মাধ্যমিক সাজেশন 2022 প্রবন্ধ বাংলা রচনা

মাধ্যমিক সাজেশন 2022 প্রবন্ধ বাংলা রচনা

১. বাংলার উৎসব
২. আমার প্রিয় লেখক
৩. পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার
৪.  বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

প্রশ্নের ধরণ : বাংলার উৎসব ।। বাঙালি-জীবনে উৎসব ।। উৎসব মুখর বাংলা ।।

 বাংলার উৎসব

◒ ভুমিকা : মানবজীবনের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হল উৎসব। মানুষ শুধুমাত্র খেয়ে-পরে বেঁচেই সন্তুষ্ট হয় না। সে অনেকের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দিতে চায়, দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি চায়, শ্রমক্লান্ত জীবনে পেতে চায় সহজ অনাবিল আনন্দ। আর সেজন্যই মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে। উৎসব মানুষকে আনন্দ দেয়, প্রসারিত করে তার অস্তিত্বকে। বাঙালিজীবনে সারাবছর ধরে অজস্র উৎসব লেগে থাকে। বিষয় অনুযায়ী বাংলার উৎসবগুলিকে মােটামুটি চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—
(১) ধর্মীয় উৎসব, (২) সামাজিক-পারিবারিক উৎসব, (৩) ঋতু উৎসব এবং (৪) জাতীয় উৎসব।

◒ ধর্মীয় উৎসব : নানান ধর্মসম্প্রদায়ের বসবাস এই বাংলায়। সকল সম্প্রদায়ই আপন আপন ধর্মীয় উৎসবে মেতে ওঠে। হিন্দু-বাঙালির প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপুজো। শরৎকালে দেবী দুর্গার আরাধনাকে কেন্দ্র করে কয়েকদিনের জন্য ধর্মমত নির্বিশেষে বাঙালিজীবন আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। দুর্গাপুজো ছাড়া কালীপুজো, সরস্বতীপুজো, লক্ষ্মীপুজো, বিশ্বকর্মাপুজো, মনসাপুজো, ধর্মপুজো প্রভৃতিও বাংলার বিশিষ্ট ধর্মীয় উৎসব। এছাড়া আরও নানা ধরনের ধর্মীয় উৎসব পালিত হয় হিন্দুসমাজে। মহরম, ইদ, সবেবরাত
প্রভৃতি মুসলমান সম্প্রদায়ের উৎসবও বাঙালিজীবনের সঙ্গে অচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। বাঙালি-খ্রিস্টানদের মধ্যেও রয়েছে বড়ােদিন, গুড ফ্রাইডে, ইস্টার স্যাটারডে প্রভৃতি উৎসব।

◒ সামাজিক-পারিবারিক উৎসব : মানুষ সামাজিক জীব। ব্যক্তিগত আনন্দ-অনুষ্ঠানকেও সে ভাগ করে নিতে চায় সমাজের আর পাঁচজনের সঙ্গে। এই প্রবণতা থেকেই বাঙালি সমাজে নানা ধরনের সামাজিক উৎসব পালিত হয়ে থাকে। বাংলার সামাজিক উৎসবগুলির মধ্যে বিবাহ, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন, উপনয়ন প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযােগ্য। এ ছাড়া আরও কিছু উৎসব-অনুষ্ঠান আছে যেগুলি মূলত পারিবারিক , যেমন - জামাইষষ্ঠী, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, বিশেষ কোনাে ব্রত উদ্যাপন প্রভৃতি। তবে এইসব পরিবারকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানগুলিও শেষ পর্যন্ত বাংলার সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়। এইসব সামাজিক-পারিবারিক উৎসবের মধ্যে দিয়ে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং অনাত্মীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গেও একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুদৃঢ় হয় সামাজিক বন্ধন।

◒ ঋতু-উৎসব : বঙ্গপ্রকৃতিতে ছয়টি ঋতুর আবির্ভাব বাঙালি-জীবনে নিয়ে আসে বৈচিত্র্য। বাংলার মানুষ এই বৈচিত্র্য আরও বেশি করে অনুভব করে বিভিন্ন ঋতুতে অনুষ্ঠিত বর্ণময় উৎসবগুলির মধ্যে দিয়ে। বাংলার ঋতু-উৎসবগুলির মধ্যে প্রধান কয়েকটি হল নবান্ন, পৌষপার্বণ, মাঘােৎসব, দোলযাত্রা, নববর্ষোৎসব প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরােপণ, বর্ষামঙ্গল, বসন্তোৎসব প্রভৃতি ঋতু-উৎসৰ বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উদ্যাপিত হয়। রবীন্দ্রনাথের ধারা অনুসরণ করে এই সমস্ত উৎসব আজ
শান্তিনিকেতনের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

 জাতীয় উৎসব : শুধু ধর্মীয়, সামাজিক-পারিবারিক বা ঋতু-উৎসব নয়, বাংলার সমাজজীবনে আর-এক ধরনের উৎসব পালিত হয়, যাকে বলা যেতে পারে জাতীয় উৎসব। স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী, নেতাজীজয়ন্তী প্রভৃতি উপলক্ষ্যে প্রতিবছর বিভিন্ন স্থানে যেসব অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, সেই অনুষ্ঠানগুলি প্রকৃতপক্ষে উৎসবের চেহারাই ধারণ করে।

◐ উপসংহার : বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। সেজন্যই বাঙালি সমাজে বারাে মাসে তেরাে পার্বণের সমারােহ। তবে বাংলার উৎসবগুলিকে শুধুমাত্র সাময়িক আনন্দ-উত্তেজনার উৎস মনে করলে ভুল করা হবে। এইসব উৎসব একের সঙ্গে অন্যকে মিলিয়ে দেওয়ার, নিজের সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসার মাধ্যম। এই  উৎসব আছে বলেই সমস্যা জটিল দুঃখজর্জর জীবনে বেঁচে থাকার আশ্বাস পাওয়া যায় , এইসব উৎসবের মধ্য়েই রয়ে গেছে বাঙালির প্রাণের পরিচয়। 

প্রশ্নের ধরণ : আমার প্রিয় লেখক ।। আমার প্রিয় সাহিত্যিক ।। 

আমার প্রিয় লেখক

◒ ভুমিকা : একদিন লাইব্রেরিতে গােয়েন্দাগল্পের বই খোঁজ করতেই পরিচিত লাইব্রেরিয়ান আমার হাতে তুলে দিলেন একটি বই ব্যোমকেশের গল্প। লেখকের নাম শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে অন্য লেখকের অনেক গােয়েন্দাকাহিনি পড়েছি কিন্তু শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বইটি পড়ে অভিভূত হলাম। বইটি ফেরত দিতে গিয়ে লাইব্রেরিয়ানের গছে জানতে চাইলাম, এই লেখকের আর কোনাে গােয়েন্দাকাহিনি পাওয়া যাবে কি না। তিনি স্মিতমুখে বললেন, “আছে, তবে এবার নিয়ে যাও এই লেখকের একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস।” তিনি এগিয়ে দিলেন 'তুঙ্গভদ্রার তীরে' নামে একটি বই। ইতিহাস- আশ্রিত কাহিনি যে কত জীবন্ত, কত মনােহার হয়ে উঠতে পারে, সেই প্রথম তা অনুভব করলাম আমি। কৌতুহলী হয়ে উঠলাম এই লেখক সম্পর্কে। যাঁর গােয়েন্দা-কাহিনি এত ভালাে, তিনিই আবার এত ভালাে ঐতিহাসিক কাহিনি লেখেন! পড়তে শুরু করলাম শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাবতীয় লেখা। এবং তখন থেকেই তিনি আমার প্রিয় লেখক।

◒ জীবনকথা : আমার এই প্রিয় লেখকের জন্ম ১৮৯৯ সালের ৩০ মার্চ, উত্তর প্রদেশের জৌনপুর শহরে। পিতার নাম তারাভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতা বিজলীপ্রভা দেবী। তাঁর বিদ্যালয়জীবন অতিবাহিত হয় বিহারের মুল্পের শহরে। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে মুঙ্গের জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ভরতি হন তিনি। বি.এ. পাস করার পর তিনি পাটনা থেকে আইন পাস করেন। শরদিন্দু ওকালতি শুরু করলেও বেশিদিন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেননি। ওকালতি ছেড়ে তিনি সাহিত্যকেই জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বােম্বে টকিজের আহ্বানে সিনারিও
লেখার কাজ নিয়ে মুম্বই যাত্রা করেন। বােম্বে টকিজের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তিনি আচারিয়া আর্ট প্রােডাকশনে যােগ দিয়ে সেখানে দেড় বছর কাজ করেন। তারপর থেকে শরদিন্দু স্বাধীনভাবে সিনারিও রচনার কাজ করতেন। তবে এই কাজে তার সাহিত্যচর্চার ক্ষতি হচ্ছিল বলে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে সিনেমার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে মুম্বই ছেড়ে পুণাতে বসবাস শুরু করেন এবং পুরােপুরি আত্মনিয়ােগ করেন সাহিত্যচর্চায়। শরদিন্দুর শেষ জীবন পুণাতেই কাটে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুলাই তার দেহাবসান হয়।

◒ সাহিত্যকীর্তি : শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় গল্পকার হিসেবে খ্যাত হলেও তার প্রথম প্রকাশিত বইটি সাহিত্যকীর্তি একটি কবিতা সংকলন। বইটির নাম ‘যৌবনস্মৃতি'। এর পরে অবশ্য তিনি আর সে ভাবে কবিতাচর্চা করেননি, গদ্যরচনাতেই মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছেন। তার প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘জাতিস্মর' (১৯৩৯)। ঐতিহাসিক গল্পের এই সংকলনটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পাঠকমহলে সমাদৃত হন তিনি। ইতিহাস অবলম্বনে তিনি বেশ কয়েকটি গল্প রচনা করেন। সেগুলির মধ্যে রক্তসন্ধ্যা’, ‘মৃৎ প্রদীপ’, ‘চুয়াচন্দন’, ‘বিষকন্যা', প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। পাঁচটি ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা করেছেন তিনি। সেগুলি হল ‘কালের মন্দিরা’, ‘গৌড়মল্লার’, ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘ’, ‘কুমারসম্ভবের কবি' এবং 'তুঙ্গভদ্রার তীরে'।‘ব্যোমকেশের ডায়েরী’, ‘ব্যোমকেশের গল্প’, ‘দুর্গরহস্য’, ‘আদিম রিপু, শজারুর কাঁটা' প্রভৃতি তার বিখ্যাত গােয়েন্দাকাহিনি। এছাড়া সামাজিক গল্প, ভূতের গল্প, নাটক ও কিশাের সাহিত্য রচনাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ উপন্যাসটির জন্য তিনি ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ওই বছরেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে শরৎ স্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। তবে তার জীবনের সবচেয়ে বড়াে পুরস্কার অগণিত পাঠকের শ্রদ্ধা ও ভালােবাসা।

◒ রচনা-বৈশিষ্ট্য : যে-কোনাে সাহিত্যকর্মের সবচেয়ে বড় গুণ হল প্রসাদগুণ। শরদিন্দুর রচনায় সেইপ্রসাদ- গুণের স্পর্শ পাওয়া যায়। তার গােয়েন্দাগল্পগুলি নিছক অপরাধমূলক কাহিনি নয়। অপরাধের ঘটনাবলিকে অতিক্রম করে সেগুলি আমাদের কাছে পৌঁছে দেয় গভীর জীবন রসের আবেদন। তার সামাজিক ও ভূতের গল্পগুলিও রচনাগুণে অসাধারণ হয়ে ওঠে। ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত গল্প ও উপন্যাসগুলিতে তাঁর নৈপুণ্য প্রশ্নাতীত। ইতিহাসের তথ্যের সঙ্গে কল্পনাকে মিশিয়ে তিনি এমনভাবে কাহিনিগুলি পরিবেশন করেন যে পাঠক নিজের অজান্তেই কখন চলে যায় ইতিহাসের জগতে। ঐতিহাসিক বাতাবরণ সৃষ্টির জন্য তিনি ব্যবহার করেন বহু ইতিহাসগন্ধী শব্দ। যে সময়ের গল্প সেই সময়ের রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, পােশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, বাড়িঘর প্রভৃতিকে তিনি বর্ণনার মাধ্যমে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তােলেন। শরদিন্দুর রচনায় ইতিহাস যেন কথা বলে ওঠে। যে-কোনাে ধরনের রচনাতেই তিনি সার্থকতা অর্জন করলেও তার যথার্থ বিচরণের ক্ষেত্রটি বােধহয় ইতিহাস-আশ্রিত কাহিনি। তিনি নিজেও তাই বলেছেন, ইতিহাসের গল্প লিখেই বেশী তৃপ্তি পেয়েছি।

◐ উপসংহার : এই শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ই আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক। তাঁর রচনাবলি আমার অবকাশ মুহুর্তের সবচেয়ে বড়াে সঙ্গী। তার গােয়েন্দাগল্পের সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ এক অবিস্মরণীয় চরিত্র। সেই সঙ্গে ব্যোমকেশের স্ত্রী সত্যবতী ও সহযােগী অজিতের কথাও ভােলা যায় না। তার ইতিহাস-আশ্রিত কাহিনিগুলি আমাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। সেগুলি পড়তে পড়তে আমি কখনও চলে যাই কালিদাসের কালে, কখনও বৌদ্ধযুগে। সুদূর অতীতের বিলুপ্ত গ্রাম, নগর ও মানুষজনকে যেন আমি চোখের সামনে দেখতে পাই। শরদিন্দুর স্বচ্ছ সাবলীল অথচ লাবণ্যময় ভাষাভঙ্গিতে আমি অনুভব করি অদ্ভুত এক তৃপ্তি।


প্রশ্নের ধরণ : পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার ।। পরিবেশ রক্ষার সমস্যা ।। পরিবেশদূষণ : সমস্যা ও সমাধান

পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার

◒ ভুমিকা : উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎসহ যে প্রাকৃতিক পরিবেষ্টনের মধ্যে আমরা বাস করি,সাধারণভাবে তাকেই পরিবেশ বলা হয়ে থাকে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পরিবেশের আনুকূল্য একান্ত প্রয়ােজন। অথচ নানাভাবে প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে এই বিশুদ্ধতা। প্রতিকূল হয়ে উঠছে প্রকৃতি। প্রাকৃতিক বিশুদ্ধতা নষ্ট হওয়ার এই প্রক্রিয়াকেই আমরা অভিহিত করছি পরিবেশদূষণ নামে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণের তীব্রতার ফলে মানবসভ্যতা আজ এক গভীর সংকটের মুখােমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।

◒ দূষণের প্রকারভেদ : সাধারণভাবে পরিবেশদূষণকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে। একটি হল
প্রাকৃতিক দূষণ এবং অন্যটি মনুষ্যসৃষ্ট দূষণ। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, দাবানল, বালুঝড়, পরাগরেণু সঞ্চালন প্রভৃতি কারণে যে দূষণ হয় তা প্রাকৃতিক দূষণ। এইসব প্রাকৃতিক দূষণের প্রতিকার সাধারণত প্রকৃতি নিজের হাতেই করে দেয়। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট দূষণ হল মারাত্মক। যানবাহনের ধোয়া, কলকারখানার
দূষিত বর্জ্য পদার্থ, বিবিধ রাসায়নিকের ব্যবহার, পারমাণবিক পরীক্ষানিরীক্ষা, যুদ্ধ এবং আরও অজস্র কারণে পৃথিবী ভয়াবহভাবে দূষিত হয়ে চলেছে। দূষণ বলতে আজ তাই মনুষ্যসৃষ্ট দূষণকেই বােঝানাে হয়ে থাকে। এই পরিবেশদূষণ প্রধানত চার প্রকার (১) বায়ুদূষণ, (২) জলদূষণ, (৩) ভূমিদূষণ এবং (৪) শব্দদূষণ।

◒ বায়ুদূষণ : বিশুদ্ধ বাতাস ছাড়া মানুষ সুস্থভাবে বাঁচতে পারে না। কিন্তু পৃথিবীতে আজ বিশুদ্ধ বাতাসেরই একান্ত অভাব। অসংখ্য যানবাহন ও কলকারখানা থেকে প্রতি মুহুর্তে যে ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে তা বাতাসকে দূষিত করে তুলছে। বন জঙ্গল কেটে নগর তৈরি করতে গিয়ে এবং শিল্পের উন্নতি করতে গিয়ে কার্বন মনােক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইডের মতাে বিষাক্ত গ্যাসে বাতাস ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে। কমে যাচ্ছে, জীবনদায়ী অক্সিজেনের পরিমাণ। বাতাসের দুষিত উপাদানে মানুষ নানান জটিল অসুখের শিকার হচ্ছে।

◒ জলদূষণ : জলের আর এক নাম জীবন। কিন্তু এই জলও এখন নানাভাবে দূষিত হওয়ার ফলে,
জীবনের প্রতিকূল হয়ে উঠেছে। নদী বা  হ্রদের জলকে দূষিত করে তুলছে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ। শস্যক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ অনেক সময় বৃষ্টির জলের সঙ্গে কোনাে না কোনােভাবে জলাশয়ের জলে গিয়ে মিশছে। কখনাে-কখনাে সমুদ্রের জলও দূষিত হচ্ছে তৈলবাহী জাহাজ থেকে তেল পড়ার ফলে। এরকম নানা কারণে জলদূষণ ঘটে চলেছে। আমাদের ব্যবহৃত পানীয় জলের উৎসগুলিও আজ দূষিত। স্বাভাবিকভাবেই দূষিত জল থেকে ছড়াচ্ছে নানান ব্যাধি। জলদূষণ এখন মানুষ ও জলচর প্রাণী উভয়ের পক্ষেই গভীর সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে।

◒ ভূমিদূষণ : কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, শহর ও গ্রামের মানুষের জমানাে আবর্জনা মাটিকে দূষিত করে তুলছে। মাটির পক্ষে সবচেয়ে ক্ষতিকারক প্লাস্টিকজাত আবর্জনা। রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ওষুধের প্রয়ােগও মাটির স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করে। মানুষ আজ নির্বিচারে বনজঙ্গল কেটে ফেলছে ফলে বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিচ্ছে ভূমিক্ষয়ের সমস্যা। 

◒ শব্দদূষণ : আধুনিক জীবনের একটি বড়াে সমস্যা হল শব্দ। যানবাহনের হন, কলকারখানার আওয়াজ তাে আছেই, সেইসঙ্গে কানফাটানাে বাজির শব্দ এবং মাইকের অতিরিক্ত আওয়াজ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। এই শব্দদূষণের ফলে দেখা দিচ্ছে নানান অসুখ। কখনাে-কখনাে অসুস্থ মানুষ শব্দের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

◒ প্রতিকার : পরিবেশ দূষণের প্রতিকারের জন্য সর্বপ্রথম যেটি দরকার, সেটি হল সমস্ত মানুষের মধ্যে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তােলা। এই সচেতনতা ছাড়া দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিকার লড়াই করা অসম্ভ। কলকারখানা, যানবাহন প্রভৃতি আধুনিক জীবনের উপকরণগুলিকে আজ আর বর্জন করা
সম্ভব নয়। সুতরাং অগ্রগতিকে বজায় রেখেও কীভাবে দূষণ রােধ করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করা প্রয়ােজন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে বৃক্ষরােপণ ও বন সংরক্ষণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কলকারখানার দূষিত বর্জ্য পদার্থ যাতে জল, মাটি বা বাতাসের ক্ষতি করতে না পারে সেই বিষয়ে অত্যাধুনিক গবেষণার প্রয়ােজন। শব্দদূষণ রােধ করার জন্য সর্বস্তরে নির্দিষ্ট শব্দসীমা মেনে চলতে হবে সকলকেই। দূষণ প্রতিরােধের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনকে কঠোর করতে হবে এবং সেই আইন মেনে চলা হচ্ছে কি না সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে সরকারকে। সুতরাং এ বিষয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে সহযােগিতামূলক মনােভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

◐ উপসংহার : মানুষের জন্যই যেহেতু পরিবেশ আজ দূষণ-কবলিত, সেইহেতু পরিবেশকে দূষণমুক্ত
করার দায়িত্বও মানুষের। পৃথিবীতে মানুষ যদি নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায়, তাহলে পরিবেশকে রক্ষা করা ছাড়া তার আর কোনাে উপায় নেই। খুবই আশার কথা, দিকে দিকে পরিবেশ নিয়ে এখন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের আহবানে প্রতি বছর ৫ই জুন পালিত হচ্ছে 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস'।
তবে কেবল বিশেষ একটি তিথি পালনের মতাে এই দিনটিকে স্মরণ করলেই চলবে না। পরিবেশদূষণের ভয়ংকর মণকে প্রতিহত করার জন্য সুকলকে সচেতন থাকতে হবে প্রতিটি মুহর্তে।

প্রশ্নের ধরণ : বিজ্ঞানপাঠ ও বিজ্ঞানমনস্কতা ।। বিজ্ঞান-শিক্ষা  ও বিজ্ঞানমনস্কতা ।। বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

◒ ভুমিকা : বিজ্ঞান আর কুসংস্কার—এই দুয়ের অবস্থান হওয়া উচিত দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, মানবসমাজে এখনও এই দুইয়ের সহাবস্থান প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে। অভাবনীয় বৈজ্ঞানিক উন্নতির পাশাপাশি অজস্র কুসংস্কার আজও বহু মানুষের মনের কোণে বাসা বেঁধে আছে। একদিকে চলছে ব্যাপক বিজ্ঞান-শিক্ষার আয়ােজন, আর অন্যদিকে চলছে কুসংস্কারের তাণ্ডব। একই কালে, একই সমাজে, এমনকি অনেক সময় একই ব্যক্তির মধ্যে বিজ্ঞান শিক্ষা ও কুসংস্কারের প্রাবল্য দেখে অবাক হয়ে যেতে হয়।

◒ বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও বৈজ্ঞানিক চেতনা : বিজ্ঞানের সাধনায় মানুষের সাফল্য বিস্ময়কর। যুগে যুগে ছােটো-বড়াে নানা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছে আজকের এই সভ্যতা। যে মানুষ একদিন অরণ্যচারী কিংবা গুহাবাসী ছিল, সেই মানুষই আজ পাড়ি জমাচ্ছে গ্রহে- গ্রহান্তরে। বড়ো বড়াে কলকারখানা, দ্রুতগামী যানবাহন, টেলিভিশন, কম্পিউটার প্রভৃতিতে মানুষের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির স্বাক্ষর বর্তমান। আধুনিক বিজ্ঞানের নানান উপশাখায় আজ  চলছে গবেষণা আর একের পর এক আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে মানুষের উদ্ভাবন শক্তি। 

কিন্তু বিজ্ঞানের এত উন্নতি সত্ত্বেও মানুষ আজও প্রকৃত অর্থে বৈজ্ঞানিক অধিকারী হতে পারেনি। যে চেতনা মােহমুক্তভাবে জগৎ ও জীবনকে দেখতে শেখায়, সত্যকে উপলব্ধি করতে শেখায় সেই  বৈপ্লনিক চেতনা যে ভাবে ঘটে চলেছে সেই ভাবে আমাদের মানসিক অগ্রগতি ঘটেনি। যথার্থ বৈজ্ঞানিক চেতনার অভাবে আজও আমরা নানান কুসংস্কারের দাস। 

◒ বিবিধ কুসংস্কারের অস্তিত্ব : অন্ধ বিশ্বাস, ভ্রান্ত ধারণা ও প্রচলিত লােকাচারের বশবর্তী হয়ে বহু মানুষ এমন অনেক আচরণ করেন যা যুক্তিহীন। যাত্রা কালে হাঁচি বা টিকটিকির ডাককে অনেকে অশুভ মনে করেন। বারবেলা, ত্র্যহস্পর্শ, অমাবস্যা, পূর্ণিমা, চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ প্রভৃতি মেনে চলার প্রবণতা আজও অব্যাহত। ভূতে-পাওয়া বা ভূতে ধরা সম্পর্কে আজও অনেকের বিশ্বাস অটুট। কুসংস্কারবশতই মানুষের চোখে কেউ কেউ ডাইনিতে পরিণত হয়। দুর্বল মানসিকতার ব্যক্তির কাছে তাবিজ- মাদুলি, জলপড়া, নুনপড়ার গুরুত্ব খুবই বেশি। অনেক সময় দেখা যায়, আধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করানাের পাশাপাশি রােগীর গলায় বা হাতে বেঁধে দেওয়া হয়েছে তাবিজ কিংবা মাদুলি। অনেকের কাছে ওষুধ অপেক্ষ দেবতার চরণামৃত অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। সমাজে এই সমস্ত অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারের অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। আর, মানুষের অজ্ঞতা ও অন্ধ বিশ্বাসের সুযােগটি পুরােপুরি গ্রহণ করে প্রতারক শ্রেণির মানুষ।

◒ কুসংস্কার দূরীকরণ : মানুষের মন থেকে কুসংস্কার দূর করতে হলে মানুষকে বিজ্ঞান মনস্ক করে তােলা দরকার। শুধু বিজ্ঞানের উন্নতি বা বিজ্ঞান-শিক্ষা নয়, চাই বৈজ্ঞানিক চেতনা। এমন অনেক মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় যাঁরা পেশাগতভাবে বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত হলেও পদে পদে নানান কুসংস্কার
মেনে চলেন। আসলে বিজ্ঞানকে তারা পেশার ক্ষেত্রেই আবদ্ধ করে রেখেছেন, মর্মে গ্রহণ করতে পারেননি। তাই শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকলের মধ্যেই বৈজ্ঞানিক চেতনা জাগানাের চেষ্টা করতে হবে। এ ব্যাপারে অবশ্য কিছু কিছু প্রচেষ্টাও শুরু হয়েছে। গঠিত হয়েছে ‘জনবিজ্ঞান জাঠা, দেশ জুড়ে বিজ্ঞানচেতনা প্রসারের চেষ্টা চলছে। এছাড়াও কোনাে কোনাে ব্যক্তি নানাভাবে চেষ্টা করে চলেছেন মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে। কুসংস্কার দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষিত ব্যক্তিদের আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া প্রয়ােজন। বিজ্ঞানের জয়যাত্রার পাশাপাশি বিভিন্ন কুসংস্কারের অস্তিত্ব বজায় থাকায় প্রমাণিত হয়।

◒ উপসংহার : বিজ্ঞানকে এখনও আমরা আপন করে নিতে পারিনি। বিজ্ঞান যদি মানুষের মনের
অন্ধকার দূর করতে না পারে, তাহলে বড়াে বড়াে আবিষ্কারের ক্ষেত্রে তার যত অবদানই থাকুক না কেন, সব নিরর্থক হয়ে যায়। বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি তখনই সার্থকতা লাভ করবে যখন মানুষ বিজ্ঞানকে গ্রহণ করবে মনেপ্রাণে, বৈজ্ঞানিক চেতনার আলােকে হয়ে উঠবে কুসংস্কারমুক্ত।

2 মন্তব্যসমূহ

Type Here ....

  1. মাধ্যমিকের 2022এর অঙ্ক সাজেশন
    ভৌত বিজ্ঞানের সাজেশন
    জীবন বিজ্ঞান সাজেশন চাই

    উত্তরমুছুন
  2. ভৌত বিজ্ঞানের সাজেশন - https://www.trendingpagetoday.in/2022/01/pdf2022.html
    মাধ্যমিকের 2022এর অঙ্ক সাজেশন - https://www.trendingpagetoday.in/2022/01/2022.html

    উত্তরমুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন