❏ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া :
✱ নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও: প্রশ্নের মান-৮
1. উনিশ শতকে ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের কারণ কী? ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে এদের অবদান কী ছিল?
❏ ভূমিকা : ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে ব্রিটিশ শক্তির জয়লাভের পরবর্তীকালে ভারতের সমাজ ও অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব। এই সময় মোটামুটি সচ্ছল আর্থিক অবস্থা সম্পন্ন ও আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত যে শ্রেণির উদ্ভব ঘটে তাকে সাধারণভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বলা হয়।
❏ ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের কারণ :
(১) সরকারি চাকরি : ভারতে প্রায় ১০০ বছর ধরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ধারাবাহিক প্রসারের সূত্রে এদেশে প্রশাসনের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য এত বিপুল সংখ্যক কর্মচারীর প্রয়োজন ছিল যে, বিলেত থেকে তা আনা সম্ভব ছিল না। তাই প্রশাসনের নিম্নস্তরের বিপুল সংখ্যক চাকরির পদে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয়রা নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল এই ভারতীয় কর্মচারীরা মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
(২) আইনজীবী : সাম্রাজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজরা এদেশে পাশ্চাত্য ধাঁচের আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রবর্তন করে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বহু ভারতীয় অত্যন্ত লাভজনক আইনের পেশা গ্রহণ করে। ব্রিটিশ ভারতের আদালতগুলিতে আমলা, উকিল, মোক্তার, কেরানি, মুহুরি ও অন্যান্য বিভিন্ন কাজে শিক্ষিত ভারতীয়রা নিযুক্ত হতে থাকে। এই পেশায় প্রবেশ করে তাদের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটে। শিক্ষিত ও সচ্ছল এই ভারতীয় সম্প্রদায় মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
(৩) ব্যবসায়ী: বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী ও ব্যক্তিগত ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা ভারতের দূরদূরান্তে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিশালাকার বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য প্রচুর কর্মচারীর প্রয়োজন ছিল। ব্রিটিশ বণিক ও পুঁজিপতিরা
তাদের বাণিজ্যিক কাজকর্ম সচল রাখতে বহু শিক্ষিত ভারতীয়কে বিভিন্ন পদে নিয়োগ করে। বাণিজ্যের কাজে নিযুক্ত এসব ভারতীয়রা মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়।
(৪) শিল্পের কাজ : ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে শিল্পের যথেষ্ট বিকাশ ঘটে। শিল্প ও শিল্পকারখানাগুলির কাজকর্ম পরিচালনার জন্য প্রচুর ভারতীয় শিক্ষিত কর্মচারী নিযুক্ত হয়। শিল্পের কাজে নিযুক্ত এসব শিক্ষিত ভারতীয়রা মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্যতম অংশ ছিল।
(৫) ভূস্বামী ও মধ্যস্বত্বভোগী: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে কিছু জমিদার বা ভূস্বামী শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল। তারা প্রধানত প্রজাদের কাছ থেকে কর আদায় করত। ভূস্বামীর পক্ষ থেকে প্রজার কাছ থেকে কর আদায়ের কাজটি করত মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির বহু মানুষ। বিপুল অর্থের অধিকারী এই জমিদার, ভূস্বামী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা ইংরেজদের অনুগত শ্রেণি হিসেবে নিজেদের পেশা ও উপার্জনকে সুনিশ্চিত করেছিল এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণেও এগিয়ে এসেছিল।
(৬) মহাজন: ব্রিটিশ সরকার এদেশে চিরস্থায়ী, রায়তওয়ারি, মহলওয়ারি প্রভৃতি ভূমি বন্দোবস্ত চালু করলে ভূস্বামী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের রাজস্বের চাপে দরিদ্র কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। নগদ কর আদায়ের উদ্দেশ্যে কৃষকরা মহাজনদের কাছ থেকে অর্থ ঋণ নিতে বাধ্য হয়। ব্রিটিশ শাসনের অনুগামী এই মহাজন শ্রেণি ভারতীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশ ছিল।
❏ জাতীয়তাবাদ বিকাশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অবদান : পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণি সংখ্যার বিচারে খুব সামান্য হলেও তারাই পরবর্তীকালে ভারতে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয় আন্দোলনের মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য এ আর দেশাই ভারতের মধ্যবিত্তদের ‘আধুনিক ভারতের স্রষ্টা' বলে অভিহিত করেছেন। আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষাগ্রহণের ফলে তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকশিত হয় এবং ব্রিটিশদের অপশাসনের বিরুদ্ধে তাদের জ্ঞানের চোখ খুলে যায়। মূলত এই মধ্যবিত্ত শ্রেণিই সর্বপ্রথম ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং নিজেদের গণতান্ত্রিক দাবিদাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সভাসমিতি গড়ে তোলে। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে যে মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে তারা প্রথম পর্বে পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করে ভারতের ব্রিটিশ শাসন ও সভ্যতার একনিষ্ঠ অনুরাগীতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণিই ভারতে সর্বপ্রথম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সরব হয়ে প্রতিরোধের ডাক দেয় এবং গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসে। এইভাবেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাত ধরে জাতীয়তাবাদের বিকাশ শুরু হয়।
উপসংহার : ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে যে মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে তারা সংখ্যায় খুবই অল্প হলেও দেশের সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এই শ্রেণি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ এই শ্রেণিই মূলত ভারতের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেছিল। আবার উনিশ শতকে বাংলায় যে, ‘নবজাগরণ’ ঘটেছিল তার অগ্রভাগে ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভূমিকা।
_____________
2. উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও সীমাবদ্ধতা কী ছিল?
❏ ভূমিকা : ‘রেনেসাঁ’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল জাগৃতি বা নবজাগরণ। উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনকে ইতিহাসবিদরা ‘নবজাগরণ’ আখ্যা দিয়েছেন। ইউরোপের নবজাগরণের প্রসঙ্গ এলেই ইটালির নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দীর ইউরোপে নবজাগরণের সূচনা ঘটেছিল ইটালিতেই। পাশ্চাত্য যুক্তিবাদী চিন্তাধারার আলোকে ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর ভারতে বিশেষত বাংলার সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা ঘটেছিল। বাংলায় নবযুগের এই সূচনা ও বিস্তারকে ‘নবজাগরণ’ বলা হয়ে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিকগণ ইউরোপীয় নবজাগরণের বৈশিষ্ট্যের সাপেক্ষে বাংলার নবজাগরণের বিভিন্ন রকম তুলনামূলক আলোচনা করে থাকেন।
❏ বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য :
(১) অর্থ: পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত তৎকালীন বাংলার মধ্যবিত্ত সমাজ অনুসন্ধানী মন ও যুক্তিতর্কের দ্বারা সবকিছুর মূল্যায়ন শুরু করে। এই সময় চিরাচরিত শাস্ত্রের নতুন ব্যাখ্যা, নীতিশাস্ত্রের ও ধর্মশাস্ত্রের নতুন মূল্যায়ন শুরু হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, সমাজ, সমস্ত ক্ষেত্রে এক অভাবনীয় জাগরণ শুরু হয়, যা এক কথায় নবজাগরণ নামে পরিচিত।
(২) ভিত্তি: নবজাগরণ বলতে শুধু প্রাচীন দেশীয় ও ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নতুন মূল্যায়ন প্রচেষ্টাকে বোঝায় না। এই সময় ইংরেজি শিক্ষার ও ইউরোপীয় সংস্কৃতির ছোঁয়ায় বাঙালি আত্মসচেতন হয়ে ওঠে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি পাশ্চাত্যের সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। বাঙালি নিজের ধর্মীয় এবং সামাজিক ত্রুটিবিচ্যুতিগুলি এবং সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের চরিত্র সম্বন্ধে সচেতন হয়ে ওঠে। এই সচেতনতাই হল নবজাগরণের আসল ভিত্তি। নবজাগরণের মতাদর্শগত ভিত্তি কখনই ধর্মনিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক ছিল একথা বলা যায় না। তাই অধ্যাপক সুমিত সরকার লিখেছেন—“মুসলিম স্বৈরাচারী শাসনের সহাবস্থান সংক্রান্ত ধারণা থেকেই বুদ্ধিজীবীরা একটি বিদেশি শাসন গ্রহণ করার সুবিধাজনক যৌক্তিকতা খুঁজে পেয়েছিলেন।
(৩) তিনটি ভাবধারা : বাংলার নবজাগরণের চরিত্র বিচারে কয়েকটি ভাবধারার পরিচয় পাওয়া যায়। এগুলি হল উদারপন্থী ভাবধারা, প্রাচ্যের পুনরুজ্জীবনবাদী বা ঐতিহ্যবাদী ভাবধারা এবং সমন্বয়বাদী ভাবধারা। পাশ্চাত্যের উদারপন্থী ভাবধারার প্রভাবে সমাজসংস্কার, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, নারীমুক্তি আন্দোলন প্রভৃতি শুরু হয়। যুক্তির আলোকে প্রচলিত প্রথা এবং আচারবিধিগুলি যাচাই করে নেওয়ার রীতি চালু হয়। দ্বিতীয় ধারা অর্থাৎ প্রাচ্যের পুনরুজ্জীবনবাদ বা ঐতিহ্যবাদী ভাবধারা অনুযায়ী প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ লক্ষ করা যায়। তৃতীয় অর্থাৎ সম্বন্বয়বাদী ভাবধারা অনুযায়ী প্রাচীন যুগের যা কিছু শ্রেষ্ঠ তার সঙ্গে পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের যা কিছু শ্রেষ্ঠ উভয়ের সমন্বয়ের উদ্যোগ শুরু হয়।
(৪) এলিটিস্ট আন্দোলন: সমালোচকদের ধারণায় উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ ছিল এলিটিস্ট (Elitist) আন্দোলন। সমাজের মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত লোকেদের মধ্যেই এই নবজাগরণ সীমাবদ্ধ ছিল। উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের প্রভাব সমাজের সকল শ্রেণির ওপর পড়েনি। তা ছাড়া এই নবজাগরণ মুসলিম সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়। কারণ মুসলিম সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে সেই সময় কোনো সংস্কার প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। তা ছাড়া হিন্দু সমাজকেন্দ্রিক সংস্কার প্রচেষ্টা গৃহীত হলেও দেখা যায় যে, হিন্দুসমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ বা কৃষক সমাজের উন্নতির জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জওহরলাল নেহরু স্পষ্টভাবে বলেছেন ঔপনিবেশিক শাসনের জ্ঞানদীপ্তি শুধুমাত্র উচ্চবর্ণের বাঙালি হিন্দুদের ওপরই প্রতিফলিত হয়েছিল।
(৫) শহরকেন্দ্রিক: উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণ ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক। এই নবজাগরণের প্রাণকেন্দ্র ছিল কলকাতা। কলকাতার বাইরে অন্যান্য জায়গায় এই নবজাগরণ ছড়িয়ে পড়েনি। তাই গ্রামবাংলার গরিষ্ঠ অংশ এই নবজাগরণের ছোঁয়া পায়নি। বলা যায়, গ্রামের কৃষক ও দরিদ্র শ্রেণির সঙ্গে এই নবজাগরণের কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। সীমাবদ্ধতা
❏ নবজাগরণের সীমাবদ্ধতা :
(১) অধ্যাপক সুশোভন সরকার তার ‘নোটস অন বেঙ্গল রেনেসাঁ (Notes on Bengal Renaissance) শীর্ষক গ্রন্থে নবজাগরণের নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরলেও বাংলার এই সাংস্কৃতিক জাগরণকে নবজাগরণ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, বাংলাতেই প্রথম ব্রিটিশ শাসন, বুর্জোয়া অর্থনীতি এবং আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব অনুভূত হয়। (২) ড. অমলেশ ত্রিপাঠী মনে করেন দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকের
বাণিজ্য বিপ্লব, নগর বিপ্লব যেভাবে ইটালির নবজাগরণের পটভূমি প্রস্তুত করেছিল, বাংলার নবজাগরণের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় নি। ইটালির নবজাগরণের কেন্দ্র ফ্লোরেন্স ছিল স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশ। অপরদিকে, বাংলার নবজাগরণের কেন্দ্র ছিল কলকাতা। বিদেশি ব্রিটিশ শাসকের
অধীনস্থ। তা ছাড়া কলকাতা নবজাগরণের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন কিছু জমিদার, কোম্পানির বেনিয়ান, দেশীয় গোমস্তা ও কিছু চাকুরিজীবী। অপরদিকে, ফ্লোরেন্সে নবজাগরণের পৃষ্ঠপোষকতা করেন গোরেঞ্জো মেদিচির মধ্যে ধনী ব্যাংক ব্যবসায়ীগণ। (৩) অধ্যাপক সুমিত সরকার, বাংলার নবজাগরণকে ইংরেজ নকলনবিশি বলে সমালোচনা করেছেন। বিনয় ঘোষের ধারণায় বাংলায় নবজাগরণ একটি অতিকথা মাত্র। তিনি এই নবজাগরণকে ঐতিহাসিক প্রতারণা (Historical hoax) বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন যে, বাংলায় নবজাগরণ হয়নি, যা লেখা হয়েছে এখনও লেখা, তা অতিকথন মাত্র।(৪) অশোক মিত্র বাংলার উনিশ শতকের জাগরণকে “তথাকথিত নবজাগরণ” (So called Renaissance) বলে উল্লেখ করেছেন। (৫) বিনয় ঘোষ তিনি এই নবজাগরণকে ‘ঐতিহাসিক প্রতারণা’ আখ্যা দিয়ে বলেন “নবজাগরণ হয়নি, যা লেখা হয়েছে এখনও লেখা হয়, তা অতিকথা মাত্র।”
_____________
3. ব্রিটিশ শাসনকালে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের বিবরণ দাও।
❏ ভূমিকা: ভারতের আদিবাসী জনগণ প্রাথমিকভাবে আদিম মানুষ, পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, উপজাতি প্রভৃতি নানা নামে পরিচিত। কোনো একটি এলাকায় অনুপ্রবেশকারীরা আসার আগে সেখানকার নিজস্ব সংস্কৃতি রীতিনীতি ও মূল্যবোধসম্পন্ন জনগোষ্ঠী যারা পরবর্তীকালে সমাজের সংখ্যালঘু হিসেবে বসবাস করে তারা আদিবাসী নামে পরিচিত। সাঁওতাল, কোল, ভীল, মুণ্ডা, ওঁরাও, হো, ভূমিজ, খন্দ, গোণ্ড, ভারলি, নাগরা প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায় প্রকৃতির কোলে বসবাস করত এবং প্রকৃতির সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত।
❏ আদিবাসী সম্প্রদায় অবস্থা বিবরণ :
(১) করারোপ : আদিবাসীরা ব্রিটিশ আমলে তথাকথিত সভ্য সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসতে শুরু করলে তাদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ব্রিটিশ সরকার উনিশ শতকে আদিবাসী সম্প্রদায় সরকারের আইন, শাসন ও বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনে। ভূমি বন্দোবস্ত করে সরকার আদিবাসীদের জমির ওপর কর আরোপ করে ও আদিবাসী কৃষকদের কাছ থেকে কর আদায়ে তীব্র নির্যাতন চালায়।
(২) ‘দিকু’দের ভূমিকা: সরকার ও আদিবাসী কৃষকদের মধ্যে বহিরাগত জমিদার জোতদার, বণিক, মহাজন, ঠিকাদার, দালাল প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরের মধ্যস্বত্বভোগীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। তারা ব্রিটিশ সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে আদিবাসী এলাকায় ঢুকে পড়ে। আদিবাসীরা এই মধ্যস্বত্বভোগী বহিরাগতদের ‘দিকু’বলত। ‘দিকু’রা আদিবাসীদের সঙ্গে নানাভাবে প্রতারণা ও শোষণ চালায়।
(৩) অরণ্যের অধিকার ব্যাহত: আদিবাসীরা পাহাড় ও মালভূমির অরণ্যাঞ্চলে ঝুম চাষ করে খাদ্য উৎপাদন করত এবং অরণ্য থেকে বিভিন্ন সম্পদ আহরণ করত। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে সংরক্ষিত অরণ্যাঞ্চলে ঝুম চাষ নিষিদ্ধ করে এবং অরণ্য-সম্পদের ওপর সরকার একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
(৪) সামাজিক আগ্রাসন: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায় বিভিন্ন সামাজিক আগ্রাসনের শিকার হয়। খ্রিস্টান মিশনারিরা আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি তাদের খ্রিস্টানধর্মে দীক্ষিত করতে থাকে। নতুন পাশ্চাত্য খ্রিস্টান সংস্কৃতির প্রভাবে আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাদী সংস্কৃতি আক্রান্ত হয়।
(৫) শোষণ ও বঞ্চনা: উনিশ শতকে ব্রিটিশ পুঁজিপতিরা চা-কফির বাগিচা চাষ শুরু করে। অসংখ্য আদিবাসী শ্রমিককে সেখানে নিয়ে তাদের চা-কফি চাষে নিয়োগ করা হয়। সেখানকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং সীমাহীন অত্যাচারের শিকার হয়ে বহু শ্রমিকের মৃত্যু হয়। সারা দেশে রেলপথ স্থাপনের কাজ শুরু হলে প্রচুর আদিবাসী শ্রমিককে এই কাজে নিয়োগ করা হয়। কয়লা উৎপাদনের কাজেও প্রচুর সংখ্যক আদিবাসী শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ন্যায্য পারিশ্রমিক না দিয়ে দিনের পর দিন নানাভাবে তাদের বঞ্চিত করা হয়।
❏ দলিত সম্প্রদায় :
জন্ম ও পেশাগত দিক থেকে বৈষম্য ও বঞ্জনার স্বীকার হয় যেসব মানুষেরা, তারা সাধারণভাবে দলিত নামে পরিচিত। দলিত শব্দের বাংলা অর্থ হল দমিত, শাষিত বা মর্দিত, পদদলিত। ময়লা পরিস্কার করা, রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া, মৃতদেহ সৎকার করা, মানুষের মলমূত্র পরিস্কারের মতো যে কাজগুলিকে আমরা অশুদ্ধ বলে মনে করি সেই কাজগুলি করে থাকে দলিত শ্রেণি। দলিতদের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি গোষ্ঠী হল চর্মকার, মালাকার, কামার, কুমোর, জেলে, কোল, কাহার, ডোম, মুচি, মালো, সবর প্রভৃতি সম্প্রদায়।
❏ দলিত সম্প্রদায় অবস্থা বিবরণ :
(১) অবহেলার শিকার: শিক্ষা-সংস্কৃতিতে পিছিয়ে থাকা গ্রামগঞ্জের দলিত শ্রেণির মানুষ সংস্কৃত বা ইংরেজি ভাষা জানত না বলে তারা নিজেদের কথ্যভাষায় ভাবের আদান-প্রদান করত। উচ্চবর্ণের মানুষ দলিতদের এই কথ্যভাষাকে খুবই অবজ্ঞা করত। ব্রাহ্মণরা দক্ষিণ ভারতে তামিল ভাষাকে যথেষ্ট ঘৃণার চোখে দেখত।
(২) কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি: জাতীয় কংগ্রেসে উচ্চবর্ণের নেতাদের প্রাধান্য ছিল। তারা অনেকেই জাতিভেদপ্রথার সমর্থক ছিল। কংগ্রেস নেতাদের এরূপ মনোভাবের ফলে দলিতদের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব বাড়তে থাকে এবং তারা ক্রমে কংগ্রেসের বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি চেষ্টার সক্রিয় চেষ্টা চালায়। অবশ্য মহাত্মা গান্ধি হরিজন আন্দোলন শুরু করে কংগ্রেসের প্রতি দলিতদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু গান্ধিজির সাবধানী উদ্যোগ দলিতদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
(৩) বাংলায় দলিত সক্রিয়তা: ঊনবিংশ শতকে বাংলার দলিত নমঃশূদ্র সম্প্রদায় ব্রাহ্মণ্য আধিপত্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সরব হয়। প্রথমদিকে মতুয়া ধর্মের প্রবর্তক হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুর এবং পরবর্তীকালে প্রমথরঞ্জন ঠাকুর, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল প্রমুখ দলিত নেতা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারিতে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী ও কোচদের তপশিলি জাতিভুক্ত করলে এর বিরুদ্ধে তারা সামাজিক আন্দোলন শুরু করে।
(৪) দলিত সংগঠন: দক্ষিণ ভারতে তামিল ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে অব্রাত্মণদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জাস্টিস পার্টি (১৯১৭ খ্রি.) নামে দলিতদের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে নাগপুরে অনুষ্ঠিত দলিত নেতাদের সম্মেলনে দলিত আন্দোলনের গতি আসে। এখানে সর্বভারতীয় নিপীড়িত সমিতি গঠিত হয়। এস. সি. রাজা এই সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ড. আম্বেদকর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দলিতদের পৃথক নির্বাচনের অধিকার দাবি করেন।
(৫) আম্বেদকরের ভূমিকা: গান্ধিজি-সহ অন্যান্য কিছু নেতার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা অস্পৃশ্যতা-বিরোধী দলিত নেতা আম্বেদকরের কাছে বিশেষ মূল্যবান ছিল না। দলিতদের মন্দিরে প্রবেশ বা উচ্চবর্ণের সঙ্গে মেলামেশার অধিকারের চেয়ে তিনি দলিতদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটানোর বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। তিনি ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে দলিতদের নিয়ে মহারাষ্ট্রে সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেন এবং প্রকাশ্যে ‘মনুস্মৃতি’ গ্রন্থটি পুড়িয়ে তিনি ব্রাক্ষ্মণ্যধর্মের বিরোধিতা করেন। তিনি দলিতদের শিক্ষা, সংগঠন ও বিক্ষোভ আন্দোলনের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন।
পরবর্তীতে আম্বেদকরের নেতৃত্বে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় তপশিলি জাতি ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে দলিত আন্দোলনকে জাতীয় কংগ্রেসও গুরুত্ব দিতে শুরু করে। স্বাধীনতা লাভের প্রাক্-মুহূর্তে দলিত নেতা আম্বেদকরকে সংবিধানের খসড়া রচনা কমিটির সভাপতি নির্বাচন করা হয়। একজন দলিত নেতার নেতৃত্বাধীন কমিটি স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনার অধিকার পায়। তাঁর নেতৃত্বে রচিত নতুন সংবিধানে অস্পৃশ্যতাকে বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়।
_____________
4. চিনের 4 মে (May Fourth) আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল উল্লেখ করো।
❏ ভূমিকা: বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে চিনে রাজতন্ত্রী ও প্রজাতন্ত্রী বিপ্লবীদের মধ্যে প্রবল সংগ্রাম শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে চিনে বিদেশিদের আধিপত্যের অবসানের লক্ষ্যে সেদেশে প্রবল এক বৌদ্ধিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ৪ মে-র আন্দোলন (May Fourth Movement) নামে পরিচিত।
❏ ৪ মে-র আন্দোলনের কারণ :
(১) ইউয়ান-সি-কাই-এর নৃশংসতা: চিনে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর চিনের রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াৎ-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি সমরনায়ক ইউয়ান-সি-কাই-এর সমর্থনে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ইউয়ান-সি-কাই চিনের ক্ষমতা লাভের পর ধীরে ধীরে চিনে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং চিনে বিদেশিদের বিভিন্ন সুবিধা দেন। তিনি তাঁর বিরোধীদের একে একে হত্যা করেন। কুয়োমিনতাং দলের নেতা সুং চিয়াও-জেন নিহত হলে তাদের সরকার গঠনের আশা ভঙ্গ হয়। ফলে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান- সহ কয়েকটি দেশ ইউয়ান সরকারকে যথেষ্ট পরিমাণ ঋণ দেয়।
(২) কুয়োমিনতাং দল নিষিদ্ধ: চিনে গৃহযুদ্ধ এড়িয়ে শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সান-ইয়াৎ-সেন রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়েছিলেন। কিন্তু এই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ায় তিনি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ইউয়ান-এর বিরুদ্ধে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’-এর ডাক দেন। কয়েক মাসের মধ্যে ইউয়ান বিপ্লবীদের দমন করে। ইউয়ান যুদ্ধে জয়লাভের পর কুয়োমিনতাং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
(৩) জাপানের একুশ দফা দাবি: ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনের শান্টুং প্রদেশে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এরপর সমগ্র চিনকে নিজেদের উপনিবেশে পরিণত করার উদ্দেশ্যে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি জাপান চিনের কাছে ‘একুশ দফা দাবি’ পেশ করে এবং এই দাবিগুলি পূরণের জন্য চিনকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়। বলা বাহুল্য, নিজ সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষেই এরূপ দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। চিনা জাতীয়তাবাদীরা ধ্বনি তোলে যে, ‘দেশকে বাঁচাও’।
(৪) একুশ দফা দাবির প্রতিবাদ: চিনের সাধারণ মানুষ জাপানের ‘একুশ দফা দাবি’র বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এর বিরোধিতায় চিনে ‘নাগরিকদের দেশপ্রেমী সমিতি’ গড়ে ওঠে (১৯১৫ খ্রি.)। সাংহাই শহরে প্রতিষ্ঠিত ‘জাপ-বিরোধী কমরেডদের জাতীয় সমিতি’ চিনে জাপানি পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়। চিনের অন্যান্য শহরেও এই বয়কট আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। একুশ দফা দাবির বিরদ্ধে আমেরিকায় পাঠরত চিনের ছাত্রদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
(৫) বিদেশি পণ্যের বাজার : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় চিনে চিনে বিদেশি পণ্যের প্রবেশ যথেষ্ট পরিমাণে কমে যায়। কিন্তু যুদ্ধ শেষে জাপান-সহ অন্যান্য পুঁজিপতি দেশগুলি আবার চিনের অভ্যন্তরে বাজার দখলের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে। ফলে চিনের সদ্যোজাত শিল্পগুলি তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে এবং অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যায়।
❏ ৪ মে-র আন্দোলনের গুরুত্ব :
(১) শ্রমিক শ্রেণির গুরুত্ব: ৪ মে-র আন্দোলনের দ্বারা চিনে শ্রমিক শ্রেণির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এই আন্দোলনে শ্রমিকরা অর্থনৈতিক দাবিদাওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংগ্রামের পথে অগ্রসর হয়।
(২) জাতীয়তাবোধের প্রসার: ৪ মে-র আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই চিনে আধুনিকতা, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের প্রসার ঘটে। প্রথম পর্বে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীরা ছিল এই আন্দোলনের চালিকা শক্তি। লি তা চাও এই আন্দোলনকে মানবমুক্তির সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন।
(৩) সাংস্কৃতিক অগ্রগতি: আন্দোলন শুরু হওয়ার পর চিনে বহু বইপত্র ও পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হলে সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ঘটে। চিনের পুরোনো কনফুসীয় মতাদর্শ সমালোচিত হতে থাকে এবং নতুন সংস্কৃতিকে সবাই স্বাগত জানায়। ঐতিহাসিক ইমান্যুয়েল সু-র মতে, এই আন্দোলন চিনের
সাংস্কৃতিক জগতে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আনে।
(৪) আন্দোলনের সাফল্য: আন্দোলনের চাপের কাছে চিন সরকার নতি স্বীকার করলে আন্দোলনের সাফল্য ঘোষিত হয়। আন্দোলনের চাপে সরকার আন্দোলনকারী ধৃত ছাত্রদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। চিনের পক্ষে ভার্সাই সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর না করার কথা সরকার শেষপর্যন্ত ঘোষণা করে (২৮জুন, ১৯১৯ খ্রি.)।
(৪) কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা: ৪ মে-র আন্দোলনের ফলে চিনে কুয়োমিনতাং দলের পুনর্গঠন হয় এবং কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান ঘটে। এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন নেতা ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে চিনে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীকালে এই পার্টি চিনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
উপসংহার: উপরোক্ত বিভিন্ন কারণে চিনের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চেন-তু-শিউ-র আহ্বানে হাজার হাজার ছাত্র ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে পিকিং-এর তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার'-এ জড়ো হয়ে বিদেশি শক্তির অপসারণ, বিভিন্ন অসম চুক্তি বাতিল, দেশদ্রোহীদের শাস্তি, জাপানি পণ্য বয়কট প্রভৃতি দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। এই বিদ্রোহ শীঘ্রই দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
_____________
5. ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলার সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের অবদান আলোচনা করো।
❏ সমাজসংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের অবদান :
ব্রাহ্মসমাজ ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান। এই সভায় হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলেরই অবাধ প্রবেশের অনুমতি ছিল। এই ব্রাহ্মসমাজ ভেঙে পরবর্তীকালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করেন ‘আদি ব্রাহ্ণসমাজ’। আবার, সেই প্রতিষ্ঠান ভেঙে কেশবচন্দ্র সেন প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ'। পরবর্তীকালে সেটিও ভেঙে যায়। সৃষ্টি হয় শিবনাথ শাস্ত্রী ও আনন্দমোহন বসু প্রতিষ্ঠিত ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’। ব্রাহ্মসমাজ একে একে এতগুলি ভাগে ভাগ হয়ে গেলেও সবগুলিই ছিল ব্রাহ্ম আন্দোলনের শরিক। মানব হিতৈষণা ছিল ব্রাহ্ম আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
(১) সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণের প্রচেষ্টা: ব্রাহ্মসমাজের কর্মসূচিগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণ। প্রথম দিকে কেশবচন্দ্র সেন এবং পরবর্তীকালে শিবনাথ শাস্ত্রী ও আনন্দমোহন বসুর নেতৃত্বে ব্রাহ্মসমাজ হিন্দুধর্মের প্রচলিত কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে সরব হয়।
(২) বিবাহরীতিসংক্রান্ত সংস্কার: ব্রাহ্মসমাজের অদম্য প্রচেষ্টার ফলেই বিবাহরীতির পরিবর্তন ঘটে। ব্রাহ্মসমাজের নেতৃত্বে গড়ে-ওঠা আন্দোলনের তীব্রতার জেরে ব্রিটিশ সরকার ‘তিন আইন' পাস করতে (১৮৭২ খ্রিস্টাব্দ) বাধ্য হয়। এই আইনের বলে বাল্যবিবাহ ও পুরুষের বহুবিবাহ রদ হয় এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহ আইনসিদ্ধ হয়।
(৩) নারীর সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন: ব্রাহ্মসমাজের প্রচেষ্টায় নারীশিক্ষা ও সমাজে নারীর মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শুরু হয়। পিতার সম্পত্তিতে কন্যার আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রামমোহনের নেতৃত্বে ব্রাহ্মসমাজ উদ্যোগী হয়। এর সুফল হিসেবে পিতৃসম্পত্তিতে কন্যার আইনগত অধিকার স্বীকৃতি পায়।
(৪) নিম্নশ্রেণির মানুষের উন্নয়ন: সমাজের একেবারে নীচের দিকে অবস্থানকারী মানুষের উন্নয়নের জন্য ব্রাহ্মসমাজ উদ্যোগী হয়। অন্ত্যজ শ্রেণির উন্নয়নের পাশাপাশি পাটকল শ্রমিকদের জন্য বস্তিতে নৈশবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, নিষিদ্ধপল্লির মেয়েদের সমাজের মূল জীবনধারায় ফিরিয়ে আনা, মদ্যপানবিরোধী প্রচার ইত্যাদি কর্মসূচির রূপায়ণ করে ব্রাহ্মসমাজ।
_____________
6. বাংলার সমাজসংস্কার আন্দোলনে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন ও শিবনাথ শাস্ত্রীর ভূমিকা আলোচনা করো।
❏ ভূমিকা : ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলনের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান অনস্বীকার্য। 1833 খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর অবশ্য এই আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুযোগ্য নেতৃত্বে ধীরে ধীরে ব্রাহ্ম আন্দোলন নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে কেশবচন্দ্র সেন এই আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কেশবচন্দ্র সেনের ব্যক্তিত্ব, বাগ্মিতা, পরিশ্রমের ফলে সেই সময় বহু মানুষ ব্রাত্ম আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
❏ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা : রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ব্রাহ্ম আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ব্রাহ্মসমাজে তাঁর যোগদান এবং সাংগঠনিক দক্ষতার ফলে এই আন্দোলনের প্রসার ঘটতে দেখা যায়। ব্রাত্ম আন্দোলনে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন সেগুলি হল— (i) বিবিধ নিয়মকানুন ও রীতিনীতির প্রচলন : ব্রাহ্মসমাজে যুক্ত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বিবিধ নিয়মকানুন এবং রীতিনীতি চালু করেন। এর ফলে ব্রাত্ম আন্দোলন একটি সুসংবদ্ধ রূপ লাভ করে। ব্রাহ্মধর্ম প্রচারে তাঁর পদক্ষেপ এবং উদ্যোগ সমাজের বহু মানুষকে আকৃষ্ট করে। (ii) সামাজিক কুসংস্কার নিবারণের উদ্যোগ : দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে ব্রাত্মসমাজ তৎকালীন সমাজে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি কুপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়। এছাড়া সামাজিক কুসংস্কারগুলি বন্ধ করার উদ্দেশ্যে তাঁর নেতৃত্বে ব্রাহ্ণসমাজ একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করে। (iii) তত্ত্ববোধিনী সভা প্রতিষ্ঠা : 1839 খ্রিস্টাব্দে দেবেন্দ্রনাথের উদ্যোগে তত্ত্ববোধিনী সভার প্রতিষ্ঠা হয়। কালক্রমে এটি বাঙালি শিক্ষিত গুণীজনদের মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়। এই সভার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সকল প্রকার সংস্কারমুক্ত হয়ে ধর্ম প্রসঙ্গে আলোচনা। এই সভার মুখপত্র ছিল তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত প্রমুখ মনীষী এই সভা অলংকৃত করতেন।
❏ কেশবচন্দ্রের ভূমিকা : 1856 খ্রিস্টাব্দে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন ব্রাহ্মসমাজে কেশবচন্দ্র সেন যোগদান করেন। তাঁর ভাবাদর্শ, শিক্ষা ব্রাহ্ম আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার করে। পরবর্তীকালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কেশবচন্দ্রের নেতৃত্বদানের ক্ষমতা দেখে তাঁকে ব্রহ্মানন্দ উপাধি দেন। ব্রাহ্ম আন্দোলনে কেশবচন্দ্রের অবদানগুলি হল—
(i) সমাজসংস্কার : দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো কেশবচন্দ্র সেনও বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতি কুপ্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এ ছাড়া সামাজিক অস্পৃশ্যতা এবং জাতিভেদ প্রথারও তিনি তীব্র বিরোধিতা করেন। পাশাপাশি নারীশিক্ষা ও স্বাধীনতা, বিধবাবিবাহ, অসবর্ণ বিবাহ প্রভৃতির পক্ষে কেশবচন্দ্র সওয়াল করেন। তাঁর সমাজকল্যাণকামী আদর্শে সমাজের তরুণরা উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে।
(ii) নতুন সংগঠন স্থাপন : সংগত সভা, ব্রাষ্মবন্ধু সভা ইত্যাদি সংগঠন প্রতিষ্ঠার দ্বারা কেশবচন্দ্র সাংগঠনিক ক্ষেত্রটি জোরদার করেন। নারীদের কল্যাণের জন্য 1863 খ্রিস্টাব্দে তিনি বামাবোধিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন। ওই বছরই প্রকাশিত হয় ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’। এই সকল কর্মসূচির সফল রূপায়ণের দ্বারা তিনি বাংলার সংস্কার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
(iii) বাংলার বাইরে ব্রাহ্ম ধর্মের প্রচার : কেশবচন্দ্রের সংস্কার কর্মসূচি কেবল বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বাংলার বাইরে বোম্বাই, মাদ্রাজ ইত্যাদি স্থানেও তা প্রসারিত হয়েছিল। তাঁর এই উদ্যোগের ফলে 1865 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমগ্র দেশে ব্রাহ্মসমাজের সদস্য সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
(iv) তরুণ সদস্যদের যোগদান : ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ গঠন করলেও ব্রাহ্ম আন্দোলন থেকে কেশবচন্দ্র বিচ্যুত হননি। ফলে তাঁর আন্দোলনে বাংলার তরুণরা যোগদান করেন। এই সমস্ত তরুণদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। পরে অবশ্য মতবিরোধের কারণে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ (1878 খ্রিস্টাব্দ) এবং নববিধান ব্রাহ্মসমাজ (1880 খ্রিস্টাব্দ) নামে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়।
❏ শিবনাথ শাস্ত্রীর ভূমিকা : শিবনাথ শাস্ত্রী ছিলেন সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সমাজ-সংস্কারক, ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক। ১৮৪৭ সালের ৩১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার চাংড়িপোতা গ্রামে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস একই জেলার মজিলপুরে। তাঁর মাতুল দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ ছিলেন সোমপ্রকাশ পত্রিকার সম্পাদক। শিবনাথ কলকাতার সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৬৬) এবং সংস্কৃত কলেজ থেকে এফএ (১৮৬৮), বিএ (১৮৭১) ও এমএ (১৮৭২) পাস করেন। পরে ওই কলেজ থেকেই তিনি ‘শাস্ত্রী’ উপাধি লাভ করেন। ছাত্রাবস্থায়ই (১৮৬৯) শিবনাথ কেশবচন্দ্র সেনের ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন। Indian Reforms Association-এ যোগ দিয়ে তিনি মদ্যপান নিবারণ ও নারীমুক্তি আন্দোলনে এবং শিল্প-সাহিত্য-কারিগরি বিদ্যার প্রচারে অংশগ্রহণ করেন। মদ্যপানের বিরোধিতা কল্পে তিনি ১৮৭০ সালে প্রকাশ করেন মদ না গরল শীর্ষক একটি মাসিক পত্রিকা। পরে তিনি সোমপ্রকাশ (১৮৭৩-৭৪) ও ধর্মবিষয়ক সমদর্শী পত্রিকা (১৮৭৪) এবং আরও পরে তত্ত্বকৌমুদী, ইন্ডিয়ান মেসেজ ও মুকুল (১৮৯৫) পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
শিবনাথ কেশব সেনের ভারত আশ্রমের বয়স্কা মহিলা বিদ্যালয় (১৮৭২), ভবানীপুর সাউথ সুবারবন স্কুল (১৮৭৪) এবং হেয়ার স্কুলে (১৮৭৬) শিক্ষকতা করেন। এক পর্যায়ে তিনি সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন (১৮৭৮)। নারীমুক্তি আন্দোলনে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে এবং বিধবাবিবাহের পক্ষে তিনি কেশবচন্দ্রের সহযোগী ছিলেন। তাঁদের বলিষ্ঠ প্রচেষ্টায় ১৮৭২ সালে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়সসীমা ১৪ বছর নির্ধারিত হয়। ১৮৭৭ সালে শিবনাথ ব্রাহ্ম যুবকদের ‘ঘননিবিষ্ট’ নামে একটি বৈপ্লবিক সমিতিতে সংগঠিত করে পৌত্তলিকতা ও জাতিভেদের বিরুদ্ধে এবং নারী-পুরুষের সমানাধিকার ও সর্বজনীন শিক্ষার পক্ষে সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেন। শিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি সিটি স্কুল ও স্টুডেন্টস সোসাইটি নামে একটি গণতান্ত্রিক ছাত্র সমিতি (১৮৭৯) এবং নারী শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে মেয়েদের নীতিবিদ্যালয় (১৮৮৪) স্থাপন করেন। ব্রাহ্ম সমাজের পক্ষে ভারতের প্রথম কিশোর মাসিক পত্রিকা সখা (১৮৮৩) তাঁর উদ্যোগেই প্রকাশিত হয়। ১৮৯২ সালে তিনি ব্রাহ্ম সমাজের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন সাধনাশ্রম।
❏ উপসংহার : রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মসমাজের গুরুত্ব এবং প্রসার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কেশবচন্দ্র সেনের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ব্রাহ্ম আন্দোলনে পরবর্তীকালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কেশবচন্দ্র সেনের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। এ ছাড়া আরও পরে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হয়ে গেলেও এই দুজনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ব্রায় আন্দোলন নতুন গতি পেয়েছিল—এ কথা অস্বীকার করা যায় না।
_____________
- উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস MCQ সাজেশন ২০২৪
- উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন ২০২৪
- উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন ২০২৪ মার্ক - ৮
- উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত সাজেশন ২০২৪
- উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন ২০২৪
- উচ্চমাধ্যমিক এডুকেশন সাজেশন ২০২৪