১ প্রশ্নঃ “গল্পটা মনে পড়লেই হাসি পেত।”-কোন গল্প স্মরণ করে হাসি পেত? গল্পটা মনে পড়লে কেন হাসি পেত?***
  অথবা,
 'এটা অসম্ভব' -অসম্ভব বিষয়টি কী ছিল?
     অথবা,
 'গল্পটা শুনতে বেশ ভালাে লাগছিল'— কোন গল্পের কথা বলা হয়েছে? উক্ত ঘটনাটিকে গল্প বলার কারণ কী ?

২ প্রশ্নঃ মর্দানা কীভাবে বলী কান্ধারীর কাছে গিয়েছিলেন সেই প্রেক্ষাপটটি আলােচনা করাে?***

৩ প্রশ্নঃ “ঠিক হল, ট্রেনটা থামানাে হবে।”—কোন্ ট্রেনের কথা বলা হয়েছে? সেটি কীভাবে থামানাে হয়েছিল?***
অথবা,
“মায়ের বান্ধবী আমাদের সমস্ত ঘটনাটা শােনালেন” - ঘটনাটি উল্লেখ করাে?

৪ প্রশ্নঃ “ঝড়ের বেগে ছুটে আসা ট্রেন থামানাে গেল, পাথরের চাই থামানাে যাবে না কেন?”—ট্রেন থামানাের দরকার হয়েছিল কেন? ট্রেন কীভাবে থামানাে হয়েছিল?***

৫ প্রশ্নঃ “চোখের জলটা তাদের জন্য”— বক্তা  কাদের জন্য চোখের জল উৎসর্গ করেছেন? যে ঘটনায় চোখে জল এসেছিল সেই ঘটনাটি সংক্ষেপে লেখাে?***
অথবা, “আমার চোখে জল” – বক্তার চোখে জল আসার কারণ আলোচনা করো?

ভারতীয় গল্প অলৌকিক সাজেশন উত্তর সেট

১ প্রশ্নঃ “গল্পটা মনে পড়লেই হাসি পেত।”-কোন গল্প স্মরণ করে হাসি পেত? গল্পটা মনে পড়লে কেন হাসি পেত?*** অথবা, 'এটা অসম্ভব' -অসম্ভব বিষয়টি কী ছিল?
                  অথবা,
 'গল্পটা শুনতে বেশ ভালাে লাগছিল'— কোন গল্পের কথা বলা হয়েছে? উক্ত ঘটনাটিকে গল্প বলার কারণ কী ?
ロ কর্তার সিং দুগ্গাল রচিত ‘অলৌকিক’ গল্পটি থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত হয়েছে। বলী কান্ধারী যখন গুরু নানককে আঘাত করার জন্য পাহাড়ের উপর থেকে পাথর গড়িয়ে দেন, তখন গুরু নানক প্রায় তার কাছে এসে পড়া পাথরটাকে হাতের স্পর্শে থামিয়ে দেন। এই গল্পটি লেখক একসময় শুনেছিলেন এবং সেই গল্পটির কথা স্মরণ করলেই লেখকের হাসি পেত।

সকলেরই সাধারণভাবে এ কথা জানা যে, উঁচু থেকে গড়িয়ে পড়া কোনাে বস্তুর গতিবেগ ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর মাত্রা লাভ করে। সেক্ষেত্রে বলী কান্ধারী যখন পাহাড়ের চূড়া থেকে গুরু নানককে হত্যার
জন্য পাথরের চাঙড় নীচের দিকে গড়িয়ে দেয়, তখন নীচে অনুচর পরিবৃত গুরু নানক সেই পাথরটি কাছে আসতেই শান্তভাবে হাতের ছোঁয়ায় থামিয়ে দেন। এমন ঘটনা সাধারণ বুদ্ধিতে অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর লাগে। একই সময়ে গুরু নানক পাথর সরিয়ে জলস্রোতের হাসি পাওয়ার কারণ সৃষ্টি করেছেন, এ ঘটনাটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে যুক্তিসম্মত। কিন্তু পতনশীল পাথরের চাঙড়কে কেবল হাতের ছোঁয়ায় অতি সহজে থামিয়ে দেওয়ার গল্পটি নেহাতই আজগুবি ও নির্বোধ । কল্পনাপ্রসূত অথচ সকলে তা যথার্থ বলে মানে। এই ঘটনায় যুক্তিবােধের এভাবে লেখকের হাসি পেত, যে হাসিতে কিছুটা বিদ্রুপ মিশে থাকত।

২ প্রশ্নঃ মর্দানা কীভাবে বলী কান্ধারীর কাছে গিয়েছিলেন সেই প্রেক্ষাপটটি আলােচনা করাে?**
ロ কর্তার সিং দুগ্গাল-এর ‘অলৌকিক’ গল্পে দেখা যায়, গুরু নানক একবার ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছে ছিলেন হাসান আব্দালের জঙ্গলে। চারপাশে তখন প্রবল রােদ এবং ভয়ানক গরম। ফলে পথঘাট জনশূন্য। চারদিকে শুধু পাথরের চাই, ধূধূ বালি আর ঝলসে যাওয়া শুকনাে গাছপালা। এরকম
পরিস্থিতিতেও গুরু নানক যখন আত্মমগ্ন হয়ে হেঁটে যাচ্ছেন তখনই তার সঙ্গী শিষ্য মর্দানার জল তেষ্টা পায়। নানক তাঁকে অপেক্ষা করতে বললেও মানার জলের জন্য কাতরতা চলতেই থাকে। গুরু নানক তাঁকে বােঝানাের চেষ্টা করেন যে এই জলের অভাব আসলে ঈশ্বরেরই অভিপ্রায়। কিন্তু তৃষার্ত মর্দানা আর এগােতে রাজি হয় না। ফলে নানক গভীর সমস্যায় পড়ে যান। মর্দানার এই একগুঁয়েমি একই সঙ্গে তার হাসি আর বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি দেখে তিনি ধ্যানে বসেন এবং চোখ খুলে দেখেন মর্দানা জল থেকে তোলা মাছের মতােই ছটফট করছে। গুরু নানক তখন ঠোটে হাসি ফুটিয়ে বলেন যে, পাহাড়ের চুড়ােয় বলী কান্ধারী নামে এক দরবেশ কুটির বেঁধে থাকেন এবং তার কুয়াে ছাড়া সেখানে আর কোথাও জল নেই। শুনেই মর্দানা সেদিকে ছুটে যায়। তৃষার্ত মর্দানা মাথায় গনগনে রােদ নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে পাহাড়ে উঠতে থাকে। এভাবেই সে বলী কান্ধারীর কাছে পৌঁছােয়।

৩ প্রশ্নঃ “ঠিক হল, ট্রেনটা থামানাে হবে।”—কোন্ ট্রেনের কথা বলা হয়েছে? সেটি কীভাবে থামানাে হয়েছিল?***
অথবা,
“মায়ের বান্ধবী আমাদের সমস্ত ঘটনাটা শােনালেন” - ঘটনাটি উল্লেখ করাে?
ロ কর্তার সিং দুগ্গাল রচিত ‘অলৌকিক’ গল্পে একটি বিশেষ ট্রেনের কথা বলা হয়েছে। ফিরিঙ্গি অর্থাৎ ইংরেজ শাসকদের নির্দেশে সেই ট্রেনে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও দেশপ্রেমিকদের বন্দি করে
নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল দেশের বিভিন্ন শহরে। অভুক্ত ও পিপাসার্ত ভারতীয়দের নিয়ে কোথাও না থেমে,
পাঞ্জাসাহেবের উপর দিয়েই সেই ট্রেনটির যাওয়ার কথা। এখানে সেই ট্রেনের কথা বলা হয়েছে।

পাঞ্জাসাহেব থেকে দূরে অবস্থিত এক শহরে নিরস্ত্র  ভারতীয়দের উপর ফিরিঙ্গিরা গুলি চালালে অনেকেই নিহত বা আহত হয়। যারা ধরা পড়ে তাদের বন্দি করে দেশের অন্যান্য শহরের জেলে পাঠানাে হয়। কয়েদিদের নিয়ে একটি ট্রেন পাঞ্জাসাহেবের উপর দিয়েই যাবে, কিন্তু কোথাও থামবে না—যাতে অভুক্ত এবং পিপাসার্ত বন্দিদের কেউ খাদ্য-পানীয় না দিতে পারে। এ খবর রটে যাওয়ায় পাঞ্জাসাহেবের
লােকেরা স্টেশন মাস্টারের কাছে এবং অন্য কর্তাব্যক্তিদের কাছে টেলিফোন, টেলিগ্রামে ট্রেন থামানাের আবেদন জানায়। কিন্তু সব আবেদন-নিবেদনই বিফল হয়। ট্রেন থামাতে বদ্ধপরিকর শহরবাসী তারা 
ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত কয়েদিদের জন্য স্টেশনে রুটি, পায়েস, লুচি, ডাল মজুত করে। তারপর ট্রেন আসার কিছু আগে রেললাইনে শুয়ে পড়ে নারী- -পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ। শেষপর্যন্ত ট্রেন থামলেও বহু মানুষের বুকের ওপর দিয়ে ট্রেনের চাকায় গুড়িয়ে যায়। জীবিতরা ‘জয় নিরঙ্কার’ ধ্বনিতে বাতাস মুখরিত করে তােলে। কিছু তাজা প্রাণ আর রক্ত স্রোতের বিনিময়ে বেঁচে যায় অনেকগুলি প্রাণ! এভাবেই সেদিন।
ট্রেনটিকে থামানাে হয়েছিল।

৪ প্রশ্নঃ “ঝড়ের বেগে ছুটে আসা ট্রেন থামানাে গেল, পাথরের চাই থামানাে যাবে না কেন?”—ট্রেন থামানাের দরকার হয়েছিল কেন? ট্রেন কীভাবে থামানাে হয়েছিল?***
ロ কর্তার সিং দুগ্গালের লেখা ‘অলৌকিক’ গল্পটিতে পাঞ্জাসাহেবে ট্রেন থামানাের এক অলৌকিক আখ্যান বর্ণিত হয়েছে। পরাধীন ভারতবর্ষে খিদে-তেষ্টায় কাতর স্বাধীনতা আন্দোলনকারী বন্দিদের জল-রুটি দেওয়ার জন্য পাঞ্জাসাহেবে ট্রেন থামানাে হয়েছিল।

পাঞ্জাসাহেব গুরু নানকের শিষ্য মর্দানার তৃষ্ণার্ত নিবারণের জন্য প্রসিদ্ধ। সেই পাঞ্জাসাহেবের মানুষদের কাছে এক আশ্চর্য বার্তা এসে পৌছােয়। দূরের শহরে ফিরিঙ্গিরা গুলি চালানােয় বহু নির্দোষ ভারতীয়’র মৃত্যু হয়েছে এবং জীবিতদের বন্দি করে অন্য শহরের জেলে পাঠাতে ট্রেনে তােলা হয়েছে। কয়েদিরা খিদে-তেষ্টায় কাতর। কিন্তু ট্রেন কোথাও থামানাের নিয়ম নেই। নানকের ইতিহাস স্পর্শিত পাঞ্জাসাহেবের অধিবাসীরা এ নির্দেশ মানেনি। তারা প্রথমে আবেদন-নিবেদনের পথে গেল। স্টেশনমাস্টার মারফত টেলিফোন-টেলিগ্রাম গেল। ফিরিঙ্গিরা তবু মানল না। জল-রুটি না পেয়ে খিদেয় কাতর বন্দিদের কাছে খাবার পৌঁছােতে পাঞ্জাসাহেবের অধিবাসীরাও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়। তারা স্টেশনে রুটি, পায়েস, লুচি-ডাল-এর ব্যবস্থা করে রাখে।

কাহিনিটি লেখক জেনেছিলেন তার মায়ের বান্ধবীর থেকে। এ কাহিনি বাস্তব হলেও লেখকের কাছে এ এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা। পাঞ্জাসাহেবের অধিবাসীরা বন্দিদের খাদ্য-পানীয় দিতে ট্রেন থামানাের জন্য এক আশ্চর্য উপায় নেয়, যা ঘটনাক্রম অনুসারে অলৌকিক কাহিনিতে পরিণত হয়। তারা নিজেরাই ট্রেন লাইনে শুয়ে পড়ে। সেইসময় পাঞ্জাসাহেবের বাতাস ‘জয় নিরঙ্কার’ ধ্বনিতে মুখরিত। তীক্ষ্ণ হুইসেল দিতে দিতে ছুটন্ত ট্রেন তাদের উপর দিয়ে কিছু দূর চলে যায়। তারপর বাধ্য হয়ে থামে। নিজেদের জীবন দিয়ে পাঞ্জাসাহেবের অধিবাসীরা এভাবেই ট্রেন থামায়।

৫ প্রশ্নঃ “চোখের জলটা তাদের জন্য”— বক্তা  কাদের জন্য চোখের জল উৎসর্গ করেছেন? যে ঘটনায় চোখে জল এসেছিল সেই ঘটনাটি সংক্ষেপে লেখাে?***
অথবা, “আমার চোখে জল” – বক্তার চোখে জল আসার কারণ আলোচনা করো?
ロ উত্তর কর্তার সিং দুগ্গালের লেখা ‘অলৌকিক’ গল্পে প্রশ্নপ্রদত্ত মন্তব্যটি পাই। গল্পকথক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জল, রুটি দেওয়ার জন্য চলন্ত ট্রেন থামাতে গিয়ে বেপরােয়া জীবনদানকারী পাঞ্জাসাহেবের অধিবাসীদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের কথা শুনে বিস্ময় হয়ে চোখের জল উৎসর্গ করেছেন।

 জল আসার কারণ : পাঞ্জাসাহেব থেকে দূরে অবস্থিত এক শহরে নিরস্ত্র  ভারতীয়দের উপর ফিরিঙ্গিরা গুলি চালালে অনেকেই নিহত বা আহত হয়। যারা ধরা পড়ে তাদের বন্দি করে দেশের অন্যান্য শহরের জেলে পাঠানাে হয়। কয়েদিদের নিয়ে একটি ট্রেন পাঞ্জাসাহেবের উপর দিয়েই যাবে, কিন্তু কোথাও থামবে না—যাতে অভুক্ত এবং পিপাসার্ত বন্দিদের কেউ খাদ্য-পানীয় না দিতে পারে। এ খবর রটে যাওয়ায় পাঞ্জাসাহেবের লােকেরা স্টেশন মাস্টারের কাছে এবং অন্য কর্তাব্যক্তিদের কাছে টেলিফোন, টেলিগ্রামে ট্রেন থামানাের আবেদন জানায়। কিন্তু সব আবেদন-নিবেদনই বিফল হয়। ট্রেন থামাতে বদ্ধপরিকর শহরবাসী তারা  ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত কয়েদিদের জন্য স্টেশনে রুটি, পায়েস, লুচি, ডাল মজুত করে। তারপর ট্রেন আসার কিছু আগে রেললাইনে শুয়ে পড়ে নারী- -পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ। শেষপর্যন্ত ট্রেন থামলেও বহু মানুষের বুকের ওপর দিয়ে ট্রেনের চাকায় গুড়িয়ে যায়। জীবিতরা ‘জয় নিরঙ্কার’ ধ্বনিতে বাতাস মুখরিত করে তােলে। কিছু তাজা প্রাণ আর রক্ত স্রোতের বিনিময়ে বেঁচে যায় অনেকগুলি প্রাণ! এই ঘটনায় বক্তার চোখে জল এসে ছিলো। 
_________________________

পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ :
         গারো পাহাড়ের নীচে সাজেশন

১ প্রশ্নঃ “তাই প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠল।”—প্রজারা বিদ্রোহী হয়েছিল কেন? কীভাবে তারা সেই বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিয়েছিলো?***
অথবা, “তাই প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠল। - প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল কেন? এই বিদ্রোহের ফল কী
আলোচনা করো?

২ প্রশ্নঃ 'গারাে পাহাড়ের নীচে' নামক রচনাটি অবলম্বনে জমিদারের টাকা আদায়ের চিত্রটি বর্ণনা করাে?
   অথবা, 
“জমিদারকে ‘টঙ্ক’ দিতে গিয়ে চাষিরা ফকির হয়।” প্রশ্নোত অংশে লেখক কী বলতে চেয়েছেন আলােচনা  করাে? 

৩ প্রশ্নঃ কিন্তু হাতি-বেগার আর চলল না।”—হাতি-বেগার আইন কী ? তা আর চলল না কেন?***

গারো পাহাড়ের নীচে সাজেশন উত্তর সেট 

১ প্রশ্নঃ  “তাই প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠল।”—প্রজারা বিদ্রোহী হয়েছিল কেন? কীভাবে তারা সেই বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিয়েছিলো?***
      অথবা, 
“তাই প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠল। - প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল কেন? এই বিদ্রোহের ফল কী আলোচনা করো?
ロ প্রশ্নোত অংশটি সুভাষ মুখােপাধ্যায় রচিত 'গারাে পাহাড়ের নীচে’ শীর্ষক রচনাংশ থেকে গৃহীত হয়েছে। পাঠ্যাংশে জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। জমিদারের পাইক-বরকন্দাজরা প্রজাদের উৎপাদিত ফসলের বেশিরভাগ অংশ নিয়ে যেত নানা অছিলায়। জমিদারকে খাজনা তথা 'টঙ্ক’ দিতে গিয়ে প্রজারা নিঃস্ব হয়ে পড়ত,শেষ অন্নসংস্থান হারাত। এর উপর আবার জমিদারেরা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কিছু আইন তৈরি করেছিল। এমনই ছিল ‘হাতিবেগার’ আইন। হাতি শিকারের শখ মেটাতে জমিদার পাহাড়ে মাচা বেঁধে সৈন্যসামন্ত নিয়ে বসতেন। অন্যদিকে সকল বয়সি প্রজারা খাবার নিয়ে জঙ্গলে যেত এবং জঙ্গলে হাতি আছে বলে তারা চারিদিকে ঘিরে থাকত। এইভাবে জীবন বিপন্ন করে জঙ্গলে থাকতে থাকতে তাদের অনেকের সাপের কামড়ে বা বাঘের আক্রমণে মরতে হত। জমিদারের হাতি শিকারের শখ পূরণ করতে নিরীহ প্রজাদের বাধ্য হয়ে অকালে প্রাণ দিতে হত। এইভাবে চলতে চলতে একসময় প্রজারা অমানবিক ‘হাতিবেগার’-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিল।

জমিদার জোর করে প্রজাদের কাছ থেকে টাকা কিংবা ফসল আদায় করত। প্রজারা সেটা মেনে নিলেও হাতিবেগার আইনকে মানতে পারেনি। হাতিবেগার আইনের মতাে অমানবিক আইনের প্রতিবাদে
হাতি-বেগারের সামান্য মানুষগুলাে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। প্রতিবাদে বিদ্রোহের জমিদারের ক্ষমতার কাছে তারা পেরে উঠবে না জেনেও তারা পিছনে হটতে চাননি। গােরাচাঁদ মাস্টার তাদের বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। পরগনায় পরগনায় হয় মিটিং। জমিদারের সঙ্গে লড়াই চালানাের জন্য কামারশালায় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র তৈরি হতে থাকে কিন্তু তারা অত্যন্ত দুর্বল। শেষপর্যন্ত জমিদারের সেপাইদের কাছে প্রজাদের পরাজয় ঘটে। আপাতদৃষ্টিতে এই বিদ্রোহ ফলদায়ক না হলেও 'হাতিবেগার’ আইনকে তারা বন্ধ করে। লেখক বলেছেন এসব গল্প চৈতননগর, হিঙুলকোণার খগ মােড়ল, আমুতাে মােড়লের বংশধরদের মুখে শােনা যায়। শুধু প্রজাদের দুঃখকষ্টের কথাই নয়, লেখক তাদের প্রতিবাদ-প্রতিরােধকে এভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।


২ প্রশ্নঃ 'গারাে পাহাড়ের নীচে' নামক রচনাটি অবলম্বনে জমিদারের টাকা আদায়ের চিত্রটি বর্ণনা করাে?***
   অথবা, 
“জমিদারকে ‘টঙ্ক’ দিতে গিয়ে চাষিরা ফকির হয়।” প্রশ্নোত অংশে লেখক কী বলতে চেয়েছেন আলােচনা  করাে?
ロ‘গারাে পাহাড়ের নীচে’ শীর্ষক রচনাটিতে জমিদারদের টাকা আদায়ের চিত্রটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন লেখক। সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করে ফসল ফলায় গ্রামবাসীরা। নিজেদের
ক্ষুন্নিবৃত্তির সংস্থানটুকুও শেষপর্যন্ত হারাতে হয় তাদের। মাঠ থেকে ফসল ঘরে তােলার পূর্বমুহূর্তেই জমিদারদের পাইক-বরকন্দাজ এসে হাজির হয়। যে সমৃদ্ধি ও পরিপূর্ণতার আশায় তারা ফসল ফলাতে
উদ্যোগী হয়, সেই ফসল ঘরে তােলার আগেই শূন্য হয়ে পড়ে। এই প্রসঙ্গে লেখকের জবানিতে তাদের উক্তি
‘তারপর পালে আসে পেয়াদা
খালি পেটে তাই লাগছে ধাঁধা।

গাঁয়ের আলবাধা রাস্তা ধরে সদর্পে এগিয়ে আসে জমিদারের পােষ্যপুত্রের দল। লােহার খুর লাগানাে নাগরার খটাখট শব্দ সবাইকে বিপদসংকেতের জানান দেয়। হাতে বাঁশের মােটা লাঠি নিয়ে সজোরে আওয়াজ করতে করতে এগিয়ে আসে তারা। ছােটো ছােটো ছেলের দল ভয়ে মায়ের আঁচল চেপে ধরে। খিটখিটে বুড়িরা জমিদারের অনুচরদের শাপ-শোপান্ত করতে থাকে। কিন্তু কোনাে কিছুর পরােয়া না করেই সেই পাওনা আদায়কারীরা পাওনা নিয়ে চলে যায়। জমিদারের পাওনা মেটাতে গিয়ে চাষিরা শেষমেশ নিঃস্ব হয়। পরিশ্রমের অনুগ্রহণ করা হয় না।

৩ প্রশ্নঃ “কিন্তু হাতি-বেগার আর চলল না।”—হাতি-বেগার আইন কী ? তা আর চলল না কেন?***
ロ সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের রিপাের্টাজধর্মী রচনা ‘আমার বাংলার' ‘গারাে পাহাড়ের নীচে' শিরােনামাঙ্কিত অংশে হাতি-বেগার’ প্রসঙ্গটি রয়েছে। ময়মনসিংহ-র গারাে পাহাড় অঞ্চলে প্রাচীনকালে প্রচলিত এক
দমনপীড়নমূলক জমিদারি আইনের নাম হাতিবেগার। তৎকালীন জমিদারদের হাতি ধরার শখপূরণের জন্য পাহাড়ে মাচা বেঁধে তার উপরে সেপাইসান্ত্রি নিয়ে নিরাপদে, নিরিবিলিতে বসতেন জমিদার। কিন্তু হাতি সহজে ধরা না দেওয়ায় এই শখ মেটানাের এক ভয়ানক নিয়ম তৈরি হয়। প্রত্যেক গ্রাম থেকে চাল,
চিড়ে বেঁধে প্রজাদের আসতে হত। যে জঙ্গলে হাতি আছে সেখানে। তাদের বেড় দিয়ে দাঁড়াতে হত। যে-কোনাে বয়সের প্রজাকে হাতি বেড় দিতে গিয়ে সাপের কামড়ে, বাঘের আক্রমণে প্রাণ দিতে হলেও প্রথা
অমান্য করার উপায় ছিল না।

দীর্ঘকাল প্রচলিত এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রজারা গােরাচাঁদ মাস্টারের নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘােষণা করে। চাকলায় চাকলায় মিটিং বসে, কামারশালায় তৈরি হতে থাকে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র। লড়াই বাঁধে,জমিদারের পল্টন যুদ্ধে অপটু চাষিদের পরাজিত করে। কিন্তু এ বিদ্রোহের পরিণামে চির-তরে বন্ধ হয়ে যায় হাতিবেগার।

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন