ভারতের ইতিহাস : Madhya Jug (মধ্যযুগীয় ভারত 1206-1707) স্টাডি নোটস
১. তরাইনের প্রথম যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে কাদের মধ্যে হয়েছিল?
➛ তরাইনের প্রথম যুদ্ধ ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহানের সঙ্গে মহম্মদ ঘুরির হয়েছিল।
২. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে কাদের মধ্যে হয়েছিল?
➛ তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহানের সঙ্গে মহম্মদ ঘুরির হয়েছিল।
৩. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে কে জয়লাভ করেন ও কে পরাজিত হয়?
➛ তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে মহম্মদ ঘুরি জয় লাভ করে ও তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহান পরাজিত হয়।
৪. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব কী?
➛ তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহান পরাজিত হওয়ায় ভারতে হিন্দু আধিপত্যের অবসান এবং ভারতীয় সামরিক শক্তির দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। ভারতে মুসলিম শাসনের সূচনা ঘটে।
৫. সুলতান মামুদ কে? তিনি কতবার ভারত আক্রমণ করেন?
➛ সুলতান মামুদ ছিলেন আফগানিস্থানের অন্তর্গত গজনীর সুলতান। তিনি ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন।
৬. মামেলুক সুলতান কাদের বলা হত?
➛ আরবি ‘মামেলুক' কথাটির অর্থ হল ‘ক্রীতদাস'। দিল্লীর সুলতানি শাসনের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আইবক প্রথম জীবনে ক্রীতদাস ছিলেন। পরবর্তী ১২৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সিংহাসনারোহণকারী সুলতান ইলতুৎমিস, বলবন প্রমুখও প্রথম জীবনে ক্রীতদাস ছিলেন। এরজন্য ঐতিহাসিক রিজভি প্রমুখ কুতুবউদ্দিন প্রতিষ্ঠিত রাজবংশকে মামেলুক বংশ বলেছেন। এই বংশের সুলতানদের মামেলুক সুলতান বলা হয়।
৭. দাস বংশ কে প্রতিষ্ঠা করেন? এই বংশের নাম দাস বংশ হল কেন?
➛ দাস বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবক। কুতুবউদ্দিন আইবক ও তাঁর পরবর্তী দুই বিখ্যাত শাসক ইলতুৎমিস ও গিয়াসউদ্দিন বলবন প্রথম জীবনে ক্রীতদাস ছিলেন। তাই এই বংশের নাম দাস বংশ।
৮. কুতুব মিনারের নির্মাণ কার আমলে শুরু হয় ও কার আমলে শেষ হয়?
➛ সুলতান কুতুবউদ্দিনের আমলে কুতুব মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ও সুলতান ইলতুৎমিসের আমলে কুতুব মিনারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
৯.‘নব মুসলমান’কারা?
➛ ১২৯২ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গল বাহিনী ভারত আক্রমণ করলে সুলতান জালালউদ্দিন খলজি তাদের পরাজিত করেন। এই সময় হলাগুর খানের খানের নেতৃত্বে কয়েক হাজার মোঙ্গল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। সুলতানের অনুমতি অনুসারে দিল্লীর উপকণ্ঠে বসবাস করা এই মোঙ্গলদের ‘নব মুসলমান' বলা হয়।
১০. ‘চল্লিশ’ চক্র কী? অথবা, ‘বন্দে গান-ই-চাহেলগানি' বা ‘তুর্কান-ই-চাহেলগানি’ বলতে কী বোঝ? অথবা, কোন সুলতান ‘বন্দেগান-ই-চাহেলগানি' গঠন করেন? কোন সুলতান এটি ভেঙে দেন?
➛ সুলতান ইলতুৎমিস শাসনকার্যে সহায়তা লাভের উদ্দেশ্যে অভিজ্ঞ চল্লিশ জন তুর্কি অভিজাতকে নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এটি ‘বন্দেগান-ই-চাহেলগানি’ বা ‘তুর্কান- ই-চাহেলগানি’ বা ‘চল্লিশের চক্র' নামে পরিচিত। চল্লিশ চক্রের অন্যতম সদস্য বলবন সিংহাসনে আরোহণের পর এই চক্র ভেঙে দেন।
১১. দিল্লির প্রথম সুলতান কে ছিলেন? কত খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজেকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন।
➛ দিল্লীর প্রথম সুলতান ছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবক। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দিন আইবক নিজেকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন।
১২. সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কাকে বলা হয়? ‘লাখবক্স' নামে কে পরিচিত?
➛ সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হলেন সুলতান ইলতুৎমিস। কুতুবউদ্দিন আইবক ‘লাখবক্স' নামে পরিচিত।
১৩. দাস বংশের শেষ সুলতানের নাম কী? দাস বংশের পর দিল্লিতে কোন বংশ-রাজত্ব শুরু করে?
➛ দাস বংশের শেষ সুলতান এর নাম কায়ুরমার্স। দাস বংশের পর দিল্লীতে খলজি বংশ রাজত্ব শুরু করে।
১৪. কুতুবউদ্দিনের মৃত্যুর পর কে দিল্লির সুলতানি সিংহাসনে বসেন? সুলতানি সাম্রাজ্যের রাজধানী লাহোর থেকে দিল্লিতে কে হস্তান্তর করেন?
➛ কুতুবউদ্দিনের মৃত্যুর পর আরামশাহ দিল্লীর সুলতানি সিংহাসনে বসেন। সুলতানি সাম্রাজ্যের রাজধানী লাহোর থেকে দিল্লীতে হস্তান্তর করেন ইলতুৎমিস।
১৫. দিল্লি সুলতানির একমাত্র মহিলা শাসকের নাম কী? তিনি কত খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে বসেন?
➛ দিল্লী সুলতানির একমাত্র মহিলা সুলতানের নাম সুলতানা রাজিয়া। তিনি ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন।
১৬. তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে? এই বংশের শেষ সুলতানের নাম কী?
➛ তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা গিয়াসউদ্দিন তুঘলক। এই বংশের শেষ সুলতান নাসিরউদ্দিন মামুদ শাহ।
১৭. কে দিল্লিতে লোদি বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন? এই বংশের শেষ সুলতান কে ছিলেন?
➛ বহলুল লোদি ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দের দিল্লীতে লোদি বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এই বংশের শেষ সুলতান ছিলেন ইব্রাহিম লোদি।
১৮. সৈয়দ বংশের প্রথম ও শেষ সুলতানের নাম লেখো।
➛ সৈয়দ বংশের প্রথম সুলতান ছিলেন খিজির খাঁ এবং শেষ সুলতান ছিলেন ইব্রাহিম লোদি।
১৯. তৈমুঙ্গ কে ছিলেন? তিনি কত খ্রিস্টাব্দে ভারত আক্রমণ করেন?
➛ তৈমুর লঙ ছিলেন সমরখন্দের অধিপতি। তিনি ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত আক্রমণ করেন।
২০. দার-উল-সাফা কী? এর প্রতিষ্ঠাতা কে?
➛ দরিদ্রদের চিকিৎসার জন্য যে দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করা হয়, তাকে ‘দার-উল-সাফা' বলা হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ফিরোজ শাহ তুঘলক।
২১. কোন সুলতান প্রথম দাক্ষিণাত্য অভিযান করেন? এই অভিযানে তার সেনাপতি কে ছিলেন?
➛ সুলতান আলাউদ্দিন খলজি প্রথম দাক্ষিণাত্য অভিযান করেন। এই অভিযানে তার সেনাপতি ছিলেন মালিক কাফুর।
২২. 'দাগ' ও ‘হুলিয়াত প্রথা কে প্রবর্তন করেন?
➛ ‘দাগ' ও ‘হুলিয়া’ প্রথা প্রবর্তন করেন সুলতান আলাউদ্দিন খলজি।
২৩. খলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে? এই বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান কে?
➛ খলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন জালালউদ্দিন খলজি। এই বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান আলাউদ্দিন খলজি।
২৪. আলাউদ্দিন খলজির পূর্ব নাম কী ছিল? কোন সুলতান ‘বাজারদর’ নিয়ন্ত্রণ করেন?
➛ আলাউদ্দিন খলজির পূর্বনাম ছিল ‘আলি গুরসাম্প'। আলাউদ্দিন খলজি বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করেন।
২৫. মহম্মদ বিন তুঘলকের পূর্ব নাম কী ছিল? ‘আমির-ই-কোহি’ নামে কৃষি বিভাগ কে প্রতিষ্ঠা করেন?
➛ মহম্মদ বিন তুঘলক-এর পূর্ব নাম ছিল জুনা খাঁ। ‘আমির-ই-কোহি' নামে কৃষি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন মহম্মদ বিন তুঘলক।
২৬. ইবন বতুতা কার শাসনকালে ভারতে আসেন? ‘কিতাব-উল-রাহেলা' গ্রন্থটি কার রচনা?
➛ ইবন বতুতা মহম্মদ বিন তুঘলক-এর শাসনকালে ভারতে আসেন। ‘কিতাব-উল-রাহেলা” গ্রন্থটি রচনা করেন ইবন বতুতা।
২৭. খলজি বংশের শেষ সুলতান কে ছিলেন? কোন সুলতান প্রথম রেশন ব্যবস্থা প্রচলন করেন?
➛ খলজি বংশের শেষ সুলতান ছিলেন কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি। প্রথম রেশন ব্যবস্থার প্রচলন করেন সুলতান আলাউদ্দিন খলজি।
২৮. দেওয়ান-ই-খয়রাত কে প্রতিষ্ঠা করেন? এটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল?
➛ ‘দেওয়ান-ই-খয়রাত’প্রতিষ্ঠা করেন সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক। এটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল দুস্থ ও দরিদ্র প্রজাদের কন্যার বিবাহে ও বিধবাদের সাহায্য দান করা।
২৯. দার-উল-সাফা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?
➛ ফিরোজ শাহ তুঘলক শুধুমাত্র দিল্লীতেই নয় তাঁর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে দার-উল-সাফা নির্মাণ করেন, যেগুলিতে সরকারি ব্যয়ে বিখ্যাত চিকিৎসকদের নিয়োগ করা হত। দরিদ্র প্রজাদের সুচিকিৎসাই ছিল এগুলির প্রধান উদ্দেশ্য।
৩০. ‘দাগ’-ও ‘হুলিয়া’ ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
➛ সেনাবাহিনীর দুর্নীতি বন্ধ করার উদ্দেশ্যে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি অশ্ব চিহ্নিতকরণের জন্য ‘দাগ’এবং সৈন্যের দৈহিক বর্ণনা লিপিবদ্ধ করার জন্য ‘হুলিয়া’ পদ্ধতির প্রবর্তন করেছিলেন।
৩১. আমির খসরু কে ছিলেন? তাঁকে কী নামে অভিহিত করা হয়?
➛ আমির খসরু ছিলেন সুলতানি যুগের একজন বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক। তাঁকে ‘ভারতের তোতাপাখি' বলে অভিহিত করা হয়।
৩২. আলাউদ্দিন খলজির দেবগিরি অভিযানের কারণ কী ছিল?
➛ আলাউদ্দিন খলজি সুলতান হওয়ার পূর্বে ১২৯২ খ্রিস্টাব্দে ও সুলতান হওয়ার পর ১৩০৬ খ্রিস্টাব্দে দেবগিরি অভিযান শুরু করেন। প্রথম অভিযানের ক্ষেত্রে দেবগিরির ধন-সম্পদ তাঁকে প্রলুব্ধ করেছিল। আর দ্বিতীয় অভিযানের ক্ষেত্রে সাম্রাজ্য বিস্তার ও দেবগিরির যাদব নরপতিদের শাস্তিদান ছিল তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য।
৩৩. ইক্তা প্রথা কে প্রবর্তন করেন কেন?
➛ ইলতুৎমিস ইক্তা প্রথার প্রবর্তন করেন। বিজিত অঞ্চলগুলির উপর কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করতে ও ভারতীয় সমস্ত প্রথা উচ্ছেদ করতে তিনি এই প্রথা প্রবর্তন করেন।
৩৪. গিয়াসউদ্দিন বলবনের পূর্ব নাম কী ছিল? তিনি কবে সিংহাসনে বসেন?
➛ গিয়াসউদ্দিন বলবনের পূর্ব নাম ছিল উলুখ খাঁ। তিনি ১৩৬৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন।
৩৫. মহম্মদ বিন তুঘলক এর নতুন মুদ্রা প্রবর্তন করেন কেন? এর পরিণতি কী হয়েছিল?
➛ মহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনকালে পৃথিবী জুড়ে রুপোর সংকট দেখা দিলে তিনি নতুন মুদ্ৰা হিসেবে তামার নোট প্রচলন করেন। মহম্মদ বিন তুঘলক প্রচলিত তামার নোটে জালরোধী বিশেষ কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা এই তামার নোট গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। ফলে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে থাকে। বাধ্য হয়ে তিনি বাজার থেকে জালনোটসহ সমস্ত তামার মুদ্রা তুলে নেন এবং পরিবর্তে রুপোর মুদ্রা প্রদান করতে বাধ্য হন, ফলে রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে।
৩৬. খলজি বিপ্লব বলতে কী বোঝ?
➛ ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি ইলবারি তুর্কি শাসক কায়কোবাদ ও কায়ুরমার্সকে হত্যা করে দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। জালালউদ্দিন খলজির এই সিংহাসন লাভ ইতিহাসে খলজি বিপ্লব নামে পরিচিত।
৩৭. ‘আমির-ই-কোহি’ কাকে বলা হত? তাঁর উদ্দেশ্য কী ছিল?
➛ সুলতান আলাউদ্দিন খলজির শাসনকালে ভূমি রাজস্ব সংক্রান্ত মন্ত্রীকে ‘আমির-হি-কোহি বলা হত। ‘আমির-ই-কোহি'র কাজ ছিল সাম্রাজ্যের ভূমি রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয় ও মুকাদ্দম প্রমুখ কর্মচারীদের তত্ত্বাবধান করা।
৩৮. কোন সুলতান তাঁর মুদ্রায় নিজেকে ‘দ্বিতীয় আলেকজান্ডার' বলে অভিহিত করেছিলেন কেন?
➛ খলজি বংশের শেষ সুলতান আলাউদ্দিন খলজি তাঁর মুদ্রায় নিজেকে সিকন্দর-ই-সানি বা দ্বিতীয় আলেকজান্ডার নামে অভিহিত করেন। আলেকজান্ডারের মতো সমগ্র ভারত বিজয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন বলে এর উপাধি তাঁর মুদ্রার দ্বারা প্রচার করেন।
৩৯.‘পাইবস' ও ‘সিজদা' কী?
➛ দিল্লীর সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন পারসিক রীতি অনুসারে দরবারে ‘পাইবস ও সিজদা নামে দুটি নতুন প্রথার প্রচলন করেন। ‘পাইবস' শব্দের অর্থ সম্রাটের পদযুগল চুম্বন। ‘সিজদা’ শব্দের অর্থ হল সম্রাটের সামনে নতজানু হওয়া।
৪০. কার রাজত্বকালে তৈমুর লঙ ভারত আক্রমণ করেন? তাঁর ভারত আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
➛ তুঘলক বংশের শেষ সুলতান নাসিরউদ্দিন মামুদ শাহের রাজত্বকালে তৈমুর লঙ ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত আক্রমণ করেন। তাঁর ভারত আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ধন সম্পদ লুঠ করা।
৪১. ভারতের সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের দুটি কারণ উল্লেখ কর?
➛ ভারতের সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের দুটি কারণ হল- [1] জনসমর্থনের অভাব। [2] হিন্দুদের আনুগত্যের অভাব।
৪২. আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির উদ্দেশ্য কী ছিল?
➛ আলাউদ্দিন কী উদ্দেশ্যে বাজার দর বা মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতি চালু করেন তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক আছে। এবিষয়ে বিভিন্ন পন্ডিত যে উদ্দেশ্যগুলির কথা বলেন সেগুলি হল— [1] সুলভে তাঁর বিশাল সেনাদল ও প্রশাসনের ব্যয়ভার নির্বাহ করা, [2] তৈমুর লঙের হত্যাকান্ড ও লুণ্ঠনের ফলে সৃষ্ট ভারতে নৈরাজ্য ও অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলা করা, [3] দেশের দরিদ্র প্রজাদের ব্যয়নির্বাহ করা সুবিধা করে দেওয়া, [4] হিন্দু ব্যবসায়ীদের উপর চাপ সৃষ্টি করা প্রভৃতি।
৪৩. তৈমুর লঙ এর ভারত আক্রমণের ফল কী হয়েছিল?
➛ তৈমুর লঙ-এর ভারত আক্রমণের ফলে— [1] বাবরের ভারত আক্রমণের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। [2] দিল্লীর সুলতানি সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল। [3] বহু সম্পদ অপচয়ের ফলে দিল্লীর সুলতানি সাম্রাজ্যের আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছিল।
৪৪. মহিলা সুলতানা রাজিয়া কে ছিলেন?
➛ ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসে একমাত্র মহিলা শাসক ছিলেন সুলতানা রাজিয়া। তিনি ছিলেন ইলতুৎমিসের কন্যা। ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর মহিলা সুলতানা রাজিয়া দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন।
৪৫. মেওয়াটি দস্যু কারা? কে তাঁদের দমন করেন?
➛ সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের শাসনকালে দিল্লীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে একটি রাজপুত উপজাতি গোষ্ঠী দস্যুবৃত্তির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সহ জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। এই উপজাতি গোষ্ঠীর দস্যুরা ‘মেওয়াটি দস্যু' নামে পরিচিত। গিয়াসউদ্দিন বলবন মেওয়াটি দস্যুদের দমন করেন।
৪৬. খলজি বিপ্লবের গুরুত্ব কী?
➛ দাস বংশের অবসান ঘটিয়ে ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজির সিংহাসন লাভের ঘটনা ‘খলজি বিপ্লব' নামে পরিচিত। খলজি বিপ্লবের প্রধান গুরুত্ব ছিল— [1] এই বিপ্লবের দ্বারা দিল্লী সুলতানির বংশানুক্রমিক অধিকার তত্ত্ব বাতিল হয়ে যায়। [2] শক্তির দ্বারা সিংহাসন লাভের দৃষ্টান্ত প্রমাণিত হয়। [3] ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গেই জালালউদ্দিন জনগণের ভয়ে দিল্লীতে প্রবেশ করেননি। এতে রাজনীতিতে জনগণের ইচ্ছার গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।
৪৭. মহম্মদ বিন তুঘলকের সংস্কার গুলির ব্যর্থতার দুটি কারণ লেখ।
➛ মহম্মদ বিন তুঘলকের সংস্কারগুলির ব্যর্থতার দুটি কারণ হল- [1] জনসমর্থনের অভাব ও [2] প্রতীক মুদ্রা প্রচলন ব্যর্থতায় রূপান্তর।
৪৮. কে, কাকে ‘সুলতানি যুগের আকবর' বলেছেন এবং কেন?
➛ ঐতিহাসিক হেনরি হেলিয়ট ফিরোজ শাহ তুঘলককে সুলতানি যুগের আকবর বলেছেন। সুলতানি শাসন কালে ফিরোজ শাহ তুঘলক ছিলেন মুঘল শাসক আকবরের মতো উদার, ধর্মনিষ্ঠ, দয়ালু ও প্রজাকল্যাণকামী শাসক। তাই তাঁকে ‘সুলতানি যুগের আকবর’ বলে উল্লেখ করেছেন।
৪৯. মালিক কাফুর কে ছিলেন?
➛ আলাউদ্দিন খলজির বিশ্বস্ত সেনাপতি ছিলেন মালিক কাফুর। আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য বিজয়ের স্বপ্নকে তিনিই বাস্তবে পরিণত করেছিলেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে দক্ষিণ ভারতের হিন্দু রাজ্যগুলি বিশেষ করে দেবগিরি, হোয়সল, বরঙ্গল, দ্বারসমুদ্র ও পান্ডবরাজ্য আলাউদ্দিনের সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে বাধ্য হয়। দাক্ষিণাত্যের বিশাল এলাকা দখল করে তিনি খলজি সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন।
৫০. মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী পরিবর্তনের কারণ কী?
অথবা, মহম্মদ বিন তুঘলক তাঁর রাজধানী দৌলতাবাদে স্থানান্তরিত করেছিলেন কেন?
➛ মহম্মদ বিন তুঘলক দিল্লী থেকে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। কারণ— [1] দেবগিরি সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ছিল। [2] দেবগিরিতে দিল্লীর মতো মোঙ্গল আক্রমণের ভয় ছিল না।
৫১. ‘ইক্তা প্রথা' কে প্রবর্তন করেন কেন?
➛ ‘ইক্তা প্রথা প্রবর্তন করেন ইলতুৎমিস। সুলতান ইলতুৎমিস তাঁর সাম্রাজ্যের সর্বত্র নিয়মিত রাজস্ব আদায়, আইন প্রতিষ্ঠা, শান্তি- শৃঙ্খলা রক্ষা, সুলতানকে সৈন্য সরবরাহ প্রভৃতি প্রয়োজনে ইক্তা প্রথা প্রবর্তন করেন।
৫২. ‘শাহানা-ই-মান্ডি’ কী?
➛ সুলতান আলাউদ্দিন খলজি তাঁর বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে কার্যকরী করতে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার পরিদর্শনের জন্য এক শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী নিয়োগ করেন। এই কর্মচারীগণ ‘শাহানা-ই-মান্ডি' নামে পরিচিত।
৫৩. ‘জিজিয়া’-র অর্থ কী?
➛ সুলতানি যুগে মুসলমান শাসকরা অমুসলিম প্রজাবর্গকে ‘জিম্মি' নামে অভিহিত করে তাদের উপর যে ধর্মকর আরোপ করত তা ‘জিজিয়া' নামে পরিচিত ছিল।
৫৪. দেওয়ান-ই-রিসায়াৎ কী?
➛ দিল্লীর সুলতান আলাউদ্দিন খলজি (১২৯৬-১৩১৬ খ্রি.) বাজার দর বা মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করার উদ্দেশ্যে বদাউন গেটের কাছে ‘সেরা-ই-আদল' নামে বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। এই বাজারের ব্যবসায়ীদের নামধাম নথিভুক্ত করত যে প্রতিষ্ঠান, তার নাম ছিল ‘দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ'।
৫৫. মহম্মদ বিন তুঘলকের প্রধান সংস্কার পরিকল্পনা গুলি কী ছিল?
➛ সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক এর প্রধান সংস্কার পরিকল্পনাগুলি ছিল-[1] দিল্লী থেকে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর। [2] খোরাসান ও কারাজল অভিযানের পরিকল্পনা। [3] মুদ্রা সংস্কার ও প্রতীকী তাম্রমুদ্রার প্রবর্তন।
৫৬. মহম্মদ বিন তুঘলকের তাম্র মুদ্রা প্রচলনের চেষ্টা ব্যর্থ হয় কেন?
➛ মহম্মদ বিন তুঘলকের তাম্রমুদ্রা প্রচলনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কারণ- [1] তাম্রমুদ্রা যাতে জাল না হয় সেদিকে সুলতান কোনো সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ফলে জাল মুদ্রায় দেশের সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য ছেয়ে যায়। [2] সাধারণ লোক সহ বিদেশী বণিকরা এই জাল মুদ্রা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষিতেই স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়ে তাম্র মুদ্রা রাজকোষে ফিরিয়ে নেন।
৫৭. মহম্মদ ঘুরি কে ছিলেন?
➛ মহম্মদ ঘুরি ছিলেন গজনী ও ঘুর রাজ্যের অধিপতি। গিয়াসউদ্দিন ঘুরির ভ্রাতা ও সেনাপতি। মহম্মদ ঘুরিই ছিলেন ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা।
৫৮. আলবিরুণী কে ছিলেন? তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম লেখো।
➛ আলবেরুণী ছিলেন দিল্লীর সুলতানি যুগের ইতিহাসে একজন বিদেশী পর্যটক। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম হল – ‘তকহক-ই-হিন্দ' বা ‘কিতাব-উল-হিন্দ'।
৫৯. আলাউদ্দিন খলজি দাক্ষিণাত্যের যে চারটি রাজ্য জয় করেন সেগুলির নাম কী?
➛ আলাউদ্দিন খলজি দক্ষিণ ভারতের পাঁচটি সামরিক অভিযান চালান। এই অভিযানে তিনি যে চারটি রাজ্য জয় করেন তা হল- ① দেবগিরি, ② বরঙ্গল, ③ পান্ড রাজ্য ও ④ দ্বারসমুদ্র।
৬০. বাগদাদের খলিফার কাছ থেকে ‘সুলতান- ই -আজম' উপাধি কে কবে লাভ করেছিল?
➛ দিল্লীর সুলতান ইলতুৎমিস ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদের খলিফার কাছ থেকে ‘সুলতান-ই-আজম' উপাধি লাভ করেছিল।
৬১. রাজিয়া একজন নারী হলেও তাঁকে ‘সুলতান' উপাধি কেন দেওয়া হয় এবং ইতিহাসে সুলতান রাজিয়া সুলতানা রাজিয়া এই নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে, তাহলে কোন কথাটি গ্রাহ্য এবং কেন?
➛ রাজিয়া একজন নারী হলেও তাঁকে ‘সুলতান’ উপাধি দেওয়া হয়। কারণ তিনি নিজেই ছিলেন সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। ইলতুৎমিসের কন্যা ছিলেন সুলতান রাজিয়া। সাধারণ্যে প্রচলিত ‘সুলতানা’ রাজিয়া কথাটি ভুল। আরবি ব্যাকরণ অনুসারে ‘সুলতানা’ বলতে বোঝায় সুলতানের স্ত্রীকে। কিন্তু রাজিয়া কোনো সুলতানের স্ত্রী ছিলেন না। তিনি নিজেই ছিলেন সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তাই তাঁর মুদ্রায় তিনি নিজেকে ‘সুলতান' বলে অভিহিত করেন।
৬২. ফিরোজ শাহ তুঘলকের দুটি জনহিতকর কার্যাবলি লেখো।
➛ ফিরোজ শাহ তুঘলকের দুটি জনহিতকর কার্যাবলি হল— [1] দারিদ্রদের চিকিৎসার জন্য দাতব্য চিকিৎসালয় ‘দার-উল-সাফা’ স্থাপন করা। [2] ইসলামীয় শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি বহু বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
৬৩. কে কোন উদ্দেশ্যে নাগালাপুরা বা নাগলপুর নগর প্রতিষ্ঠা করেন?
➛ বিজয়নগরের শাসক কৃষ্ণদেব রায় তাঁর মাতা নাগালা দেবীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে নাগলাপুরা নগর প্রতিষ্ঠা করেন।
৬৪. কে কবে বিজয়নগর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন?
➛ ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম হরিহর ও প্রথম বুক্ক বিজয়নগর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
৬৫. অষ্ট দিগগজ কারা?
➛ বিজয়নগরের শ্রেষ্ঠ রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের রাজসভা অলংকৃত করতেন আটজন পণ্ডিত ব্যক্তি এদের অষ্ট দিগগজ বলা হত।
৬৬. পারস্য থেকে কোন পর্যটক বিজয়নগরে আগমন করেন? তখন বিজয় নগরের রাজা কে ছিলেন?
➛ পারস্য থেকে আব্দুর রাজ্জাক বিজয়নগরে আগমন করেন। তখন বিজয়নগরের রাজা ছিলেন দ্বিতীয় দেবরায়।
৬৭. বিজয়নগর রাজ্যের দুজন প্রসিদ্ধ বেদের টীকাকারের নাম লেখো।
➛ বিজয়নগর রাজ্যের দুজন প্রসিদ্ধ বেদের টীকাকার হলেন— মাধবাচার্য বিদ্যার্য ও সায়নাচার্য।
৬৮. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ শাসক কে ছিলেন? বিজয়নগর সাম্রাজ্য কার আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়?
➛ বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন কৃষ্ণদেব রায়। বিজয়নগর সাম্রাজ্য দিল্লির সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়।
৬৯. সঙ্গম বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন? তাঁর উপাধি কী ছিল?
➛ সঙ্গম বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন দ্বিতীয় দেবরায় (১৪২২-৪৬ খ্রিস্টাব্দ)। তাঁর উপাধি ছিল গজবেতকর।
৭০. তালিকোটার যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়?
➛ ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে আলিয়া রাম রায়ের নেতৃত্বাধীন বিজয়নগর সাম্রাজ্য এবং আহম্মদ নগর বিজাপুর, গোলকুন্ডা, বেরার ও বিদর রাজ্যের সম্মিলিত বাহিনীর মধ্যে তালিকোটার সংঘটিত হয়।
৭১. সঙ্গম বংশের এরূপ নামকরণের কারণ কী?
➛ বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হরিহর ও বুক্কের পিতার নাম ছিল সঙ্গম। তাঁর নামানুসারে এই রাজবংশের নাম হয় সঙ্গম বংশ।
৭২. দক্ষিণী মুসলমান কাদের বলা হত?
➛ বাহমনী সাম্রাজ্যের ধর্মান্তরিত মুসলমান এবং দক্ষিণ ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বিদেশি মুসলমানদের দক্ষিণী মুসলমান বলা হত।
৭৩. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠায় কোন দুজন বিখ্যাত ব্যক্তি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে?
➛ মাধব বিদ্যারণ্য ও সায়নাচার্য নামক ভ্রাতাদ্বয় বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
৭৪. কোন ইতালীয় পর্যটক কত খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগর সাম্রাজ্যে এসেছিলেন?
➛ ১৪২০ খ্রিস্টাব্দে ইতালীয় পর্যটক নিকোলো কন্টি বিজয়নগর সাম্রাজ্যে এসেছিলেন।
৭৫. বিজয়নগরের শাসকদের দ্বারা নির্মিত দুটি মন্দিরের নাম লেখো।
➛ বিজয়নগরের শাসকদের দ্বারা নির্মিত দুটি মন্দিরের নাম হল- বিঠল স্বামী মন্দির ও হাজারা রাম মন্দির।
৭৬. প্যাগোডা কী?
➛ বিজয়নগর রাজ্যের সোনার মুদ্রা প্যাগোডা নামে পরিচিত।
৭৭. বাহমনী সাম্রাজ্য কে কত খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন?
➛ ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন বাহমনী শাহ বাহমনী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
৭৮. বাহমনী রাজ্যের এরূপ নামকরণের কারণ কী?
➛ অভিজাত ও ওমরাহদের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে হাসান গঙ্গু আলাউদ্দিন বাহমন শাহ নাম নিয়ে সিংহাসনে বসেন। তিনি নিজেকে ইরানের পৌরাণিক বীর বাহমনের বংশধর হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তাঁর এই নাম থেকেই এই রাজ্যের এরূপ নামকরণ।
৭৯. বাহমনী সাম্রাজ্যের শেষ শাসকের নাম কী? তিনি কত বছর রাজত্ব করেন?
➛ বাহমনী সাম্রাজ্যের শেষ শাসকের নাম কলিমউল্লাহ শাহ। তিনি ১৫২৪ থেকে ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৪ বছর রাজত্ব করেন হয়।
৮০. কোন নদীর তীরে বিজয়নগর সাম্রাজ্য অবস্থিত ছিল? বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সর্বাধিক আমদানিকৃত দ্রব্য কী?
➛ তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে বিজয়নগর সাম্রাজ্য অবস্থিত ছিল। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সর্বাধিক আমদানিকৃত দ্রব্য হল অশ্ব (ঘোড়া)।
৮১. বাহমনী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা কীভাবে হয়েছিল?
➛ দিল্লির সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে দক্ষিণ ভারতের দেবগিরির মুসলমান অভিজাতরা বিদ্রোহী হয়ে হাসান গঙ্গু নামক আমিরকে শাসক হিসেবে নির্বাচিত করে। ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে হাসান গঙ্গু আলাউদ্দিন বাহমন শাহ নাম ধারণ করে বাহমনী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।
৮২. কে কাকে ‘অন্ধ্র কবিতার পিতামহ' উপাধি প্রদান করেন?
➛ বিজয়নগরের রাজা কৃষ্ণদেব রায় অল্লুসনি পোদ্দানকে ‘অন্ধ্র কবিতার পিতামহ' উপাধি প্রদান করেন।
৮৩. মামুদ গাওয়ান কে ছিলেন?
➛ তৃতীয় মহম্মদ শাহের আমলে মামুদ গাওয়ান ছিলেন বাহমনী সাম্রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল খাজা মামুদ গিলানি। তিনি ছিলেন সুদক্ষ যোদ্ধা, নিপুণ কূটনীতিবিদ ও যোগ্য নেতা। ১৪৬১-১৪৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বে বাহমনী সাম্রাজ্য উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছায়। তাঁর মৃত্যুর পর এই সাম্রাজ্যের অধঃপতন শুরু হয়।
৮৪. বাংলার কোন সুলতান বাংলা ভাষায় মহাভারত অনুবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন? বাহমনী সাম্রাজ্যের রাজধানী কোথায় ছিল?
➛ সুলতান হোসেন শাহ বাংলায় মহাভারত অনুবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। বাহমনী সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল গুলবর্গা। পরবর্তীকালে বাহমনী সুলতান আহমেদ শাহ তাঁর রাজধানী গুলবর্গা থেকে বিদরে স্থানান্তরিত করেন।
৮৫. স্থানিক নামে কারা পরিচিত ছিল?
➛ বিজয়নগর সাম্রাজ্যে মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত কর্মীরা স্থানিক নামে পরিচিত ছিল।
৮৬. বুক্কের মৃত্যুর পর কে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন? তিনি কী উপাধি গ্রহণ করেন?
➛ বুক্কের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় হরিহর (১৩৭৭-১৪০৬ খ্রিস্টাব্দ) বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ‘মহারাজাধিরাজ' ও ‘রাজা পরমেশ্বর' উপাধি গ্রহণ করেন।
৮৭. নায়ঙ্কর ব্যবস্থা কী?
➛ বিজয়নগরের অভ্যন্তরীণ সংগঠনের প্রধান ভিত্তি ছিল নায়ঙ্কর ব্যবস্থা। এই প্রথা অনুসারে, ‘নায়ক’নামে ভূস্বামীদের হাতে সাম্রাজ্যের বিশেষ কিছু অংশের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব অর্পণ করা হত। এই ভূস্বামীরা ছিল একাধারে সামরিক নেতা ও স্থানীয় প্রশাসক। পনেরো শতকের শেষভাগ ও ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধে তামিল ভূমিতে এই ব্যবস্থার ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায়।
৮৮. রাজা কৃষ্ণদেব রায় রচিত কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
➛ রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের কয়েকটি গ্রন্থের নাম হল- সংস্কৃত ভাষায় রচিত ‘জাম্ববতী কল্যাণম', ‘রসমঞ্জরী’; তেলেগু ভাষায় রচিত ‘আমুক্তমাল্যদা’।
৮৯. বাহমনী সাম্রাজ্য কোন পাঁচটি রাজ্যে বিভক্ত হয়?
➛ পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষদিকে বাহমনী সাম্রাজ্য যে পাঁচটি রাজ্যে বিভক্ত হয়, সেগুলি হল-আহম্মদনগর, বিজাপুর, গোলকোণ্ডা, বিদর ও বেরার।
৯০. ‘কুট্টাগাই’ কী? ব্যাসদেব কে ছিলেন?
➛ বিজয়নগর সাম্রাজ্যে কৃষিকাজের ইজারা প্রথা কুট্টাগাই নামে পরিচিত ছিল। ব্যাসদেব ছিলেন রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের রাজগুরু।
৯১. হুসেন শাহের দুজন হিন্দু কর্মচারীর নাম লেখো।
➛ হোসেন শাহের দুজন হিন্দু কর্মচারীর নাম— রূপ গোস্বামী ও সনাতন গোস্বামী।
৯২. হোসেন শাহ সাধারণ জনগণের দ্বারা কোন কোন উপাধিতে ভূষিত হন?
➛ হোসেন শাহ সাধারণ জনগণের দ্বারা ‘নৃপতি তিলক’ও ‘জগৎ ভূষণ' উপাধিতে ভূষিত হন।
৯৩. ছোটো সোনা মসজিদ ও বড়ো সোনা মসজিদ কে নির্মাণ করেন?
➛ ছোটো সোনা মসজিদ নির্মাণ করেন হোসেন শাহ এবং বড়ো সোনা মসজিদ নির্মাণ করেন নসরত শাহ।
৯৪. শ্রীরূপ গোস্বামীর লেখা দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
➛ শ্রীরূপ গোস্বামীর লেখা দুটি গ্রন্থের নাম হল ‘ললিত মাধব’ ও ‘দানকোলি কৌমুদী’।
৯৫. পানিপথের প্রথম যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে কাদের মধ্যে হয়েছিল?
➛ ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট বাবর ও ইব্রাহিম লোদির মধ্যে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
৯৬. পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের জয় লাভের কারণ কী?
➛ পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের জয় লাভের কারণ হল— [1] এই যুদ্ধে বাবর কামানের ব্যবহার করেন। [2] বাবরের সৈন্যবাহিনী ছিল দক্ষ ও সুশৃঙ্খল। [3] বাবর যুদ্ধক্ষেত্রে উন্নত ‘তুলঘুমা' ও ‘রুমি' রণকৌশল অবলম্বন করেন।
৯৭. বাংলার বিখ্যাত বারো ভূঁইয়ার মধ্যে দুজনের নাম লেখোরা।
➛ বাংলার বিখ্যাত বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে দু'জনের নাম হল - কেদার রায় ও প্রতাপাদিত্য।
৯৮. ‘বাবর' শব্দের অর্থ কী? ‘হুমায়ুন’ শব্দের অর্থ কী?
➛ ‘বাবর’ শব্দের অর্থ হল বাঘ। ‘হুমায়ুন’ শব্দের অর্থ হলো ভাগ্যবান।
৯৯. খানুয়ার যুদ্ধ কোথায় হয়েছিল? এই যুদ্ধে কে পরাজিত হয়?
➛ ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ খানুয়ার প্রান্তরে বাবর ও রানা সংগ্রাম সিংহের মধ্যে খানুয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে রানা সংগ্রাম সিংহ পরাজিত ও নিহত হন।
১০০. খানুয়ার যুদ্ধের গুরুত্ব লেখো।
➛ গুরুত্ব: খানুয়ার যুদ্ধের গুরুত্বগুলি হল— [1] খানুয়ার যুদ্ধের ফলে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়। [2] ভারতে রাজপুত আধিপত্য স্থাপনের স্বপ্ন চিরতরে বিলুপ্ত হয়। [3] খানুয়ার যুদ্ধের পর মুঘল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু কাবুল থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরিত হয়।
১০১. ঘর্ঘরার যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়?
➛ ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট বাবর এবং বিহারের শের খাঁ, জৌনপুরের মহম্মদ লোদি ও বাংলার নসরত শাহের মধ্যে ঘর্ঘরার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে বাবর জয়ী হয়।
১০২. ঘর্ঘরার যুদ্ধের প্রধান গুরুত্ব কী ছিল?
➛ ঘর্ঘরার যুদ্ধের প্রধান গুরুত্বগুলি হল— [1] এই যুদ্ধের পর বাবরের নেতৃত্বে মুঘল সাম্রাজ্য কাবুল থেকে ঘর্ঘরা এবং হিমালয় থেকে গোয়ালিয়র পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। [2] শের খাঁ, মহম্মদ লোদি প্রমুখ আফগান শাসক বাবরের বশ্যতা স্বীকার করে এবং বাংলার নসরত শাহ বাবরের সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন।
১০৩. চৌসার যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়?
➛ ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে চৌসার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ মুঘল সম্রাট হুমায়ুন এবং বিহারের আফগান শাসক শেরশাহের মধ্যে সংঘটিত হয়।
১০৪. বিল্বগ্রামের যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয়? এই যুদ্ধে কে পরাস্ত হন?
➛ ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন ও শেরশাহের মধ্যে বিল্বগ্রামের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে হুমায়ুন পরাস্ত হন।
১০৫. ‘সড়ক-ই-আজম' কে নির্মাণ করেন? বর্তমানে সড়কটি কি নামে পরিচিত?
➛ সড়ক-ই-আজম নির্মাণ করেন শেরশাহ। বর্তমানে এই সড়কটি গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা জিটি রোড নামে পরিচিত।
১০৬. কবুলিয়ত ও পাট্টা কী?
➛ [1] কবুলিয়ত: শেরশাহের আমলে প্রজারা তাদের জমি থেকে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব নিয়মিত মিটিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে একটি অঙ্গীকারপত্র জমা দিত-একে বলা হয় কবুলিয়ত। [2] পাট্টা: শেরশাহের আমলে জমির পরিমাণ, প্রজার নাম, স্বত্ব ও প্রদেয় রাজস্বের পরিমাণ উল্লেখ করে সরকার প্রজাকে একটি দলিল দিত- একে বলা হয় পাট্টা।
১০৭. শেরশাহকে ‘শের খাঁ’ উপাধি কে প্রদান করেন কেন?
➛ বিহারের শাসক বাহার খাঁ লোহানী শেরশাহকে ‘শের খাঁ’ উপাধি প্রদান করেন। বাহার খাঁ লোহানীর অধীনে কাজ করার সময় শেরশাহ একটি বাঘকে হত্যা করেন। এজন্য তিনি ‘শের খাঁ' উপাধি লাভ করেন।
১০৮. ‘গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড’ কে নির্মাণ করেন? ‘দাম’ কী?
➛‘গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড’ নির্মাণ করেন শেরশাহ। ‘দাম’ হল শেরশাহ প্রবর্তিত একপ্রকার মুদ্রা।
১০৯. শেরশাহের ক্ষুদ্রতম প্রশাসনিক একক কী ছিল? শেরশাহের শাসন ব্যবস্থায় পরগনার উচ্চতম একক কী ছিল?
➛ শেরশাহের ক্ষুদ্রতম প্রশাসনিক একক ছিল পরগনা। শেরশাহের শাসন ব্যবস্থায় পরগনার উচ্চতম একক ছিল সরকার।
১১০. পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে কাদের মধ্যে হয়েছিল?
➛ ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবরের অভিভাবক বৈরাম খাঁ এবং মহম্মদ আদিল শাহের হিন্দু সেনাপতি হিমুর মধ্যে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
১১১. পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব কী?
➛ পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্বগুলি হল— [1] ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ ছিল ভারতের ইতিহাসের এক রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্ণায়ক যুদ্ধ। [2] এই যুদ্ধে আকবর জয় লাভ করে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত ভিত্তি স্থাপন করেন। ফলে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তারের পথ প্রশস্ত হয়। [3] এই যুদ্ধে হিমুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আফগানদের দিল্লী দখলের স্বপ্ন চিরতরে ধূলিসাৎ হয়।
১১২. জোট ও সওয়ার কী?
➛ জাট: 'জাট' কথাটির অর্থ হল পদমর্যাদা। এই পদের ভিত্তিতে একজন মনসবদারের বেতন, পদমর্যাদা ও দায়িত্ব নির্দিষ্ট থাকত। সওয়ার: ‘সওয়ার' শব্দের অর্থ হল মনসবদারির অধীনস্ত অতিরিক্ত অশ্বারোহী সেনার সূচক।
১১৩. হলদিঘাটের যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে কাদের মধ্যে হয়েছিল?
➛ ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে আকবরের সেনাপতি মানসিংহ এবং চিতোরের রানা প্রতাপ সিংহের মধ্যে হলদিঘাটের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
১১৪. রানা প্রতাপ সিংহ কেন স্মরণীয়?
➛ ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে হলদিঘাটের যুদ্ধে মুঘল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রানা প্রতাপ সিংহের বীরত্বপূর্ণ লড়াই ও আত্মত্যাগ তাঁকে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে।
১১৫. দীন-ই-ইলাহী কে প্রবর্তন করেন? এর মূল কথা কী?
➛ মুঘল সম্রাট আকবর দীন-ই-ইলাহী প্রবর্তন করেন। এই ধর্মমতের মূলকথা হল সর্বধর্ম সমন্বয় তথা পরধর্ম সহিঞ্চুতা। আকবর প্রবর্তিত দীন-ই-ইলাহীর মূল কয়েকটি নীতি ছিল। এগুলি হল- নিরামিষ আহার ভক্ষণ করা, দান করা, বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজে যুক্ত থাকা, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার ত্যাগ করা, মদ্য পান ও জুয়া ক্রীড়া থেকে বিরত থাকা প্রভৃতি।
১১৬. মনসবদার কাদের বলা হয়?
➛ মুঘল যুগে আকবরের সময় থেকে দরবারের অভিজাত, সামরিক ও বেসামরিক রাজকর্মচারী এবং জ্ঞানীগুণী পণ্ডিত ব্যক্তিদের সম্মান সূচক উপাধি ‘মনসব’ প্রদান করা হত। মনসব সম্মানপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ মনসবদার নামে পরিচিত ছিলেন।
১১৭. আকবরের রাজসভার নবরত্নের মধ্যে কয়েকজনের নাম লেখো।
➛ আকবরের রাজসভার নবরত্নের মধ্যে কয়েকজন হলো— তানসেন, টোডরমল, আবুল ফজল, মানসিংহ, হাকিম হুকুম প্রমুখ।
১১৮. ইবাদতখানা কী?
➛ ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে আকবর ধর্ম বিষয়ে আলোচনার জন্য ফতেপুর সিক্রিতে ইবাদতখানা স্থাপন করেন।
১১৯. মালিক অম্বর কে ছিলেন? দক্ষিণ ভারতের কোন মহিলা সুলতান আকবরের কাছে পরাস্ত হন?
➛ মালিক অম্বর ছিলেন আহম্মদনগর রাজ্যের মন্ত্রী। দক্ষিণ ভারতের চাঁদ সুলতানা আকবরের কাছে পরাস্ত হন।
১২০. আবুল ফজল কে ছিলেন? তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
➛ আবুল ফজল ছিলেন আকবরের সভাসদ ও ঐতিহাসিক। তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল-‘আইন-ই-আকবরী’ এবং ‘আকবরনামা”।
১২১. ইবাদতখানায় ধর্মালোচনায় অংশগ্রহণকারী দুইজন হিন্দু পণ্ডিতের নাম কী?
➛ ইবাদতখানায় ধর্মালোচনায় অংশগ্রহণকারী দু'জন হিন্দু পণ্ডিতের নাম হল- দেবী ও পুরুষোত্তম।
১২২. কোন ঐতিহাসিক আকবরের আমলের ১৫৬০-৬৪ খ্রিস্টাব্দের সময়কালকে অন্তঃপুরিকা শাসনকাল হিসেবে অভিহিত করেছেন?
➛ ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ আকবরের আমলের ১৫৬০-৬৪ খ্রিস্টাব্দের সময়কালকে অন্তঃপুরিকার শাসনকাল' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
১২৩. ঔরঙ্গজেব কোনো দুটি দক্ষিণী রাজ্য দখল করেন?
➛ ঔরঙ্গজেব দক্ষিণ ভারতের বিজাপুর ও গোলকোণ্ডা রাজ্য দুটি দখল করেন।
১২৪. জাহাঙ্গীর কবে সিংহাসনে আরোহণ করেন? তাঁর পূর্ব নাম কী ছিল?
➛ আকবরের মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র জাহাঙ্গীর ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর পূর্ব নাম ছিল সেলিম।
১২৫. ‘দস্তুর উল আলম’ বলতে কী বোঝায়?
➛ সম্রাট জাহাঙ্গীর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আইন জারি করেন। এগুলিকে একত্রে ‘দস্তুর-উল-আলম' বলা হয় ।
১২৬. নুরজাহান ইতিহাসে বিখ্যাত কেন?
➛ নুরজাহান ছিলেন মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের পত্নী। উচ্চাভিলাষীণী নুরজাহান জাহাঙ্গীরের শাসনকার্যের দুর্বলতার সুযোগে সাম্রাজ্যের সকল ক্ষমতা হস্তগত করেন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়ে নুরজাহান চক্র গঠন করেন।
১২৭. নুরজাহানের পিতা ও মাতার নাম কী?
➛ নুরজাহানের পিতার নাম হল- মির্জা গিয়াস বেগ এবং মাতার নাম হল- আসমাত বেগম।
১২৮. জাহাঙ্গীরের পর কে মুঘল সম্রাট হন? তাজমহল কে নির্মাণ করেন?
➛ জাহাঙ্গীরের পর মুঘল সম্রাট হন শাহজাহান। তিনিই তাজমহল নির্মাণ করেন।
১২৯. শাহজাহানের পর কে দিল্লির সিংহাসন দখল করেন? কত খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়?
➛ শাহজাহানের পর ঔরঙ্গজেব দিল্লির সিংহাসন দখল করেন। ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয়।
১৩০. পুরন্দরের সন্ধি কবে, কাদের মধ্যে হয়?
➛ ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে শিবাজী ও ঔরঙ্গজেবের মধ্যে পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
১৩১. সৎনামি বিদ্রোহের সূচনা কবে ঘটে? এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব কে দেন?
➛ ১৬৭২ খ্রিস্টাব্দে সত্ত্বামি বিদ্রোহের সূচনা ঘটে। গরিবদাস হাড়া এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন।
১৩২.‘নুরজাহান' শব্দের অর্থ কী? তাঁর পূর্ব নাম কী ছিল?
➛ নুরজাহান শব্দের অর্থ হল জগতের আলো। তাঁর পূর্ব নাম ছিল মেহেরউন্নিসা।
১৩৩. কোনো মুঘল সম্রাটের আমলে আগ্রার নাম বদলে অন্য নাম রাখা হয় সেই নামটি কী?
➛ সম্রাট শাহজাহানের আমলে আগ্রার নাম বদলে অন্য নাম রাখা হয়। সেই নামটি হল আকবরাবাদ। এই নামটি শাহজাহানের দেওয়া।
১৩৪. দাক্ষিণাত্যের কোনো কোনো রাজ্য শাহজাহানের বশ্যতা স্বীকার করে?
➛ দাক্ষিণাত্যের বিজাপুর ও গোলকোণ্ডা রাজ্য শাহজাহানের বশ্যতা স্বীকার করে।
১৩৫. কে, কোথায় তাজমহল নির্মাণ করেন? এর প্রধান স্থপতি কে ছিলেন?
➛ সম্রাট শাহজাহান তাঁর পত্নী মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশ্যে আগ্রায় তাজমহল নির্মাণ করেন। এর প্রধান স্থপতি ছিলেন ওস্তাদ ঈসা খান।
১৩৬. শাহজাহানের ধর্মনীতি কীরূপ ছিল?
➛ শাহজাহান পরধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু ছিলেন। তিনি হিন্দুদের বিভিন্ন উৎসব নিষিদ্ধ করেন এবং অসংখ্য হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেন। তাঁর রাজত্বকালে শুধুমাত্র মুসলমানরাই অগ্রাধিকার পেত।
১৩৭. ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ উল্লেখ করো।
➛ ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের দুটি কারণ হল— [1] ঔরঙ্গজেবের পরবর্তী মুঘল সম্রাটদের দুর্বলতা। [2] ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে নাদির শাহের ভারত আক্রমণ।
১৩৮. শিখ গুরু অর্জুন ও শিখ গুরু তেগ বাহাদুরকে কে প্রাণদণ্ড দেন?
➛ শিখ গুরু অর্জুনের প্রাণদণ্ড দেন জাহাঙ্গীর। শিখ গুরু তেগ বাহাদুরের প্রাণদণ্ড দেন ঔরঙ্গজেব।
১৩৯. নাদির শাহ কে ছিলেন? তিনি কত খ্রিস্টাব্দে ভারত আক্রমণ করেন?
➛ নাদির শাহ ছিলেন পারস্যের সম্রাট। তিনি ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত আক্রমণ করেন।
১৪০. 1707 খ্রিস্টাব্দ কী জন্য স্মরণীয়?
➛ ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্য পতনের দিকে অগ্রসর হয়।
১৪১. বাংলার ‘বারো ভূঁইয়া' বলতে কী বোঝায়?
➛ মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে বাংলার হিন্দু ও মুসলিম জমিদাররা বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতেন। এঁরাই বাংলার ‘বারো ভূঁইয়া' নামে পরিচিত। জাহাঙ্গীর এই বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন।
১৪২. জায়গিরদারী সংকট বলতে কী বোঝায়?
➛ মুঘল যুগে মনসবদারদের নগদ বেতনের পরিবর্তে জায়গীর প্রদান করা শুরু হয়। এর ফলস্বরূপ সাম্রাজ্যে জায়গীর বা কৃষিজমির ঘাটতি দেখা যায় এবং উৎকৃষ্ট জায়গীর লাভের আশায় মনসবদাররা পরস্পরের সঙ্গে সংঘাতে জরিয়ে পড়ে, এই সংকট জায়গিরদারী সংকট নামে পরিচিত।
১৪৩. নুরজাহান চক্র কী?
➛ সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনকার্যের দুর্বলতার সুযোগে তাঁর পত্নী নুরজাহান ধীরে ধীরে ক্ষমতার শীর্ষে উঠেছিলেন। এই উত্থানে তাঁর সহায়ক ছিলেন তাঁর পিতা মির্জা গিয়াস বেগ, ভাই আসফ খাঁ, শাহজাদা খুররম ও বিশিষ্ট অভিজাত মহবৎ খাঁ। এরা একত্রে নুরজাহান চক্র গঠন করেন।
১৪৪. কোনো মুঘল সেনাপতি নুরজাহানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন? ‘শাহজাহান' শব্দের অর্থ কী?
➛ মুঘল সেনাপতি মহবৎ খাঁ নুরজাহানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। শাহজাহান শব্দের অর্থ হল জগতের অধিপতি।
১৪৫. ‘জায়গীর' ও ‘জায়গীরদার' বলতে কী বোঝায়?
➛ মুঘল আমলে কোনো অঞ্চলের ভূমি রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্ব নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে কোনো ব্যক্তির ওপর ন্যস্ত করা হলে, সেই ব্যবস্থাকে জায়গীর বলা হত। অপরদিকে যে সকল ব্যক্তি জায়গীর ভোগ করত, তাদের জায়গীরদার বলা হত।
১৪৬. মুমতাজ কে? অথবা, মুমতাজ মহল কে ছিলেন?
➛ মুমতাজ ছিলেন শাহজাহানের সর্বাপেক্ষা প্রিয় পত্নী। তাঁর পূর্বের নাম ছিল আর্জুমান্দ বানু বেগম। তাঁর পিতা ছিলেন ক্ষমতাশালী অভিজাত আসফ খান। মুমতাজ মহল শব্দটির অর্থ হল ‘প্রাসাদের অলঙ্কার'।
১৪৭. শাহজাহানের দুটি সামরিক বিজয়ের নাম লেখো।
➛ শাহজাহানের দুটি সামরিক বিজয়ের নাম হল- হুগলি থেকে পোর্তুগিজদের বিতাড়ন ও আহম্মদনগর রাজ্য বিজয়।
১৪৮. ময়ূর সিংহাসন কী?
➛ শাহজাহানের আমলে স্থাপত্যকীর্তির অন্যতম নিদর্শন ছিল ময়ূর সিংহাসন। শিল্পী বেবাদল খাঁ এটি নির্মাণ করেন।
১৪৯. বুন্দেলা বিদ্রোহ কত খ্রিস্টাব্দে কার নেতৃত্বে সংঘটিত হয়?
➛ ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে রাজপুত নেতা ছত্রশালের নেতৃত্বে মধ্যপ্রদেশে বুন্দেলা বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
১৫০. শাহজাহানের রাজত্বকালের দুই জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম লেখো।
➛ শাহজাহানের রাজত্বকালের দু'জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম হল— আব্দুল হামিদ লাহোরী, জগন্নাথ পণ্ডিত প্রমুখ।
১৫১. কোনো মুঘল সম্রাট আলমগীর নামে পরিচিত? তিনি কোনো সময় রাজত্ব করেন।
➛ সম্রাট ঔরঙ্গজেব আলমগীর নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৬৫৮ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
১৫২. শাহজাহানের আমলের কয়েকটি স্থাপত্যকীর্তির উদাহরণ দাও।
➛ শাহজাহানের আমলের কয়েকটি স্থাপত্যকীর্তি হল— জামা মসজিদ, মোতি মসজিদ, তাজমহল, শিষ মহল, দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস প্রভৃতি।
১৫৩. মুঘল যুগে জমিদারগণ কীভাবে জমিদারি লাভ করতেন?
➛ মুঘল যুগে জমিদারগণ রাষ্ট্রের কাছ থেকে জমিদারি স্বত্ব লাভ করতেন। এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্বে জমিদারগণ রাষ্ট্রকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কর হিসেবে প্রদান করতেন। এই করের পরিবর্তে রাষ্ট্র জমিদারগণকে শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের জমিদারি প্রদান করত।
১৫৪. ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে শিখ বিদ্রোহ দেখা দেয় কেন?
➛ ঔরঙ্গজেবের ভ্রান্ত ধর্মীয় নীতি ও অদূরদর্শিতার কারণে শিখ বিদ্রোহ দেখা দেয়। ঔরঙ্গজেব নবম শিখগুরু তেগবাহাদুরকে হত্যা করলে শিখ জাতি মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
১৫৫. ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে সংঘটিত দুটি কৃষক বিদ্রোহের নাম লেখো।
➛ ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে সংঘটিত দুটি কৃষক বিদ্রোহের নাম হল— আগ্রার কৃষক বিদ্রোহ ও মথুরার কৃষক বিদ্রোহ।
১৫৬. শাহজাহানের এমন একটি স্থাপত্য কীর্তির নাম লেখো, যা আজও ভারতের গৌরব?
➛ শাহজাহানের প্রিয়পত্নী মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত তাজমহল হল ভারতের বিখ্যাত স্থাপত্যকীর্তি।
১৫৭. মুঘল আমলের কয়েকজন বিখ্যাত ঐতিহাসিকদের নাম লেখো।
➛ মুঘল আমলের কয়েকজন বিখ্যাত ঐতিহাসিকের নাম হল—বদায়ুনী, আবুল ফজল, এনায়েত খাঁ, আব্দুল হামিদ লাহোরী প্রমুখ।
১৫৮. স্যার টমাস রো কে ছিলেন?
➛ স্যার টমাস রো (১৫৮১ – ১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের দূত। ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজসভায় আগমন করেন। তিনি ভারতের আগ্রা, আহমেদাবাদ ও ব্রোচ অঞ্চলে বাণিজ্যের অনুমতি লাভ করেন এবং সেখানে কারখানা স্থাপন করেন।
১৫৯. মুঘল যুগে কয়েকটি বিখ্যাত বন্দরের নাম লেখো।
➛ মুঘল যুগের কয়েকটি বিখ্যাত বন্দরের নাম হল বাংলার সোনারগাঁও, চট্টগ্রাম; গুজরাটের সুরাট, ব্রোচ এবং মালাবার উপকূলের কোচি, কালিকট ও গোয়া।
১৬০. মুঘল যুগে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কেন্দ্রগুলির নাম লেখো।
➛ মুঘল যুগে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কেন্দ্রগুলি ছিল- গোলকোণ্ডা, ঢাকা, বারাণসী, লখনউ, পাটনা, ঔরঙ্গাবাদ প্রভৃতি।
১৬১. মুঘল যুগে কয়েকটি বিখ্যাত শহরের নাম লেখো।
➛ মুঘল যুগে কয়েকটি বিখ্যাত শহরের নাম হল- আগ্রা, দিল্লি, ঢাকা, ফতেপুর সিক্রি, লাহোর প্রভৃতি।
১৬২. গোলদার কাদের বলা হত?
➛ মুঘল আমলে যে সকল বণিক বড়ো নগরগুলিতে পাইকারী ব্যবসা করত, তাদের গোলদার বলা হত। গ্রামের ছোটো ছোটো ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে এদের গোলায় বিক্রি করত। এইসব গোলদাররা নগরে ও গ্রামে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য সারা বছর গোলা খুলে রাখত ।
১৬৩. মুঘল যুগে বণিক শ্রেণীকে কটি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
➛ মুঘল যুগে বণিক শ্রেণীকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— [1] বৃহৎ বণিক, [2] মধ্যম মানের বণিক শ্রেণী [3] বড়ো মজুতদার ও [4] ছোটো দোকানদার ও ফেরিওয়ালা শ্রেণি।
১৬৪. মুঘল যুগের কয়েকটি আমদানিকৃত ও রপ্তানিকৃত দ্রব্যের নাম লেখো।
➛ মুঘল যুগের কয়েকটি আমদানিকৃত দ্রব্যের নাম হল স্বর্ণ, অশ্ব, কাঁচা রেশম, প্রবাল, হাতির দাঁত ইত্যাদি এবং কয়েকটি রপ্তানিকৃত দ্রব্যের নাম হল বস্ত্র, নীল, মশলা ইত্যাদি।
১৬৫. মুঘল আমলে ভারতের তীর্থকেন্দ্র হিসেবে বিকাশ লাভ করা চারটি নগরের নাম লেখো।
➛ মুঘল আমলে ভারতের তীর্থকেন্দ্র হিসেবে বিকাশ লাভ করা চারটি নগর হল- বারাণসী, পুরী, আজমীর ও মথুরা নগর।
১৬৬. জাকাত কী?
➛ মুঘল আমলে মুসলমানদের একটি বিশেষ সেবামূলক কর দিতে হত, যা জাকাত নামে পরিচিত। এই কর বা আদায়কৃত অর্থ দরিদ্র মুসলমানদের সেবায় ব্যয় করা হত।
১৬৭. খামস কী?
➛ খনিজ দ্রব্য ও যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের যে অংশ সরকারকে কর হিসেবে দিতে হত, তাকে খামস বলা হত।
১৬৮. জিজিয়া কী?
➛ জিজিয়া হল অমুসলমানদের উপর আরোপিত একপ্রকার কর। এই কর প্রদানের বিনিময়ে অমুসলমানরা যেমন একটি মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসের অধিকার পেতেন, তেমনি রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তাও পেতেন।
১৬৯. খুদকস্ত বলতে কী বোঝো?
➛ মুঘল যুগে যে সকল কৃষকদের নিজস্ব কৃষিজমি থাকত এবং যারা ভাগচাষি দিয়ে কৃষিকাজ সম্পাদন করত, তাদের ‘খুদকস্ত’ বলা হত।
১৭০. পাহিকস্ত বলতে কী বোঝো?
➛ মুঘল যুগে যে সকল কৃষকদের নিজস্ব কৃষিজমি ছিল না এবং যারা অন্যের জমিতে ভাগ চাষ করত, তাদের ‘পাহিকস্ত' বলা হত।
১৭১. মুঘল আমলে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের দুটি কারণ লেখ।
➛ মুঘল আমলে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের দুটি কারণ হল- [1] আইন শৃঙ্খলার উন্নতি: মুঘল আমলে ভারতের আইন শৃঙ্খলার উন্নতি ঘটে, যা ব্যবসা- বাণিজ্যের প্রসারে সহায়তা করে। [2] উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা: মুঘল যুগে জলপথে ও স্থলপথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার ঘটে।
১৭২. 'সুজ' ও ‘মাসর' কী?
➛ সুলতানি শাসনকালে দিল্লিতে উৎপাদিত খাঁটি রেশম বস্ত্রকে ‘সুজ’ এবং সুতি ও রেশমের মিশ্রণে প্রস্তুত কাপড়কে ‘মাসর’ বলা হত।
১৭৩. 'জমা' ও 'হাসিল' কী?
➛ মুঘল যুগে জায়গীর ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল জমা ও হাসিল। বার্ষিক রাজস্ব আদায়ের নির্ধারিত সরকারি হিসেবকে 'জমা' বলা হয়। অন্যদিকে বার্ষিক বাস্তবে যে পরিমাণ ভূমি রাজস্ব আদায় হত, তাকে ‘হাসিল’ বলা হয়।
১৭৪. ‘কাসু’ কী?
➛ সপ্তদশ শতাব্দীতে ডেনমার্কের বণিকরা ভারতে যে সীসার মুদ্রা প্রচলন করে, তা তামিল ভাষায় ‘কাসু’ নামে পরিচিত।
১৭৫. ‘জাঙ্ক' ও ‘ধাউ’ কী?
➛ ‘জাঙ্ক’ ও ‘ধাউ’ হল এক প্রকার বাণিজ্য জাহাজ। ‘জাঙ্ক’ জাহাজ চীন দেশের বণিকরা ব্যবহার করত এবং ‘ধাউ’ জাহাজ ব্যবহার করত পশ্চিম এশিয়ার বণিকরা।
১৭৬. মনসবদার কাদের বলা হয়?
➛ মুঘল সম্রাট আকবরের সময় থেকে দরবারের অভিজাতবর্গ, সামরিক ও বেসামরিক রাজকর্মচারী, জ্ঞানীগুণী পণ্ডিত ব্যক্তিদের সম্মান সূচক ‘মনসব’ প্রদান করা হত। এই মনসব পদাধিকারী ব্যক্তিগণ ‘মনসবদার’ নামে পরিচিত। মনসবদারদের সৈন্য সংখ্যা ও পদমর্যাদা নির্দিষ্ট করা ছিল। মানসিংহ, টোডরমল, কুঁলি খা ছিলেন এই যুগের বিখ্যাত মনসবদার।
১৭৭. ইক্তা ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো?
➛ সুলতান ইলতুৎমিসের আমলে সাম্রাজ্যকে কয়েকটি সামরিক অঞ্চলে বিভক্ত করে প্রশাসনিক ও সামরিক দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে তা আমির, ওমরাহ ও অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করা হত। এই ব্যবস্থাকে ইক্তা ব্যবস্থা বলা হত। ভারতে ইক্তা ব্যবস্থার প্রবর্তক হলেন ইলতুৎমিস। ইক্তার প্রাপককে ইক্তাদার বা মাকতি বলা হত।
১৭৮. মুঘল আমলের কয়েকজন বিখ্যাত ঐতিহাসিকের নাম লেখো।
➛ মুঘল আমলের কয়েকজন বিখ্যাত ঐতিহাসিকের নাম হল- আবুল ফজল, এনায়েত খাঁ, বদাউনি ও আব্দুল হামিদ লাহরী প্রমুখ।
১৭৯. ‘জায়গীর’ বলতে কী বোঝায়?
➛ ফার্সি শব্দ ‘জাগীর’ থেকে ‘জায়গীর' শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হল ‘ভূমি অধিষ্ঠিত'। মুঘল সাম্রাজ্যের বৃহত্তর অংশের ভূমি রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব সরকার নিজের হাতে না রেখে নির্দিষ্ট শর্তের বিনিময়ে কোনো ব্যক্তির হাতে অর্পণ করত। এই সব হস্তান্তরিত জমিকে জায়গীর বলা হয়।
১৮০. জায়গীরদার কাদের বলা হত?
➛ মুঘল যুগে যে সকল কর্মচারী বা মনসবদারকে নগদ বেতনের পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির ভূমি-রাজস্ব আদায়ের অধিকার অর্থাৎ জায়গীর প্রদান করা হত, এই জায়গীর প্রাপকদের জায়গীরদার বলা হয়। ভূমি রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে জায়গীরদারদা তাদের ব্যয় নির্বাহ করত এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন রাখত।
১৮১. জায়গীরদারি সংকট কী?
➛ মুঘল যুগে মনসবদারদের নগদ বেতনের পরিবর্তে জায়গীর প্রদানের প্রচলন ছিল। কিন্তু সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলে মনসবদারদের সংখ্যা বাড়লেও জায়গীর অর্থাৎ ভূমি রাজস্বের জমির পরিমাণ একই ছিল। এরই ফলশ্রুতিতে যে সংকট দেখা দেয় তা জায়গীরদারি সংকট নামে পরিচিত। এই সংকটের ফলে মনসবদারদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং মুঘল সাম্রাজ্যের ভীত দুর্বল হয়ে পড়ে।
১৮২. ‘মসলিন' কী?
➛ অবিভক্ত বাংলার ঢাকায় উৎপাদিত এক ধরনের সূক্ষ্ম ও সৌখিন সুতিবস্ত্র মসলিন বা ঢাকাই মসলিন নামে পরিচিত। ফুটি কার্পাস নামক তুলো থেকে প্রস্তুত অতি সূক্ষ্ম সুতো দিয়ে মসলিন তৈরি করা হত। যা একটি ছোটো দেশলাইয়ের বাক্সের মধ্যে অনায়াসে রাখা যেত। অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে বাংলায় মসলিন বয়ন বন্ধ হয়ে যায়।
১৮৩. মুঘল যুগে বস্ত্র শিল্পের প্রধান কেন্দ্রগুলির নাম লেখ?
➛ মুঘল যুগে বস্ত্র শিল্পের প্রধান কেন্দ্রগুলির নাম হল- বারাণসী, আগ্রা, জৌনপুর, লখনউ ও ঢাকা।
১৮৪. ‘বানিয়া” ও ‘চেট্টি” নামে কারা পরিচিত ছিল?
➛ মুঘল যুগে রাজস্থানের বণিকরা ‘বানিয়া” নামে এবং করমন্ডল উপকূলের বণিকরা ‘চেট্টি’ নামে পরিচিত ছিল।
১৮৫. মুঘল যুগে কোন কোন দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের প্রসার ঘটে?
➛ মুঘল যুগে শ্রীলঙ্কা, বার্মা, নেপাল, জাপান, চীন প্রভৃতি দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের প্রসার ঘটে।
১৮৬. হুন্ডি প্রথা কী?
➛ ‘হুন্ডি' শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘হুন্ড’ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ হল ‘সংগ্রহ করা”। মুঘল যুগের ব্যবসায়ীরা নগদ অর্থের লেনদেনের পরিবর্তে অর্থের পরিমাণ লেখা কাগজ ব্যবহার করত একে হুন্ডি প্রথা বলা হত ।
১৮৭. মনসবদাররা কয় ভাগে বিভক্ত ছিল ও কী কী?
➛ মনসবদাররা দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। যথা— [1] জায়গীরদার ও [2] মনসবদার-ই-নগদি।
১৮৮. তনখা জায়গীর বা জায়গীর-ই-তনখা কী?
➛ মুঘল যুগে মনসবদারদের নগদ বেতনের পরিবর্তে জায়গীর জমি প্রদান করা হলে, সেই জায়গীরকে তনখা জায়গীর বা জায়গীর-ই-তনখা বলা হত ।
১৮৯. মুঘল যুগের কারখানাগুলিতে কী কী দ্রব্য তৈরি হত?
➛ মুঘল যুগের কারখানাগুলিতে মূলত গালিচা, কার্পেট, বস্ত্র এবং চামড়া ও ধাতুর দ্রব্য তৈরি হত।
১৯০. মনসবদার-ই-নগদি কাদের বলা হত?
➛ মুঘল যুগে যারা নগদে বেতন পেত সেই বেতনপ্রাপ্ত মনসবদারকে মনসবদার-ই-নগদি বলা হত।
১৯১. খালিসা জমি কী?
➛ ভারতে মুসলমান শাসকদের সময় তাদের সাম্রাজ্যের রাজকীয় জমিকে বলা হত খালিসা জমি।
১৯২. ‘খরজ’ ও ‘উসর’ কী? অথবা, সুলতানি যুগে ভূমি রাজস্বের নাম কী ছিল?
➛ সুলতানি যুগে অমুসলমানদের ভূমি রাজস্বকে বলা হত ‘খারাজ’, যার পরিমাণ ছিল ফসল উৎপাদনের ১/৩ থেকে ১/২ অংশ। আর মুসলমানদের ভূমি রাজস্বের নাম ছিল ‘উসর’। যার পরিমাণ ছিল ফসল উৎপাদনের ১/১০ অংশ।
১৯৩. মনসবদারী প্রথার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
➛ মনসবদারী প্রথার দুটি বৈশিষ্ট্য হল— [1] জায়গীর প্রদান: মনসবদারদের সেনাবাহিনীর ব্যয় নির্বাহের জন্য নগদ বেতন ও জায়গীর প্রদান করা হত। [2] যোগ্যতা অনুযায়ী পদ মর্যাদা: মনসবদারি পদ বংশানুক্রমিক ছিল না। যোগ্যতার ভিত্তিতে সম্রাটের কাছ থেকে এই পদ পেতে হত।
১৯৪. জায়গীরদারি সংকটের দুটি কারণ লেখ।
➛ জায়গীরদারি সংকটের দুটি কারণ হল- [1] জায়গীরদারদের সংখ্যা বৃদ্ধিঃ মুঘল আমলে জায়গীর প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিতরণযোগ্য জায়গীর জমির স্বল্পতা দেখা যায়। ফলে জায়গীরদারী সংকটের সৃষ্টি হয়। [2] জমা ও হাসিলের মধ্যে ব্যবধান: জায়গীর ব্যবস্থায় জায়গীরদারদের রাজস্ব কারচুপির ফলে জমির উপর নির্ধারিত রাজস্ব (জমা) এবং প্রকৃত আদায়িকৃত রাজস্ব (হাসিল) -এর মধ্যে বিস্তর ব্যবধান সৃষ্টি হয়। ফলে কেন্দ্রীয় কোষাগারে রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেয় এবং জায়গীরদারী সংকটের সূচনা হয়।
১৯৫. মুঘল যুগে বহির্বাণিজ্যে লিপ্ত দুজন ধনী বণিকের নাম লেখো।
➛ মুঘল যুগে বহির্বাণিজ্যে লিপ্ত দুজন ধনী বণিকের নাম—বিরজি বোহরা ও আব্দুল গফুর।
১৯৬. ‘জাট’ ও ‘সওয়ার’ কী?
➛ জাট শব্দের অর্থ হল পদমর্যাদা এবং মনসবদারের অধীনস্থ অশ্বারোহী সেনার সূচক। এই পদের ভিত্তিতে একজন মনসবদারের বেতন, পদমর্যাদা ও দায়িত্ব নির্দিষ্ট থাকত। ‘সওয়ার’ শব্দের অর্থ হল মনসবদারের অধীনস্থ প্রকৃত সৈন্যের হিসেব। এই পদের দ্বারা মনসবদারদের
অধীনস্থ অশ্বারোহী বাহিনীর সংখ্যা নির্দিষ্ট হত।
১৯৭. ওয়াতন জায়গীর বলতে কী বোঝো?
➛ মুঘল যুগে কিছু সংখ্যক জমিদার বংশানুক্রমে তার মালিকানাধীন জমির রাজস্ব আদায় করত ও ভোগ করত, এই প্রকারের জায়গীরকে ওয়াতন জায়গীর বলা হত। এই জায়গীরদারদের জায়গীর থেকে উৎখাত করার অধিকার আইনত সম্রাটের হাতে ছিল না।
১৯৮. মনসবদারি প্রথার গুরুত্ব কী?
➛ মনসবদারি প্রথার গুরুত্বগুলি হল— [1] যোগ্যতার ভিত্তিতে মনসব প্রদান : মনসবদারি পদ বংশানুক্রমিক না হওয়ার ফলে সর্বদা যোগ্য ব্যক্তিরাই মনসব লাভ করত [2] বৃহৎ সেনাবাহিনী গঠন : মনসবদারি প্রথার উপর ভিত্তি করে সুবৃহৎ মুঘল সৈন্যবাহিনী গড়ে ওঠে। [3] বিদেশি অভিজাতদের আধিপত্য হ্রাস: জাতিভিত্তিক মনসবদারি প্রথা চালু হওয়ার ফলে বিদেশি অভিজাতদের আধিপত্য খর্ব হয়।
১৯৯. ভক্তিবাদ বলতে কী বোঝায়?
➛ সুলতানি তথা মধ্যযুগে কতিপয় মানবতাবাদী সম্প্রদায় ঈশ্বর আরাধনার মাধ্যম হিসেবে ‘ভক্তি’কে অবলম্বন ও প্রচার করেন। এটি ইতিহাসে ভক্তিবাদ বা ভক্তি আন্দোলন নামে পরিচিত।
২০০. ভক্তিবাদের মূল কথা কী?
➛ ভক্তিবাদের মূলকথা হল— [1] একেশ্বরবাদে বিশ্বাস, [2] আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন, [3] অন্তরের ভক্তি ঈশ্বর আরাধনার একমাত্র উপায়।
২০১. ভক্তিবাদী আন্দোলনের চারজন প্রবক্তার নাম লেখো।
➛ ভক্তিবাদী আন্দোলনের চারজন প্রবক্তার নাম হল- কবির, রামানন্দ, নানক ও শ্রীচৈতন্যদেব।
২০২. ঔরঙ্গজেব কোন দুটি দক্ষিণী রাজ্য গ্রাস করেন?
➛ প্রাচীন ভারতীয় ধর্মমত এবং হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে ভক্তিবাদের উৎস নিহিত ছিল। যার প্রভাব নায়নার ও আলওয়ার সম্প্রদায়ের ধর্মচিন্তায় প্রকাশ পেয়েছিল। তবে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, ইসলামের সাম্যের আদর্শ, মানবিকতা ও একেশ্বরবাদের প্রভাবেই ভক্তিবাদের উত্থান ঘটে।
২০৩. দোঁহা কী? এটি কোন ভাষায় রচিত?
➛ ভক্তিবাদী আন্দোলনের নেতা কবির মানব প্রেমের বাণী প্রচার করার উদ্দেশ্যে ছোটো ছোটো কবিতা রচনা করেন এগুলিকে ‘দোঁহা’ বলা হয়। এটি হিন্দি ভাষায় রচিত।
২০৪. ভক্তিবাদী আন্দোলনের ফল কী হয়?
➛ ভক্তিবাদী আন্দোলনের ফলাফলগুলি হল— [1] হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি: হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ভেদাভেদ কমে যায়। ফলে সমাজ জাতিভেদ প্রথার কঠোরতা থেকে কিছুটা মুক্ত হয়। [2] আঞ্চলিক ভাষার সমৃদ্ধি: ভক্তিবাদি এই আন্দোলনে আঞ্চলিক ভাষায় ধর্ম প্রচারের ফলে বহু আঞ্চলিক ভাষায় গ্রন্থ রচিত হয় এবং ভাষাগুলি সমৃদ্ধ হয়।
২০৫. গুরু নানক কে ছিলেন?
➛ গুরু নানক ছিলেন মধ্যযুগের ভক্তিবাদী আন্দোলনের অন্যতম সাধক। তিনি ছিলেন শিখ ধর্মের প্রবর্তক। তাঁর উপদেশগুলি ‘আদি গ্রন্থ’ পুস্তকে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাঁর শিষ্যরা শিখ নামে পরিচিত।
২০৬. বল্লভাচার্য কে ছিলেন?
➛ ভক্তিবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা তথা একজন পরম বৈষ্ণব ছিলেন বল্লভাচার্য। তিনি ছিলেন শ্রীকৃষ্ণকেন্দ্রীক ‘পুষ্টিমার্গ' সম্প্রদায়ের প্রণেতা। তাঁর ধর্ম চিন্তার মূলকথা হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করা।
২০৭. ‘খানকাহ’ ও ‘দরগাহ’ কী? অথবা, ‘খানকা’ ও ‘দরগা” বলতে কী বোঝো?
➛ সুফি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত কোনো শ্রদ্ধেয় ধর্মীয় ব্যক্তির সমাধির ওপরে নির্মিত আরাধনার স্থানকে দরগাছ বলা হয়। অন্যদিকে, সুফি সম্প্রদায়ের অনুগামীদের জমায়েত ও প্রার্থনার জন্য এবং আধ্যাত্মিক দীক্ষা ও চারিত্রিক দিক সংস্কারের জন্য নির্মিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা আপনাকে খানকাহ বলা হয়।
২০৮. নামদেব কে ছিলেন?
➛ নামদেব ছিলেন মধ্যযুগের ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা। তিনি মহারাষ্ট্রে ভক্তিবাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি ছিলেন একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী।
২০৯. তাজমহল কে নির্মাণ করেন? এটি কার স্মৃতিসৌধ?
➛ সম্রাট শাহজাহান তাজমহল নির্মাণ করেন। এটি তাঁর পত্নী মমতাজ -এর স্মৃতিসৌধ।
২১০. শ্রীচৈতন্যদেব কে ছিলেন?
➛ শ্রীচৈতন্যদেব ছিলেন ভক্তিবাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা। তিনি জাতিভেদ ও ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের প্রাধান্য অস্বীকার করে সমগ্র মানব সমাজের জন্য প্রেম ধর্ম প্রচার করেন। তাঁর প্রচারিত ধর্মমত ‘গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম' নামে পরিচিত।
২১১. মীরাবাঈ কে ছিলেন?
➛ মধ্যযুগের ভক্তিবাদী আন্দোলনের ইতিহাসে একজন নারী সাধক ছিলেন মীরাবাই। তিনি ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের পরম উপাসক। তিনি কৃষ্ণ প্রেমে বিভোর হয়ে ভক্তিমূলক ভজন সংগীত রচনা করেন, যা মীরার ভজন নামে পরিচিত।
২১২. রামানুজ কে ছিলেন?
➛ রামানুজ ছিলেন মধ্যযুগে ভক্তিবাদী আন্দোলনের অন্যতম সাধক। তাঁর মতে, ভক্তির অর্থ আরাধনা বা ভজন-কীর্তন নয় বরং ঈশ্বরের ধ্যান বা প্রার্থনা করা। ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্যে রচিত তাঁর দুটি জনপ্রিয় গ্রন্থ হল ‘শ্রীভাষ্যম’ এবং ‘বেদান্ত সংগ্রহ'। রামানুজের বেদান্ত দর্শন ‘বিশিষ্ট অদ্বৈতবাদ' নামে খ্যাত। তাঁর গুরু ছিলেন আলওয়ার সন্ত যমুনাচার্য।
২১৩. রামানন্দ কে ছিলেন?
➛ মধ্যযুগে ভক্তিবাদী ধর্মসংস্কার আন্দোলনের অন্যতম প্রবর্তক ছিলেন রামানন্দ। তিনি ছিলেন ভক্তিবাদের আদি প্রচারক রামানুজের প্রধান শিষ্য। তিনি উত্তর ভারত জুড়ে জাতি- ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলের মাঝে ভক্তিবাদ প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা নেন। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবির।
২১৪. কবির কে ছিলেন?
➛ রামানন্দের প্রধান শিষ্য কবির (১৪৪০-১৫১৮ খ্রিস্টাব্দে) ছিলেন ভক্তিবাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মপ্রচারক। তিনি হিন্দি ভাষায় তাঁর ধর্মের মূল কথাগুলি দুই পঙ্ক্তির ছোটো কবিতার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতেন, যা ‘দোঁহা” নামে পরিচিত। হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের মানুষই তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর শিষ্যরা ‘কবির পন্থী' নামে পরিচিত।
২১৫. দাদু দয়াল কে ছিলেন?
➛ দাদু দয়াল ছিলেন মধ্যযুগের অন্যতম ভক্তিবাদী সাধক। তিনি সর্বধর্মের সমন্বয়ের লক্ষ্যে পরমব্রহ্ম সম্প্রদায় গঠন করেন। তিনি তাঁর ধর্মমত প্রচার করে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে তোলেন। তাঁর গঠন করা সম্প্রদায় দাদুপন্থ নামে পরিচিত।
২১৬. সুফিবাদ বলতে কী বোঝায়?
➛ ভারতে ইসলামের আগমনের পর খ্রিস্টীয় নবম ও দশম শতাব্দীতে ইসলাম ধর্মের সংস্কারের লক্ষ্যে যে উদারনৈতিক আন্দোলনের সূচনা ঘটে, তা ইতিহাসে সুফিবাদ বা সুফি আন্দোলন নামে পরিচিত।
২১৭. সুফি নামে কারা পরিচিত ছিল?
➛ যে সকল সংসার ত্যাগী ইসলাম ধর্মের প্রচারকগণ মোটা পশমের (সুফ) বস্ত্র পরিধান করেন, তারা সুফি নামে পরিচিত হতেন। আরবি শব্দ ‘সুফ’ থেকে ‘সুফি’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে, যার অর্থ হল ‘মুসলমান ধর্ম সম্প্রদায় বিশেষ'।
২১৮. নায়নার ও লিঙ্গায়েত কারা?
➛ খ্রিষ্টীয় তৃতীয় থেকে অষ্টম শতাব্দী নাগাদ দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু অঞ্চলে ৬৩ জন সাধকের একটি সম্প্রদায় বিদ্যমান ছিল। এই সাধকরা ছিলেন হিন্দু দেবতা শিবের ভক্ত। এই শৈবধর্ম প্রচারক সম্প্রদায়ের নাম ছিল নায়নার। অন্যদিকে খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দী নাগাদ দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক অঞ্চলের শৈবধর্মের প্রচারক সম্প্রদায়টি লিঙ্গায়েত নামে পরিচিত। ভক্তিবাদ ও ভক্তিবাদী ধর্মমত সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে দেওয়ার পশ্চাতে এঁরা ছিলেন প্রধান অনুপ্রেরণা।
২১৯. ভারতের সুফি আন্দোলনের দুজন প্রবক্তার নাম লেখো।
➛ ভারতের সুফি আন্দোলনের দুজন প্রবক্তার নাম হল-নিজামউদ্দিন আউলিয়া ও মইনুদ্দিন চিশতি।
২২০. ভারতের সুফি আন্দোলনের ফলাফল লেখো।
➛ ভারতের সুফি আন্দোলনের ফলাফলগুলি হল— [1] সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা: হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বহুলাংশে হ্রাস পায়। [2] ভাষা ও সংগীতের বিকাশ: হিন্দি ভাষা ও কাওয়ালী সংগীত বিকাশ লাভ করে।
২২১. সুফিবাদের মূল কথা কী?
➛ সুফিবাদের মূল কথা হল— [1] একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী হওয়া [2] পবিত্র জীবনযাপন করা [3] ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা।
২২২. শ্রীচৈতন্যদেব প্রচারিত ধর্মের মূল কথা কী ছিল?
➛ শ্রীচৈতন্যদেব প্রচারিত ধর্মের মূল কথা ছিল- বৈরাগ্য সাধন, জীবে দয়া প্রদর্শন ও ঈশ্বরের নামে সংকীর্তন।
২২৩. ইবাদতখানা কে এবং কোথায় নির্মাণ করেন?
➛ সম্রাট আকবর ফতেপুর সিক্রিতে ইবাদতখানা নির্মাণ করেন।
২২৪. ভক্তি আন্দোলনের সূচনা কবে, কার নেতৃত্বে হয়?
➛ খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে ভক্তি আন্দোলনের সূচনা হয়। দক্ষিণ ভারতের শৈব নায়নার ও বৈষ্ণব আলওয়ার সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে এই আন্দোলন শুরু হয়।
২২৫. চিশতি সম্প্রদায় কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেন?
➛ দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে খাজা মইনুদ্দিন চিশতি চিশতি সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন।
২২৬. পঞ্চদশ শতকে ভারতের কয়েকটি সুফি সম্প্রদায়ের নাম লেখো।
➛ পঞ্চদশ শতকে ভারতের কয়েকটি সুফি সম্প্রদায়ের নাম হল— কাদিরি, ফিরদৌসী এবং নকশবন্দী।
২২৭. ‘দিল্লির আলো' কাকে বলা হয়?
➛ সুফি কবি নাসিরুদ্দিন চিরাগ দেহলভীকে বলা হয় ‘দিল্লির আলো’ বা ‘চিরাগ-ই-দিল্লি'। তিনি ছিলেন নিজামউদ্দিন আউলিয়ার প্রধান শিষ্য।
২২৮. মুঘল আমলে দুজন চিত্রশিল্পীর নাম লেখো।
➛ মুঘল আমলে দুজন চিত্রশিল্পীর নাম হল- বিষেন দাস ও আবদুস সামাদ।
২২৯. কুতুব মিনারের নির্মাণ কাজকে শুরু করেন এবং কে শেষ করেন?
➛ কুতুব মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু করেন কুতুবউদ্দিন আইবক এবং শেষ করেন সুলতান ইলতুৎমিস।
২৩০. আদিনা মসজিদ কোথায় অবস্থিত? এটি কে নির্মাণ করেন?
➛ আদিনা মসজিদ মালদহের পান্ডুয়াতে অবস্থিত। এটি নির্মাণ করেন সিকান্দার শাহ।
২৩১. পরমব্রহ্ম সম্প্রদায় কে, কোথায় প্রতিষ্ঠা করেন?
➛ ভক্তিবাদী সাধক দাদু দয়াল রাজপুতানায় পরমব্রহ্ম সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে তাঁর হাত ধরেই ভারতবর্ষে ভক্তি আন্দোলনের প্রসার ঘটে।
২৩২. নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দুজন শিষ্যের নাম লেখো।
➛ নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দুজন শিষ্যের নাম হল- জিয়াউদ্দিন বরণী ও স্বনামধন্য কবি আমির খসরু।
২৩৩. আকবরের আমলে শ্রেষ্ঠ হিন্দি কবির নাম কী? তাঁর রচিত কাব্যটির নাম কী?
➛ আকবরের আমলে শ্রেষ্ঠ হিন্দি কবির নাম হল- তুলসীদাস। তাঁর রচিত কাব্যটির নাম ‘রামচরিত মানস'।
২৩৪. আমির খসরু কে? তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
➛ সুলতানি যুগের বিখ্যাত কবি ও সংগীতজ্ঞ ছিলেন আমির খসরু। তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল ‘খাজাইন-উল-ফুতুহ’ও ‘কিরান-উস-সাদয়ীন’।
২৩৫. সুলতানি যুগের দুটি শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য শিল্পের নাম লেখো।
➛ সুলতানি যুগের দুটি শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য শিল্পের নাম হল- কুতুব মিনার এবং আদিনা মসজিদ।
২৩৬. ভক্ত দাদুর দুজন বিখ্যাত শিষ্যের নাম লেখো।
➛ ভক্ত দাদুর দুজন বিখ্যাত শিষ্যের নাম হল— জগন্নাথ এবং রজব।
২৩৭. ভক্তিবাদীরা কোন ভাষায় প্রচার চালান?
➛ ভক্তিবাদীরা নিজ নিজ আঞ্চলিক ভাষায় যথা— মারাঠি, বাংলা, হিন্দি, তামিল, মৈথিলী প্রভৃতি ভাষায় তাদের প্রচার চালান।
২৩৮. ফতেপুর সিক্রি কে স্থাপন করেন? এর একটি স্থাপত্য নিদর্শনের নাম লেখো।
➛ ফতেপুর সিক্রি স্থাপন করেন আকবর। ফতেপুর সিক্রিতে অবস্থিত একটি বিখ্যাত স্থাপত্যের নিদর্শন হল বুলন্দ দরওয়াজা।
২৩৯. কয়েকজন মুসলমান পদকর্তার নাম লেখো।
➛ কয়েকজন মুসলমান পদকর্তার নাম হল- শেখ কবির, সৈয়দ সুলতান, নাসির মামুদ, আকবর আলী প্রমুখ।
২৪০. ভক্তিবাদের সীমাবদ্ধতা লেখো।
➛ ভক্তিবাদের সীমাবদ্ধতাগুলি হল— [1] জাতিভেদ প্রথার কঠোরতা হ্রাস পেলেও বর্ণভেদকে সম্পূর্ণরূপে দূর করা যায়নি। [2] পৌত্তলিকতা ও রক্ষণশীলতাকে কেবলমাত্র সংযত করা সম্ভব হয়, সম্পূর্ণ ধ্বংস করা যায়নি।
২৪১. ‘অদ্বৈতবাদ' ও ‘বিশিষ্ট অদ্বৈতবাদ' - এর প্রবক্তা কারা?
➛ ‘অদ্বৈতবাদ' ও ‘বিশিষ্ট অদ্বৈতবাদ'-এর প্রবক্তা হলেন যথাক্রমে শঙ্করাচার্য ও রামানুজ।
২৪২. নানকের বাণী কে, কোন গ্রন্থে সংকলন করেন?
➛ পঞ্চম শিখগুরু অর্জুন গুরু নানকের বাণী ‘আদি গ্রন্থ' পুস্তকে সংকলন করেন।
২৪৩. ভারতে চিশতি সম্প্রদায়ের একজন সাধকের নাম লেখ। আলাই দরওয়াজা কে নির্মাণ করেন?
➛ ভারতে চিশতি সম্প্রদায়ের একজন সাধকের নাম হল- খাজা মইনুদ্দিন চিশতি। আলাই দরওয়াজা নির্মাণ করেন আলাউদ্দিন খলজি।
২৪৪. শ্রীরূপ গোস্বামী রচিত দুটি গ্রন্থের নাম কী?
➛ শ্রীরূপ গোস্বামী রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল— ‘বিদগ্ধ মাধব’ ও ‘ললিত মাধব’।
২৪৫. ‘হিন্দুস্থানের তোতাপাখি' কাকে বলা হয়? সিলসিলা কী?
➛ আমির খসরুকে ‘হিন্দুস্থানের তোতাপাখি' বলা হয়। দ্বাদশ শতাব্দীতে সুফিরা ১২টি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। এই সম্প্রদায়গুলিকে সিলসিলা বলা হত।
২৪৬. হোসেন শাহ কে ছিলেন? অথবা, আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কে ছিলেন?
➛ পঞ্চদশ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান ছিলেন হোসেন শাহ।
২৪৭. ‘পিয়েত্রা দুরা’ কী?
➛ মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে মার্বেল পাথরের গায়ে ফুল, লতা, পাতা খোদাই করে দেয়াল শোভিত করার শিল্পরীতি বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই শিল্পরীতিকে ‘পিয়েত্রা দুরা” বলা হয়।
২৪৮. মিয়া তানসেন কে ছিলেন?
➛ মিয়া তানসেন ছিলেন মুঘল যুগের একজন শ্রেষ্ঠ সংগীত বিশারদ। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল রামতনু পান্ডে। তিনি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ‘ভারতীয় সংগীতের সম্রাট' নামে পরিচিত।
২৪৯. ভারতে সুফিবাদের গুরুত্ব কী?
➛ ভারতে সুফিবাদের গুরুত্ব বা প্রভাবগুলি হল— [1] সামাজিক বিভেদ দূরীকরণ: সুফিবাদী সাধকগণের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার বাণী সামাজিক বিভেদ দূর করতে সাহায্য করেছিল। [2] আড়ম্বরহীন জীবনযাত্রা: সুফিবাদের সহজ-সরল ও আড়ম্বরহীন জীবনযাত্রা সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল।
২৫০. পাহাড়ি শিল্পরীতি কী?
➛ মুঘল আমলে পাঞ্জাবের পাহাড়ি অঞ্চলে যে শিল্পরীতির উদ্ভব ঘটেছিল, তা পাহাড়ি শিল্পরীতি নামে পরিচিত।
২৫১. শাহজাহানের আমলের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শিল্পকীর্তির নাম লেখ?
➛ দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, শীষ মহল, তাজমহল, জামা মসজিদ ও মোতি মসজিদ।
২৫২. বাংলার হোসেন শাহের আমলে দুজন কবির নাম লেখ।
➛ বাংলার হোসেন শাহের আমলে দুজন কবির নাম হল- কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও শ্রীকর নন্দী।
২৫৩. আকবরের আমলের উল্লেখযোগ্য শিল্পকীর্তি কী ছিল?
➛ ফতেপুর সিক্রি, বুলন্দ দরওয়াজা, ইবাদতখানা।
২৫৪. 'মহাভারত' ও ‘চন্ডীমঙ্গল'-এর রচয়িতা কে ছিলেন?
➛ ‘মহাভারত’-র রচয়িতা হলেন কাশীরাম দাস এবং ‘চন্ডীমঙ্গল’-র রচয়িতা হলেন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী।
২৫৫. ‘চৈতন্যভাগবত' ও ‘চৈতন্য চরিতামৃত' -এর রচনাকার কে ছিলেন?
➛ ‘চৈতন্য ভাগবত' -এর রচনাকার হলেন বৃন্দাবন দাস এবং ‘চৈতন্যচরিতামৃত' -এর রচনাকার হলেন কৃষ্ণদাস কবিরাজ।
২৫৬. রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচিত দুটি কাব্যের নাম লেখো।
➛ রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচিত দুটি কাব্যের নাম হল— ‘অন্নদামঙ্গল' ও ‘বিদ্যাসুন্দর কাব্য'।
২৫৭. বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাস কে ছিলেন?
➛ বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাস ছিলেন মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের দুই বৈষ্ণব কবি।
২৫৮. সুলতানি যুগে বাংলার দুটি স্থাপত্য শিল্পের নাম লেখো।
➛ সুলতানি যুগে বাংলার দুটি স্থাপত্য শিল্পের নাম হল – পান্ডুয়ার আদিনা মসজিদ ও গৌড়ের বড়ো সোনা মসজিদ।
২৫৯. শাহজাহানের আমলে দুটি ঐতিহাসিক গ্রন্থের নাম লেখো।
➛ শাহজাহানের আমলে দুটি ঐতিহাসিক গ্রন্থের নাম হল – এনায়েৎ খাঁ রচিত “শাহজাহানামা” ও আব্দুল হামিদ লাহোরী রচিত ‘পাদশাহনামা’।
২৬০. একজন ভক্তিবাদী সন্ত ও একজন সুফিবাদী সন্তের নাম লেখো।
➛ একজন ভক্তিবাদী সন্ত হলেন শ্রীচৈতন্যদেব এবং একজন সুফিবাদী সন্ত হলেন নিজামউদ্দিন আউলিয়া।
২৬১. ভারতে সুফিবাদের জনক কে?
➛ ভারতে সুফিবাদের জনক হলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশতি।
২৬২. সুফিবাদের মূল স্তরগুলি কী?
➛ একটি মতানুসারে, কোনো ব্যক্তি সুফিসাধনার দশটি স্তর অতিক্রম করলে তবেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। এই স্তরগুলি হল—[1] তওবা (অনুশোচনা), [2] ওয়ারা (নিবৃত্তি), [3] জুহদ (ধার্মিকতা), [4] ফকর (অনাড়ম্বর জীবনযাপন), [5] সত্ৰ (সহনশীলতা অর্জন), [6] শুক্র (কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন), [7] খুফ্ (অন্যায়ের প্রতি ভীতি), [৪] রজা (ঈশ্বরের করুণা লাভের ইচ্ছা), [9] তওয়াকুল (আনন্দে-বিষাদে স্থির থাকা) এবং [10] রিজা (ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ)।