প্রথম অধ্যায় : বিসর্গসন্ধি
এই অধ্যায়ের সংক্ষেপে আলোচনাঃ
West Bengal Class 6 Bengali Text Book Question Answer
class 6 Bengali textbook question answer
▻ পাশাপাশি বসতে পারে এমন দুটি শব্দ কখনো কখনো পরস্পরের সঙ্গে সন্ধি করে এটা তোমরা শিখে গেছ। অনেকটা দুটো ছোটো বরফের টুকরো জোড়া লেগে একটা বড়ো বরফের টুকরো হবার মতো – তাই তো? সেভাবেই দুটো শব্দের মধ্যে প্রথম শব্দটার শেষ ধ্বনি আর পরের শব্দটার প্রথম ধ্বনি আসলে পরস্পরের মধ্যে সন্ধিটা করে। তাদের মধ্যে অনেকরকমভাবে সন্ধি হয়, এটাও তোমরা দেখেছ। ধরো, দুটো ধ্বনিই স্বরসন্ধি, এটা তোমরা জানতে। আবার দ্বিতীয় নিয়মে দুটো ধ্বনি জুড়বার পর তারই মধ্যে একা ধ্বনি সন্ধির ফলে তৈরি ধ্বনি হচ্ছে।
উদাহরণঃ পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষাই + ঈ = ঈ
উদাহরণঃ মহা + আশয় = মহাশয় আ + আ = আ
❍ আরো পড়ুনঃ
❍ Bhasa Charcha Class 6 Pdf ☟☟

▻ বিসর্গ সন্ধি আমরা ইতিহাসে দেখেছি রাজায় রাজায় সন্ধি হয়েছে। এই সন্ধি কথার মানে মিলন। আমাদের ব্যাকরণেও ‘সন্ধি’ নামে একটা সুন্দর নিয়ম আছে। এখানেও সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন তবে, আগেকার দিনে রাজায় রাজায় সন্ধি বা মিলন হত, ব্যাকরণের ভাষায় সন্ধি কার সঙ্গে কার হয়? প্রথমত, শব্দের সঙ্গে শব্দের মিলন, দ্বিতীয়ত, পাশাপাশি থাকা দুটি শব্দের মধ্যে শুরুর শব্দের শেষ ধ্বনি আর শেষের শব্দের শুরুর ধ্বনি মিলে যে নতুন ধ্বনি সৃষ্টি হয় তাকেই ব্যাকরণে সন্ধি বলে। অর্থাৎ— দ্রুত উচ্চারণের ফলে পাশাপাশি দুটি ধ্বনির যে মিলন বা লোপ বা পরিবর্তন ঘটে তাকেই বলে সন্ধি।
হিম + আলয় = হিমালয়। হিম ও আলয় শব্দ দুটির বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় = (হ্ + ই + ম্ + অ) + (আ + ল্ + অ + য়্ + অ) ওপরের দুটি শব্দের বর্ণবিশ্লেষণ থেকে দেখা যাচ্ছে, হিম শব্দের শেষ ধ্বনি অ এবং পরবর্তী শব্দের শুরুর ধ্বনি আ মিলে আ হয়েছে।
হিম + আলয় = হিমালয়। হিম ও আলয় শব্দ দুটির বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় = (হ্ + ই + ম্ + অ) + (আ + ল্ + অ + য়্ + অ) ওপরের দুটি শব্দের বর্ণবিশ্লেষণ থেকে দেখা যাচ্ছে, হিম শব্দের শেষ ধ্বনি অ এবং পরবর্তী শব্দের শুরুর ধ্বনি আ মিলে আ হয়েছে।
▻ সন্ধি তিন ভাগে বিভক্ত। যথা—স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গ সন্ধি। অনেকে অবশ্য বিসর্গ সন্ধিকে ব্যঞ্জনসন্ধিরই অন্তর্ভুক্ত বলেন। স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনকে বলে স্বরসন্ধি। স্বরসন্ধির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির মিলন অথবা ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির মিলনকে বলে ব্যঞ্জনসন্ধি। আর বিসর্গ ধ্বনির (৪) সঙ্গে স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জনধ্বনির মিলনকে বলে বিসর্গ সন্ধি। ব্যাকরণে সন্ধি হওয়ার সময় এই বিসর্গ ধ্বনি বিভিন্ন রকম রূপ পরিবর্তন করে, এজন্য বিসর্গকে বহুরূপী বলা যায়। যেমন— বিসর্গ ধ্বনি রূপান্তরিত হয়ে ও ধ্বনি হয়। যথা—ততঃ+অধিক = ততোধিক। এখানে প্রথম ততঃ শব্দের শেষ ধ্বনি বিসর্গ , আর দ্বিতীয় শব্দ অধিক-এর শুরুর ধ্বনি অ মিলিত হয়ে দাঁড়িয়েছে ও ধ্বনি। এইরকম আরও উদাহরণ হল—তিরঃ + ধান = তিরোধান, মনঃ + বাসনা = মনোবাসনা ইত্যাদি।
▻ বিসর্গধ্বনি রূপান্তরিত হয়ে শ/ষ/স হয়। যথা—নিঃ + চয় = নিশ্চয়, এখানে নিঃ এই প্রথম শব্দের শেষ ধ্বনি বিসর্গ আর শেষ শব্দ চয়-এর শুরুর ধ্বনি অ ধ্বনিযুক্ত চ মিলে গিয়ে শ্চ হয়েছে। এইরকম সন্ধির ফলে রূপান্তরিত ষ, স-এর উদাহরণ হল—নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠূর , চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ, দুঃ + কর = দুষ্কর, নি + তেজ = নিস্তেজ, মনঃ + তাপ = মনস্তাপ ইত্যাদি।▻ বিসর্গ ধ্বনি রূপান্তরিত হয়ে র হয়। যথা—অন্তঃ + আত্মা = অন্তরাত্মা। এখানে প্রথম শব্দ ‘অন্তঃ’-এর শেষ ধ্বনি বিসর্গ আর দ্বিতীয় শব্দ ‘আত্মা’-এর শুরুর ধ্বনি মিলে গিয়ে ‘র’ ধ্বনি সৃষ্টি হয়েছে। এইরকম আরও উদাহরণ হল—দঃ + আত্মা = দুরাত্মা, নিঃ + আকার = নিরাকার, দুঃ + অবস্থা = দুরবস্থা, নিঃ + উদ্বেগ = নিরুদ্বেগ। বিসর্গ ধ্বনি রূপান্তরিত হয়ে রেফ হয়েছে। যথা—অন্তঃ + গত = অন্তর্গত। এখানে প্রথম শব্দে অন্তঃ-এর শেষ ধ্বনি বিসর্গ এবং দ্বিতীয় শব্দ ‘গত’-এর শুরুর ধ্বনি ‘অ’ মিলে গিয়ে দাঁড়িয়েছে রেফ। এইরকম আরও উদাহরণ, দুঃ + ধর্ষ = দুধর্ষ, অহঃ + নিশ = অহর্নিশ।
▻ রূপান্তরের সময় বিসর্গ ধ্বনি লোপ পেয়েছে। যথা—মনঃ + স্থ = মনস্থ। লক্ষ করো, মনঃ শব্দের শেষ ধ্বনি বিসর্গ, আর স্থ শব্দের স-ধ্বনি মিলে গিয়ে যা ছিল তাই আছে। শুধু বিসর্গ ধ্বনিটি উড়ে গেছে। এইরকম উদাহরণ—নিঃ + স্তব্ধ = নিস্তব্ধ, অতঃ + এব = অতএব।
▻ বিসর্গ ধ্বনি রূপান্তরের সময় লুপ্ত হলেও আগের স্বরধ্বনিটিকে দীর্ঘ করে। যথা—নিঃ + রস = নীরস। এখানে প্রথম শব্দ নিঃ-এর শেষ বিসর্গ ধ্বনি এবং দ্বিতীয় শব্দের শুরুর ‘র’ মিলিত হয়ে প্রথম নি শব্দটিকে 'নী' করে দিয়েছে। এইরকম আরও উদাহরণ—নীরব, নীরোগ ইত্যাদি। বিসর্গ পরিবর্তিত না হয়ে একই থেকে যায়। যেমন—দুঃ + সাধ্য = দুঃসাধ্য, অন্তঃ + পুর + = অন্তঃপুর, প্ৰাতঃ + কাল = প্রাতঃকাল, মনঃ + ক্ষুণ্ন = মনঃক্ষুণ্ন, স্বতঃ + সিদ্ধ + = স্বতঃসিদ্ধ ইত্যাদি। এভাবে ব্যাকরণের বিভিন্ন নিয়মে বিসর্গ সন্ধি কীভাবে তৈরি হয় সেই সম্পর্কে প্রথম অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।