Sociology Notes B.A 2nd Semester PDF Download || University Of Gour Banga

Sociology Notes B.A Semester - II 2022

SOCG-DC-2/GE-2 B.A 2nd Semester Sociology Notes 2022



প্রশ্নঃ ৬ সামাজিক স্তরবিন্যাস কাকে বলে? সামাজিক স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
অথবা, সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে কী বোঝায়? সামাজিক স্তরবিন্যাসের মূলনীতিগুলি আলোচনা করো। 
প্রশ্নঃ ৭ সামাজিক সচলতার সংজ্ঞা দাও। সামাজিক সচলতার প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করো। 
অথবা, সামাজিক সচলতা বলতে কী বোঝ? সামাজিক সচলতার ধরণগুলো আলোচনা করো। 
প্রশ্নঃ ৮ গোত্র কাকে বলে? বিভিন্ন ধরণের গোত্র সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, গোত্রের সংজ্ঞা দাও। গোত্রের প্রকারভেদ আলোচনা করো।
প্রশ্নঃ ৯ বিবাহ কাকে বলে? উপযুক্ত উদাহরণসহ বিবাহের নিয়ম আলোচনা করো। 
অথবা, বিবাহ বলতে কি বোঝায় ? উদাহরণ সহকারে বিবাহের নিয়মাবলী লেখো।
অথবা, বিবাহের নিয়মাবলীর ওপর একটি টীকা লেখো।
প্রশ্নঃ ১০ আত্মীয়তার সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দগুলি সম্পর্কে আলোচনা করে একটি টীকা লেখো।

প্রশ্নঃ উত্তর সহকারে নোটস

প্রশ্নঃ ৬ সামাজিক স্তরবিন্যাস কাকে বলে? সামাজিক স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
অথবা, সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে কী বোঝায়? সামাজিক স্তরবিন্যাসের মূলনীতিগুলি আলোচনা করো। 
❍ ভূমিকা : সমাজের অস্তিত্বের সঙ্গে সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রশ্নটি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। সামাজিক স্তরবিন্যাস একটি সার্বজনীন ঘটনা। কেননা মানুষের মর্যাদাগত বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করেই সামাজিক স্তরবিন্যাস গড়ে ওঠে। সমাজজীবন স্তরবিন্যাসের অন্যতম কারণ হল বৈষম্য, বৈষম্যহীনতা সমাজ দেখা যায় না সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক স্তরবিন্যাস যেমন অপরিহার্য তেমনি সমাজ তত্ত্বের পর্যালোচনা এক্ষেত্রে অপরিহার্য রূপ লাভ করেছে।

অধ্যাপক জিসবার্ট (P. Gisbert) বলেন, সামাজিক স্তরবিন্যাস হল প্রাধান্য ও বশ্যতার সূত্রে পরস্পর সম্পর্কিত স্থায়ী গোষ্ঠী বা শ্রেণীর ভিত্তিতে সমাজের স্তরবিভাগ। তিনি আরো বলেন স্তরবিন্যাসহীন সমাজ ব্যবস্থার কথা নিছক কল্পনামাত্র। অধ্যাপক বটোমোর (T. Bottomore) বলেন, মর্যাদা ও ক্ষমতার ভিত্তিতে বিভক্ত কতকগুলি শ্রেণী বা স্তরের উর্দ্ধাধ অবস্থিতিকে সামাজিক স্তরবিন্যাস বলে। অধ্যপক Talcott Parsons - এর মতে— সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উচ্চনীচ বিবেচনার ভিত্তিতে প্রভেদমূলক পদবিন্যাস সৃষ্টি করলে তাদের সামাজিক স্তরবিন্যাস বলে। সামাজিক স্তরবিন্যাস এমন একটি সামাজিক পরিস্থিতি, যার মধ্যে দিয়ে মানুষের সম্পত্তি, মর্যাদা ও ক্ষমতার পার্থক্য চিহ্নিত হয় এবং মানবিক সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি নির্ধারিত হয়।

➢ সামাজিক স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য : সামাজিক স্তরবিন্যাসের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে কতকগুলি
বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়— 
❶ সামাজিক স্তরবিন্যাস সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের জীবনধারণের প্রণালীকে প্রভাবিত করে। ❷ সামাজিক স্তরবিন্যাসের অস্তিত্বের সঙ্গে রয়েছে প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্ক। এর ফলে মর্যাদাগত দিক থেকে উন্নততর স্তরে মানুষের উত্তরণের স্পৃহা আছে, যা সমাজ উন্নয়নে সহায়ক। ❸ সামাজিক অমান্যতার প্রকৃতি হতে পারে জন্মগত, পুরুষানুক্রমিক, আবার কখনও আরোপিত অথবা অর্জিত। সমাজে স্তরবিন্যাস এমনভাবে অবস্থান করে থাকে যে ব্যক্তিবর্গের পক্ষে তা এড়িয়ে চলা সম্ভবপর হয় না। ❹ স্তরবিন্যাস বলতে ঊর্ধ্বাধঃবিন্যাস বোঝায়। অর্থাৎ উচ্চ-নীচ পর্যায়ে বিভক্ত। মানব সমাজে শ্রেণীবিন্যাস ঊর্ধ্বাধঃ বা উল্লম্বী হতে পারে আবার অনুভূমিকও হতে পারে। কে কোন স্তরের মানুষ তা সামাজিক মূল্যায়ন দ্বারা নির্ধারিত হয়। তবে এই মূল্যবোধ সমাজ থেকে সমাজ পৃথক প্রকৃতির হয়। ❺ সামাজিক স্তরবিন্যাসের ফলে উঁচু নীচু বৈষম্য প্রায় সব সমাজেই লক্ষ্য করা যায়। কারণ এটি একটি সার্বজনীন ঘটনা। ❻ সমাজে অবস্থিত ব্যক্তিবর্গের মান মর্যাদার নির্ণয়ক হল স্তরবিন্যাস। মানব সমাজের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সমাজে এর অবস্থান চিরকালের মূলতঃ মানবিক প্রকৃতির ফলশ্রুতি। স্তরবিন্যাস আছে বলেই বিশেষীকরণ বা ব্যক্তিবর্গের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগও আছে। ❼ সামাজিক স্তরবিন্যাস মিথস্ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত করে। এই মিথস্ক্রিয়া কেবলমাত্র অভিন্ন স্তরভুক্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সংগঠিত হয়। যেমন— বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন, এক্ষেত্রে সামাজিক স্তরবিন্যাস নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে। ❽ সকল সমাজে স্তরবিন্যাস বর্তমান থাকলেও প্রকৃতিগত দিক থেকে এর অবস্থান অভিন্ন হয়। ❾ সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসের একটি বিশেষ দিক হল সামাজিক স্তরবিন্যাস। বদ্ধ সমাজের তুলনায় উন্মুক্ত সমাজে স্তরবিন্যাস কিছুটা উন্মুক্ত। কিন্তু স্তরবিন্যাস পুরোপুরি মুক্ত সমাজের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। ❿ সামাজিক স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে ব্যক্তির অন্তর্মুখী বা মনোভাবগত দিক আছে এর উপলব্ধি অনেকটা অপরের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল। তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস সামাজিক মূল্য নিরূপণের নির্দেশকও বটে।

❍ উপসংহার : আধুনিক সমাজে চরম অর্থনৈতিক অসম বন্টনের ফলে স্তরবিন্যাস ভিন্ন পথে পরিচালিত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে অসম প্রকৃতি আরো ঊর্ধ্বমুখী হয়। মূলত মানুষের প্রকৃতিতেই এই অসাম্য বিরাজমান, সমাজের উচিত জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা
এবং যোগ্যতা অনুযায়ী স্থান নির্ণয় করা।

প্রশ্নঃ ৭ সামাজিক সচলতার সংজ্ঞা দাও। সামাজিক সচলতার প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করো। 
অথবা, সামাজিক সচলতা বলতে কী বোঝ? সামাজিক সচলতার ধরণগুলো আলোচনা করো। 
❍ সামাজিক সচলতার সংজ্ঞা : সমাজ স্থির বা অচলায়তন নয়। সমাজ দৈনন্দিন পরিবর্তিত হচ্ছে এবং সমাজে অবস্থিত স্তরবিন্যাসেরও পরিবর্তন ঘটছে। স্তরবিন্যাস হল একটি সামাজিক সিড়ি যা বেয়ে সমাজে অবস্থিত ব্যক্তিবর্গ উঠানামা করে। অর্থাৎ ব্যক্তিবর্গের মর্যাদার উঠানামা ঘটে। সামাজিক সচলতা হল ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি স্তর থেকে আরেকটি স্তরে উপনীত হওয়া অর্থাৎ স্থান পরিবর্তন ঘটা। এর সঙ্গে তার মর্যাদার পরিবর্তন ঘটে। সামাজিক সচলতাকে বিশ্লেষণ করলে বলা যেতে পারে যে যদি কোন ব্যক্তি নিজের প্রতিভা বলে ভিন্ন ধরণের শিক্ষা অর্জন করে এবং সে পারিবারিক বৃত্তি অবলম্বন না করে স্বতন্ত্র জীবনযাপনের রীতি অনুসরণ করে, তাহলে তা সামাজিক সচলতা হিসেবে পরিগণিত হয়। 

সমাজতত্ত্ববাদীদের অভিমতে সামাজিক কাঠামোর মধ্যে থেকে একটি সামাজিক স্তর থেকে আরেকটি সামাজিক স্তরে পরিবর্তিত হয়ে অবস্থান করার ক্ষেত্রে সাধারণত সামাজিক সচলতা ঘটে থাকে সামাজিক ব্যবধানের মাধ্যমেই। এই ব্যবধানের সূচনা ঘটে সাধারণত পিতা-মাতার সামাজিক স্তরবিন্যাসের স্তর থেকে। কোন ব্যক্তির সামাজিক স্তরবিন্যাসের উচ্চস্তরে অবস্থা অথবা অবরোহন, সামাজিক সচলতার প্রধান নির্দেশক হল পেশাগত পরিবর্তন। এই ধরণের সামাজিক সচলতা সাধারণত ঘটে থাকে শিক্ষা এবং প্রযুক্তিবিদ্যার পরিবর্তনের ফলে।

❍ সামাজিক সচলতার ধরণ (Types of Social Mobility) : সামাজিক  সচলতা দুই ধরণের হয়ে থাকে। যথা— (i) অনুভূমিক সচলতা এবং (ii) উল্লম্বী সচলতা। আবার উল্লম্বী সচলতা দুই ধরণের। যথা— 🅐 ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্বী সচলতা এবং 🅑 অধোমুখী উল্লম্বী সচলতা।

❍ অনুভূমিক সচলতা (Horizontal Mobility) : অনুভূমিক সচলতা হল যখন কোন ব্যক্তি সমান সামাজিক স্তরের মধ্যে থেকে সমান মর্যাদার একটি পেশা বা পদ থেকে আরেকটি পেশা বা পদ গ্রহণ করে এই রকম অবস্থায় পেশা বা পদের পরিবর্তন ঘটে কিন্তু মর্যাদার ক্ষেত্রে কোন রূপ পরিবর্তন ঘটে
না। যেমন কোন একটি মোবাইল কোম্পানীর ম্যানেজার সেই কোম্পানী ছেড়ে অন্য একটি মোবাইল কোম্পানীতে ম্যানেজারের পদ গ্রহণ করে। তাতে তার কাজের পরিবর্তন ঘটলেও মর্যাদা অপরিবর্তিত থাকে। আরেকটি উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে একটি স্কুলের শিক্ষক সেই স্কুলের চাকুরী ছেড়ে অন্য স্কুলে শিক্ষকের পদ গ্রহণ করলে তার মর্যাদর হেরফের ঘটে না। এইরকম কর্মক্ষেত্রে কাজের পরিবর্তন ঘটলে মর্যাদার ক্ষেত্রে কোনরূপ পরিবর্তন ঘটে না। এ প্রসঙ্গে অ্যালেক্স ইংকেলেস তাঁর 'What is Sociology' গ্রন্থে বলেছেন— "A man moving from one job to another but at the same level of
prestige or income, is engaged in horizontal mobility."

❍ উল্লম্বী সচলতা (Vertical Mobility) : অনুভূমিক সামাজিক সচলতার যদি ঠিক বিপরীত হয় অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে পেশা পরিবর্তনের ফলে যদি কোন ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে, তাহলে তাকে বলে সামাজিক উল্লম্বী সচলতা। উল্লম্বী সামাজিক সচলতার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সামাজিক স্তরের পরিবর্তন
ঘটে। উল্লম্বী সামাজিক সচলতাকে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে— ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্বী সচলতা (Upward vertical mobility) এবং অধোমুখী উল্লম্বী সচলতা (Downward vertical mobility)।

🅐 ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্বী সচলতা : সামাজিক সচলতার ফলে যদি কোন ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে পরিবর্তন হয় এবং তা উন্নতির দিকে ঘটে তাহলে তাকে ঊর্ধ্বমুখী সামাজিক সচলতা বলে। যেমন - কোন কৃষকের ছেলে মেধাবী হতে পারে শিক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্য আনে পারে এবং পারিবারিক বৃত্তির পরিবর্তে
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা শিক্ষক হতে পারে। এই কোন ব্যক্তি যদি তার প্রতিভাবলে ও গুণগত যোগ্যতার ভিত্তিতে পেশার পরিবর্তন ঘটিয়ে সমাজে মর্যাদার উন্নত স্তরে উপনীত হতে পারে তখন তার ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্বী সচলতা ঘটে। এই ধরণের সামাজিক সচলতার ফলে সুযোগ সুবিধা যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি দায়-দায়িত্বও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে হর্টন ও হান্ট (Horton and Hunt) বলেছেন— "Upward mobility not only carries new privileges, it also carries new responsibilities and restrictions. Occasionally, a man declines and offered promotion because he shrinks from the added responsibilities it carries."

🅑 অধোমুখী উল্লম্বী সচলতা : সামাজিক সচলতার ক্ষেত্রে যখন কোন ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদার উন্নতির পরিবর্তে অবনতি ঘটে তখন তাকে অধোমুখী উল্লম্বী সচলতা বলে। যেমন কোন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারের ছেলে অন্য উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করে। যেমন - কেরানির কাজ করে তাহলে তার মর্যাদার অধঃপতন ঘটে। পূর্বপুরুষের উন্নত সামাজিক স্তর থেকে নিম্নস্তরে অর্থাৎ নিম্নমানের সামাজিক
স্তরে অবতারণের ঘটনা ঘটে। সামাজিক স্তরবিন্যাসের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যে সকল উপাদান কার্যকরী
ভূমিকা নেয় সেই সবের পরিবর্তনেই সৃষ্টি করে সামাজিক সচলতার। জীবন- যাপন, রীতি-নীতি, শিক্ষার মান, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান প্রভৃতি হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে থাকে।

প্রশ্নঃ ৮ গোত্র কাকে বলে? বিভিন্ন ধরণের গোত্র সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, গোত্রের সংজ্ঞা দাও। গোত্রের প্রকারভেদ আলোচনা করো।
❍ ভূমিকা : সামাজিক সংস্থাগুলির মধ্যে একটি অন্যতম সামাজিক সংস্থা হলো গোত্র। প্রত্যেকটি সংস্থার মাধ্যমে সমাজ সুশৃঙ্খলভাবে চলে। গোত্রের নির্দিষ্ট কতগুলি রীতিনীতি থাকে যা পরিবারের লোকেরা বা একই গোত্রভুক্ত পরিবার তা মান্য করে চলে। পৃথিবীর প্রায় সকল উপজাতির মধ্যেই গোত্রের উপস্থিতি দেখা যায়। কেবলমাত্র আন্দামানিদের মধ্যে গোত্রের উপস্থিতি দেখা যায় না। গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছেলে বা মেয়েরা একই গোত্রে বিবাহ করে না। কারণ আদিবাসীরা মনে করে যেহেতু একই পূর্বপুরুষের থেকে তাদের জন্ম হয়েছে তা-ই একই রক্ত তাদের শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত হচ্ছে। তাই তাদের মধ্যে ভাই-বোনের সম্পর্ক রয়েছে। সেহেতু একই গোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ।

❍ গোত্রের সংজ্ঞা : গোত্র হলো এমন এক ধরনের ব্যক্তিসমষ্টি, যারা প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে একই বংশোদ্ভূত। উপরন্তু বলা যেতে পারে, বংশের সঠিক তথ্যাবলি জানার ফলে দেখা যায় যে গোত্রের সদস্যরা কোনো একটি সংগঠিত সংস্থার অন্তর্ভুক্ত। আত্মীয়তার বন্ধনগুলি প্রতীকমূলক হলেও গোত্রের ক্ষেত্রে ঐক্যের মনোভাব অধিক পরিমাণে লক্ষ করা যায়। ‘গোত্র’ বা Clan শব্দটি নেওয়া হয়েছে ‘Clann' শব্দ থেকে, যার অর্থ সন্তান বা বংশধারণ। ডঃ রিভার্সের মতে -“গোত্র বা কুল বহির্বিবাহকারী এমন একটি সংস্থা যার  অন্তর্ভুক্ত সদস্যরা কতগুলি ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ থাকে, যার সঙ্গে এক আদি পুর্বপুরু বা গোত্রদেবতা নির্দিষ্ট বাসস্থানের প্রত্যক্ষ যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়।

❍ গোত্রের প্রকারভেদ : গোত্রের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে গোত্রকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা —❶ পিতৃপ্রধান গোত্র ❷ মাতৃপ্রধান গোত্র ❸ গোত্রদেবতা সহ গোত্র ❹ পূর্বপুরুষ সম্বন্ধীয় গোত্র ❺ আঞ্চলিক গোত্র ।

❶ পিতৃপ্রধান গোত্র : এই ধরনের গোত্র দেখা যায় যেখানে পিতা পরিবারের প্রধান, পিতাই পরিবারের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। পরিবারের সন্তান-সন্ততিরা পিতার গোত্র ধারণ করে, পদবি ধারণ করে। পিতা পরিবারের সম্পত্তির মালিক। পিতার সম্পত্তি বিয়ের পর স্ত্রী তার স্বামীর গৃহে থাকে। এই ধরনের গোত্র দেখা যায় সাঁওতাল, মুন্ডা, ভীল ইত্যাদি সমাজে।

❷ মাতৃপ্রধান গোত্র : এই গোত্র পিতৃতান্ত্রিক গোত্রের একেবারে বিপরীত অর্থাৎ মেয়েরা সমাজে সর্বেসর্বা। পরিবারের কর্তৃত্ব মেয়েদের হাতে থাকে। পিতার কতৃত্ব থাকে না। মেয়েরা পরিবারের সম্পত্তির মালিক হয়। এক্ষেত্রে পুত্ররা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত থাকে। বিবাহের পর মেয়েরা স্বামীর সঙ্গে মাতুলালয়ে বসবাস করে। এই ধরনের বিবাহ দেখা যায় মেঘালয়ের খাসি ও গারো সমাজে।

❸ গোত্রদেবতা সহ গোত্র : যখন গোত্রের সঙ্গে গোত্রদেবতা যুক্ত থাকে, অর্থাৎ সেই গোত্রের লোকেরা গোত্রদেবতা থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়। ভারতের প্রায় প্রত্যেক আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে
এই ধরনের গোত্র দেখা যায়।

❹ পূর্বপুরুষ সম্বন্ধীয় গোত্র : গোত্রের লোকজন যখন এক আদি পিতা বা মাতা থেকে সৃষ্ট হয়েছে বলে মনে করা হয় তাকে বলা হয় পূর্বপুরুষ সম্বন্ধীয় গোত্র। এই ধরনের গোত্র দেখা যায় খাসি উপজাতিদের মধ্যে।

❺ আঞ্চলিক গোত্র : যখন কোনো গোত্র কোনো অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে মনে করা হয় তখন তাকে আঞ্চলিক গোত্র বলা হয়। এই ধরনের গোত্র দেখা যায় গণ্ডদের মধ্যে। গোত্রের অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের গোত্রদেবতাকে কেন্দ্র করে সকল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান অবশ্যই পালন করতে হয়।

প্রশ্নঃ ৯ বিবাহ কাকে বলে? উপযুক্ত উদাহরণসহ বিবাহের নিয়ম আলোচনা করো। 
অথবা, বিবাহ বলতে কি বোঝায় ? উদাহরণ সহকারে বিবাহের নিয়মাবলী লেখো।
অথবা, বিবাহের নিয়মাবলীর ওপর একটি টীকা লেখো।
❍ ভূমিকা : বিবাহ একটি প্রতিষ্ঠান। এটি হলো এমন একটি আচার পদ্ধতি যার মাধ্যমে পরিবার সৃষ্টি হয়।পরিবার হলো স্বামী -স্ত্রীর সংগঠন। নর-নারীর কে স্বামী -স্ত্রী তে পরিণত করে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান। বিবাহের মাধ্যমেই নর-নারীর ‘সম্পর্ক সামাজিক বৈধতা, স্বাকৃতি ও অনুমোদন লাভ করে পরিবারে পরিণত হয়। বিবাহ একটি সর্বজনীন বিষয়। পৃথিবীর যেখানে যেখানে পরিবার নামক সংগঠন আছে, সেখানেই এর অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়, তবে তা প্রকৃতিগতভাবে অভিন্ন হতে পারে। তবে বিবাহ শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রিত যৌন আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি সাধনের ব্যবস্থা নয়। এটিকে শিশুর বৈধতা প্রকাশের ব্যবস্থাও বলা হয়। কারণ বিবাহের মাধ্যমেই বৈধ পরিবার সৃষ্টি হয় ও সেই পরিবারেই মধ্যেই জন্মলাভ করে শিশু। এ প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়।
 
নর-নারীর উভয়েরই যৌন চাহিদা বর্তমান, তারা এগুলির পরিতৃপ্তি সাধনে সদা সচেষ্ট। তারা সমাজ স্বীকৃতি উপায়ে বিবাহের মাধ্যমেই পরিবার গঠন করে তাদের যৌন চাহিদার পরিতৃপ্তি সাধন করে। এইভাবে বিবাহ যৌন ব্যভিচার বা উচ্ছৃঙ্খল যৌনাচারের আশঙ্কাকে দূর করে। বিবাহ মোটামুটি স্থায়ী বিষয়। একে শুধুমাত্র যৌন সম্পর্কের স্বীকৃত উপায় ও সন্তানের বৈধতা প্রকাশের উপায় বলে মনে করা যায় না। যদি তা-ই হতো, তা-হলে নরনারীর যৌন চাহিদার পরিতৃপ্তির পর বা সন্তান প্রজননের পর এর আর কোনো ভূমিকা থাকত না। আসলে এটি স্বামী-স্ত্রীর জৈবিক ও মানসিক বন্ধন যা অনেকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় এটিই বিবাহ নামে পরিচিত। 

❍ বিবাহের নিয়ম (Rules of marriage) : বিবাহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বিবাহের কেবলমাত্র ব্যক্তিগত গুরুত্ব রয়েছে তাই নয়, সামাজিক দিক দিয়েও বিবাহের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজের মূল ভিত্তি হিসেবে পারিবারিক সংগঠনে শৃঙ্খলা এবং ভারসাম্য বজায় থাকে বিবাহ বন্ধনের
দায়িত্বের মাধ্যমে। এই কারণে পৃথিবীর প্রতিটি সমাজে বিবাহ প্রথা সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কতকগুলি সার্বজনীন নিয়ম লক্ষ্য করা যায়।
i.বহির্বিবাহের নীতি (Rules of exogamy),
ii. অন্তর্বিবাহের নীতি (Rules of endogamy),
iii.অজাচার (Incest taboo),
iv. আত্মীয় বিবাহ (Affinal marriage).


i. বহির্বিবাহের নীতি (Rules of exogamy) : পৃথিবীর সব সমাজেই একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বাইরে বিবাহ করা প্রচলিত বিধি বলে মনে করা হয়, একে বলা হয় বহির্বিবাহ। এই ধরণের বিবাহ গোষ্ঠী, পরিবার, বংশ এমনকি গ্রাম হতে পারে। পৃথিবীর বেশিরভাগ সমাজেই গোত্রের ক্ষেত্রে বহির্বিবাহের নীতিটি প্রচলিত। কারণ গোত্রে এই বিশ্বাস করা হয় যে গোত্রের অন্তর্ভুক্ত সদস্যগণ প্রত্যেকেই যেহেতু একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, সেহেতু তারা পরস্পর রক্তের সম্পর্কে আবদ্ধ। বহির্বিবাহ আবার দুই ধরণের হতে পারে— (1)Simple exogamy (2) Restricted exogamy.

(1) Simple exogamy :
যখন আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে পার্থক্য না করে তাদের যে কাউকে বিয়ে করার নিষিদ্ধতা প্রয়োগ করা হয়, তখন তাকে বলা হয়। Simple exogamy। পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ ও বেশীরভাগ সমাজে এই ধরণের Simple exogamy রীতি লক্ষ্য করা যায়।

(2) Restricted exogamy : Restricted exogamy- র ক্ষেত্রে অত্যন্ত নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহ না হলেও রক্তের সম্পর্ক অথবা বৈবাহিক সম্পর্কে সম্পর্কিত কিছু দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়কেও বিবাহ করা যায়। যেমন— Cross cousin marriage। নৃতাত্ত্বিকদের মতে বহির্বিবাহের উৎপত্তির পেছনে মূলত তিনটি কারণ বর্তমান। যথা ঘনিষ্ঠতা, গোত্রদেবতা এবং ব্যাধি। নৃতাত্ত্বিকদের মতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য নারী পুরুষের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে অনিচ্ছার ফলে গোষ্ঠী অথবা গোত্রের বাইরে বিবাহ প্রচলিত রয়েছে। যে সকল সমাজে গোত্র প্রথার প্রচলন আছে, সেখানে এইরূপ বিশ্বাস করা হয় যে একই গোত্রের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে গোত্রদেবতা রুষ্ট হতে পারেন। ফলে বহির্বিবাহের রীতি উদ্ভব হয়েছে। একই গোত্রের লোকজন মনে করেন যে তারা তাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ যেহেতু একই, সেহেতু একই রক্তের সম্পর্কে আবদ্ধদের মধ্যে বিবাহ সম্পর্ক স্থাপিত হলে ভয়ঙ্কর ব্যাধির সম্ভাবনা রয়েছে।

ii. অন্তর্বিবাহের নীতি (Rules of endogamy) : বিবাহের আরেকটি সার্বজনীন নিয়ম হল আন্তর্বিবাহ। যখন কোন দল বা গোত্র তাদের নিজের কোন দল বা গোষ্ঠী থেকে পাত্র-পাত্রী নির্বাচন সংগত বলে মনে করে এবং বাধ্যতামূলক রীতি হিসেবে গণ্য হয়, তখন তাকে বলা হয় আন্তর্বিবাহ । যেমন—হিন্দুসমাজে স-বর্ণ বিবাহকে এইরূপ বিবাহের নিদর্শন বলা যেতে পারে। আদিবাসী সমাজেও Trible endogamy অর্থাৎ একই আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহ লক্ষ্য করা যায়, আন্তর্বিবাহ আবার দুই ধরণের হতে পারে- i. জাতি ও শ্ৰেণী আন্তর্বিবাহ এবং ii. আদিবাসী আন্তর্বিবাহ। বেশীর ভাগ সমাজেই একই শ্রেণীর মধ্যে বিবাহ লক্ষ্য করা যায়। হিন্দু সমাজে জাতি ব্যবস্থায় অসবর্ণ বিবাহ আইন অনুযায়ী স্বীকৃত হলেও সামাজিক ভাবে সবর্ণ বিবাহ প্রথা প্রচলিত। নৃতাত্ত্বিকদের মতে মূলতঃ তিনটি কারণে অন্তর্বিবাহ প্রচলিত হয়েছে- (ক)
শ্রেণীগত ঘৃণা বা আভিজাত্য, (খ) দৈহিক আকৃতিগত পার্থক্য এবং (গ). রক্তের পবিত্রতা রক্ষা।

iii. অজাচার (Incest taboo) : পৃথিবীর প্রতিটি সমাজেই অজাচার বা Incest taboo-এর নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। এমনকি আধুনিক রাষ্ট্রও তা আইন দ্বারা সুরক্ষিত। এই নিয়ম অনুযায়ী বলা হয় যে পিতার সাথে কন্যা, মাতার সাথে পুত্রের এবং নিজেদের ভাই-বোনদের মধ্যে বিবাহ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোন
কোন সমাজে অবশ্য এই নিয়মেরও ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। যেমন— মিশরের ফ্যারাওদের মধ্যে রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য ভাই-বোনদের মধ্যে বিবাহ প্রচলিত ছিল। এছাড়া জাপানের আইনুস সম্প্রদায়ের মধ্যেও এইরূপ নিয়মের ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এই ব্যতিক্রম ছাড়া পৃথিবীর সব সমাজেই পারিবারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে কঠোরভাবে এই নীতিটি লক্ষ্য করা যায়।

iv. আত্মীয় বিবাহ (Affinal marriage) : কোন কোন সমাজে আবার এইরূপ নিয়ম লক্ষ্য করা যায় যে, নির্দিষ্ট নির্ধারিত আত্মীয়কেই বিবাহ করতে হবে। এইরূপ নিয়মের ব্যতিক্রমকে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করা হয়।

উপসংহারঃ বিবাহের উপরিউক্ত নিয়মগুলি আলোচনা করলে দেখা যায় যে, বিবাহ একটি বাধ্যতামূলক রীতি হিসেবেও গণ্য করা হলেও তা বাস্তবে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক অনুমোদনের প্রশ্নটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। সমাজে পরিবর্তন এবং গতিশীলতা সত্ত্বেও উপরিউক্ত নিয়মগুলি প্রতিটি সমাজেই বাধ্যতামূলক রীতি হিসেবে এখনও লক্ষ্য করা যায়।

প্রশ্নঃ ১০ আত্মীয়তার সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দগুলি সম্পর্কে আলোচনা করে একটি টীকা লেখো।
❍ ভূমিকা : সমাজ জীবনে আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি নিয়ন্ত্রিত প্রথা। মানব সমাজ ছাড়া অন্য কোন সমাজে এই প্রথার অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয় না। সাধারণত সামাজিক জীবনে জ্ঞাতি বা কুটুম্ব বা আত্মীয়
বোঝাতে স্বগোত্রীয় বা রক্তের সম্পর্ককে বোঝায়। আত্মীয় শব্দটির শব্দগত অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আত্মীয় বলতে তাদের বোঝায়, যাদের সাথে আত্মার বন্ধন সম্পর্ক বর্তমান।

 আত্মীয়তার সম্পর্ক : সমাজ বিজ্ঞান এবং নৃতত্ত্বে আত্মীয়তার বা kinship এর ধারণাটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। র‍্যাডক্লিফ ব্রাউন (Radcliff Brown)- এর মতে-  “যখন আমরা জ্ঞাতি কুটুম্ব বা আত্মীয়তার গোষ্ঠীর কথা বলি, তখন এমন একটি ধারণা জাগে যে জ্ঞাতির সাথে আমরা কোন বিশেষ বন্ধনে আবদ্ধ। সুতরাং তার মতে পারস্পরিক সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রিত করার জন্য যে অসংখ্য রক্তের সম্পর্ক, বৈবাহিক সম্পর্ক সমাজে গড়ে ওঠে, তাকেই বলা হয় আত্মীয়তার সম্পর্ক।”

Lowie - এর মতে রক্তের সম্পর্ক ও বংশ তালিকার যোগসূত্র ছাড়াও মানুষ কৃত্রিমভাবে জ্ঞাতি সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারে। তার মতে শিল্পায়ন এবং নগরায়নের ফলে বিভিন্ন জনপদের মানুষ নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাস করার ফলে জ্ঞাতি এ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এছাড়া সাংস্কৃতিক জীবনে স্বীয় কর্মক্ষেত্রে গড়ে উঠতে পারে কৃত্রিম জ্ঞাতি সম্পর্ক।

❍ আত্মীয়তার সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দ (Kinship terminology) : প্রত্যেক সমাজেই রক্তের সম্পর্ক এবং বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, সেই সম্পর্কগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ কতকগুলি প্রতীক চিহ্নের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সেই চিহ্নিত প্রতীকগুলিকে বলা হয় kinship
terminology
বা আত্মীয়তার সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দ। এই প্রতীক চিহ্নগুলি ছাড়া বিভিন্ন ধরণের আত্মীয়দের পৃথকভাবে নির্দেশ করা সম্ভব হয় না। যেমন— বাঙালী হিন্দু সমাজে পিতা এবং পুত্রের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে ‘বাবা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় এবং জন্মদাত্রীকে বোঝাতে ‘মা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

 আত্মীয়তার সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দগুলির পদ্ধতি (System of kinship terminology) : আত্মীয়তার সম্পর্ককে চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহৃত শব্দগুলি বা প্রতীক চিহ্নগুলি যখন দীর্ঘস্থায়ী সমাজ স্বীকৃত রীতিতে পরিণত হয় তখন তাকে বলা হয় System of kingship terminology. যেমন— বাঙালী হিন্দু
সমাজে পিতাকে বোঝাতে Daddy, Pappa ইত্যাদি শব্দগুলি ব্যবহৃত হলেও এগুলি System of kingship terminology-এর অন্তর্গত নয়।

❍ আত্মীয়তার সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দগুলির ধরণ (Type of kinship (terminology) : সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে বিবাহ বন্ধন ও রক্তের মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্বন্ধকে চিহ্নিত করবার জন্য যে বিভিন্ন শব্দগুলি ব্যবহার করা হয় তাকে কতকগুলি নীতির ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে— ❶ আত্মীয়তার সম্বন্ধে কোন ধরণের শব্দ ব্যবহার করা হবে তার ভিত্তিতে। ❷ কার সম্পর্কে শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে তার ভিত্তিতে। ❸ যে শব্দগুলি ব্যবহৃত হচ্ছে তার ভাষাতাত্ত্বিক বিন্যাস কেমন হবে তার ভিত্তিতে। ❹ আত্মীয়তার সম্পর্কে যে শব্দগুলি ব্যবহৃত হয়, সেই শব্দগুলির মাধ্যমে।

❶ প্রথম নীতিঃ প্রথম নীতির ভিত্তিতে আত্মীয়তার সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দগুলি মূলতঃ তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যথা— (ক) Mode of use, (খ) Linguistic structure এবং (গ) Range of application

❷ দ্বিতীয় নীতি : দ্বিতীয় নীতির ভিত্তিতে দুই ধরণের শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যথা— (ক) Terms of address অর্থাৎ যে শব্দের দ্বারা সম্বোধন করা হয়। যেমন— খোকা, খুকি প্রভৃতি। (খ) Terms of reference অর্থাৎ যার সম্পর্কে শব্দটি ব্যবহার করা হয়। যেমন— ছেলে, মেয়ে প্রভৃতি।

❸ তৃতীয় নীতি : তৃতীয় নীতির ভিত্তিতে kinship terminology কে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে – (ক) Alimentary term অর্থাৎ যে ধরণের শব্দগুলি এককভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন— মা, বাবা। (খ) Derivative term অর্থাৎ যে ধরণের শব্দগুলি অন্য আরেকটি আত্মীয়তার সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দের সাথে মিলিতভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন— মামা শ্বশুর, মাসি শাশুড়ি প্রভৃতি।

❹ চতুর্থ নীতি : আত্মীয়তার সম্পর্কের বিস্তৃতি কতটুকু তার ভিত্তিতে দুই ধরণের শব্দ লক্ষ্য করা যায় — (ক) Classificatory term অর্থাৎ এর মাধ্যমে অনেক জনকে বোঝানো যেতে পারে। যেমন— ভাই-বোন, দাদা-দিদি প্রভৃতি। (খ) Denotative term অর্থাৎ এর মাধ্যমে বিশেষ এক ধরণের আত্মীয়কে বোঝানো হয়ে থাকে। যেমন— মা, বাবা। 

❍ আত্মীয়তার সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দগুলির গুরুত্ব (Importance of kinship terminology ) : আত্মীয়তার সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দগুলি অনুসন্ধানকে নৃতত্ত্ববিদ্‌গণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন— (ক). আত্মীয়তার সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দগুলির মাধ্যমেই একমাত্র সংশ্লিষ্ট সমাজেই আত্মীয়তার সম্পর্কের ধরণ অনুধাবন করা সম্ভব হয়। (খ).বিভিন্ন ধরণের আত্মীয়কে লিঙ্গ এবং বয়স অনুযায়ী পৃথক করার পদ্ধতিও kinship terminology-র বিশ্লেষণের মধ্যে ধরা পড়ে। (গ). সমাজে বিভিন্ন ধরণের আত্মীয়দের সামাজিক ভূমিকা কি তাও kinship terminology-র মাধ্যমে অনুধাবন করা সম্ভব হয়। যেমন—ভারতীয় সমাজের তুলনায় বৈদেশিক সমাজে অনেক কম kinship terminology থেকে একথা বোঝা যায় যে বিভিন্ন ধরণের আত্মীয়তার সম্পর্কে বিস্তৃতি বৈদেশিক সমাজে অনুপস্থিত।

যাইহোক ,বর্তমানে প্রতিটি সমাজেই ঐতিহ্যগত আত্মীয়তার সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দগুলির পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় এবং আত্মীয়তার শব্দগুলি অতি বিস্তৃত এবং বর্ণনা হওয়ার পরিবর্তে ক্রমশ সঙ্কুচিত ও সুনির্দিষ্ট হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।




You Have to Wait 220 Seconds..


Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন