class 9 chapter 6 history notes in bengali (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর) ইতিহাস নোটস মার্ক - ৮


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর প্রশ্ন উত্তর

{tocify} $title={Table of Contents}


১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা উল্লেখ করো। 
অথবা,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করো।

◻︎ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ শেষ হয়। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে মানব সভ্যতার ওপর ধ্বংসলীলা চলে।

ভয়ংকরতম যুদ্ধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পৃথিবী জুড়ে মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের কোনো সুনির্দিষ্ট সরকারি হিসাব পাওয়া না গেলেও একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এই যুদ্ধ হল বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ।

প্রাণহানি : বিভিন্ন সূত্র থেকে এই ধ্বংসযজ্ঞ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। মোটামুটিভাবে বলা হয় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অন্তত ৫.৭ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। আনুমানিক ৭৫ লক্ষ রুশ, ৩৫ লক্ষ জার্মান, ২২ লক্ষ চিনা, ১২ লক্ষ জাপানি যুদ্ধের ফলে প্রাণ হারান। কোরিয়া, ইটালি, কানাডা, গ্রিস, বেলজিয়াম, রোমেনিয়া, বালগেরিয়া, হাঙ্গেরি প্রভৃতি দেশের প্রচুর মানুষও যুদ্ধে মারা যায়।
ধ্বংসলীলা : যুদ্ধের ফলে বিপুল সংখ্যক অসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়। মানুষের জীবনহানি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের বহু শহর ও শিল্পাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে যায়। জার্মান আক্রমণে লেনিনগ্র্যাড, স্ট্যালিনগ্র্যাড-সহ রাশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। মানুষ ও সম্পদহানির নিরিখে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাশিয়া।

পারমাণবিক বোমার ব্যবহার : পারমাণবিক বোমাবর্ষণের ফলে জাপানের হিরোশিমা শহরে ৭৮ হাজার ও নাগাসাকি শহরে ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়। এই দুই শহরের রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। জাপানের সর্ববৃহৎ ৬০টি শহরের অন্তত ৩০ শতাংশ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।

আমেরিকার ক্ষয়ক্ষতি : আমেরিকা যুদ্ধের প্রথমদিকে অংশ না নেওয়ায় এবং আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে অক্ষশক্তি প্রত্যক্ষ আক্রমণে ব্যর্থ হওয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল তুলনামূলকভাবে কম। অবশ্য এই কম পরিমাণটিও ছিল যথেষ্ট আতঙ্কের। যুদ্ধে আমেরিকার ৪ লক্ষাধিক মানুষ নিহত এবং ৬ লক্ষাধিক মানুষ আহত হন।
জাপানে পারমাণবিক বোমাবর্ষণ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা হল জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণ। কাছে জার্মানির

পোডাম সম্মেলন : মিত্রশক্তির আত্মসমর্পণের (৭ মে, ১৯৪৫ খ্রি.) পর মিত্রশক্তির নেতারা ১৭ জুলাই জার্মানির পোসডাম শহরে এক সম্মেলনে মিলিত হয়ে জাপানের আত্মসমর্পণের দাবি জানায়। জাপান এই দাবি উপেক্ষা করলে আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বর্ষণ করে।

 হিরোশিমায় বোমাবর্ষণ: আমেরিকা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ আগস্ট সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে জাপানের শিল্প-শহর হিরোশিমায় ‘লিট্ল বয়’ নামে প্রথম পারমাণবিক বোমা বর্ষণ করলে শহরটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং এর ফলে প্রায় ৭৮ হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়।
‘লিট্ল বয়’বোমা

নাগাসাকিতে বোমাবর্ষণ : আমেরিকা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট রাত ৩ টে ৪৭ মিনিটে জাপানের নাগাসাকিতে ‘ফ্যাট ম্যান’ নামে দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা বর্ষণ করলে শহরটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং এর ফলে প্রায় ৪০ হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়।
‘ফ্যাট ম্যান’ বোমা

জাপানের আত্মসমর্পণ : পারমাণবিক বোমাবর্ষণের ফলে হিরোশিমা ও নাগাসাকি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলে জাপানের মনোবল ভেঙে যায়। শেষপর্যন্ত জাপান ২ সেপ্টেম্বর (১৯৪৫ খ্রি.) আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করে।

২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল ও প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।

◻︎ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধ হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯- ৪৫ খ্রি.)। জার্মানি, ইটালি, জাপান ও তাদের সহযোগী বিভিন্ন দেশকে নিয়ে গঠিত অক্ষশক্তি এবং ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, আমেরিকা ও তাদের সহযোগী বিভিন্ন দেশকে নিয়ে গঠিত মিত্রশক্তির মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে জার্মানির নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তির পরাজয় ঘটে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল ও প্রভাব : বিভিন্ন দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। যেমন— ✽ ধ্বংসলীলা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বের প্রচুর সামরিক ও অসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়। অন্তত ৫.৭ কোটি মানুষ এই যুদ্ধের ফলে প্রাণ হারান। এছাড়া বিভিন্ন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে নিঃস্ব, রিক্ত অবস্থায় নতুন দেশের ফুটপাতে আশ্রয় নেয়।

যুদ্ধাপরাধের বিচার : বিজয়ী মিত্রপক্ষ পরাজিত অক্ষশক্তির যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তিদানের উদ্যোগ নেয়। ২১ জন নাৎসি আধিকারিককে শান্তি-বিরোধী, মানবতা-বিরোধী ও যুদ্ধ অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাদের ১৪ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং বাকিদের কারাদণ্ড হয়।
ইয়াল্টা সম্মেলন : ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে জার্মানির পরাজয় সুনিশ্চিত হয়ে পড়লে মিত্রপক্ষের আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও রাশিয়া ইয়াল্টা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির দ্বারা—[i] বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠা, [ii] জার্মানি থেকে নাৎসি প্রভাবের অবসান ঘটানো, [iii] জার্মান যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তিদান, [iv] জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় প্রভৃতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন: যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলির মৃতপ্রায় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে আমেরিকার ওয়াশিংটন শহরে ‘জাতিপুঞ্জ ত্রাণ ও পুনর্বাসন’ বা ‘আনরা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘আনরা’র সাহায্যের ফলে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশের বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন, কৃষি ও শিল্পের পুনরুজ্জীবন, পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি প্রভৃতি সম্ভব হয়।

ট্রুম্যান নীতি : গ্রিস, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ থেকে ব্রিটেন সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করলে আমেরিকা আশঙ্কা করে যে, সেসব দেশে কমিউনিস্ট রাশিয়ার আধিপত্য বাড়বে। এই অবস্থায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রম্যান মার্কিন কংগ্রেসে ট্রম্যান নীতি ঘোষণা করেন (১২ মার্চ, ১৯৪৭ খ্রি.)। এই নীতি অনুসারে গ্রিস ও তুরস্কে ৪০ কোটি ডলার সাহায্য দেওয়া হয়।

মার্শাল পরিকল্পনা : মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জর্জ সি মার্শাল ‘ইউরোপীয় পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা' ('European Recovery Programme’ বা ‘ERP’) নামে এক পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এটি সাধারণভাবে ‘মার্শাল পরিকল্পনা' নামে পরিচিত। এই পরিকল্পনার জন্য আমেরিকা চার বছরের জন্য (১৯৪৮-৫১ খ্রি.) ইউরোপের আর্থিক পুনরুজ্জীবন খাতে ১২০০ ডলার অর্থ মঞ্জুর করে।

মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জর্জ সি মার্শাল

আমেরিকার আধিপত্য : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে একমাত্র আমেরিকা সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে যুদ্ধের পর আমেরিকা বিশ্বের সর্ববৃহৎ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং বিশ্বরাজনীতিতে সক্রিয় হস্তক্ষেপের নীতি গ্রহণ করে।

জাতীয়তাবাদের অগ্রগতি : বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন উপনিবেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এশিয়া মহাদেশের ভারত, পাকিস্তান, বার্মা, সিংহল, ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোচিন এবং আফ্রিকা মহাদেশের মিশর, সুদান-সহ বিভিন্ন উপনিবেশ স্বাধীনতা লাভ করে।

উপসংহারঃ যুদ্ধশেষে আমেরিকার নেতৃত্বে তার অনুগামীদের নিয়ে ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা ‘ন্যাটো’ (NATO) (১৯৪৯ খ্রি.) নামে জোট গড়ে ওঠে। এর বিরুদ্ধে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে তার অনুগামী রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে ‘ওয়ারশ চুক্তি' (১৯৫৫ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়। প্রকাশ্য যুদ্ধ না হলেও উভয় পক্ষের মধ্যে সর্বদা একটি যুদ্ধের পরিবেশ বজায় থাকে। এই ঘটনা ‘ঠান্ডা লড়াই’ নামে পরিচিত।

৩. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভিন্ন কারণ আলোচনা করো।

◻︎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫ খ্রি.) ছিল বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে একদিকে ছিল অক্ষশক্তিভুক্ত জার্মানি, ইটালি, জাপান প্রভৃতি রাষ্ট্র এবং অন্যদিকে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, আমেরিকা প্রভৃতি রাষ্ট্র।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভিন্ন কারণ :
[1] ত্রুটিপূর্ণ ভার্সাই সন্ধি : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রশক্তি পরাজিত জার্মানির ওপর তীব্র বৈষম্যমূলক ভার্সাই সন্ধি (১৯১৯ খ্রি.) চাপিয়ে দেয়। এর দ্বারা—[i] জার্মানির বিভিন্ন ভূখণ্ড, শিল্পাঞ্চল, খনি ও উপনিবেশগুলি কেড়ে নেওয়া হয়, [ii] জার্মানির সামরিক শক্তি হ্রাস করে তাকে ক্ষুদ্র বেলজিয়ামের চেয়েও দুর্বল করা হয়, [iii] জার্মানির ওপর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপানো হয়। জার্মানি এই ‘একতরফা চুক্তি’ ভেঙে ফেলার সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।


[2] ঔপনিবেশিক লড়াই : বিংশ শতকের শুরুতে বিশ্বের অধিকাংশ উপনিবেশ ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, আমেরিকা প্রভৃতি দেশের দখলে চলে যায়। পরবর্তীকালে ইটালি, জাপান প্রভৃতি দেশ খুব বেশি উপনিবেশ দখল করার সুযোগ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়। তাছাড়া ভার্সাই সন্ধির দ্বারা জার্মানির অধিকাংশ উপনিবেশ মিত্রপক্ষ কেড়ে নেয়। ফলে উপনিবেশের অধিকার নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়।

[3] একনায়কতন্ত্রের উত্থান : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কয়েকটি দেশে একনায়কতান্ত্রিক শাসকের উদ্ভব ঘটে। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইটালির ফ্যাসিস্ট শাসক মুসোলিনি, জার্মানির নাৎসি শাসক হিটলার, জাপানের শাসক তোজো প্রমুখ। তাদের উগ্র সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধবাদী নীতি বিশ্বে অশান্তি সৃষ্টি করে।

[4] নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা: জেনেভার নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে (১৯৩৩ খ্রি.) বৃহৎ শক্তিগুলি জার্মানির অস্ত্রশক্তি হ্রাসে অত্যন্ত উদ্গ্রীব হলেও তারা নিজেদের অস্ত্রশক্তি হ্রাস করতে রাজি ছিল না। জার্মানি নিজের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সুযোগ না পেয়ে সম্মেলন ত্যাগ করে নিজের ইচ্ছামতো সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
[5] জাতিসংঘের ব্যর্থতা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হলেও জাতিসংঘ তার লক্ষ্যপূরণে বারবার ব্যর্থ হয়। যেমন—[i] জাপান চিনের মাঞ্চুরিয়া দখল (১৯৩১ খ্রি.) করলেও জাতিসংঘ জাপানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি, [ii] ইটালি অ্যাবিসিনিয়া দখল (১৯৩৬ খ্রি.) করলে জাতিসংঘ তা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়, [iii] জার্মানি জাতিসংঘ ত্যাগ করার পর একে একে রাইন ভূখণ্ড, অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া প্রভৃতি দখল করে। কিন্তু এই রকম পরিস্থিতিতেও জাতিসংঘ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

[6] শক্তিজোট : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বিশ্ব পরস্পর-বিরোধী দুটি সশস্ত্র শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে থাকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, আমেরিকা প্রভৃতি দেশকে নিয়ে গড়ে ওঠা ‘মিত্রশক্তি’ এবং অন্যদিকে থাকে জার্মানি, ইটালি, জাপান প্রভৃতি দেশকে নিয়ে গড়ে ওঠা ‘অক্ষশক্তি'। উভয় শিবিরের মধ্যে সমরসজ্জার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

[7] ইঙ্গ-ফরাসি তোষণ : জার্মানি, ইটালি, জাপান প্রভৃতি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ক্রমাগত ভার্সাই সন্ধির বিভিন্ন ধারাগুলি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন দেশে আগ্রাসন চালায়। এই আগ্রাসন প্রতিরোধের চেষ্টা না করে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি দীর্ঘদিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলিকে তোষণ করতে থাকে। ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি মনে করত যে, তোষণনীতির মাধ্যমে যুদ্ধ এড়ানো যাবে। কিন্তু এই তোষণনীতির ফলে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির আগ্রাসন আরও বেড়ে যায়।
[৪] প্রত্যক্ষ কারণ : জার্মানির শাসক হিটলার ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করলে ৩ সেপ্টেম্বর ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। মূল্যায়ন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত যুদ্ধে মিত্রশক্তির কাছে জার্মান নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তি পরাজিত হয়। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর ইটালি, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে জার্মানি এবং ২ সেপ্টেম্বর জাপান
আত্মসমর্পণ করে। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে।

   ✈︎ Read More ...

অধ্যায় (৫) বিংশ শতকে ইউরোপ
(১/২) মার্কের নোটস(৪) মার্কের নোটস(৮) মার্কের নোটসMCQ Test
Click HereClick HereClick HereClick Here

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন