দ্বাদশ শ্রেণি ইতিহাস অধ্যায়ঃ ষষ্ঠ MCQ প্র্যাকটিস সেট
The Second World War and the Colonies
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও উপনিবেশসমূহ
【 অধ্যায়ঃ সংক্ষেপে 】
সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম। উগ্র জাতীয়তাবাদী ভাবধারা ও আগ্রাসন নীতির পরিণাম ছিল এই যুদ্ধ। প্রথমদিকে ইটালি, জার্মানি ও জাপানের আগ্রাসী নীতির প্রতিক্রিয়ায় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া যুদ্ধে যোগদান করে। কিন্তু ক্রমে এই যুদ্ধ পরিণত হয় সমগ্র বিশ্বের ভাগ্যনিয়ত্তায়। পৃথিবীর সমগ্র রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে থাকে। এই অবস্থায় রণক্ষেত্রে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের ক্রমাগত বিপর্যয়ের প্রভাব এশিয়া ও আফ্রিকায় তাদের উপনিবেশগুলির ওপরেও পড়ে। ঔপনিবেশিক শক্তির দুর্বলতার সুযোগে উপনিবেশগুলি তাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে জোরদার করে তোলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ড ভারতের জনসম্পদ ও অর্থসম্পদ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ভারতীয়দের প্রতি তোষণমূলক নীতি গ্রহণ করে। ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্রিটিশ সরকার লিনলিথগো প্রস্তাব গ্রহণ করে, ক্রিপস্ মিশন পাঠায়। তবে ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলি এই সকল প্রস্তাবকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কারণ তখনও ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের ক্ষমতা হস্তান্তর তথা স্বাধীনতা দানের বিষয়টি উপেক্ষা করে চলেছিল।
ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের ক্ষমতা হস্তান্তর তথা স্বাধীনতা দানের বিষয়টি উপেক্ষা করে চলেছিল। ফলস্বরূপ 1942 খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। বিশেষত জাপানের ভারত আক্রমণের আশঙ্কা কংগ্রেস নেতৃবৃন্দকে আতঙ্কিত করে। গান্ধিজি ঘোষণা করেন এর জন্য দায়ী ভারতে ব্রিটিশ সরকারের উপস্থিতি। ভারত ছাড়ো বা আগস্ট আন্দোলন আশানুরূপ সাফল্য না পেলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতকে দেয় বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবে ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ আন্দোলন জোরদার করে তোলেন। এই সময় সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ব্রিটিশবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজ। গান্ধিজি ও জাতীয় কংগ্রেসের অহিংস নীতি পরিত্যাগ করে সুভাষচন্দ্র প্রত্যক্ষ সংগ্রামের পথ বেছে নেন। 1942 খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর উদ্যোগে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠিত হলে সুভাষচন্দ্র তার সেনানায়ক নির্বাচিত হন। এই বাহিনী পূর্ব ভারতের বেশ কিছু অঞ্চল দখল করেছিল। 1945 খ্রিস্টাব্দে এক বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। যদিও তাঁর মৃত্যু আজও রহস্যময়। তবে নেতাজির অনুপস্থিতিতে আজাদ হিন্দ বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এই বাহিনীর সদস্যগণ কারারুদ্ধ হন।
আজাদ হিন্দ বাহিনীর সৈন্যদের বিচারকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ সরকার যে দমনমূলক মনোভাব গ্রহণ করে তার ফলে সমগ্র ভারতে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে 1945–46 খ্রিস্টাব্দে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। এসময়ই বর্ণবৈষম্য ও অপমানজনক ব্যবহারের প্রতিবাদে ভারতীয় নৌবাহিনী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ইরেজ বিরোধী এইসব কার্যকলাপের ফলেই ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। যার ফলস্বরূপ 1947 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকাল থেকেই সমগ্র এশিয়ার মানুষ ইউরোপীয় শক্তিগুলির অপসারণের দাবি জানাতে থাকে। সেই সুযোগে ‘এশিয়া এশিয়াবাসীর জন্য' (Asia for Asians / Asiatics) এই স্লোগান ব্যবহার করে জাপান সমগ্র এশিয়ার ওপর অভিভাবকত্ব প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যত হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষত ইন্দোচিন ও ইন্দোনেশিয়াতেও ঔপনিবেশিক শক্তি এসময় অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আলোচ্য অধ্যায়টিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, বিভিন্ন উপনিবেশ বিশেষত ভারতের অভ্যন্তরীণ অবস্থা, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে। পাশাপাশি এশীয় ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে জাপানের বিস্তারনীতি এবং ভিয়েতনাম ও ইন্দো-চিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিধারাও এই অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে।
⭓ উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও উপনিবেশসমূহ :
❏ MCQ প্র্যাকটিস -সেট