অষ্টম শ্রেণি বিষয় : ইতিহাস দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন ― ২০২৪


অষ্টম শ্রেণি 
দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন ― ২০২৪
বিষয় : ইতিহাস 
পূর্ণমান :  ২৫
সময় : ৫০ মিনিট 

১। সঠিক উত্তরটি বেছে নাও : ১✗৫ = ৫
(ক) নীল বিদ্রোহের একজন নেতা ছিলেন— (i) দিগম্বর বিশ্বাস (ii) সিধু (iii) বিরসা মুন্ডা (iv) ভৈরব।
(খ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়েছিল — (i) ১৭৮৪ (ii) ১৭৯৩ (ii) ১৭৭০ (iv) ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে।
(গ) ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন লোপ পেয়েছিল— (i) ১৮৮৫ (ii) ১৮৫৮ (iii) ১৯৪৭ (iv) ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে।
(ঘ) চরমপন্থার প্রবক্তা ছিলেন না— (i) অরবিন্দ ঘোষ (ii) বিপিনচন্দ্র পাল (ii) গোপালকৃষ্ণ গোখলে (iv) ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়।
(ঙ) জাতীয় শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে যুক্ত ছিল (i) বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ (ii) অনুশীলন সমিতি (ii) থিওসফিক্যাল সোসাইটি (iv) পুনা সার্বজনিক সভা।

২। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর লেখো (চার-পাঁচটি শব্দ বা একটি বাক্যের মধ্যে) :  ১✗৫ = ৫
(ক) বাংলায় কে ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেন?
(খ) ঠিক না ভুল লেখো : ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন জারি হয়।
(গ) বেমানান শব্দটি খুঁজে বের করো : সৈয়দ আহমদ, আবদুল ওয়াহাব, স্যার সৈয়দ আহমদ খান, হাজি শরিয়তউল্লা।
(ঘ) শূন্যস্থান পূরণ করো : জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি__________ ছিলেন।
(ঙ) অনুশীলন সমিতি কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

৩। নীচের যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর লেখো (দু-তিনটি বাক্যের মধ্যে) :  ২✗২ = ৪
(ক) 'সূর্যাস্ত আইন' কাকে বলে?
(খ)  ‘ইলবার্ট বিল' কী? 
(গ) ‘অবশিল্পায়ন' কাকে বলে?

৪। নীচের যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর লেখো (চার-পাঁচটি বাক্যের মধ্যে) : ২✗৩ = ৬
(ক) ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনের গুরুত্ব উল্লেখ করো।
(খ) স্যার সৈয়দ আহমদের সংস্কারগুলির প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?
(গ) দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামার  কারণ গুলি কী ছিল?

৫। নীচের যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর লেখো (আট-দশটি বাক্যের মধ্যে) : ১✗৫ = ৫
(ক) বাংলার কৃষকসমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব কেমন ছিল সে সম্পর্কে লেখো? 
(খ) ব্রাহ্ম আন্দোলনের মূল বক্তব্য কী ছিল ? ব্রাহ্ম আন্দোলনের সীমাবদ্ধতাগুলি উল্লেখ করো।
(গ) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ কেবল "সিপাহি বিদ্রোহ ছিল" তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।


১। সঠিক উত্তরটি বেছে নাও : ১✗৫ = ৫
(ক) নীল বিদ্রোহের একজন নেতা ছিলেন— (i) দিগম্বর বিশ্বাস 
(খ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়েছিল —  (ii) ১৭৯৩
(গ) ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন লোপ পেয়েছিল—  (ii) ১৮৫৮
(ঘ) চরমপন্থার প্রবক্তা ছিলেন না— (ii) গোপালকৃষ্ণ গোখলে 
(ঙ) জাতীয় শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে যুক্ত ছিল (i) বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ

২। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর লেখো (চার-পাঁচটি শব্দ বা একটি বাক্যের মধ্যে) :  ১✗৫ = ৫
(ক) ➭ বাংলায় ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেন ওয়ারেন হেস্টিংস। 
(খ) ➭  ভুল। সঠিক ব্যাখ্যা : ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন জারি হয়।
(গ) ➭ স্যার সৈয়দ আহমদ খান। কারণ— স্যার সৈয়দ আহমদ খান ছিলেন আলিগড় আন্দোলনের নেতা; কিন্তু বাকি তিনজন ছিলেন ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা।
(ঘ) ➭ উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
(ঙ) ➭ সতীশচন্দ্র বসু।

৩। নীচের যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর লেখো (দু-তিনটি বাক্যের মধ্যে) :  ২✗২ = ৪
(ক) 'সূর্যাস্ত আইন' কাকে বলে?
➭ ‘সূর্যাস্ত আইন' ছিল ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের একটি শর্ত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারকে বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে কোম্পানির প্রাপ্য রাজস্ব জমা দিতে হত। শেষ দিনের সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই প্রাপ্য রাজস্ব কোম্পানিকে জমা দিতে না পারলে জমিদারের জমিদারি হাতছাড়া হত । কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের এই নিয়মকে সূর্যাস্ত আইন বলা হয়।

(খ) ‘ইলবার্ট বিল' কী? 
➭ ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ফৌজদারি আইন অনুসারে শ্বেতাঙ্গ অপরাধীদের বিচার করার ক্ষমতা ভারতীয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়রা জজদের ছিল না। বিচার বিভাগের এই বৈষম্য দূর করার জন্য অর্থাৎ শ্বেতাঙ্গ অপরাধীদের বিচার করার ক্ষমতা ভারতীয় বিচারকদের হাতে দেওয়ার লক্ষ্যে ভাইসরয় লর্ড রিপনের আইনসচিব কোর্টনি ইলবার্ট ১৮৮৩ সালে যে আইন প্রবর্তন করেন তা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত। কিন্তু শ্বেতাঙ্গরা এই আইনের প্রবল প্রতিবাদ জানালে ইলবার্ট বিল সংশোধন করা হয়। সংশোধিত এই বিলের বিরুদ্ধে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভা আন্দোলন করে।

(গ) ‘অবশিল্পায়ন' কাকে বলে?
➭ অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়কে। ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধীরে ধীরে দেশীয় শিল্পের অবক্ষয় ঘটতে থাকে। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে ব্রিটিশের অবাধ বাণিজ্য ও অসম শিল্পনীতির জন্য ভারতের চিরাচরিত ও ঐহিত্যশালী কুটিরশিল্পের যে ধ্বংসসাধন ঘটে তা ‘অবশিল্পায়ন’ নামে পরিচিত।
৪। নীচের যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর লেখো (চার-পাঁচটি বাক্যের মধ্যে) : ২✗৩ = ৬
(ক) ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনের গুরুত্ব উল্লেখ করো।
➭ জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর প্রতি বছর ভারতের কোনো একটি শহরে বার্ষিক অধিবেশন আহ্বান করা হত। এর মধ্যে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। (১) এই অধিবেশনে কংগ্রেস দলে ভাঙন ঘটে। (২) কংগ্রেসের মধ্যে নরমপন্থী ও চরমপন্থী নামে দুটি গোষ্ঠীর জন্ম হয়। (৩) চরমপন্থীরা স্বরাজ-এর আদর্শ তুলে ধরে সমসাময়িক জাতীয় রাজনীতিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনকে ‘জাতীয় রাজনীতির জলবিভাজিকা' বলা যায় ৷

(খ) স্যার সৈয়দ আহমদের সংস্কারগুলির প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?
➭ স্যার সৈয়দ আহমদ ছিলেন মুসলমান সংস্কারকদের মধ্যে সবথেকে অগ্রগণ্য। স্যার সৈয়দ আহমদের সংস্কারগুলির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল— (১)  মুসলমান সমাজে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তার ঘটানো। (২) পাশ্চাত্য বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে আধুনিক ও যুক্তিবাদী মুসলমান সমাজ গড়ে তোলা ৷ (৩) বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কুসংস্কার দূর করা ইত্যাদি।

(গ) দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামার  কারণ গুলি কী ছিল?
➭ ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দাক্ষিণাত্যে মহারাষ্ট্রের পুনা ও আহমদনগর জেলায় যে কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল, তাকে সরকারি পরিভাষায় দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা বা "Deccan Riot" বলা হয় ৷ দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামার কারণগুলি হল— (১) অত্যধিক ভূমিরাজস্ব : দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় কৃষকদের উপর অত্যধিক করের বোঝা। (২) তুলোর মূল্য হ্রাস : ঐতিহাসিক এল নটরাজন বলেছেন যে, দাক্ষিণাত্যে কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল তুলোর মূল্য হ্রাস পাওয়া। (৩) মহাজনদের শোষণ : দক্ষিণ ভারতের সাহুকার মহাজনরা দরিদ্র চাষিদের বিভিন্নভাবে শোষণ করত।

৫। নীচের যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর লেখো (আট-দশটি বাক্যের মধ্যে) : ১✗৫ = ৫
((ক) বাংলার কৃষকসমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব কেমন ছিল সে সম্পর্কে লেখো? 
➭ বাংলার গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস বাংলার জমিদারদের সঙ্গে ভূমিরাজস্ব আদায়ের জন্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করেছিলেন। এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাবে বাংলার কৃষকসমাজ কিছু সুফল পেলেও অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

▢ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল : (১) চাষযোগ্য জমির পরিমাণবৃদ্ধি : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদারগণ জমির মালিকানা সম্বন্ধে নিশ্চিত হন। তাই তারা বনজঙ্গল পরিষ্কার করে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। তারা জমিতে মূলধন বিনিয়োগেও উৎসাহ পান। (২) স্থির রাজস্ব : অনিশ্চিত, অত্যাচারমূলক খাজনা বা রাজস্ব আদায়ের হাত থেকে কৃষকেরা মুক্তি পায়। (৩) কৃষকসমাজে সংস্কারমূলক কাজ : জমিদারগণ বংশানুক্রমিক জমিদারি স্বত্ব লাভ করার ফলে অনেক জমিদার নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছিলেন। জমিদারদের উদ্যোগে অনেক বিদ্যালয়, চিকিৎসালয়, পুষ্করিণী, পথঘাট নির্মিত হয়েছিল।

▢ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বাংলার কৃষককুলের ক্ষতি : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বাংলার কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। (১) জমির স্বত্বহীনতা : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিতে কৃষকদের কোনো মালিকানাস্বত্ব ছিল না। (২) জমি থেকে উৎখাত : এই বন্দোবস্তে জমিতে কৃষকের অস্তিত্ব জমিদারের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল ছিল। কৃষক খাজনা দিতে না পারলে তার জমি জমিদার বাজেয়াপ্ত করত। জমিদার ইচ্ছা করলে যখন-তখন জমি থেকে প্রজাকে উচ্ছেদ করতে পারত। (৩) অত্যধিক রাজস্ব : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদাররা কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে বাড়তি রাজস্ব আদায় করত। নানা ধরনের আবওয়াব বা বে-আইনি করও আদায় করা হত। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে জমিদাররা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ৩৫ লক্ষ পাউন্ড রাজস্ব দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু তারা কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করেছিল ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা।
(খ) ব্রাহ্ম আন্দোলনের মূল বক্তব্য কী ছিল ? ব্রাহ্ম আন্দোলনের সীমাবদ্ধতাগুলি উল্লেখ করো।
➭ রাজা রামমোহন রায় ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় যে আত্মীয় সভা গঠন করেন, সেটি থেকেই ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাত্মসমাজ গড়ে ওঠে। রাজা রামমোহনের পরবর্তীকালে ব্রাত্ম আন্দোলন পরিচালনা করেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ ব্রাহ্মনেতা।

▢ ব্রাহ্ম আন্দোলনের মূল বক্তব্য ছিল— (১) সমাজসংস্কার : ভারতীয় সমাজের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার ছিল। ব্রাত্ম আন্দোলনকারীরা হিন্দুসমাজে প্রচলিত সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলীন্য প্রথা, সাগরে সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। (২) নারীসমাজের উন্নয়ন : ব্রাত্ম সমাজসংস্কারকগণ নারীদের উন্নয়নের জন্য প্রচার করেছিলেন। তাঁরা নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীশিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। (৩) ব্রাহ্ম আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা : ব্রাত্ম আন্দোলন ভারতের সমাজসংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এর সীমাবদ্ধতাও ছিল। (৪) উচ্চশ্রেণির মধ্যে আবদ্ধ : ব্রাত্মসমাজের আন্দোলন মূলত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও বিত্তবানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ব্রাহ্ম আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ জনগণ ও গ্রামের মানুষের কোনো যোগ ছিল না। (৫) শাস্ত্রনির্ভর আন্দোলন : ব্রাত্ম আন্দোলন ছিল হিন্দু ধর্মশাস্ত্রনির্ভর আন্দোলন। সংস্কারকগণ প্রচার করেন, কিছু স্বার্থপর মানুষ ধর্মশাস্ত্রের অপব্যাখ্যা করে সমাজে কুপ্রথার প্রচলন করেছে। সতীদাহ প্রথাবিরোধী আন্দোলন গোড়া থেকেই ছিল শাস্ত্রনির্ভর। তাঁরা বিভিন্ন প্রথার নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতার দিকগুলি তুলে ধরার বদলে ওই প্রথাগুলি শাস্ত্রসম্মত কি না, তাতে বেশি জোর দিয়েছিলেন।

(গ) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ কেবল "সিপাহি বিদ্রোহ ছিল" তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
➭ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক ও মতবৈষম্য রয়েছে। একপক্ষের মতে, এটি 'সিপাহি বিদ্রোহ”। অপরপক্ষ বলেন, এটি সমগ্র ভারতবাসীর আন্দোলন বা ‘জাতীয় আন্দোলন'। তা ছাড়াও অনেকে এই বিদ্রোহকে 'ভারতের প্রথম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, ‘কৃষক বিদ্রোহ', 'সামন্ততান্ত্রিক প্রতিবাদ' ইত্যাদি বলেছেন।

▢ সিপাহি বিদ্রোহ : ইংরেজ ঐতিহাসিক চার্লস রেইকস, হোম্‌স এবং ভারতীয় ঐতিহাসিক কিশোরীচাঁদ মিত্র, স্যার সৈয়দ আহমদ খান, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দাদাভাই নৌরজি প্রমুখ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে সিপাহিদের বিদ্রোহ বলেই মনে করেন। এই বক্তব্যের পিছনে তাঁদের যুক্তি হল-
সিপাহিরাই এই বিদ্রোহ করেছিল, এই বিদ্রোহকে ভারতীয় জাতীয় চেতনা সৃষ্টির অগ্রদূত শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণি সমর্থন করেনি। সুতরাং এটি নিছক সিপাহি বিদ্ৰোহ ছাড়া অন্য কিছুই নয়।

▢ জাতীয় আন্দোলন : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে অনেকে জাতীয় আন্দোলন বলে অভিহিত করেছেন। সমকালীন ইংরেজ ঐতিহাসিক নর্টন, ম্যালেসন, ডাফ, জন কে প্রমুখ এই বিদ্রোহকে ‘জাতীয় বিদ্রোহ” বলে মন্তব্য করেন। কারণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করেছিল। বিদ্রোহীরা দিল্লিতে বাহাদুর শাহকে ‘ভারত সম্রাট' বলে ঘোষণা করে কোম্পানির কর্তৃত্ব উচ্ছেদ ঘোষণার দ্বারা একটি নতুন শাসনব্যবস্থা গঠনের চেষ্টা করেছিল। তাই একে জাতীয় বিদ্রোহ বলাই যুক্তিযুক্ত। কার্ল মার্কস বলেছিলেন, যাকে সেনা বিদ্রোহ বলা হচ্ছে তা আসলে ‘জাতীয় বিদ্রোহ’। স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনায়ক দামোদর সাভারকর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে 'ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ' বলে অভিহিত করেছেন। অনেকে এই বিদ্রোহকে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সামন্ততন্ত্রের প্রতিবাদ হিসেবে দেখেছেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার একে ‘সামন্ততন্ত্রের মৃত্যুকালীন আর্তনাদ' বলে চিহ্নিত করেছেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিদ্রোহীদের মধ্যে দেশপ্রেমের কোনো অভাব ছিল না এবং এই আন্দোলনে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করেছিল।

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন