❏ সরকারের বিভাগসমূহ
✱ নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও: প্রতিটি প্রশ্নের মান-৮
1. ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিগুলি আলোচনা করো।
2. ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে কী বোঝো? ‘কঠোর ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্ভবও নয়, কাম্যও নয়'-মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
3. এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও।
4. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও।
5. আধুনিক রাষ্ট্রের শাসন বিভাগের কার্যাবলি আলোচনা করো।
6. বিচারবিভাগীয় সমীক্ষা বলতে কী বোঝো? বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা কীভাবে সংরক্ষিত হয়, তা ব্যাখ্যা করো।
________________________
1. ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিগুলি আলোচনা করো।
▢ ভূমিকা : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলতে বুঝায় রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন, শাসন ও বিচার ক্ষমতা পৃথক ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির হাতে অর্পণ করা যাতে এক বিভাগ অন্য বিভাগের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে না পারে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের এই ধারণা প্রাচীনকালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নিকটও পরিচিত ছিল। এরিস্টটল, পলিবিয়াস, সিসেরো প্রমুখ চিন্তাবিদগণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগেও এই মতবাদের সমর্থন মিলে। মধ্যযুগে মার্সিলিও অব পাদুয়া ও জিন বড়িন এবং আধুনিক যুগে হবস, লক প্রভৃতি দার্শনিকগণও এই মতবাদ সমর্থন করেন। রাষ্ট্র বিজ্ঞানী মন্টেস্কু সুস্পষ্ট নীতি হিসেবে স্বতন্ত্রীকরণকে সমর্থন করেন। কিন্তু পরিপূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বাস্তবে দেখা যায় না। এটি কাম্যও নয়। তাই ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের সাথে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ ও ভারসাম্যের নীতির কাম্যতা অনেকেই স্বীকার করেন।
▢ ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে যুক্তি :
[1] বিভাগীয় স্বাধীনতার সংরক্ষণ : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্যের সঙ্গে কাজকর্ম পরিচালনা করায় একে অপরের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায় না। এর ফলে বিভাগীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না।
[2] কর্মকুশলতার বৃদ্ধি : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বাস্তবায়িত হলে সরকারের তিনটি বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে কাজ করার যে সুযোগ লাভ করে, তার ফলে তাদের কর্মকুশলতা বৃদ্ধি পায়।
[3] স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ : অনেকে মনে করেন, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বাস্তবে রূপায়িত হলে সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হয়। কারণ এক্ষেত্রে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ প্রায় সমমর্যাদার অধিকারী হওয়ায় কোনো একটি বিভাগের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
[4] দায়িত্বশীলতার বিকাশ : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগের ফলে সরকারের তিনটি বিভাগের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এতে কাজকর্মের তাগিদে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে দায়িত্বশীলতার বিকাশ ঘটে।
[5] মঁতেঙ্কু ও ম্যাডিসনের অভিমত : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অন্যতম প্রবক্তা মঁতেঙ্কুর মতে, আইন ও প্রশাসনের ক্ষমতা যদি কোনো একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে ন্যস্ত থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বৈরাচারী আইন প্রণয়ন করে তাকে যথেচ্ছভাবে কাজে লাগাতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অন্যতম রূপকার ম্যাডিসন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সপক্ষে জোরালো যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন আইন, শাসন ও বিচারের সমস্ত ক্ষমতা একই বিভাগের হাতে থাকলে তাকে স্বৈরাচারিতা বলে অভিহিত করা যায়।
▢ ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিপক্ষে যুক্তি :
[1] বাস্তবায়ন দুরূহ : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিরুদ্ধে প্রধান সমালোচনা হল বাস্তবে এই নীতির পূর্ণ প্রয়োগ আদৌ সম্ভব নয়। কারণ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের প্রধান তিনটি বিভাগকে কখনোই পুরোপুরি স্বতন্ত্র করা যায় না।
[2] পূর্ণ প্রয়োগ অনভিপ্রেত : জন স্টুয়ার্ট মিল, বুন্টস্লি, ফাইনার, ল্যাস্কি প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির পূর্ণ প্রয়োগ আদৌ কাম্য নয়। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করলে এই স্বাতন্ত্র্য বিরোধ ডেকে আনবে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পটভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বয়ং ম্যাডিসন ও অন্য যুক্তরাষ্ট্রীয়পন্থীরা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে প্রশাসন অচল হয়ে পড়বে।
[3] ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ নয় : গিলক্রিস্ট, স্যাবাইন প্রমুখ আধুনিক লেখকরা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলে মেনে নেননি। কারণ, আইন বিভাগ যদি স্বৈরাচারী হয়, তবে তার দ্বারা প্রণীত স্বৈরাচারী আইনকে কার্যকর করতে শাসন বিভাগ যেমন বাধ্য থাকে, তেমনি সেই আইন অনুসারে বিচারকার্য সম্পাদন করতে বিচার বিভাগও বাধ্য। সুতরাং, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কখনোই ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ হতে পারে না।
[4] তিন বিভাগের অসম ক্ষমতা : সমালোচকরা শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে সমক্ষমতাসম্পন্ন বলতে রাজি হননি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন বিভাগ তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষমতার অধিকারী। কারণ আইন বিভাগের প্রণীত আইন অনুসরণ করে শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে চলতে হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে আইনসভা হল চূড়ান্ত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
[5] জৈব মতবাদীদের সমালোচনা : বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্লুন্টসলির মতে সরকার হল জীবদেহের মতো। দেহ থেকে মস্তিষ্ককে পৃথক করলে জীবদেহের মৃত্যু যেমন অবশ্যম্ভাবী, ঠিক তেমনি সরকারের প্রধান বিভাগগুলিকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করলে সরকারের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।
[6] মার্কসবাদী সমালোচনা : মার্কসবাদী সমালোচকরা সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বের সাফল্য সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মার্কসবাদীদের মতে, অসমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকার এক বিশেষ শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে চলে। কাজেই এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ অর্থহীন।
[7] সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় প্রয়োগ অসম্ভব : যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র বা মন্ত্রীসভা-চালিত শাসনব্যবস্থা রয়েছে (যেমন - ব্রিটেন, ভারত ইত্যাদি), সেখানে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় থাকায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, বাস্তবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণ প্রয়োগ কখনোই কাম্য নয়। তবে আংশিক ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রয়োজন। কারণ ন্যায় ও নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য অপরিহার্য।
2. ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে কী বোঝো? ‘কঠোর ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্ভবও নয়, কাম্যও নয়'-মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
▢ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি : আধুনিক রাষ্ট্রে সরকারের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করার জন্য প্রধান তিনটি বিভাগ রয়েছে। এগুলি হল— আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। আইনবিভাগের কাজ আইন তৈরি করা, শাসন বিভাগের কাজ ওই আইন প্রয়োগ করা আর বিচার বিভাগের কাজ ওই আইন অনুসারে বিচার কাজ সম্পাদন করা। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল রাষ্ট্রপরিচালনার তিন প্রধান স্তম্ভ আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতার সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য। বস্তুত, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে এমন এক ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে সরকারের প্রধান তিনটি বিভাগ যথাক্রমে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।
▢ কঠোর ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্ভবও নয়, কাম্যও নয় :
আধুনিক রাষ্ট্রে সরকারের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করার জন্য প্রধান তিনটি বিভাগ রয়েছে, যথা— আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল, সরকারের এই তিনটি বিভাগ নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসারে এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না এবং একই ব্যক্তি একাধিক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল প্রবক্তা ফরাসি দার্শনিক মঁতেঙ্কু তাঁর The Spirit of the Laws গ্রন্থে এই অভিমত প্রকাশ করেন যে, সরকারের মূল তিনটি কাজ। যথাক্রমে আইন প্রণয়ন, আইনের বাস্তবায়ন (প্রশাসন) ও বিচারকার্য। তিনটি পৃথক বিভাগের মাধ্যমে সম্পাদিত হওয়া উচিত। একই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে সরকারের এই তিনটি কাজ থাকা উচিত নয়। কারণ সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বৈরাচারী প্রবণতা দেখা দেবে ও তার ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে পড়বে। কাজেই ব্যক্তিস্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির স্বীকৃতি প্রয়োজন। মূলত সমকালীন (১৭৪৮ খ্রি.) ইংল্যান্ডের শাসনব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করে যঁতেঙ্কু ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বের প্রচার করেন। মার্কিন সংবিধান রচয়িতাদের অন্যতম ম্যাডিসন বলেন, একই হাতে সকল ক্ষমতার পুঞ্জীকরণকে সঠিক অর্থে স্বৈরাচারিতার অন্য নাম বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে (“The accumulation of all powers... in the same hands may justly be pronounced as the very definition of tyranny") ।
অনেকের মতে, পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বগতভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাস্তবে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ একে অপরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, আইনসভার হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকলেও যে সময়ে আইনসভার অধিবেশন বন্ধ থাকে সেই সময়ে শাসন বিভাগের প্রধান (ভারতের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি) দেশের প্রয়োজনে সাময়িকভাবে অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন। এ ছাড়াও বর্তমানে আইনসভার কাজকর্ম যেভাবে বেড়ে গেছে তাতে আইনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলির নির্ধারণের ভার আইনসভা শাসন বিভাগের হাতে তুলে দেয়। শাসন বিভাগের প্রণীত এ ধরনের আইনকে অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন (Delegated Legislation) বলা হয়।
অনুরূপভাবে, বিচারকার্য সম্পাদন করতে গিয়ে অনেক সময় চলতি আইন যথেষ্ট বলে মনে না হলে বিচারপতিরা আইনের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য ব্যাখ্যার মাধ্যমে নতুন আইন সৃষ্টি করেন। একে বিচারপতিদের দ্বারা প্রণীত আইন বলা হয়। অন্যদিকে শাসন বিভাগের হাতেও বিচারের কিছু কাজ থাকে, যেমন রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক দণ্ডিত অপরাধীর শাস্তি মকুব বা হ্রাস ইত্যাদি। ব্রিটেন ও ফ্রান্সে প্রশাসনিক ন্যায়বিচার (Administrative Justice) -এর অস্তিত্ব রয়েছে। এর মাধ্যমে শাসন বিভাগের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের অন্যায় সরকারের আচরণের বিচার ও শাস্তি দেওয়া হয়। কাজেই এ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রের পক্ষে অসম্ভব। সর্বোপরি যেসব দেশে সংসদীয় গণত মন্ত্রীসভা-চালিত শাসনব্যবস্থা রয়েছে (যেমন গ্রেট ব্রিটেন, ভারত প্রভৃতি), সেখানে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে পৃথকীকরণ কখনোই সমীচীন বা কাম্য হতে পারে না। সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়ম অনুসারে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগকে সবসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বাস্তবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণ প্রয়োগ কখনোই সমীচীন হতে পারে না। তবে আংশিক ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রয়োজন। কারণ ন্যায় ও নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য অপরিহার্য।
3. এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও।
▢ ভূমিকা : যে আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষ থাকে, সাধারণভাবে তাকেই এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলা হয় ৷ এই ধরনের আইনসভায় আইন প্রণয়নের যাবতীয় কাজ একটিমাত্র কক্ষের দ্বারা হয়। আধুনিক যুগের গোড়ার দিকে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা জনপ্রিয় ছিল। ফ্রান্সে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবের পর এককক্ষবিশিষ্ট জাতীয় আইনসভার (National Assembly for France) সপক্ষে অভিমত প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘকাল যাবৎ প্রায় ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই আইনসভা বলবৎ ছিল। সেই সময় ইংল্যান্ডে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার অনুকূলে জোরালো সওয়াল করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেরিমি বেন্থাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন ছিলেন এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার কট্টর সমর্থক। তিনি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভাকে ঘোড়ার গাড়ির সঙ্গে যুক্ত দুটি বিপরীতমুখী ঘোড়ার সঙ্গে তুলনা করেন (“Compared a bicameral legislature to a cart with a horse hitched to each end both pulling in opposite directions.") বর্তমান যুগে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার জনপ্রিয়তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এককথায় বলা যায়, এই ধরনের আইনসভার চল আর নেই। নিকারাগুয়া, পানামা এবং বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার অস্তিত্ব রয়েছে। এ ছাড়া গণসাধারণতন্ত্রী চিনের মতো বৃহৎ রাষ্ট্রেও এই আইনসভা টিকে আছে। চিনের এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভাটির নাম হল জাতীয় গণ কংগ্রেস।
▢ এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বেন্থাম, আবে সিঁয়ে, ল্যাস্কি, ফ্রাংকলিন প্রমুখরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিরোধিতা করে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সপক্ষে যুক্তির অবতারণা করেন। অন্যদিকে, লর্ড ব্রাইস, স্টুয়ার্ট মিল, লেকি, হেনরি মেইন, লর্ড অ্যাক্টন, গেটেল প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এর কঠোর সমালোচনা করেন—
[1] একতার প্রতীক : এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভাকে একতার প্রতীক বলে মনে করা হয়। আইনসভায় আইন প্রণয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ—সেখানে সুচিন্তিত ও ঐক্যবদ্ধ মতামতের যথাযথ প্রতিফলন হওয়া বাঞ্ছনীয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিনের বক্তব্য অনুসারে আইনসভার একাধিক কক্ষের অর্থ হল একাধিক ‘সার্বভৌমত্বের’ অস্তিত্ব।
[2] জনমতের যথার্থ প্রতিফলন : অনেকে মনে করেন, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় জনমতের যথার্থ প্রতিফলন ঘটে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবে সিয়ের বক্তব্য অনুসারে, জনগণের সম্মতি হল আইন, জনগণ কখনও একই বিষয়ের ওপর একই সময়ে দু-রকমের মতামত দিতে পারে না। কাজেই জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী আইনসভার কক্ষও দু-রকমের হতে পারে না।
[3] সুষ্ঠু ও সহজ পদ্ধতিতে আইন প্রণয়ন : এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় সুষ্ঠু ও সহজ পদ্ধতিতে আইন প্রণয়ন সম্ভব হয়। কোনোরকমের জটিলতা এখানে দেখা যায় না। বস্তুত আইনসভায় দুটি কক্ষে দুটি দলের প্রাধান্য থাকলে আইন প্রণয়নের বিষয় নিয়ে জটিল মতবিরোধের ফলে যে অচলাবস্থা দেখা যায় তার সম্ভাবনা এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় থাকে না।
[4] দায়বদ্ধতা : এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রবক্তারা মনে করেন, আইনসভায় দুটি কক্ষ থাকলে, সম্পাদিত কার্যাবলির বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উঠলে এককভাবে কোনো একটি কক্ষকে দায়ী করা যায় না। এরূপ ক্ষেত্রে দায় এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দুটি কক্ষের মধ্যে লক্ষ করা যায়। এর ফলে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি হয়। এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় এই ধরনের কোনো সম্ভাবনা থাকে না। যেহেতু আইনসভার একটিমাত্র কক্ষই আইন প্রণয়নের ব্যাপারে যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে, তাই এখানে দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে নিশ্চিত করা যায়।
[5] দ্রুত আইন প্রণয়নের সহায়ক : এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা দ্রুত আইন প্রণয়নের পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক বলে অনেকে মনে করেন। জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত আইন প্রণয়ন একমাত্র এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভাতেই সম্ভব। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়নের ব্যাপারে বিশেষত অর্থবিলের ক্ষেত্রে যে অহেতুক বিলম্ব দেখা যায়, তার সম্ভাবনা এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় থাকে না।
▢ এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিপক্ষে যুক্তি :
[1] সুচিন্তিত আইন প্রণয়ন অসম্ভব : আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষ থাকলে কখনোই সুচিন্তিত আইন প্রণয়ন সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়। যথেষ্ট বিচারবিশ্লেষণের পর আইন প্রণয়ন এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় দেখা যায় না। এর ফলে তড়িঘড়ি সাময়িক আবেগ ও উত্তেজনার বশে অথবা জনমতের চাপে অবিবেচনাপ্রসূত আইন প্রণয়নের আশঙ্কা থেকে যায়।
[2] যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষে প্রতিকূল : এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষে অনুকূল নয়। কারণ আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষ থাকলে জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের সামগ্রিক প্রতিনিধিত্ব সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
[3] স্বৈরাচারী প্রবণতার আশঙ্কা : একটিমাত্র কক্ষ নিয়ে আইনসভা গঠিত হলে স্বৈরাচারী আশঙ্কা দেখা দিতে পারে, কারণ সেক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণকারী থাকে না। এই কারণে লর্ড ব্রাইস মনে করেন, আইনসভার অসংযত স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিপরায়ণ প্রবণতা প্রতিরোধের জন্য সমক্ষমতা সম্পন্ন দুটি কক্ষের অস্তিত্ব থাকা দরকার।
[4] জনমতের যথাযথ প্রতিফলনের অভাব : এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় সমস্ত সদস্যের নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। নির্দিষ্ট কার্যকালের মেয়াদ অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত আইনসভার সদস্যরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেন। কিন্তু ইতিমধ্যে জনমতের পরিবর্তন ঘটতে পারে। এই পরিবর্তনশীল জনমতের কোনো প্রতিফলন এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় ঘটার উপায় নেই।
[5] জ্ঞানীগুণী মানুষের প্রতিনিধিত্বের অনুপস্থিতি : দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় (বিশেষত ব্রিটেন ও ভারতে) যেরকম দেশের জ্ঞানীগুণী মানুষদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় তা হয় না। বস্তুত এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় এই ধরনের যোগ্য মানুষদের জায়গা নেই।
[6] রাজনৈতিক শিক্ষা বিস্তারের সুযোগের অভাব : আইনসভায় দুটি কক্ষ থাকলে আইন প্রণয়নের সময় বিভিন্ন দল ও মতের প্রতিনিধিদের যে ধরনের তর্কবিতর্ক ও আলোচনার সুযোগ থাকে, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় তা দেখা যায় না। ফলে আইনসভায় বিল নিয়ে তর্কবিতর্ক, বাদানুবাদ, আলোচনা প্রভৃতি গণমাধ্যমগুলিতে (দূরদর্শন, সংবাদপত্র ইত্যাদিতে) প্রচারিত হতে পারে না। এর ফলে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষা বিস্তারের সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা আজকের বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক যুগের পক্ষে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে এই ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়নি।
4. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও।
❏ ভূমিকা : আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনসভার গঠন এককক্ষবিশিষ্ট হবে না দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হবে, তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। বেত্থাম, আবে সিঁয়ে, ল্যাস্কি, ফ্রাংকলিন প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিরোধিতা করে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তির অবতারণা করেন। অন্যদিকে লর্ড ব্রাইস, স্টুয়ার্ট মিল, লেকি, হেনরি মেইন, লর্ড অ্যাক্টন, গেটেল প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার কঠোর সমালোচনা করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে জোরালো যুক্তি দেখিয়েছেন। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষের যুক্তিগুলি নীচে দেওয়া হল।
❏ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি :
[1] সুচিন্তিত আইন প্রণয়ন: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় সুচিন্তিতভাবে আইন প্রণীত হয়। আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হওয়ায় প্রতিটি বিলকে দুটি কক্ষে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচারবিবেচনা করার সুযোগ পাওয়া যায়। এতে বিলের ত্রুটিবিচ্যুতি ধরা পড়ে। এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার মতো তড়িঘড়ি সাময়িক আবেগ ও উত্তেজনার বশে অথবা জনমতের চাপে অবিবেচনাপ্রসূত আইন প্রণয়নের আশঙ্কা এখানে কম থাকে।
[2] জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের সমন্বয়সাধন : আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষ থাকলে জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের সামগ্রিক প্রতিনিধিত্ব সম্ভব নয়। অন্যদিকে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা থাকলে সেক্ষেত্রে নিম্নকক্ষ এবং উচ্চকক্ষের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জাতীয় এবং আঞ্চলিক স্বার্থের সার্থক সমন্বয়সাধন সম্ভব হয়। এই কারণে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভাকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আবশ্যিক বলে মনে করা হয়।
[3] স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ : লর্ড অ্যাক্টন আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষকে ব্যক্তিস্বাধীনতার নিরাপত্তার পক্ষে প্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেন। তাঁর মতে, একটিমাত্র কক্ষ নিয়ে আইনসভা গঠিত হলে স্বৈরাচারের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে, কারণ সেক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণকারী থাকে না। অন্যদিকে, আইনসভার দুটি কক্ষ থাকলে প্রথম কক্ষের স্বৈরাচার অতি সহজেই দ্বিতীয়কক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
[4] জনমতের সঠিক প্রতিফলন : অনেকের মতে, আইনসভায় দুটি কক্ষ থাকলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটে। এ ছাড়াও আইনসভার দুটি কক্ষের নির্বাচন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হওয়ার দরুন পরিবর্তনশীল জনমতের সুষ্ঠু প্রতিফলন আইনসভায় দেখা যায়।
[5] জ্ঞানীগুণী মানুষের প্রতিনিধিত্ব : দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় দেশের জ্ঞানীগুণীদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়| এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় যোগ্য মানুষদের জায়গা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে উচ্চকক্ষে জ্ঞানীগুণীদের খুব সহজেই মনোনয়ন দেওয়া যায়। প্রসঙ্গত, ভারতের আইনসভার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় এ ধরনের মনোনয়নের ব্যবস্থা রয়েছে।
[6] সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থের সুরক্ষা : এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার নির্বাচন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের ভিত্তিতে হওয়ায় সমাজের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বের অভাব দেখা যায়। কিন্তু দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় পরোক্ষ নির্বাচন ও মনোনয়নের ব্যবস্থা থাকায় সংখ্যালঘু স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দ্যুগুইয়ের মতে, যে আইনসভায় একটি কক্ষ সমস্ত জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং অন্য কক্ষটি বিভিন্ন গোষ্ঠী বা শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে সেই আইনসভাকে শ্রেষ্ঠ বলা যায়।
[7] রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার : দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তারের সহায়ক বলে অনেকে মনে করেন। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়নের সময় যেসব আলোচনা ও বিতর্ক হয় তা গণমাধ্যম মারফত প্রচারিত হওয়ায় জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা ও শিক্ষার প্রসার ঘটে। বলা বাহুল্য, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় এই সুযোগ সীমিত।
[8] আইনসভার কার্য বৃদ্ধি : বর্তমানে আইনসভার কাজ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় একটিমাত্র কক্ষের দ্বারা যাবতীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। ফলে আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে বিশাল কাজকে সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
❏ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিপক্ষে যুক্তি :
[1] অগণতান্ত্রিক গঠনকাঠামো : গণতান্ত্রিক আদর্শ অনুযায়ী, জনগণের ভোটে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে আইনসভা গঠিত হয়। কিন্তু কোনো কোনো দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় মনোনয়ন প্রথায় প্রতিনিধি নিয়োগের ব্যবস্থা থাকায় গণতান্ত্রিক রীতিনীতি লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ব্রিটেনের উচ্চকক্ষ লর্ডসভায় উত্তরাধিকারসূত্রে লর্ডদের মনোনয়নের কথা বলা যেতে পারে।
[2] অনাবশ্যক : আইনসভার দুটি কক্ষকে অনেকে অনাবশ্যক বলে মনে করেন। তাঁদের মতে, দুটি কক্ষেই যদি একই রাজনৈতিক দলের গরিষ্ঠতা থাকে তাহলে দ্বিতীয় কক্ষের অস্তিত্ব অনাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবে সিঁয়ের মতে প্রথম কক্ষ দ্বিতীয় কক্ষের সঙ্গে সহমত পোষণ করলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা অনাবশ্যক, অন্যদিকে দুটি কক্ষ যদি সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করে তবে তা ক্ষতিকারক।
[3] প্রকৃত জ্ঞানীগুণীদের উপেক্ষা : দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় জ্ঞানীগুণীদের জায়গা দেওয়া যায়, এই যুক্তি ঠিক নয় | বাস্তবে দেখা যায়, যে দল নিম্নকক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সেই দলের প্রতিনিধিরাই এ ধরনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এর ফলে প্রকৃত জ্ঞানীগুণীরা বঞ্চিত হন।
[4] সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষায় অপারগ : সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা অত্যাবশ্যক নয়। কারণ সংবিধানে সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকলে সংখ্যালঘু স্বার্থ যথাযথভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়। এজন্য আইনসভার একটি কক্ষই যথেষ্ট।
[5] দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতাসম্পন্ন : অনেকে মনে করেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় গৃহীত কার্যাবলির ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন উঠলে এককভাবে কোনো একটি কক্ষকে দায়ী করা যায় না। সেই ক্ষেত্রে দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার প্রবণতা দুটি কক্ষেই দেখা যায়।
[6] আশু আইন প্রণয়নের অনুপযুক্ত : দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়নে দুটি কক্ষের ভূমিকা থাকায় জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত আইন প্রণয়ন এখানে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যে দ্রুততায় এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়ন করা হয়, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় তা হয় না।
[7] ব্যয়বহুল : অনেকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার অস্তিত্বকে ব্যয়বহুল বলে মনে করেন। তাঁদের মতে যেহেতু একটি কক্ষ অপ্রয়োজনীয়, তাই সদস্যদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার জন্য অহেতুক অর্থের অপচয় ঘটে।
❏ উপসংহার : দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিরুদ্ধে উপরোক্ত সমালোচনা সত্ত্বেও দেখা যায় যে, বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার কাঠামো গৃহীত হয়েছে। বস্তুত, প্রথম কক্ষের প্রণীত আইন দ্বিতীয় কক্ষে সংশোধিত হওয়ার সুযোগ থাকায় তা আরও পূর্ণতা লাভ করে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি সংশোধনী কক্ষরূপে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষের গুরুত্বকে উপেক্ষা করা যায় না।
5. আধুনিক রাষ্ট্রের শাসন বিভাগের কার্যাবলি আলোচনা করো।
▢ ভূমিকা : অতীতে শুধুমাত্র দেশরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা ছিল রাষ্ট্রের প্রধান কাজ। ঊনবিংশ শতাব্দীর উদারনৈতিক তত্ত্ব অনুসারে সেই রাষ্ট্র ভালো যে রাষ্ট্র সবচেয়ে কম শাসন করে। পরবর্তীকালে রাষ্ট্র প্রকৃত জনকল্যাণকর রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়। রাষ্ট্রের কর্মক্ষেত্রের পরিধি জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়।
▢ শাসন বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলি :
(1) শাসনকার্য পরিচালনা : শাসন বিভাগের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শাসনকার্য পরিচালনা করা। উপরন্তু রাষ্ট্রে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা প্রভৃতি কর্তব্য সম্পাদন ও আইন লঙ্ঘনকারীকে আদালতে পেশ করা শাসন বিভাগের অন্যতম কাজ।
(2) পররাষ্ট্র-সংক্রান্ত কার্যাবলি : পররাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অন্য রাষ্ট্রে দূত প্রেরণ এবং তাদের প্রেরিত রাষ্ট্রদূত গ্রহণ, অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদন ইত্যাদি শাসন বিভাগের পররাষ্ট্র দপ্তরের অন্যতম কাজ।
(3) নীতি নির্ধারণ ও কর্মসূচি রূপায়ণ-সংক্রান্ত কাজ : রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ করা শাসন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু শুধু নীতি নির্ধারণ করাই নয়। নির্ধারিত নীতি ও কর্মসূচিকে বাস্তবে রূপায়ণ করার প্রধান দায়িত্ব শাসন বিভাগের হাতে ন্যস্ত করা হয়।
(3) বিচার-সংক্রান্ত কার্যাবলি : রাষ্ট্রের উচ্চ আদালতে বিচারপতিদের নিয়োগ করা, দণ্ডিত অপরাধীদের শাস্তি হ্রাস করা, ক্ষমা প্রদর্শন করা ইত্যাদি রাষ্ট্র প্রধানের কাজ।
(4) জনকল্যাণমূলক কাজ : আধুনিক রাষ্ট্রকে জনকল্যাণকর রাষ্ট্র বলা হয়। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে জনকল্যাণকর কাজকর্ম শাসন বিভাগকে সম্পাদন করতে হয়।
▢ উপসংহার : সাম্প্রতিকালে আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের কর্মকাণ্ডের পরিধি বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মন্ত্রী পরিষদ বা সংসদীয় সরকার শাসিত রাষ্ট্রে এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত রাষ্ট্রে উভয় ক্ষেত্রেই শাসন বিভাগের কর্তৃত্বের প্রাধান্য উত্তরোত্তর সম্প্রসারিত হচ্ছে।
6. বিচারবিভাগীয় সমীক্ষা বলতে কী বোঝো? বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা কীভাবে সংরক্ষিত হয়, তা ব্যাখ্যা করো।
❏ ভূমিকা : বিভাগীয় সমীক্ষা হল বিচার বিভাগের এক বিশেষ ক্ষমতা। এই ক্ষমতাবলে বিচার বিভাগ দেশের আইন বিভাগের প্রণীত কোনো আইন এবং শাসন বিভাগের কোনো আদেশ বা নির্দেশ সংবিধানবিরোধী কিনা সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আইন বা আদেশ ও নির্দেশকে সংবিধানবিরোধী বলে মনে করলে বাতিল করে দিতে পারে, বিচার বিভাগের এই বিশেষ ক্ষমতাকে ‘বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা বা Judicial Review বলে অভিহিত করা হয়।
❏ বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা সংরক্ষণ : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা এবং কর্মকুশলতার ওপর আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আবার কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সেগুলি হল—
[1] বিচারপতিদের যোগ্যতা : বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত হল সৎ, সাহসী ও নিরপেক্ষ, আইনজ্ঞ বিচারপতি। দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে প্রার্থীদের গুণগত যোগ্যতা সঠিকভাবে পরীক্ষা করে বিচারপতি নিয়োগ করা প্রয়োজন। অযোগ্য ব্যক্তি রাজনৈতিক কারণে বিচারকপদে নিযুক্ত হলে ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ন হতে পারে।
[2] বিচারপতিদের নিয়োগ পদ্ধতি: আধুনিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে বিচারপতিদের নিয়োগ করা হয়, যথা— (i) জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে, (ii) আইনসভা কর্তৃক মনোনয়নের মাধ্যমে, (iii) শাসন বিভাগের মাধ্যমে।
[3] বিচারপতিদের কার্যকাল : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার জন্য বিচারপতিদের একটি নির্দিষ্ট বয়ঃক্রম পর্যন্ত স্থায়ীভাবে নিয়োগ করা প্রয়োজন। স্বল্পকালের জন্য নির্বাচিত বা মনোনীত হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে বিচারপতিরা সর্বদাই ব্যস্ত থাকবেন কিংবা তাঁরা দুর্নীতিপরায়ণও হয়ে উঠতে পারেন। সেক্ষেত্রে ন্যায়বিচার উপেক্ষিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচারপতিরা অক্ষম না হলে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকতে পারেন। ভারতে এই মেয়াদ সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের ক্ষেত্রে ৬৫ এবং হাইকোর্টের বিচারপতিদের ক্ষেত্রে ৬২ বছরে সীমিত রাখা হয়েছে।
[4] বিচারপতিদের অপসারণ: বিচার বিভাগের স্বাধীনতার শর্তাবলির ক্ষেত্রে বিচারপতিদের অপসারণ প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অকারণে অপসারিত হওয়ার ভয় থাকলে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে ন্যায়বিচার সম্পাদন সম্ভব হয় না। কেবলমাত্র দুর্নীতি ও গুরুতর অপরাধের প্রমাণিত তথ্য ছাড়া বিচারপতিদের অপসারণের ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়।
[5] বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা: অনেকে বিচারপতিদের বেতন ও ভাতার বিষয়টিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। স্বল্প বেতনভোগী বিচারপতিদের দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া, বেতন পর্যাপ্ত না হলে শ্রেষ্ঠ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে এই পদের প্রতি আকৃষ্ট করা যায় না। বিচারপতিদের বেতন ও ভাতার বিষয়টি শাসন বিভাগের অনুমোদনসাপেক্ষ হওয়া উচিত নয় বলে অনেকে মনে করেন।
[6] বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য : বিচার বিভাগের স্বাধীনতার একটি অপরিহার্য শর্ত হল এর স্বাতন্ত্র্য। বস্তুত, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ স্বতন্ত্র না হলে ন্যায়বিচারের সুযোগ থাকে না। এমনকি এর ফলে স্বৈরাচারের আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে। অধ্যাপক ল্যাস্কি বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্যকে স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য অত্যাবশ্যক বলে রায় দিয়েছেন। বিচারপতিদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের প্রভাব থেকে বিচার বিভাগকে মুক্ত রাখা প্রয়োজন।
[7] বিচারপতিদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি: বিচারপতিদের দৃষ্টিভঙ্গিকেও অনেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিচারপতিদের সামাজিক এবং পারিবারিক অবস্থান, শ্রেণিচেতনা, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক চেতনা প্রভৃতির সম্মিলিত প্রভাবে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক না হলে তা ন্যায়বিচারের পক্ষে অন্তরায় হতে পারে।
❏ উপসংহার : আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপরোক্ত শর্তাবলিকে অবশ্য পর্যাপ্ত বলে মনে করেন না। তাঁদের মতে, বিচার বিভাগ রাষ্ট্র ও সমাজনিরপেক্ষ নয়। সাধারণত বিচারপতিরা রাষ্ট্রপ্রকৃতি অনুসারে পরিচালিত হন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।
- উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস MCQ সাজেশন ২০২৪
- উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন ২০২৪
- উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন ২০২৪ মার্ক - ৮
- উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত সাজেশন ২০২৪