Related Tags : ইতিহাসের প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি,ক্লাস 10 ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর,ইতিহাসের ধারণা অষ্টম শ্রেণির প্রশ্ন উত্তর,মাধ্যমিক ইতিহাস বড় প্রশ্ন উত্তর,দশম শ্রেণির ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়,বড় প্রশ্ন উত্তর দ্বাদশ শ্রেণি,উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন বড় প্রশ্ন,বড় প্রশ্ন,struggle for career ।। ইতিহাস উচ্চ মাধ্যমিক প্রশ্ন উত্তর,উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বড় প্রশ্ন সাজেশন 2022,মাধ্যমিক mcq প্রশ্ন উত্তর ।। struggle for career,উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন 2022,উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন,দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চ্যালেঞ্জার প্রশ্ন চতুর্থ অধ্যায়ঃ,ইতিহাস,ইতিহাস প্রথম অধ্যায়
ইতিহাসের প্রশ্ন উত্তর মার্ক - ৫ ইতিহাস মেনু ❝ ক ❞
১. কর্নওয়ালিসের বিচার সংস্কার উল্লেখ করো?
২. কোল বিদ্রোহের পরিচয় দাও?
৩. কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশন (১৯০৭)খ্রি:?
৪. কোমাগাতামারু ঘটনা কী?
৫. কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল /কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পার্টি?
৬. কংগ্রেসের ত্রিপুরি অধিবেশন ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ?
৭. কুষাণ সম্রাট কনিষ্কের কৃতিত্ব আলোচনা করো?
৮. কুষাণ যুগে বিজ্ঞানচর্চার পরিচয় দাও?
৯. টীকা লেখাে কবির?
১০. কর্ণাটক যুদ্ধের ফলাফল আলােচনা করাে?
১১. কুষাণ যুগের সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিবরণ দাও?১২. ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবগুলি উল্লেখ করো?
১৩. ক্রিপস প্রস্তাব ব্যর্থ হলো কেন?
১৪. ক্রিপস মিশন ভারতে আসার কারণ কি ছিল?
১৫. ক্রিমিয়ার যুদ্ধের যুদ্ধের কারণ আলােচনা করাে?
১৬. কার্বোনারি সমিতি সমিতি কী?
১৭. কনকর্ডাট বা ধর্ম মীমাংসা চুক্তি কী?১৮. কোড নেপােলিয়ন সম্পর্কে কী জান?
⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿⇿
✏ ওয়ারেন হেস্টিংস ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যে, কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিশ তাকে আরও সুদৃঢ় করতে সচেষ্ট হন এবং বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারসাধন করেন।
⁍বিচার সংস্কার :
- রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীরা যাতে আদালতের ক্ষমতাবলে ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকারে অবৈধ হস্তক্ষেপ করতে না পারে তার জন্য কর্নওয়ালিশ রাজস্ব ও বিচার বিভাগকে পৃথক করেন।
- কর্নওয়ালিশ চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত স্থাপন করেন। প্রত্যেক ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুজন ইংরেজ বিচারক নিযুক্ত হন।
- প্রতি জেলায় একজন ইংরেজ জজের অধীনে জেলা আদালত স্থাপন করা হয়। জেলার বিচারালয় গুলিতে কেবলমাত্র রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলা বিচারের ব্যবস্থা করা হয়।
- জেলা ফৌজদারি আদালতগুলির পরিবর্তে কলকাতা, পাটনা, ঢাকা, মুরশিদাবাদে চারটি প্রাদেশিক আদালত স্থাপিত হয়। এই আদালতগুলিতে ইংরেজ জজ নিযুক্ত হন।
- ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে বিখ্যাত কর্নওয়ালিশ কোড প্রণীত হয়। কর্নওয়ালিশ সরকারি কর্মচারীদের সততা, কর্মদক্ষতা ও নিয়মানুবর্তিতা বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি আচরণবিধি তৈরি করেন। এই আচরণবিধি মান্য করা, সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়।
⁍ অন্যান্য সংস্কার :
বিচার ক্ষেত্রে কর্নওয়ালিশের অন্যান্য সংস্কারগুলি হল :
● বিচারব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তরে সদর আমিন ও মুনসেফি বিচারালয় স্থাপিত হয়।
● দেশীয় আইন ব্যাখ্যার জন্য কাজী ও মুতি নিযুক্ত হয়।
● বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মামলার চূড়ান্ত নিম্পত্তির জন্য ইংল্যান্ডের রাজা ও তাঁর পরিষদের কাছে আবেদন করার ব্যবস্থা চালু করা হয়।
❍ ২. কোল বিদ্রোহের পরিচয় দাও?
✏ বিহারের অন্তর্গত ছােটোনাগপুর, সিংভূম, মানভূম প্রভৃতি অঞ্চলে বসবাসকারী উপজাতি জনগােষ্ঠী কোল হিসেবে পরিচিত। কৃষি এবং বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল কোল উপজাতির মানুষ আধুনিক সভ্যতা থেকে দূরে এই অরণ্যভূমি অঞ্চলে স্বাধীনভাবে জীবিকানির্বাহে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। কোলরা আবার হাে, ওরাঁও, মুন্ডা প্রভৃতি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল।
⁍ বিদ্রোহের কারণ :
- ইংরেজ কোম্পানি ছােটোনাগপুর অঞ্চলের শাসনভার পাওয়ার পর অঞ্চলটিকে কয়েকটি
- ভাগে ভাগ করে,বহিরাগত হিন্দু, মুসলিম, শিখ মহাজনদের ইজারা দেয়। এইসৱ মহাজনরা রাজস্বের হার বৃদ্ধি করলে কোলরা বিদ্রোহী হয়।
- ব্রিটিশ কোম্পানি কোলদের ওপর নগদ অর্থে খাজনা দেওয়ার আইন চালু করে। এক্ষেত্রে ফসল বিক্রি
- করে নগদ অর্থ অর্জনের সময় কোলরা মহাজন ও ব্যবসায়ীদের হাতে প্রতারিত হয়।
- ব্রিটিশ রাজত্বের পূর্বে কোলরা ছােটোনাগপুর অঞ্চলের বনজ দ্রব্য আহরণ করে বা সামান্য চাষবাস করে জীবিকা চালাত। কিন্তু কোম্পানির আমলে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আফিম চাষ করানাে হয়। এতে কোলদের জীবিকাগত ঐতিহ্যে আঘাত লাগে ও তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
⁍ বিদ্রোহের নেতৃত্ব ও বিস্তার : সাহসী নেতৃত্বের গুণে কোল বিদ্রোহ অপ্রতিরােধ্য হয়ে ওঠে। বুদ্ধু ভগত, জোয়া-ভগত, ঝিন্দরাই মানকি, সুই মুন্ডা প্রমুখের নেতৃত্বে কোল বিদ্রোহ পরিচালিত হয়। ১৮২০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই কোল উপজাতি ছােটো ছােটো বিদ্রোহ সংগঠিত করতে শুরু করলেও ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে তারা প্রথম সংঘবদ্ধভাবে বিদ্রোহ ঘােষণা করে। বিদ্রোহী কোলদের সঙ্গে যােগ দেয় সাধারণ চাষি, কামার, কুমাের, গােয়ালা প্রভৃতি নিম্নবর্গীয় ও শােষিত মানুষ। ইংরেজ সরকার সেনাবাহিনীর সাহায্যে এই বিদ্রোহ দমন করে।
⁍ কোল বিদ্রোহের গুরুত্বঃ কোল বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে সরকার কোল উপজাতিদের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি’ নামে একটি ভূখণ্ড নির্দিষ্ট করে দেয়। এবং কোলদের বসবাসের জন্য নির্দিষ্ট এইসব অঞ্চলে কয়েকটি স্বতন্ত্র নিয়মকানুন প্রবর্তিত হয়।
❍ ৩. কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশন (১৯০৭) খ্রি:?
✏ কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার প্রথম কুড়ি বছর (১৮৮৫-১৯০৫ খ্রি.) কংগ্রেস ব্রিটিশের কাছ থেকে কোনাে দাবিই পূরণ করতে পারেনি। এই অবস্থায় বিশেষত বঙ্গভঙ্গের সময় কংগ্রেসের ভেতরেই এক অংশের মধ্যে বিক্ষোভ দানা বেধে ওঠে। এই বিক্ষোভের চরম পরিণতি ঘটে ১৯০৭ খ্রি. সুরাট অধিবেশনে চরমপন্থী ও নরমপন্থী ভাঙনের মাধ্যমে।
বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে চরমপন্থীরা নিষ্ক্রিয় প্রতিরােধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে অচল করে দেবার দাবি জানান। কিন্তু নরমপন্থীরা চরমপন্থীদের এই দাবি মেনে নেননি। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের কলকাতা কংগ্রেসে চরমপন্থীরা চাপ সৃষ্টি করে চারটি প্রস্তাব পাস করিয়ে নেন, যথা—স্বরাজ, বয়কট, স্বদেশি ও জাতীয় শিক্ষা। তাদের ভয় ছিল পরবর্তী সুরাট অধিবেশনে নরমপন্থীরা এই প্রস্তাবগুলি নাকচ করে দেবেন। তাই চরমপন্থীরা ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের সুরাট অধিবেশনে কংগ্রেসের মঞ্চ দখল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে বিরােধ চরমে পৌঁছােয়।
এক স্মরণীয় অধ্যায়ের সমাপ্তি ও নতুন এক যুগের সূচনা ঘটে।"
❍ ৪. কোমাগাতামারু ঘটনা কী?
✏ কোমাগাতামারু ঘটনা ভারতীয়দের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গদের বর্ণ বৈষম্যের নগরূপ উদঘাটিত করেছিল।ফলে ভারতীয়দের অসন্তোষের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে সংশােধিত কানাডা অভিবাসন আইন (Canada Immigration Act.)- এ বলা হয়, যে সমস্ত অভিবাসনকারীর কাছে ২০০ কানাডিয়ান ডলার থাকবে এবং যারা তাদের নিজের দেশ থেকে সরাসরি কানাডায় আসবে কেবল তাদেরই কানাডায় ঢােকার অনুমতি দেওয়া হবে। ব্রিটিশ সরকারের প্ররােচনায় কানাডা সরকার সে দেশে ভারতীয়দের প্রবেশের ওপর এই বিধিনিষেধ জারি করে। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর বাবা গুরদীদ সিং নামে এক পাঞ্জাবি ৩৭২ জন শিখ যুবককে নিয়ে কোমাগাতামারু নামে একটি জাপানি জাহাজ ভাড়া করে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার বন্দরে পৌঁছেন। কানাডা সরকার সে-দেশে জাহাজটির প্রবেশে বাধা দেয়। চরম দুর্দশার মধ্যে প্রায় দু-মাস চেষ্টার পরও যাত্রীরা কানাডায় নামতে ব্যর্থ হন। তখন বাধ্য হয়ে যাত্রীবােঝাই জাহাজটি কলকাতার দিকে পাড়ি দেয়।
বহু দুঃখকষ্ট সহ্য করে যাত্রীরা শেষপর্যন্ত কলকাতার কাছে বজবজে উপস্থিত হন। কিন্তু ভারতের ইংরেজ সরকার জাহাজের সমস্ত আরােহীকে ট্রেনযােগে পাঞ্জাবে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এতে উত্তেজনা দেখা দেয়। যাত্রীরা জোর করে কলকাতায় ঢােকার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ২০ জন মারা যায়। অন্যদের বন্দি করে পাঞ্জাবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এটি কোমাগাতামারু ঘটনা নামে খ্যাত।
❍ ৫. কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল /কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পার্টি?
✏ তেরােটি প্রাদেশিক কংগ্রেস সােশ্যালিস্ট গােষ্ঠীর প্রতিনিধি বােম্বাইয়ে আয়ােজিত এক সম্মেলনে মিলিত হয়ে প্রতিষ্ঠা করে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস সােশ্যালিস্ট পার্টি (১৯৩৪ খ্রি., ২৩ অক্টোবর)। এই দলের চেয়ারম্যান হন সম্পূৰ্ণানন্দ আর সম্পাদক নির্বাচিত হন জয়প্রকাশ নারায়ণ। কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল গঠনে মূল ভূমিকা নেন জয়প্রকাশ নারায়ণ, ড. রামমনােহর লােহিয়া, অচ্যুত পট্টবর্ধনা প্রমুখ।এই দলের অন্যান্য উল্লেখযােগ্য সদস্য ছিলেন—অশােক মেহতা, এফ, এইচ, আনসারি, এম. আর. মাসানী, কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
কংগ্রেস সােশ্যালিস্ট পার্টির মূলনীতির মধ্যে অন্যতম ছিল কংগ্রেস দলের মধ্যেকার বামপন্থীমানসি-কতা সম্পন্নদের একজোট করা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাধীনতা অর্জন করা। এবং জাতীয়তাবাদের সুষ্ঠু প্রসারের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণ করা।
⁍ কর্মসূচি : কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের উল্লেখযােগ্য কয়েকটি কর্মসূচি ছিল—
- প্রত্যেক শ্রমিককে তার ন্যায্য পাওনা অনুযায়ী পারিশ্রমিক দান।
- কাজের অধিকারকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দান।
- কৃষিঋণ মকুব ও কৃষকদের মধ্যে ভূমিবণ্টন ব্যবস্থার রূপায়ণ।
- বহির্বাণিজ্যে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আরােপ।
- শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক উৎপাদনকেন্দ্রগুলিকে সমাজতান্ত্রিক কাঠামাে দান।
কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক দলের আন্তরিক প্রচেষ্টার সুবাদে সুভাষচন্দ্র ত্রিপুরি কংগ্রেসে দ্বিতীয়বারের জন্য সভাপতি মনােনীত হন। এই দলের প্রচেষ্টার জন্যই পরবর্তীকালে বেশ কিছু বামপন্থী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।
❍ ৬. কংগ্রেসের ত্রিপুরি অধিবেশন ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ?
✏ হরিপুরা কংগ্রেসের অধিবেশনে (১৯৩৮ খ্রি.) সুভাষচন্দ্র সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয় বারের জন্য ত্রিপুরি কংগ্রেসের অধিবেশনেও পুনরায় সভাপতি পদে মনােনীত হন। নাম্বুদ্রিপাদ, সুন্দরাইয়া-সহ আটজন বিক্ষুব্ধ নেতা সুভাষকে পুনরায় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি করার দাবি তােলেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই
প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্র গঠন, পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন, কংগ্রেসের অধীনে শ্রমিক, কৃষকদের সংগঠিত করে সাম্রাজ্য বাদের বিরােধিতা ইত্যাদি দাবি তুলে সুভাষ গান্ধিজির বিরাগভাজন হন। গান্ধিজি তাই ত্রিপুরি অধিবেশনে সভাপতি পদে সুভাষের বিপরীতে পট্রভি সীতারামাইয়াকে দাঁড় করান।
ত্রিপুরি অধিবেশনে সুভাষ গান্ধিজি সমর্থিত প্রার্থী পটুভি সীতারামাইয়াকে ২০৩ ভােটে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের জন্য জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। পট্টভির পরাজয়ে হতাশ গান্ধিজি বলেন—“সীতারামাইয়ার পরাজয়, আমার পরাজয়।” গান্ধিজির অঙ্গুলি হেলনে কংগ্রেস কার্যকরী সমিতির সকল সদস্য পদত্যাগ করলে সুভাষ বাধ্য হন জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির পদে ইস্তফা দিতে। এরপর সুভাষ কংগ্রেসের মধ্যেই আলাদা ফরওয়ার্ড ব্লক’ দল গঠন করেন। সুভাষচন্দ্রের পদত্যাগের পর কংগ্রেসে দক্ষিণপন্থীরা ক্ষমতাশালী হন ও বামপন্থী শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ত্রিপুরি অধিবেশনের পরই সুভাষ বুঝলেন ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদের লড়াই সম্ভব নয়, তাই তিনি বিদেশি শক্তির সাহায্যে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
✏ হরিপুরা কংগ্রেসের অধিবেশনে (১৯৩৮ খ্রি.) সুভাষচন্দ্র সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয় বারের জন্য ত্রিপুরি কংগ্রেসের অধিবেশনেও পুনরায় সভাপতি পদে মনােনীত হন। নাম্বুদ্রিপাদ, সুন্দরাইয়া-সহ আটজন বিক্ষুব্ধ নেতা সুভাষকে পুনরায় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি করার দাবি তােলেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই
প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্র গঠন, পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন, কংগ্রেসের অধীনে শ্রমিক, কৃষকদের সংগঠিত করে সাম্রাজ্য বাদের বিরােধিতা ইত্যাদি দাবি তুলে সুভাষ গান্ধিজির বিরাগভাজন হন। গান্ধিজি তাই ত্রিপুরি অধিবেশনে সভাপতি পদে সুভাষের বিপরীতে পট্রভি সীতারামাইয়াকে দাঁড় করান।
ত্রিপুরি অধিবেশনে সুভাষ গান্ধিজি সমর্থিত প্রার্থী পটুভি সীতারামাইয়াকে ২০৩ ভােটে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের জন্য জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। পট্টভির পরাজয়ে হতাশ গান্ধিজি বলেন—“সীতারামাইয়ার পরাজয়, আমার পরাজয়।” গান্ধিজির অঙ্গুলি হেলনে কংগ্রেস কার্যকরী সমিতির সকল সদস্য পদত্যাগ করলে সুভাষ বাধ্য হন জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির পদে ইস্তফা দিতে। এরপর সুভাষ কংগ্রেসের মধ্যেই আলাদা ফরওয়ার্ড ব্লক’ দল গঠন করেন। সুভাষচন্দ্রের পদত্যাগের পর কংগ্রেসে দক্ষিণপন্থীরা ক্ষমতাশালী হন ও বামপন্থী শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ত্রিপুরি অধিবেশনের পরই সুভাষ বুঝলেন ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদের লড়াই সম্ভব নয়, তাই তিনি বিদেশি শক্তির সাহায্যে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
❍ ৭. কুষাণ সম্রাট কনিষ্কের কৃতিত্ব আলোচনা করো?
✏ ভারতে কুষাণ শাসকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন কনিষ্ক। তাঁর আমলেই শিল্প, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির উন্নতি চরমে পৌছােয়। কনিষ্ক মগধ আক্রমণ করে পাটলিপুত্র দখল করার পাশাপাশি, গান্ধার, পুরুষপুর ছাড়াও মধ্য এশিয়ার কাশগড়, ইয়ারখন্দ, খােটান প্রভৃতি অঞ্চলের ওপর নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর কৃতিত্বেই কুষাণ সাম্রাজ্য-সীমা উত্তরে কাশ্মীর থেকে দক্ষিণে সাঁচি এবং পূর্বে বারাণসী থেকে পশ্চিমে সিন্ধুনদ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। কনিষ্কের আন্তরিক উদ্যোগে বৌদ্ধধর্ম আরও গতিশীল হয়ে উঠেছিল। তিনি পুরাতন বৌদ্ধমঠ, বিহার ও চৈত্যগুলি সংস্কারের পাশাপাশি বহু নতুন বৌদ্ধমঠ, স্থূপ ও
চৈত্য নির্মাণ করেন। বৌদ্ধধর্মের দুই সম্প্রদায় হীনযান ও মহাযানদের মধ্যেকার বিবাদের মীমাংসার জন্য তিনি কাশ্মীরে অন্য মতে জলন্ধরে চতুর্থ বৌদ্ধসংগীতির আয়ােজন করেন এবং কাশ্যপ মাতঙ্গ ও ধর্মরত্নকে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য চিনে পাঠান।
কনিষ্ক সাহিত্য ও শিল্পের একজন উৎসাহী পৃষ্ঠপােষক ছিলেন। তাঁরই উদ্যোগে এ সময়ে সংস্কৃত ভাষা তার হারানাে গৌরব ফিরে পায়। তারই পৃষ্ঠপােষকতায় অশ্বঘােষের বুদ্ধচরিত ও বজ্ৰসূচী গ্রন্থ, নাগার্জুনের মাধ্যমিকা সূত্র ও প্রজ্ঞাপারমিতা, চরকের চরক সংহিতা, সুশুতের সুশ্রুত সংহিতা ইত্যাদি গ্রন্থ রচিত হয়। কনিষ্কের আমলেই গাধার, মথুরা প্রভৃতি শিল্পরীতির চরম বিকাশ ঘটে। কনিষ্কের আমলে বাইরের দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নত হয়, বিশেষত ভারত-চিন ও ভারত- রােম সম্পর্কের উন্নতি ঘটে; এর পাশাপাশি জাপান, মিশর ও গ্রিসের সঙ্গেও ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
❍ ৮. কুষাণ যুগে বিজ্ঞানচর্চার পরিচয় দাও?
✏ কুষাণ যুগে বিজ্ঞানচর্চার মান ছিল যথেষ্ট উন্নত। এযুগে চিকিৎসাবিজ্ঞান, শারীরবিজ্ঞান ও ভেষজ বিজ্ঞানের যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। এযুগে চিকিৎসাতত্ত্বের অনেক নতুন দিগন্ত উন্মােচিত হয়েছিল।
⁍ ভেষজবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞান: [চরক] : কুষাণ রাজ কনিষ্কের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন চরক। এই চিকিৎসা- শাস্ত্রবিদ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর রচনা করেন চরক সংহিতা গ্রন্থটি। এই গ্রন্থে তিনি আট ধরনের প্রধান রােগ, এই রােগগুলির প্রতিষেধমূলক ব্যবস্থা ও তার পথ্য, অস্ত্রোপচার, শিশুরােগ প্রভৃতি
সম্বন্ধে আলােচনা করেছেন। [সুশ্রুত] : চিকিৎসাবিজ্ঞানী সুশ্রুত সময়কাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে অনেকের ধারণা হল তিনি কুষাণ যুগেরই মানুষ ছিলেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান বা আয়ুর্বেদের উপর লেখা
তাঁর বইটির নাম হল সুশ্রুতসংহিতা'। এই গ্রন্থে অস্ত্রোপ্রচার সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি এবং অস্ত্রোপ্রচারের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তৃত আলােচনা রয়েছে। এই গ্রন্থটির দুটি সংস্করণ রয়েছে। প্রথমটি চন্দ্রট এবং দ্বিতীয়টি নাগার্জুন সম্পাদিত। সুশ্রুতই প্রথম সিজারিয়ান অস্ত্রচিকিৎসার বিধান দেন। তাঁকে প্লাস্টিক সার্জারির জনক এবং অ্যানাসথেসিয়া (Anasthesia)-এর জনকও বলা হয়।
⁍ ধাতুবিজ্ঞান : কুষাণসম্রাট কনিষ্কের সভাপতি অশ্বঘােষ ‘ধাতু-সমান্য কথাটি ব্যবহার করেছেন। এর অর্থ ছিল আরােগ্য। কুষাণরাই ভারতে ঘােড়ার রেকাব ব্যবহারের রীতি চালু করে। এ সময়ে লােহা ও ইস্পাতের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি হত।
⁍ প্রযুক্তিবিজ্ঞান: রােমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে যােগাযােগের সুবাদে কুষাণ যুগে প্রযুক্তিবিদ্যায় যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছিল। এযুগে বিভিন্ন শিল্পে প্রযুক্তি বিদ্যার সাহায্যে নানান শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদন করা হয়।
❍ ৯. কবির ?
✏ কবির ছিলেন সুলতান সিকন্দর লােদি ১৪৮৯ -১৫১৭ খ্রি. সমসাময়িক একজন উল্লেখযােগ্য ভক্তিবাদী সাধক। কাশীর এক ব্রাত্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও, তাঁকে পরিত্যাগ করলে এক মুসলমান তাঁতি বা জোলা নিবুর পরিবারে তিনি প্রতিপালিত হন। অধ্যাপক কালিকারঞ্জন কানুনগাে এই গার্হস্থ্য ভক্তিবাদী সাধক সম্পর্কে বলেছেন, “কবিরের ভাবনাচিন্তায় হিন্দু ও মুসলিম রহস্যবাদের যুগ্ম প্রভাব পড়েছিল।”
কবির প্রচার করেন যে, মানুষ নানা নামে ডাকলেও আসলে আল্লা বা ঈশ্বর এক, তাঁর অবস্থান মানুষের
অন্তরে—তাই জাতিভেদ, বর্ণবৈষম্য, পূজানুষ্ঠান ইত্যাদি মেনে চলার দরকার নেই। তাঁর ভক্তিবাদী আদর্শের মূলসুর ছিল সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন।
কবির বলতেন, “ঈশ্বর মসজিদে নেই, মন্দিরেও নেই, কাবাতেও নেই, কৈলাসেও নেই, আচারেও নেই,
অনুষ্ঠানেও নেই, যােগেও নেই, ত্যাগেও নেই।” হিন্দুদর্শন ও সুফি মতবাদ দ্বারা কবির গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। নাথপন্থীদের ঐহিত্য মেনে কবির পার্থিব দেহধারী বা অবতাররূপী ঈশ্বরের পরিবর্তে একেশ্বর বা পরমেশ্বরে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।কবিরের ভক্তিবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায় একে অপরের ধর্মনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে।
হিন্দিতে ছােটো ছােটো শ্লোক রচনা করে কবির নিজের বক্তব্য সুন্দরভাবে প্রকাশ করতেন। এগুলিই কবিরের দোহা’ নামে খ্যাত। কবিরের শিষ্যরা কবিরপন্থী’নামে পরিচিত হন। কবিরের মৃত্যুর পর কবিরপন্থীরা কবিরের পুত্র কমলকে নতুন ধর্মমত প্রচারের অনুরােধ জানিয়ে ব্যর্থ হন কারণ কমল মনে করতেন, তাঁর পিতা কবির ছিলেন সর্বধর্মে বিশ্বাসী। তাই আলাদা করে নতুন ধর্মমত প্রচারের প্রয়ােজন নেই।
✏ কর্ণাটক যুদ্ধে শেষপর্যন্ত ফরাসিরা ইংরেজদের কাছে পরাজিত হলে এদেশে তাদের রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক প্রতিপত্তি বৃদ্ধির সম্ভাবনা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। এই যুদ্ধগুলি ভারতের ইতিহাসে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ।
.
⁍ কর্ণাটক যুদ্ধের ফলাফল :
প্রবর্তন হয়। ইংরেজরা আরও বুঝতে পারে যে, ভারতীয় সৈন্যদের ইউরােপীয় পদ্ধতিতে শিক্ষা দিলে তারা ইউরােপীয় সৈন্যের সমকক্ষ হতে পারে।(iv) কর্ণাটকের যুদ্ধে শেষপর্যন্ত ইংরেজ শক্তি বিজয়ী হয়ে ভারতের বহির্বাণিজ্যে ও অন্তর্বাণিজ্যে তাদের একচেটিয়া অধিকার স্থাপন করে। এতে দেশীয় বণিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলার নবাবের সঙ্গে কোম্পানির তীব্র বিরােধ দেখা দেয়।
❍ ১১. কুষাণ যুগের সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও?
✏ সাহিত্যের ক্ষেত্রে কুষাণ যুগের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। কনিষ্ক ছিলেন সাহিত্যের একান্ত অনুরাগী। তাঁর রাজসভা অলংকৃত করেছিলেন অশ্বঘােষ, নাগার্জুন, বসুমিত্র, চরক প্রমুখ জ্ঞানীগুণী পণ্ডিতেরা।⁍ কুষাণ যুগের সাহিত্যচর্চা :
- সংস্কৃত সাহিত্যচর্চা : কুষাণ রাজাদের উদ্যোগে সংস্কৃত সাহিত্য বিকাশলাভ করে। অশ্বঘােষ সংস্কৃত ভাষায় রচনা করেন বুদ্ধচরিত মহাকাব্য। এতে বুদ্ধের জীবনী চিত্রিত হয়েছে। তাঁর অন্য দুটি প্রসিদ্ধ রচনা হল বজ্ৰসূচী গ্রন্থ ও সৌন্দরানন্দ কাব্য।
- বৌদ্ধসাহিত্য : মহাযান বৌদ্ধধর্মের প্রসার পরােক্ষে সাহিত্যচর্চাকে উৎসাহিত করে। মহাযান মতবাদ প্রচারের জন্য বৌদ্ধগ্রন্থ মহাবস্তু’, দিব্যবদান’ প্রভৃতিও সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়। বৌদ্ধশাস্ত্রকার নাগার্জুন রচনা করেন মাধ্যমিকা সূত্র ও শতসাহস্রীকা প্রজ্ঞাপারমিতা। বসুমিত্রের ‘মহাবিভাষা’ এ যুগের একটি অমর সৃষ্টি।
- নাট্যসাহিত্যচর্চা : কনিষ্কের সভাকবি অশ্বঘােষ নাট্যসাহিত্যেও পারদর্শী ছিলেন। অশ্বঘােষ রচিত দুখানি নাটক হল—সারিপুত্র প্রকরণ’ ও ‘ 'রাষ্ট্রপাল’। এ যুগের অপর এক সুবিখ্যাত নাট্যকার ছিলেন ভাস। তিনি রচনা করেন স্বপ্নবাসবদত্তা’ নাটক।
⁍ কুষাণ যুগের সংস্কৃতি :
- সমন্বয়বাদ : কুষাণ যুগের সংস্কৃতির মূল বৈশিষ্ট্য ছিল সমন্বয়বাদ। ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে কুষাণ সংস্কৃতির মেলবন্ধন এক উদার ও সমন্বয়ী সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছিল। কুষাণ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার মিলন ঘটে। দেশীয় ও বিদেশীয় শাসনধারার মেলবন্ধন ঘটিয়ে কুষাণরা এক সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে।
- শিল্পকলা ও ভাস্কর্য : শিল্পকলার ক্ষেত্রেও কুষাণ যুগের অবদান স্মরণীয়। । গান্ধার শিল্পরীতি, গ্রিক, রােম ও ভারতীয় শিল্পকলার সমন্বয়ে কুষাণ যুগে এক নতুন শিল্পরীতি বিকাশ লাভ করে, যা গান্ধার শিল্প’ নামে পরিচিত। গান্ধার শিল্পের মূল বিষয়বস্তু ছিল বুদ্ধ এবং বৌদ্ধধর্ম। বলা হয়, গান্ধারের শিল্পীদের হাত দুটি ছিল গ্রিক ও রােমক, কিন্তু হৃদয় ছিল সম্পূর্ণ ভারতীয়।
- মথুরা শিল্পরীতি : কুষাণ রাজাদের উৎসাহে মথুরাতে সম্পূর্ণ ভারতীয় রীতিতে ভাস্কর্যশিল্প গড়ে ওঠে। লাল রঙের বালি ও পাথরের সংমিশ্রণে সৃষ্ট এই শিল্প ছিল অনবদ্য। মথুরা শিল্পের মূল বিষয় ছিল বুদ্ধমূর্তি।
- মুদ্রায় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রকাশ : কুষাণ যুগে কুষাণ রাজাদের প্রবর্তিত মুদ্রায় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র প্রতিফলিত হয়েছিল। মুদ্রাগুলিতে খােদিত বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তির উপস্থিতি থেকে কুষাণ যুগের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। সােনা ও তামার তৈরি মুদ্রাগুলিতে দেশীয় দেবদেবীর মূর্তি ছাড়াও গ্রিক ও পারসিকদের দেবদেবীর মূর্তির উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়। কুষাণ যুগের মুদ্রা থেকে জানা যায় যে, কুষাণ সংস্কৃতি বৈচিত্র্য মন্ডিত হলেও সেই সংস্কৃতির মূলভিত্তি ছিল সমন্বয়বাদ।
❍ ১২. ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করো?
✏ (i) ব্রিটিশ শাসিত ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা হবে (ii) পররাষ্ট্র, যােগাযােগ ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক ক্ষমতা থাকবে প্রদেশগুলির হাতে। (iii) প্রদেশগুলিকে তিনভাগে ভাগ করা হবে—‘ক’ বিভাগ বা মাদ্রাজ, বােম্বাই, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা নিয়ে গঠিত হিন্দু প্রধান অঞ্চল ; ‘খ’ বিভাগ বা পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু নিয়ে গঠিত মুসলিম প্রধান অঞ্চল ; ‘গ’-বিভাগ বা বাংলা ও আসাম নিয়ে গঠিত পৃথক অঞ্চল। (iv) নতুন সংবিধান যতদিন না প্রবর্তিত হবে ততদিন ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এক অন্তর্বর্তী কালীন জাতীয় সরকার শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করবে। (v) প্রদেশগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান রচনার জন্য গণপরিষদ গঠিত হবে।
সাম্প্রদায়িক নীতি মেনে প্রদেশগুলির বিভাজন পাকিস্তান গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে মনে করে মুসলিম লিগ ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবগুলি প্রথমে মেনে নিয়েছিল। অবশ্য শেষে প্রস্তাব মেনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে, মুসলিম লিগ তাতে যােগ দেয়নি। অপরদিকে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবগুলিতে সাম্প্রদায়িকতার ইঙ্গিত থাকায় কংগ্রেস প্রথমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যােগ দিতে অস্বীকার যোগদানের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের কোনাে অমত ছিল না।
সাম্প্রদায়িক নীতি মেনে প্রদেশগুলির বিভাজন পাকিস্তান গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে মনে করে মুসলিম লিগ ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবগুলি প্রথমে মেনে নিয়েছিল। অবশ্য শেষে প্রস্তাব মেনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে, মুসলিম লিগ তাতে যােগ দেয়নি। অপরদিকে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবগুলিতে সাম্প্রদায়িকতার ইঙ্গিত থাকায় কংগ্রেস প্রথমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যােগ দিতে অস্বীকার যোগদানের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের কোনাে অমত ছিল না।
❍ ১৩. ক্রিপস প্রস্তাব ব্যর্থ হলো কেন?
✏ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের কাছ থেকে পূর্ণ সহযােগিতা লাভের উদ্দেশ্যে ও ভারতের সংবিধান বিষয়ক প্রস্তাবগুলি আলাপ আলােচনার জন্য স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস্ ভারতে আসেন ও এক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু ক্রিপসের প্রস্তাবগুলি ভারতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে গ্রহণযােগ্য হয়নি। শেষপর্যন্ত ক্রিপস্ প্রস্তাব ব্যর্থ হয়।⁍ ক্রিপস প্রস্তাব ব্যর্থতার কারণ :
ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দল ক্রিপস্-এর প্রস্তাবগুলি প্রত্যাখ্যান করে।(i) ক্রিপসের প্রস্তাবে ভারতকে স্বাধীনতাদানের কোনাে উল্লেখ না থাকায় এই প্রস্তাব ব্যর্থ হয়। (ii) ক্রিপস্ প্রস্তাবে পরােক্ষভাবে ভারত-বিভাগকে স্বীকৃতি দেওয়ায় এই প্রস্তাব সফল হয়নি।(iii) দেশীয় রাজ্যগুলির ৯ কোটি মানুষের ভাগ্য রাজন্যবর্গের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাবের তীব্র বিরােধিতা করে জাতীয় কংগ্রেস।(iv) ক্রিপস্ প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রাদেশিক সরকারের তুলনায় দুর্বল করায় প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামাে অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। (v) সংবিধান সভাকে সার্বভৌম ক্ষমতা না দেওয়ায় হিন্দু-মহাসভা, লিবারেল পার্টি প্রভৃতি দলও ক্রিপস্ প্রস্তাবের বিরূপ সমালােচনা করে। শেষপর্যন্ত ক্রিপস্ প্রস্তাব ব্যর্থ হয়।
প্রবল সমালােচনার মুখে ১১ এপ্রিল ক্রিপস্ এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাহার করে নেন। এইভাবে ক্রিপসের দৌত্য ব্যর্থ হয়। গান্ধিজি বলেন এই প্রস্তাব ছিল—“একটি ফেল-পড়া ব্যাংকের প্রদেয় চেক” (a post-dated cheque on a crashing bank)।
❍ ১৪. ক্রিপস মিশন ভারতে আসার কারণ কি ছিল?
✏ স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ছিলেন ব্রিটেনের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য তথা তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন আইনবিদ ও বিশিষ্ট সমাজবাদী নেতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের পূর্ণ সহযােগিতা লাভ ও ভারতের সংবিধান বিষয়ক প্রস্তাবাবলি আলাপ আলােচনার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল, ক্রিপসকে ভারতে পাঠানাের কথা ঘােষণা করেন। সেই মতাে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ ক্রিপস ভারতে আসেন।⁍ ভারতে আসার কারণ : ক্রিপস মিশনকে ভারতে পাঠাবার বেশ কয়েকটি কারণ ছিল..
- জাপানি আক্রমণের ভয় : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রেঙুন দখল করে জাপান ভারতের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয় ১৯৪২ খ্রি:। ব্রিটিশ সরকার উপলদ্ধি করে যে, জাপান আক্রমণ প্রতিরােধে ভারতীয়দের আন্তরিক সহযােগিতা দরকার, তাই ভারতবাসীর সন্তুটির জন্য ক্রিপস্ দৌত্য ভারতে আসে।
- প্রভাবশালীদের চাপ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট, ব্রিটিশ শ্রমিক দলের নেতা ক্লিমেন্ট এটলি ও অন্যান্য ইংরেজ রাজনীতিবিদ দৃঢ় অভিমত দেন যে, ভারতবাসীর সহযােগিতা পাওয়ার জন্য তাদের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া দরকার।
- চিনের ভূমিকা : চিনের রাষ্ট্রপতি চিয়াং কাই-শেকও ভারতবাসীর দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী চার্চিলকে অনুরােধ জানান।
- ভারতের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যে গণবিদ্রোহ শুরু হয় তাতে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে মিত্রপক্ষ তথা ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের সহযােগিতা লাভের প্রয়ােজনীয়তা উপলদ্ধি করে। তাই ভারতীয়দের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য যুদ্ধকালীন ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য ক্রিপস্ ভারতে আসেন।
❍ ১৫. ক্রিমিয়ার যুদ্ধের যুদ্ধের কারণ আলােচনা করাে?
✏ ক্রিমিয়ার যুদ্ধের (১৮৫৪-১৮৫৬ খ্রি.) নেপথ্যে দুই বিপরীত মুখী স্বার্থ বিশেষভাবে কাজ করেছিল—একদিকে ছিল এশিয়ার দ্বারা তুরস্ককে গ্রাস করার চেষ্টা, অন্যদিকে ছিল হল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশ কর্তৃক তুরস্কের অখণ্ডতা রক্ষার চেষ্টা।
⁍ ক্রিমিয়ার যুদ্ধের যুদ্ধের কারণ : ক্রিমিয়ার যুদ্ধের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন—
- লন্ডনের সন্ধি : রাশিয়া তুরস্কের ওপর উনকিয়ার স্কেলেস্কির সন্ধি (১৮৩০ খ্রি.) চাপিয়ে দিয়ে বসফোরাস ও দার্দনেলস প্রণালীতে রুশ জাহাজ চলাচলের অধিকার পায়। রাশিয়ার শক্তিবৃদ্ধিতে আতঙ্কিত হয়ে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়া রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করে। শেষপর্যন্ত লন্ডনের সন্ধির (১৮৪০ খ্রি.) দ্বারা যুদ্ধের সময় বসফোরাস ও দার্দনেলস প্রণালীতে সব দেশের যুদ্ধজাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ হয়।
- রুশ আগ্রাসন : কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে রুশ জার প্রথম নিকোলাস (১৮২৫-১৮৫৫ খ্রি.) ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের কাছে তুরস্ককে রাশিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে ব্যবচ্ছেদের প্রস্তাব দেন।
- ইংল্যান্ডের ভূমিকা : রাশিয়ার প্রস্তাবের উত্তরে ইংল্যান্ড সুস্পষ্টভাবে তার ইচ্ছা না জানিয়ে নীরব থাকে এবং বলে যে, “এখনই এই রুগ্ন ব্যক্তির মৃত্যু হবে না।” ফলে জার নিকোলাসের ধারণা হয় যে, তুরস্কের ব্যবচ্ছেদে ইংল্যান্ড খুব বেশি অরাজি হবে না। কিন্তু রাশিয়া যখন তুরস্কে আগ্রাসন চালায় তখন ইংল্যান্ড রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুখর হয়ে ওঠে।
- ফ্রান্সের যুদ্ধাকাঙ্ক্ষা : ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপােলিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাধাতে চাইছিলেন, কারণ- তিনি অত্যন্ত সক্রিয় পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে ফ্রান্সের গরিমা বৃদ্ধি করতে চাইছিলেন। তিনি রাশিয়াকে পরাজিত করে ভিয়েনা সন্ধি (১৮১৫ খ্রি.) ভাঙার চেষ্টা করেন।
- অস্ট্রিয়ার উদ্দেশ্য : অস্ট্রিয়া মনে করত যে, বলকান অঞলে রাশিয়ার আধিপত্য বাড়লে অস্ট্রিয়ার স্বার্থ ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হবে। এজন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়া শত্রুতামূলক নিরপেক্ষতা নীতি গ্রহণ করে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে সমর্থন করে।
- গ্রিক চার্চের অভিভাবকত্ব : তুরস্কের অন্তর্গত জিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান জেরুজালেমের গ্রোটোর গির্জা ও অন্যান্য কিছু পবিত্র স্থান এবং গ্রিক খ্রিস্টান প্রজাদের রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার রাশিয়ার হাতে দেওয়ার জন্য রুশ জার ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি সুলতানের কাছে দূতের মাধ্যমে দাবি জানান। তুরস্ক এই দাবি অগ্রাহ্য কালে রাশিয়া তুরস্কের অন্তর্গত মলডেভিয়া ও ওয়ালাকিয়া প্রদেশ দুটি দখল করে নেয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
- ভিয়েনা নােট : রাশিয়ার আগ্রাসনে আতঙ্কিত হয়ে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশ ভিয়েনা শহরে মিলিত হয়ে ভিয়েনা নােট বা ভিয়েনা প্রস্তাব গ্রহণ করে মােলডেভিয়া ও ওয়ালাকিয়া থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানায়। রাশিয়া এই দাবি অগ্রাহ্য করলে তুরস্কের পক্ষে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও পিডমন্ট-সার্ভিনিয়া যুদ্ধে যােগ দেয়। ফলে ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
দু-বছর যুদ্ধ চলার পর রাশিয়া ক্রিমিয়ার যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং প্যারিসের সন্ধির (১৮৫৬ খ্রি.) মাধ্যমে
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটে। এই সন্ধির দ্বারা তুরস্কে রাশিয়ার আগ্রাসন অপসারিত হয় এবং ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া প্রভৃতি বৃহৎ শক্তিবর্গ তুর্কি সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তুরস্ককে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে আনা হয়।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটে। এই সন্ধির দ্বারা তুরস্কে রাশিয়ার আগ্রাসন অপসারিত হয় এবং ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া প্রভৃতি বৃহৎ শক্তিবর্গ তুর্কি সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তুরস্ককে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে আনা হয়।
❍ ১৬. কার্বোনারি সমিতি সমিতি কী?
✏ বিদেশি শাসকদের বিতাড়িত করে ইটালির ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে উনিশ শতকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে ইটালিতে বেশ কয়েকটি গুপ্ত সমিতি গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কার্বোনারি সমিতি।
কার্বোনারি সমিতির উদ্যোগে ইটালিতে সশস্ত্র কার্বোনারি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ইংরেজি 'কার্বন’ কথাটি থেকে 'কার্বোনারি’ কথাটি এসেছে। এই সমিতির সদস্যরা তাদের ধর্মীয় প্রথা অনুসারে কাঠকয়লা (বা কার্বন) পােড়াতাে বলে তাদের এরূপ নামকরণ হয়েছে।
কার্বোনারি আন্দোলনের লখ্য ছিল সন্ত্রাস, গুপ্তহত্যা প্রভৃতির মাধ্যমে ইটালিকে বিদেশিদের আধিপত্য
থেকে মুক্ত করে ঐক্যবদ্ধ করা এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। ইটালির বিভিন্ন রাজ্যগুলির মধ্যে তীব্র
আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক মনােভাবের কারণে ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ করতে রাজি ছিল না।
কার্বেনারি সমিতির সদস্যরা ব্যক্তিগত নৈতিকতার ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দিত। তাদের আন্দোলনে ধর্মীয় উন্মাদনার খুব বেশি প্রকাশ দেখা যায়। বাস্তব জগতের সঙ্গে তাদের আন্দোলনের খুব একটা যােগ ছিল না। কার্বোনারি সমিতিতে মধ্যবিত্তদের সংখ্যাধিক্য ছিল। নেপলস ছিল এই সমিতির প্রধান কেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন স্থানে, এমনকি দেশের বাইরেও এর বহু শাখা ছিল।
কার্বোনারি আন্দোলন : কার্বেনারি সমিতির উদ্যোগে উনিশ শতকের প্রথমার্ধে দুটি আন্দোলন হয়।
- ১৮২০-২১ খ্রিস্টাব্দের নেপলস ও পিডমন্ট আন্দোলন : নতুন সংবিধান প্রবর্তনের দাবিতে কার্বোনারি সমিতির উদ্যোগে নেপলস ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন জেনারেল পেপ। বিদ্রোহীদের চাপে সেখানকার বুরবোঁ বংশীয় রাজা নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। পরের বছর সান্তা রােসার নেতৃত্বে পিডমন্ট-এ বিদ্রোহ শুরু হয়। এই বিদ্রোহ দ্রুত পার্মা, মডেনা, লম্বার্ডি, পােপের রাজ্য প্রভৃতি অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অস্ট্রিয়ার সক্রিয়তায় এই দু-বারের বিদ্রোহ দমিত হয়।
- ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের আন্দোলন : ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লব শুরু হলে কার্বোনারিদের উদ্যোগে মধ্য ইটালিতে বিদ্রোহ শুরু হয়। বিদ্রোহীরা পােপের রাজ্যে একটি স্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র গঠন করে। বিদ্রোহ ক্ৰমে পার্মা, মডেনা, পিডমন্ট প্রভৃতি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অস্ট্রিয়া ও পােপের বাহিনী এই বিদ্রোহ দমন করে।
✏ ফরাসি সংবিধান সভা ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে সিভিল কনস্টিটিউশন অব দ্য ক্লার্জি বা ধর্ম যাজক দের সংবিধান নামে এক বিধানের দ্বারা ফরাসি গির্জাগুলি জাতীয়করণ করে গির্জার যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। ফলে রাষ্ট্রের সঙ্গে পােপের বিরােধ বাধে। ফরাসি বিপ্লবকালে শাসনতন্ত্রের সঙ্গে পােপের যে বিরােধ বাধে তা পরবর্তীকালে নেপােলিয়ন দূর করার উদ্যোগ নেন। তিনি ফ্রান্সের শাসন ক্ষমতা দখল করে পােপ সপ্তম পায়াসের সঙ্গে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে কনকর্ডাট বা ধর্ম-মীমাংসা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
⁍ চুক্তির শর্তাবলি : ধর্ম-মীমাংসা চুক্তির দ্বারা [1] পােপ ফরাসি গির্জা ও গির্জার সম্পত্তির জাতীয়করণ মেনে নেন, [2] ফ্রান্স রােমান ক্যাথােলিক ধর্মমত ও গির্জাকে স্বীকৃতি দেয়, [3] স্থির হয় যে, সরকার যাজকদের নিয়ােগ করবে এবং পােপ তাদের স্বীকৃতি দেবে, [4] ফরাসি সরকার যাজকদের বেতন দেবে, [5] যাজকদের ওপর বিশপদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
⁍ চুক্তির গুরুত্ব : ধর্মমীমাংসা চুক্তির ফলে—[1] ক্যাথােলিক গির্জা অনেকটাই রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, [2] ফ্রান্সে ধর্মসহিষ্ণুতার আদর্শ গৃহীত হলে অন্য ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার সুযােগ পায় এবং [3] রাষ্ট্রের সঙ্গে পােপের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এজন্য ঐতিহাসিক কোবান বলেছেন যে, “কনকর্ডাট ছিল নেপােলিয়নের একটি মহান জয়...।”
❍ ১৮. কোড নেপােলিয়ন সম্পর্কে কী জান?
✏নেপােলিয়নের সর্বাপেক্ষা গৌরবময় কীর্তি হল ‘কোড নেপােলিয়ন’ প্রবর্তন। নেপােলিয়নের উদ্যোগে গঠিত কমিশন ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের জন্য নতুন আইনসমূহ রচনা করেন। এটি কোড নেপােলিয়ন’ (Code Napoleon') বা ‘নেপােলিয়নের আইনসংহিতা’ নামে পরিচিত। কোড নেপােলিয়নে মােট ২২৮৭টি (মতান্তরে ২২৮১টি) আইন ছিল। এর আইনগুলি মূলত তিনভাগে বিভক্ত ছিল, যথা—
- দেওয়ানি আইন
- ফৌজদারি আইন এবং
- বাণিজ্যিক আইন
⁍ কোড নেপােলিয়নের বৈশিষ্ট্য : কোড নেপােলিয়নের দ্বারা--[1] আইনের চোখে দেশের সকল নাগরিকের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা হয়, [2] সামন্ততান্ত্রিক অসাম্যের বিলােপ ঘটানাে হয়, [3] যােগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়ােগের ব্যবস্থা করা হয়, [4] ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়, [5] সম্পত্তির অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া। [6] ধর্মীয় সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করা হয় এবং [7] অপরাধের শাস্তি হিসেবে জরিমানা, কারাদণ্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, মৃত্যুদণ্ড প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হয়।
⁍ কোড নেপােলিয়নের ত্রুটি : কোড নেপােলিয়নের বিভিন্ন ত্রুটি ছিল। যেমন— [1] এতে সমাজে নারীর মর্যাদা হ্রাস করা হয়, [2] স্ত্রীর ওপর স্বামীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, [3] পারিবারিক সম্পত্তির অধিকার থেকে নারীকে বঞ্চিত করা হয় এবং [4] শ্রমিকশ্রেণি তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
⁍ কোড নেপােলিয়নের ত্রুটি : কোড নেপােলিয়নের বিভিন্ন ত্রুটি ছিল। যেমন— [1] এতে সমাজে নারীর মর্যাদা হ্রাস করা হয়, [2] স্ত্রীর ওপর স্বামীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, [3] পারিবারিক সম্পত্তির অধিকার থেকে নারীকে বঞ্চিত করা হয় এবং [4] শ্রমিকশ্রেণি তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।