শিক্ষাবিস্তারে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক কী? উচ্চশিক্ষার বিকাশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা আলোচনা করো।

 

১। শিক্ষাবিস্তারে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক কী? উচ্চশিক্ষার বিকাশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা আলোচনা করো। (মার্ক : ৫+৩ =৮)

ভূমিকা :  ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির শাসনের প্রাথমিক পর্বে সাধারণভাবে প্রাচ্যশিক্ষার ওপরই জোর দেওয়া হয়েছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে ভারতীয়দের শিক্ষাখাতে ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয় এবং এদেশে শিক্ষার প্রসারের জন্য একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করার কথা ভাবা হয় কিন্তু বরাদ্দ এই অর্থ প্রাচ্য না পাশ্চাত্য কোন শিক্ষার জন্য ব্যয় করা হবে তা নিয়ে জনশিক্ষা কমিটির সদস্যদের মধ্যে যে তীব্র দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়  তা ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব' নামে পরিচিত।

প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক :

প্রাচ্যবাদী : প্রাচ্যবাদীরা চাইছিলেন ভারতে এদেশের সাহিত্য, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষাদানে উক্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হোক। কোলব্রুক, এইচ টি প্রিন্সেপ, উইলসন প্রমুখ ছিলেন প্রাচ্যবাদী মতের সমর্থক ।

পাশ্চাত্যবাদী : পাশ্চাত্যবাদীগণ দাবি করেন ভারতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ অর্থ পাশ্চাত্য শিক্ষায় (যেমন, ইংরেজি ও বিদেশি অন্যান্য ভাষা, আধুনিক বিজ্ঞান ইত্যাদি) ব্যয় করা হোক। মেকলে, আলেকজান্ডার ডাফ, স্যান্ডার্স প্রমুখ ছিলেন পাশ্চাত্যবাদী মতের সমর্থক।

রামমোহন রায়ের উদ্যোগ : ভারতে শিক্ষাখাতে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বরাদ্দ ১ লক্ষ টাকা যাতে এদেশের পাশ্চাত্য শিক্ষায় ব্যয় করা হয় তার সমর্থনে রাজা রামমোহন রায় ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে এক পত্র লিখে ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ করেন। শিক্ষিত ভারতীয়দের অন্যতম প্রতিনিধি রামমোহনের এমত উদ্যোগকে ব্রিটিশ সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়।

মেকলে মিনিট  দ্বন্দ্বের অবসান : ভারতের বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সময়কালে এদেশের জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন টমাস ব্যাবিংটন মেকলে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি বেন্টিঙ্ককে একটি প্রস্তাব বা মিনিট প্রদান করে। ওই প্রস্তাবে মেকলে দাবি করে জানান ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার ক্ষেত্রে বরাদ্দ অর্থ ব্যয় করা হোক। মেকলের উক্ত মিনিটই ‘মেকলে মিনিট' নামে অভিহিত হয়। এমত পরিস্থিতিতে বেন্টিঙ্ক পাশ্চাত্য শিক্ষাকে সরকারি শিক্ষানীতি হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলেন। এইভাবেই ভারতে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে এবং পাশ্চাত্যবাদীরা জয়ী হন।

উচ্চশিক্ষার বিকাশে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা : ভারতে পাশ্চাত্য ধাঁচে আধুনিক উচ্চতর শিক্ষার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে লর্ড ক্যানিং-এর শাসনকালে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ২৪ জানুয়ারি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এদেশে উচ্চশিক্ষার বিকাশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা : কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হল ভারতের প্রাচীনতম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাশ্চাত্য ধাঁচের বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্বে লাহোর থেকে রেঙ্গুন এবং শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের পরিধি বিস্তৃত ছিল। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের উচ্চশিক্ষা তখন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত।

পরিচালনা : কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য ছিলেন লর্ড ক্যানিং এবং প্রথম উপাচার্য ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার জেমস উইলিয়াম কোলভিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় উপাচার্য ছিলেন স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় । এটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাশ্চাত্য ধাঁচের বিশ্ববিদ্যালয় ।

উৎকৃষ্টতা বৃদ্ধি : ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় উপাচার্য হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করলে এর উৎকৃষ্টতা বৃদ্ধি পায়। তাঁর আমলকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণযুগ বলা হয়। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও যদুনাথ বোস এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতক হন ।  ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা স্নাতক ছিলেন কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ও চন্দ্রমুখী বসু।

উপসংহার : ভারতে উচ্চশিক্ষার বিকাশে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এদেশে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশ, উচ্চশিক্ষায় নতুন নতুন ধারার প্রসার এবং প্রবাদপ্রতীম অধ্যাপকগণের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার প্রক্রিয়াকে সম্প্রসারিত করার কাজটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিরন্তরভাবে করে চলেছে।

Tags : প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব কি,প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দন্দ সম্পর্কে লেখো,সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব,মাধ্যমিক ইতিহাস প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব,প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব সম্পর্কে আলোচনা করো,প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের বিস্তারিত আলোচনা করো

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন