মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০২৬ ইতিহাস সাজেশন (মার্ক - ২) | অধ্যায় (১) ইতিহাসের ধারণা


দশম শ্রেণির শেষ পরীক্ষা, অর্থাৎ মাধ্যমিক পরীক্ষা, প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর জীবনে এক অনন্য ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এটি শুধুমাত্র একটি পরীক্ষা নয়, বরং ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষার পথে প্রথম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই পরীক্ষার ফলাফল একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের ভিত্তি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু মাধ্যমিক একটি টার্নিং পয়েন্ট, তাই স্বাভাবিকভাবেই সকল পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ মনোযোগ ও নিষ্ঠা সহকারে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। কঠোর পরিশ্রম, নিয়মিত পড়াশোনা, এবং সঠিক রিভিশন—এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ই একজন শিক্ষার্থীকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০২৬ মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন (মার্ক - ২) প্রশ্নোত্তর সেট ১০০ % কমন এই কোশ্চেন গুলো লিখে লিখে প্র্যাকটিস করো। 

মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০২৬ সাজেশন মার্ক:২
(১) ইতিহাসের ধারণা ☞ Click
(২) সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ☞ Click
(৩) প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ☞ Click
(৪) সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ ☞ Click
(৫) বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ☞ Click
(৬) বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ☞ Click
(৭) বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ ☞ Click
(৮) উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭–১৯৬৪) ☞ Click


মাধ্যমিক (2026) ইতিহাস সাজেশন (মার্ক - ২)
অধ্যায় : (১) ইতিহাসের ধারণা 

১. নতুন সামাজিক ইতিহাস বৈচিত্র্যময় কেন?
➛ নতুন সামাজিক ইতিহাসে সময়ের পরিবর্তন ও প্রয়োজনে বিভিন্ন নতুন নতুন বিষয়ের আলোচনা যুক্ত হওয়ায় তা বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইতিহাসের এসব বিষয়গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – খেলার ইতিহাস, নারী ইতিহাস, পরিবেশের ইতিহাস, সামরিক ইতিহাস, স্থানীয় ইতিহাস, খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস, পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস প্রভৃতি।

২. সামগ্রিক ইতিহাস (Total History) বলতে কী বোঝো?
➛ বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সামগ্রিক ইতিহাস রচনার উদ্ভব ও বিস্তার ঘটে। প্রচলিত ইতিহাসচর্চার বাইরে এই সময় থেকে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, ধর্ম, সংস্কৃতি প্রভৃতি সবকিছু এবং সমাজের উচ্চস্তর থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত সকল শ্রেণির কর্মকাণ্ড ‘তলা থেকে ইতিহাস' পদ্ধতিতে বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করা হয়। এই ধরনের ইতিহাসচর্চা সামগ্রিক ইতিহাস (Total History) নামে পরিচিত।

৩. শিল্পচর্চার ইতিহাস বলতে কী বোঝো?
➛ শিল্পচর্চার বিভিন্ন ধারাগুলি হল—সংগীত, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র প্রভৃতি। শিল্পচর্চার এই বিষয়গুলি নিয়ে আধুনিককালে যে ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে তা শিল্পচর্চার ইতিহাস নামে পরিচিত। এই ধরনের ইতিহাসে সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি প্রভৃতি মানবজীবনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয়কে বিভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়। এই ধারার ইতিহাসচর্চার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একটা জাতি কতটা উন্নত তা বোঝা যায় এবং সমকালীন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।

৪. নারী ইতিহাসচর্চার উদ্দেশ্য কী?
➛ ১৯৭০-এর দশকে আমেরিকা ও ব্রিটেনে নারী ইতিহাসচর্চার উদ্ভব ও বিকাশ হয়। এই ধারার ইতিহাসচর্চার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল— [1] সভ্যতা-সংস্কৃতির ক্রমবিকাশে পুরুষের ন্যায় নারীদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও তাদের ভূমিকাকে প্রচলিত ইতিহাসে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করা হয়েছে। সেইসব আলোচিত ও উপেক্ষিত বিষয়গুলির ওপর আলোকপাত করার উদ্দেশ্যে নারী ইতিহাসচর্চা শুরু হয়। [2] নারী ইতিহাসচর্চার মধ্য দিয়ে লিঙ্গবৈষ্যম্য, নারী নির্যাতন, নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রভৃতি সম্পর্কে সচেতন করা হয়।

৫. সামরিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী?
➛ সামরিক ইতিহাসচর্চার প্রধান গুরুত্ব হল, এর দ্বারা—[1] সময়ের সঙ্গে যুদ্ধের বিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়। [2] যুদ্ধে কোনো শক্তির জয় বা পরাজয়ের ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় ইত্যাদি।

৬. স্থানীয় ইতিহাস বলতে কী বোঝ?
অথবা, আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
➛ আধুনিক ইতিহাসচর্চায় একটি বিশেষ দিক হল স্থানীয় ইতিহাসচর্চা। আধুনিক ইতিহাসচর্চায় এর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল—[1] কোনো অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক নিদর্শন একটি বিশেষ যুগে একটি বিশেষ অঞ্চলের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠতে পারে। [2] স্থানীয় ইতিহাসচর্চার মধ্য দিয়ে কোনো অঞ্চলের আঞ্চলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের রূপরেখা পাওয়া যায়। (৩) কখনো-কখনো জাতীয় ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে স্থানীয় ইতিহাসকে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। [3] স্থানীয় ইতিহাসচর্চা ইতিহাস অনুসন্ধানী এবং উৎসাহী হতে সাহায্য করে। [4] স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও তাদের রাজনৈতিক উত্থান-পতনের কথা জানা যায় স্থানীয় ইতিহাস থেকে।

৭. পরিবেশের ইতিহাস বলতে কী বোঝো?
অথবা, পরিবেশের ইতিহাস বিষয়বস্তু কী?
➛ পরিবেশ কীভাবে মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালী, রীতিনীতি ও সমস্যাকে প্রভাবিত করছে তার ইতিহাসচর্চা হল পরিবেশের ইতিহাসচর্চা। এই ধরনের ইতিহাসচর্চা পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান ও তার বিবর্তন, পরিবেশ সংক্রান্ত আন্দোলন, পরিবেশ আইন ও মানবজীবনে সেগুলি প্রভাব প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হয়। একটি সভ্যতার ক্রমবিকাশ ও ধ্বংসের পিছনে পরিবেশের ভূমিকা কতটা তা এর মাধ্যমে জানা সম্ভব হয়।

৮. স্থানীয় ইতিহাস কী?
অথবা, স্থানীয় ইতিহাসের বিষয়বস্তু কী?
➛ স্থানীয় ইতিহাস হল কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বা স্থানের জনসমাজের নিজস্ব ইতিহাস। ওই অঞ্চলের ভৌগোলিক সীমানা, আবহাওয়া-জলবায়ু, মাটি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ধৰ্ম প্ৰভৃতি সবকিছু স্থানীয় ইতিহাসে আলোচনা করা হয়। সরকারি নথিপত্র, প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান প্রভৃতি প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছাড়াও কিংবদন্তি, জনশ্রুতি বা লোককথা প্রভৃতি উপাদান থেকেও তথ্যসংগ্রহ করা হয় যা স্থানীয় ইতিহাস নামে পরিচিত। 

৯. ‘Right to Information Act' বা ‘তথ্য জানার অধিকার আইন' কী?
➛ ভারতীয় পার্লামেন্ট দ্বারা ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত একটি আইন হল ‘Right to Information Act' বা 'তথ্য জানার অধিকার আইন'। এই আইন দ্বারা যে-কোনো ব্যক্তি যে-কোনো বিষয়ে সরকারের নিকট থেকে তথ্য জানতে পারে এবং সরকার জনগণকে তথ্য জানাতে বাধ্য। এই আইনটি আগের “তথ্য জানার স্বাধীনতা আইন ২০০২'-এর পরিবর্ত হিসেবে পরিগণিত হয়।

১০. ফটোগ্রাফ কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়?
➛ আধুনিক ইতিহাসচর্চায় ফোটোগ্রাফির গুরুত্ব হল – [1] কোনো ঘটনার সত্যাসত্য নির্ণয়ে ফোটোগ্রাফিকে ব্যবহার করা হয়। [2] ফোটোগ্রাফি থেকে সমসাময়িক আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। যেমন—ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা, বিভিন্ন ঘটনার চিত্র প্রভৃতির ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস লেখা সম্ভব হয়।

১১. সত্যজিৎ রায় কী কারণে স্মরণীয়?
➛ আধুনিক ভারতের ইতিহাসে সত্যজিৎ রায় অত্যন্ত বিখ্যাত। বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি পরিচালকদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বাগ্রগণ্য। তিনি ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে পথের পাঁচালী নামে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন যা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্বীকৃতি ও প্রশংসা লাভ করে। যে-কারণে তিনি ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে চলচ্চিত্রে আজীবনের অবদানের জন্য অস্কার পুরস্কার লাভ করেন।পথের পাঁচালীর পাশাপাশি তিনি গুপী গাইন বাঘা বাইন, অপুর সংসার, অপরাজিত, আগন্তুক সহ একাধিক বিখ্যাত ছবির মধ্য দিয়ে সত্যজিৎ রায় বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিয়েছেন।

১২. ব্ৰাত্মিকা পদ্ধতি কী?
➛ ব্রাত্মিকা পদ্ধতি হল বাঙালি মেয়েদের এক ধরনের শাড়ি পড়ার পদ্ধতি, যা মূলত অবাঙালিদের ‘কুচি পদ্ধতি’-তে শাড়ি পড়ার বিবর্তিত রূপ। এই পদ্ধতিতে শাড়ির কুচির অংশটি অনেক বড়ো হয় এবং কোমর, বুক, পিঠ—সর্বত্র হয়ে ওঠে টান টান। বর্তমানে বাঙালি মেয়েরা এই পদ্ধতিতেই শাড়ি পড়েন। উনিশ শতকের জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের মেয়েরা প্রথম শাড়ি পরার এই পদ্ধতিটি চালু করেছিলেন।

১৩. ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
➛ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ গুরুত্বপূর্ণ,কারণ—[1] ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে মোহনবাগান ক্লাব ইংরেজ মিলিটারি দল ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে হারিয়ে আই.এফ.এ শিল্ড জয় লাভ করে। [2] ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ১২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ সরকার ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করেন।

১৪. ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস' কী? 
অথবা, সামাজিক ইতিহাস কী?
➛ রাজা-মহারাজা বা অভিজাত সমাজের মানুষের আলোচনা ছাড়াও বর্তমানকালে ইতিহাসে সমাজের নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষ, যেমন – কৃষক, শ্রমিক, মজুর, নারী প্রমুখ সকলের আলোচনা করা হয়। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হওয়া এই ধরনের ইতিহাসচর্চা ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস'
নামে পরিচিত।

১৫.অ্যানাল স্কুল' কী?
➛ ‘অ্যানাল স্কুল' হল ফ্রান্সের একটি পত্রিকাগোষ্ঠী। মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেবর-এর উদ্যোগে ‘অ্যনাল্স অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এই গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চায় সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাধারণ মানুষ, পরিবার, মনস্তত্ত্ব প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় স্থান পেয়েছে।

১৬. নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝ?
➛ ১৯৮০-র দশক থেকে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন দেশের গবেষকের উদ্যোগে জাতি, শ্রেণি, লিঙ্গ, ধর্ম প্রভৃতি নির্বিশেষে নিম্নবর্গের মানুষদের নিয়ে ইতিহাসচর্চা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধারা নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বা সাবলটার্ন স্টাডিজ নামে পরিচিত। নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ঐতিহাসিক হলেন—রণজিৎ গুহ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে, শাহিদ আমিন, সুমিত সরকার, দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র প্রমুখ।

১৭. সরকারি নথিপত্র বলতে কী বোঝো?
➛ সরকারি নথিপত্র বলতে বোঝায় বিভিন্ন সময়ে সরকারের অধীনস্থ বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীদের যেমন—পুলিশ, গোয়েন্দা বা সরকারি আধিকারিকদের দেওয়া বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবেদন, বিবরণ ও চিঠিপত্র। এইসব নথিপত্র মহাফেজখানায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এগুলির সাহায্যে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি ভূমিকা ও মনোভাব এবং সমসাময়িক ঘটনা সম্পর্কে জানা যায় ৷

১৮. আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদান রূপে ‘সরকারি নথিপত্র'-এর সীমাবদ্ধতা কী?
➛ আধুনিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্র গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে— [1] সরকারি নথিপত্রগুলিতে সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির অধিক প্রভাব দেখা যায়। এগুলি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা নয়। তাই এগুলির নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় বিদ্যমান। [2] সরকারি দলিল দস্তাবেজগুলিতে অনেক ক্ষেত্রে ভুল ও বিকৃত তথ্য থাকে। তাই এগুলি সমকালীন ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।

১৯. সংবাদপত্র এবং সাময়িকপত্রের মধ্যে পার্থক্য কী?
➛ সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল— [1] সাধারণত সংবাদপত্র প্রতিদিন প্রকাশিত হয়। কিন্তু সাময়িকপত্র একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রকাশিত হয়। [2] সংবাদপত্রের মুদ্রণে রোজকার খবরাখবর গুরুত্ব পায়। সাময়িকপত্রে রোজকার খবরের পরিবর্তে সমকালীন বাছাই করা বিষয় গুরুত্ব পায়। [3] সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা আকারে বড়ো হয় এবং সেগুলো বাঁধানো থাকে না। অন্যদিকে, সাময়িকপত্রের পৃষ্ঠাগুলো অপেক্ষাকৃত ছোটো হয় এবং সাধারণত তা বইয়ের মতো বাঁধাই করা হয়।

২০. ইন্দিরাকে লেখা জওহরলাল নেহরুর চিঠিগুলির নাম কী? এই চিঠিগুলির হিন্দি অনুবাদ কে করেন?
➛ ইন্দিরাকে লেখা জওহরলাল নেহরুর লেখা চিঠিগুলির নাম হল – “Letters from a Father to his Daughter”।  বিখ্যাত হিন্দি ঔপন্যাসিক মুন্সি প্রেমচাঁদ ‘পিতা কে পত্র পুত্রী কে নাম’ শিরোনামে এই চিঠিগুলির হিন্দি অনুবাদ করেন।

২১. পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব কী?
➛ পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব হল—[1] মানবসভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে পরিবেশের ভূমিকা চিহ্নিত করে পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। [2] পরিবেশের সংকটজনক পরিস্থিতি, পরিবেশ বিপর্যয় এবং তার ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে অবগত করা। সর্বোপরি, বাসস্থানের ওপর পরিবেশগত গুরুত্ব আরোপ করা।

২২. ব্রিটিশ সরকার কেন ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে সোমপ্রকাশ সাময়িকপত্রের প্রকাশ বন্ধ করে দেয়?
➛ ব্রিটিশ সরকার ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে সোমপ্রকাশ নামে সাময়িক পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেন। কারণ—এই পত্রিকাটিই সর্বপ্রথম ব্রিটিশ সরকারের শোষণধর্মী শাসনকে জনসমক্ষে তুলে ধরেছিল। এই পত্রিকাটি  নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের নগ্ন সত্যকে তুলে ধরেছিল। তৎকালীন ভারতীয়রা এই পত্রিকা পাঠের মাধ্যমে ব্রিটিশবিরোধী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। যে-কারণে লর্ড লিটন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ আইন-এর মাধ্যমে এই পত্রিকা প্রথমে সাময়িকভাবে এবং ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশনা বন্ধ করে দেন।

২৩. কোন সময়কে, কেন 'বঙ্গদর্শনের যুগ' বলা হয়?
➛ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গদর্শন' পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত এই মাসিক পত্রিকায় সাহিত্য ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, দর্শন, সংগীত, বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব,
বাঙালির জীবনচর্চা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে লেখা প্রকাশিত হত। আলোচ্য সময়কালে প্রকাশিত পত্রিকাগুলির মধ্যে এই পত্রিকার গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তার কারণে এই সময়কালকে ‘বঙ্গদর্শনের যুগ' বলা হয় ৷

২৪. ইতিহাসের উপাদানরূপ সংবাদপত্রের গুরুত্ব কী? 
➛ সাময়িকপত্র বা সংবাদপত্রকে বলা হয় সমকালীন ইতিহাস। আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন—[1] সমসাময়িক ঘটনা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় সংবাদপত্রে যা সেই সময়ের ইতিহাস রচনার বহু তথ্যের জোগান দেয়। [2] সমসাময়িক ভারতের জাতীয়তাবাদের উদ্ভব, প্রচার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু তথ্যের জোগান দেয় সংবাদপত্র বা সাময়িকপত্র। দেশে ঘটে চলা কোনো ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তুলে ধরে জনমত গঠন করতে সংবাদপত্র অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে।

২৫. আত্মজীবনী এবং স্মৃতিকথা বলতে কী বোঝায়?
➛ আধুনিক ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা।
[1] আত্মজীবনী : যখন কোনো ব্যক্তি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় অতিক্রম করার পর তার জীবনের ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা অকপটে স্বীকার করে লিপিবদ্ধ করে রেখে যায় সেটিই হল আত্মজীবনী। এটি এক ধরনের অ-উপন্যাসধর্মী সাহিত্য। [2] স্মৃতিকথা : যখন কোনো ব্যক্তি তার জীবনের অনেকটা সময় অতিক্রম করার পরে তার জীবনে ফেলে আসা কোনো ঘটনার স্মৃতিচারণ ও প্রকাশকেই বলা হয় স্মৃতিকথা। স্মৃতিকথা হল এক ধরনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিবরণ যেখানে লেখক তার নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে অতীত কোনো ঘটনার বিবরণ দেন।

২৬. আত্মজীবনী কীভাবে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে?
অথবা, স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনীকে কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদানরূপে ব্যবহার করা হয়?
➛ যে-কোনো স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনীতে ব্যক্তিজীবনের আখ্যানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বিশেষ এক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঘটনা ও রাষ্ট্রের আখ্যান। যে কারণে স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনী হয়ে ওঠে ইতিহাসের উপাদান। [1] আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কথা, লেখকের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কথা, লেখকের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা প্রভৃতি লেখা থাকে যা ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কখনো-কখনো তথ্যের জোগান দেয়। [2] আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কাহিনি লিপিবদ্ধ থাকে। ফলে প্রকৃত সত্য উৎঘাটিত হয়। [3] স্থানীয় ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কখনো-কখনো আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।


 

Type Here ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন