অধ্যায়ঃ অতীত কে স্মরণ উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস মক টেস্ট
Class - XII History Online Free Mock Test 1st Chapter
➧অধ্যায়ঃ সংক্ষেপে ➧
ইতিহাস হল অতীতের কাহিনি। অতীতকাল সম্পর্কে ঐতিহাসিকের মনে যে চেতনা ও ভাবধারার
সৃষ্টি হয় তারই প্রতিফলন হল ইতিহাস। ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে অতীতের
ইতিহাসকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। ইতিহাসের উদ্দেশ্য হল অতীতকে অনুধাবন করা যা
একটি সামাজিক আবশ্যকতা। কারণ, অতীত মানবসমাজের জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
পুরাণ হল বিশেষ আখ্যান যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মৌলিক রীতিতে বা জনশ্রুতির মধ্য
দিয়ে প্রবহমান। বর্তমান দিনে যে সকল রূপকথা জনপ্রিয় তা থেকে ইতিহাস জানা বেশ
কঠিন। প্রাচীনতম ধর্মীয় গ্রন্থ বেদ ছাড়াও রামায়ণ,মহাভারতের মতো মহাকাব্য ও পুরাণ ইত্যাদি থেকে ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন দিকের পরিচয় পাওয়া যায়। তবে অতীতকে কল্পনা করা বা অতীত ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে বীরগাথা ও লোকগাথার গুরুত্বও অনস্বীকার্য।
প্রত্যেক মানুষের স্মৃতিতে তার অতীত অভিজ্ঞতা লুকিয়ে থাকে, যেগুলি সে পরবর্তীকালে অন্যদের মৌখিকভাবে জানায় বা লিখে রাখে। এই লিখিত বা মৌখিক স্মৃতির মধ্য দিয়ে উঠে আসে অতীত ইতিহাস রচনার উপাদান। তবে স্মৃতিকে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কতগুলি সমস্যা দেখা দেয়, কারণ সব স্মৃতিই ইতিহাস নয়। মানুষের স্মৃতিতে এমন কিছু ব্যক্তিগত বিষয় লুকিয়ে থাকে যার সঙ্গে ইতিহাসের কোনো সংযোগ নেই। ফলে এইসকল বিভিন্ন ধরনের উপাদান ঐতিহাসিক যখন ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন, তখন তাঁকে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হয়। অন্যথায় প্রকৃত ঘটনা বিকৃতির সম্ভাবনা থেকে যায়।
ইতিহাসের সংজ্ঞা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক থাকলেও অধ্যাপক মেটল্যান্ড প্রদত্ত সংজ্ঞাটিকে অনেকেই বর্তমানে যুক্তিগ্রাহ্য হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর মতে, মানুষ যা ভাবে এবং করে তাই হল ইতিহাস। ইতিহাস শুধু মানুষের কর্মকাণ্ডের হিসাব রাখে না, তার চিন্তাভাবনারও হিসাব রাখে। ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়ের পরিধি সীমাবদ্ধ নয়। কোনো দেশকালপাত্রের মধ্যে ইতিহাস বিচরণ করে না। ফলে কোনো একটি দেশে সংঘটিত কোনো ঘটনা অপর দেশের ইতিহাসকে প্রভাবিত করে।
ইতিহাস হল গতিশীল সমাজবিজ্ঞান। তাই প্রায়ই ইতিহাস পুনর্লিখনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পূর্বে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেত রাজকাহিনি, মধ্যযুগে ইতিহাস রচনায় প্রাধান্য পেত ধর্ম। তবে বর্তমানে ইতিহাস রচনায় প্রাধান্য পেয়েছে সমাজের সমগ্র দিক। পূর্বে যেহেতু ইতিহাস লেখা হত সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের দ্বারা বা তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাই অবহেলিত হত সমাজের সাধারণ মানুষ ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু বর্তমানে নিম্নশ্রেণির ইতিহাস রচনা শুরু হয়েছে, যেখানে নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তরকে দেখার বা বিশ্লেষণের প্রকরণ নেওয়া হয়েছে।
ইতিহাস অতীতের অন্ধকারাচ্ছন্ন পথকে আলোকিত করে। তবে অতীতের ঘটনা নিয়ে ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকদের মনন, শিক্ষা, পরিবেশ, চিন্তাভাবনা, সমকালীন রাজনীতি, অর্থনীতি ও অবস্থা তাঁদের মনোলোকে প্রভাব ফেলে। মানবজাতির অন্তরে অতীতকে জানার গভীর কৌতূহল। তাই ঔপনিবেশিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকরা নিত্যনতুন পদ্ধতি নিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে দেশীয় কল্পনাও প্রাধান্য পেয়েছিল। অতীতের সংরক্ষক হিসেবে মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মিউজিয়াম হল একটি ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান যা মানবসমাজের অগ্রগতি, কার্যকলাপ প্রভৃতি বিষয়ের সংরক্ষণ ও তার ব্যাখ্যা প্রদান করে। প্রাকৃতিক জগতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বস্তুকে মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। মিউজিয়ামের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। মিউজিয়াম বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়াম, চিত্রকলা মিউজিয়াম, জীবনীমূলক মিউজিয়াম ও শিশু মিউজিয়াম প্রভৃতি। এ ছাড়া ব্যক্তিগত সংগ্রহ, যেগুলিও ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।