অথবা,
দার্শনিকরা কিভাবে প্রকৃতি থেকে গুণকে বিচ্ছিন্ন করেছেন তা লেখো?
☐ “সাংখ্য প্রবচন সূত্রে" বলা হয়েছে—“সত্ত্ব রাজস্তম সাম্যবস্তা প্রকৃতি” অর্থাৎ সত্ত্ব, তম ও রজ এই তিন গুণের সাম্যবস্তাই হল প্রকৃতি। সাংখ্য দর্শনে গুণ বলতে উপাদানকে বােঝায়। তিনটি গুণ—(১) সত্ত্ব (২) রজ ও (৩) তম হল প্রকৃতির উপাদান। একখন্ড দড়ি যেমন তিনটি তার দিয়ে তৈরী হতে পারে ঠিক তেমনিই প্রকৃতিও সত্ত্ব, তম, রজ এই তিনটি উপাদান দিয়ে গড়া। এই তিনটি উপাদান পুরুষের ভােগ সাধারণের অনুকূল ও পুরুষ বা আত্মাকে সৎ কারের বাধনে বেঁধে রাখে বলে এদের গুণ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সাংখ্য সৎকাৰ্যবাদানুযায়ী কার্য ও কারণের একই রকম স্বভাব দেখা যায়। কার্যে যা আছে কারণেও তা আছে থাকবে। জাগতিক বস্তুগুলিতে যা আছে প্রকৃতিতেও তা থাকবে। প্রকৃতির মধ্যে আছে সত্য, রজ, তম প্রকৃতির গুণগুলি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রত্যক্ষগ্রাহ্য। তাই অনুমানের সাহায্যে গুণগুলির অস্তিত্ব মানতে হয়। পার্থিব বিষয় কারও কাছে সুখের আবার কারও কাছে দুঃখের। আবার কারও কাছে বিষাদের। পূর্ণিমার চাঁদের আলাে নদীর উপর পরলে কবির কাছে সুখের, বিরহীর কাছে দুঃখের, মাঝির কাছে বিষাদের। সত্ত্ব, রজ, তম— এই তিনটি গুণই মৌলিক এবং নিত।
সাংখ্যকারীকা অনুসারে সত্ত্ব লঘু প্রকাশ। সত্ত্ব সুখ উৎপাদক, আনন্দ, তৃপ্তি, প্রীতি প্রভৃতি সত্ত্বগুণের কার্য। সত্ত্ব গুণ লঘু আগুন জ্বালালে উর্ধ্বমুখী হয়। বাতাস বক্র গতিতে বয়, এইসব সত্ত্ব গুণের কার্য। সত্ত্ব গুণের লক্ষণ প্রকাশ আলাে বস্তুকে প্রকাশ করে, দর্পণ সবকিছুর প্রতিবিম্বিত করে, জ্ঞান বিষয়বস্তুকে প্রকাশ করে এগুলি সব সত্ত্ব গুণের কার্য।
সাংখ্যকারীকা অনুসারে তম ভারী। তম গুণ সত্বের প্রকাশে বাধা দেয় ও রজের গতিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। তম গুণ বস্তুকে ভারী করে দেয় ও আবৃত রাখে। তম আমােদের কার্য ক্ষমতার বাধা দেয় ও জ্ঞানের বিকাশ রুদ্ধ করে। নিদ্রা, আলসা, ভুলে যাওয়া, নিস্পৃহতা প্রভৃতি তমগুণের থেকেই উদ্ভব হয়। সাংখ্যকারীকা অনুসারে রজ চঞ্চল ও প্রেরণাদায়ক। রজ নিজে গতিময় ও অন্যদ্রব্যকে গতিশীল করে তােলে। স্বভাবতই সত্ত্ব, তম, গুণ নিষ্ক্রিয় নিশ্চল। রজ গুণ তাদের চালনা করে ও নিষ্ক্রিয় করে তােলে।রজ বেদনাদায়ক ও দুঃখ উৎপাদক সমস্ত দুঃখের হেতু রজ।
এই তিনটি গুণের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিযােগিতা ও সহযােগিতা দুটোই আছে। এই গুণগুলির পারস্পরিক প্রতিযােগিতায় কখনও সত্ত্ব প্রবণ হয় ফলে সুখ উৎপন্ন হয়। কখনও রজ প্রবল হয় ফলে দুঃখের সৃষ্টি করে। আবার কখনও তম প্রবল হয় ফলে জরতা জাগে। জ্ঞানীর মধ্যে সত্ত্ব গুণ কর্মীর মধ্যে রজ গুণ ও অলস লােকের তম গুণ থাকে। আবার এই তিনটি একসাথে মিশে থাকে যে এদের বিভক্ত বা পৃথক করা যায় না। প্রদীপের তেল, সলতে, আগুন পরস্পর মিশে গিয়ে যেমন এক সাথে আলাের শিখা সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি সত্ত্ব, রজ, তম এই তিনটি গুণ পরস্পর বিরােধী হলেও সহযোগিতার মাধ্যমে জগতে সমস্ত বস্তুর সৃষ্টি করে। এই তিনটি গুণের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল এরা নিয়ম পরিবর্তনশীল বা পরিমাণশীল। এই পরিমাণ দুই ধরনের – (১) স্বরূপ পরিমাণ, (২) বিরূপ পরিমাণ।
প্রলয়ের অবস্থায় গুণগুলি নিজেদের মধ্যেই পরিবর্তিত হয়। সত্ত্ব, সত্ত্বেই পরিণত হয় রজ, রজেই পরিণত হয় আবার তমব তমেই পরিণত হয়। এই ধরনের পরিণামকে স্বরূপ পরিণাম বলা হয়। আবার সৃষ্টি সন্ধিক্ষণে কোনও একটি গুণ অপর একটি গুণের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে প্রবল হয়ে ওঠে। এখন এই তিন গুণের সাম্যাবস্থা বজায় থাকে না। এইরূপ পরিণামকে বলা হয় বিরূপ পরিণাম।
প্রশ্নঃ2 আবর্তন কাকে বলে? আবর্তনের নিয়ম ব্যাখ্যা করো, I O বচনের কি আবর্তন সম্ভব আলোচনা করো?
ロ যে অমাধ্যম অনুমানে প্রদত্ত বচনের গুণ সিদ্ধান্তে অপরিবর্তনীয় থাকে, প্রদত্ত বচনের উদ্দেশ্য এবং বিধেয় ন্যায়সঙ্গত ভাবে পরিবর্তিত করে যখন যথাক্রমে সিদ্ধান্তে বিধেয় ও উদ্দেশ্য হয়, তাকে
ロ যে অমাধ্যম অনুমানে প্রদত্ত বচনের গুণ সিদ্ধান্তে অপরিবর্তনীয় থাকে, প্রদত্ত বচনের উদ্দেশ্য এবং বিধেয় ন্যায়সঙ্গত ভাবে পরিবর্তিত করে যখন যথাক্রমে সিদ্ধান্তে বিধেয় ও উদ্দেশ্য হয়, তাকে
আবর্তন বলে। আবার,যে আশ্রয় বাক্যটি, দেওয়া থাকে বা যাকে আবর্তিত করতে হয় তাকে বলে আবর্তনীয় এবংসিদ্ধান্তে যা পাওয়া যায় তাকে বলে আবর্তিত।
আবর্তনের নিয়মাবলী :
- (১) আশ্রয় বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় যথাক্রমে সিদ্ধান্তে বিধেয় ও উদ্দেশ্য হবে।
- (২) আশ্রয় বাক্যে যে গুণ থাকবে সিদ্ধান্তে সেই গুণ হবে। অর্থাৎ আশ্রয় বাক্য যদি সদর্থক হয় সিদ্ধান্ত সদর্থক হবে। আশ্রয় বাক্য নঞর্থক হলে সিদ্ধান্ত নঞর্থক হবে।
- (৩) যে পদ আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য নয় সে পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারে না। উপরের নিয়মগুলি অনুসরণ করে A, E, I, O বচনের আবর্তন করা যায়।
(ক) A বচনের আবর্তন : সকল দার্শনিক হয় মানুষ। এই আশ্রয় বাক্যটি দেওয়া আছে। এটিকে আবর্তিত করতে হবে। প্রথম নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হবে মানুষ এবং বিধেয় হবে দার্শনিক। দ্বিতীয় নিয়ম অনুযায়ী গুণে কোন পরিবর্তন হবে না। যেহেতু আশ্রয় বাক্যটি সদর্থক তাই সিদ্ধান্তও সদর্থক হবে। তৃতীয় নিয়ম অনুসারে যে পদ আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য নয় সেটি সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারে না। এখানে I বচন (বিশেষ সদর্থক) হবে এবং কোন নিয়ম লঙ্ঘন করবে না সুতরাং ফল হবে নিম্নরুপঃ
A সকল দার্শনিক হয় মানুষ। (বচন)
∵ I কোন মানুষ হয় দাশনিক। (আবর্তিত)
(খ) E বচনের আবর্তন :
E কোন দেবতা নয় মানুষ। (বচন)
∵ E কোন মানুষ নয় দেবতা। (আবর্তিত)
(গ) I বচনের আবর্তন :
I কোন কোন ছাত্র হয় পরিশ্রমী। (বচন)
∵ I কোন কোন পরিশ্রমী হয় ছাত্র। (আবর্তিত)
(ঘ) O বচনের আবর্তন : কোন কোন মানুষ নয় সাধু। এই আশ্রয় বাক্যটি দেওয়া আছে। কিন্তু বচনের আবর্তন সম্ভব নয়। O বচনকে আবর্তিত করা যায় কিনা একবার পরীক্ষা করে দেখা যাক। প্রথম নিয়ম অনুযায়ী উদ্দেশ্য, বিধেয় যথাক্রমে সিদ্ধান্ত এ সাধুও মানুষ হবে। দ্বিতীয় নিয়ম অনুযায়ী আশ্রয় বাক্যটি
যেহেতু নঞ্চক সেহেতু সিদ্ধান্ত E কিংবা O হবে। যেহেতু আশ্রয় বাক্যটি বিশেষ সেহেতু সিদ্ধান্ত সামান্য হতে পারে না। তৃতীয় নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত যদি O বচন হয় তবে বিধেয় পদ মানুষ ব্যাপ্য হবে। কেননা O বচনের বিধেয় পদ ব্যাপ্য কিন্তু এই পদটি আশ্রয় বাক্যের উদ্দেশ্য স্থানে থাকায় ব্যাপ্য হয় নি। তৃতীয় নিয়মটি লঙ্ঘন করেছে। তাই O বচনে আবর্তন সম্ভব নয়।
___ উদাহরণঃ ____
(১) সৰ গরু তৃণভােজী। (বাক্য)
A- সকল গরু হয় তৃণভােজী। (বচন)
∵ I কোন কোন তৃণভােজী হয় গরু। (আবর্তিত)
(২) ছাত্ররা কখনও মিথ্যাবাদী নয়। (বাক্য)
E কোন ছাত্র নয় মিথ্যাবাদী। (বচন)
∵ E কোন মিথ্যাবাদী নয় ছাত্র। (আবর্তিত)
(৩) বেশির ভাগ ফুল সাদা। (বাক্য)
I কোনো কোনো ফুল হয় সাদা। (বচন)
(১) সৰ গরু তৃণভােজী। (বাক্য)
A- সকল গরু হয় তৃণভােজী। (বচন)
∵ I কোন কোন তৃণভােজী হয় গরু। (আবর্তিত)
(২) ছাত্ররা কখনও মিথ্যাবাদী নয়। (বাক্য)
E কোন ছাত্র নয় মিথ্যাবাদী। (বচন)
∵ E কোন মিথ্যাবাদী নয় ছাত্র। (আবর্তিত)
(৩) বেশির ভাগ ফুল সাদা। (বাক্য)
I কোনো কোনো ফুল হয় সাদা। (বচন)
∵ I কোনো কোনো সাদা বস্তু হয় ফুল। (আবর্তিত)
(৪) সব চকককে বস্তুই সাদা নয়। (বাক্য)
O কোনো কোনো চকককে বস্তু নয় সোনা। (বচন)
∵ O আবর্তন সম্ভব নয়।
∵ O আবর্তন সম্ভব নয়।
প্রশ্নঃ3 নিরপেক্ষ বচনের কোন পদ ব্যাপ্য এবং কোন পদ অব্যাপ্য আলোচনা করো?
⦿ পদের ব্যাপ্যতা : একটি পদকে আমরা তখনই ব্যাপ্য বলব, যখন ঐ পদটির দ্বারা নির্দেশিত শ্রেণীর সকল ব্যক্তি বা বস্তুকে বােঝানাে হয়। আর যখন ঐ পদটির দ্বারা নির্দেশিত শ্রেণীর ব্যক্তি বা বস্তুকে না বুঝিয়ে কয়েকটি ব্যক্তি বা বস্তুকে বােঝানাে হয়, তখন ঐ পদটিকে বলা হয় অব্যাপ্য।➤ উদাহরণ : সকল কবি হয় মরণশীল।
এখানে কবি শ্রেণীকে সকলকে বােঝানাে হচ্ছে। কাজেই উদ্দেশ্য পদ কবি পদটি ব্যাপ্য এবং মরণশীল পদটির দ্বারা শুধুমাত্র পদ কবি শ্রেণীর মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে, অন্য জীবের মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে না। তাই বিধেয় পদ মরণশীল কথাটি অব্যাপ্য। আমরা এবারে A,E,I,O বচনের কোন পদ ব্যাপ্য, কোন পদ অব্যাপ্য তা ব্যাখ্যা করবো।
⦿ সামান্য সদর্থক (A ৰচন) : সকল মানুষই মরণশীল। এটি সামান্য সদর্থক A বচন। এখানে উদ্দেশ্য পদ মানুষ পদটি ব্যাপ্য। কারণ, সকল মানুষের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে বিধেয় পদ মরণশীল পদটি অব্যাপ্য। কারণ মরণশীল পদটির দ্বারা শুধুমাত্র মানুষের মৃত্যুর কথা বলা হয়নি। কাজেই A বচনের উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য ও বিধেয় পদ অব্যাপ্য। তবে একথা মনে রাখা প্রয়ােজন যে, সামান্য সদর্থক বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় যদি সমান অর্থে ব্যবহৃত হয় তবে উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয় পদই ব্যাপ্য।
যেমন- তাজমহল হয় পৃথিবীর সপ্তম আচার্য। এখানে উদ্দেশ্য ও বিধেয় সমান অর্থে ব্যবহৃত হওয়ায় দুটোই ব্যাপ্য হয়েছে।
⦿ সামান্য নঞর্থক (E বচন) : কোনো দেবতা নয় মানুষ। কোনো তেঁতুল নয় মিষ্টি। তেঁতুল এটি সামান্য নঞর্থক বচন। এখানে উদ্দেশ্য তেঁতুল পদটির দ্বারা সকল তেঁতুলকেই বােঝানাে হয়েছে। কারণ খােনে মিষ্টতা ধর্মটি সব তেঁতুল সম্বন্ধে অস্বীকার করা হয়েছে। অন্যদিকে বিধেয় মিষ্টি পদটিও ব্যাপ্য। কারণ মিষ্টি শ্রেণীর সকল বস্তুকে বােঝানাে হয়েছে। তাই বচনের উদ্দেশ্য বিধেয় দুটোই ব্যাপ্য।
⦿ বিশেষ সর্থক (I বচন) : কোন কোন ছাত্র হয় বিনয়ী’। এটি বিশেষ সদর্থক I বচন। এখানে উদ্দেশ্য ছাত্রী এই পদটি অব্যাপ্য। এখানে ছাত্র পদটির দ্বারা সব ছাত্রকে না বুঝিয়ে একটি অংশকে বােঝানাে হয়েছে। অন্যদিকে বিধেয় বিনয়ী পদটিও অব্যাপ্য কারণ, বিনয়ী পদের দ্বারা বিনয়ী ব্যক্তির কথা না বুঝিয়ে একটি মাত্র অংশকে বােঝানাে হয়েছে। অন্যদিকে বিধেয় বিনয়ী পদটিও অব্যাপ্য। কারণ, বিনয়ী পদের দ্বরা সব বিনয়ী ব্যক্তির কথা না বুঝিয়ে ছাত্র শ্রেণীর কয়েকজনকে বােঝানাে হয়েছে। ছাত্র ছাড়াও পৃথিবীতে বিনয়ী লােকের অভাব নেই। কাজেই বিশেষ সদর্থক বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় দুটোই অব্যাপ্য।
⦿ বিশেষ নর্থক (O বচন) : কোন কোন মানুষ নয় সৎ’! এটি বিশেষ নঞর্থক O বচন। এখানে উদ্দেশ্য পদ মানুষ অব্যাপ্য। কারণ, কোন কোন মানুষের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিধেয় পদ সৎ এই পদটি ব্যাপ্য! কারণ, সৎ পদটির দ্বারা সৎ গুণটিকে সম্পূর্ণভাবে স্বীকার করা হয়েছে। তাই O বচনের উদ্দেশ্য পদ অব্যাপ্য এবং বিধেয় পদ ব্যাপ্য।
ロ গুণ অনুসারে নিরপেক্ষ বচনকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।যথা- (ক) সদর্থক বচন এবং (খ) নঞ্চৰ্থক বচন।।
(ক) সদর্থক বচন : যে বচনে বিধেয় উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোন কিছু স্বীকার করে, সেই বচনকে সদর্থক বচন বলে। যেমন—সকল মানুষ হয় মরণশীল, কোন কোন ছাত্র হয় অলস। এখানে প্রথম বচনটিতে মরণশীলতা সকল মানুষ সম্পর্কে এবং দ্বিতীয় বচনটিতে অলসতা কোন কোন ছাত্র সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে।
(খ) নঞর্থকবচন : যে বচনে বিধেয় উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোন কিছু অস্বীকার করে, তাকে নঞর্থক বচন বলে। কোন মানুষ নয় দেবতা, কোন কোন মানুষ নয় ফাঁকিবাজ। এখানে প্রথম বচনটিতে দেবতা কথাটি মানুষ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় বচনটিতে ফাঁকিবাজ কথাটি কোন না কোন মানুষ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে।
(ক) সদর্থক বচন : যে বচনে বিধেয় উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোন কিছু স্বীকার করে, সেই বচনকে সদর্থক বচন বলে। যেমন—সকল মানুষ হয় মরণশীল, কোন কোন ছাত্র হয় অলস। এখানে প্রথম বচনটিতে মরণশীলতা সকল মানুষ সম্পর্কে এবং দ্বিতীয় বচনটিতে অলসতা কোন কোন ছাত্র সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে।
(খ) নঞর্থকবচন : যে বচনে বিধেয় উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোন কিছু অস্বীকার করে, তাকে নঞর্থক বচন বলে। কোন মানুষ নয় দেবতা, কোন কোন মানুষ নয় ফাঁকিবাজ। এখানে প্রথম বচনটিতে দেবতা কথাটি মানুষ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় বচনটিতে ফাঁকিবাজ কথাটি কোন না কোন মানুষ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে।
পরিমাণ অনুসারে নিরপেক্ষ বচনকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যেমন সামান্য বচন ও বিশেষ বচন।
⦿ সামান্য বচন : যে বচনে বিধেয় উদ্দেশ্যের সমস্ত ব্যক্তার্থকে স্বীকার বা অস্বীকার করে সেই বচনকে সামান্য বচন বলা হয়। যেমন— সকল মানুষ হয় মরণশীল, কোন মানুষ নয় অমর। প্রথম বচনে মরণশীল পদটি সকল মানুষ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় বচনে অমরতা পদটি যে কোন মানুষ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে।
⦿ বিশেষ বচন : যে বচনে বিধেয় উদ্দেশ্যের ব্যক্তার্থের কোন কোন অংশকে স্বীকার বা কোন কোন অংশকে অস্বীকার করে, তাকে বিশেষ বচন বলে। যেমন— কোন কোন ফল হয় টক এবং কোন কোন মানুষ নয় গরীব। প্রথম বচনে টক কথাটি কোন কোন ফল সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় বচনে গরীব কথাটি কোন কোন মানুষ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে।
গুণ ও পরিমাণ একত্রিত করে নিরপেক্ষ বচনকে চার ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- (ক) A সার্বিক বা সামান্য সদর্থক (খ) E সার্বিক বা সমান্য নঞর্থক (গ) I বিশেষ সদর্থক। (ঘ) O বিশেষ নঞর্থক
A, E, I,O অ্যারিস্টটল এই চারটি বচনের নামকরণ করেন বা বচনের সাংকেতিক চিহ্নগুলি দেন।
☆ ☆ ☆☆ টীকা ☆ ☆ ☆☆
৫ নম্বরের সংক্ষিপ্ত ছোটো টীকা:➺ যে পদের দ্বারা কোন সৎবস্তুকে বােঝানাে হয় অর্থাৎ যে শ্রেণীতে অন্তত একজন সদস্য রয়েছে এমন শ্রেণীকে নিঃশূন্য শ্রেণী বলা হয়। যে পদের দ্বারা কোন অস্তিত্বশীল বস্তুকে বােঝায় না, যে শ্রেণীর সদস্যদের কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই, তাকে শূন্যগর্ভ শ্রেণী বলে।
Q2. বহু কারণবাদ কাকে বলে?
➺ বহু করণবাদ বলতে বােঝায় একই কার্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণ থেকে উৎপন্ন হতে পারে। যেমন-- মৃত্যু একটি কার্য, একটি বিষপান, দুর্ঘটনা, বার্ধক্য প্রভৃতি বিভিন্ন কারণ থেকে হতে পারে। মিল ও বেন হলেন এই মতবাদের অন্যতম সমর্থক।
Q3. অস্তিত্ব সূচক তাৎপর্য লেখো?
➺ যে সব বচন স্পষ্টভাবে কোন বিশেষ বস্তুর অস্তিত্ব নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার হয় সেই সব বচনের অস্তিত্ব সূচক তাৎপর্য আছে বলে মনে করা হয়। যেমন— ভূত আছে’, সাদা হাতি আছে। এই সব বচনে কোন বিশেষ প্রকার বস্তুর অস্তিত্ব নির্দেশ করা হয়েছে। আধুনিক যুক্তি বিজ্ঞানীরা বলেন I এবং O বচন অস্তিত্ব সূচক। A এবং E বচনের দ্বারা কোন বস্তুর অস্তিত্ব ঘােষণা করা হয় না।
Q4. যক্তি কাকে বলে?
➺ যে মানসিক পক্রিয়ার সাহায্যে আমরা জ্ঞান সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে বা নতুন তথ্যে উপনীত হই তাকে অনুমান বলে। যে বচন সমষ্টির দ্বারা মনের ক্রিয়াটি প্রকাশিত হয় তাকে যুক্তি বলে। অর্থাৎ যুক্তি হল বাক্য সমষ্টি। একটি যুক্তিতে এক বা একাধিক আশ্রয় বাক্য ও একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে যুক্তি গঠন হয়।
যুক্তি বিজ্ঞানে যে সব ব্যাক্তি বা বস্তুর মধ্যে বিশেষ কতগুলি সাধারণ গুণ বা ধর্ম থাকে সে সব বস্তুর সমষ্টিকেই শ্রেণী বলা হয়। যেমন মানুষ একটি শ্রেণী, এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের দুটি ধর্ম—জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি বর্তমান।
Q5. বচনের সংযােজককের গুরুত্ব কী?
➺ বচনের যে অংশটির মাধ্যমে উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপিত হয় তাকে সংযােজক বলে। সংযােজকের মাধ্যমে বিধেয় পদ ও উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে কোন কিছু স্বীকার বা অস্বীকার করে। সংযােজক কোন পদ নয়। এটি বচনের একটি অংশ। এটি সব সময় বর্তমান কালের হয়। যেমন— হয়, নয়, হন,নন ইত্যাদি।
Q6.বস্তুগত বিবর্তন বলতে কী বােঝ?
➺ বিখ্যাত যুক্তিবিজ্ঞানী বেইন বস্তুগত বিবর্তন নামে এক ধরণের বিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন। যে বিবর্তন বা প্রতিবর্তনে আকারগত বিবর্তন না করে তার অর্থ অনুযায়ী বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিবর্তন করা হয়, তাকে বস্তুগত বিবর্তন বলে।
যেমন— ১। যুদ্ধ হয় মঙ্গল সূচক।
২। শান্তি হয় অ-মঙ্গল সূচক।
Q7. আরােহ অনুমান কাকে বলে?
➺ যে অনুমান প্রকৃতির এক রূপতার ও কার্যকরণ নীতির উপর নির্ভর করে কতকগুলি বিশেষ বিশেষ সমজাতীয় দৃষ্টান্ত থেকে একটি সামান্য সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে আরােহ অনুমান বলে।
যেমন— রাম হয় মরণশীল।
হরি হয় মরণশীল।।
মধু হয় মরণশীল
ஃ সকল মানুষ হয় মরণশীল। (সিদ্ধান্ত)
২। শান্তি হয় অ-মঙ্গল সূচক।
Q7. আরােহ অনুমান কাকে বলে?
➺ যে অনুমান প্রকৃতির এক রূপতার ও কার্যকরণ নীতির উপর নির্ভর করে কতকগুলি বিশেষ বিশেষ সমজাতীয় দৃষ্টান্ত থেকে একটি সামান্য সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে আরােহ অনুমান বলে।
যেমন— রাম হয় মরণশীল।
হরি হয় মরণশীল।।
মধু হয় মরণশীল
ஃ সকল মানুষ হয় মরণশীল। (সিদ্ধান্ত)
Q8. আরোহ ও অবরোহ অনুমানের পার্থক্য কী?
➺ (১) অবরােহ অনুমানে সিদ্ধান্ত একটি বা দুইটি যুক্তি বাক্য থেকে পাওয়া যায়। আরােহ অনুমানের সিদ্ধান্ত একাধিক যুক্তিবাক্য থেকে পাওয়া যায়। (২) অবরােহ অনুমানে আমরা সার্বিক থেকে বিশেষে যাই এবং আরােহ অনুমানে বিশেষ থেকে সার্বিকে যাই। (৩) অবরােহ অনুমানে কেবলমাত্র আকারগত সত্যতা দেখা হয়। অপরদিকে আরােহ অনুমানে আকারগত ও বস্তুগত উভয়দিকে লক্ষ্য রাখা হয়।
Q9. আবর্তন কাকে বলে?
➺ যে অমাধ্যম অনুমানে গুণ অপরিবর্তিত রেখে একটি বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদকে ন্যায়সঙ্গত ভাবে যথাক্রমে বিধেয় ও উদ্দেশ্য পরিবর্তন করে যে নতুন বচন সিদ্ধান্ত হিসেবে লাভ করা হয় তাকে আবর্তন বলে। আবর্তনের নিয়ম (১) যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য সিদ্ধান্তের বিধেয় হবে। (2) যুক্তি বাক্যের বিধেয় সিদ্ধান্তে উদ্দেশ্য হবে। (৩) যুক্তি বাক্য ও সিদ্ধান্তের গুণ অপরিবর্তিত থাকবে। (৪) যে পদ আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য নয় সেটি সিদ্ধান্ত ব্যাপ্য হতে পারেনা।
Q10. একটি বুলিয় চতুস্কোন অঙ্কন করো?