সূচিপত্র (Index) :
১. বিদ্যাসাগরকে কে, কেন ট্রাডিশনাল মর্ডানাইজার' বলেছেন?
২. ‘নব্যবঙ্গ আন্দোলন' (Young Bengal Movement) বলতে কী বোঝো?
৩. সমাজসংস্কারে নব্যবাদের ভূমিকা কী ছিল?
৪. কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণীয় কেন?
৫. ব্রাহ্মসমাজের যে-কোনো দুটি সমাজসংস্কারমূলক কাজের উল্লেখ করো।
৬. মধুসূদন গুপ্ত স্মরণীয় কেন?
অথবা, মধুসূদন গুপ্ত কে ছিলেন?
৭. স্কুল বুক সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?
৮. ‘উডের নির্দেশনামা' (Wood's Despatch) কী?
৯. 'প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্ব' বলতে কী বোঝো?
অথবা, ‘প্রাচ্যবাদী’(Orientalist) ও ‘পাশ্চাত্যবাদী' (Anglicist) কাদের বলা হয়?
১০. 'মেকলে মিনিট' কী?
১১. শ্রীরামপুর ত্রয়ী কাদের বলা হয়?
১২. ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি কী?
১৩. বাংলার নারীশিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো?
অথবা, ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা লেখো ।
১৪. উডের ডেসপ্যাচ-কে (১৮৫৪ খ্রি.) মহাসনদ (ম্যাগনা কার্টা) বলা হয় কেন?
১৫. লর্ড হার্ডিঞ্জ-এর “শিক্ষা বিষয়ক নির্দেশনামা' গুরুত্বপূর্ণ কেন?
১৬. এ দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?
১৭. ডেভিড হেয়ার কেন বিখ্যাত?
১৮. ‘নীলদর্পণ' নাটকটি বাংলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কেন?
অথবা, দেশপ্রেমের উন্মেষে নীলদর্পণ নাটকের ভূমিকা কতখানি ছিল?
১৯. সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের মধ্যে পার্থক্য কী?
২০. সমাজসংস্কারে নব্যবঙ্গদের ভূমিকা কী ছিল?
২১. গ্রামবার্ত্তা পত্রিকা কেন একটি ব্যতিক্রমী পত্রিকা ছিল?
২২. আধুনিক ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের গুরুত্ব কী?
২৩. অকল্যান্ড মিনিট কী?
২৪. কোম্পানির শিক্ষাক্ষেত্রে চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলতে কী বোঝায়?
২৫. 'নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী' কাদের বলা হত?
২৬. 'বাংলার নবজাগরণ' বলতে কী বোঝায়?
২৭. সমাজসংস্কারে নব্যবঙ্গদের ভূমিকা কী ছিল?
২৮. লালন ফকির কে ছিলেন?
অথবা, লালন ফকির স্মরণীয় কেন?
২৯. 'নব্যবেদান্তবাদ' কী?
অথবা, ‘নব্যবেদান্তবাদ' বলতে কী বোঝো?
৩০. ‘তিন আইন’ কী?
৩১. 'নববিধান' কী?
৩২. ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হল কেন?
৩৩. ব্রাহ্মসমাজের যে-কোনো দুটি সমাজ সংস্কারমূলক কাজের উল্লেখ করো।
মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০২৬ সাজেশন (Mark-2) | ![]() |
---|---|
(১) ইতিহাসের ধারণা ☞ | Click |
(২) সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ☞ | Click |
(৩) প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ☞ | Click |
(৪) সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ ☞ | Click |
(৫) বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ☞ | Click |
(৬) বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ☞ | Click |
(৭) বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ ☞ | Click |
(৮) উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭–১৯৬৪) ☞ | Click |
১. বিদ্যাসাগরকে কে, কেন ট্রাডিশনাল মর্ডানাইজার' বলেছেন?
➱ ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী বিদ্যাসাগরকে ট্রাডিশনাল মর্ডানাইজার’ বলেছেন। কারণ— বিদ্যাসাগর ভারতবর্ষের প্রাচীন ঐতিহ্যকে আশ্রয় করেই সমাজসংস্কারে ব্রতী হয়েছিলেন। যেমন—বিধবাবিবাহ প্রবর্তনে তিনি পরাশর সংহিতাকেই হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও বিদ্যাসাগর রাজা রামমোহন রায়ের দেখানো পথেই গতানুগতিকভাবে সমাজসংস্কারে ব্রতী হন।
২. ‘নব্যবঙ্গ আন্দোলন' (Young Bengal Movement) বলতে কী বোঝো?
➱ পাশ্চাত্য অনুরাগী মানবতাবাদের মূর্ত প্রতীক যুক্তিনিষ্ঠ উচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর নেতৃত্বে তরুণ সম্প্রদায় সমাজের পুরোনো সব কিছুরই সমালোচনা করেন এবং প্রচলিত হিন্দুধর্ম ও সামাজিক কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তাঁদের এই আন্দোলন ‘নব্যবঙ্গ আন্দোলন' নামে পরিচিত। ‘নব্যবঙ্গ আন্দোলন'-এর প্রাণপুরুষ ছিলেন ডিরোজিও।
৩. সমাজসংস্কারে নব্যবাদের ভূমিকা কী ছিল?
➱ পাশ্চাত্য অনুরাগী মানবতাবাদের মূর্ত প্রতীক লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর নেতৃত্বে তরুণ সম্প্রদায় সমাজের পুরোনো সব কিছুরই সমালোচনা করেন এবং প্রচলিত হিন্দুধর্ম ও সামাজিক কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তাঁদের এই আন্দোলন নব্যবঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত। মধ্যযুগীয় সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ডিরোজিও ভারতীয় সমাজের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন এবং তাঁর ছাত্রদের মধ্যে দেশপ্রেম ও যুক্তিবাদ সঞ্চারিত করেন। সমাজে প্রচলিত জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, মূর্তিপূজা, সতীদাহপ্রথা ও প্রচলিত যুক্তিবিহীন হিন্দু আচারসর্বস্বতার বিরুদ্ধে তিনি ও তাঁর অনুগামী নব্যবঙ্গীয়রা আক্রমণ চালিয়েছিলেন।
৪. কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণীয় কেন?
➱ কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের প্রথম দুই মহিলা স্নাতকের একজন এবং প্রথম মহিলা চিকিৎসক। তিনি ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে বেথুন কলেজ থেকে স্নাতক হন এবং ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রের পাশাপাশি
তিনি রাজনীতিতেও সমানভাবে সক্রিয় ছিলেন। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইতে কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশন ছয়জন নির্বাচিত নারী প্রতিনিধির মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। এজন্যই তিনি বিশেষ ভাবে স্মরণীয়।
৫. ব্রাহ্মসমাজের যে-কোনো দুটি সমাজসংস্কারমূলক কাজের উল্লেখ করো।
➱ ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজের উল্লেখযোগ্য দুটি সংস্কারমূলক কাজ হল—① একেশ্বরবাদ বা নিরাকার ব্রহ্ণের উপাসনার মাধ্যমে হিন্দুধর্মের কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতা, জাতিভেদপ্রথা, অস্পৃশ্যতা দূর করার চেষ্টা করে ব্রাহ্মসমাজ। ② সতীদাহপ্রথার মতো অমানবিক কুপ্রথা দূরীকরণ, স্ত্রীশিক্ষার প্রসারে সর্বাগ্রগণ্য ছিল ব্রাহ্মসমাজ ও তার বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
৬. মধুসূদন গুপ্ত স্মরণীয় কেন?
অথবা, মধুসূদন গুপ্ত কে ছিলেন?
➱ উনিশ শতকের বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে প্রথম প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ডাক্তার ছিলেন মধুসূদন গুপ্ত। প্রথাগত স্কুল শিক্ষার শেষে তিনি সংস্কৃত কলেজে ভরতি হন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দ) স্থাপিত হলে তিনি সেখানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। হিন্দু সামাজিক সংস্কার অমান্য করে তিনিই প্রথম প্রতিবাদী যিনি ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর মানব *মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করেন। আধুনিক পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসে তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি ব্যাবহারিক পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতির প্রথম সোপান রচনা করেছিলেন।
✱ "মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ " — এই বাক্যটির অর্থ?
▹ মধুসূদন গুপ্ত প্রথম বাঙালি হিসেবে একটি মৃতদেহ কেটে তার অভ্যন্তরীণ গঠন দেখেছিলেন, যা মূলত চিকিৎসা শিক্ষার অংশ হিসেবে করা হয়। একে বলা হয় মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ। এই কাজটি ১৮৩৬ সালে কোলকাতা মেডিকেল কলেজে করা হয়েছিল। সেই সময় হিন্দু সমাজে মৃতদেহ ছোঁয়া বা কাটা ছিল একরকম ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু মধুসূদন গুপ্ত সেই সামাজিক বাধা ভেঙে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেন। এর ফলে ভারতে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষা পথ সুগম হয়।
৭. স্কুল বুক সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?
➱ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রাধাকান্ত দেব, ডেভিড হেয়ার প্রমুখ। এই সোসাইটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনা করে শিক্ষাকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
৮. ‘উডের নির্দেশনামা' (Wood's Despatch) কী?
➱ ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই বোর্ড অব কনট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উড শিক্ষা সংক্রান্ত যে পরিকল্পনা সুপারিশ পেশ করেন তা উডের নির্দেশনামা নামে পরিচিত।
৯. 'প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্ব' বলতে কী বোঝো?
অথবা, ‘প্রাচ্যবাদী’(Orientalist) ও ‘পাশ্চাত্যবাদী' (Anglicist) কাদের বলা হয়?
➱ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন অনুযায়ী (Charter Act) ভারতীয় জনশিক্ষার জন্য কোম্পানি প্রতি বছর এক লক্ষ টাকা ব্যয় করবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরী হয়। এই মর্মে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে ‘জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশান' বা ‘জনশিক্ষা কমিটি’ গঠিত হয়। উক্ত এক লক্ষ টাকা কোন শিক্ষা খাতে ব্যয় হবে তা নিয়ে জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা দু-দলে ভাগ হয়ে যায়। প্রাচ্যবাদী (Orientalist) : ইলিয়ট ম্যাকনাটেন, জে. সি. সাদারল্যান্ড, এইচ. টি. প্রিন্সেপ, কোলব্রুক প্রমুখ প্রাচ্য ভাষা তথা সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ব্যাকরণ, জ্যোতিষচর্চার পক্ষপাতী ছিলেন, তাঁরা প্রাচ্যবাদী নামে পরিচিত। এবং পাশ্চাত্যবাদী (Anglicist) : স্যার জন শোর, চার্লস গ্রান্ট, জেমস মিল, জে. আর কলভিন প্রমুখ যাঁরা পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞান, পাশ্চাত্য দর্শন, আইন ইত্যাদির সপক্ষে ছিলেন তাঁরা পাশ্চাত্যবাদী নামে পরিচিত।
সুতরাং, সরকার কর্তৃক বরাদ্দ এক লক্ষ টাকা কোন্ খাতে ব্যয় করা হবে, তা নিয়ে এই দু-পক্ষের দ্বন্দ্ব (১৮১৩-১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দ) চলতে থাকে, একে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব বলে। এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে মেকলে মিনিটের দ্বারা।
১০. 'মেকলে মিনিট' কী?
➱ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রারম্ভে টমাস ব্যাবিংটন মেকলের নাম নিঃসন্দেহে স্মরণীয়। তিনি ছিলেন লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আইনসচিব ও ‘জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন' বা জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন অনুযায়ী ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এই টাকা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষাখাতে ব্যয়িত হবে এই নিয়ে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে তুমুল মতানৈক্য দেখা দেয়। এমতাবস্থায় লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের আইনসচিব পাশ্চাত্য শিক্ষানুরাগী মেকলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারের পক্ষে যে মিনিট বা প্রস্তাব পেশ করেন, তাকে ‘মেকলে মিনিট’ বা ‘মেকলে প্রস্তাব' বলা হয় ।
১১. শ্রীরামপুর ত্রয়ী কাদের বলা হয়?
➱ শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের সদস্য—উইলিয়াম কেরী, উইলিয়াম ওয়ার্ড ও জোসুয়া মার্শম্যানকে একত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ী বলা হয়। এনাদের উদ্যোগে—প্রথমত, ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন স্থাপিত হয়, যেটি পরবর্তী কয়েক বছরে শতাধিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। দ্বিতীয়ত, শ্রীরামপুর ত্রয়ী প্রতিষ্ঠিত মিশন প্রেস বাংলায় সংবাদপত্র ও গ্রন্থ প্রকাশনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে।
১২. ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি কী?
➱ ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি হল শ্রীরামপুরের খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন যেটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিত।
১৩. বাংলার নারীশিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো?
অথবা, ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা লেখো ।
➱ ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে রাজা রাধাকান্ত দেব ‘ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি' প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। এ ছাড়াও প্রথমত, ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটির অবৈতনিক সম্পাদক থাকাকালীন নিজের বাড়িতে ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটির অধীনস্থ ছাত্রীদের পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করেন। দ্বিতীয়ত, ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কারকে ‘স্ত্রীশিক্ষা বিধায়ক' গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশে সাহায্য করেন।
১৪. উডের ডেসপ্যাচ-কে (১৮৫৪ খ্রি.) মহাসনদ (ম্যাগনা কার্টা) বলা হয় কেন?
➱ উডের ডেসপ্যাচ (১৮৫৪ খ্রি.)-এর ওপর ভিত্তি করে ভারতে পাশ্চাত্য ধাঁচের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এজন্য একে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ম্যাগনা কার্টা বা মহাসনদ বলা হয়।
১৫. লর্ড হার্ডিঞ্জ-এর “শিক্ষা বিষয়ক নির্দেশনামা' গুরুত্বপূর্ণ কেন?
➱ লর্ড হার্ডিঞ্জ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে ঘোষণা করেন যে, ইংরেজ সরকারের বিভিন্ন পদে চাকরির ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাশিক্ষা আবশ্যিক। তাঁর এই ঘোষণাই ‘শিক্ষা বিষয়ক নির্দেশনামা' নামে পরিচিত। এর ফলে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা পাশ্চাত্য শিক্ষামুখী হয়।
১৬. এ দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?
➱ পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল — ① ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে খ্রিস্টধর্ম প্রচার, ② নামমাত্র ইংরেজি জানা কিছু কর্মচারী তৈরি করা, ③ ইংরেজ অনুগত ভারতীয় সমাজ তৈরি করা।
১৭. ডেভিড হেয়ার কেন বিখ্যাত?
➱ ডেভিড হেয়ার বিশেষভাবে বিখ্যাত। কারণ—① আদতে ঘড়ি ব্যবসায়ী স্কটল্যান্ডের মানুষ ডেভিড হেয়ার ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের জন্য আজীবন চেষ্টা করে গেছেন। ② ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি (১৮১৭ খ্রিস্টাব্দ), ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি (১৮১৮ খ্রিস্টাব্দ), পটলডাঙা অ্যাকাডেমি (১৮১৮ খ্রিস্টাব্দ) ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
১৮. ‘নীলদর্পণ' নাটকটি বাংলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কেন?
অথবা, দেশপ্রেমের উন্মেষে নীলদর্পণ নাটকের ভূমিকা কতখানি ছিল?
➱ জাতীয়তাবাদী ভাবধারা বিস্তারের ক্ষেত্রে 'নীলদর্পণ' নাটকে নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচার ও দেশবাসীর সীমাহীন দুর্দশার কাহিনি লিপিবদ্ধ হয়েছে। বিশিষ্ট নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র 'নীলদর্পণ' নাটকটি রচনা (১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ) করেন। এই সময় বাংলার পত্রপত্রিকাগুলি নীলকর সাহেবদের কুকীর্তি জনসমক্ষে তুলে ধরে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলে। গ্রামগঞ্জে এই নাটক মঞ্চস্থ করে জনসমক্ষে নীলকর সাহেবদের কুকীর্তি তুলে ধরে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব গড়ে তুলতে এক সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে ।
১৯. সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের মধ্যে পার্থক্য কী?
➱ সাময়িকপত্র হল নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রকাশিত পত্রিকা। তবে সংবাদপত্র দৈনিক অথবা সাপ্তাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। সংবাদপত্র অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের সস্তা কাগজে ছাপা হয়। সংবাদপত্রে সমসাময়িক বিভিন্ন খবরের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুচ্ছেদ, ছোটোগল্প, বিজ্ঞাপন ছাপা হয় উনিশ শতকের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাংলা সংবাদপত্র হল—'সমাচার দর্পণ', ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, ‘সন্ধ্যা’, ‘বেঙ্গলী’ইত্যাদি। সাময়িকপত্রে তৎকালীন সমাজে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা, রীতিনীতি, চালচলন, নিয়মকানুন ইত্যাদি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা যায়। উনিশ শতকের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাংলা সাময়িকপত্র হল ‘বামাবোধিনী’, ‘তত্ত্ববোধিনী’, ‘সোমপ্রকাশ’ ইত্যাদি।
২০. সমাজসংস্কারে নব্যবঙ্গদের ভূমিকা কী ছিল?
➱ ডিরোজিও-র অনুগামীরা নব্যবঙ্গ নামে পরিচিত। এরা হিন্দু সমাজের পৌত্তলিকতা, জাতিভেদপ্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, সতীদাহপ্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে এবং নারীশিক্ষা, নারীস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতির সপক্ষে আন্দোলন চালায়। এরা সমাজে যুক্তিবাদেরও প্রসার ঘটায়।
২১. গ্রামবার্ত্তা পত্রিকা কেন একটি ব্যতিক্রমী পত্রিকা ছিল?
➱ ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে হরিনাথ মজুমদার প্রকাশিত গ্রামবার্তা পত্রিকা ছিল একটি ব্যতিক্রমী পত্রিকা। কারণ—① গ্রামবার্তা পত্রিকা ছিল গ্রাম থেকে প্রকাশিত প্রথম পত্রিকা যার সম্পাদক হরিনাথ নিজেই গ্রামে বাস করতেন। ② এই সংবাদপত্রের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই গ্রামের সাধারণ মানুষদের জীবনযাত্রার কথা তুলে ধরা হত। ③ গ্রামের সাধারণ মানুষদের বিভিন্ন সমস্যার কথা যেমন—গ্রামের নদী ও জলনিকাশি ব্যবস্থা, জলকষ্ট নিবারণ, ডাক ও পুলিশ বিভাগের সুবন্দোবস্ত করা ইত্যাদি তুলে ধরা হত।
২২. আধুনিক ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের গুরুত্ব কী?
➱ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে ভারতে জনশিক্ষার জন্য বার্ষিক এক লক্ষ টাকা মঞ্জুর করা হয়। প্রথমত, এই টাকা প্রাচ্য শিক্ষা না পাশ্চাত্য শিক্ষায় ব্যয় করা হবে তা নিয়ে বিখ্যাত প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দ্বিতীয়ত, ভারতীয়দের শিক্ষার অর্থাৎ জনশিক্ষার দায়িত্ব কোম্পানি সরকারের—এ কথাও ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে সনদ আইনের মাধ্যমে স্বীকৃত হয়।
২৩. অকল্যান্ড মিনিট কী?
➱ ভারতে শিক্ষাসংক্রান্ত প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের সাময়িক সমাধান১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে মেকলে মিনিট দ্বারা হলেও চূড়ান্ত সমাধান ঘটে ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দেদ্দ ২৪ নভেম্বর গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ডের ঘোষণা বাঅকল্যান্ড মিনিট-এর মধ্য দিয়ে।কারণ ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড বেন্টিঙ্কের ঘোষণায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রাধান্যের পাশাপাশি, ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি চূড়ান্ত অজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে বলে মতপ্রকাশ করেন এইচ এইচ উইলসন সহ বেশ কিছু প্রাচ্যবাদী পণ্ডিত। অকল্যান্ড মিনিট দ্বারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয় এবং বলা হয় ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারের পাশাপাশি প্রাচ্যবাদী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির জন্য বছরে ১০০০ টাকা বরাদ্দ করা হল।
২৪. কোম্পানির শিক্ষাক্ষেত্রে চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলতে কী বোঝায়?
➱ এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের উদ্যোগ নেওয়া হলে ব্রিটিশ সরকারের তরফ থেকে বলা হয় যে, বাংলার উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটলে ওই উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিগণই সাধারণ জনগণের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ঘটাবে। ফিলটারের জল যেমন পরিশ্রুত হয়ে উপর থেকে চুঁইয়ে নীচে নামে, ঠিক তেমনই সমাজের উচ্চস্তর থেকে নিম্নস্তরে এই শিক্ষাবিস্তারের নীতিকে ‘চুঁইয়ে পড়া নীতি' বলা হয়।
২৫. 'নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী' কাদের বলা হত?
অথবা, নব্যবঙ্গ আন্দোলন বলতে কী বোঝ?
➱ উনিশ শতকের প্রথমার্ধে হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও-র (১৮০৯-৩১ খ্রি.) নেতৃত্বে তাঁর অনুগামী একদল যুবক বাংলায় সমাজসংস্কারের উদ্দেশ্যে এক চরমপন্থী আন্দোলনের সূচনা করেন। ডিরোজিও ও তাঁর অনুগামী ছাত্রমণ্ডলী ‘নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী' নামে এবং তাঁদের উদ্যোগে পরিচালিত আন্দোলন ‘নব্যবঙ্গ আন্দোলন' নামে পরিচিত হয়।
২৬. 'বাংলার নবজাগরণ' বলতে কী বোঝায়?
➱ উনিশ শতকের প্রথম দিকে বাংলা দেশে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটলে বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতি সর্বক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে। এর প্রভাবে বাঙালির ভাবজগতে এক ব্যাপক অগ্রগতি ঘটে বা বৌদ্ধিক আন্দোলন শুরু হয়। এই অগ্রগতি উনিশ শতকে 'বাংলার নবজাগরণ' নামে পরিচিত।
২৭. সমাজসংস্কারে নব্যবঙ্গদের ভূমিকা কী ছিল?
➱ ডিরোজিও-র অনুগামীরা নব্যবঙ্গ নামে পরিচিত। এরা হিন্দু সমাজের পৌত্তলিকতা, জাতিভেদপ্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, সতীদাহপ্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে এবং নারীশিক্ষা, নারীস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতির সপক্ষে আন্দোলন চালায়। এরা সমাজে যুক্তিবাদেরও প্রসার ঘটায়।
২৮. লালন ফকির কে ছিলেন?
অথবা, লালন ফকির স্মরণীয় কেন?
➱ বর্তমান বাংলাদেশের যশোহর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার ফরিদপুর গ্রামে লালন ফকিরের জন্ম। লালন ছিলেন একাধারে একজন আধ্যাত্মিক সাধক, মানবতাবাদী, সমাজসংস্কারক ও দার্শনিক। বাংলার সংস্কৃতিতে তিনি ছিলেন সমন্বয়ী সংস্কৃতির প্রতীক। তাঁর বাউল গান বহু মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত ও ভাবিয়ে তুলেছে। তাঁর ধর্ম যে প্রকৃতপক্ষে কী তা আজও অনেকের অজানা । মোটামুটিভাবে তাঁকে যে যেভাবে দেখে তিনি তাই। তাঁর বাউল গানে প্রভাবিত হয়েছিলেন রবিঠাকুর, কাজী নজরুল প্রমুখ। তিনি বাউল গানের স্রষ্টা। বাউলে তাঁর অনন্য সাধারণ প্রতিভা তাঁকে 'বাউল সম্রাট'-এ উপস্থাপিত করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য জাত-পাত, ধর্মে-ধর্মে বিভেদ, শ্রেণি বৈষম্যমূলক সমাজে তিনি ছিলেন সম্প্রীতি ও শান্তির দূত।
২৯. 'নব্যবেদান্তবাদ' কী?
অথবা, ‘নব্যবেদান্তবাদ' বলতে কী বোঝো?
➱ ভারতীয় অধ্যাত্ম দর্শনের মূলভিত্তি হল বেদান্ত। বেদের উপদেশাবলির সঙ্গে বহিঃপ্রকৃতির বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে যে ফললাভ হয়েছে, তার সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য রয়েছে বেদান্ত দর্শনে। সত্যদ্রষ্ট ধর্মগুরুরা ধর্মের সারসত্যকে উপলব্ধি করে যুগের উপযোগী করে প্রচার করেন স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মীয় দর্শনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হল নব্যবেদান্তবাদ । অতীতের বেদান্তবাদকে যদিও তিনি আশ্রয় করেন তথাপি বেদান্তের উপর তাঁর যে ব্যাখ্যা তা ‘নব্যবেদান্তবাদ' নামে পরিচিত। রামকৃষ্ণ বেদান্তের মানবতাবাদকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। রামকৃষ্ণ কিংবা বিবেকানন্দের ধর্মচিন্তার সঙ্গে অতীত বেদান্তের দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য থেকে জন্ম নেয় নব্যবেদান্তের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি।
৩০. ‘তিন আইন’ কী?
➱ প্রধানত ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলেই ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে তিন আইন (Act III of 1872) পাস হয়। এই আইন দ্বারা ① বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হয় এবং ② বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহ আইনসিদ্ধ হয়।
৩১. 'নববিধান' কী?
➱ ‘নববিধান’শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘নতুন বিধান’বা ‘নতুন নিয়ম রীতি'। নববিধান হল ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজের একটি শাখা। কেশবচন্দ্র সেন ও শিবনাথ শাস্ত্রীর মধ্যে বিরোধ শুরু হলে শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর অনুগত তরুণদের নিয়ে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং কেশবচন্দ্র ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর অনুগামীদের নিয়ে নববিধান প্রতিষ্ঠা করেন।
৩২. ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হল কেন?
➱ ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেশবচন্দ্র সেন। তিনি বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুললেও কালক্রমে নিজের চোদ্দো বছর বয়স্কা বালিকা কন্যার বিবাহ কোচবিহারের মহারাজার সঙ্গে দিলে তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে মতাদর্শগত বিবাদ দেখা যায়। ফলে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজে ভাঙন দেখা যায়।
৩৩. ব্রাহ্মসমাজের যে-কোনো দুটি সমাজ সংস্কারমূলক কাজের উল্লেখ করো।
➱ ব্রাহ্মসমাজের উল্লেখযোগ্য দুটি সমাজ সংস্কারমূলক কাজ হল — ① বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার জন্য ‘তিন আইন' প্রণয়নে সরকারকে বাধ্য করা, ② শিক্ষার প্রসার, নারী স্বাধীনতা প্রভৃতির পক্ষে জনমত গড়ে তোলা।