Class 9 History দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর (4) মার্কের ইতিহাস নোটস


আরো পড়ুনঃ  নবম শ্রেণি

{tocify} $title={Table of Contents}

Q. ফ্যাসিস্ট ইটালির আগ্রাসী বৈদেশিক নীতির বিভিন্ন পদক্ষেপগুলি উল্লেখ করো।
➛ ইটালির ফ্যাসিস্ট নেতা বেনিটো মুসোলিনি (১৯২২-৪৫ খ্রি.) বৈদেশিক ক্ষেত্রে যুদ্ধবাদী আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেন।
ফ্যাসিস্ট ইটালির আগ্রাসী বৈদেৰ্শিক নীতি/ সাম্রাজ্যবাদ : মুসোলিনি বৈদেশিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
[1] গ্রিসে আগ্রাসন : মুসোলিনি গ্রিসকে লুসানের সন্ধি (১৯২৩ খ্রি.) স্বাক্ষরে বাধ্য করে তার কাছ থেকে রোড্স দ্বীপ ও ডডিক্যানিজ দ্বীপপুঞ্জ লাভ করে। কিছুদিন পর মুসোলিনি গ্রিসের করফু দ্বীপটি দখল করে প্রচুর আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে তা গ্রিসকে ফিরিয়ে দেন।
[2] ইউগোস্লাভিয়ায় আগ্রাসন: মুসোলিনি ইউগোস্লাভিয়াকে নেটিউনোর সন্ধি (১৯২৫ খ্রি.) স্বাক্ষরে বাধ্য করে তার কাছ থেকে ফিউম বন্দর এবং ইউগোস্লাভিয়ায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক অধিকার লাভ করে।
[3] অ্যাবিসিনিয়া দখল : মুসোলিনি উত্তর আফ্রিকার অ্যাবিসিনিয়া বা ইথিওপিয়া আক্রমণ (১৯৩৫ খ্রি.) করে তা দখল (১৯৩৬ খ্রি.) করে নেয়। জাতিসংঘ ইটালিকে 'আক্রমণকারী’ বলে ঘোষণা করলে ইটালি জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করে।
[4] আলবেনিয়া দখল : মুসোলিনি আলবেনিয়া আক্রমণ (১৯৩৯ খ্রি.) করে তা ইটালির সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেন।
উপসংহার: মুসোলিনি আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী নীতির মাধ্যমে ইটালির মর্যাদা বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নিয়ে প্রাথমিকভাবে সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইটালি তথা অক্ষশক্তির পরাজয় ইটালির সাম্রাজ্যবাদকে স্তব্ধ করে দেয়। ইটালির রাজা তৃতীয় ভিক্টর ইমান্যুয়েল অ্যাবিসিনিয়া দখলের পর ‘অ্যাবিসিনিয়ার সম্রাট’ এবং আলবেনিয়া দখলের পর ‘আলবেনিয়ার সম্রাট’ বলে ঘোষিত হন।


Q. ইটালির অ্যাবিসিনিয়া (ইথিওপিয়া) আক্রমণ সম্পর্কে কী জান?

➛ ইটালির ফ্যাসিস্ট শাসক মুসোলিনি নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে ইটালির ভৌগোলিক সম্প্রসারণ ঘটানোর উদ্যোগ নেন।
❏ ইটালির অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণ : মুসোলিনি উত্তর আফ্রিকার অ্যাবিসিনিয়া বা ইথিওপিয়া আক্রমণ ও দখল (১৯৩৬ খ্রি.) করে নেন।
[1] আক্রমণের কারণ : ইটালি কর্তৃক অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণের প্রধান কারণগুলি ছিল— [i] অ্যাবিসিনিয়ার কাছে ইটালির পরাজয়ের (১৮৯৬ খ্রি.) প্রতিশোধ গ্রহণ, [ii] ইটালির ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বাসস্থান ও কর্মসংস্থান, [iii] শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ, [iv] শিল্পপণ্য বিক্রির বাজার দখল প্রভৃতি।
[2] আক্রমণ : ইতালীয় ও অ্যাবিসিনীয় সেনাদলের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধের পর ইটালি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে (৩ অক্টোবর) অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণ করে।
[3] জাতিসংঘের ভূমিকা : জাতিসংঘ ইটালিকে ‘আক্রমণকারী’ ঘোষণা করে এবং তার নির্দেশে বহু দেশ ইটালির সঙ্গে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করে দেয়।
[4] অ্যাবিসিনিয়া দখল : ইটালির আক্রমণের চাপে অ্যাবিসিনিয়া সম্রাট হাইলে সেলাসি দেশ ত্যাগ করেন এবং ইটালি অ্যাবিসিনিয়া দখল করে। ইটালি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করে।
উপসংহার: ইটালি আবিসিনিয়া দখল করলেও জাতিসংঘ এর প্রতিরোধে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়। ফলে জাতিসংঘের দুর্বলতা সর্বসমক্ষে প্রকাশিত হয়ে পড়ে।

Q. ইটালির অ্যাবিসিনিয়া দখলের তাৎপর্য কী ছিল?

➛ ইটালির ফ্যাসিস্ট শাসক মুসোলিনি নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে ইটালির ভৌগোলিক সম্প্রসারণ ঘটানোর উদ্যোগ নেন।
ইটালির অ্যাবিসিনিয়া দখলের তাৎপর্য : মুসোলিনি কর্তৃক অ্যাবিসিনিয়া দখলের প্রধান তাৎপর্য বা গুরুত্ব ছিল—
[1] জাতিসংঘের ব্যর্থতা : ইটালি অ্যাবিসিনিয়া দখল করলেও জাতিসংঘ এই আক্রমণ প্রতিহত করতে বা ইটালির বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়।
[2] জাতিসংঘের গুরুত্বহীনতা : অ্যাবিসিনিয়ার ঘটনায় জাতিসংঘের ব্যর্থতা বিশ্বদরবারে জাতিসংঘকে গুরুত্বহীন করে তোলে। প্রমাণ হয় যে, শক্তির জোরে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করা যায়।
[3] হিটলারের উৎসাহ : জাতিসংঘের নির্দেশ উপেক্ষা করে ইটালি কর্তৃক অ্যাবিসিনিয়া দখলের ঘটনা জার্মানির নাৎসি শাসক হিটলারকে ভার্সাই চুক্তি লঙ্ঘনে উৎসাহিত করে।
[4] নতুন শক্তিজোট : অ্যাবিসিনিয়ায় আগ্রাসন চালিয়ে ইটালি ইউরোপের রাষ্ট্রজোট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর ইটালি হিটলারের জার্মানির সঙ্গে জোট গড়ে তুললে ইউরোপে নতুন শক্তিজোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
উপসংহার: আবিসিনিয়ার প্রতি আগ্রাসন প্রতিরোধে জাতিসংঘ ব্যর্থ হলে জাতিসংঘের দুর্বলতা সর্বসমক্ষে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। প্রমাণিত হয় যে, শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয়। এই প্রবণতা থেকেই কিছুকাল পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।

Q. ইটালির অ্যাবিসিনিয়া (ইথিওপিয়া) আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের কীরূপ ভূমিকা ছিল?

➛ ইটালির ফ্যাসিস্ট শাসক মুসোলিনি জাতিসংঘের শান্তিবাদী নীতি উপেক্ষা করে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার অ্যাবিসিনিয়া দখল করে নেন।
ইটালির অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণ : জাতিসংঘের ভূমিকা ইটালির অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়ে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল খুবই লজ্জাজনক।
[1] মীমাংসা কমিটি : ইতালীয় ও অ্যাবিসিনীয় সেনাদলের মধ্যে এক খণ্ডযুদ্ধের (১৯৩৪ খ্রি.) ঘটনার জন্য অ্যাবিসিনিয়ার কাছে ইটালি নিঃশর্ত ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে। এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অ্যাবিসিনিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ১৫ সদস্যের এক মীমাংসা কমিটি গঠন করে।
[2] ‘আক্রমণকারী’ ঘোষণা : জাতিসংঘের মীমাংসা কমিটিকে উপেক্ষা করে ইতালীয় বাহিনী ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে (৩ অক্টোবর) অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণ করলে জাতিসংঘ ইটালিকে ‘আক্রমণকারী’ বলে ঘোষণা করে।
[3] অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা : ইটালির সঙ্গে বাণিজ্য ও আর্থিক লেনদেন বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘ তার সদস্যরাষ্ট্রগুলিকে নির্দেশ দেয়। অধিকাংশ সদস্য এই নির্দেশ মান্য করলেও ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স আন্তরিকতার সঙ্গে এই নির্দেশ পালন করেনি।
[4] জাতিসংঘের ব্যর্থতা : এই পরিস্থিতিতে ইটালি অ্যাবিসিনিয়া দখল (১৯৩৬ খ্রি.) করে নেয় এবং ইটালির রাজা ‘অ্যাবিসিনিয়ার সম্রাট’ বলে ঘোষিত হন। ইটালি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করে। ইটালির আগ্রাসন প্রতিরোধে জাতিসংঘ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়।
উপসংহার: জাতিসংঘ ইটালির বিরুদ্ধে নানারকম নিষেধাজ্ঞামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, বৃহৎ শক্তিবর্গের (ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স) অসহযোগিতায় জাতিসংঘের পদক্ষেপগুলি ব্যর্থ হয়। ফলে সারা বিশ্বের সামনে জাতিসংঘ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।

Q. পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, জার্মানি কর্তৃক পোল্যান্ড আক্রমণের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।

➛ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জার্মানির ওপর মিত্রশক্তি ভার্সাই সন্ধি (১৯১৯ খ্রি.) চাপিয়ে দেয়। এর দ্বারা জার্মানির বেশকিছু ভূখণ্ড পোল্যান্ডের দখলে চলে যায়।
পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি/পোল্যান্ড আক্রমণ : জার্মানি কর্তৃক পোল্যান্ড আক্রমণের প্রেক্ষাপট চিত্র নিম্নরূপ —
[1] ভার্সাই সন্ধির পদক্ষেপ : ভার্সাই সন্ধির দ্বারা—[i] জার্মানির পোজেন ও পশ্চিম প্রাশিয়া পোল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়।[ii] সমুদ্রের পর সঙ্গে পোল্যান্ডের যোগাযোগ রক্ষার জন্য জার্মানির ভিতর দিয়ে পোল্যান্ডকে ‘পোলিশ করিডর' নামে রাস্তা দেওয়া হয়। [iii] জার্মানির ডানজিগ শহরটি ‘উন্মুক্ত বন্দর’ বলে ঘোষিত হলেও এর অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কার্যত পোল্যান্ডের হাতে চলে যায়।
[2] অনাক্রমণ চুক্তি : পোল্যান্ডের ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হলেও জার্মানি আপাতত পোল্যান্ডের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ মিটিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার সঙ্গে দশ বছরের পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি (১৯৩৪ খ্রি.) স্বাক্ষর করে।
[3] উদ্দেশ্য : পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরে—[i] জার্মানির উদ্দেশ্য ছিল পোল্যান্ডকে ফ্রান্সের মিত্রতা থেকে দূরে রেখে ফ্রান্সকে দুর্বল করে রাখা। [ii] পোল্যান্ডের উদ্দেশ্য ছিল জার্মানির আক্রমণের সম্ভাবনা থেকে পোল্যান্ডকে মুক্ত করা।
[4] পোল্যান্ড আক্রমণ : সুযোগসন্ধানী হিটলার পোল্যান্ডের ডানজিগ বন্দর এবং সেখানে যাতায়াতের জন্য পোল্যান্ডের ভিতর দিয়ে একটি রাস্তা দাবি করে। পোল্যান্ড এই দাবি অগ্রাহ্য করলে হিটলার ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে (১ সেপ্টেম্বর) পোল্যান্ড আক্রমণ করেন।
উপসংহার : পোল-জার্মানি অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর বা জার্মানি কর্তৃক পোল্যান্ড আক্রমণে জার্মানির মূল উদ্দেশ্য ছিল জার্মানির সম্প্রসারণ। ঐতিহাসিক এলান বুলকের মতে, হিটলারের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্যই ছিল জার্মানিকে ইউরোপের প্রধান শক্তিতে পরিণত করা।

Q. রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

➛ দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে যেসব উগ্র সাম্রাজ্যবাদী একনায়কের আবির্ভাব ঘটে তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইটালির মুসোলিনি,জার্মানির হিটলার এবং জাপানের তোজো।
রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইটালি, জার্মানি ও জাপানের মধ্যে ‘রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি’ নামে এক মৈত্ৰীজোট গড়ে ওঠে।
[1] ঘনিষ্ঠতার উদ্যোগ : জার্মান শাসক হিটলারের শক্তিবৃদ্ধিতে আতঙ্কিত হয়ে ইটালির শাসক মুসোলিনি ফ্রান্সের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তোলেন। কিন্তু হিটলার উপলব্ধি করেন যে, জার্মানি ভবিষ্যতে অস্ট্রিয়া দখলের উদ্যোগ নিলে ইটালির সমর্থন তাঁর বিশেষ প্রয়োজন৷
[2] অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণে সমর্থন : মুসোলিনি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণ করলে হিটলার তাঁকে সমর্থন করেন। ফলে মুসোলিনি ও হিটলারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায় ।
[3] রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি : মুসোলিনি ও হিটলারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেলে উভয়ের মধ্যে মিত্রতা (অক্টোবর, ১৯৩৬ খ্রি.) গড়ে ওঠে। ইটালি ও জার্মানির মধ্যে স্থাপিত এই মিত্রতা ‘রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি' নামে পরিচিত।
[4] কমিন্টার্ন-বিরোধী চুক্তি : ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে জার্মানি ও জাপানের মধ্যে সাম্যবাদ-বিরোধী অ্যান্টি-কমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ।
[5] রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি : জার্মানি ও জাপানের অ্যান্টি-কমিন্টার্ন জোটে ইটালি যোগ (৬ নভেম্বর, ১৯৩৭ খ্রি.) দিলে ইটালি, জার্মানি ও জাপানের মধ্যে ‘রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি’ মৈত্ৰীজোট গড়ে ওঠে।
উপসংহার: রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তির বিপক্ষে ব্রিটেন-ফ্রান্স-সোভিয়েত ইউনিয়ন মিত্রশক্তি গড়ে তোলে। এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বিশ্ব পরস্পর-বিরোধী দুটি শক্তিজোটে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং বিশ্বশান্তি যে-কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

Q. জার্মানি কর্তৃক অস্ট্রিয়া দখল সম্পর্কে আলোচনা করো।

➛ নাৎসি নেতা হিটলার জার্মানির শাসনক্ষমতা দখলের (১৯৩৩ খ্রি.) পর দ্রুত সক্রিয় সাম্রাজ্যবাদী পথে অগ্রসর হন।
জার্মানি কর্তৃক অস্ট্রিয়া দখল : হিটলার যেসব স্থানে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন চালান সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল অস্ট্রিয়া৷
[1] ভার্সাই সন্ধির নিষেধাজ্ঞা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর ভার্সাই সন্ধি ও সেন্ট জার্মেইন সন্ধির দ্বারা ভবিষ্যতে জার্মানির সঙ্গে অস্ট্রিয়ার সংযুক্তি নিষিদ্ধ করা হয়।
[2] ইন্ধন : অস্ট্রিয়ায় প্রচুর জার্মান জাতিগোষ্ঠীর বসবাস থাকায় হিটলার অস্ট্রিয়ার ওপর জার্মানির আধিপত্য দাবি করেন এবং অস্ট্রিয়ার নাৎসিদের ইন্ধন দিতে থাকেন।
[3] রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি : অস্ট্রিয়া দখলে ইটালির সমর্থন ও সহায়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে হিটলার ইটালির মুসোলিনি কর্তৃক অ্যাবিসিনিয়া আক্রমণের সময় তাঁকে সমর্থন করে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করেন এবং ‘রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি’ (১৯৩৬ খ্রি.) গড়ে তোলেন।
[4] অস্ট্রিয়া দখল : হিটলার ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে (১৪ মার্চ) অস্ট্রিয়া দখল করেন এবং গণভোটের মাধ্যমে অস্ট্রিয়ার ৯৯.৭৫ শতাংশ মানুষ এই সংযুক্তির পক্ষে রায় দেয়।
উপসংহার: অস্ট্রিয়া দখল হিটলারের চতুর রণকৌশলের পরিচয়। তিনি সুকৌশলে অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলার সুশনিগকে পদত্যাগে বাধ্য করেন এবং নাৎসি নেতা সিয়েস ইনকার্ট ওই পদে নিযুক্ত হন।

Q. হিটলার কর্তৃক চেকোস্লোভাকিয়া দখলের বিবরণ দাও।

➛ সাম্রাজ্যবাদী একনায়কতান্ত্রিক শাসক হিটলার ক্ষমতা দখলের (১৯৩৩খ্রি.) পর দ্রুত সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকেন এবং ইটালি ও জাপানের সঙ্গে জোট গড়ে তোলেন।
হিটলার কর্তৃক চেকোস্লোভাকিয়া দখল : অস্ট্রিয়া দখলের পর হিটলার চেকোস্লোভাকিয়া দখলের উদ্যোগ নেন।
[1] উদ্দেশ্য : চেকোস্লোভাকিয়া অভিযানের পশ্চাতে হিটলারের উদ্দেশ্যগুলি ছিল—[i] চেকোস্লোভাকিয়া ছিল শিল্পসমৃদ্ধ। [ii] সামরিক দিক থেকে এই অঞ্চলের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। [iii] চেকোস্লোভাকিয়ার সুদেত্ন অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ ছিল জার্মান জাতিভুক্ত ৷
[2] তৎপরতা : সুদে অঞ্চলের জার্মানরা হিটলারের প্ররোচনায় চেক সরকারের বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু করে। হিটলারও এখানকার জার্মানদের স্বার্থরক্ষায় তৎপর হয়ে যুদ্ধের উদ্যোগ নিতে শুরু করেন।
[3] মিউনিখ চুক্তি: যুদ্ধের তৎপরতা বন্ধ করতে মুসোলিনির উদ্যোগে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে (২৯ সেপ্টেম্বর) ইটালি, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর দ্বারা সুদে অঞ্চল জার্মানির সঙ্গে যুক্ত হয় এবং হিটলার অবশিষ্ট চেকোস্লোভাকিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন।
[4] চেকোস্লোভাকিয়া দখল : হিটলার পরে এই মিউনিখ চুক্তি ভঙ্গ করেন এবং ভঙ্গ করার ৬ মাস পরই ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে (১৫ মার্চ) সমগ্র চেকোস্লোভাকিয়া দখল করে নেন।
উপসংহার: হিটলার কর্তৃক চেকোস্লোভাকিয়া অভিযান তাঁর নগ্ন সাম্রাজ্যবাদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মিউনিখ চুক্তির চেকোস্লোভাকিয়ার বিরাট অংশ দখল করলেও মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই হিটলার অবশিষ্ট চেকোস্লোভাকিয়াও দখল করে নেন।

Q. টীকা লেখো : মিউনিখ চুক্তি (১৯৩৮ খ্রি.)।

➛ অস্ট্রিয়া দখলের (১৯৩৮ খ্রি.) পর চেকোস্লোভাকিয়ার প্রতি হিটলারের কুনজর পড়ে। শিল্পসমৃদ্ধ ও সামরিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ চেকোস্লোভাকিয়া দখলে হিটলার তৎপর হয়ে উঠলে ইউরোপে যুদ্ধ-পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ।
[1] আগ্রাসন : চেকোস্লোভাকিয়ায় অবস্থিত জার্মান জাতি-অধ্যুষিত সুদে অঞ্চলে হিটলারের প্ররোচনায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হয়। সুদেতন -এ বসবাসকারী জার্মানদের স্বার্থরক্ষার্থে হিটলার চেকোস্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন।
[2] মিউনিখ চুক্তি : যুদ্ধ প্রস্তুতির মধ্যেই হিটলারের মিত্র ইটালির শাসক মুসোলিনির মধ্যস্থতায় ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে (২৯ সেপ্টেম্বর) মিউনিখ শহরে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইটালির মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা ‘মিউনিখ চুক্তি’ নামে পরিচিত।
[3] চুক্তির শর্ত : মিউনিখ চুক্তির দ্বারা স্থির হয় যে—[i] সুদে অঞ্চল জার্মানিকে দিয়ে দেওয়া হবে। [ii] অবশিষ্ট চেকোস্লোভাকিয়ার সার্বভৌমত্ব হিটলার মেনে নেবেন।
[4] চুক্তি ভঙ্গ : মিউনিখ চুক্তির দ্বারা চেকোস্লোভাকিয়ার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড দখল করেও হিটলার সন্তুষ্ট ছিলেন না। চুক্তির ৬ মাসের মধ্যেই চুক্তি ভঙ্গ করে (১৯৩৯ খ্রি. ১৫ মার্চ) অবশিষ্ট চেকোস্লোভাকিয়া দখল করেন।
উপসংহার: মিউনিখ চুক্তি হিটলারের চূড়ান্ত কূটনৈতিক জয়ের পরিচয়। হিটলার শুধুমাত্র মৌখিক হুমকির দ্বারা চেকোস্লোভাকিয়ার সুদেতান অঞ্চলটি জার্মানির অন্তর্ভুক্ত করতে সমর্থ হন। অপরদিকে ইঙ্গ-ফরাসি জোটের কাছে এই চুক্তি ছিল ‘চরম কূটনৈতিক পরাজয়'।

✉︎ Next Page Click :  ⓵ »   ⓶ »   ⓷

অধ্যায় (৭) জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ
(২) মার্কের নোটসMCQ Test
Click HereClick Here


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর ইতিহাস,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর wbsc,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর সমস্ত,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর প্রশ্ন উত্তর,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর ইতিহাস,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ,

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন