চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা পাতাবাহার তৃতীয় পাঠ প্রশ্ন উত্তর চারটি অধ্যায় একসঙ্গে

চতুর্থ শ্রেণি পাতাবাহার প্রশ্ন উত্তর মালগাড়ি

চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা পাতাবাহার তৃতীয় পাঠ প্রশ্ন উত্তর 2022


(মালগাড়ি/ বনের খবর / দু - চাকার দুনিয়া /বিচিত্রসাধ)
পাতাবাহার বইয়ের সকল বর্ণ বিশ্লেষণ, ক্লাস 4 বাংলা পাতাবাহার

❏ মালগাড়ি গল্পের লেখক পরিচিতি :
১৯০৪ খ্রিঃ ৪ সেপ্টেম্বর মাসে পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথের কর্মক্ষেত্র কাশীতে প্রেমেন্দ্র মিত্র জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তিনি মাতৃহারা হন এবং মাতামহের কাছে মির্জাপুরে তিনি পালিত হন। কবিতা, গল্প, রহস্য গল্প, গোয়েন্দা কাহিনি, উপন্যাস, প্রবন্ধ রচনায় কবি সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কিশোর সাহিত্যেও তিনি অসাধারণ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তাঁর সৃষ্টি ‘ঘনাদা’ চরিত্রটি একটি অমর সৃষ্টি। ১৯২৬ খ্রিঃ কবি হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯২৪ খ্রিঃ ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘শুধু কেরানি’ তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। প্রেমেন্দ্র মিত্র বাংলা গান রচনা করেও খুব খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর রচিত বহু ছায়াছবির গান যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দীনেশচন্দ্র সেনের সংস্পর্শে এসে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রামতনু লাহিড়ী গবেষক’ হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর সুভাষচন্দ্র বসুর ‘বাংলার কথা’ ও ‘ফরোয়ার্ড’ পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের কপি লেখক হিসেবে কাজ করেন। চলচ্চিত্রের জন্য তিনি চিত্রনাট্য রচনাও কিছুকাল পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘সমাধান’ ১৯৪৩ খ্রিঃ মুক্তিলাভ করে। তিনি মোট ১৪টি ছবির পরিচালক ছিলেন। তাঁর রচিত চিত্রনাট্যের সংখ্যা—৭০। কবি তাঁর ‘সাগর থেকে ফেরা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘অকাদেমি পুরস্কার’ (১৯৫৭ খ্রিঃ) ও ‘রবীন্দ্র পুরস্কার' (১৯৫৮) লাভ করেন। সরকারি খেতাব ‘পদ্মশ্রী’ এবং বিশ্বভারতীর সান্মানিক উপাধি ‘দেশিকোত্তম’ তিনি লাভ করেন। কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের ১৯৮৮ খ্রিঃ ৩ মে কলকাতায় মৃত্যু ঘটে।

❏ মালগাড়ি গল্পটির বিষয়বস্তু :
কবিতার কথক তুফান কিংবা মেল ট্রেন হতে চান না। তিনি চান মালগাড়ি হতে। মালগাড়ির কোনো তাড়াহুড়ো নেই। সে চলে দিনরাত্রি ঘটর ঘটর করে। নদীর ভাটা যেমন ধীরে সুস্থে চলে সেইভাবে কথক শান্ত মনে এগিয়ে, যেতে চান। তিনি যদি তাঁর জন্মদিনে একটা মিষ্টি পরিকে আসতে দেখেন তো তার কাছে তিনি মালগাড়ি হওয়ার বর চেয়ে নেবেন। প্যাসেঞ্জার ট্রেন কিংবা মেল ট্রেন শুধু অতিরিক্ত কাজের ধান্দা নিয়ে স্টেশনে যাত্রী ওঠায় আর নামায়। পাছে লেট হয়ে যায় এই ভয়ে তারা প্রত্যেক স্টেশনে থেমেই আবার তাড়াহুড়ো ছুটতে শুরু করে। কবিতার কথকের ওইরকম তাড়াহুড়ো জীবন মোটেই পছন্দ নয়। তিনি মালগাড়ির মতো সবলাইন অধিকার করে যেমন খুশি যেখানে খুশি যেতে পারেন। মেল ট্রেনগুলো একটা বাঁধাধরা লাইনেই ছুটে বেড়ায়। কিন্তু মালগাড়ির জন্য সব লাইনই খোলা। ওরা শুধু হাঁসফাস করে ছুটে পৌঁছোতে চায়। কিন্তু মালগাড়ি যাচ্ছি যাব করতে করতে এগিয়ে চলে। সে অশেষ চলতে পাওয়ার সুখ ভোগ করে।

 ▸চতুর্থ শ্রেণির বাংলা পাতাবাহার মালগাড়ি প্রশ্ন উত্তর

       ▸ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর :
১. প্রেমেন্দ্র মিত্র কোন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন?
উত্তরঃ ‘কালিকলম’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র।
২. তাঁর সৃষ্ট একটি বিখ্যাত চরিত্রের নাম লেখো।
উত্তরঃ তাঁর সৃষ্ট একটি বিখ্যাত চরিত্রের নাম ঘনাদা।
৩. একটি বাক্যে উত্তর দাও :
৩.১. ‘মালগাড়ি’-র চলাকে কবিতায় কার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তরঃ নদীর ভাটার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
৩.২. কথকের জীবনে কোন বিশেষ দিনটিতে পরির সঙ্গে তাঁর দেখা হতে পারে?
উত্তরঃ কথকের জন্মদিনে।
৩.৩. প্যাসেঞ্জার ট্রেন কোন কাজের ধান্দা নিয়ে থাকে?
উত্তরঃ স্টেশন পেলেই যাত্রী ওঠানো-নামানোর ধান্দায় থাকে।
৩.৪. ‘মালগাড়ি' কোন কাজে ব্যবহৃত হয়?
উত্তরঃ মালগাড়ি আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।
৩.৫. সত্যিই কি মালগাড়ির টাইমটেবিল অনুযায়ী চলার প্রয়োজন নেই?
উত্তরঃ নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু তার পিছনে প্যাসেঞ্জার বা মেল ট্রেন এসে গেলে তাকে কিছু সময় নষ্ট করে অন্য লাইনে সরে গিয়ে পথ ছেড়ে দিতে হয়।
৩.৬. প্যাসেঞ্জার বা মেল ট্রেনের তুলনায় মালগাড়ির ধীরগামী হওয়ার কারণ কী বলে তোমার মনে হয়?
উত্তরঃ আমার মনে হয় প্যাসেঞ্জার বা মেল ট্রেনের তুলনায় মালগাড়ি অনেক ভারী হওয়ার কারণে সে ধীরগামী হয়।
৩.৭. আপ ট্রেন আর ডাউন ট্রেন বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ যে ট্রেন সমুদ্রপৃষ্ঠমুখী স্থানের স্টেশনে যায় তাকে বলে ডাউন ট্রেন এবং বিপরীতমুখী ট্রেনকে বলা হয় আপ ট্রেন।
৩.৮. তোমার জানা এমন কয়েকটি যানবাহনের নাম লেখো যেগুলি যাত্রীপরিবহণ করে না।
উত্তরঃ লরী, টেম্পো, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি ইত্যাদি যাত্রীপরিবহণ করে না।

৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৪.১. জোয়ার আর ভাঁটায় নদীর চেহারা কেমন হয়?
উত্তরঃ নদীতে যখন জোয়ার হয় তখন নদীর জল ক্রমাগত ঊর্ধ্বপথে বেড়ে উঠতে থাকে। আবার, ভাটায় সেই জল নীচের দিকে নামতে থাকে।
৪.২. এই কবিতায় পরিদের প্রসঙ্গ কীভাবে এসেছে? পরির প্রসঙ্গ তুমি এর আগে কোন কোন গদ্য, কবিতায় পড়েছ?
উত্তরঃ কবিতার কথক বলেছেন, তাঁর জন্মদিন প্রসঙ্গে যদি কোনো পরি এসে যায় তাই আশা করছেন কবি। এর আগে আমি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতা ‘কোথাও আমায় হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’ কবিতায় পরির কথা পড়েছি।
৪.৩  মালগাড়ি হয়ে কবিতার কথক কোন সুখ অনুভব করতে চায়?
উত্তরঃ  কবিতার কথক মালগাড়ি হয়ে কোনো টাইমটেবিল না দেখে খুশিমতো চলতে চায়। যে-কোনো লাইনে সে খুশিমতো যেতে চায়। সে যাচ্ছি যাব করে চলতে চায় অশেষ চলতে পারার সুখ অনুভব করতে চায়।
৪.৪. করিতায় ‘ঘটর ঘটর’ শব্দটি মালগাড়ির শব্দ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। তুমি এমন কিছু শব্দ লেখো যা দিয়ে যন্ত্র বা যানবাহনের শব্দকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
উত্তরঃ  কলকাতায় হাতে টানা রিক্সা চলে ঠকাং ঠকাং শব্দ করে। কলকাতার বুকে ট্রামগাড়ি চলে ঠংঠং শব্দ করে। তাঁতি তাঁত বোনে ঠকঠাক ঠকঠাক শব্দ করে।

৫. গদ্যরূপ লেখো :
৫.১. মালগাড়ি হই একটি শুধু যদি ঘটর ঘটর দিনরাত্তির চলি।
উত্তরঃ যদি শুধু একটি মালগাড়ি হই তবে দিনরাত্রি ঘটর ঘটর চলব।
৫.২. চেয়ে নেব একটি শুধু বর।
উত্তরঃ  শুধু একটি বর চেয়ে নেব।
৫.৩. ভাবনা শুধু লেট হয়ে যায় পাছে।
উত্তরঃ শুধু ভাবনা পাছে লেট হয়ে যায়।
৫.৪. যত দূরেই যেখানে যাই নাকো সারা লাইন শুধু আমার একার।
উত্তরঃ যেখানে যত দূরেই (আমি) যাই শুধু আমার একার সারা লাইন।
৫.৫. যাচ্ছি যাব করেই আমার যাওয়া।
উত্তরঃ আমার যাচ্ছি যাব করেই যাওয়া।

৬. প্রতিটি শব্দের সমার্থক শব্দ লেখো ও সেগুলি বাক্যে ব্যবহার করো :
  1. বাড়ি ➙ (গৃহ) আজ বাবুদের গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠান হচ্ছে।
  2. নদী ➙ (স্রোতস্বিনী) গঙ্গা নিত্য স্রোতস্বিনী।
  3. ভাবনা ➙ (চিন্তা) সবসময় সুচিন্তা করবে, খারাপ চিন্তা নয়।
  4. খুশি ➙ (সন্তুষ্ট) ভিক্ষুককে কখনো সন্তুষ্ট করা যায় না।
  5. ধান্দা (ফিকির) ➙ অনেক ফিকির করেও লোকটা তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারল না।
  6. তুফান (ঝড়)➙ বৈশাখ মাসে বিকেলের দিকে প্রায় ঝড় ওঠে।
  7. রাস্তা (পথ) ➙ পৃথিবীর কোনো পথ সরলরেখার মতো সোজা নয়।
৭. 'ভালো-মন্দ'― এর মতো বিপরীত অর্থের শব্দ পাশাপাশি আছে এমন তিনজোড়া শব্দ কবিতা থেকে বের করে লেখো।
উত্তরঃ  দিনরাত্তির। ওঠায় নামায়। যাওয়া-আসার।
৮. ছক করে নীচের শব্দগুলি থেকে ঘোষবর্ণ ও অঘোষবর্ণ আলাদা করে বসাও।
উত্তরঃ  তুফান, দেখা, ছুটে, কাজ, মিষ্টি, যাত্রী।
শব্দ ঘোষবর্ণ অঘোষবর্ণ
তুফান তু, ফা
দেখা দে খা
ছুটে ছু, টে
কাজ কা
মিষ্টি মি, ষ টি
যাত্রী যা , ত্ রী


৯. কবিতাটিতে যে-কটি ইংরেজি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলি হল—মেলট্রেন, প্যাসেঞ্জার, স্টেশন, লেট, লাইন, টাইমটেবিল। শব্দগুলি প্রতিটিই রেলগাড়ি সংক্রান্ত। এবার তুমি বাস ও সেই সংক্রান্ত ইংরেজি শব্দগুলির একটি তালিকা তৈরি করো।
উত্তরঃ  বাস সংক্রান্ত ইংরেজি শব্দ হল—ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, হেল্পার, টিকিট, সিট, লেডিজ, স্টপেজ, ব্রেক, স্ট্যান্ড, সিনিয়র সিটিজেন, সিগন্যাল, ট্রাফিক, জ্যাম, রুট।
১০. তুমি একটি মালগাড়ি দেখতে পেলে। মালগাড়ি সম্বন্ধে তোমার মনে কী কী প্রশ্ন জেগেছে? তার অন্তত পাঁচটি প্রশ্ন খাতায় লেখো।
উত্তরঃ (১) মালগাড়িকে ইংরেজিতে কী বলে? (২) মালগাড়ি কোথা থেকে কোথায় যায়? (৩) মালগাড়িতে কোন কোন মাল নেওয়া হয়? (৪) মালগাড়িতে মাল ভরে দেয় কে? (৫) মালগাড়িতে কি শুধু একইরকম মাল বওয়া হয়?
১১. নীচে একটি টাইমটেবিলের অংশ (নমুনা হিসেবে) তোমাদের জন্য দেওয়া রইল। সেখান থেকে বিভিন্ন ট্রেনের নম্বর, কোথা থেকে ছাড়ছে, গন্তব্যস্থলটি কোথায়, বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেনের পৌঁছোনোর সময় ইত্যাদি তোমার খাতায় নথিভুক্ত করো। প্রয়োজনে (শিক্ষিকা/শিক্ষকের সাহায্য নাও)। 
 উত্তরঃ  ✅ নিজে করো।

❏ বনের খবর লেখক পরিচিতি : ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহের মসুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন প্রমদারঞ্জন রায়। তাঁর পিতার নাম কালিনাথ রায়। প্রমদারঞ্জন ছিলেন জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্রেকিশোর রায়চৌধুরীর ছোটো ভাই। তিনি বাংলার সুলেখিকা লীলা মজুমদারের পিতা ছিলেন। তিনি হাওড়ার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু সেখানকার পাঠ সম্পূর্ণ না করেই ভারতীয় জরিপ বিভাগের পরীক্ষায় বসেন এবং প্রথম স্থান লাভ করে অফিসার পদে চাকরি পেয়ে যান। তাঁর কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় তাকে  জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারত, বর্মা, শ্যামদেশের
বনজঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। তাঁর লেখা ‘বনের খবর’ বইটিতে তাঁর চাকরি জীবনের প্রচুর অভিজ্ঞতার কথা তিনি বর্ণনা করে গিয়েছেন। তিনি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন।

❏ বনের খবর গল্পটির বিষয়বস্তু :
প্রায় ষাট জন লোক, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, খাবারদাবার দুটো হাতির পিঠে চাপিয়ে লেখক তাঁর চাকরি জীবনের জন্য একটা ভয়ংকর গভীর বনে গিয়েছেন। দশ-বারোজন লুশাই রন (অসম) কেটে পথ তৈরি করলে পিছনের লোকগুলি এগোতে পারবে। বনের ভিতরে জন্তু-জানোয়ার কিলবিল করছে। সকাল নটা-দশটার আগে সূর্য দেখা যায় না। এক-এক জায়গায় এমনই ঘন বন যে আকাশ দেখা যায় না, মনে
হয়, সন্ধে নেমে এসেছে। শিকাএক বুড়ো লুশাইকে সঙ্গে নিয়ে লেখক বনের মধ্যে আগে আগে চলেছেন। তাঁদের পিছনে শ্যামলাল, তার হাতে দূরবিন, ‘বন্দুক আর টোটার থলে। অন্য আর-একজনের হাতে খাবার আর জল। তাঁরা চারজন হাতে এক-একখানি দা দিয়ে গাছে দাগ কেটে অন্য সকলের প্রায় আধ মাইল আগে চলেছেন। তাঁদের ওই নিশান দেখে পিছনের অন্যান্যরা এগিয়ে আসছে। চলতে চলতে তাঁরা একটা ভয়ংকর গল্ডারের মুখোমুখি হলেন। লেখক তাঁর বন্দুকে টোটা ভরে গন্ডারের পিছু ধাওয়া করতেই সেই জন্তুটা হাওয়ার মতো মিলিয়ে গেল। বুনো হাতির পায়ের চিহ্ন দেখে বনের নালা পার হচ্ছেন
তাঁরা। হাতি, গন্ডার, বাঘ, হরিণ সব জন্তুকেই দেখতে পাচ্ছেন। হঠাৎ পথের ওপর আবার একটা বিশাল-দেহ গন্ডার যমদূতের মতো দাদামশাইয়ের মতো দাঁড়িয়ে ফোঁস ফোঁস করতে লাগল। তাকে দেখেই লেখকদের সঙ্গী লুশাই বন্দুক দিয়ে তাকে মারতে বলল। 

লেখক বন্দুক হাতে তাক করতে না করতেই সে একটা হুংকার দিয়ে দৌড়ে পাহাড়ে উঠে গেল। তার সামনে যত বাঁশ পড়ল তার সবগুলো প্যাকাটির মতো পটপট করে ভেঙে গেল। এরপর লেখক তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে মাত্র আধ মাইল এগোতে না এগোতেই আবার একটা দাঁতওয়ালা হাতির ভয়ংকর গর্জন শোনা গেল। তার গর্জনে সারা বন যেন থরথর করে কেঁপে উঠল। লেখক বন্দুক হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন।
লেখকের সঙ্গী শিকারি বুড়ো লুশাই বলল, ‘বোধহয় গন্ডারটা ওর সামনে পড়েছে।' হাতিটা আরও তিন-চারটে ডাক দিয়ে, ধীরে ধীরে বাঁশ ভাঙতে ভাঙতে পাহাড়ে উঠল। এরপর পড়ল পাকোয়া নদী। এক কোমর জল, সত্তর-আশি হাত চওড়া। নদীর ধারে একপাল হাতির পায়ের দাগ। লেখকের সঙ্গী, লুশাই বলল, চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশটা হাতি হবে। সারাদিন জলে ভিজে লেখকের কাপড়-চোপড় ভিজে গিয়েছিল। তিনি পাহাড়ে হেলান দিয়ে জুতো-মোজা খুলতে খুলতে লুশাইকে নদীর ওপারে গিয়ে তাঁবুর জায়গা দেখতে বললেন। লুশাই চলে গেলে শ্যামলালও বন্দুক হাতে নিয়ে চলে গেল। লেখক একা। তাঁর খুব খিদে
পেয়েছিল। তিনি ‘হুঁ-উ-উ’ শব্দে চেঁচিয়ে তাঁর পিছনে পড়ে যাওয়া খাবারওয়ালা খালাসি আর অন্যান্য লোকদের ডাকতে লাগলেন। বার দুই তাঁর হুঁ-উ-উ শব্দ শুনে পাহাড়ের ওপর থেকে একটা হাতি ‘হুঁ-উ-উ’ বলে ডেকে উঠল।

আর সঙ্গে মাত্র পঞ্চাশ-ষাট হাত দূরে আরও অনেক হাতি গুড়গুড় শব্দ করে তার জবাব দিতে লাগল। লেখক আবার ‘হুঁ-উ-উ’ করে চেঁচালেন। আবার হাতিগুলো নালার কিনারা থেকে গুড়গুড় শব্দ করে নাকে ফোঁসফোঁস আওয়াজ করতে লাগল। তারপর ওপর থেকে মড়মড় করে বাঁশ ভাঙার শব্দ শোনা যেতে লাগল। নদীর ওপার থেকে বুড়ো লুশাই ‘চলে এসো’ বলে লেখককে ডেকে চিৎকার করতে লাগল। লেখক তক্ষুনি নদীর ওপারে গিয়ে শ্যামলালের হাত থেকে বন্দুক নিয়ে নদীর ধারে গিয়ে দাঁড়ালেন। শ্যামলাল আর বুড়ো লুশাই খুব হল্লা জুড়ে দিল। তাই শুনে হাতিগুলো আবার পাহাড়ের ওপরে উঠে গেল। রাত হলে অন্ধকারে সেই হাতিগুলো লেখকদের ডেরায় থাকা হাতি দুটোর ধারেকাছে ভিড় জমাতে লাগল। তাদের ইচ্ছে লেখকদের সঙ্গে থাকা হাতি দুটোকে তাদের সঙ্গে টেনে নেওয়া। এই হাতি দুটো পর্যন্ত বুনো হাতিদের সাড়া পেয়ে ছটফট করে আর চিৎকার আরম্ভ করল। তখন লুশাই ও অন্যান্য লোকেরা মশাল ঘুরিয়ে প্রাণপণে বিকট চিৎকারে বুনো হাতিগুলোর দিকে ছুটে গেল, হাতিগুলি পূর্ব ও পশ্চিম দিকের পাহাড়ের বনে উঠে গেল।

 ▸ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর :
১. প্রমদারঞ্জন রায় চাকরি সূত্রে কোন কোন দেশে ঘুরেছেন?
উত্তরঃ চাকরিসূত্রে তিনি ভারত, বর্মা, শ্যামদেশের ঘন জঙ্গলে ঘুরেছেন।
২. লীলা মজুমদার তাঁর কে ছিলেন?
উত্তরঃ  লীলা মজুমদার ছিলেন তাঁর মেয়ে।

৩. বর্ণবিশ্লেষণ করো :
  1.  ক্রমাগত ➙ ক্ + র্ + অ + ম্ + আ + গ্ + অ + ত্ + অ।
  2. পাঞ্জা➙ প্ + আ + ঞ্ + জ্ + আ।
  3. পশ্চিম ➙প্ + অ + শ্ + চ্ + ই + ম ।
  4. কিলিবিলি➙ ক্ + ই + ল + ই + ব্ + ই + ল্ + ই।
  5. প্রাণপণ➙ প্ + র্ + আ + ণ্ + অ + প্ + অ + ণ।
৪. ‘বনের খবর’ গল্পটিতে এমন অনেক শব্দ আছে যা হাইফেন (-) দিয়ে যুক্ত। যেমন ‘সাড়ে ছশো-সাতশো দশ-বারোজন’ ইত্যাদি। গল্পটিতে এরকম কতগুলো শব্দ আছে খুঁজে বার করে নীচের বাক্সটি ভরতি করো :
উত্তরঃ  চার-পাঁচ, হাত-পা, ন-টা-দশটার, এক-এক, পনেরো-কুড়ি, চলতে-চলতে, এ-গাছ, ভাবতে-ভাবতে,
বলতে-না-বলতে, নালায়-নালায়, দেখতে-না-দেখতে, জল-কাদা, বিশাল-দেহ, ফোঁস-ফোঁস, ধীরে-ধীরে, আশে-পাশে,আট-দশটা, তিন-চারটে, ভাঙতে-ভাঙতে, সত্তর-আশি, পাঁচ-সাতটা, চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশটা, দাগে-দাগে, জলে-জলে, কাপড়-চোপড়, জুতো-মোজা, বসে-বসে, ‘হুঁ-উ-উ’, পঞ্চাশ-ষাট, তিন-চারটে, সাড়ে-চারটেয়, বড়ো-বড়ো, এ-দুটোকে, পাঁচ-সাতটা, এক-একবার, আসতে-না-আসতেই, করতে-করতে।

৫. ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলি ব্যবহার করে মৌলিক বাক্যরচনা করোঃ
  1. কিলিবিলি➙ অল্প জলে একগাদা ছোটো মাছ কিলিবিলি করছিল। 
  2. হুড়মুড়➙ চোখের সামনে মাটির বাড়িটা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল। 
  3. মিটমিট➙মুখোমুখি হয়ে শেয়ালটা আমাকে মিটমিট করে দেখছিল। 
  4. পটপট➙ প্রবল বাতাসে বাঁশগাছগুলো পটপট করেই ভেঙে গেল। 
  5. মড়মড়➙ একটা মড়মড় আওয়াজ শুনে একটু ঘাবড়ে গেলাম। 
  6. থরথর➙ শীতে বুড়ো থরথর করে কাঁপছিল। 
  7. গুড়গুড়➙ মেঘের গুড়গুড় শব্দ শুনেই দৌড়ে ঘরে ঢুকলাম। 
  8. ফোঁসফোঁস➙ সাপের ফোঁসফোঁস গর্জন কানে লেগে চমকে উঠলাম।
৬. একই শব্দ পরপর দু-বার ব্যবহৃত হয়েছে এমন কয়টি শব্দ তোমরা গল্পে খুঁজে পেয়েছো তা লেখো : যেমন— জলে-জলে।
উত্তর : এক-এক, আগে-আগে, চলতে-চলতে, ভাবতে-ভাবতে, বলতে-না-বলতে, নালায়-নালায়, ফোঁস -ফোঁস, মিট-মিট, ধীরে-ধীরে, পট-পট, মড়-মড়, থর-থর, ভাঙতে -ভাঙতে, দাগে-দাগে, জলে-জলে, বসে-বসে, গুড়-গুড়,বড়ো-বড়ো, করতে-করতে।
৭. নীচের অনুচ্ছেদে কয়টি বাক্য আছে লেখো :
উত্তর : মোট ৯টি বাক্য আছে। যথাক্রমে-
(১) বেলা নটা-দশটার আগে আর সূর্য দেখা যায় না। 
(২) এক-এক জায়গায় এমনি ঘন বন যে আকাশ দেখবার জো নেই। 
(৩) ঠিক মনে হয় যেন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। 
(৪) আমি সকলের আগে আগে চলি। 
(৫) সঙ্গে একজন বুড়ো লুশাই থাকে। 
(৬) সে বড়ো শিকারি। 
(৭) তার পিছনে দুজন খালাসি। 
(৮) তাদের মধ্যে শ্যামলালের হাতে আমার খাবার আর জল। 
(৯) তিনজনের হাতেই এক-একখানি দা।

৮। গল্পটিতে কোন কোন পশুপাখির উল্লেখ আছে তার একটি তালিকা তৈরি করো। প্রতিটি পশু এবং পাখি সম্পর্কে দুটি করে বাক্য লেখো :
উত্তর : গল্পটিতে আছে যথাক্রমে—বাঘ, হাতি, গন্ডার, হরিণ, হনুমান (হুন্নুমান), বানর, বুনো মোষ ইত্যাদি পশু আছে। গল্পটিতে শুধুমাত্র ফেজেন্ট (সুন্দর পাখি)-এর নাম আছে।
  • বাঘ➙ (১) সুন্দরবনের বাঘ সবচেয়ে বড়ো। (২) আজকাল সার্কাসে বাঘ দেখা যায় না।
  • হাতি ➙ (১) হাতি সবচেয়ে শক্তিমান পশু। (২) আগেকার দিনে রাজা-উজিররা হাতি পুষতেন।
  • গন্ডার ➙ (১) জলদাপাড়ার অরণ্যে অনেক গন্ডার দেখা যায়। (২) কলকাতার চিড়িয়াখানায় গোটা দশেক গন্ডার আছে।
  • হরিণ➙ (১) হরিণ শিকার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। (২) মারীচ-রাক্ষস সোনার হরিণ সেজে রামচন্দ্রকে বনে নিয়ে গিয়েছিল।
  • বানর➙ (১) ইতিহাস বলে, মানুষের পূর্বপুরুষ বানর ছিল। (২) বানর কলা খেতে খুব ভালোবাসে।
  • ফেজেন্ট➙(১) ফেজেন্ট একটি সুন্দর পাখি। (২) ইদানীংকালে ফেজেন্ট প্রায় দেখা যায় না।
  • হনুমান(হুন্নুমান )➙ (১) লক্ষ্মণের প্রাণ বাঁচাতে হনুমান গন্ধমাদন পর্বত এনেছিল। (২) এক লাফে হনুমান বহুদূর পার হতে পারে।
  • বুনোমোষ➙ (১) পাহাড়ি অরণ্যে বুনোমোষ দেখা যায়। (২) বাঘ এবং বুনোমোষ একই অরণ্যে ঘুরে বেড়ায়।
৯. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
৯.১ লুশাই পাহাড়ের বিস্তার কতখানি জায়গা নিয়ে?
উত্তর : সাড়ে ছশো-সাতশো বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে।
৯.২ লুশাই পাহাড়কে ভয়ংকর জায়গা কেন বলা হয়েছে?
উত্তর : লুশাই পাহাড়ে বন ছাড়া মানুষের নামগন্ধ নেই। আছে শুধু জানোয়ার, কিলিবিলি করছে। তাই ওই পাহাড়কে ভয়ংকর জায়গা বলা হয়েছে।
৯.৩ হাতির রাস্তা পাওয়া গেলে লোকজনের কেন খুব মজা হল?
উত্তর : বন কেটে লোকজনদের রোজ রাস্তা তৈরি করতে হয়েছিল। তাই সেদিন হাতির রাস্তা পাওয়া গেলে, বন কাটতে হচ্ছে না বলে লোকজনদের খুব মজা হল।
৯.৪ গন্ডার দেখে শ্যামলাল কী কী করেছিল?
উত্তর : গন্ডার দেখে শ্যামলাল তৎক্ষণাৎ পালিয়ে যাচ্ছিল।
৯.৫ দ্বিতীয় দিন বন্দুক এবং বনের পশুপাখি থাকা সত্ত্বেও শিকার করতে পারা যায়নি কেন?
উত্তর : দ্বিতীয় দিনে বন্দুক থাকা সত্ত্বেও লেখক ভীষণ ঘন বন এবং কুয়াশার জন্য শিকার করতে পারেননি।
৯.৬ পাকোয়া নদীর বর্ণনা দাও।
উত্তর : পাকোয়া নদীটা সত্তর-আশি হাত চওড়া হবে, তাতে এক কোমর জল।
৯.৭ লেখকের হুঁ-উ-উ চিৎকার শুনে হাতিরা কী করেছিল?
উত্তর : লেখকের ‘হুঁ-উ-উ’ চিৎকার শোনামাত্র তাঁর মাথার ওপরের পাহাড় থেকে একটা হাতি 'হুঁ-উ-উ’ বলে ডেকে উঠল; আর লেখকের কাছ থেকে পঞ্চাশ-ষাট হাত দূরে আরও অনেক হাতি গুড়গুড় শব্দ করে তার জবাব দিতে লাগল।
৯.৮ রাতে কোথায় তাঁবু খাটানো হল?
উত্তর : রাতে পাকোয়া নদীর ওপারে বন কেটে তাঁবু খাটানো হল।
৯.৯ মাহুতরা রাতে কোথায় হাতিদের বেঁধে রাখল?
উত্তর : রাতে মাহুতরা তাঁবুর কাছে হাতিদের বেঁধে রাখল।

১০. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
১০.১ কীভাবে রাতে বুনো হাতি তাড়ানো হল?
উত্তর : লুশাইরা শুকনো বাঁশের মশাল তৈরি করে, লম্বা লম্বা কাঁচা বাঁশের আগায় বেঁধে দিল। তারপর মশালগুলো ঘুরিয়ে বিকট চিৎকার করতে করতে লুশাইরা এগিয়ে আসা হাতিগুলোর দিকে তেড়ে গেল। এভাবে সারারাত হাতিগুলো একবার তাঁবুর দিকে এগিয়ে গেল আবার জ্বলত মশাল হাতে বিকট চিৎকারে তাদের তাড়া করতে লাগল। ভোর হলে একদল হাতি পুবদিকের পাহাড়ে, আর একদল হাতি পশ্চিম দিকের পাহাড়ে উঠে গেল।
১০.২ লেখকের শুকনো নালায় নামার অভিজ্ঞতা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর : শুকনো নালায় লেখক নামলেন। তাঁর আগে বুড়ো লুশাই। আর তাঁর পিছনে শ্যামলাল। এমত দশায়, তাঁদের সামনেই ভারী একটা জলকাদা তোলপাড়ের শব্দ হল। তাঁরা ব্যর্ন্ত পায়ে দুই লাফে পিছন দিকের পাড়ে আবার ফিরে এলো। দেখলেন জলকাদায় বিশাল দেহ এক গন্ডার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দেখলে মনে হবে যমদূতের দাদামশাই। রেগেমেগে দাঁড়িয়ে ফোঁস ফোঁস করছে। চোখদুটো লাল মিটমিট করছে। কান দুটো হেলানো পিছন দিকে লেখক খুব সাবধানে তাকে গুলি চালানোর কথা ভাবছিলেন। কিন্তু তা করতে হল না। গন্ডারটা মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে থেকে অকস্মাৎ একটা হুঙ্কার দিয়ে দৌড়ে পাহাড়ে উঠে গেল।

দু-চাকায় দুনিয়া
❏ দু-চাকায় দুনিয়া গল্পটির বিষয়বস্তু :
অজানাকে জানার ও অচেনাকে চেনার অসীম কৌতূহল নিয়ে এই কাহিনির লেখক তেইশ বছর বয়সে আত্মীয়স্বজন সকলকে ছেড়ে ১৯২৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সারা পৃথিবী ঘুরতে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর তিনজন বন্ধু। অশোক মুখার্জি তাঁর জ্যেঠতুতো ভাই। আনন্দ মুখার্জি তাঁর খুড়তুতো ভাই। আর মণীন্দ্র ঘোষ। চারজনের চারটি সাইকেল। কলকাতার টাউন হল থেকে অসংখ্য বাঙালির বিপুল উদ্দীপনা ও উৎসাহ নিয়ে তাঁরা ভূপর্যটনে বেরিয়েছিলেন। রাত ৯টায় চন্দন নগরে পৌঁছোলেন। পরের দিন তখনকার খুব চওড়া মোরাম বাঁধানো জিটি রোড হয়ে তাঁরা বর্ধমানে
পৌঁছোলেন। সেখানে যথেষ্ট আদর-আপ্যায়ন লাভ করলেন। এবার জিটি রোড ছেড়ে রাঁচির পথ ধরলেন। রাঁচি ছেড়ে আবার পালামৌ জঙ্গলের ভিতর দিয়ে জিটি রোডের দিকে অগ্রসর হলেন। ওই রাস্তার পাশে মাথা উঁচু করা অনেক খয়ের গাছ ছিল। ধারে কাছে বাঘ, হরিণ, নীলগাই ঘুরছিল। রাতে একটা ইনস্পেকশন বাংলোতে উঠলেন। রাতে তাঁদের ঘুম ভাঙল বাঘের সাড়া পেয়ে। তাঁরা ঘরের ভিতর থেকে চারজন চারটি পিস্তুল হাতে নিয়ে বন্ধ করা দরজা-জানলার পাশে দাঁড়ালেন। একসময় বাঘের আঁচড়ে জানলার খিলসুদ্ধ উড়ে যেতে পারে বুঝে অশোক মুখার্জি ০.৪৫ পিস্তল থেকে গুলি ছুঁড়লেন। গুলির সাংঘাতিক আওয়াজে বাঘটা জঙ্গলের দিকে পালিয়ে গেল।

চাঁদনি রাতের আলোতে বাঘের পুরুষ্টু দেহটা দেখা গেল। পরের দিন সকালে ওই বাংলোর চৌকিদার সেখানে এলে জানা গেল, বাঘটা মানুষখেকো নয়, খাবারের খোঁজে রোজই টহল দিয়ে যায়। চা খেয়ে চার অভিযাত্রী সাইকেলে ওই জঙ্গলের পথ ধরেই জিটি রোডে উঠলেন। বিহারের চওড়া রাস্তার দু-পাশে ধান-গমের খেতে অসংখ্য ব্ল্যাক বাক ও স্পটেড ডিয়ার দেখলেন। মাঠে মাঠে সারস পাখি আর গাছে গাছে
প্রচুর ফ্লেমিঙ্গো দেখা গেছে। দু-একটা হেরণ পাখিও দেখা গিয়েছে। রাস্তা জুড়ে দেখা গেছে অসংখ্য ঘুঘু। উত্তর প্রদেশে যেখানে-সেখানে খুব ময়ূর ঘুরে বেড়িয়েছে। আখের খেতের আশপাশে মস্ত বড়ো নীলগাই, ময়ূর ও হরিণ দেখা গেছে।

এই  অধ্যায়ঃ থেকে প্র্যাকটিস সেট : প্রশ্নোত্তর
      ১. সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো :
(১) ভূপর্যটক লেখকের সঙ্গী ছিলেন—(১ জন/২ জন/৩ জন)।
উত্তর : ৩ জন।
(২) লেখক ও তাঁর বন্ধুরা যাত্রা শুরু করেছিলেন—(কলকাতার টাউন হল থেকে/চন্দননগর থেকে/বর্ধমান থেকে)।
উত্তর : কলকাতার টাউন হল থেকে।
(৩) অশোক ও আনন্দ সম্পর্কে ছিল—(মামাতো ভাই/পিসতুতো ভাই/জ্যেঠতুতো-খুরতুতো ভাই/নিজের ভাই)।
উত্তর : জ্যেঠতুতো-খুড়তুতো ভাই।
(৪) রাঁচি ছেড়ে জি টি রোডে লেখকেরা এগিয়েছিলেন—(পালামৌ জঙ্গলের ভিতর দিয়ে/সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে)।
উত্তর : পালামৌ জঙ্গলের ভিতর দিয়ে।
(৫) বাঘ আসা মাত্র—(অশোক/মণীন্দ্ৰ/আনন্দ) গুলি ছুঁড়েছিল।
উত্তর : অশোক।

২. শূন্যস্থান পূরণ করো :
(১) অশোক মুখার্জি আমাদের দলের নেতা।
(২) সাইকেল চারখানা আমাদের বাহন।
(৩) রাত নটার সময় পৌঁছোলাম চন্দননগরে
(৪) প্রত্যেক দশ মাইল অন্তর একটা পাকা কুয়ো বা ইঁদারা সংলগ্ন পান্থশালা ছিল।
(৫) আমাদের সঙ্গে অ্যাসিটিলিন আলো ছিল।

৩. সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করো :
(১) লেখক বিমল মুখার্জি ও তিন বন্ধু ভূপর্যটনে বেরিয়েছিলেন।
উত্তর : সত্য।
(২) ভূপর্যটনের শখ লেখকের গণিত বই পড়ে হয়েছিল।
উত্তরঃ মিথ্যা।
(৩) লেখকের যাত্রা শুরু হয়েছিল চন্দননগর থেকে।
উত্তর : মিথ্যা।
(৪) পালামৌ জঙ্গলে ইন্সস্পেকশন বাংলোতে রাত কাটানোর সময় লেখকেরা বাঘের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন।
উত্তর : সত্য।

৪ .বামপক্ষের সঙ্গে ডানপক্ষের মিল দেখাও :
বামপক্ষ ডানপক্ষ
(১) লেখকদের ভূপর্যটনের বাহন ছিল উত্তর: সাইকেল।
(২) লেখকের সঙ্গী ছিলেন উত্তর: তিনজন।
(৩) যাত্রা শুরু হয়েছিল উত্তর: টাউন হল থেকে।
(৪) গ্র্যান্ড ট্র্যাঙ্ক রোড তৈরি করেছিলেন উত্তর: শেরশাহ।
(৫) ইন্সস্পেকশন বাংলোয় রাত্রে থাকাকালীন লেখকদের সাথে আলাপ করতে এসেছিল উত্তর: বাঘ।


চতুর্থ শ্রেণি পাতাবাহার প্রশ্ন উত্তর বিচিত্রসাধ
❏ বিচিত্র সাধ কবিতার লেখক পরিচিতি :
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা সারদাদেবী। রবীন্দ্রনাথ ‘বিশ্বকবি' নামে খ্যাত ছিলেন। ছেলেবেলায় স্কুলের প্রথাগত শিক্ষা তিনি পাননি বটে কিন্তু বাড়িতে যথেষ্ট যত্নসহকারে গৃহ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষালাভ করেছিলেন। শুধু শিক্ষা নয়; সংগীতে, অঙ্কনেও তিনি ছেলেবেলা থেকে যথেষ্ট পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কবিত্ব শক্তির বিকাশ ঘটে এবং কাব্য সাধনায় তিনি অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও তাঁরপত্নী কাদম্বরী দেবীর বিশেষ সাহচর্য পান। ঘরে পিতার আদেশে তিনি বিষয়-সম্পত্তি সম্বন্ধেও বিশেষ অভিজ্ঞতা লাভ করেন। বোলপুর শান্তিনিকেতনে ‘ব্রষ্মচর্য আশ্রম’ তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। সেই ব্রহ্মচর্য আশ্রমই বর্তমানে ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে পরিচিত। 
রবীন্দ্রনাথের দেশভক্তি ছিল প্রগাঢ়। ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী যখনই দেশবাসীর ওপর নির্মম অত্যাচার করেছে তখনই তিনি তাঁর লেখনী দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বহুবিধ সম্মানের অধিকারী কবি রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য সাহিত্যে ‘নোবেল পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘ডক্টরেট’ উপাধি দেন এবং ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে
ইংরেজ সরকার তাঁকে ‘স্যার’ উপাধি প্রদান করেন।

তিনি একাধারে ছিলেন কবি, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, সুরকার, নাট্যপ্রযোজক ও দেশপ্রেমী। ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয়সংগীত রচয়িতারূপে বিশ্বে একমাত্র তাঁরই নাম পাওয়া যায়। প্রতিভাবান এই মনীষীর কাব্যরচনার সূত্রপাত খুব অল্প বয়স থেকেই। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ‘শৈশব গীত’, ‘বনফুল’, ‘রুদ্রচণ্ড’, ‘ভানুসিংহের পদাবলি’, ‘কবি-কাহিনি’ প্রভৃতি রচনা করেন। তাঁর রচিত প্রথম মুদ্রিত কবিতাটির নাম ‘হিন্দু মেলার উপহার’। ‘জ্ঞানাঙ্কুর’ পত্রিকায় ‘ভুবনমোহিনী প্রতিভা' নামে তাঁর রচিত প্রথম গদ্য প্রবন্ধটি ছাপা হয়। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে ‘সন্ধ্যা সংগীত’ প্রকাশিত হওয়ার পর সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বহুবার পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেন ও দেশি-বিদেশি ভাষায় বিবিধ গ্রন্থ রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথ রচিত অন্যান্য রচনা হল ‘নৌকাডুবি’, ‘ডাকঘর’, ‘বিদায় অভিশাপ’, ‘গোরা’ প্রভৃতি। তিনি অসংখ্য সংগীত রচনা করেন ও তাতে সুরারোপ করেন। তাঁর রচিত সংগীতগুলি ‘রবীন্দ্রসংগীত’ নামে পরিচিত। বিশ্ববরেণ্য এই মহান প্রতিভাবান কবিগুরুর দেহাবসান হয় ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট।

❏ বিচিত্র সাধ কবিতার বিষয়বস্তু :
জীবনের একটি বিশেষ বয়সে এসে কবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর শৈশবের কথা মনে করে কবিতাটি রচনা করেছেন। তিনি রোজ বেলা দশটায় পাঠশালা যাওয়ার সময় তাঁদের গলি দিয়ে ফেরিওলাকে ‘চুড়ি চা–ই, চুড়ি চাই’ হাঁক দিতে দেখেছেন। মাথায় তার ঝুড়িতে আছে চিনের পুতুল। কবি ভেবেছেন, খুশিমতো ফেরিওয়ালা যেখানে-সেখানে যায়। বাড়িতে গিয়ে যখন খুশি খায়। বেলা বাড়লেও তার কোনো তাড়া নেই। তাই কবির ইচ্ছা তিনি সেলেট ফেলে দিয়ে ওইভাবে ফেরি করে বেড়ান। হাতে কালি মেখে স্কুল থেকে ফেরার সময় বাবুদের ফুলবাগানের মাঝে কোদাল হাতে মালিকে মাটি কোপাতে দেখেছেন। পাছে তার পায়ে কোদাল পড়ে যেতে পারে এই ভয়ে তাকে কেউ বারণ করে না। তার মাথায় কত ধুলো লাগছে তবু তাকে কেউ বকে না। তার মা তার ধুলোবালি ধুইয়ে দিয়ে তাকে পরিষ্কার জামা পরায় না।

কবির ইচ্ছা হয় ওই ফুলবাগানের মালিই হবেন। সামান্য একটু রাতে কবিকে মা ঘুম পাড়াতে চান। সেই সময় জানলা দিয়ে কবি পাগড়িপরা পাহারা ওয়ালাকে দেখলেন। আঁধার গলিতে গ্যাসের মিটমিটে আলোয় বেশি লোক চলছে না। লণ্ঠন হাতে লোকটা দশটা-এগারোটা পর্যন্ত বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ তাকে কিছু বলে না। কবির ইচ্ছা তিনিও পাহারাওলা হয়ে গলির ধারে আপন মনে জেগে থাকেন।

 ▸ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর :
১. সহজপাঠ বইটির লেখকের নাম কী?
উত্তরঃ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২. কবি রবীন্দ্রনাথ কত সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান?
উত্তরঃ ১৯১৩ সালে।
৩. একটি বাক্যে উত্তর দাও : 
৩.১ ‘পাঠশালা’ শব্দটির একটি সমার্থক শব্দ লেখো।
উত্তর : ‘পাঠশালা’ শব্দটির একটি সমার্থক শব্দ হল বিদ্যালয়।
৩.২ কবিতার কথক বাড়ির গলি দিয়ে কোথায় যায়?
উত্তর : পাঠশালায় পড়তে যায়।
৩.৩ পাঠশালায় যাওয়ার পথে কথকের মনে কোন্ কল্পনা জেগে ওঠে?
উত্তর : কথকের ইচ্ছে করে সেলেট ফেলে দিয়ে ফেরিওলার মতো জিনিস ফেরি করে।
৩.৪ সারাদিনের শেষে বাড়ি ফেরার পথে সে কী দেখতে পায়?
উত্তর :  সারাদিনের শেষে বাড়ি ফেরার পথে কথক দেখতে পায় কোদাল নিয়ে বাবুদের ওই ফুলবাগানের মালি মাটি কোপায়।
৩.৫ ‘ফেরিওলা’, ‘মালি’ কিংবা ‘পাহারাওলার’ জীবনের স্বাধীনতা কথককে কীভাবে আকর্ষণ করে?
উত্তর : কথকের ইচ্ছে করে সে ‘ফেরিওলা’, ‘মালি’ কিংবা ‘পাহারাওলা’র মতো স্বাধীন হয়ে থাকবে।
৩.৬ রাতেরবেলা জানলা দিয়ে বক্তা কাকে দেখে?
উত্তর : রাতেরবেলা জানলা দিয়ে বক্তা দেখে পাগড়িমাথায় লণ্ঠন হাতে ফেরিওলাকে।

৪. তিন-চারটি বাক্যে উত্তর দাও :
৪.১ মালির জীবনের সঙ্গে বক্তার নিজের জীবনের অমিলগুলি কী?
উত্তর : যে বক্তা যখন ছুটির পরে বাড়ি ফেরে তখন মালি কোদাল নিয়ে বাবুদের ফুলবাগানে মাটি কোপায়, অর্থাৎ তখনও মালির ছুটি হয় না। মালির গায়ে-মাথায় কত ধুলো লাগছে, তাকে কেউ বকে না। কিন্তু বক্তার গায়ে-মাথায় ধুলো লাগলে মা তাকে বকবে এবং ধুলোবালি ধুইয়ে দিয়ে পরিষ্কার জামা পরিয়ে দেবে।
৪.২ ফেরিওলার জীবনের কোন্ বিষয়গুলি বক্তাকে আকর্ষণ করে?
উত্তর : ফেরিওলার 'চুড়ি চা–ই, চুড়ি চাই’ হাঁক খুব আকর্ষণ করেছে বক্তাকে। কারণ সাধারণত শিশুরা বেশি অনুকরণ করতে শেখে এবং সুর করে এই ডাক শিশুরা অনায়াসে বলতে পারবে। তা ছাড়া পুতুলের ঝুড়ি নিয়ে দশটা বা সাড়ে দশটা যখন খুশি ফেরিওলা যেখানে খুশি যেতে পারে। এই স্বাধীনতা বক্তাকে ভীষণ আকর্ষণ করে।
৪.৩ বক্তার দৃষ্টি অনুযায়ী রাতের দৃশ্য বর্ণনা করো।
উত্তর : বক্তা অর্থাৎ এই কবিতার কবি রবীন্দ্রনাথ যখন শিশু ছিলেন তখনকার কলকাতার রাত ছিল অনেক বেশি অন্ধকারময়। তখন অলিতে-গলিতে এত উজ্জ্বল বিদ্যুতের আলো ছিল না। তখনকার দিনে গলি ছিল অন্ধকার, লোক চলাচল ছিল না বললেই চলে। গ্যাসের আলো জ্বলত মিটমিট করে। পাগড়িপরা পাহারাওলা হাতে লণ্ঠন নিয়ে বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকত।
৪.৪ কবিতায় কথকের নানারকম সাধের যে পরিচয় পাও তা উল্লেখ করো।
উত্তর : কবিতার কথক প্রথমত ফেরিওলা হতে চেয়ে পথে পথে যেখানে খুশি যখন খুশি ঘুরে বেড়াতে চেয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি বাগানের মালির মতো কোদাল নিয়ে ফুলবাগানের মাটি কোপাতে চান এবং গায়ে মাথায় ধুলোবালি, মাখা অবস্থায় সারাক্ষণ থাকতে চান। তৃতীয়ত, তিনি পাহারাওলা সেজে লণ্ঠন হাতে সারারাত গলির ধারে আপনমনে জেগে থাকতে চেয়েছেন।

৫. বাক্যরচনা করোঃ কোদাল, পাগড়ি, গলি, খুশি, ফেরিওলা।
  1. কোদাল➙ চাষি কোদাল দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কার করে। 
  2. পাগড়ি➙ পাঞ্জাবিরা মাথায় পাগড়ি পরে।
  3. গলি➙ কলকাতায় বোধহয় দশহাজার গলি আছে। 
  4. খুশি➙ আমি ‘যেমন খুশি সাজো’ খেলায় রাজা সাজতে চাই।
  5. ফেরিওলা➙ পাড়াগাঁয়ে ফেরিওলা প্রায় দেখাই যায় না।
৬. এই কবিতায় এক শিশুর অনেক সাধের কথা আছে। তেমনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই লেখা যে কবিতায় ফুল, প্রদীপের আলো, পুকুরের জল এদের সাধের কথা আছে সেই কবিতাটির বিষয়ে নিজের ভাষায় ছয়টি বাক্য লেখো। এখানে প্রয়োজনে শিক্ষিকা/শিক্ষকের সাহায্য নাও।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এইরকমই একটি কবিতার নাম ‘কতদিন ভাবে ফুল উড়ে যাব কবে’। এই কবিতাটির বিষয়ে নীচে ছয়টি বাক্য লেখা হল—
(১) ফুল একদিন ভাবল যেখানে খুশি উড়ে যাব। (২) প্রজাপতি হয়ে ফুল ডানা মেলে দিল। (৩) প্রদীপ প্রতিদিন ভাবছিল উড়তে পারলে ভালো হত। (৪) প্রদীপ একদিন জোনাকি হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। (৫) পাখির ওড়া দেখে পুকুরের জলেরও উড়তে ইচ্ছা হল। (৬) ধোঁয়া-ডানা মেলে একদিন পুকুরের জল সহজে আকাশে চলে গেল।
৭. ‘ওলা/ওয়ালা’ যোগে পাঁচটি শব্দ তৈরি করোঃ যেমন—‘ফেরিওলা’, ‘বাঁশিওয়ালা'।
উত্তরঃ বাড়িওলা/বাড়িওয়ালা। চুড়িওলা/চুড়িওয়ালা। কাবুলিওলা/কাবুলিওয়ালা। বাঁশিওলা/বাঁশিওয়ালা। রিকশাওলা/ রিকশাওয়ালা।

৯. নীচের বাক্যগুলি থেকে কর্তা, কর্ম, ক্রিয়া নির্দিষ্ট স্থানে বসাও :
৯.১ মা তারে তো পরায় না সাফ জামা।
৯.২ চিনের পুতুল ঝুড়িতে তার থাকে।
৯.৩ জানালা দিয়ে দেখি চেয়ে পথে।
৯.৪ ইচ্ছে করে পাহারাওয়ালা হয়ে গলির ধারে আপন মনে জাগি।

কর্তা কর্ম ক্রিয়া
মা তারে তো সাফ জামা পরায় না
চিনের পুতুল ঝুড়িতে তার থাকে
(আমি) জানালা দিয়ে পথে দেখি চেয়ে
(আমার) ধারে আপনমনে পাহারাওয়ালা হয়ে গলির ইচ্ছে করে জাগি

১০. কবিতার কথক কোন সময়ে কী কী ঘটতে দেখে তা লেখো। আর একই সাথে ঠিক এই সময়গুলোতে তুমি কী করো এবং কী ঘটতে দেখো লেখো।
  1. উত্তর :বেলা সাড়ে দশটায় কবিতার কথক তার স্কুলে যাওয়ার সময় দেখতে পায় ফেরিওলা ফেরি নিয়ে যাচ্ছে। আমি স্কুলের বাস ধরার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। রাস্তায় মানুষজনের কাজে যাওয়ার জন্য ভীষণ ব্যস্ততা দেখতে পাই।
  2. উত্তর : কবিতার কথক বিকেল সাড়ে চারটের সময় হাতে কালি মেখে বাড়ি ফেরার পথে দেখতে পায় কোদাল হাতে মালি বাবুদের বাগানে মাটি কোপায়। আমি স্কুল থেকে বাসে করে বাড়ি ফিরি। রাস্তাঘাট একটু ফাঁকা থাকে। আমার মতো অন্যান্য স্কুলের অনেক ছেলেমেয়ে কেউ মা-বাবার হাত ধরে আবার কেউ ভ্যানরিকশায় বাড়ি ফেরে।
  3. উত্তর : রাত এগারোটার সময় কবিতার কথক মায়ের কোলে শুয়ে জেগে থাকে। আর জানলা দিয়ে দেখতে পায় লণ্ঠন হাতে পাগড়ি পরে পাহারাওলা যায়। আঁধারগলি, লোকজন চলাচল করে কম, মিটমিটিয়ে গ্যাসের আলো জ্বলে। লণ্ঠন হাতে ঝুলিয়ে পাহারাওলা বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে। আমি আমার মায়ের পাশে শুয়ে পড়ি। বড়ো রাস্তায় তখনও গাড়ি চলছে শব্দ শুনতে পাই না।
১১. তুমি তোমার গ্রামে বা শহরে যে নানারকম জীবিকার মানুষদের বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ কাজ করতে দেখো তার একটি তালিকা তৈরি করো। জীবিকার প্রয়োজনে তাঁদের বিশেষ রকমের হাঁক-ডাক ও ভঙ্গিমা লক্ষ করে লেখো।
(১) আমি গ্রামে বাস করি ➙ এখানে আমি কৃষক কামার কুমোর এসব জীবিকার লোকদের দেখতে পাই। কৃষককে গ্রীষ্মকালে লাঙল কাঁধে নিয়ে এবং একজোড়া বলদ নিয়ে সকালবেলায় মাঠে যেতে দেখি। বেলা এগারোটা অবধি মাঠে লাঙল করে চাষি আবার বাড়ি ফেরে। ক্লান্ত বলদের ল্যাজে হাত দিয়ে মাঝে মাঝে হ্যাট হ্যাট শব্দ করে। বর্ষাকালে কৃষক আর কৃষক-বউ মাঠে মাঠে ভিজে ভিজে ধান রোপণের কাজ করে। শীতকালে তারা ধান কাটে। আঁটি বেঁধে বোঝা বেঁধে মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরে। ধান ঝাড়ে, ধান মরাইতে ভরে। গরম কালে কামার লাঙলের ফাল তৈরি করে, কোদাল বানায়। তার হাতুড়ি পেটানোর শব্দ শোনা যায় ঠকাং ঠক্ ঠকাং ঠক। কুমোর সারাবছর তার চাকা ঘুরিয়ে হাঁড়ি, কলসি, কুজো তৈরি করে। সেগুলো মাথায় ঝুড়িতে নিয়ে গ্রামের পথে হেঁকে বিক্রি করে ‘হাঁড়ি কলসি কুঁজো লাগবে গোফ’।
(২) আমি শহরে থাকি ➙ এখানে আমি নানারকম জীবিকার মানুষ দেখতে পাই। অফিসযাত্রী, গাড়ির ড্রাইভার, অটোচালক, সবজিওয়ালা, মাছবিক্রেতা, মুদি, গোয়ালা, সেলুনওয়ালা, রিকশাওয়ালা, ফেরিওলা, খবরকাগজওলা ইত্যাদি হাজার রকমের লোক সারাবছর সকাল থেকে প্রায় সারা দিনই ব্যস্ত থাকে। রাত এগারোটার সময় সকলের কাজের কোলাহল অনেকটা শান্ত হয়ে আসে।


১২. পরপর তিনটি ছবিতে তিনজন কর্মরত মানুষের কথা আছে। তোমার কী হতে সাধ হয় এবং কেন, তা ছবি দেখে নিজের ভাষায় কয়েকটি বাক্যে লেখো।
উত্তর : তোমরা তোমাদের বইয়ের পৃষ্টা - ৫৫ ছবিগুলি দেখো।
  1. উত্তরঃ প্রথম ছবিতে আছে একজন ফেরিওলার মাথায় করে পুতুলের ঝুড়ি নিয়ে যাওয়ার ঘটনা। আমি কবিতায় বর্ণিত ফেরিওলার চুড়ি চা–ই, চুড়ি চাই’ হাঁক ভীষণ পছন্দ করি। তা ছাড়া পুতুল আমিও খুব ভালোবাসি। আমি ওইরকম ফেরিওলা হয়ে কলকাতার গলিতে গলিতে সুর করে হাঁক দিয়ে ঘুরে বেড়াতে চাই। এই কাজ করতে পারলে আমি যেখানে খুশি যেতে পারব। অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে পারব। আমার মতো ছেলেমেয়ের হাতে তাদের মনের মতো পুতুল তুলে দিয়ে হাসি দেখতে পাব। এই কাজ আমার কাছে খুবই সহজ।
  2. উত্তরঃ দ্বিতীয় ছবিতে আছে একজন মালি কোদাল নিয়ে মাটি কোপাচ্ছে। এই কাজ আমি পারব না। আমি পছন্দও করি না। কারণ ভীষণ পরিশ্রমের কাজ। তা ছাড়া কোদাল চালানো বেশ অভ্যাসের ব্যাপার। ঠিকমতো কোদাল চালাতে না পারলে নিজের পায়ে এসে পড়তে পারে।
  3. উত্তরঃ তৃতীয় ছবিতে আছে একজন পাহারাওলার কাজ। এই কাজও আমি পছন্দ করি না। কারণ চোর-ডাকাত-বদমাইশদের আমি ভয় দেখাতে পারব না। তা ছাড়া সারারাত লণ্ঠন হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা আমার নেই। কারণ বারোটায় আগেই ঘুমে আমার চোখ জুড়িয়ে আসবে।

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন