১.‘বারাসত বিদ্রোহ' কী?
২. তারিখ-ই-মোহম্মদীয়া' কী?
৩. দার-উল-হারব' ও 'দার-উল-ইসলাম' কী?
৪. দামিন-ই-কোহ্ বলতে কী বোঝায়?
৫. দিকু কাদের বলা হত?
৬. মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল?
৭.'কেনারাম' ও 'বেচারাম' কী?
৮. চুয়াড় বিদ্রোহকে ‘চুয়াড় বিপ্লব' বললে কেন ভুল বলা হবে?
৯. তিনকাঠিয়া প্ৰথা কী?
১০. নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা কীরূপ ছিল?
১১. নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা কীরূপ ছিল?
১২. দাদন কী?
১৩. দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন?
১৪. ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন?
অথবা, ফরাজি আন্দোলন কি নিছক ধর্মীয় আন্দোলন ছিল?
১৫. ফরাজি আন্দোলন ব্যর্থ হল কেন?
অথবা, ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ কী?
১৬. তিতুমির স্মরণীয় কেন?
১৭. ‘হেদায়তী' নামে কারা পরিচিত ছিল?
১৮. বিদ্রোহ বলতে কী বোঝো?
১৯. অভ্যুত্থান বলতে কী বোঝো?
২০. বিপ্লব বলতে কী বোঝো?
২১. দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি কেন গড়ে তোলা হয়েছিল?
অথবা, কোল বিদ্রোহের গুরুত্ব লেখো।
২২. কামিয়াতি প্রথা কী?
২৩. হারওয়াহি প্রথা কী?
২৪. খেরওয়ার কী?
১.‘বারাসত বিদ্রোহ' কী?
➱ তিতুমির মক্কায় হজ করতে গিয়ে সৈয়দ আহমেদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এবং ওয়াহাবি আদর্শে প্রভাবিত হয়ে বাংলায় ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণের উদ্দেশ্যে আন্দোলন শুরু করেন। ক্রমে তিনি এই আন্দোলনকে অত্যাচারী জমিদার, মহাজন, নীলকর সাহেবদের বিরোধী আন্দোলনে পরিণত করার উদ্দেশ্যে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসতের নারকেলবেড়িয়া গ্রামে বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন এবং সেখানে সদর দফতর প্রতিষ্ঠা করে নিজে স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্রোহ বারাসতকে কেন্দ্র করে বাংলায় বিস্তার লাভ করে বলে এই বিদ্রোহকে ‘বারাসত বিদ্রোহ বলা হয়।
২. তারিখ-ই-মোহম্মদীয়া' কী?
➱ 'তারিখ-ই-মোহম্মদীয়া' কথার অর্থ হল – হজরত মোহম্মদ প্রদর্শিত পথ। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম ধর্মে বিভিন্ন কুসংস্কারের প্রবেশ ঘটে। সেটি দূরীকরণের উদ্দেশ্যে শুরু হওয়া মুসলিম পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন ‘তারিখ-ই-মোহম্মদীয়া' নামে পরিচিত। আরবে অষ্টাদশ শতাব্দীতে আব্দুল ওয়াহাব এই আন্দোলনের প্রবর্তক। ভারতে এই আন্দোলনের বিস্তারে সৈয়দ আহমেদ, তিতুমিরের ভূমিকা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।
৩. দার-উল-হারব' ও 'দার-উল-ইসলাম' কী?
➱ ‘দার-উল-হারব' বলতে বোঝায় বিধর্মীর দেশ বা শত্রুর দেশ। আর ‘দার-উল-ইসলাম’ হল ইসলামের পবিত্র ভূমি। ভারতে ব্রিটিশ সরকার শাসনক্ষমতা দখল করেছে মুসলিমদের সরিয়ে, তাই ব্রিটিশ শাসিত ভারত ‘দার-উল-হারব'। সেই কারণে ওয়াহাবি আদর্শে বিশ্বাসী নেতারা ভারত থেকে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করে ‘দার-উল-ইসলাম' প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়।
৪. দামিন-ই-কোহ্ বলতে কী বোঝায়?
➱ দামিন-ই-কোহ্ বলতে বোঝায় পাহাড়ের প্রান্তদেশ বা করমুক্ত অঞ্চল। কোম্পানি আমলে অত্যধিক রাজস্ব বৃদ্ধির কারণে সহজসরল সাঁওতালরা তাদের নিজস্ব বসবাসভূমি ছেড়ে রাজমহল পাহাড় সংলগ্ন অঞ্চলে গিয়ে পাহাড়ের প্রান্তদেশে জঙ্গল কেটে আবাদি জমিতে পরিণত করে বসবাস করতে শুরু করে। সাঁওতালদের করমুক্ত ওই নতুন অঞ্চল দামিন-ই-কোহ্ নামে পরিচিত ছিল।
৫. দিকু কাদের বলা হত?
➱ আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় বিশেষত কোল ও সাঁওতাল এলাকায় আগত বহিরাগত জমিদার, মহাজন, ব্যবসায়ী ও কোম্পানির কর্মচারীরা দিকু নামে পরিচিত ছিল। ‘দিকু’ কথার অর্থ ছিল প্রতারক। এরা সহজসরল আদিবাসীদের বিভিন্নভাবে ঠকিয়ে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলত।
৬. মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল?
➱ ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে মুন্ডারা বীরসা মুন্ডার নেতৃত্বে যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তার মূল লক্ষ্যগুলি ছিল—(১) ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠা করা। (২) ব্রিটিশ সরকার খুঁৎকাঠি প্রথা বা যৌথ মালিকানা ব্যবস্থার যে অবসান ঘটিয়েছিল তা পুনরায় ফিরিয়ে আনা। (৩) অরণ্য আইন বাতিল করে মুন্ডাদের অরণ্যের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
৭.'কেনারাম' ও 'বেচারাম' কী?
➱ সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরলতা ও অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে ‘কেনারাম’ ও ‘বেচারাম' নামে দুই রকমের বাটখারা ব্যবহার করে সাঁওতালদের ঠকাত। তারা সাঁওতালদের কাছ থেকে কিছু কেনার সময় ‘কেনারাম’ নামক বেশি ওজনের বাটখারা ব্যবহার করত, যাতে বেশি দ্রব্য পেতে পারে। আর সাঁওতালদের বিক্রি করার সময় ‘বেচারাম' নামক কম ওজনের বাটখারা ব্যবহার করে কম জিনিসপত্র দিত। এই প্রতারণার কারণে সাঁওতালরা ক্ষুব্ধ হয়েছিল।
৮. চুয়াড় বিদ্রোহকে ‘চুয়াড় বিপ্লব' বললে কেন ভুল বলা হবে?
➱ চুয়াড় বিদ্রোহকে ‘চুয়াড় বিপ্লব' বললে ভুল হবে। কারণ—(১) বিপ্লব বলতে বোঝায় রাষ্ট্রের প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন। সেই অর্থে চুয়াড় বিদ্রোহের মাধ্যমে তেমন কিছুই ঘটেনি। (২) বিপ্লব একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। সেদিক থেকে দেখতে গেলে চুয়াড়দের সংগ্রাম ছিল স্বল্পমেয়াদি ও ক্ষণস্থায়ী।
৯. তিনকাঠিয়া প্ৰথা কী?
➱ ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের নীল কমিশন ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে তাদের সুপারিশ পেশ করেন। সেই সুপারিশে নীল চাষ কৃষকদের ইচ্ছাধীন করা হয় এবং বলা হয় যদি কোনো কৃষক নীল চাষ করতে ইচ্ছুক হয় তাহলে সে বিঘা প্রতি ২০ কাঠার মধ্যে ৩ কাঠা জমিতে নীল বুনতে পারবে, যা ‘তিনকাঠিয়া প্রথা' নামে পরিচিত।
১০. নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা কীরূপ ছিল?
➱ ১৮৫৯-১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত নীল বিদ্রোহ সম্পর্কে তৎকালীন মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে থাকলেও হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এই বিদ্রোহকে সমর্থন করে কলম ধরেন—(১) অত্যাচারিত নীল চাষিদের কথা তাঁর পত্রিকায়
তুলে ধরে নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। (২) আর্থিক অবস্থা ভালো না-থাকা সত্ত্বেও তিনি নীল চাষিদের মামলা লড়ার জন্য যথাসাধ্য আর্থিক সাহায্য করতেন।
১১. নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা কীরূপ ছিল?
➱ নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারিদের একাংশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন–(১) এই বিদ্রোহের সময় তারা নীল চাষিদের প্রতি সমর্থন ওসহানুভূতি জানায়। চার্চ মিশনারির সদস্য জে জে লিংকে, বমওয়েচ প্রমুখ নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ও শোষণের চিত্র স্থানীয় সংবাদপত্রগুলিতে তুলে ধরেন। (২) আলেকজান্ডার ডাফ, জেমস লঙ প্রমুখ মিশনারি নীল চাষিদের সমর্থন করেন। এমনকি জেমস লঙ সাহেব দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদের প্রকাশ করে ইউরোপীয় সমাজে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন।
১২. দাদন কী?
➱ ‘দাদন' কথার অর্থ হল অগ্রিম অর্থ প্রদান। নীল চাষের সময় নীলকর সাহেবরা দরিদ্র চাষিদের বিঘা প্রতি ২ টাকা অগ্রিম (দাদন) দিত। এর ফলে ওই চাষি তার জমিতে নীল চাষ করতে বাধ্য হত। শুধু তাই নয়, উৎপাদিত নীল কম দামে ওই দাদনদাতার কাছে বিক্রয় করতে বাধ্য হত। এর ফলে নীলচাষিরা সর্বস্বান্ত হত।
১৩. দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন?
➱ দুদু মিঞা ছিলেন ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক হাজি শরিয়তউল্লাহ-এর পুত্র। তিনি ফরাজি আন্দোলনের ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয় — (১) পিতা হাজি শরিয়তউল্লাহের মৃত্যুর পর (১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ) দুদু মিঞা (মহম্মদ মুসিন) ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন। (২) বাংলা দেশে ফরাজি প্রভাবিত অঞ্চলে তিনি ফরাজি-খিলাফৎ নামে এক প্রশাসন গড়ে তোলেন। (৩) তাঁর বিখ্যাত উক্তি জমি আল্লাহ-র দান, সুতরাং জমির ওপর কর ধার্য করার অধিকার কারও নেই। এর মাধ্যমে দরিদ্র হিন্দু-মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের দরিদ্র কৃষকদের একত্রিত করে বাংলা দেশে এক বলিষ্ঠ আন্দোলন গড়ে তোলেন।
১৪. ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন?
অথবা, ফরাজি আন্দোলন কি নিছক ধর্মীয় আন্দোলন ছিল?
➱ ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক হাজি শরিয়ৎউল্লাহ মূলত ইসলাম ধর্মের সংস্কারের উদ্দেশ্য নিয়ে ফরাজি আন্দোলনের সূচনা করেন। তাঁর আন্দোলনের মূল দিকগুলি ছিল—(১) ইসলামের আদি ও অকৃত্রিম আদর্শের পুনরুজ্জীবন। (২) বাংলা দেশকে দার-উল- ইসলাম বা ধর্মের দেশে পরিণত করা। (৩) কোরান-এর নির্দিষ্ট পাঁচটি অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য (কলমা, নামাজ, রোজা,যাকাত ও হজ) যাতে মুসলমানরা মেনে চলে তার জন্য প্রচারকার্য চালানো। এদিক থেকে বিচার করে ফরাজি আন্দোলনকে অবশ্যই ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন বা নিছক ধর্মীয় আন্দোলন বলা শরিয়তউল্লাহ চলে। তবে শেষপর্যন্ত এই আন্দোলন ধর্মীয় পুনর্জাগরণের গণ্ডি অতিক্রম করে হয়ে উঠেছিল জমিদার, নীলকর ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন।
১৫. ফরাজি আন্দোলন ব্যর্থ হল কেন?
অথবা, ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ কী?
➱ হাজি শরিয়তউল্লাহ প্রবর্তিত ফরাজি আন্দোলন দুদু মিঞা-র নেতৃত্বে দুর্বার আকার ধারণ করলেও শেষপর্যন্ত এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়। যার কারণগুলি ছিল – (১) নেতৃত্বের অভাব : দুদু মিঞার মৃত্যুর পর ফরাজি আন্দোলন নেতৃত্বের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। (২) গণসমর্থনের অভাব : গণসমর্থনের অভাব ছিল এই আন্দোলনের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। মুসলিম অভিজাত থেকে শুরু করে সমাজের সাধারণ মানুষ কেউই এই আন্দোলনকে সমর্থন করেনি। (৩) সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যর অভাব : এই আন্দোলনের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না-থাকায় এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
১৬. তিতুমির স্মরণীয় কেন?
➱ বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন তিতুমির (মির নিসার আলি) (১) বারাসাত মহকুমায় জমিদার, নীলকর সাহেব ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহের সূচনা করেন তা বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত। ১৮৩০ থেকে ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই বিদ্রোহ চলে। (২) তিনি হিন্দু-মুসলিমের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ বারাসাত বিদ্রোহের মাধ্যমে বাংলায় যৌথ সংগ্রামের নজির রেখেছিলেন।
১৭. ‘হেদায়তী' নামে কারা পরিচিত ছিল?
➱ বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রবর্তক তিতুমিরের অনুগামীরা হেয়াদতী নামে পরিচিত। পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায় মুসলিমদের দাড়ির ওপর আড়াই টাকা করে কর বসালে এরা বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়।
১৮. বিদ্রোহ বলতে কী বোঝো?
➱ প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগঠিতভাবে বা অসংগঠিতভাবে সহিংস বা অহিংসভাবে বিরোধীতা করাকে বিদ্রোহ বলা হয়। বিদ্রোহের একটি উদাহরণ হল নীলকরদের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষকদের পরিচালনায় ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত ‘নীল বিদ্রোহ’।
১৯. অভ্যুত্থান বলতে কী বোঝো?
➱ প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিশেষ করে কোনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যখন সমাজের একটি শ্রেণি যেমন কৃষক বা সৈনিক নিজের দাবি পুরণে সশস্ত্র বিরোধীতা করে তখন তাকে অভ্যুত্থান বলা হয়। অভ্যুত্থান সাধারণত আকস্মিকভাবেই ঘটে, পূর্ব প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা তেমন থাকে না। আর এই কারণে অভ্যুত্থান ক্ষণস্থায়ী হয়। যেমন- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে সরকারের বিরুদ্ধে সেনাদের একাংশের বিদ্রোহ ঘোষণা।
২০. বিপ্লব বলতে কী বোঝো?
➱ ‘বিপ্লব' কথার অর্থ হল আমূল পরিবর্তন। যখন কোনো ঘটনাকে কেন্দ্ৰ করে প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত ও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে তখন তাকে বিপ্লববলা হয়। বিপ্লব কেবলমাত্র রাজনৈতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ঘটে না; অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বিপ্লব ঘটে। যেমন—১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লব, অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব।
২১. দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি কেন গড়ে তোলা হয়েছিল?
অথবা, কোল বিদ্রোহের গুরুত্ব লেখো।
➱ আপাতদৃষ্টিতে কোল বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও ভারতের উপজাতি বিদ্রোহের ইতিহাসে এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। (১) কোল বিদ্রোহের ব্যাপকতা লক্ষ করে কোম্পানি কোলদের জন্য 'দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি' (১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দ) নামে একটি পৃথক ভূমিখণ্ড নির্দিষ্ট করে দেয়। (২) কোম্পানি প্রভাবিত জমিদার ও মহাজনদের ওই অঞ্চলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়। (৩) কোম্পানি কোল অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্রিটিশ আইন কার্যকরী হবে না বলে ঘোষণা করে।
২২. কামিয়াতি প্রথা কী?
➱ কামিয়াতি ছিল এক ধরনের বন্ড ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা অনুসারে আদিবাসীরা বহিরাগত মহাজনদের থেকে ঋণ নিলে তা যতদিন না-পর্যন্ত শোধ করতে পারত ততদিন পর্যন্ত তারা মহাজনদের জমিতে বেগার খাটতে বাধ্য হত।
২৩. হারওয়াহি প্রথা কী?
➱ এই প্রথা ছিল বহিরাগত মহাজন ও আদিবাসীদের মধ্যে সম্পাদিত এক ধরনের চুক্তি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা অনুসারে আদিবাসীরা মহাজনদের নিকট থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না-পারলে মহাজনদের জমিতে বেগার খাটতে হত এবং যতদিন না-ঋণশোধ করতে পারছে ততদিন ৩৩% হারে সুদ দিতে হত।
২৪. খেরওয়ার কী?
➱ খেরওয়ার হল সাঁওতালদের একটি ধর্মীয় আন্দোলন। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ভগীরথ মাঝির নেতৃত্বে সাঁওতালরা নিজেদের পুরোনো রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার ছেড়ে হিন্দুদের বৈস্নব ধর্মকে সামনে রেখে এই আন্দোলনের সূচনা করেন, যার লক্ষ্য ছিল—(১) সাঁওতালদের শুদ্ধ জীবনচর্চা, (২) সাঁওতালদের নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা, (৩) সাঁওতালদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা।
মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০২৬ সাজেশন (Mark-2) | Link |
---|---|
(১) ইতিহাসের ধারণা ☞ | Click |
(২) সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ☞ | Click |
(৩) প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ☞ | Click |
(৪) সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ ☞ | Click |
(৫) বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ☞ | Click |
(৬) বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ☞ | Click |
(৭) বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ ☞ | Click |
(৮) উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭–১৯৬৪) ☞ | Click |