west bengal class 7 science chapter 1 question answer
1. দিনেরবেলা আমরা ঘরের ভিতর সবকিছু দেখতে পাই, কিন্তু রাত্রিবেলা আলোর অনুপস্থিতিতে কোনো জিনিসই দেখতে পাই না। অথচ একটা জোনাকি পোকা ঘরে ঢুকে পড়লে সেটাকে দেখতে আমাদের কোনো অসুবিধা হয় না। [i] জোনাকি পোকাটিকে আমরা দেখতে পেলাম কেন? [ii] রাত্রিবেলায় অন্ধকারে ঘরের অন্যান্য জিনিসপত্রগুলি দেখা যায় না কেন? [iii] রাত্রিবেলাতেও ঘরের অন্যান্য জিনিসগুলি দেখতে হলে আমাদের কী করতে হবে?
➛ [i] কোনো বস্তু থেকে নির্গত আলোকরশ্মিগুচ্ছ আমাদের চোখে এসে দেখার অনুভূতি সৃষ্টি করলে, তবেই আমরা বস্তুটিকে দেখতে পাই। রাত্রিবেলায় জোনাকি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলে আমরা সহজেই জোনাকি পোকাটিকে দেখতে পাই, কারণ জোনাকির নিজস্ব আলো থাকায় আমাদের চোখে দেখার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। [ii] রাত্রিবেলায় অন্ধকারে ঘরের অন্যান্য জিনিসপত্রগুলি থেকে কোনো দৃশ্যমান আলো এসে আমাদের চোখে পড়ে না, তাই আমরা অন্যান্য জিনিসপত্রগুলি দেখতে পাই না। [iii] রাত্রিবেলাতেও ঘরের অন্যান্য জিনিসপত্রগুলি দেখতে হলে আমাদের আলোর উৎসের প্রয়োজন। উৎস থেকে নির্গত আলোকরশ্মিগুচ্ছ ওইসব বস্তুর ওপর পড়ে, বস্তুগুলি থেকে ঠিকরে আমাদের চোখে এসে পড়লে, বস্তুগুলিকে দেখা যাবে।
❐ আরো পড়ুন : সপ্তম শ্রেণি পরিবেশ ও বিজ্ঞানভৌত পরিবেশ : (i) তাপ টেক্সট বই সমাধান
(ii) আলো
(iii) চুম্বক
(iv) তড়িৎ
(v) পরিবেশবান্ধব শক্তি
2. আলোক-উৎস কাকে বলে? এটি কয়প্রকার ও কী কী?
➛ যে সমস্ত বস্তুর নিজস্ব আলো আছে অর্থাৎ যেসব বস্তুগুলো থেকে নিজস্ব আলো নির্গত হয় তাদেরকে আলোক-উৎস বলে। ▻ আলোক-উৎসের প্রকারভেদগুলি নিম্নরূপ— ❐ আকৃতিগত প্রকারভেদ : ➀ বিন্দু আলোক-উৎস (লেজার টর্চ) ➁ বিস্তৃত আলোক-উৎস (সূর্য, বাল্ব) আর ❐ প্রকৃতিগত প্রকারভেদ : ➀ স্বপ্রভ উৎস (সূর্য, মোমবাতি) ➁ অপ্রভ উৎস (চাঁদ, গ্রহ)।
3. স্বপ্রভ বস্তু কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
➛ যেসব বস্তুর নিজস্ব আলো আছে অর্থাৎ নিজেরাই আলো নির্গত করে, তাদের স্বপ্রভ বস্তু বলে। উদাহরণ: সূর্য, নক্ষত্র, বৈদ্যুতিক বাতি, জোনাকি, জ্বলন্ত মোমবাতি ইত্যাদি।
4. অপ্রভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
➛ যেসব বস্তুর নিজস্ব আলো নেই অর্থাৎ নিজেরা আলো নির্গত করে না, তাদের অপ্রভ বস্তু বলে। উদাহরণ: ঘরবাড়ি, গাছপালা, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি। চাঁদ এ গ্রহগুলিও অপ্রভ। সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে বলেই আমরা ওদের আলোকিত দেখি।
5. বিন্দু আলোক-উৎস ও বিস্তৃত আলোক-উৎস কী?
➛ বিন্দু আলোক-উৎস: আলোক-উৎসের আকার খুব ছোটো হলে তাকে বিন্দু আলোক-উৎস বলে। বিস্তৃত আলোক-উৎস: আলোক-উৎসের আকার বিন্দু আলোক-উৎসের থেকে বড়ো হলে উৎসটিকে বিস্তৃত আলোক-উৎস বলে।
6. অপ্রভ বস্তুও কি আলোর উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে?
➛ অপ্রভ বস্তুও আলোর উৎস হিসেবে আচরণ করতে পারে। যখন কোনো স্বপ্রভ বস্তু থেকে নির্গত আলোকরশ্মি অপ্রভ বস্তুতে পড়ে এবং ঠিকরে বের হয়, তখন অপ্রভ বস্তুটিকে আলোর উৎস হিসেবে ধরা যায়। যেমন—চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো না থাকলেও সূর্যের আলো চাঁদের ওপরে পড়ে চাঁদকে উজ্জ্বল দেখায় এবং চাঁদকে আলোর উৎস (স্বপ্রভ বস্তু) হিসেবে মনে হয়।
7. স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
➛ যে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলো সহজেই চলাচল করতে পারে তাকে স্বচ্ছ মাধ্যম বলে। উদাহরণ: কাচ, জল, বায়ু প্রভৃতি হল স্বচ্ছ মাধ্যম।
8. অস্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
➛ যে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলো একেবারেই চলাচল করতে পারে না তাকে অস্বচ্ছ মাধ্যম বলে। উদাহরণ: কাঠ, মাটি, ইট, পাথর, লোহা প্রভৃতি হল অস্বচ্ছ মাধ্যম।
9. ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
➛ যে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলো আংশিকভাবে চলাচল করতে পারলেও ভালোভাবে পারে না, তাকে ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম বলে। উদাহরণ: ঘষা কাচ, কুয়াশা, তৈলাক্ত কাগজ, ট্রেসিং পেপার প্রভৃতি হল ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম।
10. একটি সাদা কাগজকে কীভাবে তুমি অস্বচ্ছ অথবা ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যমে পরিণত করবে?
➛ কোনো সাদা কাগজে ভুসাকালি বা ব্ল্যাক জাপান বা উপযুক্ত কালো রং দিয়ে রং করে দিলে, ওই কাগজ আপতিত আলোর সব অংশটুকুই শোষণ করে নেয়। কোনো অংশই কাগজের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। এক্ষেত্রে কালো রং করা কাগজটি অস্বচ্ছ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। আবার, সাদা কাগজে নারকেল বা সরষের তেলের প্রলেপ দিলে, তৈলাক্ত কাগজটি ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যমের মতো আচরণ করে। এর মধ্য দিয়ে আপতিত আলোকরশ্মি কিছুটা পরিমাণে চলাচল করতে পারলেও সম্পূর্ণভাবে পারে না।
11. আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝায়? এটি কয়প্রকার ও কী কী?
➛ আলোক-উৎস যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন তার থেকে নির্গত আলোকে অসংখ্য রশ্মির সমন্বয় বলে ধরা হয়। এইভাবে একসঙ্গে অসংখ্য আলোকরশ্মিকে আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলে। আলোকরশ্মিগুচ্ছ তিন প্রকার। যথা – ➀ সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ, ➁ অপসারী আলোকরশ্মিগুচ্ছ ও ➂ অভিসারী আলোকরশ্মিগুচ্ছ।
12. অপসারী আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝ?
➛ কোনো বিন্দু-উৎস থেকে নির্গত আলোকরশ্মিগুচ্ছ পরস্পর থেকে দূরে সরে গিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে, সেই রশ্মিগুচ্ছকে অপসারী আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলে। যেমন—টর্চ বা গাড়ির হেডলাইট থেকে নির্গত আলোকরশ্মিগুচ্ছ প্রকৃতিতে অপসারী হয় ৷
13. অভিসারী আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝায়?
➛ যে রশ্মিগুচ্ছের প্রতিটি আলোকরশ্মির অভিমুখ একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর দিকে হয় অর্থাৎ রশ্মিগুলি কোনো বিন্দুতে মিলিত হয় বা মিলিত হওয়ার চেষ্টা করে, তাদের অভিসারী আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলে। যেমন—সমান্তরাল আলোকরশ্মি আতশকাচ বা উত্তল লেন্স দ্বারা প্রতিসৃত হয়ে অভিসারী আলোকরশ্মিগুচ্ছে পরিণত হয়।
14. ছায়া কাকে বলে?
➛ আলো সরলরেখায় চলে। তাই আলোর গতিপথে কোনো অস্বচ্ছ বস্তু রাখলে বস্তুটির ঠিক পিছনের অংশে আলো পৌঁছোতে পারে না। ফলে বস্তুটির পিছনে কোনো পর্দা রাখলে, পর্দায় বস্তুর আকৃতির তুলনায় একটু বড়ো একটি অন্ধকার অঞ্চলের সৃষ্টি হয়। পর্দায় গঠিত এই অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চলকে ছায়া বলে।
15. প্রচ্ছায়া ও উপচ্ছায়া কাকে বলে?
➛ বিস্তৃত আলোক-উৎসের সামনে কোনো অস্বচ্ছ বস্তু থাকলে, বস্তুটির পিছনের পর্দায় বস্তুর যে অন্ধকার আকৃতির সৃষ্টি হয়, তার মাঝখানের গাঢ় অন্ধকারময় অংশকে ছায়া বা প্রচ্ছায়া এবং প্রচ্ছায়াকে ঘিরে থাকা আবছা অন্ধকার অংশকে উপচ্ছায়া বলে।
16. কোনো বস্তুর কখন প্রচ্ছায়া আর উপচ্ছায়া দুটিই গঠিত হয় এবং কখন শুধুই ছায়া গঠিত হয়?
➛ কোনো বস্তুর ছায়া গঠনের অন্যতম মূল উপাদান হল—আলোক-উৎস। আলোক-উৎস বড়ো হলে অর্থাৎ বিস্তৃত আলোক-উৎসের ক্ষেত্রে বস্তুর প্রচ্ছায়া আর উপচ্ছায়া দুটোই গঠিত হয়। কিন্তু আলোক-উৎস ছোটো হলে অর্থাৎ বিন্দু আলোক-উৎসের ক্ষেত্রে বস্তুর শুধুই ছায়া গঠিত হয়, কোনো উপচ্ছায়া গঠিত হয় না।
17. সূক্ষ্ম ফুটো করা পিচবোর্ডের মধ্যে দিয়ে মোমবাতির আলো পাঠিয়ে হাতের ওপর ফেললে উলটোদিকের দেয়ালে ছায়ার সৃষ্টি হয়। কখন হাতের দৈর্ঘ্য ও ছায়ার দৈর্ঘ্য সমান হবে এবং কখন ছায়ার দৈর্ঘ্য হাতের চেয়ে বড়ো হবে?
➛ সূক্ষ্ম ফুটো করা পিচবোর্ড এক্ষেত্রে বিন্দু আলোক-উৎসের ন্যায় কাজ করে। হাতকে দেয়ালের কাছে নিয়ে যেতে থাকলে দেয়াল স্পর্শ করার ঠিক আগের মুহূর্তে ছায়ার দৈর্ঘ্য ও হাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়। হাতকে মোমবাতির কাছে সরিয়ে আনলে ছায়ার দৈর্ঘ্য হাতের চেয়ে বড়ো হয়
18. একই বস্তুর ছায়া কখনও বড়ো আবার কখনও ছোটো হতে পারে কি? ব্যাখ্যা করো।
➛ ছায়ার আকার নির্ভর করে আলোর উৎস থেকে অস্বচ্ছ বস্তু এবং অস্বচ্ছ বস্তু থেকে পিছনের পর্দা বা যার ওপর ছায়া গঠিত হবে সেই বস্তুর দূরত্বের ওপর। তাই আলোক-উৎস ও পর্দার মধ্যে দূরত্ব একই রেখে, অস্বচ্ছ বস্তুটিকে যত পর্দার কাছে নিয়ে যাওয়া হবে তত ছায়ার আকার ছোটো হবে। আর অস্বচ্ছ বস্তুকে যত আলোক-উৎসের কাছে নেওয়া হবে ততই ছায়ার আকার বড়ো হবে। তাই বলা যায় একই বস্তুর ছায়া উৎস ও পর্দার বিভিন্ন অবস্থানের জন্য ছোটো বা বড়ো হতে পারে।
19. ছায়া কেন সৃষ্টি হয়?
➛ আলো সর্বদা সরলরেখায় গমন করে। তাই আলোর চলার পথে কোনো অস্বচ্ছ বস্তু ধরলে, আলো বাধা পায়। আর সামনে এগোতে পারে না। কিন্তু বস্তুর চারপাশে বাধা না পাওয়া আলো সরলরেখা বরাবর সামনে এগিয়ে যায়। ফলে বস্তুটির পিছনে কোনো পর্দা ধরলে তাতে বস্তুটির আকৃতিবিশিষ্ট অন্ধকার অংশ বা ছায়া গঠিত হয়।
20. একটি বিন্দু আলোক-উৎসের সামনে বিস্তৃত অস্বচ্ছ বস্তু থাকলে কীভাবে ছায়ার সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।
➛ P একটি বিন্দু আলোক-উৎস। এর সামনে AB একটি অস্বচ্ছ বস্তু। বস্তুটির পিছনে M একটি পর্দা। বিন্দু-উৎস থেকে আসা আলোকরশ্মিগুচ্ছ AB- এর ধার ঘেঁষে PAA' এবং PBB' পথে M পর্দায় গিয়ে পড়েছে। 'APB' ফানেল আকৃতির অংশের কোনো আলোকরশ্মিই পর্দায় পৌঁছোতে পারেনি। কারণ, তারা AB অস্বচ্ছ বস্তুতে বাধা পেয়েছে। বাকি আলোকরশ্মিগুচ্ছ পর্দায় পৌঁছোতে কোনো বাধা পায়নি। ফলে তারা পর্দাকে আলোকিত করেছে। তাই পর্দার A'B' অংশে কোনো আলো না পাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়েছে, এটিই AB বস্তুর ছায়া।
21. একটি বিস্তৃত আলোক-উৎস এবং ওই উৎসের সামনে যদি উৎসের চেয়েও বড়ো অস্বচ্ছ বস্তু থাকে তাহলে কীভাবে ছায়া সৃষ্টি হবে তা একটি চিত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করো। চিত্রে প্রচ্ছায়া ও উপচ্ছায়ার অবস্থান সঠিকভাবে চিহ্নিত করো। অথবা, একটি বিস্তৃত আলোক-উৎসের সামনে আকারে বড়ো অস্বচ্ছ বস্তু রাখলে কীভাবে প্রচ্ছায়া ও উপচ্ছায়া গঠিত হয়, তা ছবি এঁকে ব্যাখ্যা করো। অথবা, একটি চিত্রের সাহায্যে প্রচ্ছায়া ও উপচ্ছায়া দেখাও।
➛ ➀ AB একটি বিস্তৃত আলোক-উৎস। তার সামনে উৎসের চেয়ে আকারে বড়ো CD একটি গোলকাকার অস্বচ্ছ বস্তু এবং তার পিছনে Q একটি পর্দা রাখা আছে। ➁ বিস্তৃত উৎসটিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দু-উৎসের সমষ্টি হিসেবে ধরা যেতে পারে। উৎসের ওপরে এবং নীচে যথাক্রমে A ও B দুটি বিন্দু-উৎস ধরা হল। ➂ A থেকে নির্গত অপসারী আলোকরশ্মিগুচ্ছ CD বস্তুতে বাধা পেয়ে পর্দার GF অংশে ছায়া সৃষ্টি করে। আবার B থেকে নির্গত অপসারী আলোকরশ্মিগুচ্ছ পর্দার EH অংশে ছায়া সৃষ্টি করে। ④ ছায়ার GH অংশে আলোক-উৎসের কোনো অংশ থেকেই আলো আসছে না। এজন্য ছায়ার GH অংশ গাঢ় অন্ধকারাচ্ছন্ন। এই অংশকে প্রচ্ছায়া বলা হয়। ⑤ ছায়ার HF অংশে উৎসের ওপরের অংশ থেকে আলো না এলেও নীচের অংশ থেকে আলো আসে। তেমনি ছায়ার GE অংশে উৎসের নীচের অংশ থেকে আলো পৌঁছোয় না, কিন্তু ওপরের অংশ থেকে আলো পৌঁছোয়। সেজন্য HF ও GE অংশ আংশিক অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। এই আংশিক অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশকে উপচ্ছায়া বলা হয়।
22. ঘরের দেয়ালের কাছে একটা টেবিল নিয়ে তার ওপর একটা জ্বলন্ত মোমবাতি বসাও। একটা কার্ডবোর্ডের মাঝখানে সরু পেরেক দিয়ে ছিদ্র করো। ঘর অন্ধকার করে মোমবাতির শিখা ও দেয়ালের মাঝে কার্ডবোর্ডটিকে এমনভাবে ধরো যাতে কার্ডবোর্ডের ছিদ্রটা ও মোমবাতির শিখা একই উচ্চতায় থাকে। এবার সামনের দেয়ালটা লক্ষ্য করলে কী দেখতে পাওয়া যায়? দেয়ালে উলটানো মোমবাতির শিখার ছবি কীভাবে গঠিত হয়?
➛ সামনের দেয়ালের ওপর মোমবাতির শিখার একটি উলটানো প্রতিকৃতি দেখতে পাওয়া যায়। মোমবাতির শিখা থেকে চারদিকে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সব আলোকরশ্মি কার্ডবোর্ডের ছিদ্রটি দিয়ে যাচ্ছে না। P ছিদ্রের মধ্য দিয়ে মোমবাতির শিখার নীচের দিকে A বিন্দু থেকে আসা আলোকরশ্মি AA' পথে দেয়ালের ওপর A′ বিন্দুতে পৌঁছোয়। একইভাবে শিখার ওপরের দিকের B বিন্দু থেকে আসা আলোকরশ্মি BB´ পথে দেয়ালের ওপর B´ বিন্দুতে পৌঁছোয়। একইভাবে শিখার অন্যান্য বিন্দু থেকে আসা রশ্মি ছিদ্র P দিয়ে গিয়ে দেয়ালে পৌঁছোয়। ফলে দেয়ালের ওপর AB শিখার উলটানো প্রতিকৃতি B'A' পাওয়া যায়। আলো সরলরেখায় চলাচল করে বলেই এমনটা ঘটে।
23. বাড়িতে সূচিছিদ্র ক্যামেরা কীভাবে তৈরি করা যায়?
➛ জুতোর বাক্স বা এই ধরনের কোনো বড়ো আকৃতির বাক্স নিয়ে বাড়িতে সূচিছিদ্র ক্যামেরা তৈরি করা সম্ভব। বাক্সের একদিকের দেয়ালে ছুঁচ বা সরু পেরেক দিয়ে একটি ছোটো ছিদ্র করতে হবে। তার ঠিক উলটো দিকের দেয়ালটি কেটে বাদ দিয়ে সেখানে ট্রেসিং পেপার বা ঘষা কাচ দিয়ে একটি দেয়াল বানাতে হবে। এটিই হল ক্যামেরার পর্দা। এবার অন্ধকার ঘরে গিয়ে বাক্সের দেয়ালের ওই ছিদ্রের কাছে একটি মোমবাতির শিখা ধরলে উলটোদিকের ঘষা কাচ বা ট্রেসিং পেপারের দেয়ালে মোমবাতির শিখার উলটো প্ৰতিকৃতি দেখা যাবে। সুতরাং, এই বাক্সটিই হল সূচিছিদ্র ক্যামেরা।
24. দুটি উপায় বলো যাতে সূচিছিদ্র ক্যামেরায় গঠিত প্রতিকৃতির আকার বড়ো করা যেতে পারে।
➛ সূচিছিদ্র ক্যামেরায় গঠিত প্রতিকৃতি বড়ো করার উপায় হল— ➀ সূচিছিদ্রকে বস্তুর কাছে আনতে হবে কিংবা ➁ পর্দাকে ছিদ্র থেকে দূরে সরাতে হবে।
25. সূচিছিদ্র ক্যামেরার ছিদ্রটি বড়ো হলে প্রতিকৃতির কী পরিবর্তন হয়?
অথবা, সূচিছিদ্র ক্যামেরার ছিদ্রটি যথাসম্ভব ছোটো করা হয় কেন?
➛ সূচিছিদ্র ক্যামেরার ছিদ্র বড়ো হলে প্রতিকৃতি অস্পষ্ট হবে। কারণ—একটি বড়ো ছিদ্রকে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রের সমষ্টি হিসেবে কল্পনা করা যায়। প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র একটি করে প্রতিকৃতির সৃষ্টি করে। কিন্তু এই প্রতিকৃতিগুলির অবস্থান একই হয় না, অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন প্রতিকৃতির অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে প্রতিকৃতিগুলি পরস্পরের খুবই কাছাকাছি থাকে। ফলে প্রতিকৃতিগুলি একে অপরের ওপর পড়ে অস্পষ্ট হয়ে যায়। সূচিছিদ্র ক্যামেরার ছিদ্রটি যথাসম্ভব ছোটো করা হলে, স্পষ্ট প্রতিকৃতি সৃষ্টি হয়।
26. সূচিছিদ্র ক্যামেরায় উৎপন্ন প্রতিকৃতির বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
অথবা, সূচিছিদ্র ক্যামেরায় তৈরি প্রতিকৃতির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
➛ সূচিছিদ্র ক্যামেরায় উৎপন্ন প্রতিকৃতির বৈশিষ্ট্যগুলি হল— ➀ বস্তু সাপেক্ষে প্রতিকৃতি উলটো হয়। ➁ সূচিছিদ্র থেকে বস্তুকে দূরে সরালে প্রতিকৃতির আকার ছোটো হবে এবং কাছে আনলে প্রতিকৃতিটি বড়ো হবে। ➂ ছিদ্র থেকে উৎসের দূরত্ব স্থির রেখে বাক্সের দৈর্ঘ্য বড়ো করলে অর্থাৎ ঘষা কাচকে ছিদ্র থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেলে, প্রতিকৃতির আকার বড়ো হবে। ④ বাক্সের দৈর্ঘ্য কমালে অর্থাৎ ঘষা কাচকে ছিদ্রের কাছে সরিয়ে আনলে, প্রতিকৃতির আকার ছোটো হবে। ⑤ ছিদ্র বড়ো হলে প্রতিকৃতি অস্পষ্ট হবে। ⑥ এই ক্যামেরায় গঠিত প্রতিকৃতি আলোকীয় প্রতিবিম্ব নয়। আলোকীয় প্রতিবিম্ব গঠনের নীতি এখানে অনুসৃত হয় না। ⑦ ছিদ্রের আকৃতি যাই হোক না কেন, প্রতিকৃতির আকৃতি সবসময় বস্তুর মতোই হবে।
27. সাধারণ ক্যামেরার সঙ্গে সূচিছিদ্র ক্যামেরার পার্থক্য কী?
➛ সাধারণ ক্যামেরায় বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হওয়ায়, ফিল্ম লাগিয়ে সহজে ছবি তোলা যায়। কিন্তু সূচিছিদ্র ক্যামেরায় বস্তুর প্রতিকৃতি গঠিত হয় মাত্র, তা মোটেই প্রতিবিম্ব নয়। তাই এই ক্যামেরায় ফিল্ম লাগিয়ে ছবি তুলতে অনেক সময় লাগে। কারণ এক্ষেত্রে আলোকে অনেকক্ষণ ভিতরে প্রবেশ করাতে হয়।
28. বড়ো গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে মাটিতে গোল গোল অসংখ্য আলোর পটি তৈরি করে। কোন ক্যামেরায় সূর্যের এই ছবি উঠল?
➛ সূচিছিদ্র ক্যামেরায় সূর্যের এই ছবি উঠল। বড়ো গাছের পাতার মধ্যে খুব ছোটো ছোটো ফাঁক থাকে, যা সূচিছিদ্রের মতো কাজ করে। এগুলির মধ্যে দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে মাটিতে গোল গোল অসংখ্য আলোর পটি তৈরি করে, যেগুলো আসলে সূর্যের প্রতিকৃতি।
29. জানালা বা ভেন্টিলেটরের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে ঘরের মেঝেতে বা দেয়ালে গোল গোল সূর্যের প্রতিকৃতি তৈরি করে। এখানে কোটি ক্যামেরার ন্যায় আচরণ করে?
➛ এখানে অসীম দূরে অবস্থিত সূর্য আলোক-উৎস, জানালা বা ভেন্টিলেটরের ছোটো ফাঁক সূচিছিদ্র এবং ঘরের মেঝে বা দেয়াল পর্দার ন্যায় আচরণ করে। এই সবগুলি একসাথে মিলে একটি সুচিছিদ্র ক্যামেরার মতো আচরণ করে। ফলে সূর্যের আলো জানালা বা ভেন্টিলেটরের ফাঁকের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করে ঘরের মেঝেতে বা দেয়ালে গোল গোল সূর্যের প্রতিকৃতি তৈরি করে।
30. একটি লাঠিকে লম্বভাবে মাটিতে পুঁতে রেখে সারাদিন লাঠির ছায়ার দৈর্ঘ্যটি লক্ষ করা হল। লাঠির ছায়ার দৈর্ঘ্য কখন সবচেয়ে ছোটো এবং কখন সবচেয়ে বড়ো হয়?
➛ দুপুরবেলায় সূর্য যখন মধ্যগগনে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের সাথে লম্বভাবে থাকে, তখন লক্ষ করলে দেখা যায় লাঠির ছায়ার দৈর্ঘ্য সবচেয়ে ছোটো। আবার সূর্যের উদয়ের ঠিক পরে এবং অস্তের ঠিক আগে সূর্য যখন দিগন্তরেখার একটু ওপরে থাকে তখন লাঠির ছায়ার দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বড়ো হয়।
31. অন্ধকার ঘরে একটা টর্চ বা মোমবাতি জ্বালিয়ে তার সামনে দু-হাতের তালু ও আঙুল নানাভাবে ধরলে দেওয়ালে কী দেখা যায়?
➛ অন্ধকার ঘরে একটা টর্চ বা মোমবাতি জ্বালিয়ে তার সামনে দু-হাতের তালু ও আঙুল নানা ভঙ্গিমায় ধরলে বিভিন্ন পরিচিত বস্তু ও পশুপাখির আকৃতির ছায়া দেয়ালে গঠিত হয়। এই ধরনের কৌশলকে শ্যাডো আর্ট বলা হয়।
32. ঘরের মধ্যে সূর্যের আলো প্রবেশ করছে। ওই উজ্জ্বল আলোর মধ্যে আয়না ধরলে কী হবে? আয়নাটাকে ঘোরালে কী ঘটবে?
➛ ঘরের জানালার মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করছে। ওই উজ্জ্বল আলোর মধ্যে আয়না ধরলে সূর্যের আলো আয়নার ওপর পড়ে একটি নির্দিষ্ট দিকে ফিরে আসবে। এই ঘটনাকে আলোর প্রতিফলন বলে। আয়নাটাকে ধীরে ধীরে ঘোরালে ফিরে আসা আলোকরশ্মি দিক পরিবর্তন করতে থাকবে।
33. আলোর প্রতিফলন কাকে বলে?
➛ আলো যখন এক মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে দ্বিতীয় কোনো ভিন্ন ঘনত্বের মাধ্যমে আপতিত হয়, তখন দুই মাধ্যমের বিভেদতল থেকে আপতিত আলোর কিছু অংশ আবার প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে। এই ঘটনাকে আলোর প্রতিফলন বলে।
34. আপতিত আলোকরশ্মি ও প্রতিফলিত আলোকরশ্মি কাকে বলে?
➛ যে পথে আলো এসে কোনো প্রতিফলকের ওপর পড়ে তাকে আপতিত আলোকরশ্মি বলে এবং পতিফলনের পর আলো যে পথে ফিরে যায় তাকে প্রতিফলিত আলোকরশ্মি বলে।
35. সমতল দর্পণে আলোর প্রতিফলনের চিত্র অঙ্কন করো এবং আপতন বিন্দু, প্রতিফলন কোণ ও আপতন কোণ চিহ্নিত করো। অথবা, চিত্রের সাহায্যে আপতন কোণ, প্রতিফলন কোণ এবং অভিলম্বকে চিহ্নিত করো। অথবা, আয়নায় আলোকরশ্মির প্রতিফলনের চিত্র অঙ্কন করো।
➛ সমতল দর্পণ খুব মসৃণ হওয়ায় আলোর নিয়মিত প্রতিফলন হয়। সংশ্লিষ্ট চিত্রে M1 M2 একটি সমতল দর্পণ।
➀ AO আলোকরশ্মি দর্পণের O বিন্দুতে আপতিত হয়ে OB পথে প্রতিফলিত হয়। এখানে AO আপতিত রশ্মি এবং OB প্রতিফলিত রশ্মি। O বিন্দুটি হল আপতন বিন্দু। ON হল আপতন বিন্দুতে দর্পণের ওপর অঙ্কিত অভিলম্ব। ➁ আপতিত রশ্মি অভিলম্বের সঙ্গে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে আপতন কোণ বলে। <AON হল আপতন কোণ। ➂ প্রতিফলিত রশ্মি অভিলম্বের সঙ্গে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে বলা হয় প্রতিফলন কোণ। এখানে <BON হল প্রতিফলন কোণ।
36. আপতন বিন্দু ও অভিলম্ব কাকে বলে?
➛ প্রতিফলকের ওপর যে বিন্দুতে আপতিত আলো এসে পড়ে, তাকে আপতন বিন্দু এবং আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের ওপর অঙ্কিত লম্বকে অভিলম্ব বলে।
37. আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ কাকে বলে?
➛ আপতিত রশ্মি ও অভিলম্বের মধ্যবর্তী কোণকে আপতন কোণ এবং অভিলম্ব ও প্রতিফলিত রশ্মির মধ্যবর্তী কোণকে প্রতিফলন কোণ বলে
38. আলোর প্রতিফলনের সূত্র দুটি লেখো।
➛ আলোর প্রতিফলন নিম্নলিখিত সূত্র দুটি মেনে চলে— ➀ আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণের মান সর্বদা সমান হয়। ➁ আপতিত রশ্মি, প্রতিফলিত রশ্মি ও প্রতিফলকের ওপরে আপতন বিন্দুতে আঁকা অভিলম্ব একই সমতলে থাকে।
39. একটি আলোকরশ্মির প্রতিফলন কোণ 30° । আপতিত রশ্মির সঙ্গে দর্পণের কোণ কত?
➛ প্রতিফলন কোণ, <BOM = 30°
ஃ প্রতিফলনের সূত্রানুযায়ী, আপতন কোণ, <AOM = 30°
অভিলম্ব প্রতিফলকের সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থান করে।
ஃ<POM = 90°
চিত্রানুযায়ী, <AOP = <POM - <AOM = 90° - 30° = 60°
40. একটি আলোকরশ্মি সমতল দর্পণে 60° কোণে আপতিত হলে আপতিত ও প্রতিফলিত রশ্মির মধ্যবর্তী কোণের মান কত?
➛ সমতল দর্পণে প্রতিফলনের ক্ষেত্রে,
আপতন কোণের মান = প্রতিফলন কোণের মান
সুতরাং, এক্ষেত্রে প্রতিফলন কোণের মান 60°
অর্থাৎ, আপতিত রশ্মি ও প্রতিফলিত রশ্মির মধ্যবর্তী কোণের মান
= 60° +60° = 120°
41. একটি আলোকরশ্মি প্রতিফলকের ওপর কত কোণে আপতিত হলে আপতিত এবং প্রতিফলিত রশ্মি একে অপরের ওপর লম্ব হবে?
➛ মনে করা যাক, রশ্মিটির আপতন কোণ = i
প্রতিফলনের সূত্রানুযায়ী, প্রতিফলন কোণ = i
অতএব, আপতিত ও প্রতিফলিত রশ্মিদ্বয়ের মধ্যবর্তী কোণ = i + i = 2i
প্রশ্নানুযায়ী, 2i = 90° বা, i = 45°
অতএব, আলোকরশ্মি প্রতিফলকের ওপর 45° কোণে আপতিত হলে আপতিত এবং প্রতিফলিত রশ্মি একে অপরের ওপর লম্ব হবে।
42. একটি আলোকরশ্মি একটি সমতল দর্পণের ওপর দর্পণের তলের সঙ্গে 40° কোণে আপতিত হল। আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ কত? আপতিত রশ্মি ও প্রতিফলিত রশ্মির মধ্যে কোণ কত?
➛ চিত্রানুযায়ী AO আপতিত রশ্মি, OB বিন্দুতে দর্পণের ওপর অঙ্কিত অভিলম্ব ON
ஃ আপতন কোণ = <AON = 90° - 40° = 50°
ஃ প্রতিফলন কোণ = <NOB = 50° [প্রতিফলনের সূত্রানুযায়ী]
আপতিত রশ্মি এবং প্রতিফলিত রশ্মির মধ্যে কোণ
= <AOB = <AON + <NOB = 50° + 50° = 100°
43. নিয়মিত প্রতি কাকে বলে? আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে এরূপ দুটি প্রতিফলকের নাম লেখো।
➛ মসৃণ তলে যখন আলোর প্রতিফলন ঘটে তখন সেই প্রতিফলন হল নিয়মিত প্রতিফলন আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে এরূপ দুটি প্রতিফলক–➀ আয়না, ➁ চকচকে স্টিলের মসৃণ বাটি।
44. মসৃণ সমতলে প্রতিফলনের ক্ষেত্রে আপতিত আলোকরশ্মিগুচ্ছের সঙ্গে প্রতিফলিত রশ্মিগুচ্ছের প্রকৃতির সম্পর্ক কীরূপ? উদাহরণ দাও।
➛ মসৃণ সমতলে প্রতিফলন বা নিয়মিত প্রতিফলনের সময় আপতিত আলোর রশ্মিগুচ্ছ একটি বিশেষ ধরনের হলে প্রতিফলিত রশ্মিগুলিও সেই বিশেষ ধরনেরই হয়। যেমন—আপতিত রশ্মিগুচ্ছ সমান্তরাল, অভিসারী কিংবা অপসারী হলে প্রতিফলিত রশ্মিগুচ্ছও যথাক্রমে সমান্তরাল, অভিসারী কিংবা অপসারী-ই হবে।
45. মসৃণ সমতলে প্রতিফলনের সঙ্গে মসৃণ বক্রতলে প্রতিফলনের একটি পার্থক্য লেখো।
➛ মসৃণ সমতলে প্রতিফলনের সময় আপতিত আলোকরশ্মিগুচ্ছ একটি বিশেষ ধরনের হলে প্রতিফলিত রশ্মিগুলিও একই প্রকারের হয়। যেমন—আপতিত রশ্মিগুচ্ছ অপসারী হলে প্রতিফলিত রশ্মিগুচ্ছও অপসারী-ই হবে। কিন্তু, মসৃণ বক্রতলে প্রতিফলনের সময় প্রতিফলিত রশ্মিগুলি আপতিত রশ্মিগুলির মতো একই ধরনের নাও হতে পারে। যেমন—আপতিত রশ্মিগুচ্ছ অপসারী হলে প্রতিফলিত রশ্মিগুচ্ছ অপসারী না হয়ে সমান্তরাল বা অভিসারীও হতে পারে।
46. বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন কাকে বলে? আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে এরূপ দুটি প্রতিফলকের নাম লেখো।
➛ অমসৃণ তলে আলোর প্রতিফলন হলে সেই প্রতিফলনকে বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন বলে। আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে এরূপ দুটি প্রতিফলক—ঘরের দেয়াল, সাদা কাগজ।
47. সিনেমার পর্দা অমসৃণ করা হয় কেন?
➛ সিনেমার পর্দা অমসৃণ করা হয়, কারণ পর্দা অমসৃণ হওয়ায় আপতিত আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে। ফলে প্রতিফলিত রশ্মি সিনেমা হলের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রত্যেক দর্শকের চোখে পৌঁছোয়। তাই হলের যে-কোনো জায়গা থেকে দর্শকরা ছবি সমান উজ্জ্বলভাবে দেখতে পায়।
48. বইয়ের পাতা সাদা ও খসখসে হয় কেন?
➛ বইয়ের পাতা সাদা ও খসখসে করা হয় কারণ, সাদা বর্ণ সমস্ত বর্ণের আলোকরশ্মিকে প্রতিফলিত করতে পারে এবং খসখসে পৃষ্ঠতল বিক্ষিপ্তভাবে আলোর প্রতিফলনের দ্বারা আলোকে সবদিকে ছড়িয়ে দেয়। ফলে সাদা ও খসখসে বইয়ের পাতায় সবদিক থেকে যে-কোনো বর্ণের লেখা বা ছবি পরিষ্কার দেখা যায়।
49. 'আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনে ব্যাবহারিক সুবিধা পাওয়া যায়’—তোমার অভিজ্ঞতা থেকে এর উদাহরণ দাও।
➛ আলো কোনো বস্তুর ওপর পড়ে বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিফলিত হলে সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার ফলে প্রতিফলকটি সবদিক থেকে দৃশ্যমান হয়।আমরা প্রতিদিনের জীবনে যেসব জিনিস দেখতে পাই তার প্রায় সবগুলি থেকেই আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন হয়। তাই যে-কোনো দিক থেকেই তাদের দেখা যায়।
50. আলোর প্রতিফলনের জন্য আমরা কী সুবিধা পেতে পারি?
➛ আলোর প্রতিফলনের জন্য আমরা যে সকল সুবিধা পেতে পারি সেগুলি হল— ➀ আমাদের চারপাশের সব অপ্রভ বস্তু যেমন ঘরের দেয়াল, মেঝে, চেয়ার, টেবিল, বিছানা, বই, খাতা, পেনসিল ইত্যাদি থেকে আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন হয়। তাই আমরা প্রতিফলকগুলিকে দেখতে পাই। ➁ নিয়মিত প্রতিফলনের জন্য আমরা দর্পণে প্রতিবিম্ব দেখতে পাই। কারণ নিয়মিত প্রতিফলনে উৎসের প্রতিবিম্ব গঠিত হয়।
Tags : class 7 science chapter 1.2 in bengali,wbbse class 7 science chapter 1,class 7 chapter 1.2 light in bengali,class 7 science chapter 1.2 light in bengali,class 7 science,class 7 science chapter 1.2,class 7 science chapter 1 light,class 7 science chapter 1.2 question answer,class 7,class 7 science chapter 1 in bengali,class 7 science chapter 1.ii light in bengali