চতুর্থ শ্রেণি বাংলা ভাষাপাঠ (অনুচ্ছেদ রচনা)


রচনা : আমাদের বিদ্যালয়
আমাদের গ্রামের উত্তরদিকে যে বিদ্যালয়টি অবস্থিত সেখানে আমরা পড়াশুনা করি। শিক্ষক মহাশয়রা আমাদের খুব যত্ন করে শিক্ষা দেন। আমাদের বিদ্যালয় ভবনটি দেখতে খুব সুন্দর। তার একপাশে আছে একটি পুকুর আর এক পাশে আছে খেলার মাঠ। সেখানে প্রত্যেকদিন আমরা খেলাধুলা করি। পড়াশোনা ছাড়াও আমরা বিদ্যালয়ে নানাপ্রকার হাতের কাজ করি। কেউ কেউ ছবি আঁকে। কেউবা মাটি দিয়ে সুন্দর পুতুল তৈরি করে। মাঝে মাঝে আমাদের বিদ্যালয়ে উৎসব হয়। সবচেয়ে আনন্দ হয় সরস্বতী পূজা উৎসবে। আমরা আমাদের বিদ্যালয়টিকে খুব ভালোবাসি। সুন্দর পরিবেশে ফুলের বাগান ও সবুজ গাছে সাজানো আমাদের বিদ্যালয়টি দেখে সকলে খুব প্রশংসা করে।


রচনা : বর্ষার উপকারিতা ও অপকারিতা 
সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল কিন্তু আমাদের দেশে আশ্বিন মাস অবধি বৃষ্টি হয়। বর্ষাকাল চাষের পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়, তাই এই সময় কৃষকেরা মনের আনন্দে জমিতে লাঙল দেয় ও বীজ বোনে। ধান, পাট, শাকসবজি ইত্যাদি ফসল বোনে। এ সময় নানাপ্রকার ফল ধরে ও ফুল ফোটে । আনারস, তিল, পেঁয়াজ, শসা প্রভৃতি ফল ধরে ও কদম, কেয়া, কামিনী, রজনিগন্ধা প্রভৃতি ফুল ফোটে। গাছপালা গ্রীষ্মের তাপে প্রায় শুকিয়ে যায়। বর্ষার জলে তারা আবার সজীব হয়, চারদিকে তখন সবুজের সমারোহ। এ সময় দিনরাত্রি অনবরত বৃষ্টি হয়, চারদিকে নদনদী, পুকুর, খাল জলে ভেসে যায়। অতি বৃষ্টিতে বন্যা হয়। বন্যায় লোকের ঘরবাড়ি ও মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ বাড়তে থাকে। এই সময় ম্যালেরিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, আন্ত্রিক প্রভৃতি রোগ দেখা দেয় মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়।


রচনা :  বৃক্ষরোপণ 
গাছপালা হল জীবজগতের ধাত্রী জননী। আমরা নিশ্বাসের সময় যে কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়ছি গাছপালা তাকে শোধন করে অক্সিজেন দিয়ে বাতাসকে ভরিয়ে রাখছে, তাতে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য বজায় থাকছে। আমরা এতদিন উদ্ভিদকে অবহেলা করে এসেছি। প্রয়োজনে অরণ্য কেটেছি কিন্তু অরণ্য সৃজনের চেষ্টা করিনি। ভূমিখণ্ডের তুলনায় ৩৩ শতাংশ উদ্ভিদ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের পশ্চিমবঙ্গে আছে ২৩ শতাংশেরও কম, ফলে বৃষ্টি কম হচ্ছে। বর্তমানে আমরা বৃক্ষরোপণে অনেক অর্থ ব্যয় করছি কিন্তু তাকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করছি না। বর্ষার মুখে তাই যেখানে জায়গা আছে সেখানে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। চারা অবস্থায় তাদের চারপাশে বেড়া দিতে হবে, যেন গোরু-ছাগলে তা খেয়ে না ফেলে ৷ তাতে সকলে মিলে জল দিতে হবে। এর ফলে আমাদের সকলের মধ্যে উদ্ভিদের প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মাবে এবং সেটাই হবে বৃক্ষরোপণের এবং সংরক্ষণের প্রকৃষ্ট উপায়।


রচনা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
মেদিনীপুরের বরেণ্য সন্তান ও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এক অসাধারণ ও অনন্য চরিত্র। তিনি শুধু বিদ্যাসাগরই ছিলেন না, তিনি ছিলেন দয়ার সাগর। সূর্যের আলো কিংবা আকাশের বৃষ্টি যেমন পৃথিবীর সব মানুষের ওপর অকাতরে বর্ষিত হয়, বিদ্যাসাগরের করুণার ঝরণাধারা সকল মানুষের ওপর নির্বিচারে বর্ষিত হয়েছে। মানুষের দুঃখের কথা শোনামাত্র কেঁদে ফেলতেন তিনি। ১৮২০ সালে মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা ভগবতী দেবী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। গ্রামের পাঠশালায় লেখাপড়া শেষ করে পিতার সঙ্গে কলকাতা আসেন। সংস্কৃত কলেজে ভরতি হন এবং প্রতি বছর প্রথম স্থান অধিকার করে বৃত্তিলাভ করেন। শেষে বিভিন্ন বিদ্যায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেন। প্রথমে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে যোগদান করেন। পরে সংস্কৃত কলেজেই সহকারী সম্পাদকের পদে এবং পরে অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। বিদ্যোৎসাহী হিসেবে তিনি বহু বিদ্যালয় ও বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ বিধবা বিবাহ প্রচলন ও বহু বিবাহ বন্ধ। তিনি অনেক বাংলা বই রচনা করেন। বর্ণপরিচয়, বেতাল পঞ্চবিংশতি, শকুন্তলা ও ভ্রান্তিবিলাস তাঁর অমর সৃষ্টি। ১৮৬১ সালে তাঁর কর্মময় জীবনের পরিসমাপ্তি হয়।

❐ আরো পড়ুনঃ চতুর্থ শ্রেণি 


রচনা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ইং ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে (বাং ১২৬৮ সনের ২৫শে বৈশাখ) কলকাতার বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তৎকালীন সমাজে ঠাকুর পরিবার ছিল ধন-সম্পত্তি ও সম্মানে খুবই উচ্চ পর্যায়ের, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই পরিবারের ছেলে হয়ে খুব ছোটোবেলায় স্কুলে ভরতি হয়েছিলেন কিন্তু স্কুলের গণ্ডিবদ্ধ জীবন তাঁর ভালো লাগত না। তাই তিনি বাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাছে লেখাপড়া শিখেছিলেন। কৈশোর থেকেই তিনি কবিতা, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস প্রভৃতি লিখতে শুরু করেন। বিভিন্ন ধরনের রচনায় তাঁর খ্যাতি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থ লিখে (১৯১৩ খ্রীঃ) তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বীরভুম জেলায় বোলপুরের কাছে শান্তিনিকেতনে তিনি একটি আদর্শ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। সেই বিদ্যালয়টি বর্তমানে বিশ্বভারতী নামে সর্বত্র পরিচিত। তিনি যে অসংখ্য গান রচনা করে গিয়েছেন সেগুলি রবীন্দ্রসংগীত নামে পরিচিত। আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ সংগীতটি তাঁরই রচনা। এই প্রতিভাময় মহাকবির দেহাবসান হয় ইং ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট (বাং ১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণ)।


রচনা : স্বামী বিবেকানন্দ
১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতায় সিমুলিয়া অঞ্চলে দত্ত পরিবারে এই মহাপুরুষের জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম, বিশ্বনাথ দত্ত এবং মাতার নাম ভুবনেশ্বরী দেবী। তাঁর আসল নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। ছোটোবেলায় সবাই তাকে ‘বিলে’ বলে ডাকত। ছোটোবেলা থেকে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং পাঠে অনুরাগী। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মেট্রোপলিটান স্কুল থেকে সসম্মানে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর জেনারেল এসেমব্লিজ (স্কটিশচার্চ কলেজ) থেকে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সাহচর্যে আসেন এবং তাঁর শিষ্য হন। শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তিনি হলেন বিবেক ও আনন্দের মূর্তি—বিবেকানন্দ। শ্রীরামকৃ দেবের তিরোভাবের পর ভারতবর্ষের নানাস্থানে ঘুরে দেশবাসীর দুঃখদুর্দশা তিনি অনুভব করেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার চিকাগো শহরে বিশ্বধর্ম সভায় ভাষণদান কালে তিনি যখন বললেন—'আমার আমেরিকার ভ্রাতা ও ভগিনীগণ’ তখন চারদিকে তুমুল হাততালি পড়ে যায়। স্বামীজি রচিত ভক্তিযোগ, কর্মযোগ ও রাজযোগ প্রভৃতি গ্রন্থগুলি সমাজে খ্যাতি লাভ করে। তিনি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে বহু রামকৃষ্ণ মঠ এবং মিশনও প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলির মধ্যে বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই বেলুড় মঠে স্বামীজি দেহত্যাগ করেন।


রচনা :  বীর বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র বসু
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি ওড়িশার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন বিখ্যাত আইনজীবী জানকীনাথ বসু ও মাতা ছিলেন প্রভাবতী দেবী। কটক শহরে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁদের আদি বাসস্থান ছিল চব্বিশ পরগনা জেলার কোদালিয়া গ্রামে। ছোটোবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন সুভাষচন্দ্র। কটকের র‍্যাভেনশ্ সরকারি স্কুলে তিনি প্রথমে পড়াশোনা করেন। তারপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে কিছুদিন পড়াশোনা করে তিনি স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স সহ বি.এ. পাশ করেন। বিলাতে গিয়ে আই,সি,এস পরীক্ষায় অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। ভারতবর্ষ তখন পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল। দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য তিনি তৎকালীন স্বনামধন্য বিপ্লবীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেছিলেন এবং বীর সৈনিক হিসেবে ‘নেতাজি' নামে ভূষিত হয়ে দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর মতো এতবড়ো একজন দেশপ্রেমিক আমাদের দেশে সত্যিই বিরল।


রচনা :  ছাত্রজীবনে খেলাধুলা
ছাত্রজীবন এমনই একটা সময় যে সময়ের ওপর ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে। এই সময় অসৎপথে যাওয়া কখনোই উচিত নয়। ছাত্রজীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করা। তবে কেবলমাত্র পড়াশোনাই ছাত্রজীবনে একমাত্র লক্ষ্য নয়, এর সঙ্গে খেলাধুলাও গভীর ভাবে সম্পর্কযুক্ত। কারণ ছাত্রজীবনে পড়াশুনার সঙ্গে সঙ্গে মনের আনন্দ ও স্ফূর্তির জন্য কিছুটা সময় খেলাধুলা করা বিশেষ প্রয়োজন। এতে শরীর, স্বাস্থ্য ও মন উৎফুল্ল থাকে। সব কাজে উদ্যম লাভ করা সম্ভব হয়। সুতরাং ছাত্রজীবনে খেলাধুলাকে অবজ্ঞা করা একবারেই উচিত নয়। এই খেলাধুলার অপরিহার্যতার কথা স্মরণ রেখেই নানাস্থানে নানা ক্রীড়ামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এই প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীরই  যোগদানের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। খেলাধুলাকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করলে কোনো মতেই শরীর ও মনের বিকাশ সম্ভব নয়। তাই ছাত্রজীবনে যে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা আছে তা সর্বজন স্বীকৃত বলে প্রমাণিত হয়েছে।

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন