📢 কমপ্লিট সাজেশন - সিরিজ #1 PDF Download Now
: সাজেশন সূচিপত্র :
গল্পঃ | কবিতাঃ | নাটকঃ |
---|---|---|
ভাত | রূপনারানের কূলে | বিভাব |
ভারতবর্ষ | মহুয়ার দেশ | নানা রঙের দিন |
আমি দেখি | ||
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে |
:
গল্প :
☉ গল্প : 'ভাত' পাঁচ মার্কের সাজেশন
১. প্রশ্নঃ “যা আর নেই, যা ঝড়-জল-মাতলার
গর্ভে গেছে তাই খুঁজে খুঁজে উচ্ছব পাগল হয়েছিল।”—দুর্যোগটির বর্ণনা দাও।
দুর্যোগটি উচ্ছবকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?***
অথবা,
তারপর অনেকদিন ধরে ঘরের চালের নিচে থেকে কোন সাড়া পাবার আশায় উচ্ছব পাগল হয়ে থাকে। কোন ঘটনার পর থেকে উচ্ছব পাগল হয়ে যায় সেটির বর্ণনা দাও?
অথবা,
তারপর অনেকদিন ধরে ঘরের চালের নিচে থেকে কোন সাড়া পাবার আশায় উচ্ছব পাগল হয়ে থাকে। কোন ঘটনার পর থেকে উচ্ছব পাগল হয়ে যায় সেটির বর্ণনা দাও?
২. প্রশ্নঃ “এসংসারে সব কিছুই চলে বড়াে পিসিমার নিয়মে।”—বড়াে পিসিমা কে? গল্পে তার চরিত্রের কী পরিচয় পাওয়া যায়?***
৩. প্রশ্নঃ “একদিন তুমুল ঝড় বৃষ্টি গল্প অনুযায়ী ঝড়জল”- বন্যা রাত্রির বর্ণনা দাও? ***
অথবা,
“তারপর মনে পড়ে যায় সেই রাতে ঝড় হয়”- কার মনে পড়ে যায় সে দুর্যোগ রাত্রির বর্ণনা দাও?
অথবা,
“উচ্ছব বলে চলছিল ভগমান! ভগমান! ভগমান! কিন্তু এমন দুর্যোগে ভগবানও কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমােন বােধ করি।”—এমন দুর্যোগে’ বলতে যে দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে তার বর্ণনা দাও। বক্তার কেন মনে হয়েছে ভগবান এমন দুর্যোগে কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমােন?
৪. প্রশ্নঃ 'ভাত' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো?***
☉ গল্প : 'ভাত' পাঁচ মার্কের সাজেশন উত্তর সেট
১. প্রশ্নঃ “যা আর নেই, যা ঝড়-জল-মাতলার
গর্ভে গেছে তাই খুঁজে খুঁজে উচ্ছব পাগল হয়েছিল।”—দুর্যোগটির বর্ণনা দাও।
দুর্যোগটি উচ্ছবকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?***
অথবা,
তারপর অনেকদিন ধরে ঘরের চালের নিচে থেকে কোন সাড়া পাবার আশায় উচ্ছব পাগল হয়ে থাকে। কোন ঘটনার পর থেকে উচ্ছব পাগল হয়ে যায় সেটির বর্ণনা দাও?
⦿ উৎস : 'ভাত' গল্পটি সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর 'শ্রেষ্ঠ গল্প' কাব্য গ্রন্থের অন্তর্গত। 'ম্যানিফেস্টো' নামক পত্রিকায় গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে
ロ মহাশ্বেতা দেবী রচিত 'ভাত’ গল্পে সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের অধিবাসী উচ্ছব নাইয়ার জীবনে মাতলা নদীর বন্যা চরম দুর্বিপাক ডেকে এনেছিল। সেই দুর্যোগের রাতে অনেকদিন বাদে উচ্ছব ও তার বউ-ছেলে-মেয়ে পেটভরে খেয়েছিল। তারপরেই শুরু হয় তুমুল ঝড়বৃষ্টি। ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শীতে আর ভয়ে কাপছিল উচ্ছবের বউ। অন্যদিকে ঘরের ধারক খুটিকে শক্ত করে ধরে ইষ্টনাম জপ করছিল উচ্ছব। ঝড়বৃষ্টিতে উন্মত্ত মাতলা নদীর জল তাদের সংসার ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে ছিল।
বন্যায় উচ্ছবের ভিটেমাটি, বউ-ছেলে-মেয়ে ভেসে গিয়েছিল, ভেসে গিয়েছিল সরকারের কাছে জমির জন্য করা আবেদনপত্রের নকলও। সর্বস্ব হারিয়ে শুধুমাত্র গাছের সঙ্গে আটকে থেকে বেঁচে গিয়েছিল উচ্ছব। তারপর কয়েকদিন ধরে দিশেহারা উচ্ছব পাগলের মতাে তার পরিবারকে খুঁজলেও ঘরের চালের নীচ থেকে কোনাে সাড়া পায় না। শুধু সে নয়, সেই রাতের ভয়াবহ বন্যায় উচ্ছবের মতাে অনেক দরিদ্র পরিবারগুলিরও চরম ক্ষতি হয়েছিল। পরদিন সকাল থেকে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে স্ত্রী-ছেলে-মেয়ের সাড়া পাওয়ার আশা করে তার কয়েকদিন কেটে যায়। তার গ্রামের সাধন দাশ তাকে বােঝাতে চাইলেও উচ্ছব বােঝেনি। কেবলই ঘরের চারপাশে সে ঘুরে ঘুরে তার হারিয়ে যাওয়া পরিবারকে ডাকতে থাকে।
অথবা,
তারপর অনেকদিন ধরে ঘরের চালের নিচে থেকে কোন সাড়া পাবার আশায় উচ্ছব পাগল হয়ে থাকে। কোন ঘটনার পর থেকে উচ্ছব পাগল হয়ে যায় সেটির বর্ণনা দাও?
⦿ উৎস : 'ভাত' গল্পটি সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর 'শ্রেষ্ঠ গল্প' কাব্য গ্রন্থের অন্তর্গত। 'ম্যানিফেস্টো' নামক পত্রিকায় গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে
ロ মহাশ্বেতা দেবী রচিত 'ভাত’ গল্পে সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের অধিবাসী উচ্ছব নাইয়ার জীবনে মাতলা নদীর বন্যা চরম দুর্বিপাক ডেকে এনেছিল। সেই দুর্যোগের রাতে অনেকদিন বাদে উচ্ছব ও তার বউ-ছেলে-মেয়ে পেটভরে খেয়েছিল। তারপরেই শুরু হয় তুমুল ঝড়বৃষ্টি। ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শীতে আর ভয়ে কাপছিল উচ্ছবের বউ। অন্যদিকে ঘরের ধারক খুটিকে শক্ত করে ধরে ইষ্টনাম জপ করছিল উচ্ছব। ঝড়বৃষ্টিতে উন্মত্ত মাতলা নদীর জল তাদের সংসার ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে ছিল।
বন্যায় উচ্ছবের ভিটেমাটি, বউ-ছেলে-মেয়ে ভেসে গিয়েছিল, ভেসে গিয়েছিল সরকারের কাছে জমির জন্য করা আবেদনপত্রের নকলও। সর্বস্ব হারিয়ে শুধুমাত্র গাছের সঙ্গে আটকে থেকে বেঁচে গিয়েছিল উচ্ছব। তারপর কয়েকদিন ধরে দিশেহারা উচ্ছব পাগলের মতাে তার পরিবারকে খুঁজলেও ঘরের চালের নীচ থেকে কোনাে সাড়া পায় না। শুধু সে নয়, সেই রাতের ভয়াবহ বন্যায় উচ্ছবের মতাে অনেক দরিদ্র পরিবারগুলিরও চরম ক্ষতি হয়েছিল। পরদিন সকাল থেকে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে স্ত্রী-ছেলে-মেয়ের সাড়া পাওয়ার আশা করে তার কয়েকদিন কেটে যায়। তার গ্রামের সাধন দাশ তাকে বােঝাতে চাইলেও উচ্ছব বােঝেনি। কেবলই ঘরের চারপাশে সে ঘুরে ঘুরে তার হারিয়ে যাওয়া পরিবারকে ডাকতে থাকে।
জমিহীন কৃষক উচ্ছবের সরকারের কাছে জমি চেয়ে দরখাস্তের নকল রাখা ছিল একটি
বেবিফুডের কৌটোয়। সেটিও বন্যার জলে ভেসে যায়। একরাতের মধ্যে সব কিছু
হারিয়ে নিজের প্রবৃত্তির তাগিদ অনুভব করতেও ভুলে যায় উচ্ছব। তাই সরকারি
লঙ্গরখানায় "রান্না খিচুড়ি তার খাওয়া হয়নি।" পরে শােক সামলে যতদিনে সে
ধাতস্থ হল, ততদিনে লঙ্গরখানায় রান্না খিচুড়ি দেওয়া বন্ধ। ঘটনার অভিঘাতে
সে যখন প্রায় বাহ্যজ্ঞান শূন্য, ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য তখনই উচ্ছব
কলকাতায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
২. প্রশ্নঃ “এসংসারে সব কিছুই চলে বড়াে পিসিমার নিয়মে।”—বড়াে পিসিমা কে? গল্পে তার চরিত্রের কী পরিচয় পাওয়া যায়?***
⦿ উৎস : 'ভাত' গল্পটি সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর 'শ্রেষ্ঠ গল্প' কাব্য গ্রন্থের অন্তর্গত 'ম্যানিফেস্টো' নামক পত্রিকায় গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে
ロ মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পে বড়াে বাড়ির সর্বময় কত্রী বড়াে পিসিমা। তিনি অবিবাহিতা, বয়স্ক মহিলা। সংসারের প্রতি রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ববােধ। এই সংসার ঠেলার কারণেই নাকি তার বিয়ে দেওয়া হয়নি। বড়াে বাড়ির লােকেরা বলে বড়াে পিসিমার বিয়ে হয়েছে ঠাকুরের সঙ্গে, তিনি দেবতার সেবিকা।
◓ পিসিমার চরিএ : পিসিমার চরিত্রে সহজাত নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা লক্ষ করা যায়। বড়াে বাড়িতে কেউ তার কথার বিরুদ্ধাচরণ করে না—এমনই তার নেতৃত্ব দানের ব্যক্তিত্ব। তিনি চিরকাল সংসারের গুরুত্বটা দেখেছেন বাড়িতে মিস্তিরি লাগিয়েছেন। আবার বুড়াে কর্তার মরণকালে হােমযজ্ঞের আয়ােজন করা হলে সেখানেও নেতৃত্ব দিয়েছেন পিসিমা। বহুবছর ধরে সংসারের নিয়মকানুন মেনে লগ্ন হয়ে থাকার জন্য বড়াে বাড়িতে তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বড়াে বাড়ির বড়াে পিসিমা সেবাপরায়ণা। তিনি বয়স্ক দাদার সেবা করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। আর পাঁচজন প্রবীণার মতােই তার মন কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তাই বড়াে বাড়িতে হােমযজ্ঞের সেবাপরায়ণতা, আয়ােজন হলে তিনি নিয়মকানুন সংস্কারাচ্ছন্নতা ও সঠিকভাবে পালনের ওপর নজর দিয়েছেন। যজ্ঞ করার পরেও বুড়াে কর্তা মারা গেলে তান্ত্রিক এবং ছােট বউয়ের বাবাকে দোষারােপ করেছেন। তবে পিসিমার চরিত্রে মানবিকতার প্রকাশ ঘটেছে। যদিও সংস্কারের বশে যজ্ঞ শেষ না হলে উচ্ছবকে খেতে দেওয়ার কথা বলেননি, তবু দরিদ্র উচ্ছবের প্রতি তার সহানুভূতিই প্রকাশিত হয়েছে। বড়াে বউয়ের কথার উত্তরে তিনি বলেছেন- “তােমরা তাে দশটা পয়সা দিতে পারবে না প্রাণে ধরে। এই চদ্দো দফায় কাজ করবে, পেটে দুটো খাবে বই তাে নয়।” সংসারের অর্থনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে পিসিমা বাসিনীকে দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে চাল বিক্রি করেছেন। মােটকথা আলােচ্য গল্পে জীবনের যে চরম বাস্তব রূপ ফুটে উঠেছে সেখানে বড়ো পিসিমার চরিত্র টি গল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
৩. প্রশ্নঃ “একদিন তুমুল ঝড় বৃষ্টি গল্প অনুযায়ী ঝড়জল”- বন্যা রাত্রির বর্ণনা দাও? ***
অথবা,
“তারপর মনে পড়ে যায় সেই রাতে ঝড় হয়”- কার মনে পড়ে যায় সে দুর্যোগ রাত্রির বর্ণনা দাও?
অথবা,
“উচ্ছব বলে চলছিল ভগমান! ভগমান! ভগমান! কিন্তু এমন দুর্যোগে ভগবানও কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমােন বােধ করি।”—এমন দুর্যোগে’ বলতে যে দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে তার বর্ণনা দাও। বক্তার কেন মনে হয়েছে ভগবান এমন দুর্যোগে কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমােন?
⦿ উৎস : 'ভাত' গল্পটি সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর 'শ্রেষ্ঠ গল্প' কাব্য গ্রন্থের অন্তর্গত 'ম্যানিফেস্টো' নামক পত্রিকায় গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে
ロ মহাশ্বেতা দেবী রচিত 'ভাত’ গল্পে সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের অধিবাসী উচ্ছব নাইয়ার জীবনে মাতলা নদীর বন্যা চরম দুর্বিপাক ডেকে এনেছিল। সেই দুর্যোগের রাতে অনেকদিন বাদে উচ্ছব ও তার বউ-ছেলে-মেয়ে পেটভরে খেয়েছিল। তারপরেই শুরু হয় তুমুল ঝড়বৃষ্টি। ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শীতে আর ভয়ে কাপছিল উচ্ছবের বউ। অন্যদিকে ঘরের ধারক খুটিকে শক্ত করে ধরে ইষ্টনাম জপ করছিল উচ্ছব। ঝড়বৃষ্টিতে উন্মত্ত মাতলা নদীর জল তাদের সংসার ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে ছিল।
বন্যায় উচ্ছবের ভিটেমাটি, বউ-ছেলে-মেয়ে ভেসে গিয়েছিল, ভেসে গিয়েছিল সরকারের কাছে জমির জন্য করা আবেদনপত্রের নকলও। সর্বস্ব হারিয়ে শুধুমাত্র গাছের সঙ্গে আটকে থেকে বেঁচে গিয়েছিল উচ্ছব। তারপর কয়েকদিন ধরে দিশেহারা উচ্ছব পাগলের মতাে তার পরিবারকে খুঁজলেও ঘরের চালের নীচ থেকে কোনাে সাড়া পায় না। শুধু সে নয়, সেই রাতের ভয়াবহ বন্যায় উচ্ছবের মতাে অনেক দরিদ্র পরিবারগুলিরও চরম ক্ষতি হয়েছিল।
◓ বক্তার মনে হওয়ার কারণ : মানুষের ক্ষমতা যেখানে শেষ হয়, ঈশ্বর বিশ্বাসের জন্ম সেখানেই। আদিম যুগ থেকে মানুষ যে-সমস্ত শক্তিকে ভয় করত, তাদেরই ঈশ্বরজ্ঞানে পূজা করত। প্রকৃতির রােষের কাছে অসহায় উচ্ছব রক্ষা পাওয়ার জন্য ভগবানকে স্মরণ করেছিল। দীনদরিদ্র, ভাগ্যবিড়ম্বিতের কাছে ঈশ্বরের চেয়ে বড়াে আশ্রয় আর নেই। কিন্তু ঈশ্বরও সেই দুর্যোগের রাতে উচ্ছবের পরিবারকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেননি। উদাসীন ক্ষমতাশালীর মতাে ঈশ্বর যেন সেদিন ঘুমােচ্ছিলেন। অসহায়, হতদরিদ্রদের কোনাে গুরত্বই তার কাছে নেই। সেদিন প্রাকৃতিক চরম প্রতিকূলতায় সর্বস্বান্ত অসহায় উচ্ছব তাই উদ্ধৃত অংশটি মনে করেছিল।
৪. প্রশ্নঃ 'ভাত' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো?***
⦿ উৎস : 'ভাত' গল্পটি সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর 'শ্রেষ্ঠ গল্প' কাব্য গ্রন্থের অন্তর্গত 'ম্যানিফেস্টো' নামক পত্রিকায় গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে
ロ ভূমিকা : সাহিত্যিক পরম যত্নে ও সচেতন মন নিয়ে তাঁর সৃষ্টির নামকরণ করে থাকেন। নামকরণের মধ্য দিয়ে সাহিত্যের বিষয়ের আগাম পূর্বাভাস দেন লেখক। 'ভাত’ গল্পের নামকরণে মহাশ্বেতা দেবী বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েও বৃহৎ ব্যঞ্জনা রচনা করেছেন। বাদা অঞ্চলের ভাগচাষী ভূমিহীন 'উচ্ছব নাইয়ার’নিজের বলতে ছিল স্ত্রী, মেয়ে চন্নুনী আর ছােটো খােকা, আর ছিল সতীশ বাবুর নাতির ‘ফুট’ খাওয়া বাতিল কৌটোয় সযত্নে জমিয়ে রাখা ও ‘জমি চেয়ে দরখাস্তের নকল। কিন্তু আচমকা মাতলার জলােচ্ছ্বাসে সর্বস্ব হারিয়ে যায় উচ্ছবের। স্বজনহারা উচ্ছব পাগলের মতাে হয়ে যায়। বউ-ছেলেমেয়েকে খুঁজতে গিয়ে ত্রাণের খিচুড়িটুকুও তার খাওয়া হয়ে ওঠে না। মনিব সতীশবাবুর দান কিংবা দয়া কিছুই জোটে না উচ্ছবের কপালে।
◓ নামকরণের সার্থকতা : 'ভাত' গল্পের মধ্যে নিরুপায় উচ্ছব গ্রাম সম্পর্কিত বােন বাসিনীর মনিবের বাড়িতে চলে আসে দুটো ভাত পাওয়ার আশায়। সে বাড়িতে বুড়াে কর্তাকে আয়ুস্মান করতে হােমযজ্ঞের আয়ােজন করা হয়। যজ্ঞের কাঠ কাটলে ভাত পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ক্ষুধার্ত উচ্ছব রাশিকৃত কাঠ কেটে ফেলে। বড়াে বাড়ির আভিজাত্য আর আড়ম্বর প্রত্যক্ষ করে উচ্ছব, প্রতিমুহূর্তে শিকার হয় উচ্চ বিত্তের- উদাসীনতার ভাতের হুতাশে আড়াই মণ কাঠ কেটেও যজ্ঞ শেষ না হওয়ায় সে ভাত খেতে পায় না। স্বজনহারানাের শােক আর খিদের জ্বালায় সে ঘুমিয়ে পড়ে। পরে বুড়ো কর্তা মারা গেলে তার শবদেহ নিয়ে যাওয়ার পর বড়াে পিসিমা বাসিনীকে সমস্ত ভাত ফেলে দেওয়ার হুকুম দেন। বুদ্ধি করে মােটা চালের ভাতের বড়াে ডেকচিটা নিয়ে উৎসব দৌড়ে স্টেশনে চলে যায় বাসিনীর বারণের বিপক্ষে কামটের মতাে হিংস্র দৃষ্টি হেনে ভাতে হাত ঢুকিয়ে সে স্বর্গসুখ লাভ করে।
ভাত খেতে খেতে সে ‘আসল বাদা’ খুঁজে পাওয়ার স্বপ্নে বিভাের হয়ে যায়। এই ভাতই তার স্বজনের স্মৃতিকে সজীব করে তােলে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে পেতলের ডেকচি চুরির অপবাদে এবং অপরাধে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পেটভরা ভাত খাওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। উচ্ছবের একদিকে বড়াে বাড়িতে ভাতের প্রাচুর্য, অন্যদিকে নিঃস্ব মানুষের ভাতের জন্য ব্যাকুলতা—এই নাটকীয় দ্বন্দ্বেই প্রাণ পায় আলােচ্য গল্পটি। মহাশ্বেতাদেবীর ‘ভাত’ নামকরণ যে বিষয় অনুসারী ও সার্থক তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। মহাশ্বেতা দেবী ভাত’ গল্পে এই ‘ভাত’কে কেন্দ্র করে কেবল একটি মানুষের স্মৃতি-স্বপ্ন-সম্ভাবনার কথা বলেছেন এমনটা নয়, আমাদের শ্রেণিবিভক্ত সমাজব্যবস্থার অর্থনেতিক ভিতটিকেও নাড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। আলােচ্য গল্পে প্রধান চরিত্র উচ্ছব তথা উচ্ছব নাইয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে 'ভাত'-এর দ্বারা। আবার বড়াে বাড়ির যাবতীয় বৈভব কিংবা উচ্ছবের মনিব সতীশ মিস্তিরির অমানুষিক নির্মমতার মূলেও রয়েছে পর্যাপ্ত খাদ্য তথা ভাতের জোগান। 'ভাত’-ই গল্পের গতির প্রধান নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সূত্রে গল্পের 'ভাত' নামকরণটি বিশেষ সার্থকতা লাভ করছে।
☉ গল্প : 'ভারতবর্ষ' পাঁচ মার্কের সাজেশন
১. প্রশ্নঃ “হঠাৎ বিকেলে এক অদভূত দৃশ্য দেখা গেল”- কোন দৃশ্যকে কেন অদভূত বলা হয়েছে?***
অথবা,
“হঠাৎ বিকেলে এক অদভূত দৃশ্য দেখা গেল।” —অদভূত দৃশ্যটি কী? এরপর কী ঘটতে দেখা গেল?
২. প্রশ্নঃ ছােটোগল্প হিসেবে 'ভারতবর্ষ’ গল্পটি কতটা সার্থক হয়ে উঠেছে, তা আলােচনা করাে?***
অথবা,
'ভারতবর্ষ’ গল্পটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো?
৩. প্রশ্নঃ “দেখতে-দেখতে প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়াল চারদিকে।” প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার বিবরণ দাও? ***
৪. প্রশ্নঃ “আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে?”—কোন প্রশ্নের উত্তরে বক্তা এ কথা বলেছেন? গল্পানুসারে বক্তার স্বরূপ ব্যাখ্যা করাে? ***
অথবা,
'ভারতবর্ষ গল্পে অদভূত দৃশ্য’-র পরিচয় দাও। উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জনতা চরিত্র বিশ্লেষণ করাে?
☉ গল্প : 'ভারতবর্ষ পাঁচ মার্কের সাজেশন উত্তর সেট
১. প্রশ্নঃ “হঠাৎ বিকেলে এক অদভূত দৃশ্য দেখা গেল”- কোন দৃশ্যকে কেন অদভূত বলা হয়েছে?***
অথবা,
“হঠাৎ বিকেলে এক অদভূত দৃশ্য দেখা গেল।” —অদভূত দৃশ্যটি কী? এরপর কী ঘটতে দেখা গেল?
⦿ উৎস : সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের "ভারতবর্ষ" গল্পটি শ্রেষ্ঠতম ছোটগল্পের অন্তগর্ত। তাঁর এই 'শ্রেষ্ঠ গল্প ' গ্রন্থ থেকে উক্ত গল্পটি গৃহীত হয়েছে।
ロ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের 'ভারতবর্ষ' গল্পে শীতের প্রাকৃতিক দুর্যোগে গ্রামের উপান্তে এক থুথুড়ে বুড়িকে মৃত কল্পনা করে তার দেহকে কিছু হিন্দু মানুষজনের নদীর চড়ায় ফেলে আসার পর বিকেলে আবার তা কিছু মুসলমান মানুষজনদের দ্বারা বাজারে নিয়ে আসার দৃশ্য সাধারণ গ্রামবাসীর কাছে ব্যাপারটা অদভূত মনে হয়।
◓ দৃশ্যটির বর্ণনা : ঘটনার পরবর্তী গতিপথে সাম্প্রদায়িক বিবাদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বুড়ির মৃত দেহ বাজারে এলে হিন্দুরা কী ব্যাপার জানতে চাইলে মুসলমান শববাহকরা উত্তরে জানায় বুড়ি মুসলমান। এ-কথার প্রমাণ স্বরূপ বলে, তারা বুড়িকে বিড়বিড় করে আল্লা বা বিসমিল্লা বলতে শুনেছে। গাঁয়ের মােল্লাসাহেব পর্যন্ত শপথ করে জানান, তিনি নাকি ভোরের নমাজ সেরে যখন বাস ধরতে বাজারের দিকে আসছিলেন, তখনই বুড়ি মারা যেতে যেতে কলেমা পড়ছিল। তাই তিনি বুড়ির মৃতকল্প দেহ চড়ায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্যোগী হয়ে বুড়ির কবরের ব্যবস্থা করতে চলেছেন। গাঁয়ের ভটচাজমশাই তখন সবে বাস থেকে নামছেন। তিনি সেখানে উঁকি দিয়ে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে দেখেশুনে বলেন, তিনি নাকি বুড়িকে স্পষ্ট বলতে শুনেছেন, শ্রীহরি শ্রীহরি শ্রীহরি! বলাবাহুল্য উভয় ব্যক্তির সপক্ষেই বিস্তর সাক্ষ্যপ্রমাণ জুটে গেল। মােল্লাসাহেবের পক্ষে ফজলু সেখ ও করিম ফরাজি এবং ভটচাজমশায়ের পক্ষে নকড়ি নাপিত ও নিবারণ বাগদি যুক্তি-প্রতিযুক্তি খাড়া করে বুড়ির মরদেহকে স্বধর্মের বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করতে লাগল। এখানে এই দৃশ্যকে অদভূত বলা হয়েছে।
২. প্রশ্নঃ ছােটোগল্প হিসেবে 'ভারতবর্ষ’ গল্পটি কতটা সার্থক হয়ে উঠেছে, তা আলােচনা করাে?***
অথবা,
'ভারতবর্ষ’ গল্পটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো?
⦿ উৎস : সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের "ভারতবর্ষ" গল্পটি শ্রেষ্ঠতম ছোটগল্পের অন্তগর্ত। তাঁর এই 'শ্রেষ্ঠ গল্প ' গ্রন্থ থেকে উক্ত গল্পটি গৃহীত হয়েছে।
ロ ছােটোগল্প অর্থে ছােটো আকারের গল্প নয়। এডগার অ্যালানপাে ছােটোগল্প সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘a brief prose narrative requiring from half an hour to one or two hours in its perusal.’ ছােটোগল্পতে যে বৈশিষ্ট্যটি প্রখর উজ্জ্বলতা লাভ করেছে সেটি হল— এর সংহত আয়তনে বৃহত্তর জীবনের উপস্থাপনা, অর্থাৎ কোনাে বিচ্ছিন্ন একক ঘটনার মধ্য দিয়ে একটা সমগ্র জীবনের প্রাধান্যতা দান করা।
◓ নামকরণের সার্থকতা : সাহিত্যে নামকরণ অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। গল্পে দেখা যায়, বাজারকে কেন্দ্র করে একটি গ্রাম। শীতে জলঝড় সহযােগে শৈত্যপ্রবাহ যখন ব্যাপক, চা-দোকানের আড্ডাই যখন দিনযাপনের পুরুষােচিত বিনােদন মাত্র; তখন এক থুখুড়ে বুড়িকে নিয়ে গল্পে ঘনিয়ে ওঠে উত্তেজনা। যার শেষে দেখা যায় বুড়ি প্রকৃত মৃত কী জীবিত তার মীমাংসা না করেই হিন্দু ও মুসলমান গ্রামবাসীরা মৃতদেহের অধিকার নিয়ে ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এই পটভূমিতে দেখতে হবে উক্ত গল্পের নামকরণ কতখানি সার্থক। লেখক তাঁর সৃজিত গল্পে একটি সুপ্রযুক্ত, যথােচিত ও তাৎপর্যময় নামকরণ স্থির করেন; যাতে পাঠকমনে উক্ত গদ্যের পাঠ সম্পর্কে একটি ভাবগ্রাহ্য সেতু নির্মিত হয়। তাই বলা যেতে পারে, শিরােনাম বা নামকরণ বিষয়টি এক্ষেত্রে যথেষ্ট সংবেদনশীল।
লেখক আলােচ্য গল্পে ধর্ম নয়, ধর্মের কলহকে বড়াে হয়ে উঠতে দেখিয়েছেন। যাকে নিয়ে ধর্মের কলহ সে প্রকৃত জীবিত না মৃত, হিন্দু না মুসলমান—গল্পে তার মীমাংসা নেই। গল্পশেষে দেখা যায় বুড়ি শববাহী চ্যাংদোলা থেকে ঠেলে ওঠে। সে সব বিবাদ মাড়িয়ে দূরে মিলিয়ে যায়। পিছনে ছেড়ে রেখে যায় ভারত বর্ষের আবহমান ধর্মবিবাদের অস্তিত্বটিকে। নামকরণে ব্যঙ্গার্থ প্রয়ােগে লেখক সেই ভাবটিকেই স্পষ্ট করেছেন। তাই ব্যঞ্জনাময় এই নামকরণটি নিঃসন্দেহে সার্থকতা লাভ করছে।
৩. প্রশ্নঃ “দেখতে-দেখতে প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়াল চারদিকে।” প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার বিবরণ দাও? ***
⦿ উৎস : সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের "ভারতবর্ষ" গল্পটি শ্রেষ্ঠতম ছোটগল্পের অন্তগর্ত। তাঁর এই 'শ্রেষ্ঠ গল্প ' গ্রন্থ থেকে উক্ত গল্পটি গৃহীত হয়েছে।
ロ ‘ভারতবর্ষ' গল্পে পৌষালি অকাল দুর্যোগে এক থুথুড়ে বুড়ির আগমন ঘটে। তাকে ঘিরেই আবর্তিত হতে থাকে গল্প। বুড়ি মারা গেছে ধরে নিয়ে, সরকারি আইনরক্ষক চৌকিদারের পরামর্শে কিছু হিন্দু বুড়ির সেই মৃত দেহ বাঁশের চ্যাংদোলায় বহন করে শুকনাে নদীর চড়ায় ফেলে আসে। পরে কিছু মুসলমান ওই একই চ্যাংদোলায় দেহটি বাজারে ফিরিয়ে নিয়ে আসায় শুরু হয় গাঁয়ের মােল্লাসাহেব ও ভটচাজমশায়ের নেতৃত্বে দেহ নিয়ে প্রথমে শুরু হয়ে যায় তর্ক। পরে গালিগালাজ অবশেষে বাঁশের চ্যাংদোলা নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের টানাটানি শুরু হওয়ায় চারদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গের কথা বলা হয়েছে।
এই উত্তেজনার পিছনে সাম্প্রদায়িক উসকানি ছিল। তারই ফলশ্রুতিতে সব দোকানগুলাের ঝাঁপ বন্ধ হতে থাকে। চতুর্দিকের গ্রামগুলি থেকে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন সশস্ত্র অবস্থায় ঘটনাস্থলে জড়াে হতে শুরু করে। পিচের রাস্তায় চ্যাংদোলায় শায়িত বুড়ির দেহকে রেখে দু-পাশের জনতা পরস্পরকে গালমন্দ, প্ররােচনামূলক উক্তি-প্রত্যুক্তি করতে থাকে। মােল্লাসাহেব হুঙ্কার ছাড়েন – ‘মুসলিম ভাইসকল! জেহাদ, জেহাদ! নারায়ে তকবির —আল্লাহু আকবর! ভটচাজমশাইও পালটা গর্জে ওঠেন—“জয় মা কালী কি জয়! এসবের মাঝে পড়ে বিপন্ন বেচারা আইনরক্ষক চৌকিদার কখনও ‘সাবধান!’, কখনও “খবরদার!’বলে চেঁচাতে থাকেন। এই আন্তরিক প্রচেষ্টা উন্মত্ত জনতার মনে কোনাে ইতিবাচক সাড়া ফেলতে পারে না। শুধু চৌকিদারের ঠোকা লাঠি থেকে খট খট খট খট’ শব্দ পরিস্থিতিকে আরও বেসামাল করে দেয়।
৪. প্রশ্নঃ “আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে?”—কোন প্রশ্নের উত্তরে বক্তা এ কথা বলেছেন? গল্পানুসারে বক্তার স্বরূপ ব্যাখ্যা করাে?***
অথবা,
'ভারতবর্ষ গল্পে অদভূত দৃশ্য’-র পরিচয় দাও। উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জনতা চরিত্র বিশ্লেষণ করাে?
⦿ উৎস : সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের "ভারতবর্ষ" গল্পটি শ্রেষ্ঠতম ছোটগল্পের অন্তগর্ত। তাঁর এই 'শ্রেষ্ঠ গল্প ' গ্রন্থ থেকে উক্ত গল্পটি গৃহীত হয়েছে।
ロ এক থুথুড়ে বুড়ির মৃত দেহের দখল নিয়ে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ বিবাদোন্মুখ হয়ে ওঠে। বিবাদ যখন রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের রূপ নিতে চলেছে, তখন হঠাৎ বুড়ি নড়েচড়ে উঠে বসলে, তাকে জীবিত দেখে প্রথমে চৌকিদার, পরে দু-দিকের জনতা হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে-- "বুড়ি, তুমি হিন্দু না মুসলমান?" এই প্রশ্নের উত্তরেই বুড়ি শ্লেষের সঙ্গে প্রশ্নে প্রদত্ত কথাগুলি বলে। গল্পে যে থুথুড়ে রাক্ষুসি চেহারার বৃদ্ধাকে লেখক উপস্থাপিত করেছেন, তার নাম-সম্প্রদায়-জাতধর্মের কোনাে প্রসঙ্গ তিনি আনেননি। কিন্তু গল্পে তিনি আবহমান ভারতের পরস্পর বিবাদমান দুই ধর্মসম্প্রদায় হিন্দু-মুসলমানকে জোরালােভাবে উপস্থাপিত করেছেন।
◓ বক্তার স্বরূপ : বৃদ্ধাকে একদিন সকালে নিঃসাড় অবস্থায় কিছু মানুষ এক বট গাছের কর্দমাক্ত খোঁদলে আবিষ্কার করে। ধরে নেয় সে মারা গেছে। সরকারি আইনরক্ষক চৌকিদারের পরামর্শে হিন্দুরা তাকে বাঁশের চ্যাংদোলায় নিয়ে ফেলে আসে নদীর চড়ায়। বিকেলে মুসলমানরা ওই একই চ্যাংদোলায় করে তাকে তুলে আনে বাজারে। গায়ের মােল্লাসাহেব ও ভটচাজমশায়ের ক্রমাগত উসকানিতে বৃদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিবাদ-বিসংবাদ শুরু হয়। ঘটনা যখন চরমে পৌঁছােয় তখনই বুড়ি নড়েচড়ে উঠে বসে। প্রমাণিত হয় সে মরেনি। বৃদ্ধার মুখের ব্যঙ্গমিশ্রিত ও জিজ্ঞাসাসূচক কথাগুলি আসলে লেখকের। তিনি বলতে চেয়েছেন, মানুষ মানুষই। সম্প্রদায় বা ধর্মগত পরিচয়টি তার তটা মূল্যবান নয়। হিন্দু কিংবা মুসলমান কারও গায়ে লেখা থাকে না। মানুষের আসল পরিচয় সে মানুষ। মানবিকতাই তার ধর্ম। তাই মানুষ পরিচয়টিকেই জীবনে প্রধান মূল্য দেওয়া উচিত, বাকি অমানবিক পরিচয় গৌণ। এ পরিচয় একবার মনে ঠাই পেলে মানুষ পূর্ণ হয়ে জেগে উঠবে।
: : কবিতা : :
☉ কবিতাঃ 'রূপনারানের কূলে' পাঁচ মার্কের সাজেশন
১. প্রশ্নঃ “জানিলাম এ জগৎ / স্বপ্ন নয়।বক্তার এই প্রতীতি ব্যাখ্যা করো? ***
অথবা,
'রূপনারানের কূলে' কবিতা অবলম্বনে কবির এই ভাবনার তাৎপর্য লেখাে?
২. প্রশ্নঃ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম/ আপনার রুপ,”—কবি এ কথা কীভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন?***
অথবা,
“রক্তের অক্ষরে দেখিলাম/ আপনার রূপ”– রক্তের অক্ষর কে কবি কি বুঝিয়েছেন? কবি এ কথা কেন বলেছেন
৩. প্রশ্নঃ “সত্য যে কঠিন,”—এই উপলব্ধিতে কবি কীভাবে উপনীত হলেন, তা ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতা অবলম্বনে লেখাে?***
৪. প্রশ্নঃ “আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন” কেন কবি এই জীবনকে দুঃখের তপস্যা বলেছেন? এখানে কবির মনােভাবের যে বিবর্তন ঘটেছে তা উল্লেখ করাে?***
☉ কবিতাঃ 'রূপনারানের কূলে' সাজেশন উত্তর
সেট
১. প্রশ্নঃ “জানিলাম এ জগৎ / স্বপ্ন নয়।বক্তার এই প্রতীতি ব্যাখ্যা করো? ***
অথবা,
'রূপনারানের কূলে' কবিতা অবলম্বনে কবির এই ভাবনার তাৎপর্য লেখাে?
ロ জগৎ ও জীবন নিয়ে অনন্ত জিজ্ঞাসায় ক্লান্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জীবনমৃত্যুর রহস্যকে স্বপ্ন মনে করেছেন। বহু বর্ণময় জীবন কবিকে শুধুই কল্পজগতের মধ্যে নিয়ে গিয়েছে, ফেলে দিয়েছে কুহকের আবর্তে। শ্রান্ত কবি শেষপর্যন্ত কঠোর তপস্যার মাধ্যমে জীবনমৃত্যুর স্বরূপকে খুঁজে পেয়েছেন।
জীবনের ফেনিল সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের মর্মকথা মন্থন করতে গিয়ে দিশাহারা হয়েছেন, হতােদ্যম । হয়েছেন বারবার রূপ-রস-গন্ধে ভরা প্রকৃতির পানে চেয়ে তিনি যেমন মুগ্ধ হয়েছেন, তেমনি জীবন বাস্তবতার রূঢ়তায় আহত হয়েছেন বারবার। দ্বিধাদ্বন্দ্বের দোলাচলে থেকে জীবনমৃত্যুর স্বরূপ কবির কাছে দীর্ঘকাল অধরা মাধুরী হয়েই থেকেছিল। জীবনসত্যের অন্বেষণে কস্মিন বিষাদে ভারাক্রান্ত কবির মন। জীবনকে তার মনে হয়েছে অর্থহীন ঘটনারাজির নিষ্ঠুর প্রবাহধারা মাত্র।
জীবনের অন্তিমলগ্নে পৌছে কবি আবিষ্কার করেছেন কঠোর জীবনসত্যকে। তপস্যায় প্রাপ্ত সে সত্য কবিকে মুগ্ধ করেছে। কবির চিন্তা থেকে অপসৃত হয়েছে কুহকের আবরণ। তাই কবি বলেছেন—
“জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ননয়।"
জীবনের ধ্রুবসত্যকে উপলব্ধি করার তৃপ্তিবােধে জগৎ আর স্বপ্নময় থাকেনি। জীবনকে কল্পলােকের কোনাে আয়ােজন বলে মনে হয়নি। কঠিন হলেও সেই জীবনবাস্তবতাকেই কবি সংগ্রহ করেছেন।
২. প্রশ্নঃ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম/ আপনার রুপ,”—কবি এ কথা কীভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন?
অথবা,
“রক্তের অক্ষরে দেখিলাম/ আপনার রূপ”– রক্তের অক্ষর কে কবি কি বুঝিয়েছেন? কবি এ কথা কেন বলেছেন?
ロ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতা থেকে গহীত উদ্ধৃত অংশে রক্তের অক্ষর বলতে কবি জীবনের কঠোরর বাস্তবতাকে নিদর্শন করেছেন এবং জীবনসত্যের স্বরূপ খুঁজেছেন। সত্য অন্বেষণে মগ্নতার পথ ধরে জীবন বাস্তবতার কষ্টিপাথরে তিনি ব্যক্তিজীবন তথা সমগ্র মানব জীবনের মূল্যায়ন করেছেন। কবির অন্তহীন নিরীক্ষার সমাপতন হয়েছে নিদারুণ ত্যাগের বিনিময়ে। জীবনের গতিময়তায় বাস্তবের রূঢ়তা কবিকে বারবার বিহুল করেছে, আঘাতে আঘাতে প্রতিহত করেছে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে। সেই চরমতম সংকটের সময়ে কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন থেকে কবি সত্য -সত্যের স্বরূপ অন্বেষণে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছেছেন জীবনের অন্তিমলগ্নে। গভীর অধ্যবসায় নিয়ে জীবন সায়াহ্নে এসে কবি সত্যের জন্য অপেক্ষমান। বিগত জীবনরেখার পানে দৃষ্টিক্ষেপ করে কবি কঠিন-কঠোরের আঘাতে রক্তাক্ত অতীতকে প্রত্যক্ষ করেছেন। ব্যথায় আর বিফলতায় কবিহৃদয় অন্তর ও বাহিরে হয়েছে ক্ষতবিক্ষত। সেই ভগ্নহৃদয়ে অন্তহীন দুঃখের সাগর মন্থন করে অবশেষে কবি খুঁজে পেয়েছেন সত্যকে। জীবনের অমােঘ সত্য সম্পর্কে কবির মূল্যায়ন
“সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালােবাসিলাম,
সে কখনাে করে না বঞ্চনা।”
৩. প্রশ্নঃ “সত্য যে কঠিন,”—এই উপলব্ধিতে কবি কীভাবে উপনীত হলেন, তা ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতা অবলম্বনে লেখাে?
ロ রবীন্দ্রনাথ জীবনের অমােঘ সত্যকে আজীবন খুঁজে চলেছেন। তার সেই সত্য পলব্ধির স্বরূপ 'রূপনারানের কূলে' কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে। কবি তাঁর জীবন-অভিজ্ঞতায় জীবনের বিচিত্র রূপের পরশ পেয়েছেন। জীবনের উত্থান-পতন, প্রেম-আঘাত ইত্যাদির বৈপরীত্যে কবি দেখেছেন জীবনের রূপ রহস্যাবৃত। সেই কুহকের মায়াজাল কবিকে সত্যসন্ধানে প্রতিহত করে বারবার। জীবনের অনিবার্য কঠোরতা ও তার আঘাতে কবিহৃদয়ে রক্তক্ষরণ জীবনসত্যের ঘটেছে বারবার। কিন্তু অবিচল কঠোর তপস্যায় অবশেষে জীবনসত্যকে তিনি খুঁজে পেয়েছেন। তাই তার উপলব্ধি ---
“সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালােবাসিলাম,
সে কখনাে করে না বঞ্চনা।”
কবি সত্যকে চিনেছেন ত্যাগ ও তপস্যার মধ্য দিয়ে। জীবনের নিদারুণ অভিজ্ঞতার প্রবাহশেষে কবি জীবনসত্যের প্রাঙ্গণ খুঁজে পেয়েছেন। আয়াসসাধ্য জীবনপথেই এসেছে সাফল্য; অনায়াস প্রচেষ্টা কেবল তৈরি করেছে। বিফলমনােরথ কবি সত্যকে খুঁজে পেয়ে তাই তৃপ্ত, ধন্য হয়েছে তার মানবজীবন। কঠিনে ও কঠোরে সুপ্ত সত্য ব্যক্ত হয়েছে—সত্যে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্রভাবনা পেয়েছে শাশ্বতরূপ।
৪. প্রশ্নঃ “আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন” কেন কবি এই জীবনকে দুঃখের তপস্যা বলেছেন? এখানে কবির মনােভাবের যে বিবর্তন ঘটেছে তা উল্লেখ করাে?
ロ রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘শেষলেখা’ (১৯৪১ খ্রি.) কাব্যগ্রন্থের 'রূপনারানের কূলে’ কবিতায় জীবনকে ‘আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা’ বলেছেন। গভীর জীবনবােধের প্রগাঢ়তায় কবি উপলব্ধি করেছেন জীবন মানে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা।
◓ দুঃখের তপস্যা বলার কারণ : জীবনের শেষ সীমায় পৌঁছে কবি তাই অনুভব করেছিলেন দুঃখ, জরা, মৃত্যু, ব্যাধি এ জীবনে প্রতিনিয়ত থাকবেই। কবির মতে দুঃখ, মৃত্যুর ছলনা ও মিথ্যা আশ্বাসের প্রতারণা যে বুঝতে পারে, সে-ই শান্তির অক্ষয় অধিকার লাভ করে। সমালােচক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছেন—“কঠোর দুঃখের তপস্যা করিয়া তিনি। আত্মস্বরূপ দেখিতে পারিয়াছেন।” রক্তের অক্ষরেই কবি আপনার রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন, চিনেছেন‘আঘাতে আঘাতে, বেদনায় বেদনায়। জীবনের মিথ্যা কুহক ছেড়ে কবি তাই সত্যকে ভালােবেসেছেন। কারণ সত্য কঠিন হলেও “সে কখনাে করে না বঞ্চনা।”
জীবনের কঠোরতাই সত্যের স্বরূপ উন্মােচন করে দুঃখকে অতিক্রম করে সত্যের যথার্থতা উপলব্ধি করেই কবির মনে হয়েছে “আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন। কবি দেখেছেন জীবন হল দুঃখ ও সুখের নিরন্তর প্রবাহ। কিন্তু তার স্বরূপ উপলব্ধি করতে গিয়ে কবির মনে হয়েছে এ জীবন অনন্ত দুঃখ ও ব্যথায় আকীর্ণ দুঃসহ প্রবাহধারা। বাস্তবতার নির্মম আঘাতে আহতকবি চেতনা রহিত হয়ে পড়েছেন। ক্লান্ত-শ্রান্ত-অবসন্ন দুঃসহ প্রবাহ কবির জীবনের অন্তিমলগ্নে সত্যকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাকুলতা অনুভব করেছেন—
“রূপ-নারানের কুলে/ জেগে উঠিলাম,”
নবচেতনায় ঋদ্ধ কবি অবশেষে সংবিৎ ফিরে পেয়েছেন।
☉ 'মহুয়ার দেশ' পাঁচ মার্কের সাজেশন
১ প্রশ্নঃ “আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল,/নামুক মহুয়ার গন্ধ।”—‘আমার' বলতে কার কথা বলা হয়েছে? কবির এমন ক্লান্তির স্বরুপ ব্যাখ্যা করাে?***
অথবা,
'নামুক মহুয়ার গম্ব'— বক্তা কোথায় মহুয়ার গন্ধ নামতে
বলেছেন? কবিতায় কোন সত্য উপলদ্ধি হয়েছে?
২ প্রশ্নঃ “ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়/কিসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।” কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের ঘুমহীন চোখে ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন হানা দেয় কেন?***
২ প্রশ্নঃ “ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়/কিসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।” কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের ঘুমহীন চোখে ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন হানা দেয় কেন?***
☉ 'মহুয়ার দেশ' পাঁচ মার্কের সাজেশন উত্তর সেট
১ প্রশ্নঃ “আমার
ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল,/নামুক
মহুয়ার গন্ধ।”—‘আমার' বলতে কার কথা বলা হয়েছে? কবির এমন
ক্লান্তির স্বরুপ ব্যাখ্যা করাে?***
অথবা,
'নামুক মহুয়ার গম্ব'— বক্তা কোথায় মহুয়ার গন্ধ
নামতে বলেছেন? কবিতায় কোন সত্য উপলদ্ধি হয়েছে?
কবির আকর্ষণ শুধু মহুয়ার দেশ। মহুয়ার দেশের রহস্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনাবিল বিস্তারে কবি তাই অনাস্বাদিত আনন্দ খুঁজে নিতে চান। কবি সমর সেন ‘কোলকাতার কবি’ হয়েও শহুরে জীবনযাপনে ক্লান্তি অনুভব করেছেন।
২ প্রশ্নঃ “ঘুমহীন
তাদের চোখে হানা দেয়/কিসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।” কাদের কথা বলা
হয়েছে? তাদের ঘুমহীন চোখে ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন হানা দেয় কেন?***
◒ দুঃস্বপ্নের কারণ : নগরায়ণের দূষণ যেমন নাগরিক মানুষদের ক্লান্ত করে, তেমনই প্রকৃতির অনাবিল পবিত্রতাকেও গ্রাস করে। নাগরিক জীবনের ক্লান্তি যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে তখন কবির চেতনায় মুক্তির স্বাদ নিয়ে আসে মহুয়ার দেশ। কিন্তু সেই স্বাদ অনাস্বাদিতই থেকে যায় যখন দেখা যায় প্রকৃতির নিবিড় ছায়ায় থাকা মানুষগুলির স্বতন্ত্রতা প্রগতির আগ্রাসনে নষ্ট হচ্ছে। সেখানে এখন পরিতৃপ্তি নয়, উপলব্ধ হয় পুঁজিবাদের আগ্রাসন আরমানবিকসত্তার অবক্ষয়। তাই মহুয়ার দেশের শিশিরভেজা সকালে অবসন্ন খেটে খাওয়া মানুষগুলির শরীরে দেখা যায় ধুলাের কলঙ্ক। অন্ধকারে নিস্তব্ধতা
ভেদ করে আসে কয়লাখনির ‘গভীর’ শব্দ।
মহুয়ার দেশের প্রকৃতিলগ্ন মানুষগুলাে প্রকৃতির মতাে সরল জীবনে
থাকতে পারেনি। অসহায় সেই
মানুষগুলাে সারারাত কয়লাখনিতে শ্রম দিয়েও জীবন থেকে অবসাদ দূর করতে পারেনি, তাদের চোখে তাই আর স্বপ্ন নেমে আসে না, নেমে আসে দুঃস্বপ্ন।
মানুষগুলাে সারারাত কয়লাখনিতে শ্রম দিয়েও জীবন থেকে অবসাদ দূর করতে পারেনি, তাদের চোখে তাই আর স্বপ্ন নেমে আসে না, নেমে আসে দুঃস্বপ্ন।
অথবা,
“গাছ আনাে, বাগানে বসাও”- আমি দেখি কবির নির্দেশও অনুরোধের কারণ
এবং তাৎপর্য আলোচনা করো?
২ প্রশ্নঃ “আরােগ্যের জন্যে ঐ সবুজের ভীষণ দরকার।”—কে কোথায়
একথা বলেছেন? এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে বক্তার কী, মনােভাব
প্রকাশ পেয়েছে?***
অথবা,
“আরােগ্যের জন্যে ঐ সবুজের ভীষণ দরকার।” - আরোগ্যের সঙ্গে
সবুজের সম্পর্ক উক্ত কবিতা অবলম্বনে বুঝিয়ে দাও?
৩ প্রশ্নঃ “শহরের অসুখ
হাঁ করে কেবল সবুজ খায়”—কবির এই মন্তব্যের তাৎপর্য লেখো?***
অথবা,
শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়”-কোন সবুজের কথা বলা
হয়েছে ? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে?
অথবা,
“সবুজের অনটন ঘটে”– কোথায় সবুজের অনটন ঘটে? কী কারণেসবুজের
অনটন ঘটে তা লেখো?
৪ প্রশ্নঃ “চোখ তাে সবুজ চায়!”— এই মন্তব্যের আলােকে গাছের প্রতি
কবির মমত্ববােধ কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা 'আমি দেখি’ কবিতা
অনুসারে লেখাে?***
অথবা,
“চোখ তাে সবুজ চায়!”- এই মন্তব্যের আলােকে গাছের প্রতি
কবির সার্থকতা আলােচনা করো?
☉ ‘আমি দেখি’ পাঁচ মার্কের সাজেশন উত্তর সেট
১ প্রশ্নঃ “গাছগুলাে তুলে
আনাে, বাগানে বসাও”—এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গাছদের সম্পর্কে
কবির মনােভাব ‘আমি দেখি’ কবিতা অবলম্বনে আলােচনা করাে?***
অথবা,
“গাছ আনাে, বাগানে বসাও”- আমি দেখি কবির নির্দেশও অনুরোধের কারণ
এবং তাৎপর্য আলোচনা করো?
ロ প্রকৃতির প্রতি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের যে আকর্ষণ ও
ভালােবাসা—তারই প্রকাশ ঘটেছে তার ‘আমি দেখি’ কবিতায়। গাছ সেখানে
কবির জীবনযাপনের প্রধান অবলম্বন- “আমার দরকার শুধু গাছ দেখা”।
নিজের বেঁচে থাকার জন্য কবি গাছকে চেয়েছেন। অন্য একটি কবিতায়
কবি লিখেছিলেন—“আমি
মানবাে সাপটে ধরবাে নতুন বাগান, নতুন গাছটি / বেঁচে উঠবাে সরস ঋজু রােদুরে বৃষ্টিতে”। এই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সুর মিলিয়েই কবি যেন এই কবিতায় বলেছেন, তার শরীরের জন্য গাছের সবুজ
স্নেহস্পর্শ অত্যন্ত জরুরি। আরােগ্যের জন্য এই সবুজ ছোঁয়াটুকু তার খুবই দরকার। গাছেদের প্রতি এই ভালােবাসা থেকেই কবি জঙ্গলের জন্য আকুলতা অনুভব করেছেন।
মানবাে সাপটে ধরবাে নতুন বাগান, নতুন গাছটি / বেঁচে উঠবাে সরস ঋজু রােদুরে বৃষ্টিতে”। এই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সুর মিলিয়েই কবি যেন এই কবিতায় বলেছেন, তার শরীরের জন্য গাছের সবুজ
স্নেহস্পর্শ অত্যন্ত জরুরি। আরােগ্যের জন্য এই সবুজ ছোঁয়াটুকু তার খুবই দরকার। গাছেদের প্রতি এই ভালােবাসা থেকেই কবি জঙ্গলের জন্য আকুলতা অনুভব করেছেন।
নাগরিক জীবনে আর যে বৃক্ষসংহার ঘটে, তা কবির মনে গভীর বিষাদের
সৃষ্টি করে। নগরায়ণের ফলে “শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল
সবুজ সবুজের এই অভাব দূর করার জন্যই গাছ তুলে আনতে বাগানে বসাতে
বলেছেন কবি। চোখ যেমন সবুজের মধ্যে শান্তি খোঁজে,
দেহও চায় সবুজ বাগানের সান্নিধ্য। তাই কবি বাগানে গাছ
দেখতে চেয়েছেন। অর্থাৎ, শহরজীবনের কৃত্রিমতায় ক্লান্ত কবি
একদিকে তার শরীরের সুস্থতার জন্য এবং অন্যদিকে মনের
সতেজতার জন্য গাছেদের উপস্থিতি একান্তভাবে কামনা করেছেন। সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন—“শক্তি মূলত প্রকৃতি প্রেমের কবি”।
প্রকৃতির প্রতি তাঁর সেই ভালােবাসাই প্রেমের রূপ ধরে প্রকাশিত
হয়েছে আমি দেখি’ কবিতায়।
২ প্রশ্নঃ “আরােগ্যের জন্যে ঐ সবুজের ভীষণ দরকার।”—কে কোথায়
একথা বলেছেন? এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে বক্তার কী, মনােভাব
প্রকাশ পেয়েছে?***
অথবা,
“আরােগ্যের জন্যে ঐ সবুজের ভীষণ দরকার।” - আরোগ্যের সঙ্গে
সবুজের সম্পর্ক উক্ত কবিতা অবলম্বনে বুঝিয়ে দাও?
ロ শক্তি চট্টোপাধ্যায় তার ‘আমি দেখি’ কবিতায় এই মন্তব্যটি করেছেন। কবি প্রকৃতপক্ষে বৃক্ষ বন্দনা করেছেন। গাছ তুলে এনে বাগানে গাছ বসানাের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কবিতার একেবারে শুরুতেই কবি জানিয়েছেন, - গাছ দেখে যাওয়াই তার একমাত্র প্রয়ােজন। তার শরীরের জন্য সবুজ গাছেদের সান্নিধ্য একান্ত প্রয়ােজন বলে কবি জানিয়েছেন। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা, ক্লান্তি আর এক ঘেয়েমি থেকে মুক্তির জন্য প্রকৃতির কাছে চলে যাওয়া কবির একটি প্রিয় আচরণ। অন্য কবিতায় কবি লিখেছিলেন—“গাছের ভিতরে গিয়ে বসি আমি / গাছ কথা বলে।” হেমন্তের অরণ্যে পােস্ট ম্যান হতে চেয়ে ছিলেন যে কবি, জীবনযাপনের কৃত্রিমতা স্বাভাবিকভাবেই তাঁর অসুখের কারণ বলে মনে হয়—“সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় মৃত্যুর / ভিতরে সেঁধিয়ে যাওয়া শ্রেণীবদ্ধভাবে – এভাবেই কি দিন যাবে? এভাবেই কি যাবে?” বহুদিন জঙ্গলে না যাওয়ার বেদনা তাই কবির মনে তীব্র আক্ষেপ তৈরি করে। প্রকৃতির বুকে নিজেকে মেলে ধরতে না পেরেই কবির মনে হয়েছে বাগানে গাছ বসানাে প্রয়ােজন। এই প্রয়ােজন তার চেতনাকে সজীব কবার জন্য, মনের সতেজতার জন্য, শারীরিক ও মানসিক আরােগ্য লাভের জন্য। আশাবাদী কবি এই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, সবুজই মানুষের একান্ত আপন এবং তাদের একমাত্র প্রয়োজন।
৩ প্রশ্নঃ “শহরের
অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়”—কবির এই মন্তব্যের তাৎপর্য
লেখো?***
অথবা,
শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়”-কোন সবুজের কথা বলা
হয়েছে ? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে?
অথবা,
“সবুজের অনটন ঘটে”– কোথায় সবুজের অনটন ঘটে? কী
কারণেসবুজের অনটন ঘটে তা লেখো?
ロ শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘অগুলি তাের হিরণ্য জল’
কাব্যগ্রন্থের ‘আমি দেখি’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে
সবুজ বলতে বিশাল, ব্যাপ্ত অরণ্যপ্রকৃতিকে নির্দেশ করা
হয়েছে।
‘আমি দেখি’ কবিতায় প্রকৃতির কবি প্রকৃতির প্রতি নিজের
প্রবল আকর্ষণের কথা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করেছেন।
প্রকৃতির কাছে যাওয়ার সুযােগ না থাকায় তিনি চেয়েছেন শহরে
থেকেই প্রকৃতির সান্নিধ্য যাতে কিছুটা হলেও উপভােগ করা যায়।
ফলে প্রকৃতিকে তিনি শহরের মধ্যে নতুন ভাবে স্থাপন করতে
চেয়েছেন। এই ইচ্ছা থেকেই কবির আবেদন-“গাছগুলাে তুলে আনাে,
বাগানে বসাও”—কবিতার
প্রথম পঙক্তিতেই প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা
প্রকাশিত হয়েছে। এরই সঙ্গে জঙ্গলে দীর্ঘদিন না যাওয়ার আক্ষেপও
কবির মনের মধ্যে তীব্র হয়েছে। “জঙ্গলের মধ্যে ঘর ঈশ্বর
গড়েন”—এইভাবেই যে জঙ্গলকে মহিমান্বিত করে তুলেছেন, তার কাছে
জঙ্গলে না যেতে পারার যন্ত্রণা সত্যিই
অসহনীয়।
অসহনীয়।
কিন্তু লক্ষণীয়, বহুদিন জঙ্গলে যাইনি’ বলার সঙ্গে সঙ্গেই কবি
লিখছেন, বহুদিন শহরেই আছি। এই শহরজীবন, তার কৃত্রিমতা এবং এক
ঘেয়েমিতে ক্লান্ত কবির কাছে শহরের আর-এক বৈশিষ্ট্য সবুজের অনটন।
নগরসভ্যতার বিকাশের শর্ত মেনেই কংক্রিটের জঙ্গলে সবুজকে বিদায়
নিতে হয়। নাগরিক আড়ম্বর ও বিলাসের কারণে নির্বিচারে গাছ কাটা
হয়, 'শহরের অসুখ’ গিলে খায় সবুজকে। আজও
শহরগুলিতে সমানে প্রকৃতি নিধন চলছে। সবুজ নষ্ট করে একের পর এক
অট্টালিকা মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। এখানেই কবিতাটির প্রাসঙ্গিকতা।
মুক্তির উপায় হিসাবে এই কারণেই সমদর্শী, সমপ্রাণ, সমভাবনায়
ভাবিত মানুষকে তিনি বৃক্ষরােপণের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। জীবনের
শান্তি-তৃপ্তি ও স্নিগ্ধতা ফিরিয়ে আনার জন্যই কবি বৃক্ষের
আশীর্বাদ কামনা করে বৃক্ষরােপণের পরামর্শ দিয়েছেন।
৪ প্রশ্নঃ “চোখ তাে সবুজ চায়!”— এই মন্তব্যের আলােকে গাছের প্রতি
কবির মমত্ববােধ কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা 'আমি দেখি’ কবিতা
অনুসারে লেখাে?***
অথবা,
“চোখ তাে সবুজ চায়!”— এই মন্তব্যের আলােকে গাছের প্রতি
কবির সার্থকতা আলােচনা করো?
ロ শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি দেখি’ কবিতাটি গাছকে ভালােবেসে,
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সেই গাছকে আঁকড়ে কবির বেঁচে থাকার
ইচ্ছার প্রকাশ। এই বৃক্ষপ্রেম বা তার আড়ালে প্রকৃতির প্রতি
ভালােবাসা তার কবিতার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
“আমি মানবাে সাপটে ধরবাে নতুন বাগান, নতুন গাছটি
বেঁচে উঠবাে সরল ঋজু রােদুরে বৃষ্টিতে”।
ভুলে থাকার জন্য, মানসিক সতেজতার জন্য গাছেদের একান্ত প্রয়ােজন কবির। অন্য কবিতায় কবি লিখেছিলেন। “খুঁটিয়ে দেখেছি বন, বনাঞ্চল, গাছে শিখরে / ... আমােদ বিন্যস্ত থাকে লতায় পাতায়।” এই কারণেই কবি গাছেদের সান্নিধ্য চেয়েছেন।
সবুজের বিস্তারে চোখ তার আরাম খুঁজে পায়, শরীর সতেজ হয় মানসিক আরােগ্য লাভ সম্ভব হয়।
কেবল কবির জন্য নয়; সমগ্র শহরের জন্য, মানুষের
সার্বিক সুস্থতার জন্য সবুজের একান্ত প্রয়ােজন। কবি
ভেবেছেন, জীবনের সমস্ত জড়তা আর ক্লেদকে মানবদেহে সবুজের
স্পর্শ নিমূল করবে। এভাবেই জীবন জুড়ে গাছেদের জন্য কবির
আকাঙ্ক্ষা তীব্রভাবে উচ্চারিত হয়েছে কবিতায়।
☉ 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে' সাজেশন
১ প্রশ্নঃ 'ক্রন্দনরতা
জননীর পাশে’ কবিতায় কবি জননীকে ক্রন্দনরতা বলেছেন কেন? এই
পরিস্থিতিতে কবি কী করা উচিত বলে মনে করেন?***
২ প্রশ্নঃ “আমি তা পারিনা।
যা পারি কেবল/সে-ই কবিতায় জাগে”- কবিতায় কী জাগার কথা বলতে
চেয়েছেন কবি?***
অথবা,
“আমি তা পারি না।” – কবি কী পারেন না? এই বক্তব্যের কারণ
বিশ্লেষণ করাে?
ロ ‘ধানক্ষেত থেকে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটিতে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত অনুভব করেছেন সমকালীন অবক্ষয়িত সময়ের অনিবার্য অভিঘাতে জননী-জন্মভূমি ক্রন্দনরতা।
আলােচ্য কবিতায় ২০০৬-২০০৭ খ্রিস্টাব্দে সিঙ্গুরের কৃষিজমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বঙ্গ রাজনীতিতে, সেইসূত্রে কবির জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গে যে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল কবি তার মধ্যে বঙ্গজননীর বেদনাবিদ্ধ রূপটি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। কবি দেখেছিলেন শাসকের চোখরাঙানি কেমন করে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষা স্তন্ধ করে দিয়েছিল। শিল্পীর শিল্পসৃষ্টি অর্থ হারাচ্ছিল; মূল্যহীন হয়ে পড়ছিল ভালােবাসা, সমাজ, মূল্যবােধ। নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে কিংবা যে-মেয়ে নিখোঁজ, ছিন্নভিন্ন জঙ্গলে তাকে পেয়ে’অধিকাংশ মানুষ প্রতিক্রিয়াহীন থাকলে ব্যক্তিজননী এবং সেইসূত্রে দেশজননীর চোখ যে জলে ভরে যাবে এমন বাস্তবতাকেই কবি আলােচ্য কবিতায় ব্যক্ত করেছেন।
৩ প্রশ্নঃ “কেন
ভালােবাসা, কেন-বা সমাজ/ কীসের মূল্যবােধ!”- প্রসঙ্গ
উল্লেখ করে তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে?***
অথবা,
‘কেন ভালােবাসা, কেন বা সমাজ কীসের মূল্যবোেধ! কোন মানসিক
যন্ত্রণা থেকে কবি একথা বলেছেন?
৪ প্রশ্নঃ “আমি কি
তাকাব আকাশের দিকে/ বিধির বিচার চেয়ে?” প্রসঙ্গ উল্লেখ
করে এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলােচনা করো?***
অথবা,
“আমি কি তাকাব আকাশের দিকে /বিধির বিচার চেয়ে?” –
কবি কার কাছে এই প্রশ্ন করেছেন? কবির মনে এই দ্বন্দ্বমূলক
প্রশ্ন জাগার কারণ কী?
☉ 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ সাজেশন উত্তর সেট
১ প্রশ্নঃ 'ক্রন্দনরতা
জননীর পাশে’ কবিতায় কবি জননীকে ক্রন্দনরতা বলেছেন কেন?
এই পরিস্থিতিতে কবি কী করা উচিত বলে মনে করেন?***
ロ ‘ধানক্ষেত থেকে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটিতে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত অনুভব করেছেন সমকালীন অবক্ষয়িত সময়ের অনিবার্য অভিঘাতে জননী-জন্মভূমি ক্রন্দনরতা।
আলােচ্য কবিতায় ২০০৬-২০০৭ খ্রিস্টাব্দে সিঙ্গুরের কৃষিজমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বঙ্গ রাজনীতিতে, সেইসূত্রে কবির জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গে যে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল কবি তার মধ্যে বঙ্গজননীর বেদনাবিদ্ধ রূপটি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। কবি দেখেছিলেন শাসকের চোখরাঙানি কেমন করে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষা স্তন্ধ করে দিয়েছিল। শিল্পীর শিল্পসৃষ্টি অর্থ হারাচ্ছিল; মূল্যহীন হয়ে পড়ছিল ভালােবাসা, সমাজ, মূল্যবােধ। নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে কিংবা যে-মেয়ে নিখোঁজ, ছিন্নভিন্ন জঙ্গলে তাকে পেয়ে’অধিকাংশ মানুষ প্রতিক্রিয়াহীন থাকলে ব্যক্তিজননী এবং সেইসূত্রে দেশজননীর চোখ যে জলে ভরে যাবে এমন বাস্তবতাকেই কবি আলােচ্য কবিতায় ব্যক্ত করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে একদিকে নৃশংস সময়ে সামাজিক অনাচার,
অন্যদিকে প্রতিবাদহীন মানুষের মূল্যবােধের ভাঙন জননীকে আহত
করেছে বলে কবি মনে করেছেন। সময়ের এই ক্ষয়িষ্ণু প্রেক্ষাপটে
কবি তাঁর সংবেদনশীলতায় জন্মভূমির পাশে দাঁড়িয়েছেন। কবি
তাঁর কবিতায় শব্দের শক্তি দিয়ে
মানুষের মনে বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছেন। সামাজিক অনাচারের প্রকৃত বিচারের জন্য তিনি বিধাতার শরণাপন্ন হননি, নিজেরই উদ্যোগে বিক্ষত সময়কে সারিয়ে তুলতে চেয়েছেন। কবির জাগ্রত বিবেক কবিকে জননী-জন্মভূমির প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে, মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে।
মানুষের মনে বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছেন। সামাজিক অনাচারের প্রকৃত বিচারের জন্য তিনি বিধাতার শরণাপন্ন হননি, নিজেরই উদ্যোগে বিক্ষত সময়কে সারিয়ে তুলতে চেয়েছেন। কবির জাগ্রত বিবেক কবিকে জননী-জন্মভূমির প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে, মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে।
২ প্রশ্নঃ “আমি তা
পারিনা। যা পারি কেবল/সে-ই কবিতায় জাগে”- কবিতায় কী
জাগার কথা বলতে চেয়েছেন কবি?***
অথবা,
“আমি তা পারি না।” – কবি কী পারেন না? এই বক্তব্যের
কারণ বিশ্লেষণ করাে?
ロ আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি মৃদুল দাশগুপ্তের
'ধানক্ষেত' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ক্রন্দনরতা জননীর
পাশে’ কবিতা থেকে গৃহীত। ২০০৬ - ২০০৭ সালের সিঙ্গর জমি
আন্দোলনের রক্তাক্ত সময়ে সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে কবি
মৃদুল দাশগুপ্তের প্রতিবাদীসত্তা জেগে থাকার কথা বলা
হয়েছে।
⦿ কবির না পারার কারণ : কবি সমাজের চরম অবক্ষয়ের দিনে চুপ করে থাকতে
পারেননি। ‘নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে’ বিবেকবান
কবি ক্রোধে গর্জে উঠতে চেয়েছেন। যে মেয়ে
নিখোঁজ, ছিন্নভিন্ন/জঙ্গলে তাকে পেয়ে’ কবি ভাগ্যের
হাতে নিজেকে সমর্পণ করতে পারেননি।
সময়ের অনিবার্য অভিঘাতে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষয়িষ্ণু সমাজের
মুখােমুখি দাঁড়িয়ে কবি দেখেছেন শাসকের দমননীতির কাছে
মানুষের প্রতিবাদ নীরব হয়ে গেছে। মানুষের মধ্য থেকে মুছে
গেছে ভালােবাসা- সহানুভূতি-সম্প্রীতির বােধ। সময়ের অবক্ষয়ে
নিহত ভাইয়ের শবদেহ মানুষের কোনাে প্রতিক্রিয়া
জাগায় না। শাসকের নৃশংস উল্লাসে মেয়ের
ছিন্নভিন্ন দেহ জঙ্গলে পাওয়া গেলে কৰি তাঁর দায়বদ্ধতাকে
অস্বীকার করতে পারেন না। তাই সামাজিক মূল্যবােধেই কবি সেই
মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চান। কবি তার সংবেদনশীলতায় সমাজের
এই অবক্ষয়ে প্রতিবাদে সােচ্চার হন। তার সেই প্রতিবাদের
বারুদ কবিতায় জেগে থাকে। কবির বিশ্বাস, তাঁর এই বিদ্রোহের
আগুন মানুষের হারিয়ে যাওয়া সমাজসচেতনতা ফিরিয়ে
আনবে।
অথবা,
‘কেন ভালােবাসা, কেন বা সমাজ কীসের মূল্যবোেধ! কোন মানসিক যন্ত্রণা
থেকে কবি একথা বলেছেন?
ロ মৃদুল দাশগুপ্তের 'ধানক্ষেত’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত
'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে সামাজিক
অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে। ২০০৬ - ২০০৭ সালে সিঙ্গুর জমি
আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শাসকের রাজনীতির নগ্নতা প্রত্যক্ষ করে কবি
ক্রদ্ধ হয়েছেন। অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে নিহত শহীদকে দেখেও
যদি কবির বিবেক না জেগে ওঠে, তবে ভালােবাসা, মূল্যবােধ সবই
অর্থহীন হয়ে যায়। সামাজিক অবক্ষয়রোর যুগ শাসকের রক্তচক্ষু
দেখে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়েছিল। শিল্পীর শিল্প
অর্থ হারিয়েছিল। মূল্যহীন হয়ে পড়েছিল
ভালােবাসা-সমাজ-মূল্যবােধ। নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে’ অথবা যে
মেয়ে নিখোঁজ, ছিন্নভিন্ন / জঙ্গলে তাকে পেয়েও যখন সাধারণ মানুষ
নির্বিকার তখন কবি বিস্মিত হন।
আসলে স্বদেশের। সীমাহীন দুর্দশায় কবি শুনতে পেয়েছেন জননীর
কান্না। জননীর অশ্রু পাতের হাহাকারে কবি অনুতপ্ত বােধ
করেছেন। তার বিবেক জাগরিত হয়েছে। ক্রন্দনরতা জননীকে কোনাে ভাবেই
তিনি ত্যাগ করতে পারেন না। স্বজনের মৃত্যু দেখে বিধির বিচার
চেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ থাকতে পারেন না। সমাজের প্রতি
দায়বদ্ধতা এবং মানুষের প্রতি ভালােবাসা থেকে অন্যায়ের সঙ্গে
আপস করতে পারেন না কৰি। ভাইয়ের শবদেহ দেখে প্রতিহিংসা জাগ্রত না
হলে ভালােবাসা, সমাজ মূল্যহীন হয়ে পড়বে।
৪ প্রশ্নঃ “আমি কি তাকাব আকাশের দিকে/ বিধির বিচার চেয়ে?” প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলােচনা করো?***
অথবা,
“আমি কি তাকাব আকাশের দিকে /বিধির বিচার চেয়ে?” – কবি কার
কাছে এই প্রশ্ন করেছেন? কবির মনে এই দ্বন্দ্বমূলক প্রশ্ন জাগার
কারণ কী?
ロ মৃদুল দাশগুপ্তের 'ধানক্ষেত' কাব্য গ্রন্থের অন্তর্গত 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে সমাজ সচেতনতার সাক্ষ্য পাওয়া যায় সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের উত্তাল সময়ের অবক্ষয়কে প্রত্যক্ষ করে। রাজনৈতিক নেতাদের পাশবিক উল্লাসে নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ খুঁজে পেয়ে কবি ক্রদ্ধ হন। এই বিপন্ন সময়ে মানুষের প্রতিবাদের ভাষা নীরব হয়ে গেলে উদ্ধৃতাংশের অবতারণা।
কবি একজন সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে লাঞ্ছিত সময়ে প্রতিবাদে সােচ্চার হতে চান। কারণ কবির নীরবতা তার মূল্যবােধের মৃত্যুকে চিহ্নিত করে। তাতে মনুষ্যত্বের অপমান হয়। কবি তার সংবেদনশীলতায় বিবেকবােধে জাগ্রত হন। তাই কবি ক্ষয়িষ্ণু সময়ে জন্মভূমির পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে মুখর হন। তার
সেই বিদ্রোহ সমাজসচেতনতার প্রতীক হয়ে কবিতায় বারুদ হয়ে জেগে থাকে। কবির এই দায়বদ্ধতাই সামাজিক শােষণের বিরুদ্ধে বিপ্লবের সূচনা করবে।
ロ মৃদুল দাশগুপ্তের 'ধানক্ষেত' কাব্য গ্রন্থের অন্তর্গত 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে সমাজ সচেতনতার সাক্ষ্য পাওয়া যায় সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের উত্তাল সময়ের অবক্ষয়কে প্রত্যক্ষ করে। রাজনৈতিক নেতাদের পাশবিক উল্লাসে নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ খুঁজে পেয়ে কবি ক্রদ্ধ হন। এই বিপন্ন সময়ে মানুষের প্রতিবাদের ভাষা নীরব হয়ে গেলে উদ্ধৃতাংশের অবতারণা।
কবি একজন সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে লাঞ্ছিত সময়ে প্রতিবাদে সােচ্চার হতে চান। কারণ কবির নীরবতা তার মূল্যবােধের মৃত্যুকে চিহ্নিত করে। তাতে মনুষ্যত্বের অপমান হয়। কবি তার সংবেদনশীলতায় বিবেকবােধে জাগ্রত হন। তাই কবি ক্ষয়িষ্ণু সময়ে জন্মভূমির পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে মুখর হন। তার
সেই বিদ্রোহ সমাজসচেতনতার প্রতীক হয়ে কবিতায় বারুদ হয়ে জেগে থাকে। কবির এই দায়বদ্ধতাই সামাজিক শােষণের বিরুদ্ধে বিপ্লবের সূচনা করবে।
☉ নাটকঃ বিভাব সাজেশন প্রশ্ন
১ প্রশ্নঃ “আমাদের মনে
হয় এর নাম হওয়া উচিত ‘অভাব’ নাটক।” অভাবের চিত্র বিভাব’
নাটকে কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে লেখাে?***
২ প্রশ্নঃ আমাদের একটা লভ
সিন করা উচিত। - বক্তা কে? ‘বিভাব’ নাটক অবলম্বনে লভ
সিন’ -এর দৃশ্যটি বর্ণনা করাে?***
অথবা,
“আচ্ছা তাহলে একটা লভ সিন করা যাক।”—কেন তারা লভ সিনের
পরিকল্পনা করেছিল? লভ সিনটির বিবরণ দাও?
৩ প্রশ্নঃ “এই দেখাে আবার
মিছিল আসছে” - মিছিল আসছিল কেন? অতঃপর সেই মিছিলের পরিণতি
কি হয়েছিল?***
অথবা,
“এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না’ জীবনকে উপলব্ধি’করার জন্য বক্তা কী করেছিলেন? শেষে তার কীরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
“এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না’ জীবনকে উপলব্ধি’করার জন্য বক্তা কী করেছিলেন? শেষে তার কীরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
অথবা,
"জীবন কোথায়?" - কে কাকে বলেছেন? বক্তা জীবনকে কোথায়
খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে করেন?
৪ প্রশ্নঃ এবার নিশ্চয়ই
লােকের খুব হাসি পাবে- কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি? উক্তিটির
তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে?***
☉ নাটকঃ বিভাব সাজেশন উত্তর সেট
১ প্রশ্নঃ “আমাদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত ‘অভাব’ নাটক।” অভাবের চিত্র বিভাব’ নাটকে কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে লেখাে?***
ロ সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রমতে বিভাব নাটকের দর্শক বা পাঠকের ভূমিকা মনে রসােদ্রেক করে। 'বিভাব’ নাটকের বিষয়বস্তুতে অভাবের চিত্র পাঠকের রসনিস্পত্তির কারণ। বিশ শতকে বাংলা নাট্য আন্দোলনে অভিনয়রীতি এবং নাট্যশৈলীতে যে অভিনবত্ব আসে তার একটি বড় কারণ ছিল নাটক মঞ্চস্থ করার প্রয়ােজনীয় অর্থ ও পরিকাঠামাের অভাব। নাটকের সুষ্ঠ উপস্থাপনা এবং একটি ভালাে প্রযােজনার জন্য
দরকার ভালাে মঞ্চ, দৃশ্যানুযায়ী মঞ্চ সজ্জা, দৃশ্যপট, আলােক প্রক্ষেপণের কৃৎকৌশল। কিন্তু অর্থনৈতিক দৈন্য নাটক অভিনয়ে একটি বড়াে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবু ভালাে প্রযােজনার স্বার্থে নাটকের কলাকুশলীরা ঐকান্তিক নিষ্ঠায় নাটক অভিনয় করত।
বিপন্নতার এই কারণেই শম্ভ মিত্র প্রথা ভেঙে নতুন আঙ্গিকের পরিকল্পনা করেন। সেই অভিনব নাট্যরীতিতে বড়াে মঞ, মঞ্জসজ্জা, দৃশ্যপট, বেশভূষা থাকবে না। আর্থিক অভাব নামকরণ নাটকের আঙ্গিকের ঐশ্বর্যে ঢেকে যাবে। 'বিভাব’ নাটকের কাহিনি বস্তুতে আঙ্গিকের এই বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই যথােপযােগী নাট্যবস্তুর সন্ধানে নাটকের কাহিনি বিন্যস্ত হয়। একারণে ‘বিভাব’নাটকের অভাব নামকরণে নাট্যকারের বিদ্রুপ ও শ্লেষ ধ্বনিত হয়।
২ প্রশ্নঃ আমাদের একটা লভ
সিন করা উচিত। - বক্তা কে? ‘বিভাব’ নাটক অবলম্বনে লভ
সিন’ -এর দৃশ্যটি বর্ণনা করাে?***
অথবা,
“আচ্ছা তাহলে একটা লভ সিন করা যাক।”—কেন তারা লভ সিনের
পরিকল্পনা করেছিল? লভ সিনটির বিবরণ দাও?
ロ শম্ভ মিত্র রচিত ‘বিভাব’ নাটক থেকে গৃহীত
উদ্ধৃতাংশের বক্তা হলেন বৌদি অর্থাৎ তৃপ্তি মিত্র।
বাংলা নাট্যজগতের প্রবাদ প্রতিম
ব্যক্তিত্ব শম্ভ মিত্রের ‘বিভাব' নাটক থেকে উক্তিটি
গৃহীত। নাটকে হাসির খােরাক সন্ধানে নাটকের অন্যতম চরিত্র শম্ভ
এসে পৌছােয় অমরের বাড়িতে । সামাজিক এবং
অর্থনৈতিক সংকটে তখন সাধারণ বাঙালির জীবন বিপর্যস্ত।
দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল পর্যন্ত
বাঙালিদের ‘কাদুনে জাত’ বলে উল্লেখ করেন। শম্ভ তাই নানা শারীরিক
অঙ্গভঙ্গি করে অমর ও
বউদিকে হাসাতে চাইলেও বিফল হন। অমর তাই এমন এক দৃশ্যপটের সন্ধান
করতে চান, যা
পরিকল্পনার কারণ মানুষের মনে আগ্রহ এবং ঔৎসুক্য সঞ্চার করবে এবং জনমানসে এক আবেদন রাখতে সমর্থ হবে। বউদি জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রেমকেই সর্বাধিক জনপ্রিয় বিষয় বলে স্থির করলে তারা একটি ‘লভ সিন’-এর পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনার কারণ মানুষের মনে আগ্রহ এবং ঔৎসুক্য সঞ্চার করবে এবং জনমানসে এক আবেদন রাখতে সমর্থ হবে। বউদি জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রেমকেই সর্বাধিক জনপ্রিয় বিষয় বলে স্থির করলে তারা একটি ‘লভ সিন’-এর পরিকল্পনা করেন।
‘বিভাৰ’ নাটকে প্রেমের দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য নায়িকা বউদি নায়ক হিসেবে শম্ভ মিত্রকে বেছে নেন। নাটকের দৃশ্যে কলেজ ফেরত নায়িকার সঙ্গে নায়কের রাস্তায় অকস্মাৎ ধাক্কা লাগে। নায়িকা বউদি
প্রচণ্ড রেগে গিয়ে শম্ভর গালে চড় বসিয়ে দেন। শম্ভ বউদির নির্দেশমতাে আমতা-আমতা করতে থাকেন। অন্যদিকে চোখের কোণ দিয়ে সলজ্জ ভঙ্গিতে শম্ভ দিকে তাকিয়ে বউদি প্রেম নিবেদনের
অভিনয় করেন। এরপর প্লে-ব্যাকের অনুরােধ জানান। সঙ্গে সঙ্গে নেপথ্যে ফিল্মি কায়দায় মালতী
লতা দেলে’ গানটি শােনা যায় । বউদি ঠোট মেলান এবং কাল্পনিক গাছের ডাল জড়িয়ে ধরেন। শেষপর্যন্ত গানটির সুর বিকৃতি নিয়ে মনান্তর হয় এবং দৃশ্যটি যথাযথ হাস্যরস সৃষ্টির উপযােগী বলে বিবেচিত না হওয়ায় তা পরিত্যক্ত হয়।
৩ প্রশ্নঃ “এই দেখাে আবার মিছিল আসছে” - মিছিল আসছিল কেন? অতঃপর সেই মিছিলের পরিণতি কি হয়েছিল?***
অথবা,
“এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না’ জীবনকে উপলব্ধি’করার জন্য বক্তা কী করেছিলেন? শেষে তার কীরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
অথবা,
"জীবন কোথায়?" - কে কাকে বলেছেন? বক্তা জীবনকে কোথায় খুঁজে
পাওয়া যাবে বলে মনে করেন?
ロ বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব শম্ভ মিত্র রচিত ‘বিভাব’নাটক থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশের বক্তা শম্ভ মিত্র অমরের উদ্দেশ্য করেছেন। জনরুচি অনুযায়ী নাটকের বিষয় সন্ধানে শম্ভ তার সহ-অভিনেতা অমর গাঙ্গুলিকে নিয়ে পথে বেরিয়ে পড়েন। জীবনকে বিশেষ নাট্যভঙ্গির মাধ্যমে তাদের সামনে একটা উপলব্ধি ব্যস্ত রাস্তার দৃশ্য উপস্থাপিত হয়। এক একজন ব্যক্তি কেউ একটি মােটরের, কেউ বাসের, কেউ হাত-রিকশার, কেউ ট্রামের ছবি নিয়ে মুখে আওয়াজ করতে করতে তাদের অতিক্রম করে যায়। অমর যেন বাসে চাপা পড়ছিলেন তাকে টেনে সরিয়ে নিয়ে শম্ভ মিত্র বাসচালককে ধমকে ওঠেন। এরপর রাস্তা
ধরে হাঁটতে হাঁটতে তারা সময়ের রূঢ় বাস্তবতার মুখােমুখি দাঁড়ান। তারা অন্ন ও বস্ত্রের দাবিতে একটা মিছিল এগিয়ে আসতে দেখেন। এইসময় পুলিশ এসে তাদের থামাতে গেলে শম্ভ ও অমর আত্মগােপন করেন।
ロ বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব শম্ভ মিত্র রচিত ‘বিভাব’নাটক থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশের বক্তা শম্ভ মিত্র অমরের উদ্দেশ্য করেছেন। জনরুচি অনুযায়ী নাটকের বিষয় সন্ধানে শম্ভ তার সহ-অভিনেতা অমর গাঙ্গুলিকে নিয়ে পথে বেরিয়ে পড়েন। জীবনকে বিশেষ নাট্যভঙ্গির মাধ্যমে তাদের সামনে একটা উপলব্ধি ব্যস্ত রাস্তার দৃশ্য উপস্থাপিত হয়। এক একজন ব্যক্তি কেউ একটি মােটরের, কেউ বাসের, কেউ হাত-রিকশার, কেউ ট্রামের ছবি নিয়ে মুখে আওয়াজ করতে করতে তাদের অতিক্রম করে যায়। অমর যেন বাসে চাপা পড়ছিলেন তাকে টেনে সরিয়ে নিয়ে শম্ভ মিত্র বাসচালককে ধমকে ওঠেন। এরপর রাস্তা
ধরে হাঁটতে হাঁটতে তারা সময়ের রূঢ় বাস্তবতার মুখােমুখি দাঁড়ান। তারা অন্ন ও বস্ত্রের দাবিতে একটা মিছিল এগিয়ে আসতে দেখেন। এইসময় পুলিশ এসে তাদের থামাতে গেলে শম্ভ ও অমর আত্মগােপন করেন।
জীবনের বাস্তবতায় তারা প্রত্যক্ষ করেন যে মিছিলকারীরা পুলিশের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে স্লোগান দিতে থাকলে পুলিশ গুলি চালায়। যার ফলস্বরুপ একটি ছেলে ও একটি মেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পুলিশ
অভিজ্ঞতা মার্চ করতে করতে চলে যায়। মঞ্চ লাল আলােয় ভরে যায়। অমর ছুটে এসে আহত মেয়েটির মাথায় হাত দেন। শম্ভ মিত্র উপলব্ধি করেন, মন্বন্তর-উত্তীর্ণ দ্বিধাবিভক্ত বাঙালি জীবন উদ্বাস্তু সমস্যা ও খাদ্যসঙ্কটে জর্জরিত। সেখানে হাসির আর কোনাে উপাদানই অবশিষ্ট নেই।
ロ উত্তর প্রখ্যাত নাট্যকার শম্ভ মিত্র রচিত ‘বিভাব’ নাটকের অন্তিম পর্বে দেখা যায় ঘরের মধ্যে হাস্যরসের উৎস খুজে না পেয়ে, শম্ভ ও অমর হাসির অনুসন্ধানে পথে নামেন। তারা যখন হাসির
খােরাক খুঁজতে ব্যস্ত, সেই সময় অন্নবস্ত্রের দাবিতে এগিয়ে আসা মিছিলের দুই সদস্য একটি ছেলে ও একটি মেয়ে পুলিশের গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এই দৃশ্য প্রবলভাবে আঘাত করে। শম্ভ মিত্রকে। তিনি বােঝেন, যে রাজ্যে অন্নবস্ত্রের দাবিতে নিহত হয় তরুণ প্রাণ, সেখানে হাসির খােরাক খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। এই প্রসঙ্গেই লেখক শম্ভ মিত্র অমরের প্রতি উক্তিটি করেছেন।
সে ছিল এক অগ্নিগর্ভ সময়। মহাযুদ্ধ, মহামারি, দাঙ্গাবিধ্বস্ত কলকাতা শহরের বুকে আছড়ে পড়ে শরণার্থীদের ঢেউ। দেশভাগের ফলে ভিটেমাটি-স্বজন হারিয়ে মানুষ এক ভয়াবহ বিপর্যয়কে প্রত্যক্ষ
করে। বাঙালির জীবন ও সমাজ থেকে হাসি-আনন্দ মুছে যায়। অথচ তা নিয়ে ব্যঙ্গ মাতলেন রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রী, বাঙালিকে 'কাঁদুনে জাত’আখ্যা দিলেন। এরই প্রতিক্রিয়ায় সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ নাট্যকার বেরিয়ে পড়েন হাসির সন্ধানে। কিন্তু ভালােবাসার অভিনয়ে সমৃদ্ধ নাট্যদৃশ্যে হাসির খােরাক না পেয়ে বিফল মনােরথ হয়ে তারা বেরিয়ে পড়েন বাইরের জগতে।
কিন্তু না, সেখানেও খুঁজে পাওয়া যায় না হাসির খােরাক। বরং
তারা মুখােমুখি হন একদল অন্নহীন মানুষের নিরুপায়, নিরাশ্রয়
মানুষগুলাে চাল আর কাপড়ের দাবি জানিয়ে মিছিল করে এগিয়ে
আসে। পুলিশের নিষেধ অগ্রাহ্য করে তারা যার ফলে সেই গুলিতে লুটিয়ে
পড়ে প্রতিবাদী ছেলেটি। সারা স্টেজ তখন আলােয় আলােয় ঢাকা। তারই
মধ্যে অমর আহত মেয়েটির মাথায় যখন হাত দেন তখনই নাটকের অন্যতম
চরিত্র স্বয়ং নাট্যকার শম্ভ মিত্র বলেন- “কী অমর—এবার হাসি
পাচ্ছে?”
সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক অস্থির প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে জীবনেহাসির খােরাক অনুসন্ধান করার প্রচেষ্টাকেই তীব্র বিদ্রুপ করেন নাট্যকার। এই বিদ্রুপের ঝংকারেই উক্তিটি তাৎপর্যবহ হয়ে ওঠে।
সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক অস্থির প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে জীবনেহাসির খােরাক অনুসন্ধান করার প্রচেষ্টাকেই তীব্র বিদ্রুপ করেন নাট্যকার। এই বিদ্রুপের ঝংকারেই উক্তিটি তাৎপর্যবহ হয়ে ওঠে।
☉ নাটকঃ 'নানা রঙের দিন' সাজেশন প্রশ্ন
১ প্রশ্নঃ 'নানা রঙের
দিন’ একাঙ্ক নাটক হিসেবে কতখানি সার্থক আলােচনা করাে?***
২ প্রশ্নঃ 'নানা রঙের
দিন' নাটক অবলম্বনে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র
বিশ্লেষণ করাে?***
৩ প্রশ্নঃ “জীবনে ভাের
নেই, সকাল নেই, দুপুর নেই, সন্ধ্যেও ফুরিয়েছে—এখন শুধু মাঝ
রাত্তিরের অপেক্ষা”—বক্তা কে? কখন এই মন্তব্য করেছেন?
বক্তব্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো?***
অথবা,
“... জীবনে ভাের নেই, সকাল নেই, দুপুর নেই, - এখন শুধু মাঝ রাত্তিরের অপেক্ষা বক্তা কে? এ প্রসঙ্গে বৃদ্ধ অভিনেতার মনের যন্ত্রণা যেভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে তা লেখাে?
অথবা,
“... জীবনে ভাের নেই, সকাল নেই, দুপুর নেই, - এখন শুধু মাঝ রাত্তিরের অপেক্ষা বক্তা কে? এ প্রসঙ্গে বৃদ্ধ অভিনেতার মনের যন্ত্রণা যেভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে তা লেখাে?
অথবা,
“এখানেই গল্প শেষ”—কার, কেন এমন মনে হয়েছিল?
৪ প্রশ্নঃ 'শিল্পকে
যে-মানুষ ভালােবেসেছে-তার বার্ধক্য নেই কালীনাথ,”—নানা রঙের
দিন’নাটক অবলম্বনে মন্তব্যটি লেখাে?***
☉ নাটকঃ 'নানা রঙের দিন' সাজেশন উত্তর সেট
ロ নাটকের বিভিন্ন আঙ্গিকের মধ্যে একাঙ্ক নাটক একটি অঙ্ক এবং
একটি দৃশ্যে সম্পূর্ণ নাটক, যা ক্ষুদ্র পরিসরে একই মঞ্চ সজ্জায়
বাহুল্য বর্জিত ঘটনার একমুখীনতায় সীমাবদ্ধ থাকে। স্থান কাল
পাত্রের পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্প চরিত্রের অভিনয়-নিপুণতা গভীর ও
সংযত সংলাপে নাটকে উপস্থাপিত হয়। নাটকের
ঘটনাবলি তার আকস্মিকতা নিয়ে তার শীর্ষবিন্দু বা ‘climax'-এ পৌছােয়।
একাঙ্ক নাটকের সার্থকতা : অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'নানা রঙের দিন’ নাটকটির সমগ্র ঘটনা মাত্র একটি রাতের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ। একদা মঞ্চের ডাকসাইটে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় অধুনা প্রৌঢ়ত্বের সীমায় উপস্থিত। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, অভিনয়ের
জগৎ আসলে এক মায়া, 'থিয়েটারওয়ালাদের’ জীবন অনেক বেশি রূঢ় ও কঠিন। তবুও মায়াবী সেই মঞ্চের আলােক-উজ্জ্বলতার টানেই এখনও তার মঞ্চে ফিরে আসা। ব্যক্তিগত জীবনেও তাই নিতান্ত নিঃসঙ্গ রজনীকান্ত উপলব্ধি করেছেন শারীরিক দুর্বলতার কারণে আর কয়েক বছর পরে তিনি 'দিলদার' চরিত্রেও অভিনয় করতে পারবেন না, জীবনে তখন নেমে আসবে ঘাের নিঃসঙ্গতা। নিজের অতীত গৌরবের কথা স্মরণ করতে করতে একসময় একের পর এক পুরােনাে নাটকের নানান চরিত্রের সংলাপ
উচ্চারণ করতে থাকেন রজনীকান্ত। এইভাবে অতীত-বর্তমানের দ্বান্দ্বিক টানাপােড়েনে নাটকটি শেষ হয়। সমগ্র নাটকটি স্বল্প পরিসরে একটিমাত্র দৃশ্যে রজনীকান্তের জীবনে একটি রাতের দৃশ্যে রজনীকান্তের জীবনের দ্বন্দ্বকে ব্যক্ত করে। একাঙ্ক নাটক নাট্যকারের বর্ণনা, চরিত্র চিত্রণ দক্ষতা ও একমুখীনতা নাটকটিকে বিশিষ্ট করেছে। ঘটনার সংক্ষিপ্ততা, সংলাপের সুষ্ঠ ব্যবহার, নাট্যবস্তুর একমুখিনতায় নাটকটি একাঙ্ক নাটক হিসেবে সার্থকতা লাভ করেছে।
২ প্রশ্নঃ 'নানা রঙের দিন' নাটক অবলম্বনে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করাে?***
ロ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'নানা রঙের দিন’ নাটকে বিশিষ্ট হারানাের যন্ত্রণায় দগ্ধ। নিজের জীবনযন্ত্রণা ভুলতে আজ সস্তা দামের মদ্যপান করেন। শিল্পের জন্য চরম একাকিত্ব মঞভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় জীবন সায়াহ্নে এসে অতীত গৌরব। আত্মনিবেদিত রজনী চাটুজ্জে যৌবন-আদর্শ-শক্তি-সন্ত্রম-প্রেম-নারী সবকিছুই হারিয়েছেন। নাটকের টানে তিনি সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ছেড়েছেন। দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছরের অভিনয় জীবন পার করে আটষট্টি বছরের অভিনেতা মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তার নিঃসহায় জীবনসত্য প্রকাশ পেয়েছে তারই উক্তিতে–“মরবার সময় মুখে
দু-ফোটা জল দেয় এমন কেউ নেই আমার।” শিল্পের প্রতি নিষ্ঠাবান শিল্পীর চরম একাকিত্বই রজনী কান্তের নিয়তি।
রজনী কান্তের চরিত্রটি এ নাটকে দ্বন্দ্বময়। একদিকে শূন্য জীবনের হাহাকার, অন্যদিকে প্রতিভাবলে জরা-ব্যাধি-মৃত্যুকে জয় করতে চাওয়া চরিত্রের এই দ্বান্দ্বিকতায় ‘দেহপট সনে নট সকলি হারায়
–এই বাক্য ধ্রুবসত্য মনে হয়। এই দুই সত্যের দ্বিধায় তিনি ঔরঙ্গজীবের মতাে গ্লানিময়, ওথেলাের মতাে সব হারানাে ব্যক্তি। এই দ্বন্দময়তার মাঝেও রজনীকান্ত তার বংশমর্যাদা সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন ছিলেন—“রাঢ়ের সবচেয়ে প্রাচীন ভদ্র ব্রাত্মণ বংশে জন্মেছিলুম।” জীবন রজনীকান্তকে শিখিয়েছে অভিনেতার সামাজিক সম্মান নেই, তার কাজ কেবল ‘খদ্দেরদের আনন্দ দেওয়া। তারা শুধুমাত্র ক্লাউন’, ‘চাকর। তবু শিল্পের দায় অভিশপ্ত সিসিফাসের মতাে তিনি আমৃত্যু বহন করে চলেছেন। প্রতিভা কারুবাসনাই তাকে সর্বরিক্ত করেছে, মৃত্যু ছাড়া তার মুক্তি নেই এ সত্য বদল হবে না, নাটকের শেষে তিনি তা বুঝেছেন।
ロ অজিতেশ
বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'নানা রঙের দিন’ নাটক থেকে গৃহীত
উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন পেশাদারি থিয়েটারের বৃদ্ধ
অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়।
অভিনয়শেষে নেশায় আচ্ছন্ন রজনীকান্ত মাঝরাতে হঠাৎ গ্রিনরুমে জেগে উঠে শূন্য প্রেক্ষাগৃহের সামনে মুখােমুখি দাঁড়ান। জীবনসায়াহ্নে এসে রজনীকান্ত আত্মবিশ্লেষণে উপলদ্ধি করেন তার যৌবন হারিয়ে গিয়েছে। নিঃসঙ্গ জীবনের একাকিত্বে অতীতের রুপােলি দিনগুলি মনে করে তিনি উদ্ধৃত
উক্তিটি করেন। এককালের জনপ্রিয় অভিনেতা রজনীকান্ত শিল্পের প্রতি ভালােবাসায় নিজের আত্মীয় পরিজন, সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিয়েছিলেন। কিন্তু জীবনের শেষপর্বে অনাদৃত-মাদকা সক্তরূপে তিনি নিজেকে দেখেছেন। প্রায় প্রত্যহ শূন্য মঞ্চে স্মৃতিকাতর নেশাচ্ছন্ন রজনী হতাশা, অনুশােচনায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানেন লম্বা চুলে কলপ লাগিয়ে কেবল বাইরে থেকে প্রৌঢ়ত্বে প্রলেপ দেওয়া সম্ভব, কিন্তু বয়সের অনিবার্য ক্ষয় রােধ করা যাবে না। রজনীকান্ত উপলব্ধি করেছেন আটষট্টি বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর তার খ্যাতি-সুনাম-সামর্থ্য, জনপ্রিয়তার মায়াবী আস্তরণ সরে গিয়ে। জীবন নাট্যের ধারা চিরন্তন গতিতে মৃত্যুর প্রতি ধাবমান। এখানে ভাের-সকাল-দুপুর-সন্ধে বলতে, জীবনের প্রতিটি পর্বের কথা বােঝানাে হয়েছে—যা রজনীর জীবনে কখনােই আর ফিরে আসবে না।
৪ প্রশ্নঃ 'শিল্পকে যে-মানুষ ভালােবেসেছে-তার বার্ধক্য নেই কালীনাথ,”—নানা রঙের দিন’নাটক অবলম্বনে মন্তব্যটি লেখাে?***
ロ সুপ্রসিদ্ধ অভিনেতা-নিদের্শক অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নানা রঙের দিন’ একাঙ্ক নাটকে প্রশ্নে প্রদত্ত মন্তব্যটি করেছেন রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। বিগত দিনের বিশিষ্ট জনপ্রিয় অভিনেতা রজনীকান্ত আজ আটষট্টি বছর বয়সে দাঁড়িয়ে উপলদ্ধি করেছেন যে, অভিনয়জীবনের রূপােলিজগতের মায়া ক্রমশ সরে গেছে। অভিনয় শেষে সুরাসক্ত রজনীকান্ত মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে একা মঞ্চে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্লেষণ করেছেন। ঘটনাচক্রে প্রম্পটার কালীনাথের সঙ্গে বিগত দিনের সফল চরিত্রগুলাের সংলাপ উচ্চারণ করে নিজের গ্লানি-হতাশা দূর করতে উদ্যমী হন তিনি। রজনীকান্ত ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন বয়স বাড়লেও রক্তে মিশে থাকা তার প্রতিভা এখনও লােপ পায়নি। শিল্পীর সঙ্গে শিল্পের এই নিবিড় সংযােগসূত্রেই প্রশ্নোপ্ত মন্তব্যটি করেছেন তিনি।
শিল্পের সঙ্গে শিল্পীর সংযােগ দেহ ও প্রাণের যােগাযােগের মতাে রজনীকান্ত শিল্পের জন্য তথাকথিত সামাজিক প্রতিষ্ঠা, সংসার, অর্থ, নারী সবকিছুই ত্যাগ করেছেন। প্রৌঢ়ত্বের প্রান্তে এসে তিনি উপলব্ধি
করেন তার চরম খ্যাতি-প্রতিপত্তি বা সৃজন ক্ষমতার দিন শেষ। জীবনের সকাল-দুপুর-সন্ধে পার হয়ে এখন শুধুই অন্ধকার রাত। কিন্তু বিগত কিছু চরিত্রের সংলাপের মধ্য দিয়ে তিনি অনুভব করছেন অভিনয়েই অভিনেতার মুক্তি প্রতিভা কখনও বয়সের ভারে ক্ষয় পায় না। শিল্পকে নিঃশর্ত ভালােবাসার জন্য তার যে সর্বস্বান্ত পরিণতি হয়েছে, তিনি বুঝেছেন সেখানেই পরম প্রাপ্তি। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি বলেছেন, শিল্পীর বয়েস হলেও শিল্পের বয়স বাড়ে না, শিল্পকে ভালােবেসেই শিল্পী অমরত্ব লাভ করে। এই সত্যই উচ্চারিত হয়েছে বৃদ্ধ মঞভিনেতা রজনীকান্তের কণ্ঠে।
ঘটনাবলি তার আকস্মিকতা নিয়ে তার শীর্ষবিন্দু বা ‘climax'-এ পৌছােয়।
একাঙ্ক নাটকের সার্থকতা : অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'নানা রঙের দিন’ নাটকটির সমগ্র ঘটনা মাত্র একটি রাতের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ। একদা মঞ্চের ডাকসাইটে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় অধুনা প্রৌঢ়ত্বের সীমায় উপস্থিত। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, অভিনয়ের
জগৎ আসলে এক মায়া, 'থিয়েটারওয়ালাদের’ জীবন অনেক বেশি রূঢ় ও কঠিন। তবুও মায়াবী সেই মঞ্চের আলােক-উজ্জ্বলতার টানেই এখনও তার মঞ্চে ফিরে আসা। ব্যক্তিগত জীবনেও তাই নিতান্ত নিঃসঙ্গ রজনীকান্ত উপলব্ধি করেছেন শারীরিক দুর্বলতার কারণে আর কয়েক বছর পরে তিনি 'দিলদার' চরিত্রেও অভিনয় করতে পারবেন না, জীবনে তখন নেমে আসবে ঘাের নিঃসঙ্গতা। নিজের অতীত গৌরবের কথা স্মরণ করতে করতে একসময় একের পর এক পুরােনাে নাটকের নানান চরিত্রের সংলাপ
উচ্চারণ করতে থাকেন রজনীকান্ত। এইভাবে অতীত-বর্তমানের দ্বান্দ্বিক টানাপােড়েনে নাটকটি শেষ হয়। সমগ্র নাটকটি স্বল্প পরিসরে একটিমাত্র দৃশ্যে রজনীকান্তের জীবনে একটি রাতের দৃশ্যে রজনীকান্তের জীবনের দ্বন্দ্বকে ব্যক্ত করে। একাঙ্ক নাটক নাট্যকারের বর্ণনা, চরিত্র চিত্রণ দক্ষতা ও একমুখীনতা নাটকটিকে বিশিষ্ট করেছে। ঘটনার সংক্ষিপ্ততা, সংলাপের সুষ্ঠ ব্যবহার, নাট্যবস্তুর একমুখিনতায় নাটকটি একাঙ্ক নাটক হিসেবে সার্থকতা লাভ করেছে।
২ প্রশ্নঃ 'নানা রঙের দিন' নাটক অবলম্বনে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করাে?***
ロ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'নানা রঙের দিন’ নাটকে বিশিষ্ট হারানাের যন্ত্রণায় দগ্ধ। নিজের জীবনযন্ত্রণা ভুলতে আজ সস্তা দামের মদ্যপান করেন। শিল্পের জন্য চরম একাকিত্ব মঞভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় জীবন সায়াহ্নে এসে অতীত গৌরব। আত্মনিবেদিত রজনী চাটুজ্জে যৌবন-আদর্শ-শক্তি-সন্ত্রম-প্রেম-নারী সবকিছুই হারিয়েছেন। নাটকের টানে তিনি সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ছেড়েছেন। দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছরের অভিনয় জীবন পার করে আটষট্টি বছরের অভিনেতা মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তার নিঃসহায় জীবনসত্য প্রকাশ পেয়েছে তারই উক্তিতে–“মরবার সময় মুখে
দু-ফোটা জল দেয় এমন কেউ নেই আমার।” শিল্পের প্রতি নিষ্ঠাবান শিল্পীর চরম একাকিত্বই রজনী কান্তের নিয়তি।
রজনী কান্তের চরিত্রটি এ নাটকে দ্বন্দ্বময়। একদিকে শূন্য জীবনের হাহাকার, অন্যদিকে প্রতিভাবলে জরা-ব্যাধি-মৃত্যুকে জয় করতে চাওয়া চরিত্রের এই দ্বান্দ্বিকতায় ‘দেহপট সনে নট সকলি হারায়
–এই বাক্য ধ্রুবসত্য মনে হয়। এই দুই সত্যের দ্বিধায় তিনি ঔরঙ্গজীবের মতাে গ্লানিময়, ওথেলাের মতাে সব হারানাে ব্যক্তি। এই দ্বন্দময়তার মাঝেও রজনীকান্ত তার বংশমর্যাদা সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন ছিলেন—“রাঢ়ের সবচেয়ে প্রাচীন ভদ্র ব্রাত্মণ বংশে জন্মেছিলুম।” জীবন রজনীকান্তকে শিখিয়েছে অভিনেতার সামাজিক সম্মান নেই, তার কাজ কেবল ‘খদ্দেরদের আনন্দ দেওয়া। তারা শুধুমাত্র ক্লাউন’, ‘চাকর। তবু শিল্পের দায় অভিশপ্ত সিসিফাসের মতাে তিনি আমৃত্যু বহন করে চলেছেন। প্রতিভা কারুবাসনাই তাকে সর্বরিক্ত করেছে, মৃত্যু ছাড়া তার মুক্তি নেই এ সত্য বদল হবে না, নাটকের শেষে তিনি তা বুঝেছেন।
৩ প্রশ্নঃ “জীবনে
ভাের নেই, সকাল নেই, দুপুর নেই, সন্ধ্যেও ফুরিয়েছে—এখন
শুধু মাঝ রাত্তিরের অপেক্ষা”—বক্তা কে? কখন এই মন্তব্য
করেছেন? বক্তব্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো?***
অথবা,
“... জীবনে ভাের নেই, সকাল নেই, দুপুর নেই, - এখন শুধু মাঝ রাত্তিরের অপেক্ষা বক্তা কে? এ প্রসঙ্গে বৃদ্ধ অভিনেতার মনের যন্ত্রণা যেভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে তা লেখাে?
অথবা,
“... জীবনে ভাের নেই, সকাল নেই, দুপুর নেই, - এখন শুধু মাঝ রাত্তিরের অপেক্ষা বক্তা কে? এ প্রসঙ্গে বৃদ্ধ অভিনেতার মনের যন্ত্রণা যেভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে তা লেখাে?
অথবা,
“এখানেই গল্প শেষ”—কার, কেন এমন মনে হয়েছিল?
অভিনয়শেষে নেশায় আচ্ছন্ন রজনীকান্ত মাঝরাতে হঠাৎ গ্রিনরুমে জেগে উঠে শূন্য প্রেক্ষাগৃহের সামনে মুখােমুখি দাঁড়ান। জীবনসায়াহ্নে এসে রজনীকান্ত আত্মবিশ্লেষণে উপলদ্ধি করেন তার যৌবন হারিয়ে গিয়েছে। নিঃসঙ্গ জীবনের একাকিত্বে অতীতের রুপােলি দিনগুলি মনে করে তিনি উদ্ধৃত
উক্তিটি করেন। এককালের জনপ্রিয় অভিনেতা রজনীকান্ত শিল্পের প্রতি ভালােবাসায় নিজের আত্মীয় পরিজন, সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিয়েছিলেন। কিন্তু জীবনের শেষপর্বে অনাদৃত-মাদকা সক্তরূপে তিনি নিজেকে দেখেছেন। প্রায় প্রত্যহ শূন্য মঞ্চে স্মৃতিকাতর নেশাচ্ছন্ন রজনী হতাশা, অনুশােচনায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানেন লম্বা চুলে কলপ লাগিয়ে কেবল বাইরে থেকে প্রৌঢ়ত্বে প্রলেপ দেওয়া সম্ভব, কিন্তু বয়সের অনিবার্য ক্ষয় রােধ করা যাবে না। রজনীকান্ত উপলব্ধি করেছেন আটষট্টি বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর তার খ্যাতি-সুনাম-সামর্থ্য, জনপ্রিয়তার মায়াবী আস্তরণ সরে গিয়ে। জীবন নাট্যের ধারা চিরন্তন গতিতে মৃত্যুর প্রতি ধাবমান। এখানে ভাের-সকাল-দুপুর-সন্ধে বলতে, জীবনের প্রতিটি পর্বের কথা বােঝানাে হয়েছে—যা রজনীর জীবনে কখনােই আর ফিরে আসবে না।
৪ প্রশ্নঃ 'শিল্পকে যে-মানুষ ভালােবেসেছে-তার বার্ধক্য নেই কালীনাথ,”—নানা রঙের দিন’নাটক অবলম্বনে মন্তব্যটি লেখাে?***
ロ সুপ্রসিদ্ধ অভিনেতা-নিদের্শক অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নানা রঙের দিন’ একাঙ্ক নাটকে প্রশ্নে প্রদত্ত মন্তব্যটি করেছেন রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। বিগত দিনের বিশিষ্ট জনপ্রিয় অভিনেতা রজনীকান্ত আজ আটষট্টি বছর বয়সে দাঁড়িয়ে উপলদ্ধি করেছেন যে, অভিনয়জীবনের রূপােলিজগতের মায়া ক্রমশ সরে গেছে। অভিনয় শেষে সুরাসক্ত রজনীকান্ত মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে একা মঞ্চে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্লেষণ করেছেন। ঘটনাচক্রে প্রম্পটার কালীনাথের সঙ্গে বিগত দিনের সফল চরিত্রগুলাের সংলাপ উচ্চারণ করে নিজের গ্লানি-হতাশা দূর করতে উদ্যমী হন তিনি। রজনীকান্ত ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন বয়স বাড়লেও রক্তে মিশে থাকা তার প্রতিভা এখনও লােপ পায়নি। শিল্পীর সঙ্গে শিল্পের এই নিবিড় সংযােগসূত্রেই প্রশ্নোপ্ত মন্তব্যটি করেছেন তিনি।
শিল্পের সঙ্গে শিল্পীর সংযােগ দেহ ও প্রাণের যােগাযােগের মতাে রজনীকান্ত শিল্পের জন্য তথাকথিত সামাজিক প্রতিষ্ঠা, সংসার, অর্থ, নারী সবকিছুই ত্যাগ করেছেন। প্রৌঢ়ত্বের প্রান্তে এসে তিনি উপলব্ধি
করেন তার চরম খ্যাতি-প্রতিপত্তি বা সৃজন ক্ষমতার দিন শেষ। জীবনের সকাল-দুপুর-সন্ধে পার হয়ে এখন শুধুই অন্ধকার রাত। কিন্তু বিগত কিছু চরিত্রের সংলাপের মধ্য দিয়ে তিনি অনুভব করছেন অভিনয়েই অভিনেতার মুক্তি প্রতিভা কখনও বয়সের ভারে ক্ষয় পায় না। শিল্পকে নিঃশর্ত ভালােবাসার জন্য তার যে সর্বস্বান্ত পরিণতি হয়েছে, তিনি বুঝেছেন সেখানেই পরম প্রাপ্তি। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি বলেছেন, শিল্পীর বয়েস হলেও শিল্পের বয়স বাড়ে না, শিল্পকে ভালােবেসেই শিল্পী অমরত্ব লাভ করে। এই সত্যই উচ্চারিত হয়েছে বৃদ্ধ মঞভিনেতা রজনীকান্তের কণ্ঠে।